Additional information
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.13 $ 1.88
প্রায় তিন দশক ধরে কাব্যচর্চায় আত্মনিবেদিত কবি হানিফ মোহাম্মদ এই প্রথম তাঁর কাব্য “পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য” নিয়ে গ্রন্থ-প্রকাশনার জগতে পা রাখলেন। এ কাব্যটি দীর্ঘ সাধনায় অর্জিত তাঁর সাহিত্যিক ও কাব্যাদর্শিক চেতনার ফসল। জীবন ও সমাজের নানা ক্ষেত্রের ক্লেদ, দুর্গতি ও বঞ্চনা নিয়ে দুর্বিষহ সময় কবির দৃষ্টিতে যেভাবে ধরা পড়েছে, তার-ই কিছু ছবি ফুটে উঠেছে এ কাব্যের বিভিন্ন কবিতায়। কবি শুধু বৌদ্ধিক ও অন্তরঙ্গ ভাষিক-রেখায় সমাজের নানা স্কেচ এঁকেই ক্ষান্ত হননি, পরোক্ষ উচ্চারণে নিজের আদর্শভিত্তিক একটি আগামির স্বপ্ন ছড়িয়েছেন কবিতার পর কবিতায়। সর্বদাই তাঁর আবেগ থেকেছে নান্দনিক রসধারায় সিঞ্চিত এবং কাব্যবোধ প্রগতিশীল চেতনায় ঋদ্ধ। তিনিও, প্রত্যেক পূর্ণতাপ্রাপ্ত কবি যেমন, স্বতন্ত্র বিশ্বাস ও আদর্শ নিয়ে একটি আলাদা কাব্যভুবনের নির্মাতা। তাঁর মাঝে কোন ঘোরপ্যাঁচ নেই; সাবলীল ও সহজবোধ্য ভাষায় অনেকটা প্রত্যক্ষ শৈল্পিক উপস্থাপন তাঁর। বঞ্চনা-পীড়িত জীবন ও সমাজের নানা চালচিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাঁর কাব্যবোধ ও শৈলী তিলমাত্র অপচিত হয়নি।
তাঁর কবিতার দৃশ্যমান, পরাবাস্তব ও বিমূর্ত চিত্রকল্পগুলো একাধারে পেলব, দৃষ্টিনন্দন, বোধ-উদ্দীপক ও হৃদয়স্পর্শী। তাঁর পংক্তিগুলো গণমানুষের চেতনার সাথে সমানুভূতিতে, প্রেমের পরাকাষ্ঠায় এবং নিসর্গ-সুষমার প্রদীপ্তছটায় অনাস্বাদিতপূর্ব প্রতিমাপুঞ্জ। শব্দচয়ন ও বাণীবন্ধ গঠনে তিনি যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। পুরো কাব্যটিতেই তাঁর পরিমিত বাকভঙ্গি ও পরিশীলিত মননের প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। সেইসাথে শব্দাবলীর যথাযথ বিন্যাস ও ছন্দময় প্রবহমানতা তাঁর কবিতার বাণীবন্ধকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।
পরিশেষে, কবি হানিফ মোহাম্মদের বিশ্বাস এবং ব্যতিক্রমী চিন্তা-চেতনার সাথে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও আমি নির্দ্বিধায় বলবো যে, কাব্যটি শৈল্পিক মানদ-ে উন্নত এবং যথেষ্ট রস সমৃদ্ধ।
আবুল কাইয়ুম
প্রাবন্ধিক, সাহিত্য সমালোচক ও অনুবাদক
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
দেবাশীষ ধর। জন্ম: ৫ই জানুয়ারি, ১৯৮৯। চট্টগ্রাম। কবিতার ছোটকাগজ ‘বাঙাল’ এর সম্পাদক। কবির এটি প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
ফসিলের কারুকাজ
রাজন্য রুহানি। পরিবারের দেওয়া সনদসাক্ষ্য নাম মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। জন্ম: ২রা নভেম্ভর ১৯৮০, জামালপুর জেলা শহরের হাটচন্দ্রায়। কলেজে পা দেবার সাথে সাথেই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মফস্বল সাংবাদিকতার পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে বারবার কবিতার কছেই ফেরা। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং। ১৯৯৮ থেকে কবিতার ভাঁজপত্র শব্দদূত সম্পাদনার সাথে যুক্ত। ঐ বছরই অন্যান্য লেখক সহযোগে আলোচনাগ্রন্থ- ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ; আতিয়ার রহমানের ৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এটি লেখকের প্রকাশিত এককবই।
গল্প সমাপ্তির গান
ডালিয়া চৌধুরী। তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছেন। কবিতার প্রতি ভালোবাসা থেকে কবিতা লেখার সূত্রপাত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, ‘অনুভবে সুখ’ ‘মেঘময় নিকুঞ্জে রধুন‘ ও ‘জলজ কামনা’।
নীল গোধূলি
লেখক পরিচিতি :
নিখিল নওশাদ। জন্মসন: ১৯৮৯ইং। বড়িয়া, ধুনট, বগুড়া, বাংলাদেশ। ‘বিরোধ, ‘নিওর’ ও ‘নীড়’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই। এছাড়া ছোটগল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।
এটি একটি চিৎকার
লেখক পরিচিতি :
