রেহানা বীথি

রেহানা বীথির জন্ম ১৯৭৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহাডাঙা গ্রামে। রাজশাহী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী থেকে এইচএসসি পাস করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম পাস করেন তিনি। তিনি দুই কন্যা সন্তানের জননী। আইনজীবী হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন ২০০১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবং ২০০৯ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রোসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রচুর বই পড়তেন এবং মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন একজন লেখক হওয়ার। অনিয়মিতভাবে লেখালেখিতে অনেক বছর কেটে গেলেও ২০১৬ সালের শুরুর দিক থেকে তিনি নিয়মিত লেখালেখির কাজে মনোনিবেশ করেন। লিখতে থাকেন অনলাইনের বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। প্রকাশ হতে থাকে তাঁর লেখা দৈনিক গৌড় বাংলা, কলকাতার ‘উত্তরের সারাদিন’ এবং অনলাইনের বার্তা২৪, সিলেটটুডে২৪ ও জাগরণ ছাড়াও রাজশাহীর স্থানীয় বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায়। লেখালেখির পাশাপাশি রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির সাহিত্য সম্পাদক হিসেবেও তিনি দু’বার দায়িত্ব পালন করেন।

রেহানা বীথি

Showing all 3 results

Show:
Filter

শূন্যতায় ঈশ্বরের ঠোঁট – রেহানা বীথি

Highlights:

‘শূন্যতায় ঈশ্বরের ঠোঁট’- নামটি থমকে দেবে যে কাউকেই। নামের পেছনে যে গভীরতা, তা দিয়ে জন্মান্তরের কবি উচ্চারণ করেছেন তাঁর পুরো গ্রন্থের আদ্যান্ত। বেশিরভাগ কবিতায় কবি সময়কালকে প্রাধান্য দিয়েছেন। বিশেষ করে সকাল, সন্ধ্যা ও রাত্রির সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়েছেন প্রকৃতির নিবিড় আবেগকে, যেখানে নিঝুম দুপুরের সাথে মেটাফরিক ঈশ্বরের ঠোঁট, নিঃসন্দেহে চিত্তে মাতম জাগাবে! কবিতায় কাব্যের চেয়ে প্রাবন্ধিক বাক্য গঠনে কবি বেশি স্বতঃস্ফুর্ততা দেখিয়েছেন, যা তাঁর কবিতার নাম চয়নগুলোতে স্পষ্ট। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ’তরঙ্গ থেকে উঠে আসা শব্দগুচ্ছ’ কবিতায় স্বর্গ থেকে নেমে আসা রেশমী মেঘের কথা বলার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন। মননে পোষন করা গদ্যের শব্দগুলোকে ভেঙ্গেচুরে কাব্যিক আদল দেওয়ার যে ঔদার্য্য মুন্সিয়ানা, কবি তাতে নিঃসন্দেহে সফল। জটিলতায় না গিয়ে প্রাত্যহিক জীবনের সহজ-স্বাভাবিক শব্দের ব্যবহার কবিকে সুপরিচিত করার প্রয়াস এনে দেবে প্রজন্মের পাঠকদের কাছে। কামনা করি, এভাবেই তিনি চিরজীবি হবেন ’জন্মান্তরের কবি’ হিসেবে।

সাব্বির খান, লেখক ও সাংবাদিক

Sunnotay Ishwarer Thot by Rehana Bithi

বৃত্তের নিশিচারণ – রেহানা বীথি

Highlights:

