Description
সম্পাদকীয়- অনুপ্রাণন – ১১তম বর্ষ ২য় সংখ্যা- কবি ও কবিতা সংখ্যা- ২য় পর্ব।
শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণনের একাদশ বর্ষের ৪টি সংখ্যা নিয়ে পরিকল্পনা সম্পর্কে আমরা ১১তম বর্ষ ১ম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে আলোচনা করেছিলাম। পরিকল্পনা এই যে, একাদশ বর্ষের ৪ টি সংখ্যায় বাংলাদেশের ১০০ জন নির্বাচিত কবির জীবনী, প্রকাশনা, পুরস্কার ও সম্মাননা, উল্লেখযোগ্য কবিতা এবং তাঁদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা প্রকাশিত হবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ফেব্রুয়ারি বই মেলায় ‘কবি ও কবিতা সংখ্যা- ১ম পর্ব’ বাংলাদেশের ২৭ জন নির্বাচিত কবির জীবনী, প্রকাশনা, পুরস্কার ও সম্মাননা, উল্লেখযোগ্য কবিতা এবং কবিদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা প্রকাশিত হয়। সংখ্যাটি পাঠক মহলে যথেষ্ট সমাদৃত হয়। সেকারণে ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণনের একাদশ বর্ষের পরিকল্পনাটি অব্যাহত রেখে আমরা কবি ও কবিতা সংখ্যা দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন করেছি। এই পর্বেও বাংলাদেশের আরও ২৭ জন নির্বাচিত কবির জীবনী, প্রকাশনা, পুরস্কার ও সম্মাননা, উল্লেখযোগ্য কবিতা এবং কবির সাহিত্য কর্ম নিয়ে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
খুব সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, কোন কবিদের আমরা বাংলাদেশের বলছি আর কোন বাংলা সাহিত্যের কবিরা বাংলাদেশের না। এই প্রশ্নের উত্তরে আমাদের ব্যাখ্যা এটাই হতে পারে যে, বাংলা ভাষার যেসব কবির জন্ম বাংলাদেশে, যাঁদের কবিতার বই মূলত বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবং যাঁদের কবিতার মূল পাঠক সমাজ বাংলাদেশের নাগরিক। আরও একটা প্রশ্ন উঠতে পারে যে অনুপ্রাণন ত্রৈমাসিকের কবি ও কবিতা সংখ্যাগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কবিদের নাম চয়নের ক্ষেত্রে কোন কোন মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়েছে। অথবা প্রশ্নটা অন্যভাবে করা যেতে পারে যে, এই নির্বাচন প্রক্রিয়া কতটুকু নৈর্ব্যক্তিক? সম্পাদকের পক্ষ থেকে এই প্রশ্নের উত্তর হতে পারে যে, প্রথমত বাংলাদেশের যেসকল কবির কিছু উল্লেখযোগ্য কবিতা আছে, অর্থাৎ যেসকল কবির কয়েকটি কবিতা বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের পাঠক মহলে পরিচিত ও পাঠকপ্রিয়। দ্বিতীয়ত যেসকল কবিকে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান ও মহল থেকে তাঁর কবিতার জন্য পুরস্কার অথবা সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে, অর্থাৎ যিনি ইতিমধ্যেই মূল্যায়িত হয়েছেন। তৃতীয়ত যেসকল কবি তাঁর কবিতায় নিখাদ মৌলিকত্ব ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। চতুর্থত যুদ্ধাপরাধীদের সাথে যাঁর কোনরূপেই সংশ্লিষ্টতা নেই এবং ছিল না। তথাপি, ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণনের কবি ও কবিতা সংখ্যাগুলোতে আলোচনার জন্য কবি নির্বাচনে নৈর্ব্যক্তিকতার দাবী আমরা করতে পারি না। কেননা, সম্পাদনা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরাই এই নির্বাচনের কাজটুকু করেছেন। আমরা জানি সাহিত্যের রস আহরণ ও আস্বাদনের বিষয়টি সম্পূর্ণই ব্যক্তিক।