তানভীর আহমেদ হৃদয়। জন্ম: ৩ডিসেম্বর, ১৯৮৫ইং। মুন্সিগঞ্জ, বিক্রমপুর। প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকায় আছে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়া। এছাড়া সম্পাদিত গ্রন্থের তালিকায় আছে কবিতা ও গল্প। লেখকের লেখা প্রতিনিয়ত দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে।
অচেনা রৌদ্রের রঙ
রঞ্জনা বিশ্বাস। জন্ম: ১০ডিসেম্বর, ১৯৮১। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে খ্রিস্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ ও ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’ কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবির প্রকাশিত কাব্যফসল। এছাড়া কবি কবিতাচর্চার পাশাপাশি ফোকলোরচর্চাকেও ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। নৃ-তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মী কবির আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ ও ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ প্রকল্পে কাজ করছেন। এছাড়া এখন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগে কর্মরত আছেন।
বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস
সঞ্চয় সুমন। ঢাকাবাসী এক কবি। যে শুধু কল্পনার রঙে আঁকে শব্দ খেলার মাঠ। এই গ্রন্থটি কবির প্রথম কাব্যফসল।
গুপ্ত সমরে মুক্তির ঠিকানা
আলতাফ হোসেন-এর জন্ম ২৭ অক্টোবর ১৯৪৯। পৈতৃক নিবাস কিশোরগঞ্জ। বাবার চাকরিসূত্রে শৈশব কৈশোর কেটেছে পাটনা, কলকাতা, চাটগাঁ, করাচি ও ঢাকায়। ১৯৬৪ থেকে পুরোপুরিভাবে ঢাকায় বসবাস। অনার্স ও এমএ করেছেন বাংলায়। আলিয়ঁস ফ্রঁসেস, ঢাকা থেকে দু-বছর ফরাসি ভাষা শিখে সনদ পেয়েছেন।
কফি জেগে থাকে
লেখক পরিচিতি :
হান্নান হামিদ, লেখক নাম কালের লিখন। জন্ম: আগস্ট, ১৯৮৪। জামালপুর। ‘বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস’ লেখকের প্রথম বই।
বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস
অয়ন্ত ইমরুল। জন্ম: ১২ই এপ্রিল ১৯৮৭ইং, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার আজিমনগর গ্রামে। পদ্মা নদীর ভয়াল গ্রাসে শৈশবেই ঠিকানার পরিবর্তন ঘটে বর্তমানে সাভার আশুলিয়ায় বসবাসরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ছায়াসমুদ্র
লেখক পরিচিতি :
শারমিন রাহমান। জন্ম: ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩। দ্ইু সন্তানের জননী। বাংলাদেশের স্বনামধন্য স্কুলগুলোতে দীর্ঘ ১৫ বছর শিক্ষকতা শেষ করে বর্তমানে চট্টগ্রাম আর্ট সেন্টার ‘ধ্যান’ এর পরিচালক। বিশেষ আগ্রহ আছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে। এটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
অপ্রাকৃত কবচ
কাজী রহমান। পরবাসী লেখক নিজের পছন্দ মতো বাঁচতে দু-যুগ আগে মার্কিন মুলুকে চলে আসেন স্ত্রী ও প্রথম শিশুকন্যা সাথে নিয়ে। বড় হয়েছেন পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া’য়। জ্ঞান হবার পরপরই নিজেকে আবিষ্কার করেছেন ঘরের পাশের গ্রন্থাগারে, বিভিন্ন শিশু সংগঠন আর সমাজসেবামূলক সংগঠনের আলোছায়ায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দুরন্ত কিশোর স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখেছেন কাছ থেকে আর আতঙ্কের দিন গুনেছেন সারাক্ষণ মুক্তিযোদ্ধা দু’ভাইয়ের ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। গ্রাজুয়েশন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবন কেটেছে বিদেশী এয়ার লাইন্সের কর্মকর্তা হিসেবে।
তারাধুলো জল ও নস্টালজিয়া
যদি কখনো আসে, যত্নে ধরে লালন করি তারে। শুধু হৃদয়ে নয়, সর্বদেহে।
তোমরা তাকে যে রূপে দেখতে পাও, হয়তো তার নাম ই কবিতা।
যেমনঃ
আমার তেইশ ফুরায় না ||
আমি আজও তেইশে ই
যে তেইশে কাব্যের বুকের পাজর হয়েছি
পদ্মার তলে শ্যাওলা— মাটির প্রেম দেখেছি।
তেইশের তাপে মন উথলে ওঠে এই সকালেও
তেইশে বাকদত্তা চুল খোলা
তেইশে বসন্ত ভাব জাগা
তেইশে ই কেবল ভুল করে ভুলের প্রেমে পড়া!
তেইশের ঘোরে উড়ছি আজো আরো তেইশ ধরে
তেইশের ঘরে জমা করেছি গোপন আত্মা আহারে!
