Additional information
Weight | 0.185 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.24 $ 1.65
কিছু কিছু সম্পর্ক থাকে, যার কোনো নাম হয় না; নামকরণও করা যায় না। এই নামহীন সম্পর্কগুলো আয়নায় লাগা জলের দাগের মতো লেগে থাকে। জল দিয়ে সেই দাগ মুছতে গেলে লেগে যায় আরো জলের দাগ। প্রতিবিম্বের গায়ে সেইসব জন্মদাগের মতো চিহ্ন রেখে যায়—সম্পর্ক এমনও হয়।
গ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক নয়। কারো সঙ্গেই কোনো ঐক্য নেই। তবে এ অনৈক্যের মাঝেও এক আন্ত আছে বৈকি! ওরা সকলেই শিরোনামহীন-সম্পর্কে আবদ্ধ।
Weight | 0.185 kg |
---|---|
Published Year |
নাহিয়ান ফাহিম। জন্ম: ২৩শে মার্চ, ১৯৮৪। ময়মনসিংহ জেলা। ঢাকাতে বেড়ে ওঠা। মূলতঃ পাঠক, ফলতঃ লেখক। সাহিত্য পত্রিকা ‘জলমাঝি’র সম্পাদক। মার্কেংটিং বিভাগে স্নাতকোত্তর। পেশাগত জীবনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিনদুপুরের নোটবই’।
মধ্যবিত্ত কবিতা
কাজী রহমান। পরবাসী লেখক নিজের পছন্দ মতো বাঁচতে দু-যুগ আগে মার্কিন মুলুকে চলে আসেন স্ত্রী ও প্রথম শিশুকন্যা সাথে নিয়ে। বড় হয়েছেন পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া’য়। জ্ঞান হবার পরপরই নিজেকে আবিষ্কার করেছেন ঘরের পাশের গ্রন্থাগারে, বিভিন্ন শিশু সংগঠন আর সমাজসেবামূলক সংগঠনের আলোছায়ায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দুরন্ত কিশোর স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখেছেন কাছ থেকে আর আতঙ্কের দিন গুনেছেন সারাক্ষণ মুক্তিযোদ্ধা দু’ভাইয়ের ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। গ্রাজুয়েশন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবন কেটেছে বিদেশী এয়ার লাইন্সের কর্মকর্তা হিসেবে।
তারাধুলো জল ও নস্টালজিয়া
মেঘ অদিতি। কবি ও গল্পকার হিসেবে ‘দু’বাংলাতে পরিচিত। জন্ম: ৪মে, জামালপুর। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘জলডুমুরের ঘুম (কাব্য)’ ‘অস্পষ্ট আলোর ঘোড়া (গল্প)’ ‘অদৃশ্যতা হে অনিশ্চিতি (কাব্য)’ এবং ‘সময় শূন্যতার বায়োস্কোপ (মুক্তগদ্য)।
প্রবেশিধকার সংরক্ষিত
আলী রেজা। জন্ম: ১৯৫৭। মুক্তিযুদ্ধে আলোড়িত কবি, সত্তর দশকে মূলত ছোটকাগজে লেখালেখি শুরু করেন। সদ্য অবসরে যাওয়া একটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক। এটি কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
আলী রেজা
হাসানআল আব্দুল্লাহ। জন্ম: ১৪ই এপ্রিল, ১৯৬৭। গোপালগঞ্জ জেলার গোপিনাথপুর গ্রামে। তিনি প্রবর্তন করেছেন নুতনধারার সনেট। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থর সংখ্যা দশ। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার কবিতার অনুবাদে প্রকাশ করেছেন বিশ্ব কবিতার কয়েকছত্র। অন্যান্য প্রকাশিত গ্রন্থ- সনেটগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা, আঁধারের সমান বয়স, এক পশলা সময় প্রভৃতি। ২০০৭ ও ২০১৫ সালে নিউইয়র্কের কুইন্স শহরের পোয়েট লরিয়েট ফাইনালিস্টের সন্মান পেয়েছেন।
বৃত্তের কেন্দ্রেও কবিতার মুখ
সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব। জন্ম: ১৯৭৮ সালে বরিশাল জেলা সদরে করিমকুটির নামক স্থানে। তার লেখার বিষয় মূলতঃ কবিতা। সময় নাট্যদলের সাথে একযুগ পার করেছেন। গানও লিখতেন কিন্তু বন্ধুবরের প্রয়ানে, অভিমানে আর সেপথ মারাননি। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকলেও নিজেকে একজন কবিতার শতরঞ্জি মোড়ানো শ্রমিক বলেই মনে করেন। এটি কবির প্রথম বই।
রূপোর দ্যুতি
লেখক পরিচিতি :
মোহাম্মদ হোসাইন। জন্ম: ৩১শে অক্টোবর। বিএসসি ও এমএসসি’র শিক্ষা সমাপন শেষে এখন শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত আছেন। লেখকের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ মোট ১১টি। ‘ভালোবাসা নির্বাসনে গেছে’ ‘মেঘগুলো পাখিগুলো’ ‘অরণ্যে যাবে অস্তিত্বে পাপ’ উল্লেখযোগ্য বইয়ের শিরোনাম।
অনুদিত রোদের রেহেল
সঞ্চয় সুমন। ঢাকাবাসী এক কবি। যে শুধু কল্পনার রঙে আঁকে শব্দ খেলার মাঠ। এই গ্রন্থটি কবির প্রথম কাব্যফসল।
গুপ্ত সমরে মুক্তির ঠিকানা
আলতাফ হোসেন-এর জন্ম ২৭ অক্টোবর ১৯৪৯। পৈতৃক নিবাস কিশোরগঞ্জ। বাবার চাকরিসূত্রে শৈশব কৈশোর কেটেছে পাটনা, কলকাতা, চাটগাঁ, করাচি ও ঢাকায়। ১৯৬৪ থেকে পুরোপুরিভাবে ঢাকায় বসবাস। অনার্স ও এমএ করেছেন বাংলায়। আলিয়ঁস ফ্রঁসেস, ঢাকা থেকে দু-বছর ফরাসি ভাষা শিখে সনদ পেয়েছেন।
কফি জেগে থাকে
লেখক পরিচিতি :
হান্নান হামিদ, লেখক নাম কালের লিখন। জন্ম: আগস্ট, ১৯৮৪। জামালপুর। ‘বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস’ লেখকের প্রথম বই।
বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস
ডালিয়া চৌধুরী। তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছেন। কবিতার প্রতি ভালোবাসা থেকে কবিতা লেখার সূত্রপাত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, ‘অনুভবে সুখ’ ‘মেঘময় নিকুঞ্জে রধুন‘ ও ‘জলজ কামনা’।
নীল গোধূলি
লেখক পরিচিতি :
প্রজ্ঞা মৌসুমী। জন্ম: এক শরতে দাদুবাড়ি কুমিল্লায়, বেড়ে ওঠা সুনামগঞ্জে। ঊনিশ বছর থেকে পড়াশুনার জন্যে প্রবাস জীবন। এক এসাইনমেন্টের জন্যে প্রথম ইংরেজি কবিতা লিখার শুরু। প্রথম জীবনের কবিতাগুলো ইংরেজিতেই লেখা, কিন্তু মন আঁকুপাঁকু করে বাংলায় লিখতে; তারই ফলশ্রুতিতে আজকের প্রথম কবিতা ফসল ‘পৌরাণিক রোদ এবং অতিক্রান্ত কাঠগোলাপ’। লেখক কবিতা ও গল্প লিখে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার তাই বাংলা সাহিত্যের অত্যুজ্জল আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করার স্বপ্ন দেখেন অহর্নিশ।
