Description
আহসান হাবিব,
কথাসাহিত্যিক।
জন্ম ১৫ ই মে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা পাঁচ: একাশ্রয়, অনিমেষ, লালকাঁকড়া, হোমো স্যাপিয়েন্স এবং স্বমৈথুন।
একটি বিজ্ঞান বিষয়ক বই: সংগীত কণ্ঠ
$ 3.53 $ 4.71
আত্মক্ষয়ের এক সমীক্ষণ এই ম্যানিকুইন। বিজ্ঞানমনষ্ক, শিল্পচর্চায় নিবেদিত এই উপন্যাসের কথক নিজ শিল্পসামগ্রী নিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে অনাগ্রহী। এটা তার হীনমন্যতার স্মারক। কিন্তু চর্চা তার অবিরত।
যে নারীকে সে ভালোবাসতো, তার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে পাঁচ বছর কিন্তু তাকে ভুলতে পারে না। তার পছন্দের একটি নীল শাড়ি সে কিনে ফেলে এই আশায় যে যদি কোনদিন ফিরে আাসে।
আসেনি।
তার অন্য কোন নারীর সঙ্গে সম্পর্কও হয়নি। সে কল্পনায় বিজ্ঞানী এরভিন শ্রয়েডিঙ্গারের সংগে কথা বলে, হাজির করে নচিকেতা, পুলক এবং মানবেন্দ্রকে তার একাকী নিবাস চিলেকোঠায় এক চন্দ্রালোকিত রাতে যখন সে দেখে সেখানে ফুটেছে চন্দ্রমল্লিকা।
গান এবং লেখা তার সাধনার বিষয়। এদিকে তার স্বরযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। পরীক্ষা করে দেখা যায় সেখানে কর্কটরোগ দানা বেঁধেছে। তার জগত বদলে যায়। আলমারি থেকে নীল শাড়িটি বের করে সে বাজার থেকে কিনে আনা ম্যানিকুইনে পড়াতে থাকে। সে ভাবে ম্যানিকুইনের অপ্রাণ নারীটিই তার ফিরে আসা ভালোবাসার নারী…
আহসান হাবিব,
কথাসাহিত্যিক।
জন্ম ১৫ ই মে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা পাঁচ: একাশ্রয়, অনিমেষ, লালকাঁকড়া, হোমো স্যাপিয়েন্স এবং স্বমৈথুন।
একটি বিজ্ঞান বিষয়ক বই: সংগীত কণ্ঠ
Weight | 0.322 kg |
---|---|
Published Year |
জন্ম ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার সুরাশ্রম গ্রামে। পিতামহের প্রতিষ্ঠিত নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শুরু। তারপর নান্দাইল রোড হাই স্কুল, আঠাবাড়ি ডিগ্রি কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণ ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। এরপর চাকরিজীবনে বি.এড ও এম.এড ডিগ্রি লাভ করেন।
লেখালেখির শুরুটা খুব পরিকল্পিত না হলেও চাকরিজীবনের বেঁচে যাওয়া সময়ে কঠিন অধ্যবসায় ও অবিরাম লেখালেখির অভ্যাসটি জোরালেভাবেই তৈরি হয়েছে। বহুমাত্রিক এই লেখকের সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখাসহ একাডেমিক গ্রন্থ নিয়ে মোট ৯৫ গ্রন্থ ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
ঘূর্ণিবায়ূ ও ধূসর কাবিন
মফস্বলের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে বীথিকা রায় তথা বীথির জন্ম। যে শৈশবেই একাধিক উন্নত রাষ্ট্র ভ্রমণ এবং ধ্র”পদী গ্রন্থাদি পাঠ করে বাঙালি হিসেবে নিজের অবস্থান বুঝতে পারে। একইসঙ্গে স্বনামধন্য বাঙালিদের গৌরবময় কর্মকাণ্ডের ইতিহাসও পাঠ করে—কিন্তু তাঁদের প্রতি বর্তমান বাঙালি জাতির বিস্মরণ আর চারিত্রিক অধঃপতন দেখে বিচলিতবোধ করে। উন্নত বিশ্বে বাঙালির বৈষম্যের শিকার হওয়াও তাকে আঘাত করে। ফলে তার ভেতরে দেশোদ্ধারের জাতীয়তাবাদী চেতনার স্ফুরণ ঘটতে থাকে।
বীথিকা জাতিগঠনের পেছনে যে সংস্কারমুক্ত আধুনিক শিক্ষাই প্রধান নিয়ামক সেটা ভালো করেই বুঝতে পারে। আরও অনুধাবন করে, বহির্বিশ্বের জ্ঞানে ঋদ্ধ, অভিজ্ঞ, দেশাত্ববোধসম্পন্ন মেধাবী শিক্ষকরাই কেবল জাতি গঠনে প্রধান ভূমিকা রাখে—রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সেনাপ্রধান নয়।
ভবিষ্যতের সেই রকম একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতিকৃতি ও সম্ভাবনা বীথি দেখতে পেয়েছিল কিশোর শংকরের মধ্যে। কিন্তু সামাজিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে ছেলেটি ছিল খুবই বিভ্রান্ত এবং দুর্বল তথাপি, একরোখা—ঋজু বীথি হাল না ছেড়ে শংকরকে তার স্বপ্নের আরাধ্য আদর্শ শিক্ষকে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়। এর জন্য তাকে বিনিয়োগ করতে হয় যৌবনের মূল্যবান দীর্ঘ সতেরটি বসন্ত। কিন্তু হারানোর বেদনায় বীথি ব্যথিত নয়, বরং সে সফল, তৃপ্ত এই কারণে যে, দেশ ও জাতি একজন মহান শিক্ষককে পেয়েছে, যে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও স্বদেশপ্রত্যাগত। তারই ইতিবৃত্ত এই উপন্যাস।
প্রবীর বিকাশ সরকার
অপরাহ্ণে বৃষ্টি
শহীদ ইকবাল। প্রাবন্ধিক ও উপন্যাসিক। জন্ম ১৩ আগস্ট, ১৯৭০ রংপুর জেলার পীরগঞ্জে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর এবং এখানেই শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। প্রকাশিত অসংখ্য গ্রন্থ রয়েছেÑ কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মুখশ্রীর পটে, কবিতা: মনন ও মনীষা প্রভৃতি। লিটলম্যাগ ‘চিহ্ন’ এর সম্পাদক।
হয়নাকো দেখা
কলকাতার স্মৃতিকথা
লেখকের কথা:
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী “রু” আমার প্রথম প্রকাশিত বই হলেও আমার লেখা প্রথম উপন্যাস ছিল এই “প্রজেক্ট পাই”, যেটা আমি লিখেছিলাম দুই হাজার পনেরো সালে, অর্থাৎ আজ থেকেও আরো প্রায় চার বছর আগে। কিন্তু নানা কারণে এই উপন্যাসটা আর প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি। তবে কোথাও প্রকাশ না করলেও উপন্যাসটার কথা আমার মাথায় সবসময়ই ছিল। এ-কারণে প্রায়ই “প্রজেক্ট পাই”-এর ফাইলটা বের করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখ বুলাতাম। এ-রকম করতে করতেই একদিন হঠাৎ মাথায় চলে এলো “রু”-এর প্লট। লেখা শুরুও করে দিলাম আমার দ্বিতীয় উপন্যাস “রু”। মাঝখানে অনিবার্য কারণবশত নেয়া একটা লম্বা বিরতিসহ প্রায় দুই বছরের মতো সময় লাগলো “রু” লিখে শেষ করতে। লেখা শেষ হবার বেশ কয়েক মাস পর আমার লেখা দ্বিতীয় উপন্যাসটি অনুপ্রাণন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হলো আমার প্রথম বই হিসেবে। বইটি অনুপ্রাণনের সে বছরের বেস্টসেলারও হলো। “রু”-এর পর এবার আমার মাথায় এলো আমার প্রথম সন্তান, অর্থাৎ আমার লেখা প্রথম উপন্যাস “প্রজেক্ট পাই”-এর কথা, যে কিনা গত চার বছর ধরে ঘরবন্দী হয়ে আছে। ভাবলাম, এবারে যে তাকেও মুক্তি দিতে হয়!
