Description
এই সেইদিনও, অণুগল্প নিয়ে আলাদাভাবে ভাবনা চিন্তা করার মতো যেমন ক্ষেত্র বা মানুষ ছিল না, তেমনি ছিল না ভাবনা চিন্তা করানোর কোন উদ্দীপকও। ফলে অণুগল্প বিদেহী ছিল, ছিল অশরীরী।
অণুগল্পের একটা অবয়ব দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে অণুগল্প সম্পর্কিত ভাবনা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়, ফলশ্রুতিতে অণুগল্প লেখার পাশাপাশি লেখকরা ভাবনা করেন- সে ভাবনা বিচিত্র আর সুচিন্তিত। অণুগল্পের এই সঙ্কলনটি সেসব ভাবনা হতে উৎসারিত গল্পের নমুনামাত্র।
এই সংকলনে লিখিত অণুগল্প, লেখকদের অণুগল্পবিষয়ক ভাবনামূল প্রোথিত করে দিতে চেষ্টা করেছেন- আগামী-ই বলে দেবে- সে চেষ্টায় প্রকৃত কতখানি শক্তি আর প্রচ-তা ছিল অণুগল্পের অস্থি-মজ্জা-শরীর গঠনে।
তবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়- বর্তমানের এই চেষ্টার আকুতি ভবিষ্যৎ অণুগল্প, অণুগল্পের শৈলী নির্মাণে আরও বলিষ্ঠভাবে উত্তরণের একটি দিকনির্দেশনা। এছাড়াও এই প্রাথমিকভাবে লিখিত অণুগল্প ভবিষ্যতের বিশুদ্ধ অণুগল্পের প্রমাণবাহকও বটে- যাকে ভেঙেচুরে রেখে মজবুত কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে বিচিত্র বিশুদ্ধ অণুগল্পের সুরম্য প্রাসাদ। সেই অর্থে এই সংকলনের অবদান অপরিসীম।
যৌথ অণুগল্প লেখার আইডিয়া কোত্থেকে প্রথম এসেছিল আজ আর মনে নেই। সম্ভবত যে মেয়েটি আমাকে- ‘বিলু ভাই, ও বিলু ভাই’ বলে ইনবক্সে ডাকত, তার থেকে পাওয়া। উনি কবিতা লেখেন। একদিন এসে বললেন- চলেন দু’জন মিলে কবিতা লিখি।
কবিতা!
আমি বরং তাকে ভাওয়ে ভাওয়ে চোরাপথে অণুগল্পের চৌরাস্তায় নিয়ে আসতে চাইলাম। মেয়েটির বুদ্ধি আছে, ব্যাপারটা তিনি ধরতে পারলেন। রকেট গতিতে ইনবক্স থেকে চম্পট দিলেন।
তারও আগে, প্রতিভাবান অণুগল্পকার আবু সাঈদ আহমেদ ভাই একদিন আমার বাসায় ঘুরতে এসে রাতে থেকে গেলেন। সারা রাত ধরে অণুগল্পের নানা আইডিয়া দিয়ে দিয়ে আমাকে পাগল করে দিলেন। সেসব আইডিয়া নিয়ে লিখলাম কয়েকটা অণুগল্প। আমার নামের পাশে তার নাম রেখে দিলাম রচয়িতা হিসেবে।
আবার এমনও হয়েছে- কেউ দু’তিন লাইনের একটা স্ট্যাটাস লিখেছেন। পড়ার সাথে সাথে স্ট্যাটাসের পরের লাইন এবং তার পরের লাইন এবং তারও পরের লাইনগুলি মাথা থেকে হরহর করে বেরুতে লাগল। সাথে সাথে স্ট্যাটাসদাতার সাথে যোগাযোগ করে বললাম- আপনার এই লাইনগুলি কি আমি আমার অণুগল্পে ব্যবহার করতে পারি?
উনি হাসির জোড়া ইমো দিয়ে বললেন- নেন, সমস্যা কী!