পৌরাণিক রোদ এবং অতিক্রান্ত কাঠগোলাপ
লেখক পরিচিতি :
সাদাত হোসাইন। জন্ম: ২১মে. ১৯৮৪।
তরুণ লেখক, আলোকচিত্রী ও নির্মাতা। যার কবিতার বইটি প্রকাশের আগে উপন্যাস ও ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের কবিতা ভাবনাটা খুব সোজা, কবিতা হচ্ছে এমন এক শিল্প যার মাঝে যখন ইচ্ছে তখন টুপ করে ডুব দেয়া যায়। লেখকের নির্মাণ ÔবোধÕ স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্বাক চলচ্চিত্রটি দেশে বিদেশে যথেস্ট সমাদৃত হয়েছে। ২০১৩ সালে Ôকালচারাল এচিভমেন্টÕ ক্যাটাগরিতে জিতে নিয়েছেন Ôজুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালÕ-এর Ôটেন আইটস্ট্যান্ডিং ইয়াং পারসনস অফ বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ডÕ।
যেতে চাইলে যেও
পিঠে পাহাড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোদ
আমি নিঃস্বতার কাছে যাই
সেখানে মহান শূন্যতারা আছে
বেদনারা নিরালম্ব গাছ
গাছ খুব ভালো মানুষ
বিনয়ে লাম্পট্য নেই
তাই, নিবিড় হতে থাকে
জড়িয়ে থাকে শরীর অপার ঋজুতায়
জোছনাও জড়িয়ে যায় কখনো সখনো
পবিত্র প্রত্যয় মেখে নেয় ভোর
মেঘেদের কি পাঠগৃহ আছে
কিংবা, মৈথুন কাল?
মাছেদের বুক চিড়ে দেখা যেতে পারে
গহনতা নদীর,
শিকড় পুঁতে রেখেছি জলে ও জলসিজে
চিরদিন সেখানে টান, বোধের, গরিমার…!
দূরের ঝাউবন কবিতার মুসাফির
মননশীল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠার সুবাদে কৈশোরের আঙিনা থেকেই কথাশিল্পের সঙ্গে জোৎস্নালিপির সখ্য। শিশুবেলা থেকেই পারদর্শিতা দেখিয়েছেন ধারাবাহিক গল্পবলা, একক অভিনয় এবং আবৃত্তিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছোটগল্প লিখে জিতেছেন পুরস্কার। তখন থেকেই ছোটগল্প লিখে এবং লিটল ম্যাগ ‘ধ্রুব’ সম্পাদনায় বেশ পরিচিতি পান। এরপর জাতীয় দৈনিকগুলোতেও ছোটগল্প, প্রবন্ধ, গবেষণামূলক লেখা শুরু করেন। হঠাৎই একদিন লিখে ফেললেন একটি শিশুতোষ গল্প। ছাপা হলো সংবাদের শিশুসাহিত্য পাতা খেলাঘরে। এরপর নিয়মিত শিশুদের জন্য লিখতে থাকলেন এবং তা প্রকাশিত হতে থাকল দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকগুলোসহ লিটল ম্যাগাজিন এবং শিশুসাহিত্য পত্রিকায়। তার বর্তমান মনোনিবেশের বেশির ভাগ এখন শিশুসাহিত্যে। দৈনিক সংবাদের শিশুসাহিত্য পাতা ‘খেলাঘর’ ও দৈনিক দেশবাংলার ‘ডানপিটেদের আসর’ দীর্ঘদিন সম্পাদনা করেছেন। গবেষণা, সাংবাদিকতা এবং সাহিত্য রচনার পাশাপাশি তিনি একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা। প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান থেকে জ্যোৎস্নালিপি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ছোটগল্প নিয়ে গবেষণা করে। এ ছাড়া, সাংবাদিকতায় রয়েছে তার একটি ডিগ্রি ও দুটি ফেলোশিপ। গণমাধ্যমবিষয়ক ত্রৈমাসিক ‘মুক্তপ্রকাশ’-এর সম্পাদক, ‘দৈনিক সংবাদ’-এর ফিচার সম্পাদক এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘প্রান্তজন’-এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিতি ও প্রেত্নি মিস
অয়ন্ত ইমরুল। জন্ম: ১২ই এপ্রিল ১৯৮৭ইং, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার আজিমনগর গ্রামে। পদ্মা নদীর ভয়াল গ্রাসে শৈশবেই ঠিকানার পরিবর্তন ঘটে বর্তমানে সাভার আশুলিয়ায় বসবাসরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ছায়াসমুদ্র
কামরুজ্জামান কাজল বয়সে অনেক নবীন হওয়া সত্ত্বেও [জন্ম ২৫ মার্চ ১৯৯১] এবং অণুগল্প চর্চায় খুব বেশিদিন অতিবাহিত না করলেও ‘দলছুট শালিকগণ’ নামে যে বইটি প্রকাশিত হল;-এর বৈচিত্র্যপুর্ণ বিষয়বস্তু এবং অণুগল্প সম্পর্কিত ধারণার সাথে লেখকের যে নিবিড় ঐক্য স্থাপিত হয়েছে- বইটির পাঠশেষে এই কথাটাই মনে করবেন বিজ্ঞপাঠকগণ।
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা এই যুবকের ইতিপুর্বে ‘ শ্যাম পাহাড়ের আড়ালে’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৬’র একুশে বইমেলায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগ্রিকালচারে স্নাতক শেষ করে লেখক বর্তমানে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে মাস্টার্স করছেন।
‘দলছুট শালিকগণ’ কামরুজ্জামান কাজলের প্রথম অণুগল্পগ্রন্থ। অণুগল্পের ভিত্তি, বিকাশ এবং প্রচারে এই বইটি একটি মাইলফলক হিসেবে ভবিষ্যতে উচ্চারিত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
দলছুট শালিকগন
সম্পাদকীয়, অনুপ্রাণন–নবম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা
