Additional information
Weight | 0.270 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.62 $ 2.71
শঙ্করী দাস
জন্ম: ০৫ মে, ১৯৫৮ সন, জামালপুর।
প্রকাশিত গ্রন্থ গল্প:
প্রতিবিম্ব ও অন্যান্য গল্প
জলমাটির গল্প
পায়ের চিহ্ন
রাহুর চন্দ্রগ্রাস
প্রকাশিত গ্রন্থ কবিতা:
ঘাসবোনা গ্রাম তাঁতবোনা গ্রাম
বিহান বেলার ঈশ্বর
বল তোমার কুশল শুনি
গবেষণামূলক:
গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ
সম্মাননা:
জলমাটির গল্পের জন্য পাক্ষিক ঐকতান (বর্ধমান) পত্রিকা পদক। শিশুকবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ও নক্ষত্র সাহিত্য পুরস্কার।
Weight | 0.270 kg |
---|---|
Published Year |
আমি কী আর জন্মেছিলাম মানুষ হিশেবে?
জন্মেছিল আবু তাহের, এই লোকটা কে?
মুখ চিনি না তবু মুখের আদল ধরে হাঁটি
শরীর খুলে বাইরে এসে ছায়ায় পরিপাটি।
আমি হয়তো ছায়ার মানুষ, শরীর আরেকজন
তার শরীরেই আড়াল হয়ে বাঁচার আয়োজন।
কার সে জীবন আমার কাঁধে, আমি-ই যে হায় কার
একই সাথে খাচ্ছি-দাচ্ছি ঘুমোচ্ছি আবার।
আমার যে, সে কোথায় থাকে? কোথায় বাড়িঘর?
তার সাথে কী বদলেছে এই আমার টিনের ঘর?
গোধূলির জাদুকর
রাজীব নূর খান। জন্ম ১৯৮৫ সালে ঢাকায়। বর্তমানে ফটোসাংবাদিক। আড্ডা দেয়া ভীষণ পছন্দ। কাজের ফাঁকে মাঝে মধ্যে লেখার চেষ্ঠা করেন। মানুষের গভীর গোপন অনুভূতিগুলো ছবি ও লেখালেখির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলোর চেষ্টা করেন। এলামেলো জীবনে অভ্যস্ত হলেও আগোছালো কাজ সহ্য করতে পারেনা একেবারেই।ওর ভীতর রয়েছে আশ্চর্য এক সুন্দর শৈল্পিক সত্ত্বা; যাপিত জীবনের খুব তুচ্ছ বিষয়কেও নিজের রুচিবোধ আর সৃজণী ক্ষমতা দিয়ে পরম উপভোগ্য আর সুখপাঠ্য করে তোলেন।
টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা
জন্ম ১৯৮৭, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে। পড়াশোনার পাশাপাশি ফটোগ্রাফির সাথে যুক্ত। প্রকৃতি আর মানুষ এই দুই নিয়েই তার পথচলা। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রয়েছে
প্রেম হলো প্রেমের মতো
অনিন্দ্য আসিফ। জন্ম- ২৩ মে, ১৯৮১। কতিয়াচর, কিশোরগঞ্জ। পিতা- মোঃ আব্দুল হাই, মা- হাওয়া আক্তার।
শাদা অথবা শূন্য
রুমা মোদক, মাতা: দীপ্তি রানী মোদক, পিতা: প্রিয়তোষ মোদক, জন্ম: হবিগঞ্জ। জেলা শহর থেকে প্রকাশিত সংকলনগুলোতে লেখালেখির মাধ্যমেই হাতেখড়ি। শুরুটা আরো অনেকের মতোই কবিতা দিয়ে। ২০০০ সালে প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ ‘নির্বিশঙ্ক অভিলাষ’। এরপর ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন মঞ্চনাটকে। রচনা করেন কমলাবতীর পালা, বিভাজন, জ্যোতি সংহিতা ইত্যাদি মঞ্চসফল নাটক। অভিনয়ও করেন। মঞ্চে নাটক রচনার পাশাপাশি নিরব অন্তঃসলিলা স্রোতের মতো বহমান থেকেছে গল্প লেখার ধারাটি। জীবন ও জগতকে দেখা ও দেখানোর বহুস্তরা এবং বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার উৎসারণ ঘটেছে ২০১৫ সালের বইমেলায় প্রকাশিত ছোটগল্প সংকলন ‘ব্যবচ্ছেদের গল্পগুলি’তে। ‘প্রসঙ্গটি বিব্রতকর’ গ্রন্থভুক্ত গল্পগুলোতে সে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে উঠেছে আরও নির্মোহ, একবগগা, খরখরে কিন্তু অতলস্পর্শী ও মমতাস্নিগ্ধ।
গল্প লেখার স্বীকৃতিস্বরূপ ইতোমধ্যে পেয়েছেন বৈশাখী টেলিভিশনের পক্ষ থেকে সেরা গল্পকারের পুরস্কার, ফেয়ার এন্ড লাভলী সেরা ভালোবাসার গল্প পুরস্কার। ২০১৪ সালে মঞ্চনাটকে অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘তনুশ্রী পদক’।
বর্তমানে সক্রিয় রয়েছেন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের পত্র-পত্রিকা, লিটলম্যাগ এবং বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রকাশিত অন্তর্জাল সাহিত্য পোর্টালে লেখালেখিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ সম্পন্ন করে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত রয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে স্বামী অনিরুদ্ধ কুমার ধর ও যমজ সন্তান অদ্বিতীয়া অভীপ্সা পদ্য ও অদ্বৈত অভিপ্রায় কাব্যকে নিয়ে হবিগঞ্জে বসবাস করছেন।
