Additional information
Weight | 0.365 kg |
---|---|
Published Year |
$ 4.01 $ 5.35
১৯০৬ সাল থেকে রচিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ী ক্ষুরধার গানগুলো নিয়ে কাজ করার তীব্র অনুভবে তাড়িত হই। গান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা না-করার অভাব থেকে এ গবেষণার জন্ম। সুযোগ আসে ২০০৯ সালে। তা অবশ্য কিছু দূর এগোনোর পর শেষও হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আবার কাজটি শুরু হয় সরকারি অর্থায়নে। তখন নতুন করে সাজাই ফেলোশিপ গবেষণার সূচিপত্র।
আগে চেয়েছিলাম সময়ক্রমে গবেষণা কাজটা করতে; পরে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণা-সৃষ্টিতে দেশাত্মবোধক গানের ভূমিকা (১৯৪৭-৭১)’ গবেষণার অধ্যায় বিভাজন করি—
ভূমিকা, দেশাত্মবোধক গানের পটভূমি, ১৯৪৭-৫২ সনের ভাষা আন্দোলন পর্বের গান, ১৯৬৯-৭০ সনের গণ-অভ্যুত্থান পর্বের গান এবং ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ পর্বের গান।
তবে শেষের পর্বটিতে তিনটি সেমি-পর্ব যুক্ত হয়—প্রেরণামূলক বঙ্গবন্ধুর গান, সংগ্রামে-সংগীতে নারীর অবদান এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান।
গ্রন্থটিতে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন এবং নজরুল স্বরলিপিকার সুধীন দাস এবং বিশিষ্ট গণ সংগীতশিল্পী শুভেন্দু মাইতি (যিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অর্থ সংগ্রাহক ছিলেন)—তিন বিশিষ্ট জনের সাক্ষাৎকার সংযোজিত হয়েছে। প্রায় ৯০০টি দেশপ্রেরণামূলক গানের তালিকা দেয়া হয়েছে।
গবেষণার দীর্ঘ পথে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হই। তবে ধৈর্য ধারণ করে সবটা সহ্য করেছি; গবেষণা কর্মের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে। পরম করুণাময়ের অপার কৃপায় কাজটি শেষ করতে পেরেছি। তিনি সর্বোতভাবে সাহায্য করেছেন; সে প্রমাণ প্রতি মুহূর্তেই পেয়েছি। বাকিটা বিবেচনার ভার সম্মানিত পাঠকদের।
ফেলোশিপ গবেষণাটির প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সার্বিক দায়িত্বে ছিলাম আমি।
যাদের আন্তরিকতা, সহযোগিতা পেয়েছি, তারা হলেন—
শ্রী গোবিন্দলাল দাস, শ্রী করুণাময় অধিকারী, জনাব ড. মূহ: আব্দুর রহীম খান, লিপিকা ভদ্র, সঞ্জয় কুমার বণিক, মল্লিকা দাস, ড. সাইম রানা, ড. সেলুবাসিত, ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন (গিয়াস শামীম), ড. রঘুনাথ ভট্টাচার্য, আবদুল মতিন, সুধীন দাস, শুভেন্দু মাইতি, মোবারক হোসেন খান, সেলিম রেজা প্রমুখ সুহৃদগণ। সবাইকে কৃতজ্ঞ-চিত্তে স¥রণ করছি।
সময়ে-অসময়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় যাদের, তারা হলেন আমার পূজনীয় শিক্ষক—ড. সাঈদ-উর রহমান এবং অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক।
গবেষণা কাজটির মূল্যায়ন করেছেন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। তার আশীর্বাদকে ভক্তি জানাই।
‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম’-এ প্রেরণাদায়ী গানগুলোর যাদুমন্ত্রে যুদ্ধ জয়ের নেশায় বীর বাঙালি দুর্বার গতিতে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা।
সেই গানগুলোর পটভূমি এবং গানগুলো সম্পর্কে সকলে জানতে পারবেন যার সহযোগিতা, সহমর্মিতায় তিনি—অনুপ্রাণন প্রকাশনের সত্ত্বাধিকারী আবু এম ইউসুফ ভাই। এই ফেলোশিপ গবেষণা ও সমীক্ষা ধর্মীগ্রন্থটি অনুমোদন ও প্রকাশের উদ্যোগ নেবার জন্য তার প্রতি অপরিসীম আন্তরিকতা প্রকাশ করছি। ২০২০ সালের বইমেলার বই-প্রকাশনার সীমাহীন ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও গ্রন্থটির নামকরণ করে তিনি কৃতজ্ঞাপাশেবদ্ধ করেছেন।
ড. শিল্পী ভদ্র
ঢাকা।
Weight | 0.365 kg |
---|---|
Published Year |
কামরুল ইসলাম
জন্ম: কুষ্টিয়ার ফিলিপ নগর গ্রামের গোলাবাড়ি পাড়ায়। পেশা: অধ্যাপনা (ইংরেজির অধ্যাপক)। বর্তমানে এইচ এস টি টি আই, রাজশাহীতে পরিচালক পদে ( প্রেষণে) কর্মরত আছেন। নব্বইয়ের দশকে চ‚ড়ান্তভাবে কবিতার জগতে প্রবেশ। তিনি একজন দ্বি-ভাষিক কবি। শালুক, একবিংশ, কবিতাপত্র, উলুখাগড়া, চিহ্ন, কালি ও কলম, অনুপ্রাণনসহ বিভিন্ন লিটল ম্যাগ ও সাহিত্য পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করে থাকেন। এছাড়াও বাক, শব্দকুঞ্জ, শিল্পচিন্তা, ঐহিক, তীরন্দাজসহ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অনেক ওয়েব ম্যাগাজিনেও তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
