Description
দর্শনা চেকপোস্টে চেকিং শেষে লোকগুলো রেললাইন ধরে হেঁটে চলে যেত। পেছন ফিরে কাঁদতো কেউ কেউ। শৈশবে এর উত্তর জানতাম না। পরে জেনেছি নাড়িছেঁড়া কান্নার স্বরূপ কেমন! জন্মেরও আগে সেই ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর দলে দলে হিন্দু জনগোষ্ঠী ভূমিচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়েছে। একইভাবে মুসলিমরাও দেশ ছেড়ে এসেছে। এই আসা-যাওয়ার অভিযাত্রা কতটা হৃদয়বিদারক, বুকের ভেতর কতটা রক্তক্ষরণ হয় তার পরিমাপ কেউ করে না।
বাড়ি ছেড়ে, গ্রাম ছেড়ে, শহর ছেড়ে যাওয়ার ক্ষতে হয়তো প্রলেপ দেওয়া যায়, কিন্তু দেশ ছেড়ে যাওয়ার ক্ষতে কে প্রলেপ দেবে? কী দিয়ে ঢাকবে সেই ক্ষত?
জন্মভিটের ঘরখানা ঝড়ে ভাঙলে খুঁটি থাকে। আগুনে পুড়লেও ছাই থেকে যায়, কিন্তু নদী ভেঙে নিলে? কিছুই থাকে না! জনমের মত শূন্য, হাহাকার!
ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের গৌরব মুহূর্তে ¤øান হয়ে যায় দ্বি-জাতি তত্তে¡র নোংরা রাজনীতির বলি হিসাবে ধর্মের ভিত্তিতে ‘দেশভাগ’ হওয়ায়! ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পর থেকে লাখো-কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। মনে করা হতো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের গোলামী থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে আর কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাস্তুচ্যুত হতে হবে না। অথচ তা-ই হয়েছে।
আজও, এই একবিংশ শতকে এসেও সেই দেশহীন হওয়ার বিরাম নেই! প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চল থেকে চোখের জলে দেশকে বিদায় জানাচ্ছে ভূমিপুত্ররা।
দেশভাগ নিয়ে উপমহাদেশের বিখ্যাত লেখকরা অজ¯্র গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লিখেছেন। দেশভাগ বিষয়ের বড় বৈশিষ্ট্যএতে বানানো গল্প নেই। সবটাই নির্মম বাস্তবতা। কেউ দেখেছে, কেউ শুনেছে। সবটাই কলজে মোচড়ানো ব্যথা! ভিনদেশে শরণার্থী যে দেশহীন মানুষটা বিলাপ করে‘আমার মা-ও নেই মাদারল্যান্ডও নেই!’ এই গ্রন্থে সেইসব মানুষদের কথা বলার চেষ্টা হয়েছে।
There are no reviews yet.