Description
$ 3.53 $ 4.71
Weight | 0.260 kg |
---|---|
Published Year |
ভূমিকা
১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে সক্রিয় প্রচার-কর্মী, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন ছিল বাঙালি জাতির চূড়ান্ত মুক্তির লড়াইয়ের প্রস্তুতি পর্ব। বাংলার গণমানুষের মুক্তির অগ্রদূত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর বাসভবন ৩২ নম্বর ধানমন্ডিই হয়ে ওঠে বাঙালি জাতির মূল ঠিকানা। অধীর আগ্রহে জাতি, দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় যেমন বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ৭০-এ নৌকায় আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দাও, আমি তোমাদের চূড়ান্ত বিজয় এনে দিব। তাই জাতির বিজয়ের স্বাদের অপেক্ষায় ’৭১-এর অগ্নিঝরা মার্চ-বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে জাতির উদ্দেশে নির্দেশনা দেন। শহর-বন্দর, গ্রামগঞ্জে সর্বত্র শত্রুর বিরুদ্ধে প্রস্তুত হওয়ার জন্যÑ যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক এবং এলাকায় এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেন। আমি আমাদের এলাকায় শরণখোলা থানা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের কর্মী। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাÑ মাতৃভূমি হানাদারমুক্ত করতে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলে সুন্দরবনে মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী সংগঠিত হয়। অতঃপর সুন্দরবনে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা ঘাঁটি গড়ে ওঠে। বিশাল মুক্তিবাহিনীর দল, মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনের তত্ত্বাবধানে অস্ত্র চালানো যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শুরু হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে যা সুন্দরবন সাবসেক্টর হেডকোয়ার্টার হিসেবে পরিচিত। আমি সুন্দরবন সাবসেক্টর অঞ্চল সুন্দরবন মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেই। বগী মুক্তিবাহিনীর রিক্রুটিং সেন্টারে রিক্রুট হই নিয়মিত যোদ্ধা হিসেবে। এখানে পহেলা অক্টোবরে পাঞ্জাবীর গানবোট প্রতিরোধ সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হাবিলদার আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করি। এরপরে সুন্দরবন মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হয়লাতলা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। তখন ওই ক্যাম্প ইনচার্জ কমান্ডার ছিলেন এম. আফজাল হুসাইন, আমাদের প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন বীরপ্রতীক আলী আহমে¥দ খান। অতঃপর হানাদার শত্রুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেই। বিশেষ করে সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনের নির্দেশে শেখ শামসুর রহমানের কমান্ডে সুন্দরবন নারকেলবাড়িয়া অ্যান্টি স্মাগলিং স্কোয়াডে যোগ দেই। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার অংশগ্রহণ ও ভূমিকা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ গর্ব ও সৌভাগ্যের বিষয়।
একাত্তরের সুন্দরবন
জন্ম ২ জানুয়ারি ১৯৮৩ নোয়াখালীতে। ২০০০ সালের মাঝামাঝিতে লেখালেখিতে সচেতনভাবে মনোযোগী হন। সিরিয়াস লেখার পাশাপাশি রম্য রচনাও করেছেন। পেশায় পা-ুলিপি সম্পাদক এবং সাংবাদিক।
গল্পকথায় ৩৫ গল্পকার
প্রত্যেক মানুষের জীবনে স্মৃতি থাকে। স্মৃতি মানেই ঘটনা। অমøমধুর, বেদনাবিধুর যতো ঘটনা ঘটে মানুষের জীবনে সে-সবই স্মৃতি।
স্মৃতি- স্মৃতিকাতর করে অর্থাৎ নস্টালজিক করে তোলে মানুষকে। স্মৃতির সঙ্গে সম্পর্ক থাকে মানুষের। তারা নানা মুখাবয়বের, নানা পেশার এবং নানা চরিত্রের। আবার তাদেরকে ঘিরে আরও অনেক মানুষের সম্পর্ক জড়িত থাকে। আর এই নিয়েই মানবজীবন।
আমার জীবননৌকোও অগণন স্মৃতিসম্ভারে ভরপুর, সজ্জিত। বিশেষ করে, আমার শৈশব থেকে যৌবনের উত্থানকালের ২৪-২৫টি বছরের অসংখ্য স্মৃতি আছে, যেগুলো নিয়েই এই আত্মজৈবনিক উপন্যাস “অতলান্ত পিতৃস্মৃতি” গ্রন্থটি। আমার এই সময়টাকে আমি যাঁর চোখ দিয়ে ফিরে দেখতে চেয়েছি তিনি আমার জন্মদাতা পরম শ্রদ্ধেয় পিতা। যা কিছু ঘটেছে, যা আজকে স্মৃতি- সবকিছুরই সাক্ষী আমার বাবা। আর সেখানেই পিতা-পুত্রের সম্পর্কটা সৃষ্টি হয়েছে। কী সেই সম্পর্ক? সেই সম্পর্ক যা সহজে লেখা যায় না। না পড়লে তা জানাও যাবে না।
পড়ার পর হয়তো অনেকেই মিলিয়ে দেখবেন তাঁদের জীবনের সঙ্গে, কেউ কেউ বিষণœও হতে পারেন। কেউ কেউ পড়ে বিস্মিত হবেন! আবার কেউবা ক্ষোভ প্রকাশ করবেন, ক্ষুব্ধ হবেন। কিন্তু যা সত্য, তাই তুলে ধরতে গিয়ে আদৌ কার্পণ্য করিনি। কাউকে ছোটও করিনি, কাউকে বড়ও করিনি। মানুষ হিসেবে এখানেই আমার সীমাবদ্ধতা, পরিপূর্ণতা এবং তৃপ্তি বলে মনে করি।
অতলান্ত পিতৃস্মৃতি
১৯৫৮ সালে জিম ম্যাকিনলি নামের এক আমেরিকান মিশনারি কার্যক্রম চালানোর উদ্দেশ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সপরিবারে ফেনী অবস্থানকালে পাক বাহিনীর অতর্কিত বিমান হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিল তাঁর পরিবার। সুযোগ পেয়েও তিনি পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ ত্যাগ করতে রাজি হননি। নিজের জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের ফসল ৮ মাসের দুঃসহ অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত ‘ডেথ টু লাইফ’। নাহার তৃণার বাংলা রূপান্তর ‘মৃত্যু পেরিয়ে জীবন’। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও সেদেশের অসংখ্য হৃদয়বান মানুষ নিজ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বাঙালিদের জন্য খুলে দিয়েছিলেন উদারতা ও মমত্বের দুয়ার। ম্যাকিনলি রচিত এই স্মৃতিকথা তারই এক অনন্য উদাহরণ।
Mrittu Periye Jibon By JIm Mckinley, Translated By Nahar Trina - এক আমেরিকান মিশনারির একাত্তরের স্মৃতি
লেখকের কথা
প্রতিটি মানুষের জীবনেই রয়েছে অজস্র গল্প। গল্প ছাড়া মানুষের জীবন হতেই পারে না! আর সেইসব গল্প বাস্তবতার- আদৌ কল্পনার নয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের নানা রকম সম্পর্ক গড়ে ওঠে শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। গল্পগুলো সেই সম্পর্কজাত। যা জীবদ্দশায় ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। যারা লিখতে পারেন তারা চেষ্টা করেন সেইসব জীবনস্মৃতির গল্পগুলোকে জনসম্মুখে তুলে ধরতে লেখনীর মাধ্যমে। আর যারা লেখায় অভ্যস্ত নন, তারা নিভৃতে মনের ভেতরে সেসব লালন করেন এবং সময়-সুযোগ পেলে অন্যকে বলেন। অনেক লেখক আছেন যারা বিভিন্ন সময় নানা চরিত্রের মানুষের কাছ থেকে তাদের জীবনে অর্জিত অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতার গল্প, দুঃখ-বেদনার গল্প, হাসি-খুশির ঘটনা, বিয়োগান্তক কাহিনী ইত্যাদি শুনে উপন্যাস বা গল্পে রূপ দেন।
