Additional information
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.41 $ 1.88
ভূমিকাঃ
‘সন্ধ্যার পিদিম’ হাতে কেউ কখনও উলুবনে গেছে কিনা আমার জানা নেই। ব্যাখ্যাহীন আঙুলে কীসের গোপন- এমন প্রশ্নের উত্তর জানারও অবকাশ থাকে না, যখন ‘তারার হাটে মুদ্রিত কিছু শাদাকে’ খুঁজে পেতে ‘ঐতিহ্যের বড়শিতে ঝুলে থাকা শতাব্দীর মাছ’ হয়ে জীবনযাপন করতে হয় আমাদের। বস্তুত নাগরিক ব্যস্ততার কিঞ্চিত অবসরে দ্বীপ সরকারের কবিতা নস্টালজিক এক ঘোরে তলিয়ে নেয়ার ক্ষমতা রাখে। ‘বোধশূন্য শব্দক্রীড়ার কাব্যচর্চার’ ডামাডোলে দ্বীপ সরকারের কিছুটা অনাড়ষ্ট প্রকাশভঙ্গিমা মুগ্ধতা জাগায়। কিন্তু ‘শিশিরের জিবের ভেতর গুঁজিয়ে দিলো টেরাকাঁটা (!) মাছ’ জাতীয় পঙ্ক্তিগুলো নির্দিষ্ট কোনও অর্থময়তা বা কোনও ধরনের চিত্রকল্প নির্দেশ করে কিনা- বোধগম্য নয়। হতে পারে, এটা আমার অনভিজ্ঞতা। তবে তার ভাষাবুদ্বুদে খুব একটা জটিলতা নেই; বিপরীতে, ছন্দহীনতাও পীড়াদায়ক। তিনি তার সময়ের অন্যদের মতন ‘অনর্থময়তার’ গান গেয়েছেন; তবে সে স্বর খানিকটা পেলব- মোহন সৌন্দর্যখচিতও বলা যায়।
রুচির পৃথকতার কারণে যে ধরনের কবিতার প্রতি আমার দুর্বলতা, দ্বীপ সরকারের কবিতা ঠিক তেমন নয়। শিল্পবিচার কিংবা আলোচনার ক্ষেত্রে ‘ব্যক্তির রুচি আর শিল্পের নৈর্ব্যক্তিকতা পরস্পরের কাছে দুরাত্মা নয়, দুরাত্মীয়’- এটা মনে রেখেই দ্বীপ সরকারের ‘ডারউইনের মুরিদ হবো’ পাণ্ডুলিপি আমি একজন সাধারণ পাঠক। ফলে তার কবিতার পাঠকে নিবিড়তম পাঠ হয়ত বলা যায় না, কিন্তু সর্বাংশে খণ্ডিত নয়- আমার বিশ্বাস। তা ছাড়া আমি পণ্ডিত নই। শাদাকে শাদা আর কালোকে উচ্চৈঃস্বরে কালো বলি। কবিতার শব্দজট, অর্থহীনতা, উপদেশ; আবার, কখনও-কখনও দায়বদ্ধতার চাকচিক্যে আটকে যায় পাঠরুচি। নিজের অক্ষমতার বিষয়টিও ভুলি না। এসব টোটকা বিবেচনায় দ্বীপ সরকারের কবিতা আমার পাঠরুচি টপকাতে না পারলেও; কাব্যবোধের ক্ষেত্রে তার এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কখনও কখনও লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠে।
‘কবিতার মৌলদায় কী’- এমন জিজ্ঞাসা আমার চিরকালীন। দ্বীপ সরকারের কবিতার পাঠ শেষে এ প্রশ্ন আবারও বেগবান হয়েছে। মোটাদাগে, দ্বীপ সরকারকে ‘কবিতা কারিগর’ হিসেবে দেখতে চাই; তবে মনে রাখা দরকার, এ-পথ সাধনায় সিদ্ধি অর্জনের, পরম অধ্যবসায়ের। পাশাপাশি সৃজনীদক্ষতার মাধ্যমে পঙ্ক্তিগুলো ইঙ্গিতময় করে তোলার ব্রত নিয়ে পরিশিষ্টের পথে এগিয়ে যাওয়ার। শোচনীয়ভাবে স্বীকার করছি, এ-পথে এগিয়ে যেতে বেশিরভাগই ব্যর্থ হন। কবিতার ভেতর কার্যসিদ্ধির কোনও ধরনের প্রচেষ্টা না রাখলে দ্বীপ সরকারও এগিয়ে যেতে পারেন, এ আভাস কিছুটা হলেও তার কবিতার অন্তঃপুরে দুল্যমান। ‘ডারউইনের মুরিদ হবো’ পাণ্ডুলিপির কবিতাগুলো পাঠকের ভালো লাগবে, এমন প্রত্যাশাও জিইয়ে রাখছি।
বীরেন মুখার্জী
কবি ও প্রাবন্ধিক
ঢাকা
১৪ অক্টোবর, ২০১৮।
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
রনক জামান। জন্ম:১৬ই ডেসেম্বর ১৯৯১, মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায়। লেখালেখির হাতেখড়ি ছোটবেলাতেই কবিতার প্রতি মুগ্ধতা থেকেই তার প্রতি ভালোবাসা। এটাই কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে, যৌথ কবিতাগুচ্ছ ‘মায়ানগরীর বৃষ্টিকথন’, কবিতার ই-বুক ‘শরীর ছোঁয়া আঙুলগুলো’ এবং অনুবাদ উপন্যাস ‘ললিতা’।
ঘামগুলো সব শিশিরফোঁটা
কিছু একটা বলাটাই যখন বাধ্যবাধকতাÑবাহুল্য এবং আপেক্ষিক বাতুলতা বাদ রাইখা মাহবুব লীলেন থাইকা ধার কইরা বলতে হয়Ñ ‘আনফিট মিসফিট হইয়া হামাগুড়ি দিয়া হাঁটি, আর রাত্তিরে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ টাইনা চিক্কুর দিয়া কইÑ যাহ শালা বাঁইচা গেলাম আরও একটা দিন।’
এইটা বড়োবেশি জৈবিক বাঁচা
মানবিক বাঁচনের স্বপ্নও দেখি না বহুদিন
বড়ো তরাসে আছি
বড়ো বেশি চাইপা আছি, নিজের গলা নিজে।
দ্বান্দ্বিক দ্বন্দ্ব বিষয়ক আজাইরা প্রলাপ
রাজন্য রুহানি। পরিবারের দেওয়া সনদসাক্ষ্য নাম মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। জন্ম: ২রা নভেম্ভর ১৯৮০, জামালপুর জেলা শহরের হাটচন্দ্রায়। কলেজে পা দেবার সাথে সাথেই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মফস্বল সাংবাদিকতার পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে বারবার কবিতার কছেই ফেরা। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং। ১৯৯৮ থেকে কবিতার ভাঁজপত্র শব্দদূত সম্পাদনার সাথে যুক্ত। ঐ বছরই অন্যান্য লেখক সহযোগে আলোচনাগ্রন্থ- ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ; আতিয়ার রহমানের ৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এটি লেখকের প্রকাশিত এককবই।