এইভাবেও কয়েকটি অণুগল্প লিখেছি। সেখানেও যৌথ নাম ব্যবহার করেছি।
কিন্তু যৌথ অণুগল্প বলতে যেটা বোঝায়- যে গল্প লিখতে দু’জনের সমান অংশগ্রহণ- সেটি লিখেছি প্রথম সুবর্ণা রায়ের সাথে। যৌথ অণুগল্প লিখতে লাগে দু’জন লেখকের অভিজ্ঞতার উদ্ভাস। লাগে- অনবরত অনুশীলন আর চেষ্টার উল্লাস। এছাড়া দু’জনের সাথে কেমন টিউনিংটা হয় সেটাও দেখার বিষয়। দু’প্রান্তে কীবোর্ডের সামনে বসে থাকা দু’জন মানুষের চিন্তা মেজাজ আর কল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছুঁয়ে যেতে সক্ষম না হলে কাজ করা অসম্ভব। অন্তত যৌথ অণুগল্প রচনায়।
অণুগল্প ধারণাটি অত্যন্ত আনকোরা হওয়াতে গোয়েন্দা অণুগল্প নিয়ে তেমন কাজ হয়নি বলেই চলে। অণুগল্পের বিষয়বস্তুতে নতুনত্ব এনে অণুগল্পের এই নবীন শাখাটিকে বাংলা সাহিত্যের গভীরে স্থান করে নেয়ার অভিপ্রায়ে স্থান দেয়া হয়েছে কিছু গোয়েন্দা অণুগল্প।
একথা ঠিক, কিছু কিছু গল্পের মান একটু হালকা হলেও প্রায় সবগুলি অণুগল্প মানে উত্তীর্ণ। দিনে দিনে উদ্ভাসিত অণুগল্পের ধারণা এবং ফরম্যাটকে কিছ্টুা এড়িয়ে যেতে হয়েছে বলে গোয়েন্দা অণুগল্পের জন্যে আরও চিন্তার খোরাক রয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। আরও পথ হাঁটতে হবে অণুগল্পের পথ ধরে। যাত্রা কেবল শুরু।
বাংলা সাহিত্যে ভূতের গল্পের অভাব নেই। গল্প, উপন্যাস লেখেন এমন কোন লেখক খুঁজে পাওয়া যাবে না- যিনি ভূতের গল্প লেখেননি। কিন্তু একথা জোর দিয়ে বলতে পারি- কেউ ভূতের অণুগল্প লেখেননি। আমাদের অণুগল্পকারগণ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বৈচিত্র্যময় আর নানা প্যাটার্নের সাহায্যে ভূতের অণুগল্প লিখেছেন। এইসব ভূতের অণুগল্প পাঠ করে সত্যিই এক অন্যরকম আনন্দ পাওয়া যাবে।
আমাদের সাহিত্যে নীতিগল্প বা মোরাল গল্পের ইতিহাস অনেক পুরনো। সেই পুরনো ধারণার উপর ভিত্তি করে অণুগল্পের ফরম্যাটকে ভিত্তি বানিয়ে রচিত হয়েছে কিছু নীতি অণুগল্প যা এই সংকলনে ঠাঁই করে নিয়েছে।
এছাড়াও পরীক্ষামূলকভাবে আমরা কবিতা থেকে অণুগল্প লিখেছি। আশাকরি আমাদের নিরীক্ষা সফল হয়েছে।
কিছু কিছু বিখ্যাত লেখকের ছোটগল্পকে আমরা অণুগল্পের শৈলীতে সাজিয়ে পরিবেশন করেছি যা অনুবাদ অণুগল্প বিভাগে পাঠক দেখতে পাবেন।
একটি বিশেষ বিভাগে সন্নিবেশিত হয়েছে অণুগল্পের প্রতি ভালোবাসা। এই পর্বে অণুগল্পের প্রতি লেখকদের উচ্ছ্বাস এ পর্যায়ে গেছে যে তারা অণুগল্পকেই উপজীব্য করে অথবা কেন্দ্রীয় চরিত্র বানিয়ে গল্প লিখেছেন। এ এক অভিনব ভালোবাসার স্পন্দন।
অণুগল্পের মতো স্বল্পায়তনের বিন্যাসে সাইফাই লেখা একটি অতীব দুরূহ কাজ। লিখতে গিয়ে এটি একটি মামুলি গল্পে পরিণত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। হয় এতে একটি গল্প থাকে, নয়তো বিজ্ঞান খুঁজে পাওয়া যায় না। অথবা এতে বিজ্ঞান থাকে, গল্পের অস্তিত্ব আনা সম্ভব হয় না। ফলে আদর্শ সাইফাই অণুগল্প লেখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই অসম্ভব কাজটি সফলভাবে করেছেন অণুগল্পকার শাহেদ সেলিম। আশা করি পাঠকের ভালো লাগবে।
মদ্যপান অণুগল্প- এ এক বিশেষ অণুগল্প সমষ্টি! মদ্যপান নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ট্যাবু আছে। ফলে একে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নানান গল্প। আমরা মূলত এই গল্পগুলোকে অণুগল্পে রূপান্তর করে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছি।
অণুগল্প অনেকরকম। এই অনেকরকম অণুগল্পের বৈচিত্র্যময় সম্ভার হচ্ছে- বিচিত্র অণুগল্প বিভাগ। অণুগল্পের বিচিত্র আলোকছটায় উদ্ভাসিত হয়েছে অণুগল্পের নানা অলিগলি রাজপথ। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অণুগল্পের তীর্থভূমি। বিচিত্র অণুগল্প তারই সাক্ষ্য দেয়।
অণুগল্পের প্রতিষ্ঠার যাত্রার এই বন্ধুর পথে সহযাত্রী হিসেবে এগিয়ে এসেছে এদেশের এক ব্যতিক্রমী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘অনুপ্রাণন প্রকাশন’। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আবু এম ইউসুফ ভাইয়ের সযতœ তদারকিতে প্রকাশিত হলো এই সঙ্কলন- বাংলা ভাষার সেরা অণুগল্প। পাশে ছিলেন কুহক মাহমুদ ও কানিজ সুমি। পা-ুলিপি তৈরিতে সাহায্য করেছেন অণুগল্পকার কামরুজ্জামান কাজল।
সকলের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। অণুগল্পের জয় হোক।
There are no reviews yet.