Description
ভূমিকা :
মানুষ মানে চোখের ভেতর ভাসবে হৃদয়
মানুষ মানে সবটুকু সুখ ভালোবেসে।
তরুণ কবি। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থে এই শ্লোগান দিয়েই যাত্রা শুরু করেছেন। তার সাফল্য অনেক জ্যেষ্ঠ কবির ঈর্ষার কারণ হতে পারে।
$ 1.06 $ 1.76
লেখক পরিচিতি :
সাদাত হোসাইন। জন্ম: ২১মে. ১৯৮৪।
তরুণ লেখক, আলোকচিত্রী ও নির্মাতা। যার কবিতার বইটি প্রকাশের আগে উপন্যাস ও ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের কবিতা ভাবনাটা খুব সোজা, কবিতা হচ্ছে এমন এক শিল্প যার মাঝে যখন ইচ্ছে তখন টুপ করে ডুব দেয়া যায়। লেখকের নির্মাণ ÔবোধÕ স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্বাক চলচ্চিত্রটি দেশে বিদেশে যথেস্ট সমাদৃত হয়েছে। ২০১৩ সালে Ôকালচারাল এচিভমেন্টÕ ক্যাটাগরিতে জিতে নিয়েছেন Ôজুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালÕ-এর Ôটেন আইটস্ট্যান্ডিং ইয়াং পারসনস অফ বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ডÕ।
ভূমিকা :
মানুষ মানে চোখের ভেতর ভাসবে হৃদয়
মানুষ মানে সবটুকু সুখ ভালোবেসে।
তরুণ কবি। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থে এই শ্লোগান দিয়েই যাত্রা শুরু করেছেন। তার সাফল্য অনেক জ্যেষ্ঠ কবির ঈর্ষার কারণ হতে পারে।
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
রাজন্য রুহানি। পরিবারের দেওয়া সনদসাক্ষ্য নাম মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। জন্ম: ২রা নভেম্ভর ১৯৮০, জামালপুর জেলা শহরের হাটচন্দ্রায়। কলেজে পা দেবার সাথে সাথেই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মফস্বল সাংবাদিকতার পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে বারবার কবিতার কছেই ফেরা। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং। ১৯৯৮ থেকে কবিতার ভাঁজপত্র শব্দদূত সম্পাদনার সাথে যুক্ত। ঐ বছরই অন্যান্য লেখক সহযোগে আলোচনাগ্রন্থ- ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ; আতিয়ার রহমানের ৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এটি লেখকের প্রকাশিত এককবই।
গল্প সমাপ্তির গান
লেখক পরিচিতি :
হান্নান হামিদ, লেখক নাম কালের লিখন। জন্ম: আগস্ট, ১৯৮৪। জামালপুর। ‘বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস’ লেখকের প্রথম বই।
বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস
লেখক পরিচিতি :
শঙ্করী দাস। জন্ম: ৮ই মে, ১৯৫৮ সনে নিজ জেলা জামালপুরে। কবি প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থগুলোÑ গল্প: ‘প্রতিবিম্ব ও অন্যান্য গল্প’ ‘জলমাটির গল্প’ ও ‘রাহুর চন্দ্রগ্রাস’। কবিতাÑ ‘ঘাসবোনা গ্রাম তাঁতবোনা গ্রাম’। স্মৃতিচারণমূলকÑ ‘গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’। গল্পের জন্যে পেয়েছেন পাক্ষিক ঐকতান (বর্ধমান) পত্রিকা পদক। শিশু কবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ও নক্ষত্র সাহিত্য পুরস্কার।
বিহান বেলার ঈশ্বর
সঞ্চয় সুমন। ঢাকাবাসী এক কবি। যে শুধু কল্পনার রঙে আঁকে শব্দ খেলার মাঠ। এই গ্রন্থটি কবির প্রথম কাব্যফসল।
গুপ্ত সমরে মুক্তির ঠিকানা
হাসানআল আব্দুল্লাহ। জন্ম: ১৪ই এপ্রিল, ১৯৬৭। গোপালগঞ্জ জেলার গোপিনাথপুর গ্রামে। তিনি প্রবর্তন করেছেন নুতনধারার সনেট। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থর সংখ্যা দশ। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার কবিতার অনুবাদে প্রকাশ করেছেন বিশ্ব কবিতার কয়েকছত্র। অন্যান্য প্রকাশিত গ্রন্থ- সনেটগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা, আঁধারের সমান বয়স, এক পশলা সময় প্রভৃতি। ২০০৭ ও ২০১৫ সালে নিউইয়র্কের কুইন্স শহরের পোয়েট লরিয়েট ফাইনালিস্টের সন্মান পেয়েছেন।
বৃত্তের কেন্দ্রেও কবিতার মুখ