তার ইংরেজিতে লেখা কবিতা পৃথিবীর নানা দেশের ওয়েব ম্যাগাজিন ও অ্যান্থলজিতে প্রকাশিত হয়ে আসছে। ভারত ভিশন, অতুনিস পোয়েট্রি, ওয়ার্ল্ডপোয়েট্রি ম্যাগাজিন, পোয়েটস আনলিমিটেড, টাইফাস, কালচারাল রেভারেন্স, স্টার কাউন্টার ম্যাগাজিনসহ অনেক আন্তর্জাতিক প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকায় তার কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। স্প্যানিশ, ফরাসি, ইতালীয় ও রোমানীয় ভাষায় অন‚দিত হয়েছে তার অনেক কবিতা ।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ-
দ্বিধাান্বিত সুখে আছি যমজ পিরিতে (১৯৯৯), ঘাসবেলাকার কথা (২০০১), যৌথ খামারের গালগল্প (২০০৬)
সেইসব ঝড়ের মন্দিরা (২০০৮), চারদিকে শব্দের লীলা (২০১০) অবগাহনের নতুন কৌশল (২০১১),
মন্ত্রপড়া সুতোর দিকে হাওয়া, (২০১৪)।
প্রবন্ধগ্রন্থ-
কবিতার বিনির্মাণ ও অন্যান্য (২০০৯), রবীন্দ্রনাথ: বিচিত্রের দ‚ত (২০১৩)
কবিতার স্বদেশ ও বিশ্ব
ভূমিকা
কবিতার ভেতর ঘুমিয়ে থাকে এক অদ্ভুত জীবন কিংবা জীবনের গভীরে লুকিয়ে থাকে এক অদ্ভুত কবিতা। সে গভীর আর অদ্ভুতের উপলব্ধিই আমার তপস্যা। সে তপস্যা জড়িয়ে ধরে আষ্টেপৃষ্ঠে কোনো কোনো মুহূর্তে যখন প্রাত্যহিক জীবনের আর সব কাজ ঘর গেরস্থালি তুচ্ছ হয়ে পড়ে। এ আমার বহুকালের যাপন। কিন্তু তা নিয়ে লিখবো কখনও এমন সাহস ছিল না। দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীর সম্পাদক কবি ওবায়েদ আকাশের প্ররোচনায় প্রথমবারের মতো সৈয়দ শামসুল হকের পরানের গহীন ভিতর, আবুল হাসান ও নির্মলেন্দু গুণের কবিতাগুলো নিয়ে লেখা গড়গড় করে বেরিয়ে যায় আমার কলম ধরে যা সংবাদ সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৪/২০১৫ সালে। পরবর্তীতে কবি ও প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ নূরুল হকের আস্কারায় রফিক আজাদের কবিতা, রবীন্দ্রনাথের কবিতায় মৃত্যু চেতনা ও নিজেরই আগ্রহে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের যে কবিতাগুলো স্টেজে উপস্থাপিত হয়েছিল সেগুলো নিয়ে লিখে ফেলি অনায়াসে। তাই এ গ্রন্থের সকল লেখা আমার কাছে অনুভবের সহজ বর্ণনার গদ্য হিসেবে স্বীকৃত যা উপরে উল্লেখ করা দুজনের কারণে না হলে হয়তো কোনোদিন লিখিত হতোই না। এই লেখাগুলো সংকলিত করে গ্রন্থ হিসেবে সাদরে প্রকাশের দায়িত্ব নিয়ে অগ্রজ লেখক ও প্রকাশক আবু এম ইউসুফ ভাই কৃতজ্ঞতার চেয়ে মায়ার বাঁধনে বেঁধে নিলেন।
মগ্নচৈতন্যের কবি ও কবিতা
বঙ্গ রাখাল
জন্ম : ১২ জুন, ঝিনাইদহ।
শিক্ষা : ঝিনাইদহের বসন্তপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, দুঃখী মাহমুদ ডিগ্রী কলেজ (ঝিনাইদহ) থেকে এইচ.এস.সি। সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে স্নাতক (সম্মান) এবং একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা স্কুল অফ ইকনোমিকস থেকে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ইকোনমিকস ডিগ্রী। গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থেকে গণহত্যার উপর পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী অর্জন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সদস্য।
কর্মজীবন : লক্ষীপুর, ভবানীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের বাংলার প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে তিনি সমাজসেবামূলক একটা বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত।
প্রকাশিত গ্রন্থ :
১. সংস্কৃতির দিকে ফেরা (প্রবন্ধ, ২০১৫)
২. লোক মানুষের গান ও আত্ম অন্বেষণ (গবেষণা, ২০১৬)
৩. মানবতাবাদী লালন জীবন অন্বেষণ (প্রবন্ধ, ২০১৭)
৪. হাওয়াই ডাঙ্গার ট্রেন (কবিতা, ২০১৮)
৫. মনীষা বীক্ষণ ও অন্যান্য (প্রবন্ধ, ২০১৮)
৬. অগ্রন্থিত রফিক আজাদ (সম্পাদনা, ২০১৯)
৭. পাগলা কানাই ও তাঁর তত্ত্ব দর্শন (সম্পাদনা, ২০১৯)
৮. লণ্ঠনের গ্রাম (কবিতা-২০১৯)
৯. ছোটবোয়ালিয়া-জয়ন্তীনগর-বসন্তপুর গণহত্যা (অভিসন্দর্ভ)
সম্পাদিত ছোট কাগজ : নিহারণ, বঙ্গস্বর, শঙ্খধ্বনি, শব্দকুঠি ।
ই-মেইল : bangorakhal.bd@gmail.com
কবিতার করতলে
ভূমিকা