আমার তেইশ দুলছে আজও
পদ্মার জলে— ধরলার চড়ে
চন্দ্র সভার—আলো আকাশে
মাঝিহীন নৌকার খোলা পাটাতনে
তোমার লুকোচুরি ছোঁয়া-ছুঁয়ি পরানে।
প্রণয় মল্লার- Pranoy Mollar
হাসানআল আব্দুল্লাহ। জন্ম: ১৪ই এপ্রিল, ১৯৬৭। গোপালগঞ্জ জেলার গোপিনাথপুর গ্রামে। তিনি প্রবর্তন করেছেন নুতনধারার সনেট। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থর সংখ্যা দশ। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার কবিতার অনুবাদে প্রকাশ করেছেন বিশ্ব কবিতার কয়েকছত্র। অন্যান্য প্রকাশিত গ্রন্থ- সনেটগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা, আঁধারের সমান বয়স, এক পশলা সময় প্রভৃতি। ২০০৭ ও ২০১৫ সালে নিউইয়র্কের কুইন্স শহরের পোয়েট লরিয়েট ফাইনালিস্টের সন্মান পেয়েছেন।
বৃত্তের কেন্দ্রেও কবিতার মুখ
শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, অনুপ্রাণনের একাদশ বর্ষের ৪টি সংখ্যায় বাংলাদেশের ১০০জন নির্বাচিত কবি ও তাদের কবিতা নিয়ে আলোচনার তৃতীয় পর্বে এসে এই সংখ্যায় ২৩জন কবি ও তাদের কবিতা নিয়ে আলোচনা সমুহ সংকলিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, অনুপ্রাণন ত্রৈমাসিকের একাদশ বর্ষ অর্থাৎ এ-বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় সংখ্যায় বাংলাদেশের ১০০জন নির্বাচিত কবি তালিকা থেকে প্রতিটি সংখ্যায় ২৭জন করে মোট ৫৪জন কবির জীবনী, প্রকাশনা, প্রাপ্ত সম্মাননা ও পুরষ্কার, উল্লেখযোগ্য কবিতা এবং কবিতা নিয়ে বিশেষ আলোচনা ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই সংখ্যায় অর্থাৎ ৩য় পর্বে ২৩ জন এবং পরবর্তী ৪র্থ পর্বে আরো ২৩ জন কবি ও কবিতা নিয়ে মোট ১০০ জন কবির জীবনী, প্রকাশনা, পুরষ্কার ও সম্মাননা, উল্লেখযোগ্য কবিতা এবং কবিতা নিয়ে আলোচনা সংকলন সম্পন্ন হবে বলে আশা রাখছি।
বাংলাদেশের কবি ও তাদের কবিতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমরা দেখি যে, বাংলা সাহিত্যে বাংলাদেশের কবিদের অপরিসীম ভূমিকা ও অবদান রয়েছে। সাহিত্যমান বিবেচনায় তুলনামূলকভাবে কবিতাগুলো যে অত্যন্ত উচ্চস্থান দখল করে আছে, এটা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। একদিকে নান্দনিক বিবেচনায় কবিতাগুলো যেমন উত্তীর্ণ, অন্যদিকে ঠিক তেমনই চলমান সমাজ, রাজনীতি, শোসিত মানুষের সংগ্রাম, জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম ও মানবিক চেতনায় উদ্ভাসিত কবিতামালা গণমানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশের কবিদের মূল বিষয় হিসেবে বাঙলার প্রকৃতি, মানবতা, মানব প্রেম, মাতৃস্নেহ, পিতৃস্নেহ, ভ্রাতৃত্ব, সামাজিক সম্প্রীতি, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় ও সামাজিক মৌলবাদ বিরোধিতা, নারীবাদ ইত্যাদী বিষয়গুলো যেমন এসেছে ঠিক তেমনই পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে মানব-মানবীর প্রেম, বিরহ অথবা ব্যক্তি পরিচয়, আত্মানুসন্ধান, আত্মজিজ্ঞাসামূলক দার্শনিক বিষয়গুলো। ব্যক্তি, সমাজ ও দেশ কোনটাই অবহেলিত থাকেনি। জয়-পরাজয়, আশা-হতাশা, সংগ্রাম, সংক্ষুব্ধতা অথবা আপসকামিতা ছাড়িয়ে তাদের কবিতা হয়েছে মূলত জীবনধর্মী। তাই বাংলাদেশের কবিদের কবিতায় বহুলাংশে প্রকৃতি, প্রেম ও জীবনের অপার সৌন্দর্য সবসময় উঁচুতে তুলে ধরতে দেখা গেছে।
শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, অনুপ্রাণন, একাদশ বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা
সম্পাদকীয় – অনুপ্রাণন – দ্বাদশ বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা, গল্পকার ও গল্পসংখ্যা (চতুর্থ পর্ব)
প্রকাশিত হলো ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন দ্বাদশ বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা, গল্পকার ও গল্প সংখ্যা- চতুর্থ পর্ব। গল্পকার ও গল্পসংখ্যা চতুর্থ পর্ব প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশের ১০০ জন নির্বাচিত গল্পকার, তাদের জীবনী, প্রকাশনা, পুরস্কার ও সম্মাননা, গল্পকার রচিত গল্পসাহিত্য নিয়ে আলোচনা এবং একটি উল্লেখযোগ্য গল্প সংকলিত করার কাজ শেষ হলো। এই সংখ্যায় পূর্বের তিনটি সংখ্যার মতোই ২৫ জন গল্পকারকে নিয়ে লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
দ্বাদশ বর্ষে এসে ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন থেকে বাংলাদেশের ১০০ জন গল্পকার নিয়ে প্রবন্ধ একত্রিত করে সংকলন প্রকাশ করার কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। প্রথম কাজটি ছিল বাংলা সাহিত্যের গল্পকারদের মধ্য থেকে কারা বাংলাদেশের গল্পকার সেটা নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করা, দ্বিতীয়তে এসে বাংলাদেশের গল্পকারদের মধ্য থেকে ১০০ জন গল্পকার বাছাই করা, তৃতীয়তে এসে গল্পকারদের গল্পসাহিত্য নিয়ে সামষ্টিক আলোচনা বা প্রবন্ধ লেখার জন্য লেখক নির্ধারণ করা। এই কয়টা ধাপের কাজ যতটুকু না কঠিন ছিল তার থেকে বেশি কঠিন ছিল যেসকল গল্পকারের প্রকাশিত গল্পগ্রন্থগুলো সহজলভ্য ছিল না সেগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে জোগাড় করা। এই কাজ করতে আমাদের চেষ্টার সফলতার পেছনে যারা কাজ করেছেন, সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমরা তাদের কাছেও বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ যারা বাংলাদেশের নির্বাচিত ১০০ গল্পকারকে নিয়ে এক একটি প্রবন্ধ লিখে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কাজে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন একাদশ বর্ষে এসেও একইভাবে বাংলাদেশের নির্বাচিত ১০০ কবি তাদের কবিতা নিয়ে চারটি সংকলন প্রকাশ করেছে। তারপর দ্বাদশ বর্ষে এসে বাংলাদেশের নির্বাচিত ১০০ গল্পকারকে নিয়ে আরও চারটি সংকলন অনুপ্রাণন থেকে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্য একটাই। সেটা হচ্ছে- যারা আমাদের কবিতা ও গল্প সাহিত্যের ভিত্তি গড়েছেন তাদের সাথে এবং তাদের কাজের সাথে প্রজন্মকে পরিচিত করে তোলা। আমাদের নির্বাচিত গল্পকারদের মধ্য যিনি সর্বজ্যেষ্ঠ তিনি হচ্ছেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন। তার জন্ম ১৮৯৭ সালে আর মৃত্যু ১৯৭৮ সালে। আর নির্বাচিত ১০০ গল্পকারের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হচ্ছেন ইমতিয়ার শামীম। তিনি ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা পূর্ব সময় এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তাদের অধিকাংশই সাহিত্যচর্চা করেছেন। ফলে তাদের সাহিত্য এমন একটা বিশেষ সময়কে ধারণ করেছে যেখানে দুটি দেশভাগের অভিজ্ঞতা হয়েছে। দুটি দেশভাগের কার্যকারণের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে তাদের লেখায় যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ন্যায্যতা ভিত্তি পেয়েছে ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের স্বত্ব, সত্তা ও মৌলিকত্ব নির্মাণে গল্পকারগণ উদ্যোগী হয়েছেন। আমরা অনুপ্রাণন, বিশ্বের বাংলা সাহিত্যে বাংলাদেশের স্বকীয় অবস্থানের বাস্তবতাটিকে প্রবলভাবে অনুভব করি এবং গর্বিত হই।
বাংলাদেশের গল্প-সাহিত্যের চরিত্রদের জীবনের শেকড় অধিকাংশেই প্রাকৃত জীবনে প্রোথিত। মাটি ও সবুজের সাথে সম্পর্কিত। মাত্রই এক অথবা খুব বেশি হলে দুই প্রজন্ম যারা গ্রামের শ্যামলিমা থেকে নগরের কঠিনতায় অভিবাসিত হয়েছে। নগরে থেকেও তারা যেন শহরতলীতে বসবাস করছে। যাদের কারও কারও শরীর থেকে এখনও মাটির গন্ধ মিলিয়ে যায়নি। তাই অধিকাংশ গল্পের দৃশ্যপট হয় শহর না-হলে শহরতলী। গল্পের মানুষগুলো কৃষক না-হয় কৃষকের শিক্ষিত সন্তান। দৃশ্যপটের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়গুলোর বিন্যাসে তাই কখনও গ্রাম সম্পূর্ণভাবে তিরোহিত হয়ে যায়নি।
গ্রামের রূপান্তর কাহিনী হোক অথবা শহর থেকে নগরায়ণের দিকে উত্তরণের কাহিনী হোক প্রায় সকল ক্ষেত্রেই জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে এখনও পরিবার; তাই কাহিনী যতটা না ব্যক্তিকে নিয়ে তার থেকে বেশি হচ্ছে পারিবারিক অথবা সামাজিক। কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্তই বাংলাদেশের গল্পের প্রধান চরিত্র। ধনী পরিবারের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব, কলহ, প্রেম-ভালোবাসার গল্প হাতে গোনা। বাংলাদেশের গল্পকারদের গল্পের প্লটে সংঘাত ও সংঘর্ষের নিরসনই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু এমন কিছু প্লট সৃষ্টি করতেও দেখা গেছে যেখানে সংকট নিরসন হয়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশের গল্পকারদের গল্প অধিকাংশই একটি ইতিবাচক সমাধান অথবা ইঙ্গিত পাওয়া যায় এবং নেতিবাচক চরিত্র খুব কমই গল্পের সম্পূর্ণতার ওপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের গল্প রোমান্টিক ভাব ও আবেগে ভারাক্রান্ত হতেই দেখা যায় বেশি এবং পাঠকেরা সেগুলো পছন্দও করছেন। কিন্তু গল্পকাররা তাদের গল্পে ভাব ও আবেগের ভারসাম্য রক্ষা করেছেন, বাস্তব বিচারে সেই গল্পগুলো বোদ্ধা ও পরিপক্ব পাঠক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
বাংলাদেশের গল্পের আখ্যানবস্তুতে রোমান্টিকতার প্রভাব বেশি থাকলেও এক ঝাঁক গল্প আছে যেখানে জীবনজিজ্ঞাসার দর্শন চিন্তায় জাগরিত হতে দেখা যাচ্ছে। গল্পের গদ্যনির্মাণ যথেষ্ট পরিপক্ব। বানান, ব্যাকরণ, বাক্য গঠন, রূপকের নান্দনিক ব্যবহারে সমৃদ্ধ। গল্পের শুরুর চমক নিয়ে গল্পকারদের মধ্যে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা যায়। এই ব্যাপারে ভিন্নমত আছে, যদিও পারিবারিক পটভূমিতে নির্মিত গল্পগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চমক দিয়ে শুরু করার একটা প্রবণতা রয়েছে। অপ্রাসঙ্গিক সংলাপ কোনো কোনো গল্পকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করেছে। কিন্তু বলা যেতে পারে অধিকাংশ গল্পই দৃশ্যপট বর্ণনায় এবং সংলাপের ওপর গল্পকাঠামো নির্মাণ করার কাজটি করেছেন মেদহীন গদ্যে। গল্পগুলো একরৈখিক হয়নি আবার পার্শ্বচরিত্রের উপ-গল্পগুলো গল্পের প্রধান আখ্যানকে ভারাক্রান্ত করেনি। সময়, কালের প্রতি গল্পগুলো সুবিচার করেছে যেখানে সত্য ইতিহাসের সাথে অহেতুক বিতর্কে অবতীর্ণ হয়নি। গল্পের পক্ষ ও প্রতিপক্ষের অস্তিত্ব ও তাদের আচার-আচরণ অবাস্তব করে তোলা হয়নি। গল্পের চরিত্রগুলোকে দেবতাতুল্য অথবা উল্টোদিকে শয়তানতুল্য করে অবাস্তব কাল্পনিক চরিত্র করে গড়ে তোলা হয়নি। বাংলাদেশের গল্পে রূপকের ব্যবহারে ফ্যান্টাসির তুলনায় বাস্তবের বস্তুগুলোকেই নান্দনিক করে তোলা হয়েছে।
সব মিলিয়ে নির্বাচিত ১০০ গল্পকারের গল্পগুলো সামগ্রিকভাবেই এমন একটি উচ্চতর স্তরে উত্তীর্ণ হয়েছে, যখন বাংলাদেশের গল্পসাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের গল্পের ভাণ্ডারে শামিল হওয়ার যোগ্যতাকে আর অস্বীকার করা যায় না।
অনুপ্রাণন দ্বাদশ বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা- গল্পকার ও গল্প সংখ্যা চতুর্থ পর্ব
মওলানা জালাল উদ্দিন রুমির খোঁজে তুরস্কে
ঝুমকি
কত পথ পার হলাম ঝুমকি;
তবু মানুষ চেনা হলো না!