সাধারণ মানুষ বলি আর বিশিষ্টজন বলি; লেখক বলি আর শিল্পী বলি- তাদের জীবনের গল্পগুলো সাধারণ গল্প নয় বলেই গণমাধ্যমে বা পাঠ্যপুস্তকে সেগুলো প্রকাশিত হয়ে থাকে। শিক্ষামূলক গল্পের যেমন শেষ নেই তেমনি প্রেম-ভালোবাসা, ব্যর্থতা, আশা-নিরাশা, বিচ্ছেদ, লড়াইমুখর গল্পেরও সীমা-পরিসীমা নেই। সেসব জীবনস্মৃতির গল্প পড়ে আমরা বিচিত্র চরিত্র, চিন্তা ও মন মানসিকতার মানুষকে চিনতে, জানতে পারি। এর মধ্যে অনেক গল্পই আছে সাহিত্যরসে টইটুম্বুর- রোমান্টিক, ভাবনার উদ্রেককারী এবং শিক্ষামূলক।
গল্প সাধারণত দুধরনের বলা যায়, এক হচ্ছে, বানানো গল্প বা কল্পলোকের গল্প। দুই হচ্ছে, জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বাস্তব গল্প। বানানো গল্পগুলোর চেয়ে জীবনস্মৃতির গল্পগুলো বেশি নাড়া দেয় মানুষ তথা পাঠককে। কারণ সেইসব গল্প অনেক মানুষের জীবনের গল্প। বানানো গল্প যেভাবে সুন্দর ভাষা ও অলঙ্কারে আদর্শ চিত্রকলার মতো করে প্রকাশ করা হয়, জীবনস্মৃতির বাস্তব গল্পগুলো সেই রঙে আঁকা সম্ভব হয় না। এতে করে গল্পের প্রাণ হারিয়ে যায়, সংবেদনশীলতা শীতল হয়ে পড়ে। হারিয়ে যায় আকর্ষণও। বানানো গল্প মনে থাকে না, যদি না তাতে বাস্তবতার নোনাজলের ধারা প্রবাহবান থাকে।
মানুষ হিসেবে আমিও ব্যতিক্রম নই। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমার এই ষাট ছুঁইছুঁই বয়সে বহু ঘটনার সঙ্গে বেড়ে উঠেছি, অর্জিত হয়েছে বিস্তর অভিজ্ঞতা। কত চরিত্রের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটেছে তার হিসেব নেই। সেইসব ঘটনা অমূল্য স্মৃতি এবং অকাট্য সম্পর্ক। এই সম্পর্ক এতই অম্ল-মধুর যে, পড়ন্ত বেলায় এসে যতই ভাবি ততই নিজেকে ফিরে ফিরে দেখার সাধ জাগে, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে যুগপৎ আনন্দিত এবং বিষণ হই। জীবনস্মৃতির সেইসব অজানা গল্পগুলোই পড়ে অনেকে নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নেন। যুগ যুগ ধরে এটাই সাহিত্যে চলে আসছে। এভাবে কালজয়ী, রসোত্তীর্ণ গল্পও আমরা অনেক পেয়েছি। ভবিষ্যতেও পাব।
জীবনস্মৃতির এই গল্পগুলো ‘সম্পর্ক’ শিরোনামে একটি গল্পসংকলনে পত্রস্থ করে স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা ‘অনুপ্রাণন প্রকাশন’ ঢাকা প্রকাশ করে আমাকে চিরঋণী করেছেন। আশা করি গল্পগুলো পাঠককে গভীরভাবে নাড়া দেবে।
‘অনুপ্রাণন’কে জানাই অন্তঃস্থল থেকে অজস্র ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
প্রবীর বিকাশ সরকার, টোকিও.জাপান, ৭, অক্টোবর, ২০১৭
জীবনস্মৃতির গল্প সম্পর্ক
খোঁচা
খোঁচা খুব ঔষধী
খোঁচা খুব বেয়াড়া,
খেলে খায় খুশিতে
কারো লাল চেহারা।
খোঁচা খায় বঁধুয়া
কলতান হাসিতে,
খোঁচা চায় প্রেমিকা
চায় ভালোবাসিতে।
খোঁচা দাও বাবুকে
সারাক্ষণ জ্বালাতো,
হবে ভাব ত্বরিতে
আগে দূর পালাতো।
খোঁচা দাও সুযোগে
খোঁচা দাও বুঝিয়া
খোঁচা দাও সমাজে
খোঁচা দাও খুঁজিয়া।
খোঁচা দাও জাগাতে
যারা ঘুম জাগে না,
বসে দাও চেয়ারে
যাঁরা পদ মাগে না।
খোঁচা
১৯০৬ সাল থেকে রচিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ী ক্ষুরধার গানগুলো নিয়ে কাজ করার তীব্র অনুভবে তাড়িত হই। গান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা না-করার অভাব থেকে এ গবেষণার জন্ম। সুযোগ আসে ২০০৯ সালে। তা অবশ্য কিছু দূর এগোনোর পর শেষও হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আবার কাজটি শুরু হয় সরকারি অর্থায়নে। তখন নতুন করে সাজাই ফেলোশিপ গবেষণার সূচিপত্র।
আগে চেয়েছিলাম সময়ক্রমে গবেষণা কাজটা করতে; পরে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণা-সৃষ্টিতে দেশাত্মবোধক গানের ভূমিকা (১৯৪৭-৭১)’ গবেষণার অধ্যায় বিভাজন করি—
ভূমিকা, দেশাত্মবোধক গানের পটভূমি, ১৯৪৭-৫২ সনের ভাষা আন্দোলন পর্বের গান, ১৯৬৯-৭০ সনের গণ-অভ্যুত্থান পর্বের গান এবং ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ পর্বের গান।
তবে শেষের পর্বটিতে তিনটি সেমি-পর্ব যুক্ত হয়—প্রেরণামূলক বঙ্গবন্ধুর গান, সংগ্রামে-সংগীতে নারীর অবদান এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান।
গ্রন্থটিতে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন এবং নজরুল স্বরলিপিকার সুধীন দাস এবং বিশিষ্ট গণ সংগীতশিল্পী শুভেন্দু মাইতি (যিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অর্থ সংগ্রাহক ছিলেন)—তিন বিশিষ্ট জনের সাক্ষাৎকার সংযোজিত হয়েছে। প্রায় ৯০০টি দেশপ্রেরণামূলক গানের তালিকা দেয়া হয়েছে।
গবেষণার দীর্ঘ পথে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হই। তবে ধৈর্য ধারণ করে সবটা সহ্য করেছি; গবেষণা কর্মের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে। পরম করুণাময়ের অপার কৃপায় কাজটি শেষ করতে পেরেছি। তিনি সর্বোতভাবে সাহায্য করেছেন; সে প্রমাণ প্রতি মুহূর্তেই পেয়েছি। বাকিটা বিবেচনার ভার সম্মানিত পাঠকদের।
ফেলোশিপ গবেষণাটির প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সার্বিক দায়িত্বে ছিলাম আমি।
যাদের আন্তরিকতা, সহযোগিতা পেয়েছি, তারা হলেন—
শ্রী গোবিন্দলাল দাস, শ্রী করুণাময় অধিকারী, জনাব ড. মূহ: আব্দুর রহীম খান, লিপিকা ভদ্র, সঞ্জয় কুমার বণিক, মল্লিকা দাস, ড. সাইম রানা, ড. সেলুবাসিত, ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন (গিয়াস শামীম), ড. রঘুনাথ ভট্টাচার্য, আবদুল মতিন, সুধীন দাস, শুভেন্দু মাইতি, মোবারক হোসেন খান, সেলিম রেজা প্রমুখ সুহৃদগণ। সবাইকে কৃতজ্ঞ-চিত্তে স¥রণ করছি।
সময়ে-অসময়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় যাদের, তারা হলেন আমার পূজনীয় শিক্ষক—ড. সাঈদ-উর রহমান এবং অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক।
গবেষণা কাজটির মূল্যায়ন করেছেন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। তার আশীর্বাদকে ভক্তি জানাই।
‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম’-এ প্রেরণাদায়ী গানগুলোর যাদুমন্ত্রে যুদ্ধ জয়ের নেশায় বীর বাঙালি দুর্বার গতিতে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা।
সেই গানগুলোর পটভূমি এবং গানগুলো সম্পর্কে সকলে জানতে পারবেন যার সহযোগিতা, সহমর্মিতায় তিনি—অনুপ্রাণন প্রকাশনের সত্ত্বাধিকারী আবু এম ইউসুফ ভাই। এই ফেলোশিপ গবেষণা ও সমীক্ষা ধর্মীগ্রন্থটি অনুমোদন ও প্রকাশের উদ্যোগ নেবার জন্য তার প্রতি অপরিসীম আন্তরিকতা প্রকাশ করছি। ২০২০ সালের বইমেলার বই-প্রকাশনার সীমাহীন ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও গ্রন্থটির নামকরণ করে তিনি কৃতজ্ঞাপাশেবদ্ধ করেছেন।