সেই দূর শৈশবেই বজ্রকণ্ঠ’র প্রেমে পড়ে যাই। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান কিংবা ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ তোমার আমার ঠিকানা’ ; ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর ‘বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার নেতা, আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ এসব শুনতে শুনতেই যুদ্ধের ডাক এেেলা। সেই মহানায়কের নির্দেশেই ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে’ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো এদেশের সর্বস্তরের মানুষ। অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের জন্ম হলো। আমরা সগৌরবে গেয়ে উঠলাম ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নামে বইটি এই দুই শ্রেষ্ঠ বাঙালির প্রতি আমার ভালোবাসারই অভিজ্ঞান । হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর প্রস্তুতিপর্বে সারা পৃথিবীর মানুষ এক মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে যায়। কোভিড-১৯ অতি দ্রুত ছড়াতে থাকে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। যখন ক্রমশ আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং গোটা পৃথিবী এই অণুজীবের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে, ঠিক সেসময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জন্মশতবার্ষিকীর বছরব্যাপী কর্মসূচিকে উৎসবমূখর পরিবেশে না করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুবই সীমিত পরিসরে পালনের নির্দেশ দেন, যাতে কর্মসূচির কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি না পায়।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে ভাবা যায় না। ’৪৭-এর পরপরই তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের কথা ভাবতে শুরু করেন। আরেকজন বাঙালি, যিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ^দরবারে পরিচিত করিয়েছেন, যার কবিতা গান গল্প উপন্যাস নাটক প্রবন্ধ-নিরন্ধ এমনকি চিঠিপত্র আমাদের চেতনাকে সবসময় উজ্জীবিত রাখে, ভরসা যোগায়, জীবনকে আলাদাভাবে চিনতে শেখায়, তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যার লেখা গান আমাদের জাতীয় সংগীত। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু ভেবে রেখেছিলেন ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় রচিত রবীন্দ্রনাথের ‘ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেবেন। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুযারি মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকেই এই গানটির প্রথম ১০ লাইন জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচিত হয়।
পূর্ববঙ্গে এসে রবীন্দ্রনাথ যে পূর্ণাঙ্গ রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন, তা বলাই বাহুল্য। রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের নদী-মাঠ-ঘাট-মানুষ-মাটি এতটাই ভালোবেসে ফেলেছিলেন যে, ১৩২৯ সালের ২ বৈশাখ ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে লিখলেন ‘শিলাইদহ ঘুরে এলুম- পদ্মা তাকে পরিত্যাগ করেচে’ তাই মনে হলো বীণা আছে, তা’র তার নেই। তার না থাকুক, তবু অনেক কালের অনেক গানের স্মৃতি আছে । ভালো লাগল সেই সঙ্গে মনটা কেমন উদাস হলো।’ সাজাদপুর থেকে চলে যাবার পর বহুদিন বাদে কবি আর এক বার অনেকটা প্রাণের টানেই এখানে এসেছিলেন। ১৩০৪ সালের ৮ আশ্বিন সাজাদপুর ঘাটে বোটের ওপরে বসে লিখেছিলেন ‘যাচনা’ (কল্পনা) । ‘ ভালোবেসে সখী, নিভৃতে যতনে / আমার নামটি লিখিও তোমার / মনের মন্দিরে।’ পূর্ববঙ্গের প্রতি রবীন্দ্রনাথের অকুণ্ঠ ভালোবাসার বিষয়টি তাঁর নানামুখী কর্মকাণ্ডের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়, এমনকি তার রবীন্দ্রবাউল হয়ে ওঠা এই পূর্ববঙ্গে এসেই। বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ববঙ্গ বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
রবীন্দ্রনাথ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ
চন্দন আনোয়ার। গল্পকার, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক। জন্ম: ৮ই জানুয়ারি, ১৯৭৮, নাটোর। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নিযুক্ত আছেন। লেখকের ‘শাপিত পুরুষ’ ‘ইচ্ছা মুত্যু’ ‘বাংলা ছোট গল্প’ ও ‘তিন গোত্রজ গল্পকার, মানিক-হাসান-ইলিয়াস’ সহ আরো অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।
এই সময়ের কথাসাহিত্য-১
আশরাফ উদ্দীন আহ্মদ
কবি-কথাশিল্পী-প্রাবন্ধিক।
জম্ম- ১৬ কার্তিক, ১৩৮৪ বাং, বোয়ালমারী, ফরিদপুর।
আম্মা- বেগম সালেহা আহ্মদ,
আব্বাÑআফতাব উদ্দীন আহ্মদ,