আমরা এখন একটি বৈশ্বিক মহামারি বা অতিমারি কাল অতিক্রম করছি। নভেল করোনা ভাইরাস ২০১৯ যা সংক্ষেপে ‘এনকোভ-১৯’ নামে পরিচিত যা থেকে সংক্রমিত রোগটির নাম বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা দিয়েছে কোভিড-১৯। এনকোভ-১৯ যাকে ব্যাবহারিক সংক্ষেপনে বলা হচ্ছে কেবল করোনা ভাইরাস, অত্যন্ত ছোঁয়াচে ও প্রাণসংহারী। এই ভাইরাসের সংক্রমণ এর সুত্রপাত হয় এ’বছরে জানুয়ারি’র প্রথমভাগে, চীন এর উহান শহর থেকে। তারপর বিশ্বায়নের অলি-গলি দিয়ে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বের প্রায় ২৫০ টি দেশে।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণের খবর পাওয়া যায় ৮ মার্চ, ২০২০। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত দেশে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার এর অধিক জনের। ২৬ মার্চ, ২০২০ থেকে বাংলাদেশে প্রায় দুই মাস জরুরি বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য, ঔষধ প্রস্তুতকারি ও বিপণন প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালগুলো বাদ দিয়ে সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, দোকান-পাট, শপিং মল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল প্রকারের গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। দুই মাস বন্ধের পর স্বাস্থ্যবিধি পালন করা সাপেক্ষে ক্রমে, সরকারি, বেসরকারি অফিস, দোকানপাট, শপিং মল এবং গণপরিবহন খোলা হয়। এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং জুলাই মাস পর্যন্ত আদালতসমুহ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সীমিত পরিসরে চালু থেকেছে।
সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আজ পর্যন্ত সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় পৌনে দুই কোটি এবং মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় পৌনে সাত লক্ষ। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ খুবই সীমিত আকারে নানা বাধা নিষেধ নিয়ে চালু আছে। বিভিন্ন ঔষধ প্রস্তুতকারি এবং বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই ভাইরাসের সংক্রমণের হাত ত্থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য টিকা বা কোন প্রতিষেধক উদ্ভাবন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা বিশ্বে সংক্রমণ সীমিত করার জন্য সকলকেই প্রায় একই ধরনের এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন কতগুলো জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পূর্বে বিশ্বের ইতিহাসে বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক মহামারির ঘটনা ঘটেছে। যেসব মহামারিতে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তখনকার সৃষ্ট বিভিন্ন শিল্প, সাহিত্যে ও সঙ্গীতে ঘটে যাওয়া অতীতের অতিমারিসমূহের চিত্র ও বিবরণ পাওয়া যায়। শিল্প, সাহিত্য এবং সঙ্গীতে সর্বদাই সমাজবাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেছে। একই সময়ে সৃজনশীল শিল্প, সাহিত্য এবং সংগীত নতুন নতুন চিন্তা-চেতনা, দর্শন, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সৃজনশীল ও নান্দনিক প্রকাশ ঘটিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। শিল্প, সাহিত্য এবং সংগীত ইতিহাসেরই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং বেশির ভাগ ঐতিহাসিক ঘটনাবলি তাৎক্ষণিকভাবে রচিত শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীতে আধৃত হতে দেখা যায়। যার মাধ্যমে ঐতিহাসিক সত্য এবং তৎকালীন সমাজের চিত্র বিম্বিত হতে পারে।
বিগত ১৫০০ বছরে বহুবার ‘বিউবোনিক’ প্লেগের সংক্রমণ ঘটেছে। বিউবোনিক প্লেগ নামের রোগটি ‘ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস’ নামে এক প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়ার কারণে ঘটেছে। ষষ্ঠ, চতুর্দশ, উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং বিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে বিউবোনিক প্লেগের বৈশ্বিক মহামারি বার বার ফিরে ফিরে আসে এবং বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই প্লেগের কারণে মারা যায়। প্রতিবারই সংক্রমণ কমে আসে এবং সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এসব মহামারির সমাপ্তি ঘটেছিল। একটি অনুমান যে, বিবর্তনের ফলে ‘ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস’ জীবাণুটি দুর্বল হয়ে পড়ে। অথবা সংক্রমিত মানুষদের গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দেয়ার ফলে জীবাণুটি ছড়িয়ে পড়ে নতুন করে আর মহামারি আকার ধারণ করতে পারে নি। ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামের ব্যক্টেরিয়াটির অস্তিত্ব প্রাকৃতিকভাবে এখনও রয়েছে প্রেইরি অঞ্চলের এক প্রজাতির কুকুরের লালায়। কিন্তু ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম সংক্রমণের সময় এই ব্যক্টেরিয়াটি এক বিশেষ প্রজাতির র্যাট-ফ্লি বা ইঁদুরের মাছিতে জন্ম নিয়েছিল।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পৃথিবীর বিশ্বমহামারিমূহের সমাপ্তি সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে হয়েছে। কিন্তু, ইতিহাসে শুধু একটি ব্যতিক্রমই পাওয়া যায়। সেটা হচ্ছে ‘ভ্যারিওলা মেজর’ নামের একটি ভাইরাসের কারণে ছড়িয়ে পড়া গুটি বসন্তের বৈশ্বিক মহামারির ক্ষেত্রে। আর সেটার সমাপ্তি সম্ভব হয়েছে একটি অব্যর্থ টিকা আবিষ্কার এবং সেই টিকা বিশ্বের দেশে দেশে প্রায় সকল মানুষকে প্রয়োগ করার মাধ্যমে। প্রসঙ্গতঃ এই টিকা নিলে একজন মানুষ তার সারাজীবনের জন্য গুটিবসন্তের সংক্রমণ থেকে মুক্ত হতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পৃথিবীতে গুটিবসন্ত ভাইরাসটির সংক্রমণের ইতিহাস ছিল প্রায় ৩০০০ বছরের।