ড. শিল্পী ভদ্র
ঢাকা।
মুক্তি-সংগ্রামের গান
কলকাতার স্মৃতিকথা
জন্মের শহর : সিলেট।
বেড়ে ওঠা : সিলেট, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম।
স্কুল জীবন থেকে লেখালেখির শুরু, কবিতা আর রবীন্দ্রনাথকে ভালোবেসে।
এক সময় মনে হয়েছিল বিপ্লব করবেন তাই নামের আগে যুক্ত করেছিলেন ‘আসাবিক’ অর্থাৎ ‘আমি সারকারখানা স্কুলে বিপ্লব করবো’।
কিছুদিন আন্ডারগ্রাউন্ড সাহিত্য পত্রিকায় লেখালেখি চলছিল।
গদ্য পদ্য দুটোতেই দৌড়-ঝাঁপ। আবৃত্তি খুব প্রিয় বলে কবিতার সুষমা, শব্দ-উপমা, চিত্রকল্পের বেসুমার লাগামহীন টানই হয়তো আলাদা করে রাখে অপরাহœ সুসমিতোকে, ভিন্নতায়।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও কানাডায় প্রোগ্রামিং নিয়ে পড়াশোনা কবিতার রম্য প্রেম থেকে তাকে আলাদা করে রাখতে পারেনি।
লালমনিরহাটে বছর পাঁচেক ম্যাজিস্ট্রেসি করেছেন। ত্রাণ মন্ত্রণালয়েও কিছুদিন। এখন কানাডার মন্ট্রিয়ল শহরে কাজ করেন, খান। লেখালেখির বাইরে আবৃত্তি, অভিনয়, টেলি-জার্নাল, বড়দের-ছোটদের নিয়ে নানা রকম সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে সমান আগ্রহ। এক সময় গ্রুপ-থিয়েটার করতেন। একটা শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছেন।
বিদেশ ভ্রমণ: ভারত, নেদারল্যা-স, কানাডা ও আমেরিকা।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : তুমি পারো, ঐশ্বর্য (২০১০), রাষ্ট্রপতির মতো একা (২০১৪)
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : চিড়িয়াখানা বা ফেসবুক ও অন্যান্য গল্প (২০১৬)
মিরর
জন্ম ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট, ঢাকায়। শৈশব কৈশোর কেটেছে হাইকোর্ট কম্পাউন্ডের সবুজ গাছ, অবারিত খেলার মাঠ আর টিনের চালে রিমঝিম বৃষ্টির সাথে। প্রথাগত পড়াশোনায় ইতি ঘটে প্রবল অনাগ্রহে। প্রকৌশল বিদ্যা শেষ না করে বেরিয়ে পড়েন শব্দের সন্ধানে। লম্বা সময় বোহেমিয়ান ঘুরে বেড়িয়েছেন। এ দেশ-ও দেশ আর অলি-গলি পেরিয়ে রাজপথ। পেশায় গীতিকার।
পরিচিত গান- আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে, বৃষ্টি পড়ে, আই সি সি বিশ্বকাপ ২০১১-এর থিম সং মার ঘুরিয়ে প্রভৃতি।
রুল টানা খাতা
লেখকের কথা-
পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের ঐতিহাসিক মূল্য অনেক। এর দ্বারা একটি সময়ে সংঘটিত নানান ঘটনার বিশ্লেষণ করা যায়। তাই, মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ও বহুমুখী দিকগুলো অনুধাবন ও বিশ্লেষণ করতে সেই সময়ে প্রকাশিত পত্রিকার রিপোর্টগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।
২০১৬’র নভেম্বরে দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক আশফাক ভাই একদিন বললেন, মুক্তিযুদ্ধের শেষ ১৭ দিনে (ডিসেম্বর ০১ – ডিসেম্বর ১৭) আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রিপোর্টগুলোর অনুবাদ নিয়ে একটি ধারাবাহিক সিরিজ করে দেয়ার জন্য। শুনেই আমি রাজি হয়ে যাই। দৈনিক ইত্তেফাকে ২০১৬’এর ০১ ডিসেম্বর হতে ১৫ ডিসেম্বর (১৪ ডিসেম্বর বাদে) পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ১৪টি রিপোর্টের অনুবাদ প্রকাশ হয়েছিল।
এই বইতে সেই ১৪টি রিপোর্টের অনুবাদ সহ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মোট ২০টি রিপোর্টের অনুবাদ রয়েছে। ডিসেম্বর ০১-১৭ এর ১৮টি রিপোর্ট ও মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় মার্চের ০২ টি রিপোর্টের অনুবাদ সংযুক্ত হলো।
অনুবাদগুলো ভাবানুবাদ এবং পত্রিকার রিপোর্টগুলো মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্টের সংগ্রহশালা হতে সংগ্রহীত।
এই অনুবাদ রিপোর্টগুলো বই আকারে প্রকাশের জন্য উৎসাহ দিয়েছেন সহযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্টের সভাপতি শান্তা আনোয়ার।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের শেষ ১৬ দিন
ভূমিকা
মূলত: ‘সুপ্রিয় দিনলিপি’ শিরোনামে আমার এই লেখাগুলো যে শুধুমাত্র দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, লেখাগুলো যে আসলেই মান-সম্পন্ন, পরিশীলিত এবং এতে যে সামগ্রিকভাবে একটি স্পষ্ট বক্তব্য বা ম্যাসেজ বিদ্যমান থাকে এবং তা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতেও প্রকাশিতও হচ্ছে- এই সামগ্রিক ব্যাপারটি আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি বহু বছর পরে, ১৯৯৮ সালের দিকে যখন ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’ এ আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। তখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর বিবিএ (অনার্স) এর শিক্ষার্থী। এরপর জীবনের বিভিন্ন সময়ে সাহিত্য, ছোট-গল্প, বিভিন্ন ন্যাশনাল ইস্যু, উপন্যাসের সমালোচনা, বঙ্গবন্ধুর জীবনী, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন বিষয়াবলীর ওপর আমার আর্টিক্যাল ও কলামগুলো একে একে দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক আজাদী ইত্যাদি জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত হতে থাকে। দ্যাট মীনস্ সিরিয়াসলি কাউন্ট করলে আমার লেখালেখির বয়স হচ্ছে বিশ (২০) বছর। কিন্তু যেহেতু আমি প্রফেশনাল রাইটার নই, তাই আমার লেখাগুলো প্রকাশিত হয় অনিয়মিতভাবে এবং সংখ্যায় খুবই কম। ‘সুপ্রিয় দিনলিপি’ শিরোনামে এখনো আমি ক্লান্তিহীনভাবে লিখে যাচ্ছি। এই পর্যন্ত আমার সেইসব লেখা সর্বমোট ১৯টি ডায়রীতে এসে দাঁড়িয়েছে। সেখান থেকে বাছাইকৃত কিছু লেখার ‘পরিবর্ধন -পরিমার্জিত’ রূপ নিয়েই রচিত ‘সুপ্রিয় দিনলিপি (দ্বিতীয় খণ্ড)’ পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করার নিমিত্তে। গ্রন্থটিকে রূপক অর্থে মূলতঃ ‘একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ’ও বলা যায়। এই গ্রন্থটিতে প্রধানত যে সময়কালের ঘটনাবলী বিশ্লেষনাত্মকভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সেই সময়কাল হচ্ছে- ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল। অদূর ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে ‘সুপ্রিয় দিনলিপি’ এর- তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম খণ্ডে পরবর্তী সময়কালের ঘটনাবলী বিশ্লেষণাত্মকভাবে তুলে ধরা হবে এবং একটা পর্যায়ে এর ইংলিশ ভার্সনও বের করা হবে- এইরকম একটি প্লান আমার রয়েছে।
আমি মনে করি,