শিক্ষা- স্নাতকোত্তর (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখালেখি কৈশোরেই, ছড়া দিয়ে হাতেখড়ি, কবিতা-ছোটগল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখা মূলত। বাংলা একাডেমী পরিচালিত ১৯৯৬ এর ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ র তৃতীয় কোর্সে অংশ এবং প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ সীমান্তরেখা ’ ১৯৯৭ সালে প্রকাশ, দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘ চতুর্ভূজ’ (যৌথ) ২০০২ সালে প্রকাশ বইমেলায়, তৃতীয় গল্পগ্রন্থ‘ ভালোবাসা ও এসব নিছক গল্প’ ২০০৬ সালের বইমেলায় প্রকাশ, চতুর্থ গল্পগ্রন্থ ‘পদ্মাপাড়ের গল্প (যৌর্থ) ২০০৭ সালে প্রকাশ বইমেলায়, পঞ্চম প্রকাশ, প্রবন্ধগ্রন্থ ‘কথাকার ও কথাসাহিত্য’ ২০১৬ সালে বইমেলায়, ষষ্ট প্রকাশ, প্রবন্ধগ্রন্থ ‘ মুলধারা সাহিতের রকমফের’ ২০১৯, সপ্তম প্রকাশ, গল্পগ্রন্থ ‘তারপর অন্ধকার দুঃসময়’ ২০১৯, অষ্টম প্রকাশ, গল্পগ্রন্থ ‘ হামিদালীর সুখ-স্বপ্ন ও অন্যান্য গল্প’ ২০২০ সালের একুশে বইমেলায়, নবম প্রকাশ, গল্পগ্রন্থ ‘ সেদিনও উঠেছিলো চাঁদ দিয়েছিলো জ্যোৎস্না’ (প্রকাশিতব্য)।
পৈত্রিক আদিনিবাস পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরে, সীমান্ত-সীমান্তের এপার-ওপারের প্রকৃতি ও মানুষ এবং তাদের জীবন ও জীবিকার পিচ্ছিল বিড়ম্বনা গল্পের মূল বিষয়-আশয়। সে সমস্ত চরিত্রগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে গল্পের আখ্যানে কাহিনীর মেজাজ বা স্বরে, কখনো মনে হয় তারাই গল্পের স্বপ্নবীজ, স্বপ্নের আঙ্গিকে নির্মিত হয়েছে কাঠামো, বাস্তবিকই মানুষ যেন মানুষের আবরণে শুধুই খোলস পাল্টে দন্ডায়মান, চেনা খুবই কঠিন, সেই কঠিনের আধোছায়ায় মোক্ষম যে পৃথিবী, তারই রূপ বর্ণিত হয়েছে গল্পবীক্ষায়।
ভালো লাগে নিভৃতে কবিতা-গল্প লিখতে নিজের মতো করে, সাহিত্যিক অগ্রজ বন্ধুদের পরামর্শে, লিটল ম্যাগাজিন বা দৈনিক সাহিত্য সম্পাদক বন্ধুদের কল্যাণে প্রবন্ধ লেখা, সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধের প্রতি বরারবই ঝোঁক, সে’ কারণে প্রবন্ধ লেখা। যা লিখি, পড়তে ভালো লাগে সময়ে-অসময়ে, নেশা বলতে পড়া, ইতিহাস-সাহিত্য-নৃতত্বদর্শন নানাবিষয়। পেশা, বেসরকারী চাকুরী, জীবনধারণের জন্য যা আবশ্যক, তার বাইরে অবলম্বন সাহিত্যই । ###
কথাসাহিত্যের বারান্দায়
-দাসী প্রথা আদিকাল থেকেই চলে আসছে। সব দেশে সব জাতিতেই দাস-দাসীর ব্যবহার লক্ষ করা যায়। হিন্দু সামাজিক আইনে ১৫ প্রকার দাস-দাসীর উল্লেখ আছে। মুসলিম সমাজে দাসীপুত্র, যুদ্ধবন্দী, পেটের দায়ে বিকিয়ে দেয়া শিশু, নারী-পুরুষ দাস অর্থাৎ ক্রীতদাস হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আবির্ভাবে আরবীয় সমাজে দাসকে মুক্তি দেয়ার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। তবুও দাসবৃত্তি পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যায়নি। যুদ্ধে পরাজিত শত্রুদের দাস হিসেবে বিদেশে বিক্রি করে দেয়ার নিয়ম ছিল। ইসলামের আদর্শে দাস-দাসীকে পারিবারিক সদস্যদের মতো সম্মান দেয়ার নির্দেশ রয়েছে।
ভারতীয় সমাজে দাস ব্যবসা প্রচলন ছিল। খোজা দাসদের মধ্যে কেউ কেউ দিল্লির সুলতান ও বাংলার সুলতানের সিংহাসন অধিকার করেছিলেন। বাংলার সুলতান আলী মর্দান ও সুবেদার মুর্শিদ কুলী খাঁ ক্রীতদাস জীবন থেকে রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। উসমানীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘকালব্যাপী রাজত্ব বিস্তারকারী উসমানীয় সম্রাট প্রথম সুলাইমান এবং তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী হুররেম সুলতানের ক্রীতদাসী হয়েও পরে তাঁর প্রধান স্ত্রী বা সুলতানা হিসেবে সম্মানিত হন।
উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আফ্রিকার কৃষ্ণকায় মানুষগুলো দাস বৃত্তিতে নিয়োজিত ছিল। কাফ্রি মা-বাবা তাদের আর্থিক প্রয়োজনে শিশু-কিশোর বয়েসীদের বিক্রি করতো। মাদ্রাজ ও কলকাতার দাসবাজার থেকে সম্পদশালী লোকেরা তাদের ইচ্ছেমতো দাস ক্রয় করতেন। সুলতানি, মুঘল ও ইংরেজ শাসনামলে বিভিন্ন দাসবাজারে কাফ্রি দাস সহজে পাওয়া যেতো। কাফ্রিদের একই অংশকে খোজা তৈরি করা হতো। মুঘল সরকারের অনুমতি নিয়ে পর্তুগিজসহ বিভিন্ন জাতির লোকেরা ব্যবসায়ে সুবিধা পায়। পর্তুগিজ ও মগ দস্যুরা বাঙালি নর-নারীদের পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দাস-দাসী হিসেবে বিক্রি করেছে।