অবশেষে “প্রজেক্ট পাই”ও মুক্তি পেলো। প্রজেক্ট পাই সম্পর্কে আমি আমার পাঠকদের আগে থেকে তেমন কিছুই বলব না। শুধু এটুকুই বলব, “রু” যেমন আমার এবং আমাদের গল্প ছিল, “প্রজেক্ট পাই”ও ঠিক তেমনি আমার এবং আমাদের গল্প। এখান থেকে আমাকে এবং আমাদেরকে খুঁজে নেয়া এবং আমাদের মাঝখানে নিজেদেরকেও খুঁজে নেয়ার দায়িত্ব আমি আমার পাঠকদের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছি।
Ñতানভীর আহমেদ সৃজন
আগস্ট ২০১৯
প্রজেক্ট পাই
শৌখিন ফটোগ্রাফার শুভ্র। তার পৃথিবী মমতাহীন শূন্যতায় ভরা। একে একে কাছের মানুষদের প্রস্থান তার জীবনকে ক্যামেরার ক্লিকের সাথে বন্দি করে ফেলে। এক সময় তার নিঃসঙ্গ জীবনে আসে দুঃখ ভাগ করে নেওয়ায় আগ্রহী মানুষেরা। হয়তো তারা একই মানুষ। ভিন্ন তাদের নাম। তারা সেতু-ঋতু-রূপা অথবা স্বাতী। যারা শুভ্রর মনস্তাত্ত্বিক ভাবনা-যৌন বিশ্বাস-উড়ন্ত নেশা ও বিপন্ন ক্ষতের সাথে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় জড়িয়ে যায়। অথবা তারা কেউ না। শুধু শুভ্র। শুধু নিঃসঙ্গ একজন মানুষ। নিজস্বতায় নিমগ্ন। যে ক্রমশ ঢুকে যায় অচেনা এক জগতে! নিষিদ্ধ ভাষা ও চিঠির ভাঁজে…
গুহা
মানুষের জীবন তো গল্পময়। গল্প ছাড়া জীবন হয় না। কেউ সে গল্প অপরকে শুনিয়ে তৃপ্তি পায়। কেউ নিজের মধ্যে গল্প পুষে রেখে জীবনকে ভোগ করে। কোনো একজনকে গল্প শুনাতে ইচ্ছে ছিল। সে গল্পের মধ্যে ডুব দেওয়া আর হয়নি। সে গল্পটা সামনাসামনি শুনাতেও পারিনি ।
তবে শুরুটা করেছিলাম গল্প শোনানোর জন্য, সেই শুরুটা নেশাতে পরিণত হয়ে গেছে। সেই কোনো একজন তো চোখের আড়ালে থাকে, মনের আড়াল হয়নি। তাই গল্প শুনাই আড়ালে-আবডালে- অন্তরালে।
গল্পের কথা বলার কারণ, আমি আসলে গল্পই লিখি। লিখতে লিখতে গল্পটি উপন্যাসে রূপ নেবে কিনা, সেটাও আমার জানা নেই। উপন্যাস তো বৃহৎ পরিসরের বিষয়। তাই এক্ষেত্রে আমি শিশুই। একটি কথা জোর দিয়েই বলতে পারি, অভিজ্ঞতার বাইরে আমি লিখতে পারি না। যেভাবেই হোক অভিজ্ঞতাটা তার জায়গা দখল করে নেয়। অর্থাৎ বলতে চাচ্ছি, বাস্তবতার বাইরে আমার লেখাতে কাল্পনিক বলে কিছু নেই। যদি আগেই বুঝতাম গল্প দিয়ে জীবন চলে তাহলে হয়তো লিখতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা, আষাঢ়ে বৃষ্টি পড়ার মত।
আমার গল্প প্রকাশ হবে, ছড়িয়ে যাবে, এমন ভাবনা মাথায় ছিল না। শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক ‘অনুপ্রাণন’ গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমার চেতনাকে জাগ্রত করে দিয়েছে। গল্প লিখতে লিখতে তিনটি উপন্যাসও লিখে ফেলেছি।
“স্বপ্ন জলে জ্যোৎস্না” তৃতীয় উপন্যাস। পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে বিমুখ হইনি। বরং বুকভরা আনন্দ পেয়েছি। কৃতজ্ঞতা জানাই অনুপ্রাণন প্রকাশকের স্বত্বাধিকারী শ্রদ্ধেয় আবু এম ইউসুফ ভাইকে।
মফস্বলে থেকে লেখক হয়ে, বই প্রকাশ করা বড়ই কঠিন কাজ। অথচ সেই কঠিন কাজটা অনেক অনেক সহজ করে দিয়েছে অনুপ্রাণন প্রকাশন। আবারও অসংখ্য ধন্যবাদসহ ও কৃতজ্ঞতা জানাই অনুপ্রাণন প্রকাশনের সাথে জড়িতে সকলকে।
স্বপ্ন জলে জ্যোৎস্না
একটি মেয়ে, জন্ম থেকে বোধ করি আলাদা ব্যতিক্রমী ভাবনায় গড়ে উঠেছে। দেশভাগের পর, নানান টানা-পোড়েনে বেড়ে ওঠা তাদের পরিবার। এক একটা ঘটনা হয়তো তুচ্ছ, অতি তুচ্ছ। সেই সময় তার কাছে বিশাল বিস্ময় হয়ে উঠেছিল। এক একটা আঘাত প্রতিনিয়ত তাকে সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছে। জীবনের মধ্যপ্রান্তে ক্লান্ত ‘বিকেলের আলোয়’ সে সবকিছুই দেখতে পায়। সেই সব হারানো না ফিরে পাওয়া দিনগুলো। সেই সব দিনগুলো আজো খুঁজে বেড়ায়। আজো বেলিফুলের তীব্র ঘ্রাণ নাকে আসে বাতাসের সাথে। শেষ প্রহরের সিনেমা ভাঙা গান আজো বাজে। ট্রেনের হুইসেলের শব্দে আজো যেনো ঘুম ভেঙ্গে যায়।
ভালো লাগবে আশা করি প্রিয় পাঠকের।
বিকেলের আলোয়
বুদ্ধদেব বলেছেন- জীবন দুঃখময়। কথাটা সর্বাংশে সত্য কিনা সংশয় রয়েছে মনে। তবে এটা সত্যি যে, বারে বারে দুঃখ আসে জীবনে। আসে বলতে মানুষ জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতে তার কামনা-বাসনার দ্বারা দুঃখকে ডেকে আনে। যদিও দুঃখকে কেউ চায় না। কিন্তু না চাইতেই মহাসমারোহে হানা দেয় জীবনে। কারণ, আলো-আঁধারের মত সুখ-দুঃখও হাত ধরাধরি করে চলে। তাই কোনমতেই দুঃখকে বাদ দিয়ে শুধু সুখ লাভ সম্ভব হয় না। কিন্তু মানুষ চায় সুখের বন্দরে নোঙ্গর গেড়ে জীবনটা কাটাতে। সেখানে পৌঁছতে গেলে দুঃখের পথ অতিক্রম করেই যেতে হয়। জীবনে দুঃখকে জয় করার মধ্যেই আছে পৌরুষ, আছে বীর্যবত্তা। তাই তাকে শক্তিধারণ করতে হয় দুঃখ জয় করার। “দুঃখ জয়ের গান” পাঠকের অন্তরে সেই প্রেরণা জোগাবে যাতে সে কর্ম-সাধনার মধ্য দিয়ে জীবনটাকে সঙ্গীতমুখর করে তুলতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
পরিশেষে, বইটির পান্ডুলিপি পাঠ করে মূল্যবান মতামত দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের প্রভাষক নির্জন মজুমদার, কবি দেবী চিত্রলেখা মন্ডল, সাহিত্যিক অমল হালদার, কবি ড. অশোক মিস্ত্রী। তাদের সকলকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। সুস্মিতা ও শ্রেষ্ঠা আমার দুই মেয়ে নিরন্তর স্বপ্ন দেখে চলে কবে বাবার লেখা নতুন বই প্রকাশিত হবে। ওদের প্রেরণা আমার সব সময়ের পাথেয়। প্রথম উপন্যাস প্রকাশ-লগ্নে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। মুদ্রণজনিত ভুল-ত্রুটি পরিহারের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তারপরও অজ্ঞাতসারে কিছু প্রমাদ থেকেই যেতে পারে। সেজন্যে পাঠকের কাছে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।
সন্তোষ কুমার শীল
শ্রীরামকাঠী, পিরোজপুর।
দুঃখ জয়ের গান
দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী রমণীদের বসবাস এখানে। ওই সুন্দরীদের রূপের সাথে পাল্লা দেয় যৌবন আর যৌবনের সাথে পাল্লা দেয় রূপ কিন্তু সেটা এক রক্ত নহর বহা একনগরী… স্ত্রীর জন্য ৭ পুরের (গ্রামের) জল ও মাটি সংগ্রহ করে পুব্যা এক যুবক। তবে শর্ত ছিল পথিমধ্যে কারো সাথে কথা-টথা বলতে পারবে না সে। যুবকটি কেন বলছে, হায় নারী! হায় স্ত্রী আমার! তুমি আমার অর্ধেক নও, তুমি আমার পুরো পৃথিবী… এরকম অসংখ্য মজাদার কথামালায় রচিত এই দুই প্রহরের প্রেম ও বিপরীত যাত্রা উপন্যাসটি। শরীফ শামিলের লেখনী শক্তি ও কল্পনা শক্তি প্রশংসার দাবি রাখে। তাঁর প্রথম উপন্যাস দীর্ঘ রাত্রির বিরুদ্ধে জেগে থাকা এর ব্যাপারে লিখেছিলাম, ওটি বাংলা উপন্যাসে এক নতুন সংযোজন। আর এ ‘দুই প্রহরের প্রেম ও বিপরীত যাত্রা’ উপন্যাসটি বাংলা উপন্যাসে আরেক (সম্পূর্ণ) নতুন সংযোজন।