বারো প্যাচের নারী, চোখে জড়িচুমকির খেল্ দেখালো
অমলেশ সেই দেখে দেখে শেষে উন্মাদের খাতায় নাম লেখালো
পত্রিকার শেষ পাতায় ওকে নিয়ে কতো ফিচার হলো
তবুও অমলেশকে কেউ ভালোবাসলো না।
ঝুমকি পৃথীবির সবচে’ হিংস্র প্রাণী মানুষের
গায়ে বিপদের গন্ধ লেগে আছে;
ফাঁক পেলেই নষ্টামি করতে লেগে যায়
কেউ কেউ বলে সত্যিকারের ভালোবাসা নেই
বড় র্দূভাগা ওরা!
সত্যিকারের ভালোবাসাই দেখেনি চোখে; পাবে কোত্থেকে
প্রেমালিঙ্গম
প্রায় তিন দশক ধরে কাব্যচর্চায় আত্মনিবেদিত কবি হানিফ মোহাম্মদ এই প্রথম তাঁর কাব্য “পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য” নিয়ে গ্রন্থ-প্রকাশনার জগতে পা রাখলেন। এ কাব্যটি দীর্ঘ সাধনায় অর্জিত তাঁর সাহিত্যিক ও কাব্যাদর্শিক চেতনার ফসল। জীবন ও সমাজের নানা ক্ষেত্রের ক্লেদ, দুর্গতি ও বঞ্চনা নিয়ে দুর্বিষহ সময় কবির দৃষ্টিতে যেভাবে ধরা পড়েছে, তার-ই কিছু ছবি ফুটে উঠেছে এ কাব্যের বিভিন্ন কবিতায়। কবি শুধু বৌদ্ধিক ও অন্তরঙ্গ ভাষিক-রেখায় সমাজের নানা স্কেচ এঁকেই ক্ষান্ত হননি, পরোক্ষ উচ্চারণে নিজের আদর্শভিত্তিক একটি আগামির স্বপ্ন ছড়িয়েছেন কবিতার পর কবিতায়। সর্বদাই তাঁর আবেগ থেকেছে নান্দনিক রসধারায় সিঞ্চিত এবং কাব্যবোধ প্রগতিশীল চেতনায় ঋদ্ধ। তিনিও, প্রত্যেক পূর্ণতাপ্রাপ্ত কবি যেমন, স্বতন্ত্র বিশ্বাস ও আদর্শ নিয়ে একটি আলাদা কাব্যভুবনের নির্মাতা। তাঁর মাঝে কোন ঘোরপ্যাঁচ নেই; সাবলীল ও সহজবোধ্য ভাষায় অনেকটা প্রত্যক্ষ শৈল্পিক উপস্থাপন তাঁর। বঞ্চনা-পীড়িত জীবন ও সমাজের নানা চালচিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাঁর কাব্যবোধ ও শৈলী তিলমাত্র অপচিত হয়নি।
তাঁর কবিতার দৃশ্যমান, পরাবাস্তব ও বিমূর্ত চিত্রকল্পগুলো একাধারে পেলব, দৃষ্টিনন্দন, বোধ-উদ্দীপক ও হৃদয়স্পর্শী। তাঁর পংক্তিগুলো গণমানুষের চেতনার সাথে সমানুভূতিতে, প্রেমের পরাকাষ্ঠায় এবং নিসর্গ-সুষমার প্রদীপ্তছটায় অনাস্বাদিতপূর্ব প্রতিমাপুঞ্জ। শব্দচয়ন ও বাণীবন্ধ গঠনে তিনি যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। পুরো কাব্যটিতেই তাঁর পরিমিত বাকভঙ্গি ও পরিশীলিত মননের প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। সেইসাথে শব্দাবলীর যথাযথ বিন্যাস ও ছন্দময় প্রবহমানতা তাঁর কবিতার বাণীবন্ধকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।
পরিশেষে, কবি হানিফ মোহাম্মদের বিশ্বাস এবং ব্যতিক্রমী চিন্তা-চেতনার সাথে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও আমি নির্দ্বিধায় বলবো যে, কাব্যটি শৈল্পিক মানদ-ে উন্নত এবং যথেষ্ট রস সমৃদ্ধ।
আবুল কাইয়ুম
প্রাবন্ধিক, সাহিত্য সমালোচক ও অনুবাদক
পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য
ফজিলা ইসলাম ফৌজি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ১৯৭২ সালের ৮ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃনিবাস মেহেরপুর জেলার কোলা গ্রামের বাবু পাড়ায়। পিতার নাম মোঃ হাফিজ উদ্দিন মাতার নাম মোছাঃ রাকিবা বেগম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগ (অনার্স মাষ্টার্স) শেষ করে ১৯৯৯ সালে রাজশাহীর ইসলামিয়া কলেজে শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে কলেজ পরিবর্তন করে বর্তমানে তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গাংনী মহিলা ডিগ্রী কলেজে হিসাববিজ্ঞানের প্রভাষক হিসাবে নিয়োজিত আছেন।
মানচিত্রে রক্তক্ষরণ
পলিয়ার-এর কবিতায় দার্শনিকতা, নান্দনিকতার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাছাড়া উপমাশ্রয়ী চিত্রকল্প অভিনব ও অসাধারণ। যেসব পাঠক কবিতায় আবেগের তারল্য এড়িয়ে চলতে চান, দর্শন খুঁজতে চান-বোধে ভাবনায় জীবনের সারাংশের শিল্পরূপ খুঁজতে চান, তারা তার কবিতায় কল্পনা ও প্রজ্ঞার যোগসূত্রে মেজর কবিতা খুঁজে পাবেন।
-খালেদ রাহী
পলিয়ারের কাব্যভাষা একেবারে নিজস্ব। স্বতন্ত্র সুর তৈরিতে সে সার্থক। একই সাথে তার কবিতা পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