বাসাবাড়ির ভেতরে ঘর-গৃহস্থালি কাজের তদারকির জন্য দক্ষ একজন কাজের মানুষ বা গৃহভৃত্যের প্রয়োজন হয়। সব কাজের জন্য নিযুক্ত কাজের ঝি’রা কখনো সমাজের মানুষের চোখে হেয়প্রতিপন্ন হয়। গৃহকর্তা বা কর্ত্রীরা এদের অবজ্ঞার ছলে চাকর-চাকরানী বা গধরফ ঝবৎাধহঃ বলে থাকে। চাকর-বাকরদের খাবার দাবার কষ্ট, দৈহিক নির্যাতন ও অমানুষিক খাটুনি খাটতে হয়। অসুস্থ হলে ছুটি নেই। কোনো সময় ভালো না লাগলে বিদায় করে দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। টাকা দিয়ে কেনা ক্রীতদাসের মতোই ব্যবহার করছে মনিবরা। আবার অধিকাংশ মনিব গৃহভৃত্যদের আচরণে সন্তুষ্ট নয়। মনিব কর্তৃক গৃহভৃত্য নির্যাতনের খবর প্রায়ই ঘটে। পাশাপাশি মনিব নির্যাতনের খবরও চোখে পড়ে। বহির্মুখী মানুষগুলোর অবশ্য কাজের মানুষের প্রয়োজন হয়। এই জন্য যে তারা বাড়ি ফিরে খাবারটুকু নিশ্চিন্তে খেতে সক্ষম হয়। এসব ক্ষেত্রে কাজের মানুষ ছাড়া উপায় নেই। গৃহভৃত্য শ্রেণিকে যেভাবেই দেখা হোক না কেন একটা মানবীয় দৃষ্টিকোণ এদের বেলায় প্রযোজ্য। মনিব-ভৃত্যের সম্পর্ক অভিন্ন থাকা বাঞ্ছনীয়।
রবীন্দ্রনাথ ভৃত্যশাসিত তোষাখানার মধ্যে রুদ্ধ হয়ে ছোটবেলায় চাকর-বাকরদের কাছে হেলাফেলার মানুষ বলে খুব বেশিদিন সেবা-যতœ পাননি। তিনি যে সমাজে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে সমাজে সাধারণের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ স্থাপন একরূপ অসম্ভব ও অসাধ্য ছিল। পরবর্তীতে তিনি লক্ষ করেছেন ভৃত্যদের মধ্যে কেউ কেউ পেট খোরাকী, কেউ কেউ মাইনেভোগী। মাইনেভোগীদের মধ্যে যৎসামান্য মাইনের চাকর-বাকররা কী রূপ দিনাতিপাত করেছে—তাদের সংসারের কথা—তাদের জীবনের আবেগ-অনুভূতির খুঁটিনাটি বিষয় রবীন্দ্রনাথ জানতে সক্ষম হয়েছেন। এ গ্রন্থে চাকর-বাকরদের সাথে সংলাপপটু রবীন্দ্রনাথ কতটুকু অসাধারণ ছিলেন সে সম্পর্কে পাঠকবর্গ ধারণা লাভে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা করি।
বিনয়াবনত
এস.এম. আফজাল হোসেন
শিলাইদহ, কুষ্টিয়া
রবীন্দ্রনাথের চাকর-বাকর
জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৭৪।
জন্মস্থান- মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার রাজারচর কাজিকান্দি গ্রামে।
প্রকাশিত বই-
১. কাব্যগ্রন্থ- বিরুপা’র শূঁড়িবাড়ি(২০১৪)
২. অণুগল্প সংকলন- পঞ্চাশ(২০১৫)
৩. মহাপ্রভু ও অন্যান্য অণুগল্প(২০১৬)
৪. কাব্যগ্রন্থ- একজ্বলাপঙক্তি(২০১৬)
অণুগল্পের অস্তিত্ব আছে
জন্ম ১৯৮৬, মেহেরপুর। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য স্নাতকোওর। পেশায় সাংবাদিক। “অরনি ছোটগল্প” পুরুস্কার ২০১২ ও বৈশাখী টেলিভিশন “তোমার গল্পে সবার ঈদ পুরুস্কার” ২০১৩ পেয়েছেন। দ্বিধা, আদিম বুদবুদ অথবা কাঁচামাটি বিগ্রহ সহ আরও প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে।
আলোচনা সমালোচনা : প্রসঙ্গ কথা সাহিত্য
চন্দন আনোয়ার। গল্পকার, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক। জন্ম: ৮ই জানুয়ারি, ১৯৭৮, নাটোর। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নিযুক্ত আছেন। লেখকের ‘শাপিত পুরুষ’ ‘ইচ্ছা মুত্যু’ ‘বাংলা ছোট গল্প’ ও ‘তিন গোত্রজ গল্পকার, মানিক-হাসান-ইলিয়াস’ সহ আরো অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।
এই সময়ের কথাসাহিত্য-২
স্বপঞ্জয় চৌধুরী মূলতঃ কবি, তিনি যখন গদ্য লেখেন কাব্যিক উপস্থাপনাগুণে ভাষা হয়ে ওঠে সতত সঞ্চরণশীল নদীর মতোই উপভোগ্য ও গতিময়। প্রতিভাবান এ তরুণ লেখকের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অসংখ্য লেখা থেকে সাহিত্য সন্দর্শন, কবিতা ও শিল্পকলার নন্দন, নীতিশাস্ত্র, দর্শন, চলচ্চিত্রসহ বহুবিচিত্র বিষয় সুনির্বাচিত আটাশটি নিবন্ধ সমন্বয়ে তার প্রথম প্রবন্ধ সঙ্কলন ” নিগুঢ় শিল্পের কথাচিত্র “-এ প্রাগুক্ত ভাষিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক মূল্যবান তথ্যের সন্নিবেশ এবং যুক্তিনির্ভর সূক্ষ্মদর্শী পর্যালোচনা অত্যন্ত চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সুলিখিত গ্রন্থটি লেখক, গবেষকসহ সবশ্রেণির সাহিত্যমোদি পাঠকের প্রয়োজন মিটিয়ে তাদের অনুসন্ধিৎসু মনে নতুন চিন্তার খোরাক জোগাবে ।
মাহফুজ আল-হোসেন
কবি ও প্রাবন্ধিক
নিগুঢ় শিল্পের কথাচিত্র
’৫০-এর দশকে যাত্রা শুরু করা ‘সমকাল’ কবিতা পত্রিকাকে কেন্দ্র করে বাংলা কবিতার ক্ষেত্র নির্মাণে যে গুটিকয়েক মননশীল কবি সফল হয়েছিলেন তাঁদেরই অন্যতম কবি আবুবকর সিদ্দিক (জ. ১৯৩৪)। এই ’৫০-এর দশকে ছাত্রাবস্থায় আবুবকর সিদ্দিক যাত্রা শুরু করেছিলেন প্রথমত কবিতা ও ছোটগল্পের ভেতর দিয়ে। প্রায় সত্তুর বছরেরও অধিক সময় ধরে সাহিত্য সাধনায় নিয়োজিত আবুবকর সিদ্দিক প্রধানত কবি, তারপরে কথাসাহিত্যিক; লিখেছেন মননশীল প্রবন্ধ ও স্মৃতিকথা। অন্যদিকে গণসঙ্গীত তাঁর স্বাতন্ত্রিক পরিচয়ের এক ব্যতিক্রম মাধ্যম। সুতরাং বিচিত্র ধারায় তাঁর লেখনীশক্তি আমাদের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ।