নাহিয়ান ফাহিম। জন্ম: ২৩শে মার্চ, ১৯৮৪। ময়মনসিংহ জেলা। ঢাকাতে বেড়ে ওঠা। মূলতঃ পাঠক, ফলতঃ লেখক। সাহিত্য পত্রিকা ‘জলমাঝি’র সম্পাদক। মার্কেংটিং বিভাগে স্নাতকোত্তর। পেশাগত জীবনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিনদুপুরের নোটবই’।
মধ্যবিত্ত কবিতা
লেখক পরিচিতি :
নিখিল নওশাদ। জন্মসন: ১৯৮৯ইং। বড়িয়া, ধুনট, বগুড়া, বাংলাদেশ। ‘বিরোধ, ‘নিওর’ ও ‘নীড়’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই। এছাড়া ছোটগল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।
এটি একটি চিৎকার
রঞ্জনা বিশ্বাস। জন্ম: ১০ডিসেম্বর, ১৯৮১। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে খ্রিস্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ ও ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’ কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবির প্রকাশিত কাব্যফসল। এছাড়া কবি কবিতাচর্চার পাশাপাশি ফোকলোরচর্চাকেও ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। নৃ-তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মী কবির আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ ও ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ প্রকল্পে কাজ করছেন। এছাড়া এখন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগে কর্মরত আছেন।
বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস
সাঈদা মিমি। জন্ম: ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮। বরিশালে। শৈশবের পুরোটাই এবং অর্ধেক কৈশোর কেটেছে পদ্মাপাড়ে, মানিকগঞ্জের ঘোনাপাড়া গ্রামে। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবনে। প্রথম প্রকাশিত হয় ইত্তেফাকে। ফ্রীল্যান্স সাংবাদিকতা, স্কুল মাস্টারিং, বায়িং হাউজের এডমিন, হাউজিং কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ইত্যাদি বিচিত্র কর্মজীবন মেষে অতঃপর গৃহিণী। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সব নিয়ে গেছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস’ ‘ফারাও কুমারী’ ও ই-বুক ‘কীর্তনখোলা’।
একজন মৃতের ডাইরি
লেখক পরিচিতি :
হামীম ফারুক। পুরো নাম: গোলাম ফারুক হামীম। জন্ম: ২৪শে অক্টোবর, ১৯৬৩, ঢাকা। প্রথম তারুণ্যে কাজ করেছেন ইংরেজি পত্রিকা নিউ নেশন-এ। সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে এখন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। মূলস্রোতের সাহিত্য পত্রিকাগুলোতে একটানা লিখেছেন ১৯৮৭ পর্যন্ত। মাঝখানে বিরতি দিয়ে পুনরায় আগমন প্রথম কবিতার বই ‘রোদ ও ক্রোধ, মাঝখানে সাঁকো’ দিয়ে। একটি ই-বুক আছে, ‘নক্ষত্রের চিরকূট’। এটি লেখকের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ।
প্রকৃতি পুরাণ
বাবুল হোসেইন। জন্ম: তেঘরিয়া, সৈয়দপুর, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।
আত্মমুগ্ধ শিকল
আলতাফ হোসেন-এর জন্ম ২৭ অক্টোবর ১৯৪৯। পৈতৃক নিবাস কিশোরগঞ্জ। বাবার চাকরিসূত্রে শৈশব কৈশোর কেটেছে পাটনা, কলকাতা, চাটগাঁ, করাচি ও ঢাকায়। ১৯৬৪ থেকে পুরোপুরিভাবে ঢাকায় বসবাস। অনার্স ও এমএ করেছেন বাংলায়। আলিয়ঁস ফ্রঁসেস, ঢাকা থেকে দু-বছর ফরাসি ভাষা শিখে সনদ পেয়েছেন।
কফি জেগে থাকে
সুপ্রিয় দিনলিপি
সাহিত্য নিয়ে আমি ভাবি।এরমাঝে,কবিতা আমার আরাধ্য বিষয়।কবিতার বিশ্বমাঠে
আমি বিচরণ করতে ভালোবাসি। এই যে বিচরণ,তা থেকে অনেক পুষ্প,অনেক পাতা
আমি ঘরে তুলি। সেগুলো বার বার ফিরে দেখি।
এই যে চয়নপর্ব- তা থেকে আকর নিয়ে আমি লিখি আমার মতো করে।
বিভিন্ন ভাষার সাহিত্য,কবিতার মাঝে আমি বাঙালি কবিদের প্রাধান্য এজন্যে দিই-
কারণ আমিও এই ভাষারই একজন লেখক।এই গ্রন্থে তেমনই কিছু প্রিয় লেখক,তাঁদের
লেখা, শিল্প-সংস্কৃতি-কবিতার বিভিন্ন জ্যোতিরেখা নিয়ে আমি লিখেছি।