“সময়ের সাথে সাথে নিজের মন ও মেধাকে আপডেটেড রেখে ধর্মীয় কুসংস্কার, বিজাতীয় সংস্কৃতির আধিপত্য ও দৌরাত্ম্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা, পারস্পারিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মেধার অবমূল্যায়ন, শিক্ষা-ব্যবস্থার ভগ্নদশা, শিক্ষকদের অবমূল্যায়নসহ সামাজিক আরও নানা অসঙ্গতি, দুর্নীতি পরিহার করে বাংলাদেশের যে নিজস্ব একটি আদর্শ, ঐতিহ্য, ইতিহাস, কৃষ্টি-কালচার, সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, রাজনৈতিক মূল্যবোধ রয়েছে- সামগ্রিকভাবে তার অনুশীলন করা- বাঙ্গালী জাতি হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ১৯৭১ সালে সবাই সময়ের প্রয়োজনে যুদ্ধ করেছিল, তখন যুদ্ধ করে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ‘স্বাধীন’ করাই ছিলো তখনকার সময়ের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন। আর এখন আকাশ-সংস্কৃতির এই আগ্রাসনের যুগে অর্থাৎ এই সময়ের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হচ্ছেÑ ‘আলোকিত এবং একই সঙ্গে মানবিক, দেশপ্রেমিক, নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন , অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, আধুনিক মানুষ ও চাই, যাতে করে একটি উন্নত ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যেÑ আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষ একসঙ্গে কাজ করতে পারি ঠিক সেই মুক্তিযুদ্ধের মতো।
অর্থাৎ বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি আত্মনির্ভরশীল, সংস্কারমুক্ত, স্বশিক্ষিত, মেধাবী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে হলে- আমাদের সকলকে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং যেখানে আমাদের মূল অস্ত্র হবেÑ আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা ও অন্যান্য সকল জাতীয় অর্জন এবং একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের বহিঃপ্রকাশ! ‘আলোকিত মানুষ চাই এবং একই সঙ্গে মানবিক, দেশপ্রেমিক, নৈতিকমূল্যবোধসম্পন্ন, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, আধুনিক মানুষও চাই’- মূলত এটাই হওয়া উচিত আধুনিক বাংলাদেশ এর শ্লোগান’।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর উপকার করতে চাইলেও করা যায় না, তার চেয়ে বরং আমরা যা করতে পারি তাই যদি করি তাহলে আপনা-আপনি পৃথিবীর উপকার হয়ে যায়’।
মূলত: পাঠকের ভালো লাগা এবং ভালোবাসাই হচ্ছে লেখকের প্রত্যাশা পূরণ। আশা করি, আপনারা কখনো আমাকে এবং আমার লেখাকে সেই ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করবেন না। আমি মূলত প্রফেশনাল রাইটার নই। আমার মূল পেশা ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা’ আর নেশাÑ ‘লেখালেখি করা’। ‘পেশা’য় জড়িত না থাকলে আমার এ পৃথিবীতে জীবন-ধারণ ও অস্তিত্ব রক্ষাই দুরূহ হয়ে উঠবে কিন্তু ‘নেশা’টা আমার মাঝে-মধ্যে করলেও চলবে। ‘শিক্ষকতা’ পেশায় ব্যস্ত থাকার কারণে, এই গ্রন্থটির প্রতি হয়তবা পরিপূর্ণ মনোনিবেশ ঘটাতে পারিনি। ‘সুপ্রিয় দিনলিপি (প্রথম খণ্ড) অথবা সুপ্রিয় দিনলিপি (দ্বিতীয় খণ্ড)’ এর কোথাও যদি পাঠকেরা অতৃপ্তি কিংবা অসম্পূর্ণ ফিল করেন, তাহলে তাদের কাছে অনুরোধ- ‘আপনারা রেগুলারলি ‘সুপ্রিয় দিনলিপি’-এর পরবর্তী খণ্ডগুলো সংগ্রহ করবেন’। আশা করি, তাহলে আর কোনো অতৃপ্তিবোধ থাকবে না। উল্লেখ্য, সুপ্রিয় দিনলিপি (দ্বিতীয় খণ্ড) -এর পাঠকগণ ‘অনুপ্রাণন প্রকাশন’ থেকেই ‘সুপ্রিয় দিনলিপি (প্রথম খণ্ড)’-বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
‘সুপ্রিয় দিনলিপি’ গ্রন্থটি প্রকাশের ব্যাপারে আমাকে বাংলাদেশের যে দু’জন স্বনামধন্য সাংবাদিক সবসময় সহযোগীতা ও উৎসাহ যুগিয়েছেন, তারা হচ্ছেনÑ ১. সাংবাদিক ‘সালিম সামাদ’ (বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য সাংবাদিক) যিনি ‘দি ডেইলী আওয়ার টাইমস্’ সহ আরও বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে এ কাজ করছেন এবং তিনি ২০০৫ সালে প্রেসটিজিয়াস ঐবষষসধহ-ঐধসসবঃঃ অধিৎফ অর্জন করেন এবং একসময় ‘ইন্ডিয়া টু ডে’, ‘বাংলাদেশ অবজাভার’, ‘বিবিসি’সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঈড়ৎৎবংঢ়ড়হফবহঃ ধহফ জবঢ়ড়ৎঃবৎ হিসেবে কাজ করেছেন এবং ২. সাংবাদিক ‘রাশেদ রউফ’ যিনি বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় দৈনিক ‘দৈনিক আজাদী’র সহযোগী-সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত। তিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য শিশু-সাহিত্যিক এবং কবি। তিনি ২০১৬ সালে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন।
এ গ্রন্থটির প্রচ্ছদ নির্বাচন করেছেনÑ সাংবাদিক, কবি ও শিশু সাহিত্যিক ‘রাশেদ রউফ’ এবং গ্রন্থটি প্রকাশনা করেছেন ‘অনুপ্রাণন প্রকাশন’। হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে সাংবাদিক ‘সালিম সামাদ’, ‘রাশেদ রউফ’ এবং ‘অনুপ্রাণন প্রকাশন’ এর কর্ণধারসহ সকল কলাকুশলীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ফারহানা আকতার
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ
১৫ জানুয়ারি ২০২০
Suprio Dinlipi, Part-2
একটা বিড়াল ছানা
কিভাবে সবার মন জয় করে একটা পরিবারের সদস্য হিসাবে নিজেকে মানিয়ে নেয় তাই প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই গল্পে।
ক্লাস সিক্স পড়ুয়া নীলার বাবা বাদামী রংয়ের ঠোঙায় করে কদম ফুলের মত একমুঠ পরিমান বিড়ালছানা নিয়ে এলেন। সেই সুন্দর বিড়ালছানার মজার মজার সব কান্ডকারখানা এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। বিড়ালের নামকরণ বিশ্লেষণ, মেহমান মুদ্রাদোষ বশতঃ পা নাড়লেই পাক্কা শিকারীর মত বিড়ালছানার সেই পা জাপটে ধরা, বিড়ালের উলের বল নিয়ে খেলা, ক্যালকুলেটর টিপে ভিতরের সংখ্যাগুলোর নড়াচড়া অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখা ইত্যাদি খুটিনাটি কিছুই বাদ পড়ে নি লেখিকার চোখ থেকে। একজন শিশুর চোখেই তিনি পুরো বিষয়টা দেখেছেন।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সুদীর্ঘ কাল চাকরি করার সুবাদে মজার মজার অভিজ্ঞতা তিনি প্রায়ই শেয়ার করেন। লেখিকা বাচ্চাদের চাইল্ড সাইকোলজি বেশ ভালো ভাবেই বুঝেন। গল্প লিখতে গেলে একজন শিশুর চোখেই বিষয়টা দেখার চেষ্টা করেন।
বিড়াল ছানা স্ন্যাফার
“ও ঘুমায়
আমার ত্বকের নিচে সারাদিন
রাতে
ওকে ডেকে তুলি
আমি বাঁচি
আমার কুকুরগুলোর জন্য
ওরা
অশান্ত হয়ে উঠেছে
ওরা
আমার ত্বক
চেটে
ফুটো করে ফেলবে”
Girls of Hongkong, A collection of Bangla Poems By Shishir Azam
‘মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং স্বাধীন দেশ দেখে গেলেন ইমনের মা। কিন্তু স্বাধীন দেশে নিজের বাসায় আর জীবিতাবস্থায় ফিরতে পারলেন না। শেষ নিশ্বাস ত্যাগের পর মায়ের মরদেহটা ইমন সেই কম্বলটি দিয়ে ঢেকে দেয়, যে কম্বলটি সে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছিল। এছাড়া কি-ই বা ছিল তার?
