Additional information
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.41 $ 1.88
আলতো ঠোঁটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া পাখিদের কলকাকলি, ঝরনার সুরেলা সংগীত, বৃষ্টির বেহালা বাজানো বা নূপুর নৃত্য, নদীর স্রোত বা ডায়মন্ডের মালা গাঁথা ঢেউ তাঁকে হাতছানি দিত, অহরহ। তখন ঘরে বসে থাকতে পারতেন না তিনি- ডাকে সাড়া দিতেন আগ্রহ চিত্তে, দিনে, রাতবিরেতে। এসবের সঙ্গ পান করতেন, বিমুগ্ধ নয়নে। একে অপরকে বুঝতেন। কথা বলতেন অফুরান।
চাঁদের বুড়ি তো নাতী সম্বোধন করে প্রায়ই টেনে নিয়ে যেতেন পড়ার টেবিল থেকে। আদরে-আপ্যায়নে ভরে দিতেন নৈঃশব্দের উঠোন, ঘরের ছাদ, পথঘাট কিংবা জলস্থলের বেশির ভাগ এলাকা। হাসি মাখা গল্প বাড়িয়ে দিতেন সুগোল বাটিতে। কখনো শহরের পাশ ঘেঁষে এঁকেবেঁকে যাওয়া ব্রহ্মপুত্রের কাছে টেনে নিয়ে যেতেন একাকী। আবার কখনো সদলবলে। ঢেউয়ে ঢেউয়ে নাচ তুলতেন। হেসে কুটিকুটি হতেন। এমন উপভোগে ভাগ বসাতে কার না মন চায়! জনৈক ভাবুক তো বটেই সাধারণ সৌন্দর্য-পিপাসুও পিপাসা নিবারণ করতে একশো ভাগ।
শহরের ব্যস্ততম জীবন, আর গ্রামের কিছুটা হালকা আমেজের মধ্যিখানেই তাঁর কেটে যাওয়া সময়ের সিংহভাগ। ফলে, তিনি এক হাতে গ্রহণ করছেন গ্রামীণ সারল্য, আর অন্য হাতে শহরে ব্যস্ততার সুলভ ও দুর্লভ দৃষ্টান্ত। তাঁর কবিতা পাঠে এ সবের মুখরিত ধ্বনি টের পায় পাঠক।
ইদানীং এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিদেশ-বিভুঁয়ের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাও। তাই বলা যায়, বহুমাত্রিক স্বাদে তাঁর লেখার উপাদান।
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
লেখক পরিচিতি :
নিখিল নওশাদ। জন্মসন: ১৯৮৯ইং। বড়িয়া, ধুনট, বগুড়া, বাংলাদেশ। ‘বিরোধ, ‘নিওর’ ও ‘নীড়’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই। এছাড়া ছোটগল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।
এটি একটি চিৎকার
অরণ্যক তপু। জন্ম: ১৯৯৪ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর, ঢাকার ঝিগাতলা। পৈত্রিক নিবাস বরিশালের পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলায়। বর্তমানে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ব্যথিত ভায়োলিন
নাহিয়ান ফাহিম। জন্ম: ২৩শে মার্চ, ১৯৮৪। ময়মনসিংহ জেলা। ঢাকাতে বেড়ে ওঠা। মূলতঃ পাঠক, ফলতঃ লেখক। সাহিত্য পত্রিকা ‘জলমাঝি’র সম্পাদক। মার্কেংটিং বিভাগে স্নাতকোত্তর। পেশাগত জীবনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিনদুপুরের নোটবই’।
মধ্যবিত্ত কবিতা
মেঘ অদিতি। কবি ও গল্পকার হিসেবে ‘দু’বাংলাতে পরিচিত। জন্ম: ৪মে, জামালপুর। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘জলডুমুরের ঘুম (কাব্য)’ ‘অস্পষ্ট আলোর ঘোড়া (গল্প)’ ‘অদৃশ্যতা হে অনিশ্চিতি (কাব্য)’ এবং ‘সময় শূন্যতার বায়োস্কোপ (মুক্তগদ্য)।
প্রবেশিধকার সংরক্ষিত
আলী রেজা। জন্ম: ১৯৫৭। মুক্তিযুদ্ধে আলোড়িত কবি, সত্তর দশকে মূলত ছোটকাগজে লেখালেখি শুরু করেন। সদ্য অবসরে যাওয়া একটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক। এটি কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
আলী রেজা
লেখক পরিচিতি :
শঙ্করী দাস। জন্ম: ৮ই মে, ১৯৫৮ সনে নিজ জেলা জামালপুরে। কবি প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থগুলোÑ গল্প: ‘প্রতিবিম্ব ও অন্যান্য গল্প’ ‘জলমাটির গল্প’ ও ‘রাহুর চন্দ্রগ্রাস’। কবিতাÑ ‘ঘাসবোনা গ্রাম তাঁতবোনা গ্রাম’। স্মৃতিচারণমূলকÑ ‘গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’। গল্পের জন্যে পেয়েছেন পাক্ষিক ঐকতান (বর্ধমান) পত্রিকা পদক। শিশু কবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ও নক্ষত্র সাহিত্য পুরস্কার।
বিহান বেলার ঈশ্বর
সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব। জন্ম: ১৯৭৮ সালে বরিশাল জেলা সদরে করিমকুটির নামক স্থানে। তার লেখার বিষয় মূলতঃ কবিতা। সময় নাট্যদলের সাথে একযুগ পার করেছেন। গানও লিখতেন কিন্তু বন্ধুবরের প্রয়ানে, অভিমানে আর সেপথ মারাননি। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকলেও নিজেকে একজন কবিতার শতরঞ্জি মোড়ানো শ্রমিক বলেই মনে করেন। এটি কবির প্রথম বই।
রূপোর দ্যুতি
অয়ন্ত ইমরুল। জন্ম: ১২ই এপ্রিল ১৯৮৭ইং, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার আজিমনগর গ্রামে। পদ্মা নদীর ভয়াল গ্রাসে শৈশবেই ঠিকানার পরিবর্তন ঘটে বর্তমানে সাভার আশুলিয়ায় বসবাসরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ছায়াসমুদ্র
লেখক পরিচিতি :
সুলতানা শাহরিয়া পিউ। জন্ম: ২রা অক্টোবর। লেখালেখি, আবৃত্তি ও সঙ্গীতচর্চা তার শখ। অনুপ্রাণন সম্পাদনা পর্ষদ এর সদস্য, বর্তমানে দীপ্ত টেলিভিশনের স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘মেঘের সাথে কথা’। অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ: ‘নিমগ্ন জলধারা’। স্ক্রিপ্ট সঙ্কলন: ‘আমরা করব জয়’। গীতিকবিতার অনুবাদ: ‘অচিন’। গল্প সংকলন: ‘মেঘের দেশে ফিরে যাবার গল্প’।
আমার দিনগুলো রইলো অসম্পূর্ণ