সিদ্দিকী হারুন
সাহিত্য ও সংবাদকর্মী
প্রসঙ্গটি বিব্রতকর
মোঃ জিয়াউল হক; জন্ম : ১৯৮১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দী গ্রামে। পিতা- মোঃ নাছির উদ্দীন, মাতা- মোছাঃ জাহানারা বেগম। পড়াশোনা : এম.এ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)। পেশা : দীর্ঘ এক যুগ ‘গ্রাফিক ডিজাইনার’ ও ‘পেইন্টার’ হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করার পর, বর্তমান পেশা শিক্ষকতা।লেখালেখির হাতে খড়ি হয় ১৯৯৫ সালে। লেখালেখির শুরুটা মফস্বল এলাকার নাট্যপ্রেমী ছেলেদের জন্য মঞ্চ নাটকের কাহিনি রচনার মধ্য দিয়ে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় কবিতা ও ছড়া লেখার চেষ্টা, বহুদিন। সেই চেষ্টা থেকেই ২০০০ সালে প্রকাশিত ‘দৈনিক ঘাঘট’ পত্রিকায় ‘আঁড় চোখে দেখা’ শিরোনামে বিদ্রুপাত্মক ছড়া নিয়মিত লেখালেখি। এই সময় সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুদের সাথে নিয়ে ‘অগ্নিরথ’ নামক একটি অনিয়মিত মাসিক সাহিত্য ম্যাগাজিন সম্পাদনা ও প্রকাশনা কাজেও যুক্ত। কিন্তু ইতিমধ্যে রুটিরুজির জীবনযুদ্ধ শুরু হলে কবিতা-ছড়া বিলিন হয়ে যায় জীবন থেকে।
অন্তর্দাহ
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে লেখকের নাম হাসান মাহবুব। তিনি নাড়–গোপাল দত্ত অথবা ইসমাইল আহমেদ নন। তিনি রবীন্দ্রনাথ বা আগাথা ক্রিস্টি নন। তিনি দূর আকাশের নীল নক্ষত্র, ধোঁয়া ওঠা কফির মগ, বাজারে মেয়েটির অপরিচ্ছন্ন অন্তর্বাস, ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল বাঁশি অথবা লোম কাটার মওসুমের ভেড়ার দীর্ঘশ্বাসও নন। তিনি লেখেন। তবে ‘তিনি’ই লেখেন কি-না এই নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ লেখার মতো পরিশ্রমের কাজে বছরের পর বছর এত শ্রম দিয়েছেন, দুটো বইও বের করেছেন (প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এবং আনন্দভ্রম) তার সাথে এসব ঠিক যায় না। এত সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি হাসান মাহবুব হবার চেষ্টা করছেন এবং তারই ফলশ্রুতিতে আরো একটি বই প্রকাশ করে ফেললেন। তিনি সকলের দোয়া প্রার্থী!
নরকের রাজপুত্র
১৯৬২ সালের ৫ ডিসেম্বর, ময়মনসিংহে কবি আশুতোষ পাল ও শিউলি পালের সংসারে জন্ম।
লেখাপড়া- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিবিজ্ঞানে স্নাতক এবং সুইডেন থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা।
পেশা- এনজিও কর্মী দিয়ে শুরু এবং বর্তমানে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত।
প্রকাশিত অন্যান্য বই- রাতপঞ্জি (২০০৩),পুননির্বাচিত আমি- ২০১১।
Asochorachor
ফজিলা ইসলাম ফৌজি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ১৯৭২ সালের ৮ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃনিবাস মেহেরপুর জেলার কোলা গ্রামের বাবু পাড়ায়। পিতার নাম মোঃ হাফিজ উদ্দিন মাতার নাম মোছাঃ রাকিবা বেগম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগ (অনার্স মাষ্টার্স) শেষ করে ১৯৯৯ সালে রাজশাহীর ইসলামিয়া কলেজে শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে কলেজ পরিবর্তন করে বর্তমানে তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গাংনী মহিলা ডিগ্রী কলেজে হিসাববিজ্ঞানের প্রভাষক হিসাবে নিয়োজিত আছেন।
মানচিত্রে রক্তক্ষরণ
হাসান অরিন্দম। বাংলাদেশের একজন প্রাবন্ধিক ও গল্পকাররূপে পরিচিত। কথাসাহিত্যই তার সৃষ্টি ও আগ্রহের প্রধান ক্ষেত্র। জন্ম ২৭ এপ্রিল ১৯৭২। শিক্ষাজীবনÑ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাংলার লোকজীবন ও আবু ইসহাকের কথাসাহিত্য বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশায় অধ্যাপক। ‘একজন মানুষের সম্ভাবনা’, ‘বিদ্যাছায়াবিদ্যা ও অন্যান্য গল্প’, ‘দুরবিনে দেখা কতিপয় দৃশ্য’সহ আরো অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।