মাকে নেয়া হয় শ্মশানে। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে মাকে হারালো ইমন!
এ পর্যায়ে এসে ইমন চৌধুরী বলে, মায়ের কথা এখনো খুব মনে পড়ে। মা! পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ, সুন্দর এবং পবিত্র একটি শব্দ। যা কিনা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং এই দেশ মাতৃকার মতই যথাক্রমে বিশাল, মহান এবং সুন্দর। একাত্তরে মাকে হারিয়েছি সত্য, তবে পেয়েছি স্বাধীনতা এবং মানচিত্র।
আমার মায়ের স্মৃতির সাথে জড়িয়ে যায় এদেশের জন্মকথাও। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং এদেশটাই এখন আমার মা।’
ময়মনসিংহ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অবলম্বনে রচিত কিশোর উপন্যাসটি নিছক কোনো ডকু-ফিকশন নয়। আশার করা যায়, এটি এমন একটি ফিকশন হয়ে উঠেছে, যা কিশোর উপযোগী পাঠকসহ সব শ্রেণীর পাঠকের উপন্যাস পাঠের আনন্দ দেবে। পাশাপাশি ময়মনসিংহ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কেও ধারণা দেবে।
স্বাধীনতার জন্য
লেখক পরিচিতি :
শঙ্করী দাস। জন্ম: ৮ই মে, ১৯৫৮ সনে নিজ জেলা জামালপুরে। কবি প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থগুলোÑ গল্প: ‘প্রতিবিম্ব ও অন্যান্য গল্প’ ‘জলমাটির গল্প’ ও ‘রাহুর চন্দ্রগ্রাস’। কবিতাÑ ‘ঘাসবোনা গ্রাম তাঁতবোনা গ্রাম’। স্মৃতিচারণমূলকÑ ‘গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’। গল্পের জন্যে পেয়েছেন পাক্ষিক ঐকতান (বর্ধমান) পত্রিকা পদক। শিশু কবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ও নক্ষত্র সাহিত্য পুরস্কার।
বিহান বেলার ঈশ্বর
জন্ম ২৩ নভেম্বর, গোপালগঞ্জ জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষে বর্তমানে একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত। শৈশব থেকেই লেখলেখিতে আগ্রহী। প্রথম প্রকাশিত বই ‘চাঁদ চোয়ানো জোৎস্নায় ফিরে এসো নদীবতী মেয়ে’।
তোমার জন্য মেয়ে
লেখক পরিচিতি :
হামীম ফারুক। পুরো নাম: গোলাম ফারুক হামীম। জন্ম: ২৪শে অক্টোবর, ১৯৬৩, ঢাকা। প্রথম তারুণ্যে কাজ করেছেন ইংরেজি পত্রিকা নিউ নেশন-এ। সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে এখন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। মূলস্রোতের সাহিত্য পত্রিকাগুলোতে একটানা লিখেছেন ১৯৮৭ পর্যন্ত। মাঝখানে বিরতি দিয়ে পুনরায় আগমন প্রথম কবিতার বই ‘রোদ ও ক্রোধ, মাঝখানে সাঁকো’ দিয়ে। একটি ই-বুক আছে, ‘নক্ষত্রের চিরকূট’। এটি লেখকের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ।
প্রকৃতি পুরাণ
আশরাফ উদ্দীন আহ্মদ
কবি-কথাশিল্পী-প্রাবন্ধিক।
জম্ম- ১৬ কার্তিক, ১৩৮৪ বাং, বোয়ালমারী, ফরিদপুর।
আম্মা- বেগম সালেহা আহ্মদ,
আব্বাÑআফতাব উদ্দীন আহ্মদ,
শিক্ষা- স্নাতকোত্তর (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখালেখি কৈশোরেই, ছড়া দিয়ে হাতেখড়ি, কবিতা-ছোটগল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখা মূলত। বাংলা একাডেমী পরিচালিত ১৯৯৬ এর ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ র তৃতীয় কোর্সে অংশ এবং প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ সীমান্তরেখা ’ ১৯৯৭ সালে প্রকাশ, দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘ চতুর্ভূজ’ (যৌথ) ২০০২ সালে প্রকাশ বইমেলায়, তৃতীয় গল্পগ্রন্থ‘ ভালোবাসা ও এসব নিছক গল্প’ ২০০৬ সালের বইমেলায় প্রকাশ, চতুর্থ গল্পগ্রন্থ ‘পদ্মাপাড়ের গল্প (যৌর্থ) ২০০৭ সালে প্রকাশ বইমেলায়, পঞ্চম প্রকাশ, প্রবন্ধগ্রন্থ ‘কথাকার ও কথাসাহিত্য’ ২০১৬ সালে বইমেলায়, ষষ্ট প্রকাশ, প্রবন্ধগ্রন্থ ‘ মুলধারা সাহিতের রকমফের’ ২০১৯, সপ্তম প্রকাশ, গল্পগ্রন্থ ‘তারপর অন্ধকার দুঃসময়’ ২০১৯, অষ্টম প্রকাশ, গল্পগ্রন্থ ‘ হামিদালীর সুখ-স্বপ্ন ও অন্যান্য গল্প’ ২০২০ সালের একুশে বইমেলায়, নবম প্রকাশ, গল্পগ্রন্থ ‘ সেদিনও উঠেছিলো চাঁদ দিয়েছিলো জ্যোৎস্না’ (প্রকাশিতব্য)।
পৈত্রিক আদিনিবাস পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরে, সীমান্ত-সীমান্তের এপার-ওপারের প্রকৃতি ও মানুষ এবং তাদের জীবন ও জীবিকার পিচ্ছিল বিড়ম্বনা গল্পের মূল বিষয়-আশয়। সে সমস্ত চরিত্রগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে গল্পের আখ্যানে কাহিনীর মেজাজ বা স্বরে, কখনো মনে হয় তারাই গল্পের স্বপ্নবীজ, স্বপ্নের আঙ্গিকে নির্মিত হয়েছে কাঠামো, বাস্তবিকই মানুষ যেন মানুষের আবরণে শুধুই খোলস পাল্টে দন্ডায়মান, চেনা খুবই কঠিন, সেই কঠিনের আধোছায়ায় মোক্ষম যে পৃথিবী, তারই রূপ বর্ণিত হয়েছে গল্পবীক্ষায়।
ভালো লাগে নিভৃতে কবিতা-গল্প লিখতে নিজের মতো করে, সাহিত্যিক অগ্রজ বন্ধুদের পরামর্শে, লিটল ম্যাগাজিন বা দৈনিক সাহিত্য সম্পাদক বন্ধুদের কল্যাণে প্রবন্ধ লেখা, সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধের প্রতি বরারবই ঝোঁক, সে’ কারণে প্রবন্ধ লেখা। যা লিখি, পড়তে ভালো লাগে সময়ে-অসময়ে, নেশা বলতে পড়া, ইতিহাস-সাহিত্য-নৃতত্বদর্শন নানাবিষয়। পেশা, বেসরকারী চাকুরী, জীবনধারণের জন্য যা আবশ্যক, তার বাইরে অবলম্বন সাহিত্যই । ###
কথাসাহিত্যের বারান্দায়
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে লেখকের নাম হাসান মাহবুব। তিনি নাড়–গোপাল দত্ত অথবা ইসমাইল আহমেদ নন। তিনি রবীন্দ্রনাথ বা আগাথা ক্রিস্টি নন। তিনি দূর আকাশের নীল নক্ষত্র, ধোঁয়া ওঠা কফির মগ, বাজারে মেয়েটির অপরিচ্ছন্ন অন্তর্বাস, ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল বাঁশি অথবা লোম কাটার মওসুমের ভেড়ার দীর্ঘশ্বাসও নন। তিনি লেখেন। তবে ‘তিনি’ই লেখেন কি-না এই নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ লেখার মতো পরিশ্রমের কাজে বছরের পর বছর এত শ্রম দিয়েছেন, দুটো বইও বের করেছেন (প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এবং আনন্দভ্রম) তার সাথে এসব ঠিক যায় না। এত সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি হাসান মাহবুব হবার চেষ্টা করছেন এবং তারই ফলশ্রুতিতে আরো একটি বই প্রকাশ করে ফেললেন। তিনি সকলের দোয়া প্রার্থী!