১৯১৮ সনের ইনফ্লুয়েঞ্জার বৈশ্বিক মহামারিটিই উদাহরণ হিসেবে আজকের দিনের মহামারির ধ্বংস এবং স্বাস্থ্যবিধি অর্থাৎ কোয়ারেন্টাইন অথবা সামাজিক দূরত্বের মূল্য অনুধাবন করতে সাহায্য করে। ১৯১৮ সনের ইনফ্লুয়েঞ্জায় পৃথিবীতে ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। এই ইনফ্লুয়েঞ্জাটি সারা পৃথিবীতে ব্যাপক মৃত্যুর স্বাক্ষর রাখার পর ক্রমেই বিলীন হয়ে বিবর্তিত মৌসুমী ফ্লু’র রূপ নেয়, যে ফ্লু দ্বারা বিশ্বের দেশে দেশে মানুষ প্রতিবছর আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর ঘটনা অনেক কমে এসেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির প্রায় সাথে সাথেই সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জার এই বৈশ্বিক মহামারির সমাপ্তি ঘটে। এর পর কতগুলো ফ্লু-এর মহামারি দেখা দিয়েছিল কিন্তু এখনকার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মতো সেগুলোর সংক্রমণ ও মৃত্যুর রূপ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে নি।
বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং একাবিংশ শতাব্দীতর প্রথম দিকে এবোলা এবং এইচআইভি ভাইরাস এর মহামারি ঘটতে দেখা যায়। যে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঝুঁকি এখনো রয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত এবোলা ভাইরাস এবং এইচআইভি প্রতিরোধের কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র আফ্রিকার কোনো কোনো অঞ্চলে এই ভাইরাস দুইটির সংক্রমণ সীমাবদ্ধ থাকাতে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা’ এবোলা এবং এইচআইভি মহামারির সমাপ্তি ঘোষণা করে এটাকে জরুরি স্বাস্থ্যবিষয়ক উদ্বেগের পর্যায়ে নামিয়ে আনে।
যদিও ৩ কোটি বছর পূর্বের কোনো কোনো ফসিল থেকে ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলে তবে বিশেষতঃ প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্ব থেকেই বিভিন্ন সময়ে ম্যালেরিয়া মানবসমাজের অস্তিত্বের প্রতি বড় আকারের হুমকি হিসাবে দেখা দেয়। আদি মেসোপটেমিয়া অথবা রোমান সাম্রাজ্যে এবং মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পেরিয়ে একবিংশ শতাব্দীতেও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা শোনা যায়। কিন্তু ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটবাহী কিউলেক্স মশার ব্যাপক নিধন এবং ১৮২০ শতাব্দীতে আদি সিনকোনা গাছের ছাল থেকে কুইনাইন আলাদা করা এবং এই ঔষধ অর্থাৎ কুইনাইন এবং পরবর্তীকালে কুইনাইনের উন্নত সংস্করণের ব্যাপক ব্যবহারের পর থেকে ম্যালেরায়ার প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
প্রাচীন ইতিহাসে, হিপক্রিটিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০-৩৭৭) এবং গেলেন (১২৯-২১৬ খ্রিস্টাব্দ) এর বর্ণনায় কলেরা’র মতো একটি রোগ এবং চিকিৎসার বিবরণ পাওয়া যায়। কিন্তু, আধুনিক কালের ইতিহাসে কলেরা মহামারি ১৮১৭ সনেই প্রথমে গঙ্গা অববাহিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ার বিবরণ পাওয়া যায়। ১৮৮৪ সনে কলেরার জীবাণু চিহ্নিত করা হয় এবং কলেরার প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা শুরু হয়। ১৮৮৫ সনেই কলেরার টিকার আবিষ্কার হয়, যে টিকা সেবন করলে মানুষ ছয় মাসের জন্য কলেরার অনাক্রমণ্যতা প্রাপ্ত হতে পারে। বিশ্বে কলেরার ৭টি মহামারির ইতিহাস রয়েছে। ৭ম ম্যালেরিয়া মহামারি দেখা যায় ১৯৬১ সনে এবং এই মহামারি ইন্দোনেশিয়ায় থেকে উৎপত্তি হয়ে এশিয়া এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯১ সনে এই মহামারি দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছায় এবং সেখানে প্রায় ৪০০০ মানুষ মারা যায়। কলেরার সাতটি পর্বের সংক্রমণে সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যু ঘটেছিল।
কলেরা মূলত পানিবাহিত রোগ। দূষিত জল পান করার মাধ্যমে এর সংক্রমণ ঘটে তাই শীত প্রধান দেশগুলোর তুলনায় পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চলগুলোতেই কলেরার মারাত্মক প্রাদুর্ভাব অধিক সংখ্যায় ঘটতে দেখা গেছে। ভিবরিও কলেরি নামে একটি জীবানুর কারণে কলেরা হয়। রোগীর মল পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব। যেহেতু কলেরার সংক্রমণ হলে রোগীর প্রচণ্ড উদরাময় হয় তাই দেখা যায় যে প্রথম ধাপে সংক্রমিত হওয়ার সময় খুব দ্রুত শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে পারলেই প্রায় ৯৯% কলেরা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। সাথে এন্টিবায়োটিক এবং জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করে কলেরা রোগ থেকে প্রায় ১০০% রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
বিদেশী চিত্রকর্ম ও সাহিত্যে অতীতের অতিমারিসমূহের প্রত্যক্ষ প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। যদিও ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইনের শাসক স্বয়ং জাস্টিনিয়ান’এর দুই একটি ফ্রেস্কো দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু ষষ্ঠ শতাব্দীর প্লেগের ফ্রেস্কো অথবা তৈলচিত্র চতুর্দশ শতাব্দীতে বিউবনিক প্লেগের দ্বিতীয় অতিমারির সময়ে ইউরোপিয়ান কয়েকজন শিল্পী তখনকার সময়ের চিত্র তৈরি’র সময় তাদের কর্মে তুলে আনেন। বোকাচ্চিও এর ডেকামেরন (চতুর্দশ শতাব্দী), ফ্রান্সিস্কো’র ‘মাতৃস্নেহের রূপক কাহিনি’ (১৭৪৩-৪৪) অথবা মানজোনি’র ‘দি বেট্রোথেড (উন-বিংশ শতাব্দীর) তেল চিত্রগুলো এসব শিল্পকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