আমাদের দৃষ্টিসীমায় কোন বাতিঘর ছিলো না
সাঈদা মিমি। জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৮। বরিশালে। পেশাগত দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের সাহিত্য সম্পাদক। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচটি। শ্রাবন প্রকাশনী থেকে ২০০৮ এ প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই ‘সব নিয়ে গ্যাছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস।’ দীর্ঘ বিরতির পর আগুনমুখা থেকে ‘ফারাও কুমারী’ Ñ২০১৪ সালে। বাংলার ই-বুক থেকে ই-বই ‘কীর্তনখোলা।’ -২০১৫ সালে। ২০১৬ তে অনুপ্রাণন থেকে কাব্যগ্রন্থ ‘একজন মৃতের ডায়েরী’ এবং কালজয়ী প্রকাশ থেকে ‘শুশুনিয়া পাহাড়’।
ঔরঙ্গজেবের নীল ঘোড়া
মঞ্জু সরকার, বাংলাদেশের অন্যতম কথা সাহিত্যিক। জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩, রংপুর। ছোটগল্প উপন্যাস ও শিশু-কিশোর গ্রন্থ মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ অর্ধশতাধিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ মৃত্যুবাণ, উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা, যৌথ একাকিত্ব, তমস, নগ্ন আগন্তুক, ছোট্ট এক বীরপুরুষ ইত্যাদি। বাংলা একাডেমি, ফিলিপস, ব্যাংক সাহিত্যসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।
রূপান্তরের গল্পগাথা
কবিতা জীবনের কথা বলে, জীবন বদলানোর কথা বলে। জীবনের নানাবিধ ঘটনাবলী একজন কবির মনে যে উদ্দীপনা জোগায় কবিতা তার সকল বাহির-রূপ প্রকাশে। কবি সামাজিক মানুষ, সমাজের অভিজ্ঞতাই কবির চেতনাকে আলোড়িত করে। তাই কবিতা কতো রকম, এবং সবটাই কবির চেতনা নির্ভর। কবি দ্বীপ সরকার এর কবিতায় আধুনিকতা অভিজ্ঞতার জাগরণে যে পঙক্তিমালা আমাদের কাব্যপ্রেমীদের কাছে উপস্থিত তাতে হয়তো নির্মাণ দূর্বলতা রয়েছে, কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস কবি এই শুরুর পর্যায় থেকে লাগাতার কাব্যপ্রীতির মধ্যদিয়ে একদিন কাব্যরাজ্যের সকল মনিকাঞ্চন কুড়িয়ে নিতে পারবেন তার কবিতায়। যেমন তিনি বলেছেন ‘আমার প্রকাশ্য এবং গোপন/কথাদের মর্মার্থ একটাই ‘মানুষ হও/ধর্ম একটা পতাকামাত্র;/মানুষ মানেই সকল ধর্মের মধুফুল’ (….ভারতবর্ষ থেকে হেঁটে হেঁটে তাঁবেদার ঘোড়া)। কিংবা যখন বলেন ‘এখনও এই উঠোনে কথারা নাচলে/ কিছু সুপ্ত কথা ঝুনুর ঝুনুর বাজে’ (…প্রাক্তন কথারোদ)। এমনি ভাষ্যগুলো আধুনিক মনোবৃত্তিকে ধারণ করে হয়ে ওঠে মুখরিত শব্দবলীর এক অন্তরধ্বনি যা খানিকটা চমকে দেয় আমাদের।
কবিতার রাজ্যে কবি দ্বীপ সরকার এখনও প্রস্তুতি পর্বে, তারপরও কবিতার প্রারম্ভিক ভাষ্য থেকে বেরিয়ে আসা উপ-ভাষ্যগুলোর উপস্থাপন তার কবিতা মনোবৃত্তিরই স্ফূর্ততা। গতি বিজ্ঞানের এই সময়ে কবিতার যে স্বাস্থ্যশ্রী রূপ বদল ঘটেছে কবি দ্বীপ সরকার তাকে খানিকটা হলেও ধারণ করেন এবং বহুল চর্চার মধ্যদিয়ে একদিন তিনি আরো বেশি সক্রিয় পঙক্তিমালা নির্মাণের উপকরণ পেয়ে যাবেন সমৃদ্ধ বাংলা কাব্য ভূমিতে।
আমি তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিন্ন ভাষার গোলাপজল’ প্রকাশনা মুহূর্তে সকল সফলতা কামনা করি।
মতিন বৈরাগী
কবি, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক
ভিন্ন ভাষার গোলাপজল
লেখক পরিচিতি :
হাসান মসফিক। পুরো নাম: সৈয়দ মাহবুব মসফিকুল হাসান। জন্ম: লোহাগড়া, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। পড়াশুনা শেষ করে বর্তমানে দেশীয় ঔষধ কোম্পানীর বানিজ্যিক বিভাগে কর্মরত আছেন। ২০১১ সালের শেষের দিকে লেখালেখি শুরু। সাহিত্যের জনপ্রিয় ওয়েবজিন বিভুঁই এর সম্পাদনা পরিষদের সাথে জড়িত।
মায়া ফড়িঙ
ঝুমকি
কত পথ পার হলাম ঝুমকি;
তবু মানুষ চেনা হলো না!
