Additional information
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
$ 0.85 $ 1.41
মাহবুব মিত্র বিশ্বাস করেন মানুষই শিল্প; মানবতাই ধর্ম। মানুষবিহীন পৃথিবী শস্যহীন প্রান্তরের মতো। তিনি মনে করেন সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ শিল্প মানুষের সৌন্দর্য। তাঁর প্রিয় বিখ্যাত দু’টি উক্তিÑ “মানুষ দেখার আনন্দে তুমি কখনো ক্লান্ত হয়ো না”, “ভুল মানুষের কাছে আমি নতজানু নই।” নীতির সাথে আপোসহীন চির প্রতিবাদী সতত ডানার মানুষ এক ক্লান্তিহীন গেয়ে যান ভালোবাসার গান, সমতার গান, মানবতার গান, সুন্দরের গান।
মাহবুব মিত্র বস্তুবাদী দার্শনিক মতবাদে বিশ্বাসী। আবার ভাববাদী দর্শনও মাঝে-মধ্যে তাঁকে ভাবায়। এই দুই মতবাদের ভিতর দিয়ে পথ হাঁটছেন। তিনি বুকে ধারণ করে আছেন সৃষ্টি জগতের সকল সুন্দরের নির্যাস। সাহিত্য ও শিল্পের বাগানে শব্দ বুনে-বুনে তৈরী করছেন মানব হৃদয়ের নৈবেদ্য। এই নিবিড় সংসারে একাকি নিঃসঙ্গ পথিক এক খুঁজে পেয়েছেন জীবনের সৌন্দর্যের অবিরাম ধারাপাত। তিনি মানব হৃদয়ে খুঁজে বেড়ান সুন্দরের স্বর্গভূমি।
তিনি সর্বদা আশাবাদী একজন প্রাণবন্ত-প্রফুল্ল মানুষ। তুমুল অন্ধকারের মাঝে খুঁজে ফেরেন আলোর ফোয়ারা। মানুষ তখনই মৃত যখন তার ভিতরের আনন্দ মরে যায়। চিরন্তন সুন্দরের জন্য হাহাকার-আকাক্সক্ষা, নৈতিক মূল্যবোধের উপলব্ধি, স্বতন্ত্র বোধের-চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত তাঁর ভাবনার আকাশ। তাঁর সুকুমার কোমল প্রবৃত্তি আপন আলোয় ভাস্বর, দীপ্ত-শোভান্বিত, সদা জাগ্রত।
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
লেখক পরিচিতি :
সুলতানা শাহরিয়া পিউ। জন্ম: ২রা অক্টোবর। লেখালেখি, আবৃত্তি ও সঙ্গীতচর্চা তার শখ। অনুপ্রাণন সম্পাদনা পর্ষদ এর সদস্য, বর্তমানে দীপ্ত টেলিভিশনের স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘মেঘের সাথে কথা’। অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ: ‘নিমগ্ন জলধারা’। স্ক্রিপ্ট সঙ্কলন: ‘আমরা করব জয়’। গীতিকবিতার অনুবাদ: ‘অচিন’। গল্প সংকলন: ‘মেঘের দেশে ফিরে যাবার গল্প’।
আমার দিনগুলো রইলো অসম্পূর্ণ
লেখক পরিচিতি :
তানভীর আহমেদ হৃদয়। জন্ম: ৩ডিসেম্বর, ১৯৮৫ইং। মুন্সিগঞ্জ, বিক্রমপুর। প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকায় আছে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়া। এছাড়া সম্পাদিত গ্রন্থের তালিকায় আছে কবিতা ও গল্প। লেখকের লেখা প্রতিনিয়ত দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে।
অচেনা রৌদ্রের রঙ
অয়ন্ত ইমরুল। জন্ম: ১২ই এপ্রিল ১৯৮৭ইং, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার আজিমনগর গ্রামে। পদ্মা নদীর ভয়াল গ্রাসে শৈশবেই ঠিকানার পরিবর্তন ঘটে বর্তমানে সাভার আশুলিয়ায় বসবাসরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ছায়াসমুদ্র
ফারহানা খানম। জন্ম: ১৯শে এপ্রিল ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপে। ‘ভুগোল ও পরিবেশ’ বিষয়ে স্নাততোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে ব্যাংকে চাকুরি শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। নয় ভাই-বোনের মাঝে সবার ছোট বলেই আদরও পেয়েছেন বেশি। প্রথম প্রকাশিত বই, ‘ইছামতি’ (কলকাতা থেকে প্রকাশিত)।
তৃষ্ণার্ত বালুতট
দেবাশীষ ধর। জন্ম: ৫ই জানুয়ারি, ১৯৮৯। চট্টগ্রাম। কবিতার ছোটকাগজ ‘বাঙাল’ এর সম্পাদক। কবির এটি প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
ফসিলের কারুকাজ
লেখক পরিচিতি :
শারমিন রাহমান। জন্ম: ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩। দ্ইু সন্তানের জননী। বাংলাদেশের স্বনামধন্য স্কুলগুলোতে দীর্ঘ ১৫ বছর শিক্ষকতা শেষ করে বর্তমানে চট্টগ্রাম আর্ট সেন্টার ‘ধ্যান’ এর পরিচালক। বিশেষ আগ্রহ আছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে। এটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