রাজন্য রুহানি। পরিবারের দেওয়া সনদসাক্ষ্য নাম মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। জন্ম: ২রা নভেম্ভর ১৯৮০, জামালপুর জেলা শহরের হাটচন্দ্রায়। কলেজে পা দেবার সাথে সাথেই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মফস্বল সাংবাদিকতার পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে বারবার কবিতার কছেই ফেরা। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং। ১৯৯৮ থেকে কবিতার ভাঁজপত্র শব্দদূত সম্পাদনার সাথে যুক্ত। ঐ বছরই অন্যান্য লেখক সহযোগে আলোচনাগ্রন্থ- ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ; আতিয়ার রহমানের ৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এটি লেখকের প্রকাশিত এককবই।
গল্প সমাপ্তির গান
কিছু একটা বলাটাই যখন বাধ্যবাধকতাÑবাহুল্য এবং আপেক্ষিক বাতুলতা বাদ রাইখা মাহবুব লীলেন থাইকা ধার কইরা বলতে হয়Ñ ‘আনফিট মিসফিট হইয়া হামাগুড়ি দিয়া হাঁটি, আর রাত্তিরে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ টাইনা চিক্কুর দিয়া কইÑ যাহ শালা বাঁইচা গেলাম আরও একটা দিন।’
এইটা বড়োবেশি জৈবিক বাঁচা
মানবিক বাঁচনের স্বপ্নও দেখি না বহুদিন
বড়ো তরাসে আছি
বড়ো বেশি চাইপা আছি, নিজের গলা নিজে।
দ্বান্দ্বিক দ্বন্দ্ব বিষয়ক আজাইরা প্রলাপ
ফারহানা খানম। জন্ম: ১৯শে এপ্রিল ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপে। ‘ভুগোল ও পরিবেশ’ বিষয়ে স্নাততোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে ব্যাংকে চাকুরি শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। নয় ভাই-বোনের মাঝে সবার ছোট বলেই আদরও পেয়েছেন বেশি। প্রথম প্রকাশিত বই, ‘ইছামতি’ (কলকাতা থেকে প্রকাশিত)।
তৃষ্ণার্ত বালুতট
ইয়াকুব খান শিশির যতটা না অণুগল্পকার তারচেয়েও বেশি একজন অণুগল্পসমঝদার; বিজ্ঞ আলোচক। অণুগল্পকে অণুগল্প হিসেবে বুঝতে পারার মধ্যেও এক ধরণের মেধার প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় অণুগল্পসংশ্লিষ্ট জ্ঞান বা বোধ। এই জ্ঞান বা অণুগল্পবোধটির অভাব থাকলে অণুগল্পের মূল মূরতি দেখা পাওয়া সম্ভব হয় না। ইয়াকুব খান শিশির এমনি একজন পাঠক যার ভেতরে অণুগল্পবোধটি সবসময় জাগ্রত থেকেছে। অণুগল্পের ভেতর-বাহিরের জ্ঞান অর্জন করেছেন। সেই জ্ঞান দিয়ে তিনি ইতোমধ্যে অণুগল্পের প্রচার প্রসার এবং বাংলা সাহিত্যের একটি নবতর শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন।
রাজহাঁস ও অন্যান্য অণুগল্পের সফলতা কামনা করছি।
-বিলাল হোসেন
রাজহাঁস ও অন্যান্য অণুগল্প
একটা বিড়াল ছানা
কিভাবে সবার মন জয় করে একটা পরিবারের সদস্য হিসাবে নিজেকে মানিয়ে নেয় তাই প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই গল্পে।
ক্লাস সিক্স পড়ুয়া নীলার বাবা বাদামী রংয়ের ঠোঙায় করে কদম ফুলের মত একমুঠ পরিমান বিড়ালছানা নিয়ে এলেন। সেই সুন্দর বিড়ালছানার মজার মজার সব কান্ডকারখানা এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। বিড়ালের নামকরণ বিশ্লেষণ, মেহমান মুদ্রাদোষ বশতঃ পা নাড়লেই পাক্কা শিকারীর মত বিড়ালছানার সেই পা জাপটে ধরা, বিড়ালের উলের বল নিয়ে খেলা, ক্যালকুলেটর টিপে ভিতরের সংখ্যাগুলোর নড়াচড়া অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখা ইত্যাদি খুটিনাটি কিছুই বাদ পড়ে নি লেখিকার চোখ থেকে। একজন শিশুর চোখেই তিনি পুরো বিষয়টা দেখেছেন।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সুদীর্ঘ কাল চাকরি করার সুবাদে মজার মজার অভিজ্ঞতা তিনি প্রায়ই শেয়ার করেন। লেখিকা বাচ্চাদের চাইল্ড সাইকোলজি বেশ ভালো ভাবেই বুঝেন। গল্প লিখতে গেলে একজন শিশুর চোখেই বিষয়টা দেখার চেষ্টা করেন।
বিড়াল ছানা স্ন্যাফার
লেখক পরিচিতি :
সরদার ফারুক। জন্ম: ৯ই নভেম্বর, ১৯৬২। কপোতাক্ষ নদের তীর খালিশপুরে, পৈত্রিক নিবাস বরিশালের খালিশপুর। পেশায় বিশষজ্ঞ চিকিৎসক। ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বরিশালে ঘাট শ্রমিকদের আন্দোলন, ডেমরায় শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সংগ্রাম ও বাজিতপুরের জেলেদের লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি’ সহ মোট ৭টি।
অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি
সুন্দরীদের উপর একক কোনো মালিকানা থাকে না- কোনো একক যুবকের…
একজন তরুণ ও একজন নারীর সম্পর্কহীন- সম্পর্কে’র, নামটা কী?
নারী’র, কান্না’র, নামটা কী? এ কান্না’র নাম উদ্ধারের দায়় কারো না কারো’র, উপর বর্তায়়। এটা কারো না কারো’র জানার/ জানাবার প্রয়োজন আছে। এজন্যই আমার কবিতা লেখা দিদি…
শরীফ শামিলের এ গল্প গ্রন্থ’র অধিকাংশ গল্প ভালোবাসার তবে অন্যান্য গল্পগুলোও বেশ ভালো। সবশ্রেণির পাঠকদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাবে।
আবু এম ইউসুফ
প্রকাশক
ভালোবাসার গল্প
প্রেমের গল্প
—একটা লতা চাই, যাকে বেয়ে বেয়ে নিচে নামতে পারি। তুই হবি সেই লতা, বল?
এই বলে চোখের দিকে তাকিয়ে রইল সূর্য। যার দিকে সে তাকিয়ে ছিল তার মাথায় দুই বিনুনি। চোখে কাজল। লম্বা গলা আর তিরতির করে কাঁপতে থাকা নাকের বাঁশি। থুঁতনিতে তিল।
সূর্য থুঁতনি ধরে আবার বলল—এই লতা, তুই আমার লতা হবি?