যে চরিত্রগুলো ভাবলেশহীন ঘুরে বেড়ায় দিনের আলোতে, নিশিথ আঁধারের নিস্তব্ধ ঘনতায় তারাই যেন মর্মের ভাষা খুঁজে পায় দ্বিধাহীনভাবে। বোধের অশরীরীরা ধাবিত হয় যে পথে, সে পথে সাথী হয় বিক্ষিপ্ত ভাবনারাও! ’অক্ষর, শব্দ আর বাক্যগুলো’ তারপর সারি বাঁধে দ্বিধাহীন জ্যামিতিক পথে, যেন নিরেট অবয়বে প্রাণের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে! ওদিকে রাতের চারণভূমিতে হাসি, কান্না আর বিষাদে ফোটা ফুলগুলো অনিবার্য ’জীবনে’ মত্ত হয়। রজনী মত্ত হয় বিক্ষিপ্ত ভাবনায়। পরম মমতায় কী যেন উদ্ধারের অলঙ্ঘনীয়তায় তার বসবাস। সজ্জায়নের পথটাও সুগম নয়। ভাবনাগুলো বার বার হোঁচট খায়; বিরতিহীন, আর অবলীলায়। তবে, রাত বলেই হয়ত দীর্ঘায়িত হয় না সেই ভাবনাগুলো। ক্লান্ত রাতের অস্থির মন তা গুছিয়ে নেয়ায় সচেষ্ট হয়। মোটাদাগে এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে গল্পগুলো। গল্পের রাতগুলো, আলো ও আঁধারের তারতম্য, অশরীরী বোধ, দ্বিধাহীন জ্যামিতিক পথ… এসবের যে নির্যাস, তার উপলব্ধি ও মূল্যায়নের ভার আপনাকেই দিলাম।

বৃত্তের নিশিচারণ - Britter Nishicharon

আলো আসে ওখানেও

Highlights:

ভূমিকা-

এক.
বর্তমান ইরাকের মসুল যে শহর, প্রাচীনকালে তাকে বলা হতো নিনেভেহ। সে সময়ের আসিরীয় রাজা আসুরবানিপালের লাইব্রেরির ধ্বংসাবশেষ থেকে ১৮৪৩ সালে গবেষকরা প্রাচীন আক্কাডিয়ান ভাষায় লেখা কিছু মাটির ফলক খুঁজে পেয়েছিলেন। আসুরবানিপালের সময়ে লেখার পদ্ধতি ছিল এমন যে, প্রথমে মাটির ফলকে খোদাই করে লেখা হতো। তারপর সেটাকে স্থায়ী রূপ দিতে পোড়ানো হতো। তখনকার দিনে লেখার এই পদ্ধতিকে ‘কিউনিফর্ম’ বলা হতো। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে গবেষকরা মাটির ফলকের সেই লেখার অর্থ উদ্ধার করেছিলেন, যা ছিল আধুনিক সাহিত্যবিশ্বের জন্য চমকস্বরূপ। মোট ১২টি মাটির ফলক থেকে উদ্ধার হয় এমন এক অসাধারণ কল্পকাহিনী, যা পরবর্তীতে ‘উর শহরের রাজা গিলগামেশ ও তার বন্ধু এনকিদুর কাহিনী’ হিসেবে সমাদৃত হয় বিশ্বসাহিত্যের বোদ্ধাদের কাছে! ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর প্রথম লিখিত গল্প এটাকেই ধরা হয়ে থাকে। মাটির ফলকগুলোতে গবেষণা চালিয়ে জানা যায়, সেগুলোর বয়স ছিল প্রায় ৪০০০ থেকে ৪৫০০ বছর, যা শুধু রামায়ণ বা মহাভারতই নয়, গ্রিসের অডিসি আর ইলিয়ডের চেয়েও পুরোনো ছিল।
সাহিত্য জগতে প্রচলিত একটা কথা আছেÑ ‘যারা গল্প বা উপন্যাস লেখেন, তাঁরা স্বভাবজাত নিঃসঙ্গ হন’। এই নিঃসঙ্গতাই লেখককে বিভিন্ন গল্পের ভিতরে একাকার করে দেয়, উদ্বুদ্ধ করে গল্প রচনায়। কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললে এভাবেও বলা যায়, ‘গল্পের ভিতরে যা কিছু থাকে, তা লেখকের মনোজগতে বিচরণ করা পুঞ্জিভূত বিভিন্ন ঘটনা, চরিত্র আর দিনরাত্রির গুচ্ছভাবনা’। লেখকের মনোজগতের যে বিশাল সময়ভা-ার, তা টইটম্বুর থাকে এসব ঘটনা, চরিত্র আর দিনকাল দিয়ে। ঘটনা, চরিত্র, দিনকাল বলতে গল্পের ভিতর যা কিছু থাকে, তা তো লেখকের ভাবনারই ‘কার্বনকপি’। সুতরাং ভাবনার জগতে লেখক কোনো অর্থেই নিঃসঙ্গ নন! বরং পার্থিব জগতের যে কোনো মানব-মানবীর অভ্যস্ত সমাজ-জীবনের চেয়ে লেখক অনেক বেশি সামাজিক এবং ব্যস্ত! লেখকের পার্থিব জীবন বিবিধ ‘অনুষঙ্গে’ পূর্ণ থাকলে গল্পের যে ঘটনা, চরিত্র বা আবহাওয়াগুলো থাকে, তা সৃষ্টিতে হয়তো লেখক সেভাবে সফল হতে পারতেন না। তাহলে কি লেখক সামাজিক জীব নন? লেখক কি তাহলে সংসারত্যাগী এমন কেউ যাকে সন্ন্যাসী, বাউল বা ব্রহ্মচারী বলে? এর জবাব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৪ সালের ২৭ জুন শিলাইদহ থেকে ইন্দিরা দেবীকে এভাবেই দিয়েছিলেন- ‘আজকাল মনে হচ্ছে যদি আমি আর কিছু না করে ছোট ছোট গল্প লিখতে বসি, তাহলে কতকটা মনের সুখে থাকি এবং কৃতকার্য হতে পারলে হয়তো পাঁচজন পাঠকেরও মনের সুখের কারণ হওয়া যায়। গল্প