আমরা প্রায়শই মনে করি যে ধর্মনিরপেক্ষতার ইংরেজী শব্দার্থ হচ্ছে সেক্যুলারিজম। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। আমাদের সংবিধানে যে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বঙ্গবন্ধু ও তৎকালীন সংসদ, ১৯৭২ সনে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন সেই শব্দের ইংরেজী অনুবাদ ‘সেকুলারিজম’ নয়।
ইংরেজী অক্সফোর্ড অভিধান অনুযায়ী ‘সেক্যুলার’ একটি বিশেষণ এবং যে বিশেষণ যদি একটি বিশেষ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে এটাই বোঝানো হয়েছে যে ধর্মের সাথে ঐ বিশেষ্যটির কোন সম্পর্ক নেই।
অর্থাৎ সেক্যুলার বিশেষণটি যদি কোন রাষ্ট্র এর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে এটাই বোঝানে হচ্ছে যে ঐ রাষ্ট্রটি পরিচালনার শর্ত; সেই রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্যক্রম, আইন প্রণয়ন এবং বিচার ব্যবস্থার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই।
কিন্তু, বঙ্গবন্ধু ও ১৯৭২ সনের সংসদ যে শব্দটি ‘সেকুলারিজম’ এর পরিবর্তে ব্যবহার করেহেন সেটা হচ্ছে, “ধর্মনিরপেক্ষতা”।
বঙ্গবন্ধু এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রেটির ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বোঝাতে গিয়ে দুটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন-
১) ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সকল ধর্মের স্বাধীনতা রক্ষা করবে। সকল ধর্ম পালনে অনুসারীদের প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য সহযোগিতা করবে। প্রতিটি ধর্মের স্বাধীনতা রক্ষা এবং তাদের অনুসারীদের ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য করবে না।
২) রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি, রাজনৈতিক কর্মসুচীতে ধর্মের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিশিধ থাকবে।
ধর্মনিরপেক্ষতা- বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মান ও পরিচালনার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের কয়েকটি স্তম্ভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। কেননা বঙ্গবন্ধু এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্নদর্শন করেছিলেন যে রাষ্ট্রটি হবে সকল দিক দিয়ে বহুত্ববাদী, মানবিক এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে মানুষে মানুষে কোন বৈষম্য করবে না। ধর্মনিরপেক্ষতা আদর্শ গ্রহন করার কারনেই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান রাষ্ট্রটির ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শাসনতন্ত্রের বিরোধিতা করার প্রধান কারন হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রামে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন।
এটা স্পষ্ট যে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতা আদর্শ থেকে রাষ্ট্র বিচ্যুত হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত এই বিচ্যুতির অপসারণ হয়নি। তাই আমরা তাঁর স্বপ্নের একটি বহুত্ববাদী, মানবিক ও সামাজিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি।
সবচেয়ে দুঃখ লাগে এটা দেখে যে, যারা জোর করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী হিসেবে দাবী করেন তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সম্পর্কে বোধহীন।
চারদিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত লোকেরাই তোড়জোড় করে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের জন্য বিশাল বিশাল কর্মসুচী গ্রহন করেছেন।
আজ ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। ১৯২০ সালের এই তারিখে তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন।
নিঃসন্দেহে, বাংলাদেশ স্বধীন হয়েছে তাঁর অদম্য সাহস ও অনুপ্রেরণার জন্য।
জাতি হিসেবে তাঁর কাছে তাই আমরা কৃতজ্ঞতাপাশে আবধ্য।
তিনি আজ বেঁচে নাই। তাই তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাঁর অনুসারীদের।
কোনদিন যদি বাংলাদেশ তার রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধু’র স্বপ্নদর্শন এর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয় সেদিন অবশ্যই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পেতে পারে।