গল্প সমাপ্তির গান
সাঈদা মিমি। জন্ম: ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮। বরিশালে। শৈশবের পুরোটাই এবং অর্ধেক কৈশোর কেটেছে পদ্মাপাড়ে, মানিকগঞ্জের ঘোনাপাড়া গ্রামে। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবনে। প্রথম প্রকাশিত হয় ইত্তেফাকে। ফ্রীল্যান্স সাংবাদিকতা, স্কুল মাস্টারিং, বায়িং হাউজের এডমিন, হাউজিং কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ইত্যাদি বিচিত্র কর্মজীবন মেষে অতঃপর গৃহিণী। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সব নিয়ে গেছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস’ ‘ফারাও কুমারী’ ও ই-বুক ‘কীর্তনখোলা’।
একজন মৃতের ডাইরি
মুর্শিদা জামান। জন্ম: ১৯৮৩ সনে বর্তমান বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায়। শৈশব ও বেড়ে ওঠা দক্ষিণের খুলনা শহরে। বাংলায় অনার্স সহ এমএ করেন ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির সূত্রপাত। কবিতা লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট কাগজ ও সাহিত্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকাতে ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃতি ও পশু-পাখির প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও সখ্যতা রয়েছে। বর্তমানে তিনি লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত।
অদৃশ্য ছায়ার প্রজাপতি
আলী রেজা। জন্ম: ১৯৫৭। মুক্তিযুদ্ধে আলোড়িত কবি, সত্তর দশকে মূলত ছোটকাগজে লেখালেখি শুরু করেন। সদ্য অবসরে যাওয়া একটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক। এটি কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
আলী রেজা
লেখক পরিচিতি :
প্রজ্ঞা মৌসুমী। জন্ম: এক শরতে দাদুবাড়ি কুমিল্লায়, বেড়ে ওঠা সুনামগঞ্জে। ঊনিশ বছর থেকে পড়াশুনার জন্যে প্রবাস জীবন। এক এসাইনমেন্টের জন্যে প্রথম ইংরেজি কবিতা লিখার শুরু। প্রথম জীবনের কবিতাগুলো ইংরেজিতেই লেখা, কিন্তু মন আঁকুপাঁকু করে বাংলায় লিখতে; তারই ফলশ্রুতিতে আজকের প্রথম কবিতা ফসল ‘পৌরাণিক রোদ এবং অতিক্রান্ত কাঠগোলাপ’। লেখক কবিতা ও গল্প লিখে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার তাই বাংলা সাহিত্যের অত্যুজ্জল আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করার স্বপ্ন দেখেন অহর্নিশ।
পৌরাণিক রোদ এবং অতিক্রান্ত কাঠগোলাপ
রঞ্জনা বিশ্বাস। জন্ম: ১০ডিসেম্বর, ১৯৮১। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে খ্রিস্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ ও ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’ কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবির প্রকাশিত কাব্যফসল। এছাড়া কবি কবিতাচর্চার পাশাপাশি ফোকলোরচর্চাকেও ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। নৃ-তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মী কবির আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ ও ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ প্রকল্পে কাজ করছেন। এছাড়া এখন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগে কর্মরত আছেন।
বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস
ফারহানা খানম। জন্ম: ১৯শে এপ্রিল ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপে। ‘ভুগোল ও পরিবেশ’ বিষয়ে স্নাততোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে ব্যাংকে চাকুরি শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। নয় ভাই-বোনের মাঝে সবার ছোট বলেই আদরও পেয়েছেন বেশি। প্রথম প্রকাশিত বই, ‘ইছামতি’ (কলকাতা থেকে প্রকাশিত)।
তৃষ্ণার্ত বালুতট
লেখক পরিচিতি :
সুলতানা শাহরিয়া পিউ। জন্ম: ২রা অক্টোবর। লেখালেখি, আবৃত্তি ও সঙ্গীতচর্চা তার শখ। অনুপ্রাণন সম্পাদনা পর্ষদ এর সদস্য, বর্তমানে দীপ্ত টেলিভিশনের স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘মেঘের সাথে কথা’। অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ: ‘নিমগ্ন জলধারা’। স্ক্রিপ্ট সঙ্কলন: ‘আমরা করব জয়’। গীতিকবিতার অনুবাদ: ‘অচিন’। গল্প সংকলন: ‘মেঘের দেশে ফিরে যাবার গল্প’।