‘যতিকল্পের প্রতিপৃষ্ঠা’-নামটি এক আধ্যাত্মিক আদেশে পাওয়া। কারণ এই বইয়ের নাম আমি চার বার বদলিয়েছি মনে মনে। যা সাধারণত আমি করি না। আমার বইয়ের নাম এক ভাবনায়ই ঠিক হয়ে যায়। এই বইটির নাম,একটি ঝলকের মাধ্যমে একটি শক্তি আমাকে পৌঁছে দিয়েছে। সে এক মহান অভিজ্ঞতা। এর বেশি এখানে শেয়ার করা সঙ্গত হবে না।
বইয়ে ৩৩টি প্রবন্ধ আছে। পাঠকসমাজ, পড়ে নিজের মত মিলিয়ে দেখতে পারেন। এই বইটি খুব যত্নের সাথে প্রকাশ করেছে- অনুপ্রাণন প্রকাশন,ঢাকা।
এর স্বত্বাধিকারী শ্রদ্ধেয় আবু এম ইউসুফ ও তাঁর টিমের কাছে বিনীত কৃতজ্ঞতা।
সাহিত্য মানুষকে ভাবায়। আর সেই ভাবনার উদ্রেক করতে যারা কাজ করেন তারা সত্যিই মহান। আমাদের সকলের মহানুভবতা,সাহিত্যকে মানুষের আরও
কাছাকাছি নিয়ে আসুক।
সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা, এই গ্রন্থ থেকে অন্তত কিছু লেখা আপনাদের ভালো লাগলেই
আমার সার্থকতা ।
অনেক প্রীতি সবাইকে।
ফকির ইলিয়াস
২৮ ডিসেম্বর ২০২১
নিউইয়র্ক
যতিকল্পের প্রতিপৃষ্ঠা
সম্পাদকীয়
অনুপ্রাণন: ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়
গত নভেম্বর ২০১২ থেকে অনুপ্রাণন ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকাটি প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর সাহিত্য ও শিল্প বিভাগের বিবিধ সৃজনশীল ও মননশীল লেখায় সমৃদ্ধ হয়ে নিয়মিত ভাবেই প্রকাশিত হয়ে আসছিল। কিন্তু, পঞ্চম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যাটি বৃহৎ কলেবরে অর্থাৎ নিয়মিত ১৬ ফর্মার বদলে ১৯ ফর্মা আকারে প্রকাশিত হওয়ার পর পরবর্তী ৫ টি সংখ্যা প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সম্পাদকের অসুস্থতা ছাড়াও অলিখিতভাবে সম্পাদনা পরিষদের যে সদস্যবন্ধুটি পত্রিকার কাজে অফিস সমন্বয়কের গুরুদায়িত্ব পালন করছিলেন নিরবচ্ছিন্ন ধারায় প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যেতে তিনি নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে থাকলে পত্রিকার কাজে ছেদ পড়তে থাকে। তাছাড়া সম্পাদনা পরিষদের আর একজন বন্ধু অন্য একটি অনলাইন পত্রিকার কাজে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করার ফলে তাঁর পক্ষে অনুপ্রাণন পত্রিকায় প্রয়োজনীয় সময় দেয়া আর সম্ভব হয়ে উঠছিল না। সম্পাদনা পরিষদের অন্য আর একজন সংগঠক পর্যায়ের সদস্য পত্রিকার চাইতে গ্রন্থ প্রকাশনায় বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়ায় প্রকৃতপক্ষে অনুপ্রাণন পত্রিকাটি প্রকাশের কাজে লোকবলের এক বিরাট সংকট দেখা যায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে- ২০১২’এর নভেম্বরে অনুপ্রাণন ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকাটি প্রকাশ করার উদ্যোগ যারা নিয়েছিলেন তারা প্রত্যেকেই শিল্প ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে যার যার নিজ অবদান ও স্বাক্ষর রাখার উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রম ও ব্যক্তিগত অনুদানের ভিত্তিতে পত্রিকাটির প্রকাশনার কাজের যাবতীয় কাজ ও ব্যয় নির্বাহ করার অভিপ্রায় গ্রহণ করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, সমাজ সংস্কৃতিতে এবং বিশেষ করে তরুণদের মনের মাঝে মানবতা, সহমর্মীতা, সৃজনশীলতা, মননশীলতা, শিল্পরুচি, নান্দনিকতা এবং মুক্তচিন্তার চর্চার জানালাটাকে উন্মূক্ততর করার কাজে নিয়োজিত অনুপ্রাণনের এই প্রচেষ্টা যেন বাধাহীন হয় এবং কোনভাবেই যেন প্রতিষ্ঠা ও কর্পোরেট ভোগবাদীতার কূট সাংস্কৃতিক আবর্তে পড়ে দিক হারিয়ে না যায়।
যশ ও প্রতিষ্ঠার মোহ যখন শিল্পীকে পেয়ে বসে তখন শিল্পচর্চা তপস্যা অথবা সাধনা থাকে না। কিন্তু, এটাই বাস্তব যে তপস্যা ও সাধনা ছাড়া শিল্পের উৎকর্ষতার শীর্ষ স্পর্শ সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রতিষ্ঠা ও কর্পোরেট ভোগবাদের বলয়ে যেসব শিল্প-সাহিত্য চর্চা ও উদ্যোগ ফেনার মত আমাদের চারদিক ভরিয়ে তুলছে সেসবের স্থায়িত্ব সম্পর্কে কী কোন সন্দেহ থাকা উচিত?