অপ্রাকৃত কবচ
কাজী রহমান। পরবাসী লেখক নিজের পছন্দ মতো বাঁচতে দু-যুগ আগে মার্কিন মুলুকে চলে আসেন স্ত্রী ও প্রথম শিশুকন্যা সাথে নিয়ে। বড় হয়েছেন পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া’য়। জ্ঞান হবার পরপরই নিজেকে আবিষ্কার করেছেন ঘরের পাশের গ্রন্থাগারে, বিভিন্ন শিশু সংগঠন আর সমাজসেবামূলক সংগঠনের আলোছায়ায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দুরন্ত কিশোর স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখেছেন কাছ থেকে আর আতঙ্কের দিন গুনেছেন সারাক্ষণ মুক্তিযোদ্ধা দু’ভাইয়ের ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। গ্রাজুয়েশন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবন কেটেছে বিদেশী এয়ার লাইন্সের কর্মকর্তা হিসেবে।
তারাধুলো জল ও নস্টালজিয়া
লেখক পরিচিতি :
হান্নান হামিদ, লেখক নাম কালের লিখন। জন্ম: আগস্ট, ১৯৮৪। জামালপুর। ‘বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস’ লেখকের প্রথম বই।
বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস
কিছু একটা বলাটাই যখন বাধ্যবাধকতাÑবাহুল্য এবং আপেক্ষিক বাতুলতা বাদ রাইখা মাহবুব লীলেন থাইকা ধার কইরা বলতে হয়Ñ ‘আনফিট মিসফিট হইয়া হামাগুড়ি দিয়া হাঁটি, আর রাত্তিরে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ টাইনা চিক্কুর দিয়া কইÑ যাহ শালা বাঁইচা গেলাম আরও একটা দিন।’
এইটা বড়োবেশি জৈবিক বাঁচা
মানবিক বাঁচনের স্বপ্নও দেখি না বহুদিন
বড়ো তরাসে আছি
বড়ো বেশি চাইপা আছি, নিজের গলা নিজে।
দ্বান্দ্বিক দ্বন্দ্ব বিষয়ক আজাইরা প্রলাপ
হাসানআল আব্দুল্লাহ। জন্ম: ১৪ই এপ্রিল, ১৯৬৭। গোপালগঞ্জ জেলার গোপিনাথপুর গ্রামে। তিনি প্রবর্তন করেছেন নুতনধারার সনেট। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থর সংখ্যা দশ। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার কবিতার অনুবাদে প্রকাশ করেছেন বিশ্ব কবিতার কয়েকছত্র। অন্যান্য প্রকাশিত গ্রন্থ- সনেটগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা, আঁধারের সমান বয়স, এক পশলা সময় প্রভৃতি। ২০০৭ ও ২০১৫ সালে নিউইয়র্কের কুইন্স শহরের পোয়েট লরিয়েট ফাইনালিস্টের সন্মান পেয়েছেন।
বৃত্তের কেন্দ্রেও কবিতার মুখ
আলী রেজা। জন্ম: ১৯৫৭। মুক্তিযুদ্ধে আলোড়িত কবি, সত্তর দশকে মূলত ছোটকাগজে লেখালেখি শুরু করেন। সদ্য অবসরে যাওয়া একটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক। এটি কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
আলী রেজা
নাহিয়ান ফাহিম। জন্ম: ২৩শে মার্চ, ১৯৮৪। ময়মনসিংহ জেলা। ঢাকাতে বেড়ে ওঠা। মূলতঃ পাঠক, ফলতঃ লেখক। সাহিত্য পত্রিকা ‘জলমাঝি’র সম্পাদক। মার্কেংটিং বিভাগে স্নাতকোত্তর। পেশাগত জীবনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিনদুপুরের নোটবই’।
মধ্যবিত্ত কবিতা
মোঃ জিয়াউল হক; জন্ম : ১৯৮১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দী গ্রামে। পিতা- মোঃ নাছির উদ্দীন, মাতা- মোছাঃ জাহানারা বেগম। পড়াশোনা : এম.এ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)। পেশা : দীর্ঘ এক যুগ ‘গ্রাফিক ডিজাইনার’ ও ‘পেইন্টার’ হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করার পর, বর্তমান পেশা শিক্ষকতা।লেখালেখির হাতে খড়ি হয় ১৯৯৫ সালে। লেখালেখির শুরুটা মফস্বল এলাকার নাট্যপ্রেমী ছেলেদের জন্য মঞ্চ নাটকের কাহিনি রচনার মধ্য দিয়ে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় কবিতা ও ছড়া লেখার চেষ্টা, বহুদিন। সেই চেষ্টা থেকেই ২০০০ সালে প্রকাশিত ‘দৈনিক ঘাঘট’ পত্রিকায় ‘আঁড় চোখে দেখা’ শিরোনামে বিদ্রুপাত্মক ছড়া নিয়মিত লেখালেখি। এই সময় সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুদের সাথে নিয়ে ‘অগ্নিরথ’ নামক একটি অনিয়মিত মাসিক সাহিত্য ম্যাগাজিন সম্পাদনা ও প্রকাশনা কাজেও যুক্ত। কিন্তু ইতিমধ্যে রুটিরুজির জীবনযুদ্ধ শুরু হলে কবিতা-ছড়া বিলিন হয়ে যায় জীবন থেকে।