বিদেশী সাহিত্যে প্লেগ অথবা মহামারি এসেছে প্রত্যক্ষভাবেই। বাংলা সাহিত্যে কলেরা, ম্যালেরিয়া বা গুটিবসন্ত অর্থাৎ জনমানসে ওলাওঠা বলে পরিচিত রোগের অভিঘাত পড়েছিল ব্যাপক আকারে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এ নিয়ে বাংলা ভাষায় কোনো বড় উপন্যাস বা মহাকাব্য কখনো লেখা হয়নি। যেমনটি আমরা আমরা পাই আমেরিকায় রেড ডেথ মহামারিতে একটি জনপদ উজাড় হওয়ার পরে বেঁচে যাওয়া মানুষের জীবন-আখ্যান নিয়ে ১৯১২ সালে জ্যাক লন্ডন [১৮৭৬-১৯১৬] রচিত ‘দ্য স্কার্লেট প্লেগ’ উপন্যাসে। যেমন করে কালজয়ী হয়েছে ১৯৪৫ সালে আলবেয়ার ক্যাম্যু [১৯১৩-১৯৬০] রচিত ‘দ্য প্লেগ’। মহামারিকালে কোয়ারেন্টিনে অবরুদ্ধ ফরাসি-আলজেরিয় ওরান শহরের চার দেয়ালের ভেতর ঘটা আখ্যানভিত্তিক উপন্যাস ‘দ্য প্লেগ’। আলজেরিয়ার ওরান শহরে ইঁদুরের উপদ্রব হতে ছড়িয়ে পড়া প্লেগ মহামারিতে মৃত্যুর মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়ে সূচিত ‘দ্য প্লেগ’ আজও বিশ^সাহিত্যে কিংবদন্তি হয়ে আছে। অপরদিকে, ১৯৬৭ সালে নোবেলজয়ী স্পানিশ সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ রচিত ‘লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা’ উপন্যাসেও কলেরা মহামারির চিত্র বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে নোবলজয়ী পর্তুগিজ সাহিত্যিক হোসে সারামাগো (১৯২২-২০১০) রচিত ‘ব্লাইন্ডনেস ’ উপন্যাসটিও মহামারী কালের চরিত্র বোঝার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বসাহিত্যে সাড়া জাগানো কল্পবৈজ্ঞানিক উপন্যাস ‘ফ্রাঙ্কেনস্টেইন’ এর লেখিকা মেমরি শেলি ‘দ্য লাস্টম্যান’ উপন্যাস রচনা করে মহামারি নিয়ে ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম দিয়েছেন।
আমাদের দেশের ইতিহাসেও মহামারি নতুন কিছু নয়। তবে অতীতে তার পরিচয় ছিল ‘মড়ক’ হিসেবে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক বাঙালির নিত্য সহচর। আর এগুলোর অনিবার্য সঙ্গী হয়ে এসেছে দুর্ভিক্ষ-মন্বন্তর, মড়ক-মহামারি। বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশের মানুষ আবহমান কাল ধরে এইসব মড়ক-মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক, দুর্ভিক্ষ-মন্বন্তর ইত্যাদির সাথে লড়াই-সংগ্রাম করে টিকে আছে। তাই স্বভাবতই বাংলা সাহিত্যেও এসবের প্রভাব ও প্রতিফলন ঘটেছে সেই আদিকাল থেকে।
প্রচলিত মৌখিক সাহিত্য তথা লোকসাহিত্যের বিভিন্ন শাখার পাশাপাশি লিখিত সাহিত্যের সকল শাখায় নানা প্রসঙ্গে-অনুষঙ্গে বর্ণিত হয়েছে মড়ক-মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদির কথা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি ও প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগে এবং আমাদের দেশে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অপ্রতুলতার কারণে অতীতে ম্যালেরি গ্রামকে নিয়ে অনেক অতিলৌকিক বা ভৌতিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে লোক মুখেমুখে।
বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদে সরাসরি মড়ক-মহামারির কথা উল্লেখ নেই। তবে বৌদ্ধ ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সাধন সঙ্গীত হিসেবে রচিত চর্যাপদে রূপকের আশ্রয়ে সমকালীন দরিদ্র বাঙালির নিত্যদিনের অভাব, ক্ষুধা, দুঃখ-দারিদ্র্য, রোগ-ব্যাধি-বেদনা-পীড়িত জীবনের করুণ চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দুর্যোগ-দুর্বিপাক, রোগ-ব্যাধি, মড়ক-মহামারির নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিভিন্ন লৌকিক দেব-দেবীকে কল্পনা করা হতো এবং এসব থেকে বাঁচার জন্য পূজা-অর্চনাসহ নানাভাবে তাদের পরিতুষ্টি বিধানের চেষ্টা করতো অজ্ঞ-অসহায় সাধারণ মানুষ। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের উন্মেষের আগে এই সব লৌকিক দেব-দেবীর কাল্টের উদ্ভবের সুবাদে তৈরি হয় দেবদেবী মহিমা-কীর্তনকারী কাহিনিকাব্য, পাঁচালি, ব্রতোপাখ্যান। এরই ধারাবাহিকতায় মধ্যযুগের লোকজ বাংলা কাব্যে বিকাশ লাভ করে মঙ্গলকাব্য নামে একটি বিশিষ্ট সাহিত্য ধারা। মঙ্গলকাব্যে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি, মড়ক-মহামারি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকের নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিভিন্ন লৌকিক দেব-দেবীর মাহাত্ম্যকথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, বসন্তের দেবী শীতলাকে নিয়ে শীতলামঙ্গল কাব্য এবং কলেরা বা ওলাউঠার নিয়ন্ত্রণকারী দেবী হিসেবে দেবী ওলাইচণ্ডীকে নিয়ে উলামঙ্গল বা চণ্ডীমঙ্গল কাব্য রচিত হয়েছে। এসব কাব্যে শীতলা দেবী বা দেবী ওলাইচণ্ডীর উপাসনার মধ্যদিয়ে সে সময়ে বসন্ত, কলেরার মড়ক-প্রতিরোধ কামনারই কথা বলা হয়েছে।
আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যে কাহিনির মূল উপজীব্য হিসেবে না হলেও নানা প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গে মড়ক-মহামাররি কথা বর্ণিত হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের অগ্রপথিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কালের সেলিনা হোসেনসহ শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যিকদের রচনায় বিশেষ করে কথা সাহিত্যে মড়ক-মহামারির বর্ণনা পাই নানা প্রসঙ্গে-অনুষঙ্গে। বঙ্কিম চন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসে ১৭৭৬-এর মন্বন্তর এবং মন্বন্তরের সঙ্গী হিসেবেই মারি বা মড়কের বিবরণ পাওয়া যায়। ১১৭৬ বঙ্গাব্দের মন্বন্তর কালে সমগ্র বাংলায় কলেরা-বসন্ত মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। রবীন্দ্রনাথের গোরা ও চতুরঙ্গ উপন্যাসে এবং বিভিন্ন ছোটগল্পে কলেরা, প্লেগ, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ও মহামারির উল্লেখ করা হয়েছে। মহামারির ছায়ার ভেতরেই রচিত হয়েছিল গোরা বা চতুরঙ্গের মত উপন্যাস ও গল্পগুচ্ছের গল্পগুলো। মহামারির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অনুভূত হয় রবীন্দ্রনাথের ‘আত্মশক্তির’ প্রবন্ধমালায়। রবীন্দ্রনাথ ‘ওলাওঠার বিস্তার’ নামে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধও লিখেছিলেন এবং তার ‘স্বদেশী সমাজ’ পর্বের বিভিন্ন প্রবন্ধে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি চেয়ে আলোচনা করেছেন নানা প্রসঙ্গ ক্রমে।