বারো প্যাচের নারী, চোখে জড়িচুমকির খেল্ দেখালো
অমলেশ সেই দেখে দেখে শেষে উন্মাদের খাতায় নাম লেখালো
পত্রিকার শেষ পাতায় ওকে নিয়ে কতো ফিচার হলো
তবুও অমলেশকে কেউ ভালোবাসলো না।
ঝুমকি পৃথীবির সবচে’ হিংস্র প্রাণী মানুষের
গায়ে বিপদের গন্ধ লেগে আছে;
ফাঁক পেলেই নষ্টামি করতে লেগে যায়
কেউ কেউ বলে সত্যিকারের ভালোবাসা নেই
বড় র্দূভাগা ওরা!
সত্যিকারের ভালোবাসাই দেখেনি চোখে; পাবে কোত্থেকে
প্রেমালিঙ্গম
মানুষের কখন যে কী হয়―তা হিসাব করে কেউ কখনো বলতে পারে না! হঠাৎ করেই মানুষ অন্যরকম হয়ে ওঠে। এই যে শফিকের সঙ্গে একই অফিসে কতদিন একসঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা কাজ করেছে নমিতা―কোনোদিন তাকে এত মনোযোগ দিয়ে দেখেনি শফিক। কিন্তু আজ যে তার কী হলো!
নমিতা আজ খুব সুন্দরভাবে একটা শাড়ি পরে অফিসে এলো। আর আজই শফিকের খুব ভালো লেগে গেল নমিতাকে। তাই, অফিস-ছুটির পর সে তাকে রেস্টুরেন্টে চা-কফির আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু নমিতা তাকে জানালো, আজ তার হাতে একদম সময় নেই। আজ তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে বাসায়। আর তাকে, তাদের পছন্দ হলে আজই বিয়ে হয়ে যেতে পারে!
নমিতা একরকম বাধ্য হয়ে চলে যায় শফিককে পাশ কাটিয়ে। কিন্তু শফিকের খুব মনখারাপ হয়। আর বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করে না তার। মনটা তার ভীষণ উতলা হয়ে ওঠে নমিতার জন্য। সে একমুহূর্তে কেমন যেন হয়ে যায়! নমিতাকে কিছুতেই সে ভুলতে পারে না।
সে নমিতাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে। আর ভাবে―নমিতাকে ছাড়া তার চলবে না। আজ নমিতাকে খুব ভালো লেগেছে তার। ভাবতে-ভাবতে নমিতার জন্য শফিক যেন একেবারে পাগল হয়ে যায়! কিন্তু নমিতার যে আজই বিয়ে হয়ে যেতে পারে!
শফিক রাস্তায় হাঁটতে থাকে উদভ্রান্তের মতো। সে কি আজ বাসায় ফিরতে পারবে? শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল―তা জানতে হলে পড়তে হবে এই অনবদ্য একটি বালিকার গল্প।
এটি ১০০% রোম্যান্টিক প্রণয়োপাখ্যান।
একটি বালিকার জন্য
সেদিন এক গরুচোরের সাথে সাক্ষাত হয়ে গেল সবার, চোরটি নিজে থেকেই বলল—আমার নাম মজিদ। আমি একটা গরুচোর।
দলে নিয়োগ চলছিল। ইন্টার ডিস্ট্রিক বাস ডাকাতদলের সভাপতি জুম্মন খাঁ, অজ্ঞানপার্টি অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি, নিখিলবাংলা পকেটমার মহাসঙ্ঘের সেক্রেটারি বসা। এরাই দলের নিয়োগদাতা।
কিন্তু মজিদকে দেখে মোটেও গরুচোরের মতো লাগছিল না। গরুচোর হবে গরুচোরের মতো কিন্তু এরে সে রকম লাগছে না। এরে মকবুলের মতো লাগে।
মকবুল কে? মকবুল হলো মুরগি চোর। একসময় এই দলের হয়ে কাজ করত। এখন দল ভেঙে আলাদা দল করেছে। টেক্কা দিতে চায়।
অজ্ঞান স্পেশালিস্ট একাব্বর আলি সরু চোখে মজিদের দিকে তাকাল। তার ইচ্ছে করছে চোখেমুখে মলম ঘষে দিতে। একরাশ সন্দেহ নিয়ে বলল—তা মজিদ মিয়া, কয়টা গরু তুমি চুরি করছ?
মজিদ মাথা চুলকায়। ঘাড় চুলকায়। একটু লজ্জাও পায়। বলল—খুব বেশি না ওস্তাদ, আমি তো রেনডম গরু চুরি করি না। যখন কোরবানি আসে, গরুর হাটে ঘোরাঘুরি করে চান্সে চুরি করি। বছরে ওই একটাই সিজন আমার।
—তাই বল! একাব্বর হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। সন্দেহ আমার ঠিকই ছিল—ভাবতে ভাবতে সবার দিকে তাকিয়ে একটু ফুলে ওঠে, গর্বে। আসলে এই ব্যাটাকে মুরগি চোরের মতো লাগছিল। বিশ্বাসঘাতক মকবুলের চেহারার লগে মিল আছে। মকবুলও ছিল বিরাট মুরগি চোর।
—তা এইখানে কি মনে করে?