নরকের রাজপুত্র
লেখক পরিচিতি :
সরদার ফারুক। জন্ম: ৯ই নভেম্বর, ১৯৬২। কপোতাক্ষ নদের তীর খালিশপুরে, পৈত্রিক নিবাস বরিশালের খালিশপুর। পেশায় বিশষজ্ঞ চিকিৎসক। ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বরিশালে ঘাট শ্রমিকদের আন্দোলন, ডেমরায় শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সংগ্রাম ও বাজিতপুরের জেলেদের লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি’ সহ মোট ৭টি।
অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি
মানুষের কখন যে কী হয়―তা হিসাব করে কেউ কখনো বলতে পারে না! হঠাৎ করেই মানুষ অন্যরকম হয়ে ওঠে। এই যে শফিকের সঙ্গে একই অফিসে কতদিন একসঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা কাজ করেছে নমিতা―কোনোদিন তাকে এত মনোযোগ দিয়ে দেখেনি শফিক। কিন্তু আজ যে তার কী হলো!
নমিতা আজ খুব সুন্দরভাবে একটা শাড়ি পরে অফিসে এলো। আর আজই শফিকের খুব ভালো লেগে গেল নমিতাকে। তাই, অফিস-ছুটির পর সে তাকে রেস্টুরেন্টে চা-কফির আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু নমিতা তাকে জানালো, আজ তার হাতে একদম সময় নেই। আজ তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে বাসায়। আর তাকে, তাদের পছন্দ হলে আজই বিয়ে হয়ে যেতে পারে!
নমিতা একরকম বাধ্য হয়ে চলে যায় শফিককে পাশ কাটিয়ে। কিন্তু শফিকের খুব মনখারাপ হয়। আর বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করে না তার। মনটা তার ভীষণ উতলা হয়ে ওঠে নমিতার জন্য। সে একমুহূর্তে কেমন যেন হয়ে যায়! নমিতাকে কিছুতেই সে ভুলতে পারে না।
সে নমিতাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে। আর ভাবে―নমিতাকে ছাড়া তার চলবে না। আজ নমিতাকে খুব ভালো লেগেছে তার। ভাবতে-ভাবতে নমিতার জন্য শফিক যেন একেবারে পাগল হয়ে যায়! কিন্তু নমিতার যে আজই বিয়ে হয়ে যেতে পারে!
শফিক রাস্তায় হাঁটতে থাকে উদভ্রান্তের মতো। সে কি আজ বাসায় ফিরতে পারবে? শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল―তা জানতে হলে পড়তে হবে এই অনবদ্য একটি বালিকার গল্প।
এটি ১০০% রোম্যান্টিক প্রণয়োপাখ্যান।
একটি বালিকার জন্য
সম্পাদকীয়, নবম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা-
কবি ও কবিতার অনুপ্রাণন—
সূচনা লগ্ন থেকেই শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন, সাহিত্যের এই বিশেষ শাখা অর্থাৎ কবিতা বিভাগটির উপর বিশেষ যত্ন দিয়ে এসেছে। কেননা সাহিত্য রচনায় কবিতাই একমাত্র শাখা যেখানে কবির অন্তরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠা অনুভূতিটি উপচে বের হয় কবিতায়। যেখানে কোনো প্লট-পরিকল্পনা বা পূর্বপ্রস্তুতির চিহ্ন খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। হতে পারে কবির সেই কথাগুলো নির্গত হয়েছিল কোনো অস্থির অথবা কোনো বেদনার অথবা কোন শান্ত-সমাহিত ধ্যানের মুহূর্তে। হৃদয় মথিত কোনো নান্দনিক অথবা কোনো মানবতবাদী ভাব সৃষ্টি ও রচনার গভীর অনুপ্রেরণায়। কিন্তু স্বতস্ফুর্তভাবে নির্গত শক্তিশালী কোনো অনুভূতি যে কোনো আকারে প্রকাশিত হলেই কী সেটা কবিতা হয়ে উঠতে পারে? কবিতা—সাহিত্য রচনাশৈলীর এমনই একটি বিশেষ ধারা যেখানে শব্দ ও ছন্দ পার¯পরিকভাবে ক্রিয়াশীল থাকতে দেখা যায়। কবিতায় শব্দগুলো একসাথে জুড়ে থেকে কোনো প্রকার উচ্চারণ, ধ্বনি, চিত্র অথবা চিন্তার প্রকাশ ঘটাতে থাকে যা কি-না সরাসরি বর্ণনা করতে গেলে হতে পারে অনেক জটিল অথবা বিমূর্ত। কবিতা রচনায় প্রচ্ছন্ন থাকে ছন্দ ও মাত্রা অর্থাৎ অক্ষর অথবা শব্দাংশের সংখ্যার সম্মিলন অথবা বিন্যাস। কিন্তু, কবিতার এসব গঠন প্রক্রিয়া সবসময় সচেতনভাবে কতটুকু কবির মনে ঘটে থাকে, সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুমান করা কঠিন।
বাংলা ভাষার হাজার বছরের ইতিহাসে সাহিত্যের আরম্ভ অনেকটাই গীতিকবিতা দিয়েই। যেখানে উচ্চারণ ও ছন্দের মিলের সাথে যুক্ত ছিল সুর। বিষয়বস্তুতে গভীর ব্যক্তি অনুভূতির থেকে অগ্রাধিকার পেল সামাজিক-রাজনৈতিক কাহিনী। কেননা, তখন সমাজই ছিল সব, ব্যক্তির অস্তিত্ব একপ্রকার ছিল না বললেই চলে। তাই সেসব কাহিনীতে ছিল সমাজ ও রাজনীতি, ক্ষেত্রবিশেষে শাসকের গুনকীর্তন আবার ক্ষেত্রবিশেষে প্রথা-প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা, রোমান্টিক প্রেমের জনপ্রিয় আখ্যান, যৌনতা, অথবা বীরের শৌর্য-বীর্য, জন্ম-মৃত্যু, প্রেম অথবা বিবাহ।
চর্যাপদ দিয়েই বাংলা কবিতার গোড়াপত্তন। চর্যাপদ কতগুলো আশ্চর্য বিপরীতধর্মী কবিতার সমাহার। তাই চর্যাপদের আরেক নাম—চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়। চর্যাপদে বর্ণিত সাধন তত্ত্ব, তৎকালীন বাংলার সমাজ জীবনের চিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশের অপরূপ বর্ণনা, সকলই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে প্রমাণিত ও গৃহীত। কিন্তু, চর্যাপদের ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধীতা, অভিজাতদের ধর্মদর্শন ও ধর্মানুষ্ঠানের প্রতি বিদ্রুপ উচ্চারণ ইত্যাদী’তে লোকায়তিক বৌদ্ধ ও জৈনরা যে সেই খ্রিস্টপূর্ব থেকেই ব্রাহ্মণ্য-বিধানকে অমান্য করে এসেছে, তারই কতক প্রতিচ্ছবি মেলে চর্যাপদের কোনো কোনো পদ্যে। বাঙালি জাতিসত্ত্বার মূলে রয়েছে—হিন্দু লৌকিক, বৌদ্ধ লৌকিক, ইসলাম লৌকিক; এরকম সকল লৌকিকগণ। এই লৌকিক অনভিজাত বা প্রাকৃত বাঙালিই হচ্ছে প্রকৃত বাঙালি। আঠারো শতক পর্যন্ত রচিত সাহিত্য এই প্রাকৃত বাঙালির উপভোগ্য ছিল। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, বিভিন্ন মঙ্গলকাব্য, বাংলায় রূপান্তরিত রামায়ণ-মহাভারত-ভগবত, বৈষ্ণব পদাবলি, চৈতন্যের জীবনী, রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান, ইত্যাদী সকল সাহিত্যের ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য। সে সময়ের লোকসাধারণের কবিরা এই ‘লৌকিক করিয়া’ ‘লৌকিকের মতে’, মূলধারায় কবিতা তথা সাহিত্য রচনা করতেন।