অন্তর্দাহ
কবি ও প্রাবন্ধিক স্বপঞ্জয় চৌধুরীর দ্বিতীয় প্রবন্ধের বই “শিল্প সাহিত্যের নিবিড় অনুসন্ধান ও পাঠ বিশ্লেষণ: নিভৃত ভাবনার জলযান” মূলত তাঁর দীর্ঘদিনের পাঠাভ্যাস ও চিন্তার প্রকৃষ্ট ফসল। এ গ্রন্থে তিনি মোট ২৪ টি নিবন্ধ সংযোজন করেছেন। যাতে তিনি আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন কবিতা, সাহিত্য, দর্শন, ও চলচ্চিত্রসহ শিল্পকলার বিভিন্ন মাধ্যমের দিকে। কবিতা ও কথাসাহিত্যের নন্দনতাত্তি¡ক ভেতরবাড়ির আনাচকানাচ পর্যবেক্ষণ করে তা তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র ও লিটলম্যাগ নিয়েও প্রয়াস চালিয়েছেন তাঁর নিবন্ধের বইটিতে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কবি সাহিত্যিকদের বিভিন্ন লেখাকে তিনি পাঠ পরবর্তী বিশ্লেষণের মাধ্যমে এক ভিন্ন শিল্পরূপে দাঁড় করিয়েছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়। গদ্যসাহিত্যের বিকাশমান ধারায় তাঁর এ গ্রন্থটি সিরিয়াস ও মনোযোগী পাঠকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পাবে বলে আশাকরি।
– আহমেদ শিপলু।
কবি ও নন্দনতাত্ত্বিক, সম্পাদক – ‘মগ্নপাঠ’
Shilpo sahityer Nibir Anusondhan O Path Bislation - Nibir Vabonar Jalzan - Swapanjoy Chowdhury
লেখক পরিচিতি :
অঞ্জন আচার্য। জন্ম: ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্র গাঙ্গিনারপাড়ের অধুনালুপ্ত লালালজে (স্থানীয় ভাষায় যাকে লাইলিপট্টি নামে ডাকা হতো)। লেখক মূলতঃ কবি, এছাড়া ভাষার ওপর বিভিন্ন সময় গবেষণার প্রকল্পে কাজ করেছেন। তারমধ্যে উল্লেখ্য, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন ‘জেন্ডার ও উন্নয়ন’ বিষয়ে, পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স লিমিটেডে ভাষা বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন, বাংলা একাডেমির অধীনে ‘বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান’ প্রকল্পের গবেষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। লেখকের এটি তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। এছাড়া আরও বেশকিছু গবেষণামূলক গদ্যের বইও প্রকাশিত হয়েছে।
তুমুল কোলাহলে কুড়াই নৈঃশব্দ্য
সম্পাদকীয়, অনুপ্রাণন–নবম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা
আমরা এখন একটি বৈশ্বিক মহামারি বা অতিমারি কাল অতিক্রম করছি। নভেল করোনা ভাইরাস ২০১৯ যা সংক্ষেপে ‘এনকোভ-১৯’ নামে পরিচিত যা থেকে সংক্রমিত রোগটির নাম বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা দিয়েছে কোভিড-১৯। এনকোভ-১৯ যাকে ব্যাবহারিক সংক্ষেপনে বলা হচ্ছে কেবল করোনা ভাইরাস, অত্যন্ত ছোঁয়াচে ও প্রাণসংহারী। এই ভাইরাসের সংক্রমণ এর সুত্রপাত হয় এ’বছরে জানুয়ারি’র প্রথমভাগে, চীন এর উহান শহর থেকে। তারপর বিশ্বায়নের অলি-গলি দিয়ে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বের প্রায় ২৫০ টি দেশে।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণের খবর পাওয়া যায় ৮ মার্চ, ২০২০। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত দেশে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার এর অধিক জনের। ২৬ মার্চ, ২০২০ থেকে বাংলাদেশে প্রায় দুই মাস জরুরি বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য, ঔষধ প্রস্তুতকারি ও বিপণন প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালগুলো বাদ দিয়ে সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, দোকান-পাট, শপিং মল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল প্রকারের গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। দুই মাস বন্ধের পর স্বাস্থ্যবিধি পালন করা সাপেক্ষে ক্রমে, সরকারি, বেসরকারি অফিস, দোকানপাট, শপিং মল এবং গণপরিবহন খোলা হয়। এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং জুলাই মাস পর্যন্ত আদালতসমুহ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সীমিত পরিসরে চালু থেকেছে।
সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আজ পর্যন্ত সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় পৌনে দুই কোটি এবং মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় পৌনে সাত লক্ষ। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ খুবই সীমিত আকারে নানা বাধা নিষেধ নিয়ে চালু আছে। বিভিন্ন ঔষধ প্রস্তুতকারি এবং বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই ভাইরাসের সংক্রমণের হাত ত্থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য টিকা বা কোন প্রতিষেধক উদ্ভাবন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা বিশ্বে সংক্রমণ সীমিত করার জন্য সকলকেই প্রায় একই ধরনের এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন কতগুলো জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পূর্বে বিশ্বের ইতিহাসে বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক মহামারির ঘটনা ঘটেছে। যেসব মহামারিতে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তখনকার সৃষ্ট বিভিন্ন শিল্প, সাহিত্যে ও সঙ্গীতে ঘটে যাওয়া অতীতের অতিমারিসমূহের চিত্র ও বিবরণ পাওয়া যায়। শিল্প, সাহিত্য এবং সঙ্গীতে সর্বদাই সমাজবাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেছে। একই সময়ে সৃজনশীল শিল্প, সাহিত্য এবং সংগীত নতুন নতুন চিন্তা-চেতনা, দর্শন, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সৃজনশীল ও নান্দনিক প্রকাশ ঘটিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। শিল্প, সাহিত্য এবং সংগীত ইতিহাসেরই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং বেশির ভাগ ঐতিহাসিক ঘটনাবলি তাৎক্ষণিকভাবে রচিত শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীতে আধৃত হতে দেখা যায়। যার মাধ্যমে ঐতিহাসিক সত্য এবং তৎকালীন সমাজের চিত্র বিম্বিত হতে পারে।
বিগত ১৫০০ বছরে বহুবার ‘বিউবোনিক’ প্লেগের সংক্রমণ ঘটেছে। বিউবোনিক প্লেগ নামের রোগটি ‘ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস’ নামে এক প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়ার কারণে ঘটেছে। ষষ্ঠ, চতুর্দশ, উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং বিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে বিউবোনিক প্লেগের বৈশ্বিক মহামারি বার বার ফিরে ফিরে আসে এবং বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই প্লেগের কারণে মারা যায়। প্রতিবারই সংক্রমণ কমে আসে এবং সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এসব মহামারির সমাপ্তি ঘটেছিল। একটি অনুমান যে, বিবর্তনের ফলে ‘ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস’ জীবাণুটি দুর্বল হয়ে পড়ে। অথবা সংক্রমিত মানুষদের গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দেয়ার ফলে জীবাণুটি ছড়িয়ে পড়ে নতুন করে আর মহামারি আকার ধারণ করতে পারে নি। ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামের ব্যক্টেরিয়াটির অস্তিত্ব প্রাকৃতিকভাবে এখনও রয়েছে প্রেইরি অঞ্চলের এক প্রজাতির কুকুরের লালায়। কিন্তু ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম সংক্রমণের সময় এই ব্যক্টেরিয়াটি এক বিশেষ প্রজাতির র্যাট-ফ্লি বা ইঁদুরের মাছিতে জন্ম নিয়েছিল।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পৃথিবীর বিশ্বমহামারিমূহের সমাপ্তি সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে হয়েছে। কিন্তু, ইতিহাসে শুধু একটি ব্যতিক্রমই পাওয়া যায়। সেটা হচ্ছে ‘ভ্যারিওলা মেজর’ নামের একটি ভাইরাসের কারণে ছড়িয়ে পড়া গুটি বসন্তের বৈশ্বিক মহামারির ক্ষেত্রে। আর সেটার সমাপ্তি সম্ভব হয়েছে একটি অব্যর্থ টিকা আবিষ্কার এবং সেই টিকা বিশ্বের দেশে দেশে প্রায় সকল মানুষকে প্রয়োগ করার মাধ্যমে। প্রসঙ্গতঃ এই টিকা নিলে একজন মানুষ তার সারাজীবনের জন্য গুটিবসন্তের সংক্রমণ থেকে মুক্ত হতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পৃথিবীতে গুটিবসন্ত ভাইরাসটির সংক্রমণের ইতিহাস ছিল প্রায় ৩০০০ বছরের।