বছরখানেক বন্ধ থাকার পরও যখন আমরা অনুপ্রাণনের এই সংখ্যাটি প্রকাশের উদ্যোগ নেই তখন আমরা আমাদের পত্রিকার পাঠক, লেখক ও শুভান্যুধ্যায়ীদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সারা পেয়েছি। এই সারা থেকে এই বিশ্বাস আমাদের জন্মেছে যে, আমরা যে পথ অবলম্বন করে এগিয়ে চলতে চাই সেই পথে বাস্তবেই সঙ্গ-সাথীর আমাদের কোন অভাব নেই। এখনও আমাদের দেশের তরুণ সমাজের একটি বিরাট অংশ মিথ্যা যশ, প্রতিষ্ঠা ও কর্পোরেট ভোগবাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে শিল্প-সাহিত্যের মানবিক ও নান্দনিক চর্চা অব্যহত রাখতেই অধিক আগ্রহী। তাই, লেখা আহ্বানে যে সংখ্যক মানসম্পন্ন লেখা আমরা পেয়েছি সেগুলো দিয়ে অনায়াসেই দুটো সংখ্যা প্রকাশ করা সম্ভব ছিল। চলতি সংখ্যার জন্য লেখা বাছাই করতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় দিতে হয়েছে এবং স্থান সংকুলানের অভাবে প্রায় অর্ধেক লেখাই পরবর্তী সংখ্যার জন্য রেখে দিতে হয়েছে।
লেখা বাছাই করতে গিয়ে আবারো আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, সাহিত্য আলোচনা ও সমালোচনা বিভাগে আমরা যথেষ্ট সমৃদ্ধ লেখা পাচ্ছি না যেখানে পেশাদার সমালোচকের কলমের স্পর্শ আরো তীক্ষè অথচ আরো গঠনমূলক হতে পারে। বিশেষ করে কবি ও কবিতা নিয়ে আমাদের আরো তীক্ষè, তীব্র ও গঠনমূলক আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। কেননা সাহিত্য জগতে কবি ও কবিতার সংখ্যা যতই বাড়ছে কিন্তু আগ্রহী কবিতার পাঠকের সংখ্যা যেন সেই তূলনায় বৃদ্ধি হচ্ছে না। মনে হয়, কবি ও পাঠকের মাঝে বোধ, অনুভব ও ভাষার কোন একটা অন্তর থেকে যাচ্ছে যে অন্তরটি ঘুচে যাওয়া অত্যন্ত জরুরী কেননা বোধ করি, মূলত কবিতার মধ্যেই রয়েছে তরুণ সমাজের জন্য ভবিষ্যতের বিশেষ বার্ত্তা। অর্থাৎ সাহিত্যের সত্যপাঠ।
দেশে এখন হেমন্ত ঋতু। হাওরের অকাল বন্যা ও দেশব্যাপী অতিবৃষ্টির ফলে ফসলহানী ঘটায় এবছর দেশের সামগ্রিক সমাজ জীবনে খাদ্যের ঊর্ধ্বমূল্য সকল মানুষকেই কষ্ট দিয়েছে। হেমন্তের নতুন ফসল যেমন কৃষকের ঘড়ে ঘড়ে জীবনে ঘুরে দাড়ানোর বার্ত্তা দিয়ে যাচ্ছে- দীর্ঘ বিরতির পর অনুপ্রাণন ত্রৈমাসিকের এই সংখ্যাটি এ-বছর অনুপ্রাণনের ঘুরে দাঁড়ানোরই প্রতীক ও স্বাক্ষর হোক- এটাই আশাবাদ।
ষষ্ঠ বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা
লেখক পরিচিতি :
দেবাশীষ মজুমদার। জন্ম চাঁদপুরে, তার বয়স যখন সাত, সরকারি চাকরিজীবী বাবা’র বদলি হয় চট্টগ্রামে, এ শহরেই বেড়ে ওঠা। ভারতে কিছুদিন পড়াশোনা ছাড়া পুরো জীবনটাই এখনো পর্যন্ত কাটিযেছেন এই বন্দর নগরীতে। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অন্যদিন’।
অস্তিরতার নাম দেশলাই কাঠি
সম্পাদকীয়, কুহক মাহমুদ স্মৃতি সংখ্যা। অনুপ্রাণন- অষ্টম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা-
অনুপ্রাণন ও কুহকের কথা
কুহকের কথা বলতে গেলে অনুপ্রাণনের কথা আসবেই। কেননা, কুহক অর্থাৎ কুহক মাহমুদ, শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন-এর সাথে ২০১২ সালে জন্মলগ্ন থেকেই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন ৫টি বছর। কুহকের সাথে আমার পরিচয় সরসিজ আলীমের মাধ্যমে। কবি সরসিজ আলীম তখন ‘ভনে যাহা ভনে’ শিরোনামে একটা ট্যাবলয়েড সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করতেন। ফেসবুকের মাধ্যমেই কবি সরসিজ আলীমের সাথে আমার পরিচয়।