আবু এম ইউসুফ
প্রকাশক
দুই প্রহরের প্রেম ও বিপরীত যাত্রা
হুমায়ুন কবির।
জন্ম ১৯৫৯ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার দেউটি গ্রামে। বাবা জালাল আহমেদ ও মা জফুরা বেগম। লেখালেখির শুরু ছাত্রাবস্থায়। মাঝে দীর্ঘ বিরতি। আবারও ফিরে এসেছেন লেখালেখিতে। কবিতা, উপন্যাস, গল্পগ্রন্হসহ তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আটটি। ইতোপূর্বে প্রকাশিত তার উপন্যাস ‘ কানফুল, আনছার আলীর গৃহত্যাগ এবং কবিতা অন্তহীন দীর্ঘশ্বাস পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য জিগীষা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ তাকে জিগীষা সাহিত্য সম্মাননা -২০১৯ প্রদান করেছে।
সাবেক সরকারি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বর্তমানে দৈনিক বাংলার সাহিত্য সম্পাদক। তিনি সালমা ফৌজিয়া সুমি, ডা. শারমিন ফৌজিয়া ও সাইফুল কবির সোয়েবের বাবা। স্ত্রী নাজমুন নাহার লক্ষ্মী গৃহিণী।
প্রকাশিত বই সমুহঃ-
কবিতা-
আমি তাকে ফিরছি খুঁজে
অন্তহীন দীর্ঘশ্বাস
উপন্যাস-
দায়
কানফুল
মেঘনাপারের শেফালী
আনছার আলীর গৃহত্যাগ
গল্পগ্রন্থ-
শাহজাদী উপাখ্যান
আমিও ডিকশনারি দেখেছি কিন্তু পাইনি।
জ্বিনকন্যা নার্গিসের প্রেম
মাহবুব মিত্র বিশ্বাস করেন মানুষই শিল্প; মানবতাই ধর্ম। মানুষবিহীন পৃথিবী শস্যহীন প্রান্তরের মতো। তিনি মনে করেন সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ শিল্প মানুষের সৌন্দর্য। তাঁর প্রিয় বিখ্যাত দু’টি উক্তিÑ “মানুষ দেখার আনন্দে তুমি কখনো ক্লান্ত হয়ো না”, “ভুল মানুষের কাছে আমি নতজানু নই।” নীতির সাথে আপোসহীন চির প্রতিবাদী সতত ডানার মানুষ এক ক্লান্তিহীন গেয়ে যান ভালোবাসার গান, সমতার গান, মানবতার গান, সুন্দরের গান।
মাহবুব মিত্র বস্তুবাদী দার্শনিক মতবাদে বিশ্বাসী। আবার ভাববাদী দর্শনও মাঝে-মধ্যে তাঁকে ভাবায়। এই দুই মতবাদের ভিতর দিয়ে পথ হাঁটছেন। তিনি বুকে ধারণ করে আছেন সৃষ্টি জগতের সকল সুন্দরের নির্যাস। সাহিত্য ও শিল্পের বাগানে শব্দ বুনে-বুনে তৈরী করছেন মানব হৃদয়ের নৈবেদ্য। এই নিবিড় সংসারে একাকি নিঃসঙ্গ পথিক এক খুঁজে পেয়েছেন জীবনের সৌন্দর্যের অবিরাম ধারাপাত। তিনি মানব হৃদয়ে খুঁজে বেড়ান সুন্দরের স্বর্গভূমি।
তিনি সর্বদা আশাবাদী একজন প্রাণবন্ত-প্রফুল্ল মানুষ। তুমুল অন্ধকারের মাঝে খুঁজে ফেরেন আলোর ফোয়ারা। মানুষ তখনই মৃত যখন তার ভিতরের আনন্দ মরে যায়। চিরন্তন সুন্দরের জন্য হাহাকার-আকাক্সক্ষা, নৈতিক মূল্যবোধের উপলব্ধি, স্বতন্ত্র বোধের-চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত তাঁর ভাবনার আকাশ। তাঁর সুকুমার কোমল প্রবৃত্তি আপন আলোয় ভাস্বর, দীপ্ত-শোভান্বিত, সদা জাগ্রত।
শাদা কফিনে মেঘের শব্দ
Dwitiyo Shrabone Prothom Kadam
ফজিলা ইসলাম ফৌজি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ১৯৭২ সালের ৮ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃনিবাস মেহেরপুর জেলার কোলা গ্রামের বাবু পাড়ায়। পিতার নাম মোঃ হাফিজ উদ্দিন মাতার নাম মোছাঃ রাকিবা বেগম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগ (অনার্স মাষ্টার্স) শেষ করে ১৯৯৯ সালে রাজশাহীর ইসলামিয়া কলেজে শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে কলেজ পরিবর্তন করে বর্তমানে তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গাংনী মহিলা ডিগ্রী কলেজে হিসাববিজ্ঞানের প্রভাষক হিসাবে নিয়োজিত আছেন।
মানচিত্রে রক্তক্ষরণ
বুদ্ধদেব বলেছেন- জীবন দুঃখময়। কথাটা সর্বাংশে সত্য কিনা সংশয় রয়েছে মনে। তবে এটা সত্যি যে, বারে বারে দুঃখ আসে জীবনে। আসে বলতে মানুষ জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতে তার কামনা-বাসনার দ্বারা দুঃখকে ডেকে আনে। যদিও দুঃখকে কেউ চায় না। কিন্তু না চাইতেই মহাসমারোহে হানা দেয় জীবনে। কারণ, আলো-আঁধারের মত সুখ-দুঃখও হাত ধরাধরি করে চলে। তাই কোনমতেই দুঃখকে বাদ দিয়ে শুধু সুখ লাভ সম্ভব হয় না। কিন্তু মানুষ চায় সুখের বন্দরে নোঙ্গর গেড়ে জীবনটা কাটাতে। সেখানে পৌঁছতে গেলে দুঃখের পথ অতিক্রম করেই যেতে হয়। জীবনে দুঃখকে জয় করার মধ্যেই আছে পৌরুষ, আছে বীর্যবত্তা। তাই তাকে শক্তিধারণ করতে হয় দুঃখ জয় করার। “দুঃখ জয়ের গান” পাঠকের অন্তরে সেই প্রেরণা জোগাবে যাতে সে কর্ম-সাধনার মধ্য দিয়ে জীবনটাকে সঙ্গীতমুখর করে তুলতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
পরিশেষে, বইটির পান্ডুলিপি পাঠ করে মূল্যবান মতামত দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের প্রভাষক নির্জন মজুমদার, কবি দেবী চিত্রলেখা মন্ডল, সাহিত্যিক অমল হালদার, কবি ড. অশোক মিস্ত্রী। তাদের সকলকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। সুস্মিতা ও শ্রেষ্ঠা আমার দুই মেয়ে নিরন্তর স্বপ্ন দেখে চলে কবে বাবার লেখা নতুন বই প্রকাশিত হবে। ওদের প্রেরণা আমার সব সময়ের পাথেয়। প্রথম উপন্যাস প্রকাশ-লগ্নে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। মুদ্রণজনিত ভুল-ত্রুটি পরিহারের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তারপরও অজ্ঞাতসারে কিছু প্রমাদ থেকেই যেতে পারে। সেজন্যে পাঠকের কাছে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।
সন্তোষ কুমার শীল
শ্রীরামকাঠী, পিরোজপুর।
দুঃখ জয়ের গান
সম্পাদকীয়, অনুপ্রাণন–নবম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা
আমরা এখন একটি বৈশ্বিক মহামারি বা অতিমারি কাল অতিক্রম করছি। নভেল করোনা ভাইরাস ২০১৯ যা সংক্ষেপে ‘এনকোভ-১৯’ নামে পরিচিত যা থেকে সংক্রমিত রোগটির নাম বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা দিয়েছে কোভিড-১৯। এনকোভ-১৯ যাকে ব্যাবহারিক সংক্ষেপনে বলা হচ্ছে কেবল করোনা ভাইরাস, অত্যন্ত ছোঁয়াচে ও প্রাণসংহারী। এই ভাইরাসের সংক্রমণ এর সুত্রপাত হয় এ’বছরে জানুয়ারি’র প্রথমভাগে, চীন এর উহান শহর থেকে। তারপর বিশ্বায়নের অলি-গলি দিয়ে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বের প্রায় ২৫০ টি দেশে।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণের খবর পাওয়া যায় ৮ মার্চ, ২০২০। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত দেশে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার এর অধিক জনের। ২৬ মার্চ, ২০২০ থেকে বাংলাদেশে প্রায় দুই মাস জরুরি বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য, ঔষধ প্রস্তুতকারি ও বিপণন প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালগুলো বাদ দিয়ে সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, দোকান-পাট, শপিং মল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল প্রকারের গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। দুই মাস বন্ধের পর স্বাস্থ্যবিধি পালন করা সাপেক্ষে ক্রমে, সরকারি, বেসরকারি অফিস, দোকানপাট, শপিং মল এবং গণপরিবহন খোলা হয়। এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং জুলাই মাস পর্যন্ত আদালতসমুহ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সীমিত পরিসরে চালু থেকেছে।
সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আজ পর্যন্ত সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় পৌনে দুই কোটি এবং মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় পৌনে সাত লক্ষ। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ খুবই সীমিত আকারে নানা বাধা নিষেধ নিয়ে চালু আছে। বিভিন্ন ঔষধ প্রস্তুতকারি এবং বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই ভাইরাসের সংক্রমণের হাত ত্থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য টিকা বা কোন প্রতিষেধক উদ্ভাবন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা বিশ্বে সংক্রমণ সীমিত করার জন্য সকলকেই প্রায় একই ধরনের এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন কতগুলো জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পূর্বে বিশ্বের ইতিহাসে বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক মহামারির ঘটনা ঘটেছে। যেসব মহামারিতে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তখনকার সৃষ্ট বিভিন্ন শিল্প, সাহিত্যে ও সঙ্গীতে ঘটে যাওয়া অতীতের অতিমারিসমূহের চিত্র ও বিবরণ পাওয়া যায়। শিল্প, সাহিত্য এবং সঙ্গীতে সর্বদাই সমাজবাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেছে। একই সময়ে সৃজনশীল শিল্প, সাহিত্য এবং সংগীত নতুন নতুন চিন্তা-চেতনা, দর্শন, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সৃজনশীল ও নান্দনিক প্রকাশ ঘটিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। শিল্প, সাহিত্য এবং সংগীত ইতিহাসেরই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং বেশির ভাগ ঐতিহাসিক ঘটনাবলি তাৎক্ষণিকভাবে রচিত শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীতে আধৃত হতে দেখা যায়। যার মাধ্যমে ঐতিহাসিক সত্য এবং তৎকালীন সমাজের চিত্র বিম্বিত হতে পারে।
বিগত ১৫০০ বছরে বহুবার ‘বিউবোনিক’ প্লেগের সংক্রমণ ঘটেছে। বিউবোনিক প্লেগ নামের রোগটি ‘ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস’ নামে এক প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়ার কারণে ঘটেছে। ষষ্ঠ, চতুর্দশ, উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং বিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে বিউবোনিক প্লেগের বৈশ্বিক মহামারি বার বার ফিরে ফিরে আসে এবং বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই প্লেগের কারণে মারা যায়। প্রতিবারই সংক্রমণ কমে আসে এবং সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এসব মহামারির সমাপ্তি ঘটেছিল। একটি অনুমান যে, বিবর্তনের ফলে ‘ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস’ জীবাণুটি দুর্বল হয়ে পড়ে। অথবা সংক্রমিত মানুষদের গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দেয়ার ফলে জীবাণুটি ছড়িয়ে পড়ে নতুন করে আর মহামারি আকার ধারণ করতে পারে নি। ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামের ব্যক্টেরিয়াটির অস্তিত্ব প্রাকৃতিকভাবে এখনও রয়েছে প্রেইরি অঞ্চলের এক প্রজাতির কুকুরের লালায়। কিন্তু ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম সংক্রমণের সময় এই ব্যক্টেরিয়াটি এক বিশেষ প্রজাতির র্যাট-ফ্লি বা ইঁদুরের মাছিতে জন্ম নিয়েছিল।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পৃথিবীর বিশ্বমহামারিমূহের সমাপ্তি সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে হয়েছে। কিন্তু, ইতিহাসে শুধু একটি ব্যতিক্রমই পাওয়া যায়। সেটা হচ্ছে ‘ভ্যারিওলা মেজর’ নামের একটি ভাইরাসের কারণে ছড়িয়ে পড়া গুটি বসন্তের বৈশ্বিক মহামারির ক্ষেত্রে। আর সেটার সমাপ্তি সম্ভব হয়েছে একটি অব্যর্থ টিকা আবিষ্কার এবং সেই টিকা বিশ্বের দেশে দেশে প্রায় সকল মানুষকে প্রয়োগ করার মাধ্যমে। প্রসঙ্গতঃ এই টিকা নিলে একজন মানুষ তার সারাজীবনের জন্য গুটিবসন্তের সংক্রমণ থেকে মুক্ত হতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পৃথিবীতে গুটিবসন্ত ভাইরাসটির সংক্রমণের ইতিহাস ছিল প্রায় ৩০০০ বছরের।
১৯১৮ সনের ইনফ্লুয়েঞ্জার বৈশ্বিক মহামারিটিই উদাহরণ হিসেবে আজকের দিনের মহামারির ধ্বংস এবং স্বাস্থ্যবিধি অর্থাৎ কোয়ারেন্টাইন অথবা সামাজিক দূরত্বের মূল্য অনুধাবন করতে সাহায্য করে। ১৯১৮ সনের ইনফ্লুয়েঞ্জায় পৃথিবীতে ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। এই ইনফ্লুয়েঞ্জাটি সারা পৃথিবীতে ব্যাপক মৃত্যুর স্বাক্ষর রাখার পর ক্রমেই বিলীন হয়ে বিবর্তিত মৌসুমী ফ্লু’র রূপ নেয়, যে ফ্লু দ্বারা বিশ্বের দেশে দেশে মানুষ প্রতিবছর আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর ঘটনা অনেক কমে এসেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির প্রায় সাথে সাথেই সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জার এই বৈশ্বিক মহামারির সমাপ্তি ঘটে। এর পর কতগুলো ফ্লু-এর মহামারি দেখা দিয়েছিল কিন্তু এখনকার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মতো সেগুলোর সংক্রমণ ও মৃত্যুর রূপ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে নি।
বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং একাবিংশ শতাব্দীতর প্রথম দিকে এবোলা এবং এইচআইভি ভাইরাস এর মহামারি ঘটতে দেখা যায়। যে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঝুঁকি এখনো রয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত এবোলা ভাইরাস এবং এইচআইভি প্রতিরোধের কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র আফ্রিকার কোনো কোনো অঞ্চলে এই ভাইরাস দুইটির সংক্রমণ সীমাবদ্ধ থাকাতে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা’ এবোলা এবং এইচআইভি মহামারির সমাপ্তি ঘোষণা করে এটাকে জরুরি স্বাস্থ্যবিষয়ক উদ্বেগের পর্যায়ে নামিয়ে আনে।
যদিও ৩ কোটি বছর পূর্বের কোনো কোনো ফসিল থেকে ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলে তবে বিশেষতঃ প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্ব থেকেই বিভিন্ন সময়ে ম্যালেরিয়া মানবসমাজের অস্তিত্বের প্রতি বড় আকারের হুমকি হিসাবে দেখা দেয়। আদি মেসোপটেমিয়া অথবা রোমান সাম্রাজ্যে এবং মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পেরিয়ে একবিংশ শতাব্দীতেও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা শোনা যায়। কিন্তু ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটবাহী কিউলেক্স মশার ব্যাপক নিধন এবং ১৮২০ শতাব্দীতে আদি সিনকোনা গাছের ছাল থেকে কুইনাইন আলাদা করা এবং এই ঔষধ অর্থাৎ কুইনাইন এবং পরবর্তীকালে কুইনাইনের উন্নত সংস্করণের ব্যাপক ব্যবহারের পর থেকে ম্যালেরায়ার প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
প্রাচীন ইতিহাসে, হিপক্রিটিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০-৩৭৭) এবং গেলেন (১২৯-২১৬ খ্রিস্টাব্দ) এর বর্ণনায় কলেরা’র মতো একটি রোগ এবং চিকিৎসার বিবরণ পাওয়া যায়। কিন্তু, আধুনিক কালের ইতিহাসে কলেরা মহামারি ১৮১৭ সনেই প্রথমে গঙ্গা অববাহিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ার বিবরণ পাওয়া যায়। ১৮৮৪ সনে কলেরার জীবাণু চিহ্নিত করা হয় এবং কলেরার প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা শুরু হয়। ১৮৮৫ সনেই কলেরার টিকার আবিষ্কার হয়, যে টিকা সেবন করলে মানুষ ছয় মাসের জন্য কলেরার অনাক্রমণ্যতা প্রাপ্ত হতে পারে। বিশ্বে কলেরার ৭টি মহামারির ইতিহাস রয়েছে। ৭ম ম্যালেরিয়া মহামারি দেখা যায় ১৯৬১ সনে এবং এই মহামারি ইন্দোনেশিয়ায় থেকে উৎপত্তি হয়ে এশিয়া এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯১ সনে এই মহামারি দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছায় এবং সেখানে প্রায় ৪০০০ মানুষ মারা যায়। কলেরার সাতটি পর্বের সংক্রমণে সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যু ঘটেছিল।
কলেরা মূলত পানিবাহিত রোগ। দূষিত জল পান করার মাধ্যমে এর সংক্রমণ ঘটে তাই শীত প্রধান দেশগুলোর তুলনায় পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চলগুলোতেই কলেরার মারাত্মক প্রাদুর্ভাব অধিক সংখ্যায় ঘটতে দেখা গেছে। ভিবরিও কলেরি নামে একটি জীবানুর কারণে কলেরা হয়। রোগীর মল পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব। যেহেতু কলেরার সংক্রমণ হলে রোগীর প্রচণ্ড উদরাময় হয় তাই দেখা যায় যে প্রথম ধাপে সংক্রমিত হওয়ার সময় খুব দ্রুত শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে পারলেই প্রায় ৯৯% কলেরা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। সাথে এন্টিবায়োটিক এবং জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করে কলেরা রোগ থেকে প্রায় ১০০% রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
বিদেশী চিত্রকর্ম ও সাহিত্যে অতীতের অতিমারিসমূহের প্রত্যক্ষ প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। যদিও ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইনের শাসক স্বয়ং জাস্টিনিয়ান’এর দুই একটি ফ্রেস্কো দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু ষষ্ঠ শতাব্দীর প্লেগের ফ্রেস্কো অথবা তৈলচিত্র চতুর্দশ শতাব্দীতে বিউবনিক প্লেগের দ্বিতীয় অতিমারির সময়ে ইউরোপিয়ান কয়েকজন শিল্পী তখনকার সময়ের চিত্র তৈরি’র সময় তাদের কর্মে তুলে আনেন। বোকাচ্চিও এর ডেকামেরন (চতুর্দশ শতাব্দী), ফ্রান্সিস্কো’র ‘মাতৃস্নেহের রূপক কাহিনি’ (১৭৪৩-৪৪) অথবা মানজোনি’র ‘দি বেট্রোথেড (উন-বিংশ শতাব্দীর) তেল চিত্রগুলো এসব শিল্পকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
বিদেশী সাহিত্যে প্লেগ অথবা মহামারি এসেছে প্রত্যক্ষভাবেই। বাংলা সাহিত্যে কলেরা, ম্যালেরিয়া বা গুটিবসন্ত অর্থাৎ জনমানসে ওলাওঠা বলে পরিচিত রোগের অভিঘাত পড়েছিল ব্যাপক আকারে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এ নিয়ে বাংলা ভাষায় কোনো বড় উপন্যাস বা মহাকাব্য কখনো লেখা হয়নি। যেমনটি আমরা আমরা পাই আমেরিকায় রেড ডেথ মহামারিতে একটি জনপদ উজাড় হওয়ার পরে বেঁচে যাওয়া মানুষের জীবন-আখ্যান নিয়ে ১৯১২ সালে জ্যাক লন্ডন [১৮৭৬-১৯১৬] রচিত ‘দ্য স্কার্লেট প্লেগ’ উপন্যাসে। যেমন করে কালজয়ী হয়েছে ১৯৪৫ সালে আলবেয়ার ক্যাম্যু [১৯১৩-১৯৬০] রচিত ‘দ্য প্লেগ’। মহামারিকালে কোয়ারেন্টিনে অবরুদ্ধ ফরাসি-আলজেরিয় ওরান শহরের চার দেয়ালের ভেতর ঘটা আখ্যানভিত্তিক উপন্যাস ‘দ্য প্লেগ’। আলজেরিয়ার ওরান শহরে ইঁদুরের উপদ্রব হতে ছড়িয়ে পড়া প্লেগ মহামারিতে মৃত্যুর মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়ে সূচিত ‘দ্য প্লেগ’ আজও বিশ^সাহিত্যে কিংবদন্তি হয়ে আছে। অপরদিকে, ১৯৬৭ সালে নোবেলজয়ী স্পানিশ সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ রচিত ‘লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা’ উপন্যাসেও কলেরা মহামারির চিত্র বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে নোবলজয়ী পর্তুগিজ সাহিত্যিক হোসে সারামাগো (১৯২২-২০১০) রচিত ‘ব্লাইন্ডনেস ’ উপন্যাসটিও মহামারী কালের চরিত্র বোঝার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বসাহিত্যে সাড়া জাগানো কল্পবৈজ্ঞানিক উপন্যাস ‘ফ্রাঙ্কেনস্টেইন’ এর লেখিকা মেমরি শেলি ‘দ্য লাস্টম্যান’ উপন্যাস রচনা করে মহামারি নিয়ে ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম দিয়েছেন।