১৯১৮ সনের ইনফ্লুয়েঞ্জার বৈশ্বিক মহামারিটিই উদাহরণ হিসেবে আজকের দিনের মহামারির ধ্বংস এবং স্বাস্থ্যবিধি অর্থাৎ কোয়ারেন্টাইন অথবা সামাজিক দূরত্বের মূল্য অনুধাবন করতে সাহায্য করে। ১৯১৮ সনের ইনফ্লুয়েঞ্জায় পৃথিবীতে ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। এই ইনফ্লুয়েঞ্জাটি সারা পৃথিবীতে ব্যাপক মৃত্যুর স্বাক্ষর রাখার পর ক্রমেই বিলীন হয়ে বিবর্তিত মৌসুমী ফ্লু’র রূপ নেয়, যে ফ্লু দ্বারা বিশ্বের দেশে দেশে মানুষ প্রতিবছর আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর ঘটনা অনেক কমে এসেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির প্রায় সাথে সাথেই সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জার এই বৈশ্বিক মহামারির সমাপ্তি ঘটে। এর পর কতগুলো ফ্লু-এর মহামারি দেখা দিয়েছিল কিন্তু এখনকার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মতো সেগুলোর সংক্রমণ ও মৃত্যুর রূপ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে নি।
বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং একাবিংশ শতাব্দীতর প্রথম দিকে এবোলা এবং এইচআইভি ভাইরাস এর মহামারি ঘটতে দেখা যায়। যে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঝুঁকি এখনো রয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত এবোলা ভাইরাস এবং এইচআইভি প্রতিরোধের কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র আফ্রিকার কোনো কোনো অঞ্চলে এই ভাইরাস দুইটির সংক্রমণ সীমাবদ্ধ থাকাতে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা’ এবোলা এবং এইচআইভি মহামারির সমাপ্তি ঘোষণা করে এটাকে জরুরি স্বাস্থ্যবিষয়ক উদ্বেগের পর্যায়ে নামিয়ে আনে।
যদিও ৩ কোটি বছর পূর্বের কোনো কোনো ফসিল থেকে ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলে তবে বিশেষতঃ প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্ব থেকেই বিভিন্ন সময়ে ম্যালেরিয়া মানবসমাজের অস্তিত্বের প্রতি বড় আকারের হুমকি হিসাবে দেখা দেয়। আদি মেসোপটেমিয়া অথবা রোমান সাম্রাজ্যে এবং মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পেরিয়ে একবিংশ শতাব্দীতেও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা শোনা যায়। কিন্তু ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটবাহী কিউলেক্স মশার ব্যাপক নিধন এবং ১৮২০ শতাব্দীতে আদি সিনকোনা গাছের ছাল থেকে কুইনাইন আলাদা করা এবং এই ঔষধ অর্থাৎ কুইনাইন এবং পরবর্তীকালে কুইনাইনের উন্নত সংস্করণের ব্যাপক ব্যবহারের পর থেকে ম্যালেরায়ার প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
প্রাচীন ইতিহাসে, হিপক্রিটিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০-৩৭৭) এবং গেলেন (১২৯-২১৬ খ্রিস্টাব্দ) এর বর্ণনায় কলেরা’র মতো একটি রোগ এবং চিকিৎসার বিবরণ পাওয়া যায়। কিন্তু, আধুনিক কালের ইতিহাসে কলেরা মহামারি ১৮১৭ সনেই প্রথমে গঙ্গা অববাহিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ার বিবরণ পাওয়া যায়। ১৮৮৪ সনে কলেরার জীবাণু চিহ্নিত করা হয় এবং কলেরার প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা শুরু হয়। ১৮৮৫ সনেই কলেরার টিকার আবিষ্কার হয়, যে টিকা সেবন করলে মানুষ ছয় মাসের জন্য কলেরার অনাক্রমণ্যতা প্রাপ্ত হতে পারে। বিশ্বে কলেরার ৭টি মহামারির ইতিহাস রয়েছে। ৭ম ম্যালেরিয়া মহামারি দেখা যায় ১৯৬১ সনে এবং এই মহামারি ইন্দোনেশিয়ায় থেকে উৎপত্তি হয়ে এশিয়া এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯১ সনে এই মহামারি দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছায় এবং সেখানে প্রায় ৪০০০ মানুষ মারা যায়। কলেরার সাতটি পর্বের সংক্রমণে সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যু ঘটেছিল।