আমার দিনগুলো রইলো অসম্পূর্ণ
মেঘ অদিতি। কবি ও গল্পকার হিসেবে ‘দু’বাংলাতে পরিচিত। জন্ম: ৪মে, জামালপুর। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘জলডুমুরের ঘুম (কাব্য)’ ‘অস্পষ্ট আলোর ঘোড়া (গল্প)’ ‘অদৃশ্যতা হে অনিশ্চিতি (কাব্য)’ এবং ‘সময় শূন্যতার বায়োস্কোপ (মুক্তগদ্য)।
প্রবেশিধকার সংরক্ষিত
দেবাশীষ ধর। জন্ম: ৫ই জানুয়ারি, ১৯৮৯। চট্টগ্রাম। কবিতার ছোটকাগজ ‘বাঙাল’ এর সম্পাদক। কবির এটি প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
ফসিলের কারুকাজ
কবি ফিরোজ আহমেদ এর জন্ম ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুংগীপাড়া থানার অন্তর্গত গিমাডাংগা গ্রামে। পিতা শেখ আব্দুর সাত্তার ও মা সুফিয়া বেগমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহনের পর তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং একটি পুত্র সন্তানের জনক। ছোটবেলা থেকেই তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। প্রাথমিক পথ চলার পর ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ” গহীনে শূন্যতা” প্রকাশিত হয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শোভা প্রকাশ থেকে। তারপর নিয়মিত তার কবিতা প্রকাশ হতে থাকে নানা প্রকাশ মাধ্যমে। সাহিত্যের ছোট কাগজগুলোতে তার কবিতা নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে। “ঘাসফুল” নামক সাহিত্য সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে তিনি বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক পত্রিকা “স্বদেশ খবর” এর সাহিত্য সম্পাদচকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দুই বাংলার মুখপত্র ” পূর্বপশ্চিম” পত্রিকার উপসম্পাদক হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছেন।
কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থসমূহঃ
১। গহীনে শূন্যতাÑ একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৩ Ñশোভা প্রকাশ।
২। দ্বীপের সবুজÑ একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫ Ñঘাসফুল প্রকাশনী।
৩। জলবাড়িÑ একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫ Ñঘাসফুল প্রকাশনী।
৪। নির্বাসনের আগেÑ একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ Ñশোভা প্রকাশ।
৫। নিষিদ্ধ সুন্দরÑ একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ Ñকালজয়ী প্রকাশ।
প্রকাশিতব্য গ্রন্থসমূহঃ
১। জীবনের পদাবলি
২। মধুমতির তীরে
৩। উত্তরাধুনিক ছায়াবাড়ি
জল ও মাটির গল্প
জন্ম : ০২ জানুয়ারি, ১৯৮৩-তিতাহাজরা, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী। বেড়ে ওঠা পাহাড়তলী, চট্টগ্রামে। লেখাজোখার প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই।
প্রথম লেখা ছাপা হয় মাসিক রহস্যপত্রিকায়। ২০০০ সালের মাঝামাঝি লেখালেখিতে সচেতনভাবে মনোযোগী হন। তার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিকসহ অজস্র পত্রপত্রিকায়। সমানতালে লিখেছেন লিটল ম্যাগাজিনেও। দীর্ঘদিন যাবত সম্পাদনা করছেন পাঠকপ্রিয় লিটল ম্যাগাজিন ‘প্রকাশ’। গল্প লিখতে এবং গল্পকার পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সিরিয়াস লেখার পাশাপাশি রম্য ধাঁচের রচনায়ও মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। মাসিক উন্মাদ অতঃপর দৈনিক প্রথম আলোর তুমুল জনপ্রিয় ফান ম্যাগাজিন আলপিন-এর মাধ্যমে রম্যচর্চার হাতেখড়ি। এরপর থেকে লিখেছেন দৈনিক পত্রিকার ক্রোড়পত্র হিসেবে প্রকাশিত বিভিন্ন রম্য-বিদ্রƒপ সাময়িকীতে।
পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন পা-ুলিপি সম্পাদনা, লেখালেখি এবং সাংবাদিকতাকে। বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিকে সাব এডিটর হিসেবে কর্মরত।
প্রকাশ (নির্বাচিত গল্প বিষয়ক প্রবন্ধ)