লেখার একটা সুখ এই, যাদের কথা লিখব তাঁরা আমার দিনরাত্রির সমস্ত অবসর একেবারে ভরে রেখে দেবে, আমার একলা মনের সঙ্গী হবে, বর্ষার সময় বদ্ধঘরের সংকীর্ণতা দূর করবে এবং রৌদ্রের সময় পদ্মাতীরের উজ্জ্বল দৃশ্যের মধ্যে আমার চোখের পরে বেরিয়ে বেড়াবে’! রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প রচনার প্রাথমিক প্রেরণা বা উদ্দেশ্যের যে রূপকল্প, তার কিছুটা আভাস এই কথাগুলোর ভিতরেই পাওয়া যায়।
রেহানা বীথি এমনই একজন গল্প-লেখক। বীথির পৈতৃক নিবাস চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহাডাঙা গ্রামে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম পাস করার পর ২০০১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় একজন আইনজীবী হিসেবে বীথির কর্মজীবন শুরু হয় এবং বর্তমানে তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘শনিবারের আসর’ নামে একটি সংকলনে তাঁর প্রথম গল্পটি প্রকাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে রেহানা বীথির গল্প-লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ।
রেহানা বীথি মোট চৌদ্দটি বাছাইকৃত ছোটগল্প দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ‘আলো আসে ওখানেও’ বইটি। এটাই বীথির প্রথম বই। প্রথম বই প্রকাশের সময় সব লেখকই প্রচ- স্নায়ুচাপে থাকেন। এটা অবশ্য নিয়ম নয়; তবে অবধারিত! বই প্রকাশের বিভিন্ন চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজটি হচ্ছে বইয়ের একটা যুৎসই নাম দেয়া। শুধুমাত্র নাম খুঁজতে গিয়ে লেখককে অনেক রাত নির্ঘুম কাটাতে হয়, সলাপরামর্শ করতে হয় সজ্জনদের সাথে। তারপরেও কি লেখক সন্তুষ্ট হতে পারেন! ‘বইয়ের শ্রেষ্ঠ নাম পৃথিবীর কোনো লেখকই কোনোদিন খুঁজে পেয়েছেন বলে শুনিনি’। রেহানা বীথির ক্ষেত্রেও হয়তো এর ব্যত্যয় হয়নি! একটা বইয়ে অনেকগুলো গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ থাকতে পারে এবং সেখান থেকে কোনো একটা লেখার ‘শিরোনাম বা নাম’ ব্যবহার করে বইয়ের নামকরণ করাটা বেশ পুরোনো প্রথা, যা বীথির বইয়ের ক্ষেত্রেও হয়েছে। বইয়ে ব্যবহৃত নামটি যে লেখার শিরোনাম বা নাম থেকে নেয়া হয়, সেই লেখাটি তখন একই সাথে অন্যান্য লেখাগুলো থেকে কিছুটা আলাদা গুরুত্ব বা মর্যাদা পায় এবং বইয়ের অন্যান্য লেখাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বইয়ের নামকরণের ক্ষেত্রে লেখককে যথেষ্ট সচেতন এবং মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে হয়, যাতে ‘বইয়ের নাম’ পড়ে পাঠকের বুঝে নিতে অসুবিধা না হয় বাকি লেখাগুলোর আদি-অন্তের খবর এবং সেই সাথে বইয়ের পরিশোধিত আগাম কিছুটা স্বাদ!