কলেরা মূলত পানিবাহিত রোগ। দূষিত জল পান করার মাধ্যমে এর সংক্রমণ ঘটে তাই শীত প্রধান দেশগুলোর তুলনায় পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চলগুলোতেই কলেরার মারাত্মক প্রাদুর্ভাব অধিক সংখ্যায় ঘটতে দেখা গেছে। ভিবরিও কলেরি নামে একটি জীবানুর কারণে কলেরা হয়। রোগীর মল পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব। যেহেতু কলেরার সংক্রমণ হলে রোগীর প্রচণ্ড উদরাময় হয় তাই দেখা যায় যে প্রথম ধাপে সংক্রমিত হওয়ার সময় খুব দ্রুত শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে পারলেই প্রায় ৯৯% কলেরা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। সাথে এন্টিবায়োটিক এবং জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করে কলেরা রোগ থেকে প্রায় ১০০% রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
বিদেশী চিত্রকর্ম ও সাহিত্যে অতীতের অতিমারিসমূহের প্রত্যক্ষ প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। যদিও ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইনের শাসক স্বয়ং জাস্টিনিয়ান’এর দুই একটি ফ্রেস্কো দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু ষষ্ঠ শতাব্দীর প্লেগের ফ্রেস্কো অথবা তৈলচিত্র চতুর্দশ শতাব্দীতে বিউবনিক প্লেগের দ্বিতীয় অতিমারির সময়ে ইউরোপিয়ান কয়েকজন শিল্পী তখনকার সময়ের চিত্র তৈরি’র সময় তাদের কর্মে তুলে আনেন। বোকাচ্চিও এর ডেকামেরন (চতুর্দশ শতাব্দী), ফ্রান্সিস্কো’র ‘মাতৃস্নেহের রূপক কাহিনি’ (১৭৪৩-৪৪) অথবা মানজোনি’র ‘দি বেট্রোথেড (উন-বিংশ শতাব্দীর) তেল চিত্রগুলো এসব শিল্পকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
বিদেশী সাহিত্যে প্লেগ অথবা মহামারি এসেছে প্রত্যক্ষভাবেই। বাংলা সাহিত্যে কলেরা, ম্যালেরিয়া বা গুটিবসন্ত অর্থাৎ জনমানসে ওলাওঠা বলে পরিচিত রোগের অভিঘাত পড়েছিল ব্যাপক আকারে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এ নিয়ে বাংলা ভাষায় কোনো বড় উপন্যাস বা মহাকাব্য কখনো লেখা হয়নি। যেমনটি আমরা আমরা পাই আমেরিকায় রেড ডেথ মহামারিতে একটি জনপদ উজাড় হওয়ার পরে বেঁচে যাওয়া মানুষের জীবন-আখ্যান নিয়ে ১৯১২ সালে জ্যাক লন্ডন [১৮৭৬-১৯১৬] রচিত ‘দ্য স্কার্লেট প্লেগ’ উপন্যাসে। যেমন করে কালজয়ী হয়েছে ১৯৪৫ সালে আলবেয়ার ক্যাম্যু [১৯১৩-১৯৬০] রচিত ‘দ্য প্লেগ’। মহামারিকালে কোয়ারেন্টিনে অবরুদ্ধ ফরাসি-আলজেরিয় ওরান শহরের চার দেয়ালের ভেতর ঘটা আখ্যানভিত্তিক উপন্যাস ‘দ্য প্লেগ’। আলজেরিয়ার ওরান শহরে ইঁদুরের উপদ্রব হতে ছড়িয়ে পড়া প্লেগ মহামারিতে মৃত্যুর মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়ে সূচিত ‘দ্য প্লেগ’ আজও বিশ^সাহিত্যে কিংবদন্তি হয়ে আছে। অপরদিকে, ১৯৬৭ সালে নোবেলজয়ী স্পানিশ সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ রচিত ‘লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা’ উপন্যাসেও কলেরা মহামারির চিত্র বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে নোবলজয়ী পর্তুগিজ সাহিত্যিক হোসে সারামাগো (১৯২২-২০১০) রচিত ‘ব্লাইন্ডনেস ’ উপন্যাসটিও মহামারী কালের চরিত্র বোঝার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বসাহিত্যে সাড়া জাগানো কল্পবৈজ্ঞানিক উপন্যাস ‘ফ্রাঙ্কেনস্টেইন’ এর লেখিকা মেমরি শেলি ‘দ্য লাস্টম্যান’ উপন্যাস রচনা করে মহামারি নিয়ে ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম দিয়েছেন।