‘পুরো সিরিজটির মধ্যে টের পাই, তুমি শক্তিমত্তা নিয়ে ধেয়ে আসছ।’ বেশ কিছুদিন হয় মারুফ আহমেদ নয়ন ‘ডেকে নিও গোপনে’ পাণ্ডুলিপিটি মেইল করে পড়তে দিলে পাঠপ্রতিক্রিয়ায় উপর-উদ্ধৃত বাক্যটি লিখেছিলাম। আজ সেই পাণ্ডুলিপির পুণঃপাঠে ওই বাক্যটিকে রেখেই কথা বলতে হচ্ছে। নয়ন বয়সে নবীন, তুলনায় ওঁর কবিতা অনেক ম্যাচিউর। অবাক হতে হয়, পাণ্ডুলিপির কবিতাগুলো সদ্য বয়সন্ধিকাল পেরিয়ে আসা একজন কবির লেখা। সে ক্ষেত্রে পোলিশ কবি রেনিয়া স্পাইগেলের কথা মনে পড়ে। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হলোকস্টের শিকার হয়ে রেনিয়া’র কিশোর বয়সেই দুঃখজনক মৃত্যু হয়েছিল, তা বাদে কবিতার বোধ ও চেতনার দিক থেকে নয়ন যেন রেনিয়ার উত্তরাধিকার। মারুফ আহমেদ নয়নের কবিতায় আবহমান বাংলা কবিতার আবেগ আছে, তবে তা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের মনে হয় না। আবেগের লাগাম টেনে ধরে তার যথার্থ ব্যবহারের সক্ষমতা আছে নয়নের। ওঁর কবিতায় চিত্রকল্প ও কল্পচিত্রের ব্যবহারগুলো মুগ্ধ করে। ওঁর ভাষা বয়ন সুন্দর-স্বচ্ছ। কবিতায় অনুকরণ অনুসরণ নিয়ে আজ কথা উঠছে। কারও কবিতার ভাষা বা শৈলী পাঠক সমাজে সামান্য মান্যতা পেলে তাকেই মুদ্রার মতো ভাঙিয়ে লিখছেন অনুজ ও সমসাময়িকরা। সে ক্ষেত্রে মারুফ আহমেদ নয়ন নিজেকে অপর দূরত্বে রাখেন। শিল্পের জন্য কবিতার জন্য যা স্বাস্থ্যকর। আবহমান বাংলা কবিতার মুকুটে মারুফ আহমেদ নয়ন একটি নতুন পালকের সংযুক্তি হিসেবে স্মরণীয় হোক।
মাসুদার রহমান
সোনাপাড়া
১৬/১১/২০২১
ডেকে নিও গোপনে
ভাস্কর চৌধুরী মূলত গল্প ও উপন্যাস লেখক। কবি হিসেবেও তার সমান খ্যাতি। লেখার মূল বিষয়বস্তু বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি ও মানুষ। জন্ম- চাঁপাইনবাবগঞ্জ। শিক্ষাজীবন কেটেছে রাজশাহী শহরে। কর্মজীবনে চলে আসেন ঢাকায়। আশির দশক থেকে তার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। মাঝে দশ বছর দীর্ঘবিরতির পর আবার লেখালেখিতে ফিসে আসেন। রক্তপাতের ব্যাকরণ তার প্রথম গল্পগ্রন্থ। এ পর্যন্ত বিশটিরও অধিক বই লিখেছেন। এর মধ্যে উপন্যাস ধনসা মাতি ও তার জীবনবৃক্ষ, গল্পÑ কৃষ্ণপুরাণ, গন্তব্যহীন যাত্রা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
গল্পের বনসাই
‘তৃতীয় অধ্যায়’ উপন্যাসটি ট্রিলজির তৃতীয় খণ্ড। এই ট্রিলজির প্রথম খণ্ড ‘ফাঁদ’ ও দ্বিতীয় খণ্ড ‘পুষ্পকথা’ যেগুলো আগে প্রকাশিত হয়েছে। ‘তৃতীয় অধ্যায়’ একটি স্বতন্ত্র উপন্যাস হিসেবে পাঠক উপভোগ করতে পারবেন। তবে পূর্বের দুই খণ্ডের সঙ্গে এই উপন্যাসের কাহিনীর সঙ্গে খুব সামান্যই যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে যাতে পাঠকগণ তিনটি খণ্ডের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজে পান। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কিশোরী ‘পুষ্প’ প্রতারণার ফাঁদে পড়ে যৌনকর্মী হতে বাধ্য হয়েছিল যে কাহিনী ‘ফাঁদের’ উপজীব্য। দ্বিতীয় খণ্ড ‘পুষ্পকথা’ নির্মিত হয়েছে তার চমৎকার একটি সংসার-জীবন দিয়ে এবং পুষ্প-দম্পতি কঠোর পরিশ্রম করে যখন একটি স্বপ্নময় ভুবন তৈরি করেছিল তখনই সামাজিক অনাচারের শিকার হয় তার স্বামী। অকালে বিধবা হয় পুষ্প। তৃতীয় খণ্ডে সে তার যমজ সন্তান ছেলে আলোক ও মেয়ে রশ্মিকে নিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় প্রমত্ত প্রতিকূল স্রোতের আপসহীন সংগ্রামী অভিযাত্রী। দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী সংগ্রামী ও দরদি জননী। তার দীপ্তিময় স্বপ্ন হলো দুই সন্তানকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে আকণ্ঠ ডুবে থেকে নিজের শ্রম দিয়ে আলোক ও রশ্মিকে লেখাপড়া করাতে শুরু করে। কিন্তু অভাব-অনটন যেন বাঁধভাঙা জোয়ার। আসতে থাকে নানা রকম ঘাত-প্রতিঘাত। সব ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে এগিয়ে যায় হারা-না-মানা অদম্য সাহসী পুষ্প। এই বিরুদ্ধ স্রোতের কিছুটা সহযোগিতার হাত বাড়ান আলোক-রশ্মির স্কুলের শিক্ষক আফজাল হোসেন এবং বাড়িওয়ালা অধ্যাপক প্রীতিশ কুমার মণ্ডল। আলোক-রশ্মিও ক্রমে উজ্জ্বল শিখার মতো জ্বলে উঠতে থাকে এবং এক সময় ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রতিকূল স্রোতের অভিযাত্রী পুষ্পর স্বপ্নের তরী কূলের সন্ধান পায়।
তৃতীয় অধ্যায় - Tritio Odhyay
আলতাফ হোসেন-এর জন্ম ২৭ অক্টোবর ১৯৪৯। পৈতৃক নিবাস কিশোরগঞ্জ। বাবার চাকরিসূত্রে শৈশব কৈশোর কেটেছে পাটনা, কলকাতা, চাটগাঁ, করাচি ও ঢাকায়। ১৯৬৪ থেকে পুরোপুরিভাবে ঢাকায় বসবাস। অনার্স ও এমএ করেছেন বাংলায়। আলিয়ঁস ফ্রঁসেস, ঢাকা থেকে দু-বছর ফরাসি ভাষা শিখে সনদ পেয়েছেন।
কফি জেগে থাকে