ব্যক্তিগত ভাবে এই মানুষটিকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি ছেলেবেলা থেকে। প্রথম জীবনে বর্তমান বাগেরহাটের সরকারি প্রফুল্লচন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে আমার পিতার সহকর্মী ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিশেবে যোগ দেন। কিন্তু জন্মসূত্রে তিনি বাগেরহাটের মানুষ। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের বৈটপুরে। ফলে যখনই বাগেরহাটে আসতেন, প্রায়ই সময় আমাদের বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন। সেই থেকে বুঝেছি তিনি আমাদের পারিবারিক বন্ধু।
আবুবকর সিদ্দিক বহুপ্রজ নন, বিরলপ্রজ। যা লিখেছেন, তাই এপিক। কী কবিতা, কী কথাসাহিত্য! তারই নিদর্শন হিশেবে আমার দেখতে পাই, সেই ষাটের দশকে তিরিশের পঞ্চপা-ব হিশেবে খ্যাত কবি বিষ্ণু দে তাঁর সংবাদ মূলত কাব্য কবিতাগ্রন্থটি আবুবকর সিদ্দিককে উৎসর্গ করলেন, সঙ্গে শামসুর রাহমান। আমাদের কাব্যযাত্রার এ এক অনন্য অধ্যায় বললে অত্যুক্তি হবে না।
আবুবকর সিদ্দিক, আপাদমস্তক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষটির সাহিত্যকৃতির বোধ ও বোধিকে ছুঁয়ে দেখার সক্ষমতা তৈরি হয়নি এই পাঠককুলের। আবার তিনি নিজেকে বাজারচলতি করেননি কখনো। সে স্পর্ধাও নেই আজকের মিডিয়াবাজদের। আর তাই কাছ থেকে দেখা এই অনন্য কবি ও কথাকার আবুবকর সিদ্দিককে আজকের পাঠকের কাছে তুলে ধরতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। বিভিন্ন সময়ে আবুবকর সিদ্দিকের কবিতা, কথাসাহিত্য ও গদ্য প্রসঙ্গে আমার যে যৎকিঞ্চিৎ প্রচেষ্টা ছিল, তারই সারবত্তা এই গ্রন্থ ‘আবুবকর সিদ্দিক সমগ্রতার চিরন্তনী’। এর মাধ্যমে আগামীর পাঠক নতুন ভাবে কবি ও কথাকার আবুবকর সিদ্দিককে আবিষ্কার করবেন বলে আমার বিশ্বাস। সেইসঙ্গে গণসঙ্গীতেরও তিনি যে দিকপাল, তা পাঠক নতুন করে জানবেন এবং বুঝবেন।
বলা আবশ্যক, এই ক্ষণজন্মা যশস্বী কবি ও লেখক সম্পর্কে আমি লিখতে গিয়ে তাঁর রচিত গল্প-উপন্যাস-কবিতাগ্রন্থসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত আবুবকর সিদ্দিকের রচনাসমূহের সাহায্য গ্রহণ করেছি। উপরন্তু তাঁকে নিয়ে অন্যান্য বিভিন্ন লেখকদের লেখাগুলোও আমাকে সহায়তা করেছে। এছাড়াও আবুবকর সিদ্দিকের গুণগ্রাহী ছাত্ররা এবং তাঁর কাছের লেখকদের সঙ্গে তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন আলাপচারিতাও আমার এসব লেখাকে সমৃদ্ধ করেছে। সুতরাং এ গ্রন্থ শেষে আলাদাভাবে তথ্য নির্দেশিকা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনি। যদি এ আমার সীমাবদ্ধতা হয়ে থাকে, তার জন্যে আমি পাঠকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
যখন বলা হচ্ছে, পাঠকের অপ্রতুলতার কথা; বলা হচ্ছে, জাতি হিশেবে আমরা আজ বইবিমুখ; ঠিক তখন একটি নিরেট গদ্যবিষয়ক বই প্রকাশের দায়িত্ব নিয়ে অনুপ্রাণন প্রকাশনের কর্ণধার আবু এম ইউসুফ আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। পরিশেষে বন্ধুবর প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক শহীদ ইকবালের ঋণ স্বীকার করতেই হয়, এ গ্রন্থের নামকরণের ক্ষেত্রে সহযোগিতাদানের জন্য। একইসঙ্গে আরও ধন্যবাদ জানাই অনুজপ্রতিম কবি ও গবেষক বঙ্গ রাখালকে। তাঁর উৎসাহ ও নিরন্তর তাগাদা ছাড়া বইটি প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না।
মামুন মুস্তাফা
মিরপুর, ঢাকা।
আবুবকর সিদ্দিক- সমগ্রতার চিরন্তনী
মফস্বলের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে বীথিকা রায় তথা বীথির জন্ম। যে শৈশবেই একাধিক উন্নত রাষ্ট্র ভ্রমণ এবং ধ্র”পদী গ্রন্থাদি পাঠ করে বাঙালি হিসেবে নিজের অবস্থান বুঝতে পারে। একইসঙ্গে স্বনামধন্য বাঙালিদের গৌরবময় কর্মকাণ্ডের ইতিহাসও পাঠ করে—কিন্তু তাঁদের প্রতি বর্তমান বাঙালি জাতির বিস্মরণ আর চারিত্রিক অধঃপতন দেখে বিচলিতবোধ করে। উন্নত বিশ্বে বাঙালির বৈষম্যের শিকার হওয়াও তাকে আঘাত করে। ফলে তার ভেতরে দেশোদ্ধারের জাতীয়তাবাদী চেতনার স্ফুরণ ঘটতে থাকে।
বীথিকা জাতিগঠনের পেছনে যে সংস্কারমুক্ত আধুনিক শিক্ষাই প্রধান নিয়ামক সেটা ভালো করেই বুঝতে পারে। আরও অনুধাবন করে, বহির্বিশ্বের জ্ঞানে ঋদ্ধ, অভিজ্ঞ, দেশাত্ববোধসম্পন্ন মেধাবী শিক্ষকরাই কেবল জাতি গঠনে প্রধান ভূমিকা রাখে—রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সেনাপ্রধান নয়।