আমাদের দেশের ইতিহাসেও মহামারি নতুন কিছু নয়। তবে অতীতে তার পরিচয় ছিল ‘মড়ক’ হিসেবে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক বাঙালির নিত্য সহচর। আর এগুলোর অনিবার্য সঙ্গী হয়ে এসেছে দুর্ভিক্ষ-মন্বন্তর, মড়ক-মহামারি। বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশের মানুষ আবহমান কাল ধরে এইসব মড়ক-মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক, দুর্ভিক্ষ-মন্বন্তর ইত্যাদির সাথে লড়াই-সংগ্রাম করে টিকে আছে। তাই স্বভাবতই বাংলা সাহিত্যেও এসবের প্রভাব ও প্রতিফলন ঘটেছে সেই আদিকাল থেকে।
প্রচলিত মৌখিক সাহিত্য তথা লোকসাহিত্যের বিভিন্ন শাখার পাশাপাশি লিখিত সাহিত্যের সকল শাখায় নানা প্রসঙ্গে-অনুষঙ্গে বর্ণিত হয়েছে মড়ক-মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদির কথা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি ও প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগে এবং আমাদের দেশে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অপ্রতুলতার কারণে অতীতে ম্যালেরি গ্রামকে নিয়ে অনেক অতিলৌকিক বা ভৌতিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে লোক মুখেমুখে।
বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদে সরাসরি মড়ক-মহামারির কথা উল্লেখ নেই। তবে বৌদ্ধ ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সাধন সঙ্গীত হিসেবে রচিত চর্যাপদে রূপকের আশ্রয়ে সমকালীন দরিদ্র বাঙালির নিত্যদিনের অভাব, ক্ষুধা, দুঃখ-দারিদ্র্য, রোগ-ব্যাধি-বেদনা-পীড়িত জীবনের করুণ চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দুর্যোগ-দুর্বিপাক, রোগ-ব্যাধি, মড়ক-মহামারির নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিভিন্ন লৌকিক দেব-দেবীকে কল্পনা করা হতো এবং এসব থেকে বাঁচার জন্য পূজা-অর্চনাসহ নানাভাবে তাদের পরিতুষ্টি বিধানের চেষ্টা করতো অজ্ঞ-অসহায় সাধারণ মানুষ। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের উন্মেষের আগে এই সব লৌকিক দেব-দেবীর কাল্টের উদ্ভবের সুবাদে তৈরি হয় দেবদেবী মহিমা-কীর্তনকারী কাহিনিকাব্য, পাঁচালি, ব্রতোপাখ্যান। এরই ধারাবাহিকতায় মধ্যযুগের লোকজ বাংলা কাব্যে বিকাশ লাভ করে মঙ্গলকাব্য নামে একটি বিশিষ্ট সাহিত্য ধারা। মঙ্গলকাব্যে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি, মড়ক-মহামারি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকের নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিভিন্ন লৌকিক দেব-দেবীর মাহাত্ম্যকথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, বসন্তের দেবী শীতলাকে নিয়ে শীতলামঙ্গল কাব্য এবং কলেরা বা ওলাউঠার নিয়ন্ত্রণকারী দেবী হিসেবে দেবী ওলাইচণ্ডীকে নিয়ে উলামঙ্গল বা চণ্ডীমঙ্গল কাব্য রচিত হয়েছে। এসব কাব্যে শীতলা দেবী বা দেবী ওলাইচণ্ডীর উপাসনার মধ্যদিয়ে সে সময়ে বসন্ত, কলেরার মড়ক-প্রতিরোধ কামনারই কথা বলা হয়েছে।
আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যে কাহিনির মূল উপজীব্য হিসেবে না হলেও নানা প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গে মড়ক-মহামাররি কথা বর্ণিত হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের অগ্রপথিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কালের সেলিনা হোসেনসহ শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যিকদের রচনায় বিশেষ করে কথা সাহিত্যে মড়ক-মহামারির বর্ণনা পাই নানা প্রসঙ্গে-অনুষঙ্গে। বঙ্কিম চন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসে ১৭৭৬-এর মন্বন্তর এবং মন্বন্তরের সঙ্গী হিসেবেই মারি বা মড়কের বিবরণ পাওয়া যায়। ১১৭৬ বঙ্গাব্দের মন্বন্তর কালে সমগ্র বাংলায় কলেরা-বসন্ত মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। রবীন্দ্রনাথের গোরা ও চতুরঙ্গ উপন্যাসে এবং বিভিন্ন ছোটগল্পে কলেরা, প্লেগ, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ও মহামারির উল্লেখ করা হয়েছে। মহামারির ছায়ার ভেতরেই রচিত হয়েছিল গোরা বা চতুরঙ্গের মত উপন্যাস ও গল্পগুচ্ছের গল্পগুলো। মহামারির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অনুভূত হয় রবীন্দ্রনাথের ‘আত্মশক্তির’ প্রবন্ধমালায়। রবীন্দ্রনাথ ‘ওলাওঠার বিস্তার’ নামে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধও লিখেছিলেন এবং তার ‘স্বদেশী সমাজ’ পর্বের বিভিন্ন প্রবন্ধে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি চেয়ে আলোচনা করেছেন নানা প্রসঙ্গ ক্রমে।
অপরাজেয় কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিভিন্ন উপন্যাসে মড়ক-মহামারির কথা বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই শ্রীকান্ত উপন্যাসের কথা বলা যেতে পারে। পুরো উপন্যাস জুড়েই মহামারি, মারি বা জনস্বাস্থ্য নিয়ে দুর্বিপাকের কথা ছড়িয়ে আছে। শ্রীকান্ত উপন্যাসে আমরা চার চারটি মারণ-ব্যাধির উল্লেখ পাইÑ কলেরা, প্লেগ, বসন্ত ও ম্যালেরিয়া। তাঁর, ‘পণ্ডিতমশাই’, ‘পল্লীসমাজ’, উপন্যাসেও মহামারির প্রসঙ্গ এসেছে। শরৎচন্দ্রের বিভিন্ন গল্পেও মড়ক-মহামারি প্রসঙ্গ এসেছে।
জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে মহামারির বর্ণনা এসেছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ধাত্রীদেবতা’ এবং ‘গণদেবতা’ উপন্যসে কলেরা মহামারির প্রসঙ্গ পাই। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাসের গাওদিয়া গ্রামে প্রায়ই মহামারি রূপে ছড়িয়ে পড়ত কলেরা, টাইফয়েড, কালাজ্বর ও বসন্তের মতো রোগগুলো। বেগম রোকেয়ার রচনাতেও প্লেগ ও মহামারির কথা পাই। ‘সুলতানার স্বপ্ন’-তে বেগম রোকেয়া যে ইউটোপিয়ার দেশ নির্মাণ করেছেন তাতে মহামারির আসল কারণ বর্ণিত হয়েছে।
জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসে কলেরার মড়ক এবং এ নিয়ে গ্রামবাংলার অজ্ঞ-কুসংস্কারাচ্ছন্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে আবহমান কাল ধরে প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাস ও সংস্কারের ইতিকথা বর্ণিত হয়েছে। শহীদুল্লা কায়সারের ‘সংশপ্তক’ উপন্যাসে বসন্ত রোগের প্রকোপের সময় মানুষের এ পলাতক মনোভাব ফুটে উঠেছে, ‘কবর আর কবর’ উচ্চারণে। আহমদ ছফার ‘সূর্য তুমি সাথী’ উপন্যাসে কলেরা থেকে পলায়নপর মানুষের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে, “কলেরার সময় গাঁ ছেড়ে পালাচ্ছে ডরে মানুষ। এক বাড়িতে কারো কলেরা লাগলে পাশের বাড়ীর মানুষ উধাও”। হাসান আজিজুল হক ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসে মেতর বউ-এর জবানীতে লিখেছেন, ‘এত রোগের নামও ত্যাকন জানত না লোকে। ডাক্তারবদ্যিও ছিল না তেমন। মরবার আগে মুখে যেদি ওষুধ পড়ত, তাই কত! পেরায় পিতি বছর কলেরা-বসন্তেই কত যি লোক মরত, তার সীমাসংখ্যা নাই।’ সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে ‘বুধা’ তার পরিবারের চারজনকে হারিয়েছে। বুধার মানসিক বিপর্যস্ততার ইঙ্গিত লেখিকার কলমে ধরা দিয়েছে, ‘চোখের সামনে মা-বাবা, চার ভাই-বোনকে মরে যেতে দেখলে কেউ কি নরম থাকতে পারে?’ হয়তো পারে না। তাই পৃথিবীব্যাপী আজ কান্নার রোল। কলেরা মহামারি কীভাবে মৃত্যুর পর মৃত্যু উপহার দিয়েছে সেলিনা হোসেন তারও উল্লেখ করেছেন। ‘সেবার কলেরায় মহামারিতে উজাড় হয়ে যায় গাঁয়ের অর্ধেক লোক।’
বাংলা ছোটগল্পেও মড়ক-মহামারির প্রসঙ্গ এসছে নানা প্রেক্ষিতে। মুজতবা আলী ‘পাদটীকা’ গল্পের শুরুতেই মড়কের প্রসঙ্গ এসেছে এভাবে– “গত শতকের শেষ আর এই শতকের গোড়ার দিকে আমাদের দেশের টোলগুলো মড়ক লেগে প্রায় সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যায়।”
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প ‘পুষ্করা’-তেও বাংলার মন্বন্তর পরবর্তী মড়ক থেকে উদ্ধার পাবার চিত্র প্রতিফলিত। জগদীশ গুপ্ত’র ‘পয়োমুখম’ গল্পে ভূতনাথ নিজের স্ত্রীদের হত্যার পিছনে তার অর্থলিপ্সু কবিরাজ বাবার দুষ্কর্ম ধরে ফেলে শেষ পর্যন্ত। শেষতম বউ বেঁচে যায়। ভূতনাথ বলে, “এ বৌটার পরমায়ু আছে তাই কলেরায় মরল না, বাবা! পারেন তো নিজেই খেয়ে ফেলুন।” মানুষের এক অন্ধকার অধ্যায় বেরিয়ে পড়ে। শিবরাম চক্রবর্তীর ‘দেবতার জন্ম’ গল্পের কথক যে-পাথরে হোঁচট খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে উঠেছিল বসন্ত রোগ থেকে বাঁচতে সেই পাথরেই মাথা নোয়ায়। সুকুমার রায়ও তাঁর ‘নানাগল্পে’-র ‘পেটুক’-এ লিখেছেন, “চারদিকে যে রকম প্লেগ আর ব্যারাম এই পাড়াসুদ্ধ ইঁদুর না মারলে আর রক্ষা নেই।”
বাংলা কবিতাতেও বাদ যায়নি মড়ক-মহামারি প্রসঙ্গ। উনিশ শতকের ঢাকার এক ‘বটতলার কবি’ কুশাই সরকার লোকমুখে প্রচলিত বুলিতে ওলাওঠার মহামারি নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তো বহু আগেই তাঁর ‘বোধন’ কবিতায় বলে গেছেনÑ ‘মারী ও মড়ক মন্বন্তর, ঘন ঘন বন্যার/ আঘাতে আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন/ ভাঙা নৌকার পাল/ এখানে দারুণ দুঃখে কেটেছে সর্বনাশের কাল’। কবি জীবনান্দ দাশের আট বছর আগে একদিন কবিতায়, “এই ঘুম চেয়েছিল বুঝি!/ রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি” Ñউপমায় প্লেগের জীবাণুবাহী হিসেবে বর্র্ণিত। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ‘আসামনী’ কবিতায় পাই- ‘ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে।’
অদৃশ্য ঘাতক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর থাবায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে দেশ ও বিশ্ব। এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিণতি ভাবনায় সমাজের আর দশজনের মত আমাদের শিল্পী, কবি-সাহিত্যকরাও উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠিত। কবি-সাহিত্যিকরা করোনাকে ঘিরে তাদের অনুভব-অভিব্যক্তিকে তুলে ধরে রচনা করছেন ছড়া, কবিতা, গল্প। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে এগুলো প্রকাশিতও হচ্ছে। করোনা কালে রচিত কবিতা নিয়ে ইতোমধ্যে সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে। কারও কারও কবিতার আবৃত্তিও স্থান পেয়েছে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে।
শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন এর এই সংখ্যায় অল্পসংখ্যক করোনা কালের কবিতা ও গদ্য ছাপা হয়েছে। মনে হয়, করোনা কাল দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে আর অনুপ্রাণন এর পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে আরো অনেক করোনাকালের কবিতা, ছোট গল্প, অণুগল্প, নাটক, চিত্র-চলচ্চিত্র আলোচনা, প্রবন্ধ ও গদ্য প্রকাশিত হবে, প্রত্যাশা রাখি।
নবম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা
সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির বিত্তশালী নারী সাবরিনা যে কিনা নিজেও এক সময় পতিতাবৃত্তি করে বিপুল ধনসম্পদের মালিক হয়েছে এবং নিজের বিলাশবহুল ফ্ল্যাটে নানা কৌশলে-প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে দালালদের মাধ্যমে সুন্দরী তরণীদের নিজের ফ্ল্যাটে রেখে প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জন করে। তারই ফাঁদে পড়ে হতদরিদ্র পরিবারের কিশোরী পুষ্প আপন ভগ্নিপতির প্রলোভনে ঢাকায় এসে সাবরিনার বাসাবন্দি হয়ে যৌনকর্মী হতে বাধ্য হয়। পুষ্প ও সাবরিনাকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাসে বর্ণচোরাদের চরিত্র উন্মোচিত করে উপন্যাসটি নির্মিত। এক সময় পুষ্প গ্যাং রেপড হলে প্রতিহিংসার আগুনে সে দগ্ধ হয়ে নওয়াব আলীর ওপর প্রতিশোধ নিতে চায়। পুষ্পর জীবন হয়ে ওঠে আরও দুর্বিষহ। এরপরও একটু ভরসা ও স্বপ্নের স্থান: পুষ্পর যৌনবৃত্তির কথা জেনেও সাবরিনার ফ্ল্যাটের দারোয়ান যে কিনা অত্যন্ত পড়ুয়া আবদুল কাদের তাকে ভালোবাসে। এতটুকুন মিষ্টি প্রেম কারারুদ্ধ জীবনে পুষ্পর জন্য যেন নিশ্বাস নেওয়ার সতেজ অম্লজান…
ফাঁদ
সাহিত্যের অন্যতম সংরূপ ছোটগল্প। জীবনের খণ্ড খণ্ড মুহূর্তগুলোকে গল্পকারগণ শিল্পরূপ দিতে ব্যপ্ত হলেও বোদ্ধাদের তীর্যক চোখের তরবারি দীপ্তিতে শিল্পস্বীকৃতি পেতে বাধা পায়। তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণদৃষ্টিতে গল্পের ভাব-সুষমা, আঙ্গিক-প্রাঙ্গিক, গঠনশৈলী, পরিবেশনভঙ্গিতে ত্রুটি দৃশ্যত হলেও সৌমেন দেবনাথের গল্পগুলি পাঠান্তে মনে হয়েছে বর্ণনা নান্দনিক, শিল্পশর্তেও উত্তীর্ণ। দৈর্ঘ্যে হ্রস্ব কাহিনি-কল্পে মাধুর্য ও সৌন্দর্য সুপরিস্ফুট। সমাজ-সমস্যা, আদর্শ-বৈষম্য, অসামঞ্জস্য, বিসংগতির পাশাপাশি সৌন্দর্যতন্ময়তা, ভাবাদর্শ, স্বপ্ন-কল্পনার সংমিশ্রণে যে গল্পসৌষ্ঠব নির্মিত হয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। মহাকালের ঘূর্ণাবর্তে ব্যক্তিসত্ত্বা হারালেও সৃষ্টিশীল কর্ম মূর্ত-বিমূর্ত পাতায় বেঁচে থাকে। যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের পাড়ে জন্ম সৌমেন দেবনাথের গল্পের ভেতরের যে জীবন বীক্ষণ-পর্যবেক্ষণ, চারিত্রিক লীলার বিকার-বিকাশ, রস-সৌন্দর্য, যুগ-চিত্ত চৈতন্য উন্মোচিত তা বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় প্রাসঙ্গিক যা কালোত্তীর্ণ হতেও পারে। সৃষ্টিশীল কর্ম শিল্পমানে অনুত্তীর্ণ হলেও সমালোচনার পরিবর্তে সাধুবাদ জানানো যুক্তিযুক্ত। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দারিদ্র্যের কাঠগড়ায়’ এর মতই তাঁর এই দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘এক উপেনের জীবনালেখ্য’ পাঠকমহলে জনপ্রিয়তা পাক এবং তাঁর মনের মধ্যের গল্পসাহিত্যের সত্ত্বা চারাটি বৃক্ষ রূপ নিয়ে পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয়ে ফুলে-ফলে মঞ্জুরিত-বিকশিত হোক এই প্রত্যাশা থাকলো।