মাহবুব মিত্র বিশ্বাস করেন মানুষই শিল্প; মানবতাই ধর্ম। মানুষবিহীন পৃথিবী শস্যহীন প্রান্তরের মতো। তিনি মনে করেন সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ শিল্প মানুষের সৌন্দর্য। তাঁর প্রিয় বিখ্যাত দু’টি উক্তিÑ “মানুষ দেখার আনন্দে তুমি কখনো ক্লান্ত হয়ো না”, “ভুল মানুষের কাছে আমি নতজানু নই।” নীতির সাথে আপোসহীন চির প্রতিবাদী সতত ডানার মানুষ এক ক্লান্তিহীন গেয়ে যান ভালোবাসার গান, সমতার গান, মানবতার গান, সুন্দরের গান।
মাহবুব মিত্র বস্তুবাদী দার্শনিক মতবাদে বিশ্বাসী। আবার ভাববাদী দর্শনও মাঝে-মধ্যে তাঁকে ভাবায়। এই দুই মতবাদের ভিতর দিয়ে পথ হাঁটছেন। তিনি বুকে ধারণ করে আছেন সৃষ্টি জগতের সকল সুন্দরের নির্যাস। সাহিত্য ও শিল্পের বাগানে শব্দ বুনে-বুনে তৈরী করছেন মানব হৃদয়ের নৈবেদ্য। এই নিবিড় সংসারে একাকি নিঃসঙ্গ পথিক এক খুঁজে পেয়েছেন জীবনের সৌন্দর্যের অবিরাম ধারাপাত। তিনি মানব হৃদয়ে খুঁজে বেড়ান সুন্দরের স্বর্গভূমি।
তিনি সর্বদা আশাবাদী একজন প্রাণবন্ত-প্রফুল্ল মানুষ। তুমুল অন্ধকারের মাঝে খুঁজে ফেরেন আলোর ফোয়ারা। মানুষ তখনই মৃত যখন তার ভিতরের আনন্দ মরে যায়। চিরন্তন সুন্দরের জন্য হাহাকার-আকাক্সক্ষা, নৈতিক মূল্যবোধের উপলব্ধি, স্বতন্ত্র বোধের-চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত তাঁর ভাবনার আকাশ। তাঁর সুকুমার কোমল প্রবৃত্তি আপন আলোয় ভাস্বর, দীপ্ত-শোভান্বিত, সদা জাগ্রত।
শাদা কফিনে মেঘের শব্দ
ভূমিকা-
আমার ৪টি কবিতার বই বিভিন্ন সময়ে কলকাতা এবং আগরতলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের পাঠক বইগুলো হাতে পাননি বলেই সেখান থেকে ১০০টি কবিতা বাছাই করে এই প্রকাশনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুপ্রাণন প্রকাশনের প্রাণপুরুষ শ্রদ্ধাভাজন আবু এম ইউসুফ ভাইয়ের সহৃদয় সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ।
অনুজপ্রতিম তুহিন ভূঁইয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রূপনগর আবাসিক এলাকা
মিরপুর, ঢাকা।
সরদার ফারুকের ১০০ কবিতা
এক.
বর্তমান ইরাকের মসুল যে শহর, প্রাচীনকালে তাকে বলা হতো নিনেভেহ। সে সময়ের আসিরীয় রাজা আসুরবানিপালের লাইব্রেরির ধ্বংসাবশেষ থেকে ১৮৪৩ সালে গবেষকরা প্রাচীন আক্কাডিয়ান ভাষায় লেখা কিছু মাটির ফলক খুঁজে পেয়েছিলেন। আসুরবানিপালের সময়ে লেখার পদ্ধতি ছিল এমন যে, প্রথমে মাটির ফলকে খোদাই করে লেখা হতো। তারপর সেটাকে স্থায়ী রূপ দিতে পোড়ানো হতো। তখনকার দিনে লেখার এই পদ্ধতিকে ‘কিউনিফর্ম’ বলা হতো। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে গবেষকরা মাটির ফলকের সেই লেখার অর্থ উদ্ধার করেছিলেন, যা ছিল আধুনিক সাহিত্যবিশ্বের জন্য চমকস্বরূপ। মোট ১২টি মাটির ফলক থেকে উদ্ধার হয় এমন এক অসাধারণ কল্পকাহিনী, যা পরবর্তীতে ‘উর শহরের রাজা গিলগামেশ ও তার বন্ধু এনকিদুর কাহিনী’ হিসেবে সমাদৃত হয় বিশ্বসাহিত্যের বোদ্ধাদের কাছে! ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর প্রথম লিখিত গল্প এটাকেই ধরা হয়ে থাকে। মাটির ফলকগুলোতে গবেষণা চালিয়ে জানা যায়, সেগুলোর বয়স ছিল প্রায় ৪০০০ থেকে ৪৫০০ বছর, যা শুধু রামায়ণ বা মহাভারতই নয়, গ্রিসের অডিসি আর ইলিয়ডের চেয়েও পুরোনো ছিল।
সাহিত্য জগতে প্রচলিত একটা কথা আছেÑ ‘যারা গল্প বা উপন্যাস লেখেন, তাঁরা স্বভাবজাত নিঃসঙ্গ হন’। এই নিঃসঙ্গতাই লেখককে বিভিন্ন গল্পের ভিতরে একাকার করে দেয়, উদ্বুদ্ধ করে গল্প রচনায়। কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললে এভাবেও বলা যায়, ‘গল্পের ভিতরে যা কিছু থাকে, তা লেখকের মনোজগতে বিচরণ করা পুঞ্জিভূত বিভিন্ন ঘটনা, চরিত্র আর দিনরাত্রির গুচ্ছভাবনা’। লেখকের মনোজগতের যে বিশাল সময়ভা-ার, তা টইটম্বুর থাকে এসব ঘটনা, চরিত্র আর দিনকাল দিয়ে। ঘটনা, চরিত্র, দিনকাল বলতে গল্পের ভিতর যা কিছু থাকে, তা তো লেখকের ভাবনারই ‘কার্বনকপি’। সুতরাং ভাবনার জগতে লেখক কোনো অর্থেই নিঃসঙ্গ নন! বরং পার্থিব জগতের যে কোনো মানব-মানবীর অভ্যস্ত সমাজ-জীবনের চেয়ে লেখক অনেক বেশি সামাজিক এবং ব্যস্ত! লেখকের পার্থিব জীবন বিবিধ ‘অনুষঙ্গে’ পূর্ণ থাকলে গল্পের যে ঘটনা, চরিত্র বা আবহাওয়াগুলো থাকে, তা সৃষ্টিতে হয়তো লেখক সেভাবে সফল হতে পারতেন না। তাহলে কি লেখক সামাজিক জীব নন? লেখক কি তাহলে সংসারত্যাগী এমন কেউ যাকে সন্ন্যাসী, বাউল বা ব্রহ্মচারী বলে? এর জবাব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৪ সালের ২৭ জুন শিলাইদহ থেকে ইন্দিরা দেবীকে এভাবেই দিয়েছিলেন- ‘আজকাল মনে হচ্ছে যদি আমি আর কিছু না করে ছোট ছোট গল্প লিখতে বসি, তাহলে কতকটা মনের সুখে থাকি এবং কৃতকার্য হতে পারলে হয়তো পাঁচজন পাঠকেরও মনের সুখের কারণ হওয়া যায়। গল্প লেখার একটা সুখ এই, যাদের কথা লিখব তাঁরা আমার দিনরাত্রির সমস্ত অবসর একেবারে ভরে রেখে দেবে, আমার একলা মনের সঙ্গী হবে, বর্ষার সময় বদ্ধঘরের সংকীর্ণতা দূর করবে এবং রৌদ্রের সময় পদ্মাতীরের উজ্জ্বল দৃশ্যের মধ্যে আমার চোখের পরে বেরিয়ে বেড়াবে’! রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প রচনার প্রাথমিক প্রেরণা বা উদ্দেশ্যের যে রূপকল্প, তার কিছুটা আভাস এই কথাগুলোর ভিতরেই পাওয়া যায়।