ভবিষ্যতের সেই রকম একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতিকৃতি ও সম্ভাবনা বীথি দেখতে পেয়েছিল কিশোর শংকরের মধ্যে। কিন্তু সামাজিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে ছেলেটি ছিল খুবই বিভ্রান্ত এবং দুর্বল তথাপি, একরোখা—ঋজু বীথি হাল না ছেড়ে শংকরকে তার স্বপ্নের আরাধ্য আদর্শ শিক্ষকে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়। এর জন্য তাকে বিনিয়োগ করতে হয় যৌবনের মূল্যবান দীর্ঘ সতেরটি বসন্ত। কিন্তু হারানোর বেদনায় বীথি ব্যথিত নয়, বরং সে সফল, তৃপ্ত এই কারণে যে, দেশ ও জাতি একজন মহান শিক্ষককে পেয়েছে, যে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও স্বদেশপ্রত্যাগত। তারই ইতিবৃত্ত এই উপন্যাস।
প্রবীর বিকাশ সরকার
অপরাহ্ণে বৃষ্টি
সম্পাদকীয়, কুহক মাহমুদ স্মৃতি সংখ্যা। অনুপ্রাণন- অষ্টম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা-
অনুপ্রাণন ও কুহকের কথা
কুহকের কথা বলতে গেলে অনুপ্রাণনের কথা আসবেই। কেননা, কুহক অর্থাৎ কুহক মাহমুদ, শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন-এর সাথে ২০১২ সালে জন্মলগ্ন থেকেই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন ৫টি বছর। কুহকের সাথে আমার পরিচয় সরসিজ আলীমের মাধ্যমে। কবি সরসিজ আলীম তখন ‘ভনে যাহা ভনে’ শিরোনামে একটা ট্যাবলয়েড সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করতেন। ফেসবুকের মাধ্যমেই কবি সরসিজ আলীমের সাথে আমার পরিচয়।
এই পরিচয়ের কিছুদিন পূর্বে হোসনে আরা বেগম নামে একজন মধ্যবয়সী মহিলা ফেসবুকে আমাকে নক করেন। তিনি তখন ফেসবুকে ‘ফেসবুক বইমেলা ২০১২’ নামে একটা গ্রুপের এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে বই প্রকাশ এবং সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল তরুণ কবি-সাহিত্যিকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। এক বিকেলে আমরা ছবির হাটে মিলিত হই, যেখানে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন তরুণ কবি-সাহিত্যিক। তারা হলেনÑ রেজওয়ান তানিম, স্থপতি রাজীব চৌধুরী, কবি সুমি সিকানদার, ফেসবুকের মানবিক গ্রুপের অঞ্জন, ইহতিশাম আহমাদ টিংকু এবং আরো দুই-একজন হবে যাদের নাম এই মুহূর্তে আমার ঠিক মনে পড়ছে না। পরে এই বৈঠকগুলো পাবলিক লাইব্রেরির ক্যান্টিনের সামনের বাঁধানো উঠোনে অথবা কখনো কখনো হোসনে আরা বেগমের শ্যামলীর বাসায়ও অনুষ্ঠিত হতো। এই আলোচনা বৈঠকগুলোর মধ্য দিয়েই প্রথমে আমরা পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার-কক্ষে একটি ‘নবীন লেখক সমাবেশ অনুষ্ঠান’ করার সিদ্ধান্তে উপনীত হই। এই পর্যায়ে কবি সরসিজ আলীমও এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়। সমাবেশ অনুষ্ঠানের পর প্রথম বৈঠকে যখন একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয় এবং যখন পত্রিকার জন্য একটি নাম ও একটি সম্পাদনা পরিষদ গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়, তখন কবি সুমি সিকানদার পত্রিকাটির নাম ‘অনুপ্রাণন’ করার প্রস্তাব আনেন, যে প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠ উদ্যোক্তাদের সমর্থন লাভ করায় গৃহীত হয়। ওই বৈঠকগুলোতে পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদ গঠন নিয়ে আলোচনা হলে সর্বসম্মতিতে আমার নাম প্রকাশক, হোসনে আরা বেগম সম্পাদক, কবি সরসিজ আলীম নির্বাহী সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদক হিসেবে রেজওয়ান তানিম, রাজীব চৌধুরী, সুমি সিকান্দার, ইহতিশাম আহমাদ টিংকুসহ আরো দুই-একজনের নাম প্রস্তাব হয়। এই প্রস্তাব গৃহীত হলে ঠিক করা হয় যে, সম্পাদক ও সম্পাদনা পরিষদের সদস্যরা পত্রিকার কাজে অভিজ্ঞ আরো দুই-একজন ব্যক্তি যুক্ত করে সম্পাদনা পরিষদ সম্প্রসারিত করতে পারবেন।
এর কিছুদিন পর যখন হোসনে আরা বেগমের বাসায় সম্পাদনা পরিষদের প্রথম সভা হয়, তখন সেই সভায় কবি কুহক মাহমুদ ‘অগ্রদূত’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার মনি মোহাম্মদ এবং তাহমিদের নাম যুক্ত হয়। ওই সভায় কবি কুহক মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভাতেই কবি কুহক মাহমুদের সাথে আমার পরিচয়। সেই সভায় লেখা সংগ্রহসহ পত্রিকা বের করার যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এই সূচনা সংখ্যার লেখা বাছাই এবং অনুপ্রাণনে অন্যান্য বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের সদস্যদের যুক্ত করা নিয়ে কবি সরসিজ আলীম এবং হোসনে আরা বেগমের মধ্যে তুমুল বিতর্ক হয় এবং সেই বিতর্ক এমন তিক্ততার পর্যায়ে উপনীত হয় যে, সূচনা সংখ্যাটির কাজ যখন প্রেসে চলছিল, ঠিক তখন হোসনে আরা বেগম পত্রিকার সম্পাদক পদ থেকে এবং রাজীব চৌধুরী, সুমি সিকানদারসহ আরো দুই-একজন অনুপ্রাণন ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পরিস্থিতিতে পত্রিকাটিতে আমার নাম প্রকাশক ও সম্পাদক, সরসিজ আলীমের নাম নির্বাহী সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদক হিসেবে শুধুমাত্র রেজওয়ান তানিম, কুহক মাহমুদ, মনি মোহাম্মদ ও তামজিদের নাম যুক্ত করে শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন পত্রিকার সূচনা সংখ্যা নভেম্বর ২০১২-এ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে কুহক মাহমুদ অনুপ্রাণন পত্রিকাটির সাথে পাঁচ বছর যুক্ত ছিলেন। এই পাঁচটি বছরে কুহকের সাথে অনুপ্রাণনের মিথস্ক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ এই সম্পাদকীয়’র পরিসরে দেয়া সম্ভব না।
শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন একটি অবাণিজ্যিক পত্রিকা। এই অবাণিজ্যিক কথাটির অর্থ বারবার ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন দেখা যায়। যেহেতু মনে করা হয়, পত্রিকাটি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি সচেতন থেকে স্বাধীন ও মুক্ত মতামতের চর্চা ও প্রকাশ করবে, অর্থাৎ পত্রিকাটি আর্থিকভাবে কোনো রাজনৈতিক দল অথবা কোনো সামাজিক সংগঠন অথবা দেশের সরকার অথবা করপোরেট মহলের পৃষ্ঠপোষকতার প্রত্যাশা করবে না। অতএব পত্রিকার পাঠকের কাছে সামান্য যে বিনিময়-মূল্য পত্রিকাটি গ্রহণ করবে, তা দিয়েই পত্রিকাটির যাবতীয় প্রকাশনা খরচ চালানো হবে।
যে কারণে অনুপ্রাণনের সাথে যুক্ত সবাইকে মোটামুটি স্বেচ্ছাশ্রম অথবা সামান্য কিছু সম্মানীর টাকায় চলতে হতো। ২৮ আগস্ট ২০১৯ তারিখে তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে অর্থাৎ ৬ আগট ফেসবুকে তাঁর সর্বশেষ পোস্টে অনুপ্রাণনের প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থসংকটকালে কবি কুহকের সেই কৃচ্ছ্রসাধন ও কষ্টের কথাই বর্ণনা করেছিলেনÑ
“বাজেট ১০০ টাকা। বাসা থেকে বাসে গুলিস্তান ১০ টাকা। সেখান থেকে বাসে কাঁটাবন। শাহবাগ আসলেই জ্যাম। কোনোদিন হেঁটে বা প্রচণ্ড খিদায় নেমে পড়তাম বাস থেকে। হোটেলে প্রবেশ করে করুণ চোখে দু’টি পরোটা আর ডাল দিয়ে নাশতা করে হাঁটতাম। তারপর অফিস। কাজ। দুইটা না বাজতেই খিদা! সস্তাদরের হোটেলে ২৫ টাকার ভাত-ডিম বা মাছ, ডাল নেই। চলে যেত খাবার। কতদিন ১০ টাকা বেশি দিয়ে সবজি বা অন্য তরকারি নিতে পারিনি! আবার অফিস। কাজ। এই করেই সন্ধ্যা।
পুরি-চা ১০ টাকা। আবার কাজ। ৬০ টাকা শেষ। অফিস শেষ করে হাঁটতাম। ভার্সিটির মাঝ দিয়ে গুলিস্তান। বাসের লাইনের অপেক্ষা। কোনোদিন ৫ টাকার বাদাম। তারপর বাসা। ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা। মেয়ে অপেক্ষা করত খাবার নিয়ে। ছেলে-মা অন্য বাড়ি থাকত। মেন্যু বেশিরভাগ ডিম ভাজা, ডাল। পেট পুরে খেতাম। আহ! কি সব দিন গিয়েছে। আনন্দ বেদনার। স্মৃতি কাঁদায়। (৬ আগস্ট, ২০১৯)”
সে সময়ে পত্রিকার কাজ করার পাশাপাশি কবি কুহক মাহমুদ অনুপ্রাণন প্রকাশন থেকে “গোধূলির প্রস্থানে জ্বালাও পূর্ণিমা (ফেব্রুয়ারি ২০১৪)” এবং “না-মানুষ (নভেম্বর ২০১৪)” শিরোনামে দু’টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই বই দুইটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এই সংখ্যার স্মৃতিচারণ বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে। বলতে গেলে কবি কুহক মাহমুদ অনুপ্রাণনের সাথে যুক্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই যকৃতের সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও রোগের চিকিৎসা করা দূরে থাক, শরীরের প্রতি যতœ নেয়া দূরে থাক, তাঁর চলমান জীবন যাপন পদ্ধতি তাঁর শরীরের ক্ষতিই বৃদ্ধি করেছে। এসব ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার জন্য বারবার বলা সত্ত্বেও কবি কুহক মাহমুদ কারো কথারই কর্ণপাত করেনি। যার ফলে যথাযথ চিকিৎসা ও সেবার অভাবে তাঁর শরীরের অবস্থা দিনে দিনে অবনতি হতে থাকে। অসুস্থতার জন্য গত প্রায় দু’বছর কুহক আর সময় দিতে পারেনি অনুপ্রাণনকে। বলেছিলাম, না-মানুষের ২য় খ- লিখে দেন প্রকাশ করি। বলল, পারবো না। এই শরীরে কুলায় না।
কুহক মাহমুদের অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকগ্রস্ত। অনুপ্রাণন-এর সাথে যুক্ত সকলের পক্ষ থেকে কুহকের বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করি। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে “কুহক মাহমুদ স্মৃতি সংখ্যা” হিসেবে নিবেদন করি শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণনের ৮ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যাটি।
অষ্টম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.