এক উপেনের জীবনালেখ্য
চারপাশে ঘটে যাওয়া জীবনের গল্প নিয়ে এই উপস্থাপনা। পরপার্থিব গল্প মায়ায় যেমন উঠে এসেছে মাতৃত্ববঞ্চিত জীবনের একটি অধ্যায়, তেমনি বিবর্ণ গল্পে উঠে এসেছে স্ত্রী এবং সন্তানহারার বেদনা। আড়িখোলা গল্পটি যেমন একটি কিশোর মনের অভিমানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে, তেমনি হৃদয় ও গায়েন গল্পটি জীবন সংগ্রামের সফল পরিসমাপ্তির গল্প। রম্য অংশে সীমা নামক এক মাঝবয়সী মধ্যবিত্ত গৃহিণীর সাথে স্বামীর সংসারিক খুনসুটির একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব কিছুই আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া জীবনের গল্প।
বিবর্ণ
শৌখিন ফটোগ্রাফার শুভ্র। তার পৃথিবী মমতাহীন শূন্যতায় ভরা। একে একে কাছের মানুষদের প্রস্থান তার জীবনকে ক্যামেরার ক্লিকের সাথে বন্দি করে ফেলে। এক সময় তার নিঃসঙ্গ জীবনে আসে দুঃখ ভাগ করে নেওয়ায় আগ্রহী মানুষেরা। হয়তো তারা একই মানুষ। ভিন্ন তাদের নাম। তারা সেতু-ঋতু-রূপা অথবা স্বাতী। যারা শুভ্রর মনস্তাত্ত্বিক ভাবনা-যৌন বিশ্বাস-উড়ন্ত নেশা ও বিপন্ন ক্ষতের সাথে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় জড়িয়ে যায়। অথবা তারা কেউ না। শুধু শুভ্র। শুধু নিঃসঙ্গ একজন মানুষ। নিজস্বতায় নিমগ্ন। যে ক্রমশ ঢুকে যায় অচেনা এক জগতে! নিষিদ্ধ ভাষা ও চিঠির ভাঁজে…
গুহা
হুমায়ুন কবির।
জন্ম ১৯৫৯ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার দেউটি গ্রামে। বাবা জালাল আহমেদ ও মা জফুরা বেগম। লেখালেখির শুরু ছাত্রাবস্থায়। মাঝে দীর্ঘ বিরতি। আবারও ফিরে এসেছেন লেখালেখিতে। কবিতা, উপন্যাস, গল্পগ্রন্হসহ তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আটটি। ইতোপূর্বে প্রকাশিত তার উপন্যাস ‘ কানফুল, আনছার আলীর গৃহত্যাগ এবং কবিতা অন্তহীন দীর্ঘশ্বাস পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য জিগীষা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ তাকে জিগীষা সাহিত্য সম্মাননা -২০১৯ প্রদান করেছে।
সাবেক সরকারি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বর্তমানে দৈনিক বাংলার সাহিত্য সম্পাদক। তিনি সালমা ফৌজিয়া সুমি, ডা. শারমিন ফৌজিয়া ও সাইফুল কবির সোয়েবের বাবা। স্ত্রী নাজমুন নাহার লক্ষ্মী গৃহিণী।
প্রকাশিত বই সমুহঃ-
কবিতা-
আমি তাকে ফিরছি খুঁজে
অন্তহীন দীর্ঘশ্বাস
উপন্যাস-
দায়
কানফুল
মেঘনাপারের শেফালী
আনছার আলীর গৃহত্যাগ
গল্পগ্রন্থ-
শাহজাদী উপাখ্যান
আমিও ডিকশনারি দেখেছি কিন্তু পাইনি।
জ্বিনকন্যা নার্গিসের প্রেম
কামরুজ্জামান কাজল বয়সে অনেক নবীন হওয়া সত্ত্বেও [জন্ম ২৫ মার্চ ১৯৯১] এবং অণুগল্প চর্চায় খুব বেশিদিন অতিবাহিত না করলেও ‘দলছুট শালিকগণ’ নামে যে বইটি প্রকাশিত হল;-এর বৈচিত্র্যপুর্ণ বিষয়বস্তু এবং অণুগল্প সম্পর্কিত ধারণার সাথে লেখকের যে নিবিড় ঐক্য স্থাপিত হয়েছে- বইটির পাঠশেষে এই কথাটাই মনে করবেন বিজ্ঞপাঠকগণ।
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা এই যুবকের ইতিপুর্বে ‘ শ্যাম পাহাড়ের আড়ালে’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৬’র একুশে বইমেলায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগ্রিকালচারে স্নাতক শেষ করে লেখক বর্তমানে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে মাস্টার্স করছেন।
‘দলছুট শালিকগণ’ কামরুজ্জামান কাজলের প্রথম অণুগল্পগ্রন্থ। অণুগল্পের ভিত্তি, বিকাশ এবং প্রচারে এই বইটি একটি মাইলফলক হিসেবে ভবিষ্যতে উচ্চারিত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
দলছুট শালিকগন
ফকির ইলিয়াস৷ মূলত: কবি৷ এছাড়া অবাধ যাতায়াত আছে প্রবন্ধ ও গ্রন্থসমালোনায়৷ সাংবাদিক হিসাবেও ব্যাপক পরিচিতি আছে৷ প্রবাসে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি-লালন ও চর্চায় তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন৷ এযাবত্ প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা তেরটি৷ বিভিন্ন দেশের সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখা ছাপা হচ্ছে৷ ‘ঠিকানা শ্রেষ্ট গ্রন্থ পুরস্কার’ ‘ফোবানা সাহিত্য পুরস্কার’সহ আরও অকে পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন দেশে ও বিদেশে৷ বর্তমানে স্বপরিবারে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন৷
সাহিত্যের শিল্পঋণ
কবি ও প্রাবন্ধিক স্বপঞ্জয় চৌধুরীর দ্বিতীয় প্রবন্ধের বই “শিল্প সাহিত্যের নিবিড় অনুসন্ধান ও পাঠ বিশ্লেষণ: নিভৃত ভাবনার জলযান” মূলত তাঁর দীর্ঘদিনের পাঠাভ্যাস ও চিন্তার প্রকৃষ্ট ফসল। এ গ্রন্থে তিনি মোট ২৪ টি নিবন্ধ সংযোজন করেছেন। যাতে তিনি আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন কবিতা, সাহিত্য, দর্শন, ও চলচ্চিত্রসহ শিল্পকলার বিভিন্ন মাধ্যমের দিকে। কবিতা ও কথাসাহিত্যের নন্দনতাত্তি¡ক ভেতরবাড়ির আনাচকানাচ পর্যবেক্ষণ করে তা তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র ও লিটলম্যাগ নিয়েও প্রয়াস চালিয়েছেন তাঁর নিবন্ধের বইটিতে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কবি সাহিত্যিকদের বিভিন্ন লেখাকে তিনি পাঠ পরবর্তী বিশ্লেষণের মাধ্যমে এক ভিন্ন শিল্পরূপে দাঁড় করিয়েছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়। গদ্যসাহিত্যের বিকাশমান ধারায় তাঁর এ গ্রন্থটি সিরিয়াস ও মনোযোগী পাঠকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পাবে বলে আশাকরি।
– আহমেদ শিপলু।
কবি ও নন্দনতাত্ত্বিক, সম্পাদক – ‘মগ্নপাঠ’
Shilpo sahityer Nibir Anusondhan O Path Bislation - Nibir Vabonar Jalzan - Swapanjoy Chowdhury
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.