অপরাজেয় কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিভিন্ন উপন্যাসে মড়ক-মহামারির কথা বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই শ্রীকান্ত উপন্যাসের কথা বলা যেতে পারে। পুরো উপন্যাস জুড়েই মহামারি, মারি বা জনস্বাস্থ্য নিয়ে দুর্বিপাকের কথা ছড়িয়ে আছে। শ্রীকান্ত উপন্যাসে আমরা চার চারটি মারণ-ব্যাধির উল্লেখ পাইÑ কলেরা, প্লেগ, বসন্ত ও ম্যালেরিয়া। তাঁর, ‘পণ্ডিতমশাই’, ‘পল্লীসমাজ’, উপন্যাসেও মহামারির প্রসঙ্গ এসেছে। শরৎচন্দ্রের বিভিন্ন গল্পেও মড়ক-মহামারি প্রসঙ্গ এসেছে।
জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে মহামারির বর্ণনা এসেছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ধাত্রীদেবতা’ এবং ‘গণদেবতা’ উপন্যসে কলেরা মহামারির প্রসঙ্গ পাই। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাসের গাওদিয়া গ্রামে প্রায়ই মহামারি রূপে ছড়িয়ে পড়ত কলেরা, টাইফয়েড, কালাজ্বর ও বসন্তের মতো রোগগুলো। বেগম রোকেয়ার রচনাতেও প্লেগ ও মহামারির কথা পাই। ‘সুলতানার স্বপ্ন’-তে বেগম রোকেয়া যে ইউটোপিয়ার দেশ নির্মাণ করেছেন তাতে মহামারির আসল কারণ বর্ণিত হয়েছে।
জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসে কলেরার মড়ক এবং এ নিয়ে গ্রামবাংলার অজ্ঞ-কুসংস্কারাচ্ছন্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে আবহমান কাল ধরে প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাস ও সংস্কারের ইতিকথা বর্ণিত হয়েছে। শহীদুল্লা কায়সারের ‘সংশপ্তক’ উপন্যাসে বসন্ত রোগের প্রকোপের সময় মানুষের এ পলাতক মনোভাব ফুটে উঠেছে, ‘কবর আর কবর’ উচ্চারণে। আহমদ ছফার ‘সূর্য তুমি সাথী’ উপন্যাসে কলেরা থেকে পলায়নপর মানুষের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে, “কলেরার সময় গাঁ ছেড়ে পালাচ্ছে ডরে মানুষ। এক বাড়িতে কারো কলেরা লাগলে পাশের বাড়ীর মানুষ উধাও”। হাসান আজিজুল হক ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসে মেতর বউ-এর জবানীতে লিখেছেন, ‘এত রোগের নামও ত্যাকন জানত না লোকে। ডাক্তারবদ্যিও ছিল না তেমন। মরবার আগে মুখে যেদি ওষুধ পড়ত, তাই কত! পেরায় পিতি বছর কলেরা-বসন্তেই কত যি লোক মরত, তার সীমাসংখ্যা নাই।’ সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে ‘বুধা’ তার পরিবারের চারজনকে হারিয়েছে। বুধার মানসিক বিপর্যস্ততার ইঙ্গিত লেখিকার কলমে ধরা দিয়েছে, ‘চোখের সামনে মা-বাবা, চার ভাই-বোনকে মরে যেতে দেখলে কেউ কি নরম থাকতে পারে?’ হয়তো পারে না। তাই পৃথিবীব্যাপী আজ কান্নার রোল। কলেরা মহামারি কীভাবে মৃত্যুর পর মৃত্যু উপহার দিয়েছে সেলিনা হোসেন তারও উল্লেখ করেছেন। ‘সেবার কলেরায় মহামারিতে উজাড় হয়ে যায় গাঁয়ের অর্ধেক লোক।’
বাংলা ছোটগল্পেও মড়ক-মহামারির প্রসঙ্গ এসছে নানা প্রেক্ষিতে। মুজতবা আলী ‘পাদটীকা’ গল্পের শুরুতেই মড়কের প্রসঙ্গ এসেছে এভাবে– “গত শতকের শেষ আর এই শতকের গোড়ার দিকে আমাদের দেশের টোলগুলো মড়ক লেগে প্রায় সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যায়।”
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প ‘পুষ্করা’-তেও বাংলার মন্বন্তর পরবর্তী মড়ক থেকে উদ্ধার পাবার চিত্র প্রতিফলিত। জগদীশ গুপ্ত’র ‘পয়োমুখম’ গল্পে ভূতনাথ নিজের স্ত্রীদের হত্যার পিছনে তার অর্থলিপ্সু কবিরাজ বাবার দুষ্কর্ম ধরে ফেলে শেষ পর্যন্ত। শেষতম বউ বেঁচে যায়। ভূতনাথ বলে, “এ বৌটার পরমায়ু আছে তাই কলেরায় মরল না, বাবা! পারেন তো নিজেই খেয়ে ফেলুন।” মানুষের এক অন্ধকার অধ্যায় বেরিয়ে পড়ে। শিবরাম চক্রবর্তীর ‘দেবতার জন্ম’ গল্পের কথক যে-পাথরে হোঁচট খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে উঠেছিল বসন্ত রোগ থেকে বাঁচতে সেই পাথরেই মাথা নোয়ায়। সুকুমার রায়ও তাঁর ‘নানাগল্পে’-র ‘পেটুক’-এ লিখেছেন, “চারদিকে যে রকম প্লেগ আর ব্যারাম এই পাড়াসুদ্ধ ইঁদুর না মারলে আর রক্ষা নেই।”
বাংলা কবিতাতেও বাদ যায়নি মড়ক-মহামারি প্রসঙ্গ। উনিশ শতকের ঢাকার এক ‘বটতলার কবি’ কুশাই সরকার লোকমুখে প্রচলিত বুলিতে ওলাওঠার মহামারি নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তো বহু আগেই তাঁর ‘বোধন’ কবিতায় বলে গেছেনÑ ‘মারী ও মড়ক মন্বন্তর, ঘন ঘন বন্যার/ আঘাতে আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন/ ভাঙা নৌকার পাল/ এখানে দারুণ দুঃখে কেটেছে সর্বনাশের কাল’। কবি জীবনান্দ দাশের আট বছর আগে একদিন কবিতায়, “এই ঘুম চেয়েছিল বুঝি!/ রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি” Ñউপমায় প্লেগের জীবাণুবাহী হিসেবে বর্র্ণিত। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ‘আসামনী’ কবিতায় পাই- ‘ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে।’