বিকেলের আলো যাই যাই করেও যেন যেতে পারছে না, লতা কি বলে, সেটা সে দেখবে—দেখবেই। ছাদের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল বিন্দুপাখি। প্রশ্নটা তাদের কানেও পৌঁছেছিল কি না কে বলবে—কিন্তু তারা অনেকখানি নেমে এল নিচে। তারপর আরও কত জায়গায় কুজায়গায় যে প্রশ্নের এই রেশ চলে গিয়েছিল বিকালবেলাটি তার হিসাব দিতে পারবে না। যেমন—লতাদের ছাদের একপাশে কবুতরের ঘর। তাদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দিল। পুবকোণার দেয়ালের পাশে কয়েকটি সন্ধ্যামালতি ফুটব ফুটব করছিল কিন্তু সূর্যর প্রশ্নে লতা কি উত্তর দেয় তা শোনার জন্যে আগেভাগেই ফুটে গেল।
সূর্য থুঁতনি ধরেই ছিল। লতা মুখ নিচু করেই ছিল। ছাদের ভেতরে এত বাতাসের যাওয়া আসা তবু লতার গরম লাগতে লাগল। নাকের ডগায় চিকচিক করতে লাগল ঘাম।
ধীরে ধীরে চোখ তুলে লতা যখন কথা বলবে, হয়েছে কি, গলা দিয়ে আর কথা বের হয় না। জিব শুকিয়ে গেছে। গলা দিয়ে ফিসফিসানো শব্দ বের হল। আর সেই শব্দের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে—সূর্য ভাইয়া! আমার খুব ভয় করে।
সূর্য কলেজ। লতা নাইন। কিন্তু এই মুহূর্তে সূর্য যেন আরও বড় হয়ে গেল। ভয় করে? আমি ত আছি।
বলে লতাকে বুকের ভেতরে লুকিয়ে ফেলল।
সিঁড়ির কাছে চামেলি ফুলের ঝাড়। ঝাড়ের ভেতরে অন্ধকার। অন্ধকারের ভেতরের কে ফুঁপিয়ে উঠল—
পাতা। লতার বোন। হাতে ধরা প্রেমপত্র। সূর্য ভাইয়া—I Love You।
যুগলবন্দী
ভূমিকা-
কবিতার ভিতর দিয়ে বহুবিধ বহুকালের অমীমাংসিত জটিল সমীকরণের সমাধান খুঁজে চলা কবির নাম সালাহউদ্দিন সালমান, কবি যেন কলমের ডানায় আর খাতার বাতিঘরে লুকিয়ে রাখে বেঁচে থাকার মৌলতম রসদ, তার কবিতায় পাঠক খুঁজে পায় অনন্য স্থির নির্ভেজাল ধনাত্মক-ঋণাত্মক ডান বাম, ভালো মন্দ সুখ দুঃখ, অনুভূতি চিন্তা ভাবনা বোধের শৈল্পিক নিরপেক্ষতা। মানুষের সাধ্যাতীতের বিপরীতে কবি তার কবিতায় ফুটিয়ে তুলে নরম জীবনের কারুকাজ, কবি তার কবিতায় দ্রোহের রক্ত নিয়ে আলো খুঁজে অসম্ভব অনিশ্চয়তার নিঃসীম অন্ধকারে, তার একেকটি কবিতা মূর্তিমান জীবনের একেকটি দীর্ঘশ্বাস, সমাজ সংস্করণে এই জীবনমুখী কবির কবিতা যেন প্রয়োজনীয় বিদ্রোহের প্রতীক। কবির প্রেমময় কবিতাগুলো যেনও প্রেমিক প্রেমিকার বুকপকেটে ভরে রাখা কখনো কালো মেঘের আহাজারী, কখনো শূন্যতার নিঠুর মহামারী, আবার কখনো কখনো চালচুলোহীন স্বপ্নাতুর লালিত সঞ্চয়ের সমুদ্রখচিত বিশাল আকাশ। কবির একটি কবিতা পড়েছিলাম পোড়ামাটি নামক- শুইয়ে থাকা নীরব জ্যোৎস্না কে ছুঁতেই /নিজের ছায়া ছুটে চলে অন্ধকারের দিকে/ মেঘঘন আকাশের ফিকে বিছানায়/অগণিত জোনাকিদের সদ্য ঘুম মুখে/আঙুল রাখতেই খলবলিয়ে উঠে নিস্তরঙ্গ নদী/ ভাঙি দ্রোহ আর আকাক্সক্ষার জড়ানো ইমারত/ অনিবার্য পিপাসা ফুরায় অন্তর্গত অভিবাসী জলে/ অবাধ্য হাতের অকুতোভয় আঙুলগুলো বোটা ছুঁতেই/ অঝোর আষাঢ় আসে থই থই লুণ্ঠিত হয় ঘরবাড়ি/ ঘাম শুকায় ঘামে কাঁচা দেহ হয় পোড়ামাটি/ -সশরীরে দেখে মনেই হবে না সালাহউদ্দিন সালমান এমন অসংখ্য কবিতার কবি, কবির নিজের একটি উক্তি আছে কবিতাকে নিয়ে কবি প্রায় বলেন-কবিতা সত্য সুন্দর স্বপ্নিল জীবনের সাথে চলে আমরা কবিতার সাথে চলি। বিশ্বব্যাপী কবিতার মিছিলে কবি সালাহউদ্দিন সালমান এর উজ্জ্বল পদচারণ তারই দৃপ্ত প্রমাণ।
পকেট সেলাই করি ছেঁড়া জামার
Dwitiyo Shrabone Prothom Kadam
অলীক ভবিষ্যতে নির্জন অতীত
একদিন হয়তো নিতান্তই খেয়ালের বশে
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে আত্মহারা হবো
উল্লাসে উদ্ভাসিত মন তখন আরবী ঘোড়া
দিক্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে যাবে অলীক ভবিষ্যতে।
আমার যত গান সুর হারিয়ে কাঁদবে
তার বেদনার মর্মধ্বনি বাজবে না কারো বুকে
বাণীগুলো তখন আবেদনহীন এতিম সন্তান
কোথায় গিয়ে আত্মাহুতি দিতে গিয়ে লাঞ্ছিত হবে।
ওজনের স্তর কমে গিয়ে যেদিন আকাশ বিবর্ণ হবে
সেদিন তো খোঁজ করে পাবে না আর
কোনো বিফল কবির মৃত আত্মাকে
তার চেয়ে বরং নির্জন অতীতেই করুক বসবাস।
০৬.০৭.২০১৯
অলীক ভবিষ্যতে নির্জন অতীত
সম্পাদকীয়-
শিল্পী গোষ্ঠীর সমাজ-সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন
শিল্পী ও সাহিত্যিকদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধভাবে একমাত্র নান্দনিক সৃজনের ঘেরাটোপে বন্দী না থেকে সমাজে বসবাসের শর্তাবলী ও পরিবেশ একজন শিল্পী ও সাহিত্যিক’কে অন্য যে কোন সচেতন নাগরিকের মতোই একান্তভাবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে উৎসারিত ও গৃহীত সকল মতামত প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে তাঁর কাজে প্রকাশ করতে দেখা যেতে পারে। বিশেষতঃ একজন শিল্পী ও সাহিত্যিক পরিবেশ ও সমাজের ক্ষেত্রে গভীরভাবে সংবেদনশীল হওয়ার কারনে তাদের সৃজনশীল কাজে ও রচনায় সমাজের রীতি-নীতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির ভাল-মন্দ এবং দোষ-গুণের প্রতিফলন থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না বরঞ্চ এই থাকাটাই যেন স্বাভাবিক। কিন্তু রাষ্ট্র মত প্রকাশের ক্ষেত্রে নানা রকম সীমা বেঁধে দেয়। এসব সীমার মধ্য থেকেই শিল্প চর্চার বিভিন্ন মাধ্যম ও অবলম্বনের সাহায্য নিয়ে একজন শিল্পী অথবা সাহিত্যিকের যেমন প্রচ্ছন্নভাবে নিজের মতটি প্রকাশ করার প্রচেষ্টা থাকে তেমনই আবার শিল্পী-সাহিত্যিকবৃন্দ দ্রোহী হয়ে মত প্রকাশের ফলে রাষ্ট্রের অথবা কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর কোপানলে পড়ে নির্যাতিত হওয়া এমনকি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির হাতে তাদের সহিংস আক্রমণের শিকার হতেও আমরা দেখেছি।