আমাদের দেশের ইতিহাসেও মহামারি নতুন কিছু নয়। তবে অতীতে তার পরিচয় ছিল ‘মড়ক’ হিসেবে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক বাঙালির নিত্য সহচর। আর এগুলোর অনিবার্য সঙ্গী হয়ে এসেছে দুর্ভিক্ষ-মন্বন্তর, মড়ক-মহামারি। বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশের মানুষ আবহমান কাল ধরে এইসব মড়ক-মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক, দুর্ভিক্ষ-মন্বন্তর ইত্যাদির সাথে লড়াই-সংগ্রাম করে টিকে আছে। তাই স্বভাবতই বাংলা সাহিত্যেও এসবের প্রভাব ও প্রতিফলন ঘটেছে সেই আদিকাল থেকে।
প্রচলিত মৌখিক সাহিত্য তথা লোকসাহিত্যের বিভিন্ন শাখার পাশাপাশি লিখিত সাহিত্যের সকল শাখায় নানা প্রসঙ্গে-অনুষঙ্গে বর্ণিত হয়েছে মড়ক-মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদির কথা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি ও প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগে এবং আমাদের দেশে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অপ্রতুলতার কারণে অতীতে ম্যালেরি গ্রামকে নিয়ে অনেক অতিলৌকিক বা ভৌতিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে লোক মুখেমুখে।
বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদে সরাসরি মড়ক-মহামারির কথা উল্লেখ নেই। তবে বৌদ্ধ ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সাধন সঙ্গীত হিসেবে রচিত চর্যাপদে রূপকের আশ্রয়ে সমকালীন দরিদ্র বাঙালির নিত্যদিনের অভাব, ক্ষুধা, দুঃখ-দারিদ্র্য, রোগ-ব্যাধি-বেদনা-পীড়িত জীবনের করুণ চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দুর্যোগ-দুর্বিপাক, রোগ-ব্যাধি, মড়ক-মহামারির নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিভিন্ন লৌকিক দেব-দেবীকে কল্পনা করা হতো এবং এসব থেকে বাঁচার জন্য পূজা-অর্চনাসহ নানাভাবে তাদের পরিতুষ্টি বিধানের চেষ্টা করতো অজ্ঞ-অসহায় সাধারণ মানুষ। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের উন্মেষের আগে এই সব লৌকিক দেব-দেবীর কাল্টের উদ্ভবের সুবাদে তৈরি হয় দেবদেবী মহিমা-কীর্তনকারী কাহিনিকাব্য, পাঁচালি, ব্রতোপাখ্যান। এরই ধারাবাহিকতায় মধ্যযুগের লোকজ বাংলা কাব্যে বিকাশ লাভ করে মঙ্গলকাব্য নামে একটি বিশিষ্ট সাহিত্য ধারা। মঙ্গলকাব্যে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি, মড়ক-মহামারি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকের নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিভিন্ন লৌকিক দেব-দেবীর মাহাত্ম্যকথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, বসন্তের দেবী শীতলাকে নিয়ে শীতলামঙ্গল কাব্য এবং কলেরা বা ওলাউঠার নিয়ন্ত্রণকারী দেবী হিসেবে দেবী ওলাইচণ্ডীকে নিয়ে উলামঙ্গল বা চণ্ডীমঙ্গল কাব্য রচিত হয়েছে। এসব কাব্যে শীতলা দেবী বা দেবী ওলাইচণ্ডীর উপাসনার মধ্যদিয়ে সে সময়ে বসন্ত, কলেরার মড়ক-প্রতিরোধ কামনারই কথা বলা হয়েছে।
আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যে কাহিনির মূল উপজীব্য হিসেবে না হলেও নানা প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গে মড়ক-মহামাররি কথা বর্ণিত হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের অগ্রপথিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কালের সেলিনা হোসেনসহ শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যিকদের রচনায় বিশেষ করে কথা সাহিত্যে মড়ক-মহামারির বর্ণনা পাই নানা প্রসঙ্গে-অনুষঙ্গে। বঙ্কিম চন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসে ১৭৭৬-এর মন্বন্তর এবং মন্বন্তরের সঙ্গী হিসেবেই মারি বা মড়কের বিবরণ পাওয়া যায়। ১১৭৬ বঙ্গাব্দের মন্বন্তর কালে সমগ্র বাংলায় কলেরা-বসন্ত মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। রবীন্দ্রনাথের গোরা ও চতুরঙ্গ উপন্যাসে এবং বিভিন্ন ছোটগল্পে কলেরা, প্লেগ, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ও