-শঙ্খচূড় ইমাম
পলিয়ার সবল ও দৃঢ়প্রত্যয়ী, তার দীর্ঘস্থায়ী বয়ান মাটি ও প্রেমিকাসংলগ্ন। কবি যেন তার ইংলিশ প্যান্টের পকেটে করে সেই কত আগে নিয়ে এসেছেন মাঠ ও উঠোন গড়ানো সোনালি কিছু ধান, সুযোগ পেলে তিনি এই ধান পাঠককে বের করে দেখান, এই ধান তার কবিসত্ত্বার স্মারক যেন, কবিতা তার কাছে কৃষিজ। কবি তার জন্মগ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন কিছু নিজস্ব শব্দও, যা পরিমিতভাবে নৃত্যরত ও সুমিষ্ট আবরণযুক্ত গাঢ় চিত্রকল্পময়।
-মোসাব্বির আহে আলী
পলিয়ার ওয়াহিদের কবিতা মানে নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া। নিজস্ব উপলব্ধির এক গভীর উপস্থাপন। নিজেকে ক্রমাগত অনুবাদ করে যাওয়া।
-মাহফুজ পাঠক
দোআঁশ মাটির কোকিল
শফিক হাসান-
জন্ম : ০২ জানুয়ারি, ১৯৮৩- তিতাহাজরা, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী। বেড়ে ওঠা পাহাড়তলী, চট্টগ্রামে। লেখাজোখার প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। প্রথম লেখা ছাপা হয় মাসিক রহস্যপত্রিকায়। ২০০০ সালের মাঝামাঝি থেকে লেখালেখিতে দুর্মর মনোযোগী হন। লিখতে থাকেন দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিকসহ অজস্র পত্রপত্রিকায়। সমানতালে লিখেছেন লিটল ম্যাগাজিনেও। পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবত সম্পাদনা করছেন পাঠকপ্রিয় লিটল ম্যাগাজিন ‘প্রকাশ’। গল্প লিখতে এবং গল্পকার পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সিরিয়াস লেখার পাশাপাশি রম্য ধাঁচের রচনায়ও মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।
পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা, লেখালেখি এবং সাংবাদিকতাকে। বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিকে সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত।
খোলস
সম্পাদকীয়, কুহক মাহমুদ স্মৃতি সংখ্যা। অনুপ্রাণন- অষ্টম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা-
অনুপ্রাণন ও কুহকের কথা
কুহকের কথা বলতে গেলে অনুপ্রাণনের কথা আসবেই। কেননা, কুহক অর্থাৎ কুহক মাহমুদ, শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন-এর সাথে ২০১২ সালে জন্মলগ্ন থেকেই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন ৫টি বছর। কুহকের সাথে আমার পরিচয় সরসিজ আলীমের মাধ্যমে। কবি সরসিজ আলীম তখন ‘ভনে যাহা ভনে’ শিরোনামে একটা ট্যাবলয়েড সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করতেন। ফেসবুকের মাধ্যমেই কবি সরসিজ আলীমের সাথে আমার পরিচয়।
এই পরিচয়ের কিছুদিন পূর্বে হোসনে আরা বেগম নামে একজন মধ্যবয়সী মহিলা ফেসবুকে আমাকে নক করেন। তিনি তখন ফেসবুকে ‘ফেসবুক বইমেলা ২০১২’ নামে একটা গ্রুপের এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে বই প্রকাশ এবং সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল তরুণ কবি-সাহিত্যিকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। এক বিকেলে আমরা ছবির হাটে মিলিত হই, যেখানে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন তরুণ কবি-সাহিত্যিক। তারা হলেনÑ রেজওয়ান তানিম, স্থপতি রাজীব চৌধুরী, কবি সুমি সিকানদার, ফেসবুকের মানবিক গ্রুপের অঞ্জন, ইহতিশাম আহমাদ টিংকু এবং আরো দুই-একজন হবে যাদের নাম এই মুহূর্তে আমার ঠিক মনে পড়ছে না। পরে এই বৈঠকগুলো পাবলিক লাইব্রেরির ক্যান্টিনের সামনের বাঁধানো উঠোনে অথবা কখনো কখনো হোসনে আরা বেগমের শ্যামলীর বাসায়ও অনুষ্ঠিত হতো। এই আলোচনা বৈঠকগুলোর মধ্য দিয়েই প্রথমে আমরা পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার-কক্ষে একটি ‘নবীন লেখক সমাবেশ অনুষ্ঠান’ করার সিদ্ধান্তে উপনীত হই। এই পর্যায়ে কবি সরসিজ আলীমও এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়। সমাবেশ অনুষ্ঠানের পর প্রথম বৈঠকে যখন একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয় এবং যখন পত্রিকার জন্য একটি নাম ও একটি সম্পাদনা পরিষদ গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়, তখন কবি সুমি সিকানদার পত্রিকাটির নাম ‘অনুপ্রাণন’ করার প্রস্তাব আনেন, যে প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠ উদ্যোক্তাদের সমর্থন লাভ করায় গৃহীত হয়। ওই বৈঠকগুলোতে পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদ গঠন নিয়ে আলোচনা হলে সর্বসম্মতিতে আমার নাম প্রকাশক, হোসনে আরা বেগম সম্পাদক, কবি সরসিজ আলীম নির্বাহী সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদক হিসেবে রেজওয়ান তানিম, রাজীব চৌধুরী, সুমি সিকান্দার, ইহতিশাম আহমাদ টিংকুসহ আরো দুই-একজনের নাম প্রস্তাব হয়। এই প্রস্তাব গৃহীত হলে ঠিক করা হয় যে, সম্পাদক ও সম্পাদনা পরিষদের সদস্যরা পত্রিকার কাজে অভিজ্ঞ আরো দুই-একজন ব্যক্তি যুক্ত করে সম্পাদনা পরিষদ সম্প্রসারিত করতে পারবেন।
এর কিছুদিন পর যখন হোসনে আরা বেগমের বাসায় সম্পাদনা পরিষদের প্রথম সভা হয়, তখন সেই সভায় কবি কুহক মাহমুদ ‘অগ্রদূত’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার মনি মোহাম্মদ এবং তাহমিদের নাম যুক্ত হয়। ওই সভায় কবি কুহক মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভাতেই কবি কুহক মাহমুদের সাথে আমার পরিচয়। সেই সভায় লেখা সংগ্রহসহ পত্রিকা বের করার যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এই সূচনা সংখ্যার লেখা বাছাই এবং অনুপ্রাণনে অন্যান্য বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের সদস্যদের যুক্ত করা নিয়ে কবি সরসিজ আলীম এবং হোসনে আরা বেগমের মধ্যে তুমুল বিতর্ক হয় এবং সেই বিতর্ক এমন তিক্ততার পর্যায়ে উপনীত হয় যে, সূচনা সংখ্যাটির কাজ যখন প্রেসে চলছিল, ঠিক তখন হোসনে আরা বেগম পত্রিকার সম্পাদক পদ থেকে এবং রাজীব চৌধুরী, সুমি সিকানদারসহ আরো দুই-একজন অনুপ্রাণন ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পরিস্থিতিতে পত্রিকাটিতে আমার নাম প্রকাশক ও সম্পাদক, সরসিজ আলীমের নাম নির্বাহী সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদক হিসেবে শুধুমাত্র রেজওয়ান তানিম, কুহক মাহমুদ, মনি মোহাম্মদ ও তামজিদের নাম যুক্ত করে শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন পত্রিকার সূচনা সংখ্যা নভেম্বর ২০১২-এ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে কুহক মাহমুদ অনুপ্রাণন পত্রিকাটির সাথে পাঁচ বছর যুক্ত ছিলেন। এই পাঁচটি বছরে কুহকের সাথে অনুপ্রাণনের মিথস্ক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ এই সম্পাদকীয়’র পরিসরে দেয়া সম্ভব না।
শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন একটি অবাণিজ্যিক পত্রিকা। এই অবাণিজ্যিক কথাটির অর্থ বারবার ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন দেখা যায়। যেহেতু মনে করা হয়, পত্রিকাটি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি সচেতন থেকে স্বাধীন ও মুক্ত মতামতের চর্চা ও প্রকাশ করবে, অর্থাৎ পত্রিকাটি আর্থিকভাবে কোনো রাজনৈতিক দল অথবা কোনো সামাজিক সংগঠন অথবা দেশের সরকার অথবা করপোরেট মহলের পৃষ্ঠপোষকতার প্রত্যাশা করবে না। অতএব পত্রিকার পাঠকের কাছে সামান্য যে বিনিময়-মূল্য পত্রিকাটি গ্রহণ করবে, তা দিয়েই পত্রিকাটির যাবতীয় প্রকাশনা খরচ চালানো হবে।
যে কারণে অনুপ্রাণনের সাথে যুক্ত সবাইকে মোটামুটি স্বেচ্ছাশ্রম অথবা সামান্য কিছু সম্মানীর টাকায় চলতে হতো। ২৮ আগস্ট ২০১৯ তারিখে তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে অর্থাৎ ৬ আগট ফেসবুকে তাঁর সর্বশেষ পোস্টে অনুপ্রাণনের প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থসংকটকালে কবি কুহকের সেই কৃচ্ছ্রসাধন ও কষ্টের কথাই বর্ণনা করেছিলেনÑ
“বাজেট ১০০ টাকা। বাসা থেকে বাসে গুলিস্তান ১০ টাকা। সেখান থেকে বাসে কাঁটাবন। শাহবাগ আসলেই জ্যাম। কোনোদিন হেঁটে বা প্রচণ্ড খিদায় নেমে পড়তাম বাস থেকে। হোটেলে প্রবেশ করে করুণ চোখে দু’টি পরোটা আর ডাল দিয়ে নাশতা করে হাঁটতাম। তারপর অফিস। কাজ। দুইটা না বাজতেই খিদা! সস্তাদরের হোটেলে ২৫ টাকার ভাত-ডিম বা মাছ, ডাল নেই। চলে যেত খাবার। কতদিন ১০ টাকা বেশি দিয়ে সবজি বা অন্য তরকারি নিতে পারিনি! আবার অফিস। কাজ। এই করেই সন্ধ্যা।