রেহানা বীথি এমনই একজন গল্প-লেখক। বীথির পৈতৃক নিবাস চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহাডাঙা গ্রামে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম পাস করার পর ২০০১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় একজন আইনজীবী হিসেবে বীথির কর্মজীবন শুরু হয় এবং বর্তমানে তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘শনিবারের আসর’ নামে একটি সংকলনে তাঁর প্রথম গল্পটি প্রকাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে রেহানা বীথির গল্প-লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ।
রেহানা বীথি মোট চৌদ্দটি বাছাইকৃত ছোটগল্প দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ‘আলো আসে ওখানেও’ বইটি। এটাই বীথির প্রথম বই। প্রথম বই প্রকাশের সময় সব লেখকই প্রচ- স্নায়ুচাপে থাকেন। এটা অবশ্য নিয়ম নয়; তবে অবধারিত! বই প্রকাশের বিভিন্ন চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজটি হচ্ছে বইয়ের একটা যুৎসই নাম দেয়া। শুধুমাত্র নাম খুঁজতে গিয়ে লেখককে অনেক রাত নির্ঘুম কাটাতে হয়, সলাপরামর্শ করতে হয় সজ্জনদের সাথে। তারপরেও কি লেখক সন্তুষ্ট হতে পারেন! ‘বইয়ের শ্রেষ্ঠ নাম পৃথিবীর কোনো লেখকই কোনোদিন খুঁজে পেয়েছেন বলে শুনিনি’। রেহানা বীথির ক্ষেত্রেও হয়তো এর ব্যত্যয় হয়নি! একটা বইয়ে অনেকগুলো গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ থাকতে পারে এবং সেখান থেকে কোনো একটা লেখার ‘শিরোনাম বা নাম’ ব্যবহার করে বইয়ের নামকরণ করাটা বেশ পুরোনো প্রথা, যা বীথির বইয়ের ক্ষেত্রেও হয়েছে। বইয়ে ব্যবহৃত নামটি যে লেখার শিরোনাম বা নাম থেকে নেয়া হয়, সেই লেখাটি তখন একই সাথে অন্যান্য লেখাগুলো থেকে কিছুটা আলাদা গুরুত্ব বা মর্যাদা পায় এবং বইয়ের অন্যান্য লেখাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বইয়ের নামকরণের ক্ষেত্রে লেখককে যথেষ্ট সচেতন এবং মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে হয়, যাতে ‘বইয়ের নাম’ পড়ে পাঠকের বুঝে নিতে অসুবিধা না হয় বাকি লেখাগুলোর আদি-অন্তের খবর এবং সেই সাথে বইয়ের পরিশোধিত আগাম কিছুটা স্বাদ!
দুই.
রেহানা বীথির চৌদ্দটি গল্পের একটি ‘আলো আসে ওখানেও’ এবং এই গল্পের নামেই লেখক মূল বইয়ের নামকরণ করেছেন। স্বভাবত কারণেই গল্পটির গুরুত্ব বা মর্যাদা বইয়ের অন্যান্য গল্পের চেয়ে কিছুটা আলাদা হয়েছে! ‘আলো আসে ওখানেও’ গল্পটি সমাজ-জীবনের হাজারো অনুচ্চারিত যে অধ্যায়গুলো রয়েছে তাঁদেরই একটি, যেখানে অন্ধগলির এক ববিতার কথা লিখেছেন বীথি। তাঁর বর্ণনায় ফুটে উঠেছে অন্ধকার গলির বাসিন্দাদের কথা। ‘দিনের আলোয় ঘুমিয়ে থাকে তাঁরা। দিন শেষে যখন রাত নামে, জেগে ওঠে ওরা। সাজানো পসারের মতো নিজেদের সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকে দোকানের মতো ঘরগুলোর সামনে; খদ্দেরের আশায়! উৎকট সাজ আর শরীরের মোহময় বিভঙ্গে খদ্দেরকে আকৃষ্ট করার প্রয়াসে ঢাকা পড়ে যায় পাহাড়সম বুকের মাঝে জমে থাকা কষ্টগুলো। কোনো অবসরে কষ্টগুলো কখনো-সখনো জেগে ওঠে, মনে করিয়ে দেয় অতীতের ভাসা ভাসা কিছু সুখস্মৃতি! ‘ফুলি’ নাম থেকে ববিতা হয়ে ওঠা নারীর মৃত বৃদ্ধ স্বামীর গায়ের আতরের কড়া গন্ধ আর হামানদিস্তায় পান ছেঁচার মতো কদর্য হাসি গায়ে জ্বালা ধরায়। মনে পড়ে যায় সময়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া ফুলির কথা, দুখিনী মা, সবুজ গ্রাম…’। গল্পের মূল নায়িকার ফুলি থেকে ববিতা হয়ে ওঠার অবিচারে ভরা অসম যে পথ, রেহানা বীথি চমৎকার শব্দশৈলীতে তা ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন এই গল্পে। আদিকাল থেকে বাংলাসাহিত্যে এ-ধরনের গল্পের পটভূমি পাঠকদের কাছে নতুন নয়। তবুও রেহানা বীথির ‘আলো আসে ওখানেও, পাঠকদের কাছে এক ‘ভিন্নতার’ স্বাদ এনে দেবে!