মজিদ বলল—ওস্তাদ, আমারে দলে নেন। চুরিধারী দল থেকে না করলে পোষায় না। একলা একলা ভালো লাগে না। মামারা ধরলে ছাড়ানোর কেউ থাকে না কোর্টে চালান খাইয়া যাই।
মজিদের কথায় সিদ্ধান্তের জন্যে সেক্রেটারি তাকায় সহ-সভাপতির দিকে, সহ-সভাপতি তাকায় সভাপতির দিকে। সভাপতি কারো দিকে না তাকিয়ে নিজের ডানহাতের চার আঙুলে পরা আংটির দিকে তাকিয়ে রইল। দুর্লভ পাথর বসানো সব আংটি। কোনোটি হীরা। ইয়াকুত আর লাল জমরুদ পাথরের আংটি দুটি নাকি খুবই বিখ্যাত। সাদা চুনি নাকি পৃথিবীর কোথাও নেই। একটিই। তাও জুম্মনের হাতে, ভাবা যায়! এই আংটিগুলির বৈশিষ্ট্য হলো ডান হাতে পরতে হয়। কিন্তু জুম্মনের হাতে মোট আঙুল চারটি। একবার ডাকাতি করতে গিয়ে গৃহস্থের দায়ের কোপে একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল। ফলে চার আঙুলেই আংটি পরতে হয়।
কাটা আঙুলের দিকে তাকিয়ে জুম্মন ডাকাত হতাশায় মাথা নাড়ে—মজিদ, গরুচোর মুরগি চোরের বিষয় না, আমরা এমন এক হাত সাফাইয়ের খোঁজ করছি, যে মুরগি নয়—মুরগির পিত্তথলি হাত চালিয়ে বাইরে আনতে পারবে, কিন্তু মুরগি টের পাবে না। পারবে?
ওস্তাদের কথায় খুব হতাশ হয়ে গেল গরুচোর মজিদ। চোখেমুখে পানি চলে এলো প্রায়। এত সুক্ষ্ম কাজ পারবে না সে। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল—খুব ইচ্ছা ছিল আপনাদের সাথে কাজ করার। হলো না। বিদায় দেন ওস্তাদ।
বলে সবার সাথে হাত মিলিয়ে মজিদ চলে গেলে জুম্মন খাঁ নিজের আঙুলের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল—আমার আংটি, আমার আংটি!
…………
মকবুলের ডেরায় যখন মজিদ চারটি আংটি ছড়িয়ে দিল তখন খুব হাসাহাসি হলো, জুম্মন ওস্তাদের থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেছে কল্পনা করে। হাত সাফাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে গেল মজিদ।
মকবুল কথা দিলে কথা রাখে।
গরুচোর
শঙ্করী দাস
জন্ম: ০৫ মে, ১৯৫৮ সন, জামালপুর।
প্রকাশিত গ্রন্থ গল্প:
প্রতিবিম্ব ও অন্যান্য গল্প
জলমাটির গল্প
পায়ের চিহ্ন
রাহুর চন্দ্রগ্রাস
প্রকাশিত গ্রন্থ কবিতা:
ঘাসবোনা গ্রাম তাঁতবোনা গ্রাম
বিহান বেলার ঈশ্বর
বল তোমার কুশল শুনি
গবেষণামূলক:
গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ
সম্মাননা:
জলমাটির গল্পের জন্য পাক্ষিক ঐকতান (বর্ধমান) পত্রিকা পদক। শিশুকবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ও নক্ষত্র সাহিত্য পুরস্কার।
শঙ্করী দাসের ষোলটি গল্প
মৃত্যু সংবাদ এমনই একটা বিষয় মুহূর্তে পৃথিবীর গতি স্তব্ধ করে দেয়। পরিচিত বা কাছের জনের মৃত্যু হলে তা আরও ভারী বোধহয়। মনে হয় যেন নিজেরই একটা অংশ মরে গেছে। এত সুন্দর মায়াময় প্রভাতটা নিমেষের মধ্যে অর্থহীন, শ্রীহীন হয়ে যায়।
একটি স্বেচ্ছামৃত্যু ও কিছু রসিকতা
সৈয়দ রায়হান বিন ওয়ালী। লেখক নাম: সৈয়দ ওয়ালী। জন্ম: ১৭ই জানুয়ারি ১৯৬৭। জন্মস্থান: পুরাতন ঢাকা। পিতা: সৈয়দ ওয়ালী হোসেন সুলতান। মাতা: সোহেলি ফেরদৌসী। পৈত্রিক ভিটে: কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার ইসলামপুর গ্রাম।
বেড়ে উঠা: সৈয়দ ওয়ালীর শৈশবের প্রথম কয়েক বছর কাটে পুরাতন ঢাকার বংশালে। তবে দেশ স্বাধীন হবার বছর খানেক পর পারিবারিক আর্থিক সংকটের কারণে পিতার নানী-বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর-জমিদার- বাড়ির গ্রামীণ পরিবেশে কাটে শৈশব ও কৈশোরের পরবর্তী কয়েক বছর। যার সুবাদে সে শহর ও গ্রামের দ্বৈত জীবনের অভিজ্ঞতায় বেড়ে উঠার সুযোগ পায়। যে দ্বৈত-জীবনের অভিজ্ঞতার বিবিধ বৈশিষ্ট তার বিভিন্ন কবিতায় গদিয়ান। শিশুকাল থেকে সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমের প্রতি