তাই, এখানে প্রশ্ন এটা নয় যে, শিল্পী ও সাহিত্যিকদের সৃজনশীল কাজে ও রচনায় সমাজের রীতি-নীতি, পরিবেশ, অর্থনীতি ও রাজনীতির ভাল-মন্দ এবং দোষ-গুণ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ অথবা প্রচ্ছন্নভাবে তাদের ব্যক্তিগত মতামতের প্রতিফলন থাকবে কি-না? বাস্তবে প্রশ্নটা হচ্ছে সামাজিক-রাজনৈতিক এবং পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে রাষ্ট্র ও জনগণকে সচেতন করা এবং সেসব সমস্যা দূর করার জন্য সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিল্পী ও সাহিত্যিকদের ভূমিকা কীভাবে নির্ধারিত হবে? বরঞ্চ, প্রশ্নটা দুটো হচ্ছে-
ক. শিল্পী ও সাহিত্যিকবৃন্দ নিজেরাই কোন সামাজিক সংগঠন করবে কি-না অথবা পেশাজীবীদের অন্য কোন বৃহত্তর সামাজিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হবে কি-না? এবং
খ. স্রেফ শিল্পীদের নিজস্ব অথবা অন্য কোন বৃহত্তর সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে সমাজের কোন ন্যায্য দাবী অথবা সমাজের কোন বাস্তব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পরিচালিত রাজপথের আন্দোলনে ফেস্টুন-ব্যানার নিয়ে নিজেরা সম্পৃক্ত হবে কি-না? এবং
গ. যদি শিল্পী ও সাহিত্যিকবৃন্দ নিয়মিতভাবে কোন সামাজিক সংগঠনমূলক কার্যক্রমে সক্রিয় হয়ে যায় এবং সামাজিক ইস্যুতে রাজপথের আন্দোলনে নেমে পড়ে অথবা সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হয়ে যায় তাহলে সময় ও মনোসংযোগ দ্বিধান্বিত হয়ে বাধা পড়ে শিল্প ও সাহিত্য চর্চার মান ও গুণাগুণের ক্ষেত্রে শিল্পী ও সাহিত্যিকেরা কোন ক্ষতি বা সমস্যার সম্মুখীন হবে কি-না?
এখানে উল্লেখ্য যে, অন্য সামাজিক সংগঠনের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা অথবা সংহতি প্রকাশ, ঘড়ে বসে শিল্পী-সাহিত্যিকদের নিজস্ব সংগঠন করা অথবা ফেস্টুন ব্যানার নিয়ে রাজপথে নেমে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া ইত্যাদী নানা উপায়ে একজন শিল্পী অথবা সাহিত্যিকের পক্ষে সামাজিক আন্দোলনের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। একজন শিল্পী অথবা সাহিত্যিক সামাজিক আন্দোলনের সাথে কীভাবে যুক্ত হবেন সেটা একান্তভাবেই তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এবং এটাও বাস্তব সত্য যে একজন সংবেদনশীল ও সচেতন শিল্পী অথবা সাহিত্যিক ন্যায্য দাবী ও বক্তব্য নিয়ে পরিচালিত চলমান সামাজিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তায় আবদ্ধ হয়ে কোনভাবেই নিষ্ক্রিয় এবং নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না।
১৯৬৯ এর গণভ্যুত্থান অথবা ১৯৭১ এর মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলিতে শিল্পী সমাজের সদস্যবৃন্দকে সংগঠিতভাবে ফেস্টুন-ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে-সংগ্রামে-মিছিলে যুক্ত হতে আমরা দেখেছি। ৭১’এর স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে এমনকি প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে নিয়ে শিল্পী ও সাহিত্যিকদের মুক্তিযুদ্ধে সংযুক্ত হতে আমরা দেখেছি। এর পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও শিল্পী ও সাহিত্যিকেরা বিভিন্নভাবে সংগঠিত হয়েছেন। এসব আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র।
স্বাধীনতার পর শিল্পী ও সাহিত্যিকদের যেসব সংগঠন গঠিত হয়েছে সংগঠনভেদে সেগুলোর মূল লক্ষ্যই ছিল জোটবদ্ধভাবে শিল্প চর্চা, আলোচনা-সমালোচনা, শিল্পের প্রচার-প্রসার, পরোক্ষভাবে ব্যক্তির প্রচার ও প্রসারলাভের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা থেকে বিপণন কৌশল অবলম্বন করা পর্যন্ত। তাছাড়া, রাষ্ট্রীয়, সরকারী অথবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, সংবাদ-মাধ্যম, কর্পোরেট অথবা নন-কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পদক-পুরস্কার অথবা আনুকূল্য লাভের জন্য এসব কোন কোন ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংগঠন ও জোটের তৎপরতার সুযোগ গ্রহণ করতেও আমরা দেখেছি। শিল্প ও সাহিত্যকেন্দ্রিক নানা তৎপরতা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও এসব সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে সৃজনশীল অথবা মননশীল শিল্পগুণের মান ও রুচির উৎকর্ষতা লাভের ক্ষেত্রে এসব সংগঠন বিশেষ কোন অবদান রাখতে বিশেষ কোন সাহায্য করেছে বলে এরকম উদাহরণ পাওয়া যায় না। দলীয় অথবা ব্যক্তিগত লাভালাভের বিষয়গুলো সেখানে খুবই নগ্নভাবে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে এবং যার ফলে দেশে মাঝারী মানের শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতাই হয়েছে অত্যন্ত অধিকহারে। অন্যদিকে প্রচার, প্রসার ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মৌলিক, মননশীল ও উচ্চতর মানসম্পন্ন শিল্প ও সাহিত্যকর্ম পাঠকদের কাছে ব্যপকভাবে পৌঁছানোর সুযোগ লাভ করতে পারেনি। এবং যার ফলে সত্যিকার প্রতিভাবান শিল্পী ও সাহিত্যিকেরা হতাশা থেকে প্রচারবিমুখতা ও আত্মকন্দ্রিকতার ক্ষুদ্র গ-ির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে বিস্মৃতির অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া, রবীন্দ্র-নজরুলের সাহিত্য চর্চা ও গবেষণা এবং তাঁদের সাহিত্যকর্মকে আধুনিক শিশু-কিশোর ও তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য দেশে কয়েকটি সরকারী-বেসরকারী সংগঠন কাজ করছেন। কিন্তু, রবীন্দ্র-নজরুলের সাহিত্যকর্মের আক্ষরিক পঠন ও মুখস্থ করার উপরই এসব সংগঠনকে বেশী জোর দিতে দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের মাঝে যে মানবিক চেতনা ও যে দার্শনিক নির্যাস রয়েছে তার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের সাথে অধিকহারে দেশের শিশু-কিশোর ও তরুণদের পরিচয় করিয়ে দেয়া খুব জরুরী। কেননা এতে করে দেশের নতুন প্রজন্মের মনের মাঝে মানবিক চেতনা ও সুন্দর রুচিবোধ স্থান করে নিতে পারে। এসব বিবেচনা করে রবীন্দ্র-নজরুলের সাহিত্য চর্চা ও গবেষণার জন্য যেসকল সংস্থা ও সংগঠন কাজ করছেন সেসকল সংগঠন দক্ষতার সাথে তাঁদের কাজের পরিধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে চলুক- এটাই প্রত্যাশা করি।
প্রথম থেকেই শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, অনুপ্রাণন, ব্যক্তি, দলীয়, গোষ্ঠী অথবা কর্পোরেট তৎপরতার বাইরে নিজের স্বাধীন অবস্থান রক্ষা করে দেশের নবীন ও তরুণ প্রতিভাবান শিল্পী ও সাহিত্যকদের পরিচ্ছন্ন ও মানসম্পন্ন শিল্প-চর্চার জন্য অনুপ্রেরনা যুগিয়ে এসেছে। সপ্তম বর্ষে পদার্পন করে ‘অনুপ্রাণন’ অবিচলভাবেই ঐ ঘোষিত পথেই তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চায়। অনুপ্রাণন-এর মূল পৃষ্ঠপোষক অনুপ্রাণন-এর পাঠকেরাই। তাই, বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সপ্তম বর্ষে পদার্পণ করতে পেরে অনুপ্রাণন-এর লেখক এবং পাঠকেরা অবশ্যই বিশেষ অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য।
সপ্তম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা
সম্পাদকীয়, নবম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা-
কবি ও কবিতার অনুপ্রাণন—
সূচনা লগ্ন থেকেই শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন, সাহিত্যের এই বিশেষ শাখা অর্থাৎ কবিতা বিভাগটির উপর বিশেষ যত্ন দিয়ে এসেছে। কেননা সাহিত্য রচনায় কবিতাই একমাত্র শাখা যেখানে কবির অন্তরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠা অনুভূতিটি উপচে বের হয় কবিতায়। যেখানে কোনো প্লট-পরিকল্পনা বা পূর্বপ্রস্তুতির চিহ্ন খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। হতে পারে কবির সেই কথাগুলো নির্গত হয়েছিল কোনো অস্থির অথবা কোনো বেদনার অথবা কোন শান্ত-সমাহিত ধ্যানের মুহূর্তে। হৃদয় মথিত কোনো নান্দনিক অথবা কোনো মানবতবাদী ভাব সৃষ্টি ও রচনার গভীর অনুপ্রেরণায়। কিন্তু স্বতস্ফুর্তভাবে নির্গত শক্তিশালী কোনো অনুভূতি যে কোনো আকারে প্রকাশিত হলেই কী সেটা কবিতা হয়ে উঠতে পারে? কবিতা—সাহিত্য রচনাশৈলীর এমনই একটি বিশেষ ধারা যেখানে শব্দ ও ছন্দ পার¯পরিকভাবে ক্রিয়াশীল থাকতে দেখা যায়। কবিতায় শব্দগুলো একসাথে জুড়ে থেকে কোনো প্রকার উচ্চারণ, ধ্বনি, চিত্র অথবা চিন্তার প্রকাশ ঘটাতে থাকে যা কি-না সরাসরি বর্ণনা করতে গেলে হতে পারে অনেক জটিল অথবা বিমূর্ত। কবিতা রচনায় প্রচ্ছন্ন থাকে ছন্দ ও মাত্রা অর্থাৎ অক্ষর অথবা শব্দাংশের সংখ্যার সম্মিলন অথবা বিন্যাস। কিন্তু, কবিতার এসব গঠন প্রক্রিয়া সবসময় সচেতনভাবে কতটুকু কবির মনে ঘটে থাকে, সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুমান করা কঠিন।
বাংলা ভাষার হাজার বছরের ইতিহাসে সাহিত্যের আরম্ভ অনেকটাই গীতিকবিতা দিয়েই। যেখানে উচ্চারণ ও ছন্দের মিলের সাথে যুক্ত ছিল সুর। বিষয়বস্তুতে গভীর ব্যক্তি অনুভূতির থেকে অগ্রাধিকার পেল সামাজিক-রাজনৈতিক কাহিনী। কেননা, তখন সমাজই ছিল সব, ব্যক্তির অস্তিত্ব একপ্রকার ছিল না বললেই চলে। তাই সেসব কাহিনীতে ছিল সমাজ ও রাজনীতি, ক্ষেত্রবিশেষে শাসকের গুনকীর্তন আবার ক্ষেত্রবিশেষে প্রথা-প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা, রোমান্টিক প্রেমের জনপ্রিয় আখ্যান, যৌনতা, অথবা বীরের শৌর্য-বীর্য, জন্ম-মৃত্যু, প্রেম অথবা বিবাহ।