এই পরিচয়ের কিছুদিন পূর্বে হোসনে আরা বেগম নামে একজন মধ্যবয়সী মহিলা ফেসবুকে আমাকে নক করেন। তিনি তখন ফেসবুকে ‘ফেসবুক বইমেলা ২০১২’ নামে একটা গ্রুপের এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে বই প্রকাশ এবং সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল তরুণ কবি-সাহিত্যিকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। এক বিকেলে আমরা ছবির হাটে মিলিত হই, যেখানে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন তরুণ কবি-সাহিত্যিক। তারা হলেনÑ রেজওয়ান তানিম, স্থপতি রাজীব চৌধুরী, কবি সুমি সিকানদার, ফেসবুকের মানবিক গ্রুপের অঞ্জন, ইহতিশাম আহমাদ টিংকু এবং আরো দুই-একজন হবে যাদের নাম এই মুহূর্তে আমার ঠিক মনে পড়ছে না। পরে এই বৈঠকগুলো পাবলিক লাইব্রেরির ক্যান্টিনের সামনের বাঁধানো উঠোনে অথবা কখনো কখনো হোসনে আরা বেগমের শ্যামলীর বাসায়ও অনুষ্ঠিত হতো। এই আলোচনা বৈঠকগুলোর মধ্য দিয়েই প্রথমে আমরা পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার-কক্ষে একটি ‘নবীন লেখক সমাবেশ অনুষ্ঠান’ করার সিদ্ধান্তে উপনীত হই। এই পর্যায়ে কবি সরসিজ আলীমও এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়। সমাবেশ অনুষ্ঠানের পর প্রথম বৈঠকে যখন একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয় এবং যখন পত্রিকার জন্য একটি নাম ও একটি সম্পাদনা পরিষদ গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়, তখন কবি সুমি সিকানদার পত্রিকাটির নাম ‘অনুপ্রাণন’ করার প্রস্তাব আনেন, যে প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠ উদ্যোক্তাদের সমর্থন লাভ করায় গৃহীত হয়। ওই বৈঠকগুলোতে পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদ গঠন নিয়ে আলোচনা হলে সর্বসম্মতিতে আমার নাম প্রকাশক, হোসনে আরা বেগম সম্পাদক, কবি সরসিজ আলীম নির্বাহী সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদক হিসেবে রেজওয়ান তানিম, রাজীব চৌধুরী, সুমি সিকান্দার, ইহতিশাম আহমাদ টিংকুসহ আরো দুই-একজনের নাম প্রস্তাব হয়। এই প্রস্তাব গৃহীত হলে ঠিক করা হয় যে, সম্পাদক ও সম্পাদনা পরিষদের সদস্যরা পত্রিকার কাজে অভিজ্ঞ আরো দুই-একজন ব্যক্তি যুক্ত করে সম্পাদনা পরিষদ সম্প্রসারিত করতে পারবেন।
এর কিছুদিন পর যখন হোসনে আরা বেগমের বাসায় সম্পাদনা পরিষদের প্রথম সভা হয়, তখন সেই সভায় কবি কুহক মাহমুদ ‘অগ্রদূত’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার মনি মোহাম্মদ এবং তাহমিদের নাম যুক্ত হয়। ওই সভায় কবি কুহক মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভাতেই কবি কুহক মাহমুদের সাথে আমার পরিচয়। সেই সভায় লেখা সংগ্রহসহ পত্রিকা বের করার যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এই সূচনা সংখ্যার লেখা বাছাই এবং অনুপ্রাণনে অন্যান্য বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের সদস্যদের যুক্ত করা নিয়ে কবি সরসিজ আলীম এবং হোসনে আরা বেগমের মধ্যে তুমুল বিতর্ক হয় এবং সেই বিতর্ক এমন তিক্ততার পর্যায়ে উপনীত হয় যে, সূচনা সংখ্যাটির কাজ যখন প্রেসে চলছিল, ঠিক তখন হোসনে আরা বেগম পত্রিকার সম্পাদক পদ থেকে এবং রাজীব চৌধুরী, সুমি সিকানদারসহ আরো দুই-একজন অনুপ্রাণন ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পরিস্থিতিতে পত্রিকাটিতে আমার নাম প্রকাশক ও সম্পাদক, সরসিজ আলীমের নাম নির্বাহী সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদক হিসেবে শুধুমাত্র রেজওয়ান তানিম, কুহক মাহমুদ, মনি মোহাম্মদ ও তামজিদের নাম যুক্ত করে শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন পত্রিকার সূচনা সংখ্যা নভেম্বর ২০১২-এ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে কুহক মাহমুদ অনুপ্রাণন পত্রিকাটির সাথে পাঁচ বছর যুক্ত ছিলেন। এই পাঁচটি বছরে কুহকের সাথে অনুপ্রাণনের মিথস্ক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ এই সম্পাদকীয়’র পরিসরে দেয়া সম্ভব না।
শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন একটি অবাণিজ্যিক পত্রিকা। এই অবাণিজ্যিক কথাটির অর্থ বারবার ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন দেখা যায়। যেহেতু মনে করা হয়, পত্রিকাটি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি সচেতন থেকে স্বাধীন ও মুক্ত মতামতের চর্চা ও প্রকাশ করবে, অর্থাৎ পত্রিকাটি আর্থিকভাবে কোনো রাজনৈতিক দল অথবা কোনো সামাজিক সংগঠন অথবা দেশের সরকার অথবা করপোরেট মহলের পৃষ্ঠপোষকতার প্রত্যাশা করবে না। অতএব পত্রিকার পাঠকের কাছে সামান্য যে বিনিময়-মূল্য পত্রিকাটি গ্রহণ করবে, তা দিয়েই পত্রিকাটির যাবতীয় প্রকাশনা খরচ চালানো হবে।
যে কারণে অনুপ্রাণনের সাথে যুক্ত সবাইকে মোটামুটি স্বেচ্ছাশ্রম অথবা সামান্য কিছু সম্মানীর টাকায় চলতে হতো। ২৮ আগস্ট ২০১৯ তারিখে তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে অর্থাৎ ৬ আগট ফেসবুকে তাঁর সর্বশেষ পোস্টে অনুপ্রাণনের প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থসংকটকালে কবি কুহকের সেই কৃচ্ছ্রসাধন ও কষ্টের কথাই বর্ণনা করেছিলেনÑ
“বাজেট ১০০ টাকা। বাসা থেকে বাসে গুলিস্তান ১০ টাকা। সেখান থেকে বাসে কাঁটাবন। শাহবাগ আসলেই জ্যাম। কোনোদিন হেঁটে বা প্রচণ্ড খিদায় নেমে পড়তাম বাস থেকে। হোটেলে প্রবেশ করে করুণ চোখে দু’টি পরোটা আর ডাল দিয়ে নাশতা করে হাঁটতাম। তারপর অফিস। কাজ। দুইটা না বাজতেই খিদা! সস্তাদরের হোটেলে ২৫ টাকার ভাত-ডিম বা মাছ, ডাল নেই। চলে যেত খাবার। কতদিন ১০ টাকা বেশি দিয়ে সবজি বা অন্য তরকারি নিতে পারিনি! আবার অফিস। কাজ। এই করেই সন্ধ্যা।
পুরি-চা ১০ টাকা। আবার কাজ। ৬০ টাকা শেষ। অফিস শেষ করে হাঁটতাম। ভার্সিটির মাঝ দিয়ে গুলিস্তান। বাসের লাইনের অপেক্ষা। কোনোদিন ৫ টাকার বাদাম। তারপর বাসা। ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা। মেয়ে অপেক্ষা করত খাবার নিয়ে। ছেলে-মা অন্য বাড়ি থাকত। মেন্যু বেশিরভাগ ডিম ভাজা, ডাল। পেট পুরে খেতাম। আহ! কি সব দিন গিয়েছে। আনন্দ বেদনার। স্মৃতি কাঁদায়। (৬ আগস্ট, ২০১৯)”
সে সময়ে পত্রিকার কাজ করার পাশাপাশি কবি কুহক মাহমুদ অনুপ্রাণন প্রকাশন থেকে “গোধূলির প্রস্থানে জ্বালাও পূর্ণিমা (ফেব্রুয়ারি ২০১৪)” এবং “না-মানুষ (নভেম্বর ২০১৪)” শিরোনামে দু’টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই বই দুইটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এই সংখ্যার স্মৃতিচারণ বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে। বলতে গেলে কবি কুহক মাহমুদ অনুপ্রাণনের সাথে যুক্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই যকৃতের সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও রোগের চিকিৎসা করা দূরে থাক, শরীরের প্রতি যতœ নেয়া দূরে থাক, তাঁর চলমান জীবন যাপন পদ্ধতি তাঁর শরীরের ক্ষতিই বৃদ্ধি করেছে। এসব ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার জন্য বারবার বলা সত্ত্বেও কবি কুহক মাহমুদ কারো কথারই কর্ণপাত করেনি। যার ফলে যথাযথ চিকিৎসা ও সেবার অভাবে তাঁর শরীরের অবস্থা দিনে দিনে অবনতি হতে থাকে। অসুস্থতার জন্য গত প্রায় দু’বছর কুহক আর সময় দিতে পারেনি অনুপ্রাণনকে। বলেছিলাম, না-মানুষের ২য় খ- লিখে দেন প্রকাশ করি। বলল, পারবো না। এই শরীরে কুলায় না।
কুহক মাহমুদের অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকগ্রস্ত। অনুপ্রাণন-এর সাথে যুক্ত সকলের পক্ষ থেকে কুহকের বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করি। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে “কুহক মাহমুদ স্মৃতি সংখ্যা” হিসেবে নিবেদন করি শিল্প ও সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণনের ৮ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যাটি।
অষ্টম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা
বাঙালির ইতিহাসে, বাঙালির জীবনে গর্ব করার মত যত অধ্যায় আছে, তার মধ্যে সবচে বড় অধ্যায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির অহঙ্কার, মাথা উঁচু করে চলার দৃপ্ত অঙ্গীকার। সৌভাগ্যক্রমে আমার জন্ম হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ছয় বছর পূর্বে, তাই ছয় বছর বয়সে আমিও হতে পেরেছিলাম মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন অংশীদার।
আমার অনেকদিনের ইচ্ছে, আমাদের শৈশব কৈশোরের দিনলিপি নিয়ে ‘চোখ যায় যদ্দুর’ নামে তিন পর্বে বই লিখবো। তিন পর্বে থাকবে মুক্তিযুদ্ধ পূর্বকাল, মুক্তিযুদ্ধকাল ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকাল।
মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ১৯৭১ সালে, ঊনপঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বাঙালির অহঙ্কারের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্ম খুব বেশি কিছু জানে না। আজও তারা বিভ্রান্ত হয় মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকার শব্দ দুটো নিয়ে। কারণ কে মুক্তিযোদ্ধা কে রাজাকার, সেই তালিকা আজও নির্ণিত হয়নি।
বর্তমান প্রজন্ম জানে, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ছিল, পাকবাহিনী ছিল, রাজাকার ছিল, মিত্রবাহিনী ছিল।
বর্তমান প্রজন্ম জানে না, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকার ছাড়াও রিফিউজি নামে আরেকটি শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছিল। রিফিউজিদের কথা কেউ আলাদা করে বলেনি, রিফিউজিদের কথা কেউ আলাদা করে লিখে না। তাই বর্তমান প্রজন্ম রিফিউজি শ্রেণির সাথে পরিচিত নয়।
রিফিউজি কারা ছিল, কেন তারা রিফিউজি হয়েছিল! কেমন ছিল রিফিউজিদের জীবন! রিফিউজি হওয়া কি স্বস্তির নাকি বেদনার! ভয়াবহ যুদ্ধ চলাকালে রাজাকারের চোখ এড়িয়ে, পাকসেনাদের গুলি বাঁচিয়ে বন বাদাড়, মাঠঘাট, নদী নালা পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পৌঁছে নিজেকে রিফিউজি ঘোষণা করা যে কী নিদারুণ কষ্টের আত্মসমর্পণ, অন্যের দয়ায় দিনাতিপাত করা কতখানি গ্লানিকর তা অতীত বর্তমান কোনো প্রজন্মই অনুধাবন করতে পারবে না।
অতীত এবং বর্তমান প্রজন্ম রিফিউজি সম্পর্কে জানে না, কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্ম জানুক রিফিউজিদের কথা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল সাড়ে ছয় বছর, বড়দা ছিল কিশোর, মেজদা বালক, ছোট ভাই চার বছর বয়সের শিশু।
না, আমরা কেউ বন্দুক হাতে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। চারটে ছেলেমেয়ে যুবতী স্ত্রী বৃদ্ধা মাকে পাকবাহিনীর গোলার মুখে ফেলে বন্দুক হাতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মত দুঃসাহস আমাদের বাবার ছিল না। বাবা তাই সবাইকে নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পৌঁছে রিফিউজি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কেউ সাধ করে আশ্রিতের জীবন বেছে নেয় না।
এক দিনে আমরা ভারতে পৌঁছাইনি, দীর্ঘ পনের দিন লেগেছে নারায়ণগঞ্জ থেকে আগরতলা হয়ে কলিকাতা পৌঁছাতে। সেই যাত্রাপথ কেমন ছিল, কি কি ঘটেছিল, অথবা কি কি ঘটতে পারতো, কলিকাতা পৌঁছে আমরা কেমন ছিলাম, কলিকাতাবাসী আমাদের প্রতি কতখানি আন্তরিক ছিল, এসব সত্য যদি লিপিবদ্ধ না থাকে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পূর্ণ হবে না।
ইতিহাস সৃষ্টি হয় সত্যের ওপর ভর দিয়ে, ইতিহাস দাঁড়ায় সত্যের ভিত্তির ওপর। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ মিছে নয়, মুক্তিযুদ্ধ বানানো কাহিনি নয়, মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকার নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নয়, সেখানে রিফিউজি নামে মুক্তিযুদ্ধের যে নীরব সাক্ষী আছে, সেই রিফিউজিরাও মুক্তিযুদ্ধের অংশ, তারাও মুক্তিযোদ্ধা।