তীব্র টান অনুভব করলেও মূলত যৌবনে এসেই সৈয়দ ওয়ালী ধীরে ধীরে কবিতা জগতের প্রতি মুগ্ধ হতে থাকে এবং নিজের কবিতা সৃজনের তৃষ্ণা নিজের ভেতর অনুভব করতে থাকে, যে তৃষ্ণা পরিশেষে তাকে কবিতা চর্চায় নিমগ্ন করে; সৃষ্টিশীলতা শুরুর বছর বিচারে যা ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৯৮৯/১৯৯০। সেই থেকেই সৈয়দ ওয়ালী কবিতার ভাব ভাষা ছন্দ ও শৈলী নিয়ে বিচিত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করা ও এইসব উপাদানের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে সৃজন করে চলেছেন তার কবিতার নিজস্ব ও স্বতন্ত্র এক জগৎ, যা আজ অবধি চলমান।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ ‘তুমি ও তোমাদের হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে’, ‘বিনত খসড়া’।
……………………………
জলজ স্বাক্ষর
লেখক পরিচিতি :
এ.টি.এম মোস্তফা কামাল। জন্ম: ১লা জানুয়ারি, ১৯৬৬। নোয়াখালিতে পৈত্রিক নিবাস। চাকুরির সূত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করেছেন। এখন ঢাকায় বসবাস করছেন। লেখকের মূল ভালোবাসা কবিতার জন্যে, তেত্রিশ বছর হয়ে গেলো কবিতার আরাধনায়। মাঝে মধ্যে গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণকথা লিখেন। এটি লেখকের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘বাঙ্গালা রুবাইয়াৎ’।
হৃদয়পুরে দেশান্তরী
জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ই এপ্রিল। টাঙ্গাইলের মীরের বেতুকা গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। করটিয়ার সা’দত কলেজ ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছেন। সহকারী সম্পাদক ছিলেন সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও দৈনিক সংবাদ Ñএ। ১৯৭৮-৮০ সালে ছিলেন গণচীনের রেডিও পেইচিং এর ভাষা বিশেষজ্ঞ। ১৯৯৪-২০০৪ সালে ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গবেষণা, শিশুতোষসহ গ্রন্থের সংখ্যা ৭০ এর বেশি।
গল্প সংগ্রহ
আত্মবিস্মৃত এবং আত্মবিস্মৃতিপ্রবণ এক জনসম্প্রদায়ের নাম ‘বাঙালি’। বাঙালি বারবারই তার আত্মপরিচয় ভুলে গিয়েছে, ভুলে থেকেছে, ভুলতে চেয়েছে এবং ভুলে যেতে চায়। আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে বাঙালি কখনো উচ্চাভিলাষী, কখনো হীনমন আবার কখনো-বা বিভ্রান্ত। এই জনসম্প্রদায় আত্ম ভুলে বারবারই অপরের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিয়েছে, অপরের পরিচয় গায়ে মেখে গৌরব বোধ করেছে ও করছে। এমনকি, তাকে কোথাও বাঙালি বলে চিহ্নিত করা হলে কিংবা বাঙালি বলে চিহ্নিত হয়ে পড়লে সে হীনমন বোধ করেছে এবং করে থাকে। তথাপি ‘বাঙালি’ শব্দটির প্রতি এই জনসম্প্রদায়ের রয়েছে এক অদ্ভুত মোহ। যদিও-বা সে ধার করা পরিচয়টিকেই তার আত্মপরিচয় হিসেবে প্রাধান্য দেয়, কিন্তু সবকিছুর সাথেই আবার ‘বাঙালি’ শব্দটিকেও জুড়ে রাখতে চায়। হয়তো-বা এটা করেও সে আড়ালে, নিভৃতে একান্তে ভীষণ লজ্জা বোধ করে থাকে আর নিজের কাছে থেকেই নিজের মুখ লুকাতে চায়। এমনই হীনমন এই জনসম্প্রদায়। ইতিহাসের কোনো কালে যদি এমন দেখা যায় যে, এই জনসম্প্রদায় বাঙালিত্বের জয়গান করছে ও নিজেকে সেই নামরূপে জাহির করছে, তবে, তার বহুসহস্রাব্দের ঐতিহাসিক অবস্থান বিচারে মনে হতে পারেজ্জতা নিতান্তই কালের ভ্রান্তি কিংবা দীর্ঘ স্বপ্নের মাঝে সামান্যকালের অঘটনজনিত ছেদ। কিন্তু, এটি তো অকাট্য সত্যি যে, তার বাঙালিত্ব প্রকৃতই তার অস্তিত্বের ভিত্তি, সত্তার আধার। ফলে একে মুছে ফেলাও যায় না। কখনো-বা মুছে ফেলতে চায় কিন্তু, পারে না, এর কারণও এই যে, বাঙালিত্ব তার শিকড় যা তার রক্তে বিস্তৃত এবং ভূমিতে প্রোথিত। এ-ই তার দ্বিধা আর দ্বন্দ্বের যুপকাষ্ঠ। বাঙালি তার অস্তিত্বের সূত্রপাতে, উত্থানে, বিকাশে ও বিস্তারে সভ্যতার বিশেষ বৈশিষ্ট্যে এবং ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সমাজ বিকাশের কার্যকারণগত জটিলতায় প্রায় জীবন্মৃত। সভ্যতা বিকাশের কালপরিক্রমা ও সংঘটনাসমূহের দ্বিধান্বিত পরিনামমুখ বাঙালিকে এমন এক দ্বিধায় আটকে রেখেছে যে, তার এই অবস্থার একটাই শিরোনাম হতে পারে ‘ত্রিশঙ্কু’। এ-ই তার সংকট।