চর্যাপদ দিয়েই বাংলা কবিতার গোড়াপত্তন। চর্যাপদ কতগুলো আশ্চর্য বিপরীতধর্মী কবিতার সমাহার। তাই চর্যাপদের আরেক নাম—চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়। চর্যাপদে বর্ণিত সাধন তত্ত্ব, তৎকালীন বাংলার সমাজ জীবনের চিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশের অপরূপ বর্ণনা, সকলই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে প্রমাণিত ও গৃহীত। কিন্তু, চর্যাপদের ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধীতা, অভিজাতদের ধর্মদর্শন ও ধর্মানুষ্ঠানের প্রতি বিদ্রুপ উচ্চারণ ইত্যাদী’তে লোকায়তিক বৌদ্ধ ও জৈনরা যে সেই খ্রিস্টপূর্ব থেকেই ব্রাহ্মণ্য-বিধানকে অমান্য করে এসেছে, তারই কতক প্রতিচ্ছবি মেলে চর্যাপদের কোনো কোনো পদ্যে। বাঙালি জাতিসত্ত্বার মূলে রয়েছে—হিন্দু লৌকিক, বৌদ্ধ লৌকিক, ইসলাম লৌকিক; এরকম সকল লৌকিকগণ। এই লৌকিক অনভিজাত বা প্রাকৃত বাঙালিই হচ্ছে প্রকৃত বাঙালি। আঠারো শতক পর্যন্ত রচিত সাহিত্য এই প্রাকৃত বাঙালির উপভোগ্য ছিল। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, বিভিন্ন মঙ্গলকাব্য, বাংলায় রূপান্তরিত রামায়ণ-মহাভারত-ভগবত, বৈষ্ণব পদাবলি, চৈতন্যের জীবনী, রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান, ইত্যাদী সকল সাহিত্যের ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য। সে সময়ের লোকসাধারণের কবিরা এই ‘লৌকিক করিয়া’ ‘লৌকিকের মতে’, মূলধারায় কবিতা তথা সাহিত্য রচনা করতেন।
কিন্তু তারপর পরে একটি দীর্ঘ ছেদ। বাংলা সাহিত্যে কথিত অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়ে বড়ু চণ্ডীদাস নিয়ে আসেন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। এ কাব্যে রাধা-কৃষ্ণের প্রণয়লীলাচ্ছলে জীবাত্মা-পরমাত্মা লীলা লীলায়িত হলেও মধ্যযুগের শুরুতে একাব্য অনবদ্য ভূমিকা রাখে। তবে মধ্যযুগ বিশেষভাবেই বিখ্যাত মঙ্গলকাব্যের জন্য। প্রায় পাঁচশ বছর ধরে বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন শ্রেণির মঙ্গলকাব্য রচিত হয়েছে। যদিও মঙ্গলকাব্যগুলোর রূপ প্রায় একই রকম। কতিপয় মঙ্গলকাব্যে কবিতার ভারী যাদু থাকলেও সবচেয়ে বেশি ছিল সমকালীন সামাজিক জীবনের বোধ ও পরিচয়। বাংলাদেশের মধ্যযুগের ইতিহাস জানতে হলে মঙ্গলকাব্য অবশ্যপাঠ্য। বৈষ্ণব পদাবলি আমাদের স্বপ্নে বিভোর করে। বৈষ্ণব পদাবলির পাত্র-পাত্রী কৃষ্ণ-রাধাকে কেন্দ্র করে যে কবিতাগুলো রচিত হয়েছিলো সেগুলো বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
রাজসভায় রচিত হলেও মধ্যযুগের সাহিত্য কেবল অভিজাতদের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকেনি। মধ্যযুগে সামাজিক বৈষম্য প্রকট থাকলেও, পুরোহিত-মোল্লাদের দাপট থাকলেও, অভিজাত কর্তৃক উৎপীড়ন থাকলেও, সে যুগের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বাংলার প্রাকৃতজনেরই প্রাধান্য ছিল। যারা আমাদের সাহিত্যের ইতিহাসবিদ, তাদের অনেকের মতে, মধ্যযুগের সর্বশেষ কবি হলেন ভারতচন্দ্র আর আধুনিক যুগের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন। মাঝখানে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত হলো ‘যুগসন্ধির কবি’।
মধ্যযুগের বিদায়ী দামামা বেজে ওঠে, যখন ১৭৫৭-তে আমরা স্বাধীনতা হারাই। বণিক শাসক হয়। অনেক পরিবর্তনের সাথে সাথে সাহিত্যের পরিবর্তন বা পতন ঘটে। ভারতচন্দ্রের রচনায় দেখা যায় পতনের ছাপ। বলা হয়ে থাকে ১৭৬০ থেকে ১৮৩০ এই সত্তর বছর বাংলা সাহিত্যের পতন ঘটেছিল। সে সময় কবিয়াল ও শায়েরদের উদ্ভবে এক নিম্নরুচি সম্পন্ন সাহিত্য রচিত হয়। অর্থাৎ, কবিগান। কবিগানকে গর্ব করার মতো সাহিত্য বলতে অনেকে নারাজ। কবিয়াল ও শায়েররা বিকিয়ে গেলেও কোনো কোনো কবিগান বা শায়েরি আজো বাংলার প্রাকৃতজনের মনে শেকড় গেড়ে আছে সেসবের অনবদ্য ছন্দ ও সুরের নান্দনিকতার কারণে।
বাংলা কবিতায় আধুনিকতা আনেন মাইকেল মধুসূদন। মহাকাব্য রচনা করে বাংলা কবিতার রূপ বদলে দেন। শুধু তাই নয় তিনি বাংলা পয়ারকে এক নতুন রূপে উপস্থাপন করেন। ব্যবহার ক্লান্ত ছন্দরীতিকে মধুসূদন করে তোলেন প্রবাহমান (অমিত্রাক্ষর)। এর আগে অবশ্য ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কবিতায় আধুনিকতার হাল্কা আলোকচ্ছটা দেখা যায়। তবে মধুসূদন একাই এক ধাক্কায় বাংলা সাহিত্যকে অনেক এগিয়ে দিয়ে গেছেন। মধুসূদনের দেখাদেখি অনেকে (হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, কায়কোবাদ) মহাকাব্য রচনার চেষ্টা করেন। কিন্তু, শেষপর্যন্ত ওগুলো মহাকাব্য না হয়ে আখ্যানকাব্য হয়ে ওঠে।
বাংলা কবিতায় মহাকাব্যের ধুমধাম চলাকালে রোমান্টিকতা নিয়ে উঁকি দেন বিহারীলাল। বাংলা কবিতার তিনি-ই প্রথম রোমান্টিক ও খাঁটি আধুনিক কবি। রবীন্দ্রনাথ যাকে ‘ভোরের পাখি’ বলেছেন। আত্মভাবপ্রধান কবিতার জন্ম বিহারীলালের হাতে হলেও বিকাশ ঘটে রবীন্দ্রনাথের হাতে। অগ্নিকুণ্ডে পতঙ্গ পতনের মত বিহারীলাল চলে গেলেও তার কবিতার পথ ধরে আসে—সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ সেন, গোবিন্দচন্দ্র দাস, অক্ষয়কুমার বড়াল, ডিএল রায় ও রবীন্দ্রনাথ। প্রথম মহাযুদ্ধের মাধ্যমে বদলে যাওয়া ইউরোপীয় চেতনার প্রভাব পড়ে আমাদের জীবন ও সাহিত্যে। দু’দণ্ড দেরিতে হলেও সেই প্রভাব আমাদের কবিতায় এসে ভালভাবেই পড়ে। আধুনিক কবিতাগুলো বিশশতকের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হয়ে ওঠে।