দুই.
রেহানা বীথির চৌদ্দটি গল্পের একটি ‘আলো আসে ওখানেও’ এবং এই গল্পের নামেই লেখক মূল বইয়ের নামকরণ করেছেন। স্বভাবত কারণেই গল্পটির গুরুত্ব বা মর্যাদা বইয়ের অন্যান্য গল্পের চেয়ে কিছুটা আলাদা হয়েছে! ‘আলো আসে ওখানেও’ গল্পটি সমাজ-জীবনের হাজারো অনুচ্চারিত যে অধ্যায়গুলো রয়েছে তাঁদেরই একটি, যেখানে অন্ধগলির এক ববিতার কথা লিখেছেন বীথি। তাঁর বর্ণনায় ফুটে উঠেছে অন্ধকার গলির বাসিন্দাদের কথা। ‘দিনের আলোয় ঘুমিয়ে থাকে তাঁরা। দিন শেষে যখন রাত নামে, জেগে ওঠে ওরা। সাজানো পসারের মতো নিজেদের সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকে দোকানের মতো ঘরগুলোর সামনে; খদ্দেরের আশায়! উৎকট সাজ আর শরীরের মোহময় বিভঙ্গে খদ্দেরকে আকৃষ্ট করার প্রয়াসে ঢাকা পড়ে যায় পাহাড়সম বুকের মাঝে জমে থাকা কষ্টগুলো। কোনো অবসরে কষ্টগুলো কখনো-সখনো জেগে ওঠে, মনে করিয়ে দেয় অতীতের ভাসা ভাসা কিছু সুখস্মৃতি! ‘ফুলি’ নাম থেকে ববিতা হয়ে ওঠা নারীর মৃত বৃদ্ধ স্বামীর গায়ের আতরের কড়া গন্ধ আর হামানদিস্তায় পান ছেঁচার মতো কদর্য হাসি গায়ে জ্বালা ধরায়। মনে পড়ে যায় সময়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া ফুলির কথা, দুখিনী মা, সবুজ গ্রাম…’। গল্পের মূল নায়িকার ফুলি থেকে ববিতা হয়ে ওঠার অবিচারে ভরা অসম যে পথ, রেহানা বীথি চমৎকার শব্দশৈলীতে তা ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন এই গল্পে। আদিকাল থেকে বাংলাসাহিত্যে এ-ধরনের গল্পের পটভূমি পাঠকদের কাছে নতুন নয়। তবুও রেহানা বীথির ‘আলো আসে ওখানেও, পাঠকদের কাছে এক ‘ভিন্নতার’ স্বাদ এনে দেবে!
ধবধবে জ্যোৎস্নায় সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদে গিয়ে দেখা যায় ডাকঘর, যেখানে গচ্ছিত রয়েছে প্রিয়জনদের অসংখ্য চিঠি। অথচ কেউ সেখানে নেই! সিঁড়ির সবক’টা ধাপ পেরিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে স্বপ্নভঙ্গের এক অনবদ্য গল্প ‘সামনে সিঁড়িপথ’। ‘স্বপ্নচাষী’ গল্পে একজন টিউশন মাস্টারের স্বপ্নহীন জীবন কীভাবে একটু একটু করে রঙিন স্বপ্নের বুননে বদলে দেয়া যায়, তারই গল্প! বাস্তবতার পরাশৃঙ্খলতাকে অস্বীকার করে অলীক স্বপ্নের জালে বোনা অবাস্তব জীবনের যে উপাখ্যান, লেখক শব্দের নিপুণ কারুকার্যতায় ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর ‘স্বপ্নচাষী’ গল্পে। গ্রামের সহজ-সরল ভ্যানচালকের গল্প ‘আলাদিনের চেরাগ এবং…’। আধুনিক গল্পের সাথে রূপকথার অনবদ্য সংমিশ্রণ ঘটিয়ে গল্পকারের ভূমিকায় লেখক রেহানা বীথি এক অনবদ্যতার ছাপ রেখেছেন এই গল্পে, যেখানে যথেষ্ট সতর্কতার সাথে তিনি দারিদ্র্যের কষাঘাতে পতিত নিম্ন-মধ্যবিত্তের মনস্তাত্ত্বিক ঘোর-প্যাঁচগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন। বেদে বহরের মেয়ে ললিতার ডাঙার প্রতি আকর্ষণ, ডাঙার ছেলে গণেশের সাথে তার প্রেম এবং সংসার বাঁধার স্বপ্ন, ‘এই তিনকে’ বেঁধেছেন লেখক তাঁর ‘মধুমতির বেদেনী’ গল্পটিতে। এছাড়াও বইটিতে রয়েছে নগরে দেবদূত, অতিক্রম, দলছুট প্রজাপতি, সুখকেদারা এবং অতসীপ্রেম, বিষধর, ফেরা, কাঁসার বাটি, শোরগোল অতঃপর…ইত্যাদি শিরোনামের অত্যন্ত সুপাঠ্য গল্পগুলো।