বাঙালির আত্মপরিচয়ের সংকটই প্রধান প্রতিপাদ্য এই আলোচনায়। কেমন তাদের আত্মপরিচয়ের স্বরূপ? বাঙালি, একটি জনসম্প্রদায় যাদের আত্মপরিচয় চিহ্নিত হয় ‘বাঙালি’ পারিভাষিক শব্দটি দিয়ে। এই জনসম্প্রদায় কবে বাঙালি বলে চিহ্নিত হলো আর কীরূপে ও কীসের ভিত্তিতেই-বা এই বাঙালিত্ব চিহ্নিত হলো তা যথেষ্ট অনুসন্ধানের বিষয়। তথ্য পাই যে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের দিকে ঐতরেয় আরণ্যকে ‘বঙ্গা’ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। পাণিনির অষ্ট্যাধ্যায়ীর ভাষ্যে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে ‘সুহ্মাঃ, পুণ্ড্রাঃ, বঙ্গাঃ’র উল্লেখ দৃশ্যমান রয়েছে। এবং সহস্রাব্দের পুরোনো চর্যাগীতিতেও বাঙ্গালী, বঙ্গাল (দঙ্গাল?) নামের দেশের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু, সেইকালে বা সেইকাল থেকেই ‘বাঙালি’ নামের কোনো জাতিত্ববোধের জনসম্প্রদায় পাওয়া যায় না, যদিও সেকালে জনসম্প্রদায়ের অস্তিত্ব বিরল ছিলো না। ফলে অনুমান সহজ যে আদিতেই ‘বাঙালি’ শব্দটি জাতীয়তা কিংবা জাতিসত্তার পরিচয়জ্ঞাপক কোনো পরিভাষা ছিলো না। বরং এই শব্দটি একটি জনসম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক পরিচয়-পরম্পরার সাক্ষ্য বহন করে। জাতিসত্তা চিহ্নিত করণের ও জাতীয়তা নির্ধারণের নিমিত্তে মানুষের যে চেতনা, জ্ঞানপ্রবণতা ও মনোভঙ্গি তা একেবারেই নতুন; অদূর অতীতের উনিশ, বিশশতকের মানুষের আধুনিক উন্মাদনার ফল হলো জাতীয়তাবোধ। আরো স্পষ্ট করে বলা যায় যে, তা আসলে পাশ্চাত্যের কিছু দেশ থেকে আসা একটি ধারণা। এ-ও স্বীকার্য যে মানুষের সাংস্কৃতিক, ভাষাতাত্ত্বিক কিংবা নৃতাত্ত্বিক আত্মপরিচয়ের ঠিকুজি অনুসন্ধান তাদের হাতেই শুরু। আর আমরা তাদের উপনিবেশের থাবায় পড়ে তাদেরই উদ্যোগে প্রায়, তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক তৎপরতার কল্যাণ বা অপকল্যাণে আমাদের আত্ম-অহংকারের ভিত্তি খুঁজতে গিয়ে এই ‘বাঙালি’ পরিভাষাটি পেয়েছি আমাদের জাতি-পরিচয়ের স্মারক রূপে। জ্ঞান সাধক আহমদ শরীফ উল্লেখ করছেন এভাবে যে, ‘সুতরাং আজকের সংহত বাঙালী জাতি গড়ে উঠেছে বিদেশী বিজাতি-বিভাষীর শাস্ত্র-সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকার সম্পৃক্ত জীবনচর্যা গ্রহণ করেই।’১ এ-ই আসলে ভারতবর্ষের মানুষের এবং বাঙালির উপনিবেশ যাপনের ফল। উপনিবেশের কারণে বাহিরের জ্ঞানের সংস্পর্শে বাঙালিরা নিজের জ্ঞানচেতনাও পেয়েছে এবং নিজস্বতায় চিন্তা করতে গিয়ে তার কিছু দ্বিধাও এসেছে অনিবার্যতায়। বাঙালির এখনো দ্বিধাঙ্কিত প্রশ্ন এই যে, এই বাাঙালি জাতিত্বের ভিত্তি কি? ভিত্তি কি তার শিকড়ভূমি, সংস্কৃতি নাকি ভাষা? কেন না, পাশ্চাত্যের জ্ঞান এই বিষয়ক নির্দিষ্টতা দেয় না। বিশ^জুড়েই, জাতিসত্তা কিংবা জাতীয়তার ভিত্তি কী হবে তার কোনো বিষয়গত ও তাত্ত্বিক নির্দিষ্টতা নেই। যদিও বিষয়টি স্থির নয়, তবু, সাংস্কৃতিক ভিত্তিকেই অধিক গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে নানা কারণেই। বাঙালির জন্য বিবেচনা এই যেজ্জবঙ্গ বা বঙ্গাল প্রাচীন, তার মানুষের পরম্পরা প্রচীন ফলে তার সংস্কৃতিও প্রাচীন। বঙ্গালের মানুষের