বিশশতকের গোড়ার দিকে বাংলা কবিতায় রবীন্দ্র-যুগ চলাকালে রবীন্দ্রাগুনে পুড়েছেন অনেকেই। তবে রবীন্দ্র-বলয় থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টাও করেছেন অনেকে। তাদের মধ্যে মোহিতলাল, যতীন্দ্রনাথ বিশেষ করে কাজী নজরুল ইসলাম। যিনি একইসাথে প্রেম ও দ্রোহের কবি। তার কবিতায় যেমন বিদ্রোহ আছে তেমনি আছে কৈশোরিক প্রেমের কাতরতা। বিশ শতকের তৃতীয় দশকের মাঝামাঝি সময়ে আধুনিক কবিতার রমরমা হাট বসে বাংলা সাহিত্যে। বাংলা কবিতায় বাঙালির প্রথাগত বিশ্বাস, সুন্দর, কল্যাণ, আবেগ, স্বপ্ন, সুখ-দুঃখ ও কাতরতা বিসর্জন দিয়ে আধুনিক কবিগণ নগরের কথা ও ক্লান্তি, অবিশ্বাস, নিরাশার কথা ফুটিয়ে তোলেন কবিতায়। কবিতায় পাল্টে যায় বাঙালির চেতনা। বুদ্ধদেব, জীবনানন্দ, সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু ও অমিয়, এই পাঁচজন কবিকে রবীন্দ্রনাথের পর আধুনিক কবিতা সৃষ্টিকারী বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু তারপর অচিরেই এই পঞ্চকবিকে অনুসরণ করে আসলেন সমর ও সুকান্ত।
সাহিত্যে রক্ষণশীলতা ও প্রগতিশীলতা মুখোমুখী দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় প্রায়শই। বিশ শতকের গোড়াতেই আধুনিক সাহিত্যকে অশালীন বলে গালিগালাজ করে প্রবন্ধ ও বই ছাপেন ঊনিশ শতকের বিভিন্ন রক্ষণশীলেরা। আসলে সাহিত্য কখনো অশালীন বা অশ্লীল হয় না। বিশেষ করে কবিতা। কবিতায় সব বলা যায় সব রকম ভাবে। এছাড়া অশ্লীল কথাটি আপেক্ষিক। শ্লীল-অশ্লীল নিয়ে বাগ-বিতণ্ডা না করে বরং সাহিত্যকে নিরপেক্ষ মন ও মননেই দেখা উচিত। ইতিহাস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যখনই রাষ্ট্রযন্ত্র বা শাসকশ্রেণি সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ওপর শাসন-শোষণ, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তখনই যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখচ্ছবি, অর্থাৎ কবি-সাহিত্যিকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন কবিতা অথবা নানা ধরনের গদ্য রচনার মাধ্যমে। যে সাহিত্যগুলো নানাভাবে বিভিন্ন আন্দোলনেও প্রেরণা জুগিয়েছে। ঊনবিংশ শতককে কখনো বলা যায় বাংলা গণসংগীতের স্ফুরণকাল। সেভাবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও দেশ ভাগের পর পাকিস্তানি শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিভিন্ন আন্দোলনের হাত ধরে রচিত হয়েছে বহু প্রতিবাদী সাহিত্য, কবিতা ও গণসংগীত। পাকিস্তানিরা প্রথম যখন আমাদের ভাষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানলো, শুরু হলো আন্দোলন। মাহবুব উল আলম চৌধুরী লিখলেন একুশের প্রথম এবং অমর এক কবিতা—‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসীর দাবী নিয়ে এসেছি’। তবে একুশের প্রথম কবিতাটি ইতিহাস থেকে প্রায় হারিয়েই গেছে। অর্থাৎ, হানাদারদের বহু হয়রানি ও তল্লাশির দাপটে কবিতাটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারিসহ কবির বাসা কয়েকবার সার্চ করে লুকানো দু’একটি কপি পর্যন্ত নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে কবিতাটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে শহীদ আসাদের শার্ট নিয়ে লিখলেন শামসুর রাহমান, যা আন্দোলনকে বেগবান ও সফল করে তুললো। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রচিত হয়েছে বহু প্রতিবাদী ও প্রেরণাদীপ্ত কবিতা, সাহিত্য এবং গণসংগীত। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্মলেন্দু গুণ সামরিক শাসনের কড়া পাহারার মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে (১৯৭৭) বীরদর্পে পড়ে শোনালেন তার অগ্নিঝরা কবিতা—
“সমবেত সকলের মত আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেই সব গোলাপের একটি গোলাপ
গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায়
শেখ মুজিবের কথা বলি।”
নির্মলেন্দু গুণ-ই প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কবিতার বিষয় করে তুললেন। তারপর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখলেন জসীমউদ্দীন, সুফিয়া কামালসহ আরো অনেকে। অর্জুনের মত বীর সময় দোষে নপুংসক সাঁজলেও কবি কখনো তেমনটি হয় না বা হওয়া উচিত না। কবি হবে মজলুম, প্রয়োজনে নির্বাসিত। বলবে মানুষের (সংখ্যাগরিষ্ঠ) কথা, মানবতার কথা। রুদ্র পেলেন বাতাসে লাশের গন্ধ আর তসলিমা সব বয়স্কা বালিকাদের গোল্লা হতে ছুটে বেরুনোর আহ্বান জানালেন কবিতায়। তারপর ’৯০-এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত হয় কিছু প্রতিবাদী কবিতা ও গণসংগীত।
ইতিহাসের একটি বিশ্লেষণে প্রতিভাত হয় যে, ’৯০-এর দশকের পর থেকে কবিতার পাঠক সংখ্যায় যেন ভাটা পড়েছে। ইদানীং কবি দেখলেই বলাবলি শুরু হয়—কবিতার এখন আর দিন নেই, কবিতা এখন পাঠক খায় না, কবিতার বই বাজারে কাটে না ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এখানেই ব্যাখ্যার অবকাশ রয়েছে যে তথাপি কবির সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে বৈ কমছে না। বিশেষতঃ কবিতা প্রকাশ করতে এখন আর প্রকাশকের পেছনে লাইন দিতে হয় না। চাইলেই ফেসবুক ওয়ালে কবিতা ছুড়ে দেয়া যায়। হাইকোর্টের সামনে থেকে মূর্তি সরানো ও অন্যত্র স্থাপন নিয়ে এখনি সহস্র কবিতা ছুড়ে দেয়া যায়। এখন মিনিটে মিনিটে রচিত হচ্ছে কবিদের ভ্রুণের চেয়েও বেশি সংখ্যক কবিতা। প্রযুক্তির কল্যাণে কবি ও কবিতার পাঠক এখন একবারে মুখোমুখী দণ্ডায়মান। এটা ভাল। কিছুদিন পূর্বেও যেটা সম্ভব ছিল না খুব বেশি। শাসন-শোষণ, অত্যাচার-নির্যাতন বা আগ্রাসন কি এখন হচ্ছে না? তবে আমরা সে রকম কোনো কবিতা পাচ্ছি না—কিন্তু কেন?