অদৃশ্য ঘাতক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর থাবায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে দেশ ও বিশ্ব। এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিণতি ভাবনায় সমাজের আর দশজনের মত আমাদের শিল্পী, কবি-সাহিত্যকরাও উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠিত। কবি-সাহিত্যিকরা করোনাকে ঘিরে তাদের অনুভব-অভিব্যক্তিকে তুলে ধরে রচনা করছেন ছড়া, কবিতা, গল্প। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে এগুলো প্রকাশিতও হচ্ছে। করোনা কালে রচিত কবিতা নিয়ে ইতোমধ্যে সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে। কারও কারও কবিতার আবৃত্তিও স্থান পেয়েছে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে।
শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন এর এই সংখ্যায় অল্পসংখ্যক করোনা কালের কবিতা ও গদ্য ছাপা হয়েছে। মনে হয়, করোনা কাল দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে আর অনুপ্রাণন এর পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে আরো অনেক করোনাকালের কবিতা, ছোট গল্প, অণুগল্প, নাটক, চিত্র-চলচ্চিত্র আলোচনা, প্রবন্ধ ও গদ্য প্রকাশিত হবে, প্রত্যাশা রাখি।
নবম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা
স্বকৃত নোমান। কথাসাহিত্যিক। জন্ম ১৯৮০ সালের ৮ই নভেম্বর, ফেনির পরশুরাম উপজেলার বেলোনিয়ায়। শৈশবে ঊর্দু, আরবি ও পারসি সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে সেলিম আল দীনের কাছ থেকে পাশ্চাত্য ও বাংলা সাহিত্যের গভীর পাঠ গ্রহণ করেন। বর্তমানে ঢাকায় সাপ্তাহিক সংবাদ ম্যাগাজিন এই সময় এর সহযোগী সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। ২০১২ সালে এইচএসবিসি কালি কলম সাহিত্য পুরস্কার পান। ‘বেগানা’ ‘হীরকডানা’ ও ‘নিশিররঙ্গিলা’ উপন্যাসসহ মোট প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা
কথাসাহিত্যের অলিগলি
তিরিশ বছর ধরে মিনুকে দেখছি। ও আদ্যপান্ত কবি। মার্কসবাদী বলা যাবে? সমাজবাদী তো বটেই! গল্পে ওর ক্যারিশমা সত্বেও ওকে আমি কবিই বলি। হ্যা, কবিতা নিয়েই ওর বেড়ে ওঠা, যে কোন আদর্শবাদীতা খারিজ করে, হাইপাররিয়ালিস্ট দার্শনিকতার আবহে, একাগ্র ঔদ্ধত্যে। এই কবিতাগুলো সামগ্রিকভাবে মিনু মৃত্তিকের ‘ষষ্ট’ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। পূর্বের কাব্যগ্রন্থগুলোর সঙ্গে এর মৌলিক পার্থক্য খুঁজতে গেলে বড় আকারের উল্লম্ফন অনুভূত হবে না। তবে রূপের বৈচিত্রে ও গন্ধে আলাদা এক ভাললাগা পাঠকের ইন্দ্রিয়ে নিশ্চিত সঞ্চারিত হবে, একথা বলা যায়। মিনু ক্রমাগত নিজেকে আবিস্কার করে চলেছেন, নাস্তিতে অথবা অধিবিদ্যক প্রেতাত্মার বিকর্ষণে! নিজেকে নিয়ে সর্বগ্রাসী ঠাট্টা আর নিজেকে ভেঙে চলেছেন তীব্র সংরক্ষণহীনতায়, অস্বীকারও করছেন নিজেকে। এভাবে তৈরি হচ্ছে তথাকথিত আধুনিকতার প্রভাববলয়ের বাইরে ওর নিজস্ব আগুনপথ, যে বিষম আর উদ্ভট মাল্টিকালচারাল পথে নেমে আমরা হতবাক হয়ে যাচ্ছি, হোঁচট খাচ্ছি, বিরক্ত হচ্ছি। আলটিমেটলি মিনু এটাই চান হয় তো–এই অরাজকতায় উশকানি দেওয়া, ‘সত্যে’র প্রতি চোরা অবিশ্বাস তৈরি করা! অমরত্ব মিনুর কাছে তাচ্ছিল্যের ব্যাপার। কিন্তু যে ভাষা-ভায়োলেশান মিনু আমাদের কবিতায় চারিয়ে দিয়েছেন সেটাকে পাঠক সম্ভবত ইগ্নোর করতে পারবেন না।
শিশির আজম, কবি
০৫-০৭-২০২২ খ্রীঃ
প্যারাডাইস এক্সপ্রেস - Paradise Express
লেখক পরিচিতিঃ
নিজেকে ঘটা করে পরিচয় করিয়ে কি লাভ । আমার এই উপন্যাস পছন্দ হলে এতেই আমার স্বার্থকতা। সবাই ভালবাসুক এই গল্পটা।সবাই ধারণ করুক এই বইটা।
এই পর্যন্ত বইয়ের সংখ্যা ৯টি
১) আমার মা(ভোরের শিশির প্রকাশন
২) বার্লিনে বন্ধুত্ব(ভোরের শিশির প্রকাশন)
৩) ভুতের স্বর্নতাবিজ( বেহুলা বাংলা প্রকাশন)
৪) অল্প কথার গল্প (দ্যুপ্রকাশন)
৫) লাভার্স পয়েন্ট (বেহুলা বাংলা)
৬)তিন প্রজন্মের কাব্য (ছায়ানীড়)
৭) দার্জিলিং কনফেশন (ছোট গল্প) অনুপ্রাণন
৮) উইনিং সেলস এন্ড মার্কেটিং (বেহুলা বাংলা)
৯) পূর্বজদের গুহায় বুদ্ধের দর্শন।(অনুপ্রাণন)
পূর্বজদের গুহায় বুদ্ধের দর্শন
জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ই এপ্রিল। টাঙ্গাইলের মীরের বেতুকা গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। করটিয়ার সা’দত কলেজ ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছেন। সহকারী সম্পাদক ছিলেন সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও দৈনিক সংবাদ Ñএ। ১৯৭৮-৮০ সালে ছিলেন গণচীনের রেডিও পেইচিং এর ভাষা বিশেষজ্ঞ। ১৯৯৪-২০০৪ সালে ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গবেষণা, শিশুতোষসহ গ্রন্থের সংখ্যা ৭০ এর বেশি।
গল্প সংগ্রহ
সূর্যের ঘরের নামতাতে
“আমি শুরু থেকেই জানতাম, এরা যেকোন মূল্যে টাইম মেশিনটা তৈরি করেই ছাড়বে!” ক্রিটন তার আর্মচেয়ারে গা এলিয়ে দিতে দিতে বলল, “যেদিন নিকি আমাকে খবর দিলো যে ওরা তথ্যকেন্দ্রে মন্টক প্রজেক্ট সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে, সেদিন থেকেই আমি ওদেরকে আর হালকাভাবে নিই নি। এরপর আমাদের গুপ্তচর রিগা যখন ক্যাপ্টেন নিমোর সাথে ওদের কথোপকথন শুনে আমাকে জানালো যে বিজ্ঞানী ছোকড়াটার মাথায় সময় পরিভ্রমণের চিন্তা খেলেছে পুরনো আমলের একটা চলচ্চিত্রের খুবই সাধারণ একটা দৃশ্য দেখে, তখনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে এই ছোকড়ার দ্বারা সবকিছুই সম্ভব। কেন জানো ক্লড?”