শিশুরা মিথ্যা বলে না, শিশুরা মিথ্যা দেখে না। শিশুরা ছল চাতুরী জানে না, আদালতে শিশুরা মিথ্যে সাক্ষ্য দেয় না। মাঝে মাঝে শিশুরাই হতে পারে ন্যায় বিচারক।
একাত্তরে আমরা ছিলাম শিশু বালক বালিকা, আমরাই হয়েছিলাম রিফিউজি, আমরাই ছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সত্যদর্শী সাক্ষী। রিফিউজিদের কথা যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারে, সেই দায় মাথায় নিয়ে আমাদের বাল্যকালের সত্যনিষ্ঠ স্মৃতিভান্ডার থেকে কুড়িয়ে যতটুকু সত্য আহরণ করতে পেরেছি, সেটুকুই ‘চোখ যায় যদ্দুর’র মুক্তিযুদ্ধকাল পর্ব ‘একাত্তরের বালক বালিকা’ খণ্ডে লিপিবদ্ধ করে রাখতে চেয়েছি। একাত্তরের বালক বালিকা পর্বটি সত্যদর্শী বালক বালিকার সত্য বয়ানের লিপিবদ্ধ রূপ।
Chokh Zay Joddur - চোখ যায় যদ্দুর (একাত্তরের বালক বালিকা) - দ্বিতীয় মুদ্রণ
জন্ম ১৯৮৭, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে। পড়াশোনার পাশাপাশি ফটোগ্রাফির সাথে যুক্ত। প্রকৃতি আর মানুষ এই দুই নিয়েই তার পথচলা। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রয়েছে
প্রেম হলো প্রেমের মতো
লেখক পরিচিতি :
কুহক মাহমুদ। জন্ম: ৬ই সেপ্টেম্বর, ঢাকা। পুরানো ঢাকায় স্থায়ী বসবাস আর বেড়ে ওঠা যৌথ পরিবারে। কবি কবিতাকে ভালোবেসে কখন যে সংসারের মায়া ত্যাগ করেছেন তা নিজেও জানেন না। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ: ‘গোধূলির প্রস্থানে জ্বালাও পূর্ণিমা’।
নামানুষ
বাবুল হোসেইন। জন্ম: তেঘরিয়া, সৈয়দপুর, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।
আত্মমুগ্ধ শিকল
পিঠে পাহাড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোদ
আমি নিঃস্বতার কাছে যাই
সেখানে মহান শূন্যতারা আছে
বেদনারা নিরালম্ব গাছ
গাছ খুব ভালো মানুষ
বিনয়ে লাম্পট্য নেই
তাই, নিবিড় হতে থাকে
জড়িয়ে থাকে শরীর অপার ঋজুতায়
জোছনাও জড়িয়ে যায় কখনো সখনো
পবিত্র প্রত্যয় মেখে নেয় ভোর
মেঘেদের কি পাঠগৃহ আছে
কিংবা, মৈথুন কাল?
মাছেদের বুক চিড়ে দেখা যেতে পারে
গহনতা নদীর,
শিকড় পুঁতে রেখেছি জলে ও জলসিজে
চিরদিন সেখানে টান, বোধের, গরিমার…!
দূরের ঝাউবন কবিতার মুসাফির
‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’। ‘পাতা নড়ে’ এর স্পন্দনটা যদি এখানেই শেষ হয়ে যেত তাহলে কোনো কথাই ছিল না। আসলে তো ঝরেপড়া জলবিন্দু পাতার সাথে আমাদের অন্তরাত্মাকে নাড়াতে নাড়াতে নিয়ে যায় সমুদ্র থেকে মহাসমুদ্রে। অণুগল্প সে-রকমই কিছু।
রুখসানা কাজলের অণুগল্প
“ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট দুঃখ ছোট কথা… অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ।।” -কথাগুলো ছোট গল্পের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রবিন্দ্রনাথ তাঁর ‘বর্ষাযাপন’ কবিতায় বলেছিলেন।
ইংরেজি সাহিত্য অধ্যায়নের শুরুর দিকে পড়া জেমস জয়েসের অনবদ্য ছোট গল্প ‘এরাবি’। রবিন্দ্রনাথের কথার মতই গল্পের ছোট ছোট ব্যথাগুলো ছোট করে গভীর দাগ কেটে গিয়েছিল মনে। তখনও ভাবিনি কোনদিন এমন গল্প অনুবাদ করার সাহস করতে পারব। বেশ কয়েক বছর পর ছোট গল্পের প্রতি তীব্র টান আর অদ্ভুত এক তাড়নায় গল্প অনুবাদ শুরু করলাম প্রিয় গল্প ‘এরাবি’ দিয়ে। অতঃপর একে একে আরও অনেক বিদেশী ছোট গল্প যোগ হতে লাগল প্রিয় গল্পের তালিকায়। এর মধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত ছোট গল্পকার মান্টো, প্যাট্রিক ওয়াডিংটন, কেইট শোপেন, শার্লি জ্যাকশন আর গারশিনের মত লেখকের কিছু গল্প মাতৃভাষায় রূপান্তরের লোভ সামলানো গেল না। চমৎকার ১১ টি গল্পের অনুবাদ নিয়েই তৈরি এই নির্বাচিত ভিনদেশী গল্প গ্রন্থ।
নির্বাচিত ভিনদেশী গল্প
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.