আজকাল কবিতার বিষয় কী কী, সেটা কিন্তু আমরা হাতের মুঠোয়-ই দেখতে পাচ্ছি। আমরা আজ যা হাতের মুঠোয় দেখতে পাচ্ছি তা যদি নজরুল আগেই বলে যেতে পারেন তার কবিতায়, তাহলে কী আমাদের এখনকার কবিগণ আগামী বিশ্ব সম্পর্কে ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাদের কবিতায়, অথবা এর চেয়েও পরবর্তী কিছু। আজকাল কবিতায় নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, বিদ্যমান প্রাকৃতিক পরিবেশের চিত্র কবিতায় কতোটা স্থান পাচ্ছে নিশ্চয়ই চর্যাপদে বর্ণিত বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর এখনকার সৌন্দর্য এক হবে না। মঙ্গলকাব্য পড়ে যদি বাংলাদেশের মধ্যযুগের সামাজিক অবস্থা (ইতিহাস) জানা যায়, তবে আমাদের আজকের কবিদের কবিতা বা সাহিত্যে সমকালীন পঁচনশীল পুঁজিবাদের ভোগসর্বস্ব কায়েমী স্বার্থবাদী ও পাশাপাশি আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি মানসিকতার যে সমকালীন সমাজ বাস্তবতা, সেই সমাজ বাস্তবতার ঠাঁই পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
বাঙালির জমিতে কলের লাঙল পড়েছে, ছনের চাল হয়েছে টিনের এবং সেই চালে বসেছে কাক, শাদা কাক। মোড় নিচ্ছে আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা। নেওয়াটাই হয়তো স্বাভাবিক। সময়কে তো আর অস্বীকার করা যায় না। কালে কালে মহাকাল অবধি কবিগণই মানুষের সমস্ত অনুভূতি কে বাঁচিয়ে রাখে। কবিদের গর্ভেই বাঁচে মানুষ। আমাদের এই কবিসকল কি পারবেন মানুষের মানবিক অনুভূতিগুলোকে কবিতায় বন্দি করে মহাকাল অবধি দীর্ঘজীবন দিতে নাকি ফেসবুক বা প্রযুক্তি নামক কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন কাক ও কাল যত কিছুকেই আমরা আপন করে নিই না কেন? তাতে কোনো দোষ নেই, তবে লৌকিক বাংলার গভীর মানবিক চেতনার স্বকীয়তা কতটুকু বজায় থাকছে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। যে বাংলা সাহিত্যের দেবী চিরকাল কাব্যজীবি, কবিতার স্বাদ ছাড়া সে বাঁচবে কী করে। আমরা কি কবিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি?
নবম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা
‘মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং স্বাধীন দেশ দেখে গেলেন ইমনের মা। কিন্তু স্বাধীন দেশে নিজের বাসায় আর জীবিতাবস্থায় ফিরতে পারলেন না। শেষ নিশ্বাস ত্যাগের পর মায়ের মরদেহটা ইমন সেই কম্বলটি দিয়ে ঢেকে দেয়, যে কম্বলটি সে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছিল। এছাড়া কি-ই বা ছিল তার?
মাকে নেয়া হয় শ্মশানে। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে মাকে হারালো ইমন!
এ পর্যায়ে এসে ইমন চৌধুরী বলে, মায়ের কথা এখনো খুব মনে পড়ে। মা! পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ, সুন্দর এবং পবিত্র একটি শব্দ। যা কিনা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং এই দেশ মাতৃকার মতই যথাক্রমে বিশাল, মহান এবং সুন্দর। একাত্তরে মাকে হারিয়েছি সত্য, তবে পেয়েছি স্বাধীনতা এবং মানচিত্র।
আমার মায়ের স্মৃতির সাথে জড়িয়ে যায় এদেশের জন্মকথাও। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং এদেশটাই এখন আমার মা।’
ময়মনসিংহ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অবলম্বনে রচিত কিশোর উপন্যাসটি নিছক কোনো ডকু-ফিকশন নয়। আশার করা যায়, এটি এমন একটি ফিকশন হয়ে উঠেছে, যা কিশোর উপযোগী পাঠকসহ সব শ্রেণীর পাঠকের উপন্যাস পাঠের আনন্দ দেবে। পাশাপাশি ময়মনসিংহ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কেও ধারণা দেবে।
স্বাধীনতার জন্য
মোঃ জিয়াউল হক; জন্ম : ১৯৮১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দী গ্রামে। পিতা- মোঃ নাছির উদ্দীন, মাতা- মোছাঃ জাহানারা বেগম। পড়াশোনা : এম.এ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)। পেশা : দীর্ঘ এক যুগ ‘গ্রাফিক ডিজাইনার’ ও ‘পেইন্টার’ হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করার পর, বর্তমান পেশা শিক্ষকতা।লেখালেখির হাতে খড়ি হয় ১৯৯৫ সালে। লেখালেখির শুরুটা মফস্বল এলাকার নাট্যপ্রেমী ছেলেদের জন্য মঞ্চ নাটকের কাহিনি রচনার মধ্য দিয়ে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় কবিতা ও ছড়া লেখার চেষ্টা, বহুদিন। সেই চেষ্টা থেকেই ২০০০ সালে প্রকাশিত ‘দৈনিক ঘাঘট’ পত্রিকায় ‘আঁড় চোখে দেখা’ শিরোনামে বিদ্রুপাত্মক ছড়া নিয়মিত লেখালেখি। এই সময় সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুদের সাথে নিয়ে ‘অগ্নিরথ’ নামক একটি অনিয়মিত মাসিক সাহিত্য ম্যাগাজিন সম্পাদনা ও প্রকাশনা কাজেও যুক্ত। কিন্তু ইতিমধ্যে রুটিরুজির জীবনযুদ্ধ শুরু হলে কবিতা-ছড়া বিলিন হয়ে যায় জীবন থেকে।
অন্তর্দাহ
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.