“কেন প্রভু ক্রিটন?”
ক্রিটন ক্লডের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, “কারণ আমি এই ছোকড়ার মাঝে আমার স্রষ্টা ডক্টর লির ছায়া দেখতে পেয়েছিলাম। ডক্টর লিও এরকমই ছিলেন, অনেক তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ জিনিসের মাঝেও তিনি অসাধারণ কিছু খুঁজে পেতেন। তিনিও এক অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছিলেন আমাকে তৈরি করে। ডক্টর লির মত মানুষেরা যেমন আমাদের গড়তে পারে, ঠিক তেমনি শত প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের গুঁড়িয়ে দেয়ারও ক্ষমতা রাখে, সে আমরা যতই আধুনিক এবং শক্তিশালী হই না কেন। এধরনের মানুষ কোটিতে বড়জোর একজন হয়। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে মানবজাতি টিকে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত এধরনের মানুষ জন্মাবার সম্ভাবনা থেকেই যাবে!”
রু
তরুণ লেখক জাহাঙ্গীর হোসাইন-এর ‘উলঙ্গ সময়’ উপন্যাসটি পড়ার পর উপলব্ধি করতে পারলাম, এক নারীর আত্মন্মোচনের বেদনাবাষ্পে ধূসর হয়ে পড়বে আমাদের চেনা পৃথিবীটাও। কথিকা মাধুবীলতা চৌধুরানি। তাঁরই অনÍর্যামী জাহাঙ্গীর হোসাইন হয়তো বা বসত করে সেই অপ্রত্যাশিত নারীর ভাবগর্ভে। পরিবার পরিজনে ঘেরা গ্লানির কয়েদখানা থেকে সুপ্রিয় পাঠককে সম্বোধন করে লেখা উপাখ্যানে কুড়িটি পর্বে লেখকের অন্তর্বয়নে অক্ষরগুলো যতœ করে জ্বলে ওঠে স্মৃতির বারুদে। জীবনকে আস্বাদনের তৃষ্ণায় অন্তরতমা মাধুবীলতা চৌধুরানির কাছে সমুর ব্যাকুল আর্তি- মাধু, ‘আমার ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছেÑ আমাকে একটু ঠাণ্ডা জল দিবে?’ কেবলই অপ্রাপ্তির বেদনায় সমুর মনে গুমরে গুমরে “সুখের লাগিয়া এঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল” আক্ষেপ আর আত্মগ্লানির পীড়ায় জ্বলতে জ্বলতে সমুর করুণ অনুনাদ ‘মাধু, তোমার ঘরে বিষ আছে? আমাকে একটু বিষ দাও।’ পাখি, পুঁথির মা, সমু, অলক চৌধুরী সকলই মাধুবীলতা চৌধুরানির জীবনের জানালার গরাদ। সেই গরাদ ধরে সমুর ভালোবাসার জন্য অনন্ত অপেক্ষার পর উলঙ্গ সময়ের কাছে তাঁর মৃদু অনুযোগ ‘নরকে থাকার চেয়ে আত্ম হননের পথ শ্রেয়’ এই হতভাগিনীর উপাখ্যানে সময়ও কেঁদে ওঠে, হয়তো বা জ্বরে পুড়তে থাকে। যেভাবে পুড়েছে মালতি থেকে কাবুলিওয়লার বাঙালি বউটা।
ড. মেঘনাদ ঘোষাল
উলঙ্গ সময় - Ulongo Samoy
ভূমিকা-
ভেতরটা খালি, গল্পের অভাব, যুতসই প্লট পাচ্ছি না- এমন অবস্থায় সচরাচর বাইরে বের হই। হাঁটতে থাকি। সামনের মোড়টা পার হলেই বিশাল হাইওয়ে। এই হাইওয়ে দিয়ে চাইলে যেকোনো জায়গায় যাওয়া যায়। আমারও ইচ্ছা, যাই।
একা একা বেশিক্ষণ হাঁটা যায় না। একটু আগাতেই, কয়েকগুচ্ছ আলো এসে ভিজিয়ে দেয় অন্ধকারের শরীর। আগ্রহ নিয়ে ঘাড়টা ঘোরাতেই দেখি দুটি যান্ত্রিক চোখ। গাড়িটা আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
এরই মধ্যে টের পাই আমার সাথে আরেকজন। সেও হাঁটছে। ল্যাম্পোষ্টের আলোর সাথে সাথে পাল্টে যাচ্ছে তার শরীর। বুঝতে পারি, তার কিছু বলার আছে। তবুও থামতে ইচ্ছা করে না। নিজের ছায়ার সাথে আমার কথা হয় না, বহুদিন!
সামনে থাকা অনেক কিছুই ইশারা করে! রাতের নিষিদ্ধ সেই সব ডাক, না শুনে পারি না। বৃদ্ধ পাইকর গাছ, একটা চিঠির লাল বাক্স, পাশে ড্রেন, সেখানে জোড় হারানো একপাটি স্যান্ডেল উল্টে পড়ে আছে। আমি ওদের কাছে যাই। নেড়ে চেড়ে পরখ করি, ভেতরে গল্প আছে কী না।
আটপুকুরের ফুল
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.