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ শহর উরের রাজা ছিলেন গিলগামেশ। একাধারে তিনি ছিলেন অত্যাচারী এবং খামখেয়ালী। তিনি শারীরিকভাবে তিনভাগের দুই ভাগ ছিলেন দেবতা। ভাবতেন, দেবতাদের মতো তিনিও ছিলেন অসীম ক্ষমতাশালী এবং অসাধ্য বলে তাঁর ভাবনায় কিছু ছিল না। গিলগামেশের গল্পটি ছিল মূলত ‘অহংবোধ ভেঙ্গে একজন সাধারণ মাটির মানুষে রূপান্তর হওয়ার’ গল্প। ‘রাজা গিলগামেশ’ গল্পে রূপকের ব্যবহার অত্যন্ত প্রাঞ্জল। কয়েক হাজার বছরের পুরোনো গল্পে রূপকের ব্যবহারে এবং তার মাত্রায় যে পা-িত্যের বহর দেখা যায়, তা গল্পটিকে করেছে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য। রেহানা বীথির গল্পগুলোতেও রয়েছে রূপকের অকৃপণ ব্যবহার। তাঁর প্রতিটা গল্পে একই সাথে রয়েছে জীবনের বিবিধ বৈচিত্র্য এবং অবিচারে পতিত জীবন, যা খোলা চোখে দেখা গেলেও লেখকের বর্ণনাশৈলীতে হয়েছে আরো বেশি প্রাঞ্জল।
‘রাজা গিলগামেশ’ যদি পৃথিবীর প্রথম স্বীকৃত গল্প হয়, তাহলে তারই ধারাবাহিকতায় আজ-অবধি যত গল্প লেখা হয়েছে এবং রেহানা বীথির গল্পগুলোও একই ধারাবাহিকতায় এবং ফ্রেমে বাঁধা বললে অত্যুক্তি করা হবে না। বইয়ের প্রতিটা গল্পে রূপক ব্যবহারের আধিক্য, সূক্ষ্ম বিবেচনায় সমাজ-সংসারের চুলচেরা বিশ্লেষণ, জীবনের বিস্তৃত স্বপ্ন, গল্পের ছলে বিবিধ সমস্যার সমাধান ইত্যাদি বিষয়াদিগুলো গল্পকে শুধু গল্পের সীমারেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, আগবাড়িয়ে ক্ষেত্রবিশেষে তার সমাধানও দিয়েছেন লেখক। বীথির প্রতিটি গল্পে যে মিলের জায়গাটি রয়েছে, তা হলো ’স্বপ্ন’। গল্পের উপাদান হিসেবে স্বপ্নের ব্যবহার একটি স্বভাব বা অভ্যাস। সে কারণে গল্প-লেখক হিসেবে রেহানা বীথির ‘লেখক-চিহ্ন’ হতে পারে ‘স্বপ্ন’, যা তাঁকে পাঠকসমাজে স্বতন্ত্রভাবে উপস্থাপন এবং স্বপ্রতিভূ করবে!
গল্প লেখার মানুষ পৃথিবীতে খুব বেশি নেই; তবে গল্প বলতে পারে প্রায় সবাই। গল্প লেখা আর গল্প বলা এক জিনিস নয়। গল্প লেখা এক ধরনের কাজ, যা তৈরি করতে হয়। ‘ঘরে তো মানুষই থাকে। কিন্তু ঘর বানাতে পারে কয়জন’! গল্প লেখারও কিছু শৈলী এবং কলাকৌশল আছে, যা সবাই রপ্ত করতে পারেন না। এ ব্যাপারে কয়েকজন লেখকের সাথে একাধিকবার আলাপও হয়েছে আমার। সবাই একমত হয়েছেন যে, গল্প লেখা গল্পবাজদের কাজ নয়। গল্প লেখার সুনির্দিষ্ট কলাকৌশল বা ব্যাকরণ হয়তো নেই। তবে যা কিছু আছে, তা নিজ থেকেই আয়ত্ত করতে হয়। লেখকের সিদ্ধতা লাভ হয় নিজ তাগিদেই। গল্প লেখা ‘গুরুমুখী বিদ্যা নয়’! পৃথিবীর সবকিছুই সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলে। গল্প লেখারও কিছু নিয়ম আছে, যার অনুসরণে লেখকের সিদ্ধতার পরিমাপ হয়। ভিন্ন কথায়, একজন লেখকের সাথে অন্য লেখকের পার্থক্যের জায়গাটা মূলত তাঁদের সিদ্ধতা পরিমাপের মধ্য দিয়েই হয়। আর এই পরিমাপের গুরুদায়িত্বটি পালন করেন পাঠক! ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় রেহানা বীথির প্রথম প্রকাশিত গল্পের বই ‘আলো আসে ওখানেও’ নিঃসন্দেহে পাঠকদের কাছে সমাদৃত হবে।

সাব্বির খান, লেখক ও সাংবাদিক

আলো আসে ওখানেও

Scroll To Top
Close
Close
Shop
Sidebar
Sale
0 Wishlist
0 Cart
Close

My Cart

Shopping cart is empty!

Continue Shopping