পুরি-চা ১০ টাকা। আবার কাজ। ৬০ টাকা শেষ। অফিস শেষ করে হাঁটতাম। ভার্সিটির মাঝ দিয়ে গুলিস্তান। বাসের লাইনের অপেক্ষা। কোনোদিন ৫ টাকার বাদাম। তারপর বাসা। ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা। মেয়ে অপেক্ষা করত খাবার নিয়ে। ছেলে-মা অন্য বাড়ি থাকত। মেন্যু বেশিরভাগ ডিম ভাজা, ডাল। পেট পুরে খেতাম। আহ! কি সব দিন গিয়েছে। আনন্দ বেদনার। স্মৃতি কাঁদায়। (৬ আগস্ট, ২০১৯)”
সে সময়ে পত্রিকার কাজ করার পাশাপাশি কবি কুহক মাহমুদ অনুপ্রাণন প্রকাশন থেকে “গোধূলির প্রস্থানে জ্বালাও পূর্ণিমা (ফেব্রুয়ারি ২০১৪)” এবং “না-মানুষ (নভেম্বর ২০১৪)” শিরোনামে দু’টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই বই দুইটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এই সংখ্যার স্মৃতিচারণ বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে। বলতে গেলে কবি কুহক মাহমুদ অনুপ্রাণনের সাথে যুক্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই যকৃতের সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও রোগের চিকিৎসা করা দূরে থাক, শরীরের প্রতি যতœ নেয়া দূরে থাক, তাঁর চলমান জীবন যাপন পদ্ধতি তাঁর শরীরের ক্ষতিই বৃদ্ধি করেছে। এসব ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার জন্য বারবার বলা সত্ত্বেও কবি কুহক মাহমুদ কারো কথারই কর্ণপাত করেনি। যার ফলে যথাযথ চিকিৎসা ও সেবার অভাবে তাঁর শরীরের অবস্থা দিনে দিনে অবনতি হতে থাকে। অসুস্থতার জন্য গত প্রায় দু’বছর কুহক আর সময় দিতে পারেনি অনুপ্রাণনকে। বলেছিলাম, না-মানুষের ২য় খ- লিখে দেন প্রকাশ করি। বলল, পারবো না। এই শরীরে কুলায় না।
কুহক মাহমুদের অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকগ্রস্ত। অনুপ্রাণন-এর সাথে যুক্ত সকলের পক্ষ থেকে কুহকের বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করি। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে “কুহক মাহমুদ স্মৃতি সংখ্যা” হিসেবে নিবেদন করি শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণনের ৮ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যাটি।
অষ্টম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা
সময়ের চেয়ে বড় ও অনপেক্ষ সমালোচক পৃথিবীতে বিরল। যে কোন ব্যক্তি বা ঘটনাকে বর্তমানে বসে অবলোকনের চেয়ে কালান্তরে পর্যালোচনার প্রয়াসই উত্তম ও নির্মোহ। ঊনবিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেওয়া রবীন্দ্রনাথকে একবিংশ শতাব্দীতে এসে পর্যালোচনা করলে যে নিরপেক্ষ নির্যাস পাওয়া যায় তাই-ই হলো সত্যিকারের রবীন্দ্্রনাথ। এর মাঝেই নিহিত আছে রবীন্দ্র-মাধুর্যের প্রকৃত পরিচয়। বাঙালির বাতিঘর রবীন্দ্রনাথের বড় পরিচয় কবি হিসেবে নয়, বরং দার্শনিক হিসেবে। রবীন্দ্রবাক্য সহজ বটে তবু অতল গভীর। রবীন্দ্রনাথের চর্মচক্ষুর চেয়ে অন্তর্চক্ষুর দার্শনিক ব্যাপ্তি অনেক বেশি। ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ কালের আলোয় আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ একজন কালের শিক্ষক। তাঁর সমবায় কৃষি এবং কৃষিব্যাংকের ভাবনা এনে দিয়েছে ব্রাত্যজনের মাঝে প্রগতির প্রবাহ। হাজারো বিরুদ্ধ-স্রোত ঠেলে রবীন্দ্রনাথ মনুষ্যত্বের জয়গান গেয়ে গেছেন জীবনের পথে। ব্যক্তি নয়, ব্যক্তির সুকর্মকে প্রাধান্য দিয়েই রবীন্দ্রনাথ ‘সোনার তরী’র স্বপ্ন দেখেছেন। কর্মের ফসলেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন মানবজীবনের সার্থকতা।
SHEKARER RABINDRANATH O BIBIDHO - Pijush Kanti Barua
১০০ অণুগল্প
অনিন্দ্য আসিফ। জন্ম- ২৩ মে, ১৯৮১। কতিয়াচর, কিশোরগঞ্জ। পিতা- মোঃ আব্দুল হাই, মা- হাওয়া আক্তার।
শাদা অথবা শূন্য
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.