17
Feb2021
যুগলবন্দী অণুগল্পের ইতিহাসে অনন্য ব্যতিক্রমী প্রয়াস। দু ‘জন লেখক মিলে যৌথ ভাবে একটি গল্পের নির্মাণ! একজন একটি অনুচ্ছেদ বা একটি বাক্য লিখলেন ,অপর জন সেই ভাবনার রেশ ধরে গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়—এও কি সম্ভব? সম্ভব ।সম্ভব যে সেটা প্রমাণিত হয়েছে কিছুদিন আগে অবুগল্প গ্রুপে আয়োজিত ‘যৌথ ইভেন্ট’ নামক একটি ইভেন্টে । প্রমাণিত হয়েছে ‘যুগলবন্দী’ নামক বইটিতে।
বইটিতে যৌথ গল্প ছাড়াও উক্ত লেখকদ্বয়ের আলাদ অধ্যায় করে কিছু ‘একক অণুগল্প’ও রয়েছে যা পাঠকদের কাছে বাড়তি পাওনা।
অণুগল্পগুলির মধ্যে কিছু অসম্ভব ভালো অণুগল্প রয়েছে ,যেমন-খেদু, নরেন গোঁসাই, ভূমন্ডলের মাচা,মাংস ,একহাত ,ঢেউ শুধু ঢেউ ঢেউ।
‘খেদু’ গল্পটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো যৌনতা।গল্পে আমরা দেখি রাহেলার স্বামী জসিম শেখ অন্য নারীতে ( যে কি না তাদের ই কাজের বুয়া)আসক্ত।স্বাভাবিক ভাবেই রাহেলা স্বামী থেকেও যৌনতা থেকে বঞ্চিত ।এই বঞ্চনা, এই অবদমনের শিকার রাহেলাকে আমরা দেখি বিকৃত যৌনতার দিকে ধাবিত হতে।সে খেদু নামের সদ্য গোঁফ ওঠা কিশোর ছেলেকে অবলীলায় ঘরে ডেকে নেয়।অবদমন তাকে দিয়ে বলিয়ে নেয় যৌনগন্ধীমুলক কথা।আর খেদু নামক কিশোর ছেলেটি অকালে অসময়ে পেয়ে যায় যৌনতার স্বাদ। লেখকদ্বয় এমনই এক অসঙ্গতিপূর্ণ ঘূণধরা সমাজের চিত্র খুব স্বার্থক ও জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন ।অসাধারণ ট্রিটমেন্টের জন্য এরকম একটি বিষয়ের গল্প কোথাও সুরসুরিমূলক ভাললাগা অনুভূব হয়নি।বরং পাঠকের চেতনায় সটান আঘাত হানে।
এই গ্রন্থে আমার আর একটি খুব পছন্দের অণুগল্প-‘নরেন গোঁসাই’।এটি একটি ভাবের গল্প।ভাবের গল্প আসলে আমাদের একটি অন্যরকম মুক্তির স্বাদ দেয় । ‘সংসারী নরেন’ যখন নরেন থেকে ‘গোঁসাই’হলো ,সে দেখে :
‘গোঁসাই ,গোঁসাইয়ের ভেতর একটি নদী খনন করতে চায়,গোঁসাই নদীটাকে খনন করতে চায় না, নদীই নিজেকে খনন করে, গভীর করে।গোঁসাইয়ের পাশের নদী, নদীর ভেতরে ডুবন্ত ঢেউ এর গুঁতো, করাল দাঁতের চাবানি’—কী গভীর দর্শন! আর কী অসাধারণ প্রকাশ! লালন ফকিরের ছায়া আছে যেন নরেনের চরিত্রটিতে।
‘ভূমন্ডলের মাচা’ -এই গল্পটিও একটি চমৎকার গল্প।আলতাবানু যেন এই পৃথীবীর মানবরূপী ঈশ্বরী।সে পোটলায় করে বয়ে বেড়ায় ভুবননেশ্বরের জিজ্ঞাসা, ভূমন্ডলের বীজতলা আর একখন্ড আসমুদ্র হিমাচল।সে যেন পৃথিবীময় উড়িয়ে দেয় ভালোবাসার ,মঙ্গলের বীজ মন্ত্রের বাতাস।
সত্যি বলতে কি ,এমন সব উৎকৃষ্ট বিষয়ভাবনা নিয়ে যদি উৎকৃষ্ট মানের অণুগল্প লিখিত হতে থাকে তবে অণুগল্প কেন স্থায়ী হবে না?কেন স্থান পাবেনা বাংলাসাহিত্যের মূল ধারায়? নিশ্চয়ই পাবে।অণুগল্প নিজগুণে সেই স্থান করে নেবে।
যৌথ গল্প অধ্যায়ে আরো অনেক ভালো গল্প রয়েছে।রয়েছে কিছু হালকা সহজ সরল প্রেমের গল্প ও ,যেমন-যেমন ‘লতাপাতা’, ‘কলিমুদ্দিন +রুমানা’ , ‘ব্রেকাপের পর’।সহজ সরল হলেও কোনো কোনো গল্প বেশ মন ছুঁয়ে যায়।
এছাড়া একক গল্প গুলোতো রয়েছেই।একটি আলোচনায় আসলে সবগুলো গল্পের ওপর আলোকপাত করা সম্ভব নয়।পরবর্তীতে ইচ্ছা রইল আরো কয়েকটি গল্প নিয়ে আলোচনার।
আর একটি কথা—লেখকদ্বয়ের মধ্যে বিলাল হোসেন তো অণুগল্পের রাজা।তাঁর সম্পর্কে কিছু বলব না আমি।তবে খালিদার একক গল্প গুলো পড়ে বুঝতে পেরেছি আগের চেয়ে তিনি কতটা পরিণত!
শুভেচ্ছা দুজনকেই।যুগলবন্দী অণুগল্প সাহিত্যে ব্যতিক্রমী একটি বই । বইটির সাফল্য কামনা করি।যারা এখনো বইটি সংগ্রহ করেননি।করে ফেলুন।লাভ বৈ ক্ষতি হবে না।