একটি বিষয় বার বার আলোচিত হওয়া সত্বেও পুনঃ পুনঃ আলোচন হওয়া দরকার কেননা বিষয়টির আশু কোন সমাধান এখনো আমাদের দৃষ্টির সীমানায় আসেনি। দুর্ভাগ্যবশত: বাংলাদেশের শিল্পী কবি ও সাহিত্যিকদের জন্য শুধুমাত্র লেখালেখির মাধ্যমে মানসম্মত জীবন ধারণ করা খুব কঠিন। বিশেষ করে এই সংকট কবিদের ক্ষেত্রে আরও গুরুতর। কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে শিল্প ও সাহিত্যের সমঝদারের সংখ্যার স্বল্পতা। বিশেষ করে চিত্রকর্ম পয়সা দিয়ে কেনার লোকের যেমন অভাব, তেমনই সাহিত্যের পাঠকের। শিল্পী ও সাহিত্যিকদের তাই তাঁদের জীবন ধারণের তাগিদে অন্য পেশায় যুক্ত হতে হয়। এই অন্য পেশায় যুক্ততার কারণে অনেক সময় নিজের স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকদের নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সরকারী প্রতিষ্ঠানসহ সকল সাংস্কৃতিক সামাজিক সংগঠন উদ্যোগী হয়ে বই কেনা ও বই পড়ার দিকে যাতে করে দেশের তরুণ সমাজ আকৃষ্ট হয় সেই লক্ষ্যে কিছু বাস্তব কর্মসূচি নেয়া খুব জরুরি।
অনুপ্রাণন ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে যে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাহিত্যের বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য একটি পাঠচক্র গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন বিভাগের ছাত্র অল্প পরিমাণে চাঁদা দিয়ে এই পাঠচক্রের সদস্য হতে পারবেন। পাঠচক্রের সদস্যদের অনুপ্রাণন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত তাঁদের পছন্দের বই পড়তে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বইটির উপর একটি পাঠ-প্রতিক্রিয়া লেখার জন্য উৎসাহিত করা হবে। তাদের লেখা পাঠ-প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা পরিষদ শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, অনুপ্রাণন পত্রিকায় অথবা শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণনে প্রকাশ করার জন্য মনোনীত করলে তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণে সম্মানী দেয়া হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আশা করি আমরা কয়েকজন সাহিত্যের পাঠক তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারবো।
স্কুল-কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা শিল্প-সাহিত্যের রস আহরণের উপযুক্ততা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্জন করে না। তাদের মনন ও স্পৃহা জাগরণের জন্য সক্রিয় উদ্যোগের কেন্দ্রগুলি বিস্তৃত হওয়া খুবই জরুরী। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলা একাডেমীর তরুণ লেখক প্রকল্পের মতো প্রকল্প প্রতিটি জেলায় বিস্তৃত হোক এটাই আমাদের চাওয়া। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচীর মতো কর্মসূচীগুলো সরকারী-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক সাহিত্য নিয়ে তরুণদের মাঝে যেসকল আলোচনা-সমালোচনা আছে সেই আলোচনাগুলো কবি ও লেখকদের পাঠ করা প্রয়োজন এবং গভীরভাবে ভাবা দরকার যে কী করে সাহিত্যপাঠে তরুণদের আকৃষ্ট করা যায়। এক্ষেত্রে লেখকদেরকে সতর্ক থাকতে হবে যে, নিজেদের বহুল ব্যবহৃত প্রতিক্রিয়া সমূহ যেন তাদের চিন্তার জগতকে সীমাবদ্ধ না করে রাখে। পাঠক সমাজকে দূরে ঠেলে দিয়ে কোন সাহিত্যই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয় না। তাই, খোলা মন নিয়েই প্রতিটি লেখককে পাঠকদের প্রতিক্রিয়াগুলো গ্রহণ করতে হবে, মূল্যায়ন করতে হবে এবং নিজেদেরকে সস্তা না করে সত্যিকার সাবলীল ও সৃষ্টিশীল সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করতে হবে। কেননা এভাবেই আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হওয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি।
There are no reviews yet.