কিন্তু তারপর পরে একটি দীর্ঘ ছেদ। বাংলা সাহিত্যে কথিত অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়ে বড়ু চণ্ডীদাস নিয়ে আসেন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। এ কাব্যে রাধা-কৃষ্ণের প্রণয়লীলাচ্ছলে জীবাত্মা-পরমাত্মা লীলা লীলায়িত হলেও মধ্যযুগের শুরুতে একাব্য অনবদ্য ভূমিকা রাখে। তবে মধ্যযুগ বিশেষভাবেই বিখ্যাত মঙ্গলকাব্যের জন্য। প্রায় পাঁচশ বছর ধরে বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন শ্রেণির মঙ্গলকাব্য রচিত হয়েছে। যদিও মঙ্গলকাব্যগুলোর রূপ প্রায় একই রকম। কতিপয় মঙ্গলকাব্যে কবিতার ভারী যাদু থাকলেও সবচেয়ে বেশি ছিল সমকালীন সামাজিক জীবনের বোধ ও পরিচয়। বাংলাদেশের মধ্যযুগের ইতিহাস জানতে হলে মঙ্গলকাব্য অবশ্যপাঠ্য। বৈষ্ণব পদাবলি আমাদের স্বপ্নে বিভোর করে। বৈষ্ণব পদাবলির পাত্র-পাত্রী কৃষ্ণ-রাধাকে কেন্দ্র করে যে কবিতাগুলো রচিত হয়েছিলো সেগুলো বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
রাজসভায় রচিত হলেও মধ্যযুগের সাহিত্য কেবল অভিজাতদের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকেনি। মধ্যযুগে সামাজিক বৈষম্য প্রকট থাকলেও, পুরোহিত-মোল্লাদের দাপট থাকলেও, অভিজাত কর্তৃক উৎপীড়ন থাকলেও, সে যুগের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বাংলার প্রাকৃতজনেরই প্রাধান্য ছিল। যারা আমাদের সাহিত্যের ইতিহাসবিদ, তাদের অনেকের মতে, মধ্যযুগের সর্বশেষ কবি হলেন ভারতচন্দ্র আর আধুনিক যুগের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন। মাঝখানে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত হলো ‘যুগসন্ধির কবি’।
মধ্যযুগের বিদায়ী দামামা বেজে ওঠে, যখন ১৭৫৭-তে আমরা স্বাধীনতা হারাই। বণিক শাসক হয়। অনেক পরিবর্তনের সাথে সাথে সাহিত্যের পরিবর্তন বা পতন ঘটে। ভারতচন্দ্রের রচনায় দেখা যায় পতনের ছাপ। বলা হয়ে থাকে ১৭৬০ থেকে ১৮৩০ এই সত্তর বছর বাংলা সাহিত্যের পতন ঘটেছিল। সে সময় কবিয়াল ও শায়েরদের উদ্ভবে এক নিম্নরুচি সম্পন্ন সাহিত্য রচিত হয়। অর্থাৎ, কবিগান। কবিগানকে গর্ব করার মতো সাহিত্য বলতে অনেকে নারাজ। কবিয়াল ও শায়েররা বিকিয়ে গেলেও কোনো কোনো কবিগান বা শায়েরি আজো বাংলার প্রাকৃতজনের মনে শেকড় গেড়ে আছে সেসবের অনবদ্য ছন্দ ও সুরের নান্দনিকতার কারণে।
বাংলা কবিতায় আধুনিকতা আনেন মাইকেল মধুসূদন। মহাকাব্য রচনা করে বাংলা কবিতার রূপ বদলে দেন। শুধু তাই নয় তিনি বাংলা পয়ারকে এক নতুন রূপে উপস্থাপন করেন। ব্যবহার ক্লান্ত ছন্দরীতিকে মধুসূদন করে তোলেন প্রবাহমান (অমিত্রাক্ষর)। এর আগে অবশ্য ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কবিতায় আধুনিকতার হাল্কা আলোকচ্ছটা দেখা যায়। তবে মধুসূদন একাই এক ধাক্কায় বাংলা সাহিত্যকে অনেক এগিয়ে দিয়ে গেছেন। মধুসূদনের দেখাদেখি অনেকে (হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, কায়কোবাদ) মহাকাব্য রচনার চেষ্টা করেন। কিন্তু, শেষপর্যন্ত ওগুলো মহাকাব্য না হয়ে আখ্যানকাব্য হয়ে ওঠে।
বাংলা কবিতায় মহাকাব্যের ধুমধাম চলাকালে রোমান্টিকতা নিয়ে উঁকি দেন বিহারীলাল। বাংলা কবিতার তিনি-ই প্রথম রোমান্টিক ও খাঁটি আধুনিক কবি। রবীন্দ্রনাথ যাকে ‘ভোরের পাখি’ বলেছেন। আত্মভাবপ্রধান কবিতার জন্ম বিহারীলালের হাতে হলেও বিকাশ ঘটে রবীন্দ্রনাথের হাতে। অগ্নিকুণ্ডে পতঙ্গ পতনের মত বিহারীলাল চলে গেলেও তার কবিতার পথ ধরে আসে—সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ সেন, গোবিন্দচন্দ্র দাস, অক্ষয়কুমার বড়াল, ডিএল রায় ও রবীন্দ্রনাথ। প্রথম মহাযুদ্ধের মাধ্যমে বদলে যাওয়া ইউরোপীয় চেতনার প্রভাব পড়ে আমাদের জীবন ও সাহিত্যে। দু’দণ্ড দেরিতে হলেও সেই প্রভাব আমাদের কবিতায় এসে ভালভাবেই পড়ে। আধুনিক কবিতাগুলো বিশশতকের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হয়ে ওঠে।
বিশশতকের গোড়ার দিকে বাংলা কবিতায় রবীন্দ্র-যুগ চলাকালে রবীন্দ্রাগুনে পুড়েছেন অনেকেই। তবে রবীন্দ্র-বলয় থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টাও করেছেন অনেকে। তাদের মধ্যে মোহিতলাল, যতীন্দ্রনাথ বিশেষ করে কাজী নজরুল ইসলাম। যিনি একইসাথে প্রেম ও দ্রোহের কবি। তার কবিতায় যেমন বিদ্রোহ আছে তেমনি আছে কৈশোরিক প্রেমের কাতরতা। বিশ শতকের তৃতীয় দশকের মাঝামাঝি সময়ে আধুনিক কবিতার রমরমা হাট বসে বাংলা সাহিত্যে। বাংলা কবিতায় বাঙালির প্রথাগত বিশ্বাস, সুন্দর, কল্যাণ, আবেগ, স্বপ্ন, সুখ-দুঃখ ও কাতরতা বিসর্জন দিয়ে আধুনিক কবিগণ নগরের কথা ও ক্লান্তি, অবিশ্বাস, নিরাশার কথা ফুটিয়ে তোলেন কবিতায়। কবিতায় পাল্টে যায় বাঙালির চেতনা। বুদ্ধদেব, জীবনানন্দ, সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু ও অমিয়, এই পাঁচজন কবিকে রবীন্দ্রনাথের পর আধুনিক কবিতা সৃষ্টিকারী বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু তারপর অচিরেই এই পঞ্চকবিকে অনুসরণ করে আসলেন সমর ও সুকান্ত।
সাহিত্যে রক্ষণশীলতা ও প্রগতিশীলতা মুখোমুখী দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় প্রায়শই। বিশ শতকের গোড়াতেই আধুনিক সাহিত্যকে অশালীন বলে গালিগালাজ করে প্রবন্ধ ও বই ছাপেন ঊনিশ শতকের বিভিন্ন রক্ষণশীলেরা। আসলে সাহিত্য কখনো অশালীন বা অশ্লীল হয় না। বিশেষ করে কবিতা। কবিতায় সব বলা যায় সব রকম ভাবে। এছাড়া অশ্লীল কথাটি আপেক্ষিক। শ্লীল-অশ্লীল নিয়ে বাগ-বিতণ্ডা না করে বরং সাহিত্যকে নিরপেক্ষ মন ও মননেই দেখা উচিত। ইতিহাস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যখনই রাষ্ট্রযন্ত্র বা শাসকশ্রেণি সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ওপর শাসন-শোষণ, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তখনই যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখচ্ছবি, অর্থাৎ কবি-সাহিত্যিকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন কবিতা অথবা নানা ধরনের গদ্য রচনার মাধ্যমে। যে সাহিত্যগুলো নানাভাবে বিভিন্ন আন্দোলনেও প্রেরণা জুগিয়েছে। ঊনবিংশ শতককে কখনো বলা যায় বাংলা গণসংগীতের স্ফুরণকাল। সেভাবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও দেশ ভাগের পর পাকিস্তানি শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিভিন্ন আন্দোলনের হাত ধরে রচিত হয়েছে বহু প্রতিবাদী সাহিত্য, কবিতা ও গণসংগীত। পাকিস্তানিরা প্রথম যখন আমাদের ভাষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানলো, শুরু হলো আন্দোলন। মাহবুব উল আলম চৌধুরী লিখলেন একুশের প্রথম এবং অমর এক কবিতা—‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসীর দাবী নিয়ে এসেছি’। তবে একুশের প্রথম কবিতাটি ইতিহাস থেকে প্রায় হারিয়েই গেছে। অর্থাৎ, হানাদারদের বহু হয়রানি ও তল্লাশির দাপটে কবিতাটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারিসহ কবির বাসা কয়েকবার সার্চ করে লুকানো দু’একটি কপি পর্যন্ত নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে কবিতাটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে শহীদ আসাদের শার্ট নিয়ে লিখলেন শামসুর রাহমান, যা আন্দোলনকে বেগবান ও সফল করে তুললো। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রচিত হয়েছে বহু প্রতিবাদী ও প্রেরণাদীপ্ত কবিতা, সাহিত্য এবং গণসংগীত। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্মলেন্দু গুণ সামরিক শাসনের কড়া পাহারার মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে (১৯৭৭) বীরদর্পে পড়ে শোনালেন তার অগ্নিঝরা কবিতা—
“সমবেত সকলের মত আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেই সব গোলাপের একটি গোলাপ
গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায়
শেখ মুজিবের কথা বলি।”
নির্মলেন্দু গুণ-ই প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কবিতার বিষয় করে তুললেন। তারপর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখলেন জসীমউদ্দীন, সুফিয়া কামালসহ আরো অনেকে। অর্জুনের মত বীর সময় দোষে নপুংসক সাঁজলেও কবি কখনো তেমনটি হয় না বা হওয়া উচিত না। কবি হবে মজলুম, প্রয়োজনে নির্বাসিত। বলবে মানুষের (সংখ্যাগরিষ্ঠ) কথা, মানবতার কথা। রুদ্র পেলেন বাতাসে লাশের গন্ধ আর তসলিমা সব বয়স্কা বালিকাদের গোল্লা হতে ছুটে বেরুনোর আহ্বান জানালেন কবিতায়। তারপর ’৯০-এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত হয় কিছু প্রতিবাদী কবিতা ও গণসংগীত।
ইতিহাসের একটি বিশ্লেষণে প্রতিভাত হয় যে, ’৯০-এর দশকের পর থেকে কবিতার পাঠক সংখ্যায় যেন ভাটা পড়েছে। ইদানীং কবি দেখলেই বলাবলি শুরু হয়—কবিতার এখন আর দিন নেই, কবিতা এখন পাঠক খায় না, কবিতার বই বাজারে কাটে না ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এখানেই ব্যাখ্যার অবকাশ রয়েছে যে তথাপি কবির সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে বৈ কমছে না। বিশেষতঃ কবিতা প্রকাশ করতে এখন আর প্রকাশকের পেছনে লাইন দিতে হয় না। চাইলেই ফেসবুক ওয়ালে কবিতা ছুড়ে দেয়া যায়। হাইকোর্টের সামনে থেকে মূর্তি সরানো ও অন্যত্র স্থাপন নিয়ে এখনি সহস্র কবিতা ছুড়ে দেয়া যায়। এখন মিনিটে মিনিটে রচিত হচ্ছে কবিদের ভ্রুণের চেয়েও বেশি সংখ্যক কবিতা। প্রযুক্তির কল্যাণে কবি ও কবিতার পাঠক এখন একবারে মুখোমুখী দণ্ডায়মান। এটা ভাল। কিছুদিন পূর্বেও যেটা সম্ভব ছিল না খুব বেশি। শাসন-শোষণ, অত্যাচার-নির্যাতন বা আগ্রাসন কি এখন হচ্ছে না? তবে আমরা সে রকম কোনো কবিতা পাচ্ছি না—কিন্তু কেন?
আজকাল কবিতার বিষয় কী কী, সেটা কিন্তু আমরা হাতের মুঠোয়-ই দেখতে পাচ্ছি। আমরা আজ যা হাতের মুঠোয় দেখতে পাচ্ছি তা যদি নজরুল আগেই বলে যেতে পারেন তার কবিতায়, তাহলে কী আমাদের এখনকার কবিগণ আগামী বিশ্ব সম্পর্কে ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাদের কবিতায়, অথবা এর চেয়েও পরবর্তী কিছু। আজকাল কবিতায় নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, বিদ্যমান প্রাকৃতিক পরিবেশের চিত্র কবিতায় কতোটা স্থান পাচ্ছে নিশ্চয়ই চর্যাপদে বর্ণিত বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর এখনকার সৌন্দর্য এক হবে না। মঙ্গলকাব্য পড়ে যদি বাংলাদেশের মধ্যযুগের সামাজিক অবস্থা (ইতিহাস) জানা যায়, তবে আমাদের আজকের কবিদের কবিতা বা সাহিত্যে সমকালীন পঁচনশীল পুঁজিবাদের ভোগসর্বস্ব কায়েমী স্বার্থবাদী ও পাশাপাশি আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি মানসিকতার যে সমকালীন সমাজ বাস্তবতা, সেই সমাজ বাস্তবতার ঠাঁই পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
বাঙালির জমিতে কলের লাঙল পড়েছে, ছনের চাল হয়েছে টিনের এবং সেই চালে বসেছে কাক, শাদা কাক। মোড় নিচ্ছে আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা। নেওয়াটাই হয়তো স্বাভাবিক। সময়কে তো আর অস্বীকার করা যায় না। কালে কালে মহাকাল অবধি কবিগণই মানুষের সমস্ত অনুভূতি কে বাঁচিয়ে রাখে। কবিদের গর্ভেই বাঁচে মানুষ। আমাদের এই কবিসকল কি পারবেন মানুষের মানবিক অনুভূতিগুলোকে কবিতায় বন্দি করে মহাকাল অবধি দীর্ঘজীবন দিতে নাকি ফেসবুক বা প্রযুক্তি নামক কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন কাক ও কাল যত কিছুকেই আমরা আপন করে নিই না কেন? তাতে কোনো দোষ নেই, তবে লৌকিক বাংলার গভীর মানবিক চেতনার স্বকীয়তা কতটুকু বজায় থাকছে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। যে বাংলা সাহিত্যের দেবী চিরকাল কাব্যজীবি, কবিতার স্বাদ ছাড়া সে বাঁচবে কী করে। আমরা কি কবিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি?
নবম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা
সমুদ্র ও অচল কয়েনগুলি
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.