ধবধবে জ্যোৎস্নায় সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদে গিয়ে দেখা যায় ডাকঘর, যেখানে গচ্ছিত রয়েছে প্রিয়জনদের অসংখ্য চিঠি। অথচ কেউ সেখানে নেই! সিঁড়ির সবক’টা ধাপ পেরিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে স্বপ্নভঙ্গের এক অনবদ্য গল্প ‘সামনে সিঁড়িপথ’। ‘স্বপ্নচাষী’ গল্পে একজন টিউশন মাস্টারের স্বপ্নহীন জীবন কীভাবে একটু একটু করে রঙিন স্বপ্নের বুননে বদলে দেয়া যায়, তারই গল্প! বাস্তবতার পরাশৃঙ্খলতাকে অস্বীকার করে অলীক স্বপ্নের জালে বোনা অবাস্তব জীবনের যে উপাখ্যান, লেখক শব্দের নিপুণ কারুকার্যতায় ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর ‘স্বপ্নচাষী’ গল্পে। গ্রামের সহজ-সরল ভ্যানচালকের গল্প ‘আলাদিনের চেরাগ এবং…’। আধুনিক গল্পের সাথে রূপকথার অনবদ্য সংমিশ্রণ ঘটিয়ে গল্পকারের ভূমিকায় লেখক রেহানা বীথি এক অনবদ্যতার ছাপ রেখেছেন এই গল্পে, যেখানে যথেষ্ট সতর্কতার সাথে তিনি দারিদ্র্যের কষাঘাতে পতিত নিম্ন-মধ্যবিত্তের মনস্তাত্ত্বিক ঘোর-প্যাঁচগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন। বেদে বহরের মেয়ে ললিতার ডাঙার প্রতি আকর্ষণ, ডাঙার ছেলে গণেশের সাথে তার প্রেম এবং সংসার বাঁধার স্বপ্ন, ‘এই তিনকে’ বেঁধেছেন লেখক তাঁর ‘মধুমতির বেদেনী’ গল্পটিতে। এছাড়াও বইটিতে রয়েছে নগরে দেবদূত, অতিক্রম, দলছুট প্রজাপতি, সুখকেদারা এবং অতসীপ্রেম, বিষধর, ফেরা, কাঁসার বাটি, শোরগোল অতঃপর…ইত্যাদি শিরোনামের অত্যন্ত সুপাঠ্য গল্পগুলো।
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ শহর উরের রাজা ছিলেন গিলগামেশ। একাধারে তিনি ছিলেন অত্যাচারী এবং খামখেয়ালী। তিনি শারীরিকভাবে তিনভাগের দুই ভাগ ছিলেন দেবতা। ভাবতেন, দেবতাদের মতো তিনিও ছিলেন অসীম ক্ষমতাশালী এবং অসাধ্য বলে তাঁর ভাবনায় কিছু ছিল না। গিলগামেশের গল্পটি ছিল মূলত ‘অহংবোধ ভেঙ্গে একজন সাধারণ মাটির মানুষে রূপান্তর হওয়ার’ গল্প। ‘রাজা গিলগামেশ’ গল্পে রূপকের ব্যবহার অত্যন্ত প্রাঞ্জল। কয়েক হাজার বছরের পুরোনো গল্পে রূপকের ব্যবহারে এবং তার মাত্রায় যে পা-িত্যের বহর দেখা যায়, তা গল্পটিকে করেছে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য। রেহানা বীথির গল্পগুলোতেও রয়েছে রূপকের অকৃপণ ব্যবহার। তাঁর প্রতিটা গল্পে একই সাথে রয়েছে জীবনের বিবিধ বৈচিত্র্য এবং অবিচারে পতিত জীবন, যা খোলা চোখে দেখা গেলেও লেখকের বর্ণনাশৈলীতে হয়েছে আরো বেশি প্রাঞ্জল।
‘রাজা গিলগামেশ’ যদি পৃথিবীর প্রথম স্বীকৃত গল্প হয়, তাহলে তারই ধারাবাহিকতায় আজ-অবধি যত গল্প লেখা হয়েছে এবং রেহানা বীথির গল্পগুলোও একই ধারাবাহিকতায় এবং ফ্রেমে বাঁধা বললে অত্যুক্তি করা হবে না। বইয়ের প্রতিটা গল্পে রূপক ব্যবহারের আধিক্য, সূক্ষ্ম বিবেচনায় সমাজ-সংসারের চুলচেরা বিশ্লেষণ, জীবনের বিস্তৃত স্বপ্ন, গল্পের ছলে বিবিধ সমস্যার সমাধান ইত্যাদি বিষয়াদিগুলো গল্পকে শুধু গল্পের সীমারেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, আগবাড়িয়ে ক্ষেত্রবিশেষে তার সমাধানও দিয়েছেন লেখক। বীথির প্রতিটি গল্পে যে মিলের জায়গাটি রয়েছে, তা হলো ’স্বপ্ন’। গল্পের উপাদান হিসেবে স্বপ্নের ব্যবহার একটি স্বভাব বা অভ্যাস। সে কারণে গল্প-লেখক হিসেবে রেহানা বীথির ‘লেখক-চিহ্ন’ হতে পারে ‘স্বপ্ন’, যা তাঁকে পাঠকসমাজে স্বতন্ত্রভাবে উপস্থাপন এবং স্বপ্রতিভূ করবে!