ভাষাটির নাম যে বাঙলা ছিলো এই সাক্ষ্য পাওয়া দূরহ। ভাষাতাত্ত্বিক বিচারে ‘বাংলা’ নামে যে ভাষাটির পরিচয় মেলে সেটি অন্তত বাঙালির প্রকরণ পরম্পরার চেয়ে পুরোনো নয়। প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে বাংলা নামের ভাষাটির প্রতিষ্ঠিত লিখিত ও কথ্যরূপ পাওয়া যায়। কিন্তু, বাঙালির সাংস্কৃতিক প্রবাহ ঠিক কতো পুরোনো তা নির্দিষ্ট করে নির্ণয় করা যায় না। সেটি সুনির্দিষ্ট করে নির্ধারণ করা না গেলেও ঐতিহাসিক নিদর্শনগত ভিত্তির গণনা যে তা প্রায় পাঁচ সহস্রাব্দেরও পুরোনো। খ্রিস্টপূর্ব পনের’শ অব্দের কাছাকাছি সময়ে ভারতবর্ষে আর্যগণের আগমনেরও অনেক আগের নানান সাংস্কৃতিক উপাদান, বিশ^াস ও লোকচর্চা বাঙালির বর্তমান সংস্কৃতিতে এখনো বিরাজমান। ফলে, সংস্কৃতিই কি নয় বাঙালির যথার্থ আত্মপরিচয়ের স্মারক? সুতরাং, বলা যায় বাঙালির যথার্থ পরিচয় তার সংস্কৃতিতেই মেলে। তবু ভাষাভিত্তিক পরিচয়টিও অগ্রাহ্য করা যায় না। আর আধুনিককালে এসে জাতিপরিচয়ের ভিত্তিকারণ হিসেবে ধর্মকে গ্রহণ করার প্রবণতাও এই বিষয়ক গ্রাহ্যতা-অগ্রাহ্যতার সীমানা ভেঙেছে। এরই ফলে বাঙালির আত্মপরিচয়ের বিবেচনাটিই আজ বিভ্রান্তির করালে, হুমকির মুখে। বলা যায় তার আত্মপরিচয়ের ঠিকুজি যেন লুট হয়েছে।
বাঙালির আত্মপচরিয়ের সংকটটি অন্য আর কিছুই নয়, তার সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বিভ্রান্তির পরিনাম যা বিভিন্ন কালে ঔপনিবেশিক শক্তির প্রভাব বলয়ে থেকে বাঙালির সমাজচৈতন্যে প্রবেশ করেছে। বাহিরের শক্তি যেমন বাঙালির সাংস্কৃতিক, ভাষাভিত্তিক আত্মপরিচয়টিকে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছে এবং চাইছে, তেমনই বাঙালি নিজেও অনেকাংশেই তার বাঙালিত্বকে আর মনে রাখতে চায় না বা অন্যভাবে চিনতে চায় নিজেকে। তারা অন্য কোনো পরিচয়ের গৌরব…
বাঙালির দ্বিধার চলক
রাজীব নূর খান। জন্ম ১৯৮৫ সালে ঢাকায়। বর্তমানে ফটোসাংবাদিক। আড্ডা দেয়া ভীষণ পছন্দ। কাজের ফাঁকে মাঝে মধ্যে লেখার চেষ্ঠা করেন। মানুষের গভীর গোপন অনুভূতিগুলো ছবি ও লেখালেখির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলোর চেষ্টা করেন। এলামেলো জীবনে অভ্যস্ত হলেও আগোছালো কাজ সহ্য করতে পারেনা একেবারেই।ওর ভীতর রয়েছে আশ্চর্য এক সুন্দর শৈল্পিক সত্ত্বা; যাপিত জীবনের খুব তুচ্ছ বিষয়কেও নিজের রুচিবোধ আর সৃজণী ক্ষমতা দিয়ে পরম উপভোগ্য আর সুখপাঠ্য করে তোলেন।
টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা
কবিতা লিখতে গিয়ে বার বারই মনে হয়েছে, পৃথিবীর চেয়েও আকাশ সুন্দর।
রাতের নক্ষত্রের চেয়ে মানুষ সুন্দর।বাগানের ফুলের চেয়েও মানুষের স্বপ্নগুলো
সুন্দর।
আমি কবিতায় সেই সুন্দর প্রত্যাশাগুলোকেই সাজাতে চেয়েছি।কী পেরেছি-
তা সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকাই বলতে পারবেন!
লেখালেখি গভীর সাধনার নাম। পরবাসে থেকে কাজটি সহজ নয়।তারপরেও
চেষ্টা করেছি, চেষ্টা করছি।
আমার এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রকাশনী সংস্থা
‘অনুপ্রাণন প্রকাশন’। এর স্বত্বাধিকারী বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা শ্রদ্ধাভাজন আবু এম ইউসুফের প্রতি বিনীত কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কবিতা মানুষকে আলোকিত করে, কবিতা মানুষকে ধ্যানী করে তোলে।
সংকটকালীন এই বিশ্বে, মানবতার জয় হোক।মানুষে মানুষে ভালোবাসা ছড়িয়ে
পড়ুক- এই প্রত্যাশাই আজ। অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সবাইকে।
ফারহানা ইলিয়াস তুলি
নিউইয়র্ক
২৩ ডিসেম্বর ২০২১
ফারহানা ইলিয়াস তুলি
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.