গল্প লেখার মানুষ পৃথিবীতে খুব বেশি নেই; তবে গল্প বলতে পারে প্রায় সবাই। গল্প লেখা আর গল্প বলা এক জিনিস নয়। গল্প লেখা এক ধরনের কাজ, যা তৈরি করতে হয়। ‘ঘরে তো মানুষই থাকে। কিন্তু ঘর বানাতে পারে কয়জন’! গল্প লেখারও কিছু শৈলী এবং কলাকৌশল আছে, যা সবাই রপ্ত করতে পারেন না। এ ব্যাপারে কয়েকজন লেখকের সাথে একাধিকবার আলাপও হয়েছে আমার। সবাই একমত হয়েছেন যে, গল্প লেখা গল্পবাজদের কাজ নয়। গল্প লেখার সুনির্দিষ্ট কলাকৌশল বা ব্যাকরণ হয়তো নেই। তবে যা কিছু আছে, তা নিজ থেকেই আয়ত্ত করতে হয়। লেখকের সিদ্ধতা লাভ হয় নিজ তাগিদেই। গল্প লেখা ‘গুরুমুখী বিদ্যা নয়’! পৃথিবীর সবকিছুই সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলে। গল্প লেখারও কিছু নিয়ম আছে, যার অনুসরণে লেখকের সিদ্ধতার পরিমাপ হয়। ভিন্ন কথায়, একজন লেখকের সাথে অন্য লেখকের পার্থক্যের জায়গাটা মূলত তাঁদের সিদ্ধতা পরিমাপের মধ্য দিয়েই হয়। আর এই পরিমাপের গুরুদায়িত্বটি পালন করেন পাঠক! ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় রেহানা বীথির প্রথম প্রকাশিত গল্পের বই ‘আলো আসে ওখানেও’ নিঃসন্দেহে পাঠকদের কাছে সমাদৃত হবে।
সাব্বির খান, লেখক ও সাংবাদিক
আলো আসে ওখানেও
ইয়াকুব খান শিশির যতটা না অণুগল্পকার তারচেয়েও বেশি একজন অণুগল্পসমঝদার; বিজ্ঞ আলোচক। অণুগল্পকে অণুগল্প হিসেবে বুঝতে পারার মধ্যেও এক ধরণের মেধার প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় অণুগল্পসংশ্লিষ্ট জ্ঞান বা বোধ। এই জ্ঞান বা অণুগল্পবোধটির অভাব থাকলে অণুগল্পের মূল মূরতি দেখা পাওয়া সম্ভব হয় না। ইয়াকুব খান শিশির এমনি একজন পাঠক যার ভেতরে অণুগল্পবোধটি সবসময় জাগ্রত থেকেছে। অণুগল্পের ভেতর-বাহিরের জ্ঞান অর্জন করেছেন। সেই জ্ঞান দিয়ে তিনি ইতোমধ্যে অণুগল্পের প্রচার প্রসার এবং বাংলা সাহিত্যের একটি নবতর শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন।
রাজহাঁস ও অন্যান্য অণুগল্পের সফলতা কামনা করছি।
-বিলাল হোসেন
রাজহাঁস ও অন্যান্য অণুগল্প
মির্জা মুজাহিদ। পেশাগতভাবে বিজ্ঞাপন শিল্পের সাথে জড়িত। জন্মেছেন নড়াইল শহরে। এখন ঢাকায় থাকেন। চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিয়মিত ‘কথা’র শিল্পী হতে।
বিপ্রতীপ
রোবটদের গল্প
শীতের বিকেলে পিঠে রোদ লাগিয়ে আরাম করে শুয়ে ছিল হাতি। পাশের এক মাটির ঢিবি থেকে পিনপন নামের পিঁপড়েটি পিল পিল করে হাতির সামনে এসে বলে, কথা দিয়েছিলে চাঁদ দেখাবে। কই ডাকলে না তো। বিকেলের নরম রোদে আরামে চোখ বুজে এসেছিল হাতির, পিঁপড়ের গলা পেয়ে চোখ পিটপিট করে বলে, বলেছি যখন তখন দেখাব। আজ রাতেই দেখাব।
রাতে কেন এখনই দেখাও না।
আরে চাঁদ তো রাতে দেখা যায়। এই বনের সবাই যখন ঘুমায়, তখন চাঁদ চুপিচুপি আকাশের গায়ে ওঠে।
হাতির কথা মতো রাতে চাঁদ দেখতে হাজির হয় পিঁপড়েটি। হাতি বলে, কী দেখ? পিনপন বলে, লাঠির মতো কিছু একটা, আবার আমগাছের মতোও মনে হয়। দাঁড়াও একটু চড়ে আসি, দেখি কোনো বাসাটাসা বানানো যায় কি না। পিঁপড়েটি হাতির পা বেয়ে ওপরে উঠে যায়।
হাতি বলে, পেলে কিছু?
অনেক কিছু কিছুমিছু?
হাতি ভাবে মহা মুশকিলে পড়া গেল তো! এই পিঁপড়েটাকে নিয়ে চাঁদ দেখার আয়োজন করাটাই ভুল হয়েছে, তবু কথা যখন দিয়েছি, তা তো রাখতেই হবে। পিঁপড়ে বলে, বেশ মজা হচ্ছে, এখানেই বাসা বানাব ভাবছি।
নেমে এসো বলছি। আমার কেমন সুড়সুড়ি লাগছে।
চাঁদে আমি ঘর বানাব শুনে তোমার কি না সুড়সুড়ি লাগে, হে হে ভারি মজা তো!
আরে ওটা চাঁদ নয়, ওটা আমার … উঁ উঁ বলে চিৎকার করে ওঠে হাতিটি। পিঁপড়ে বলে, চাঁদে বেশ মজা চিমটিও কাটা যায়। দেখবে এসো।
আরে ওটা চাঁদ নয় ওটা আমার পা।
তোমার পা! হেহে এখন বলবে তো চাঁদের তোমার পা পড়েছে। মনের দুঃখে হাতি এবার বসে পড়ল।
…………………………………………………
…………………………………………………
…………………………………………………
হাতি ও পিঁপড়ের চাঁদ দেখা
বোধ বৃক্ষের জানালা
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.