মহামারির উল্লেখ করা হয়েছে। মহামারির ছায়ার ভেতরেই রচিত হয়েছিল গোরা বা চতুরঙ্গের মত উপন্যাস ও গল্পগুচ্ছের গল্পগুলো। মহামারির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অনুভূত হয় রবীন্দ্রনাথের ‘আত্মশক্তির’ প্রবন্ধমালায়। রবীন্দ্রনাথ ‘ওলাওঠার বিস্তার’ নামে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধও লিখেছিলেন এবং তার ‘স্বদেশী সমাজ’ পর্বের বিভিন্ন প্রবন্ধে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি চেয়ে আলোচনা করেছেন নানা প্রসঙ্গ ক্রমে।
অপরাজেয় কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিভিন্ন উপন্যাসে মড়ক-মহামারির কথা বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই শ্রীকান্ত উপন্যাসের কথা বলা যেতে পারে। পুরো উপন্যাস জুড়েই মহামারি, মারি বা জনস্বাস্থ্য নিয়ে দুর্বিপাকের কথা ছড়িয়ে আছে। শ্রীকান্ত উপন্যাসে আমরা চার চারটি মারণ-ব্যাধির উল্লেখ পাইÑ কলেরা, প্লেগ, বসন্ত ও ম্যালেরিয়া। তাঁর, ‘পণ্ডিতমশাই’, ‘পল্লীসমাজ’, উপন্যাসেও মহামারির প্রসঙ্গ এসেছে। শরৎচন্দ্রের বিভিন্ন গল্পেও মড়ক-মহামারি প্রসঙ্গ এসেছে।
জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে মহামারির বর্ণনা এসেছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ধাত্রীদেবতা’ এবং ‘গণদেবতা’ উপন্যসে কলেরা মহামারির প্রসঙ্গ পাই। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাসের গাওদিয়া গ্রামে প্রায়ই মহামারি রূপে ছড়িয়ে পড়ত কলেরা, টাইফয়েড, কালাজ্বর ও বসন্তের মতো রোগগুলো। বেগম রোকেয়ার রচনাতেও প্লেগ ও মহামারির কথা পাই। ‘সুলতানার স্বপ্ন’-তে বেগম রোকেয়া যে ইউটোপিয়ার দেশ নির্মাণ করেছেন তাতে মহামারির আসল কারণ বর্ণিত হয়েছে।
জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসে কলেরার মড়ক এবং এ নিয়ে গ্রামবাংলার অজ্ঞ-কুসংস্কারাচ্ছন্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে আবহমান কাল ধরে প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাস ও সংস্কারের ইতিকথা বর্ণিত হয়েছে। শহীদুল্লা কায়সারের ‘সংশপ্তক’ উপন্যাসে বসন্ত রোগের প্রকোপের সময় মানুষের এ পলাতক মনোভাব ফুটে উঠেছে, ‘কবর আর কবর’ উচ্চারণে। আহমদ ছফার ‘সূর্য তুমি সাথী’ উপন্যাসে কলেরা থেকে পলায়নপর মানুষের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে, “কলেরার সময় গাঁ ছেড়ে পালাচ্ছে ডরে মানুষ। এক বাড়িতে কারো কলেরা লাগলে পাশের বাড়ীর মানুষ উধাও”। হাসান আজিজুল হক ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসে মেতর বউ-এর জবানীতে লিখেছেন, ‘এত রোগের নামও ত্যাকন জানত না লোকে। ডাক্তারবদ্যিও ছিল না তেমন। মরবার আগে মুখে যেদি ওষুধ পড়ত, তাই কত! পেরায় পিতি বছর কলেরা-বসন্তেই কত যি লোক মরত, তার সীমাসংখ্যা নাই।’ সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে ‘বুধা’ তার পরিবারের চারজনকে হারিয়েছে। বুধার মানসিক বিপর্যস্ততার ইঙ্গিত লেখিকার কলমে ধরা দিয়েছে, ‘চোখের সামনে মা-বাবা, চার ভাই-বোনকে মরে যেতে দেখলে কেউ কি নরম থাকতে পারে?’ হয়তো পারে না। তাই পৃথিবীব্যাপী আজ কান্নার রোল। কলেরা মহামারি কীভাবে মৃত্যুর পর মৃত্যু উপহার দিয়েছে সেলিনা হোসেন তারও উল্লেখ করেছেন। ‘সেবার কলেরায় মহামারিতে উজাড় হয়ে যায় গাঁয়ের অর্ধেক লোক।’
বাংলা ছোটগল্পেও মড়ক-মহামারির প্রসঙ্গ এসছে নানা প্রেক্ষিতে। মুজতবা আলী ‘পাদটীকা’ গল্পের শুরুতেই মড়কের প্রসঙ্গ এসেছে এভাবে– “গত শতকের শেষ আর এই শতকের গোড়ার দিকে আমাদের দেশের টোলগুলো মড়ক লেগে প্রায় সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যায়।”
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প ‘পুষ্করা’-তেও বাংলার মন্বন্তর পরবর্তী মড়ক থেকে উদ্ধার পাবার চিত্র প্রতিফলিত। জগদীশ গুপ্ত’র ‘পয়োমুখম’ গল্পে ভূতনাথ নিজের স্ত্রীদের হত্যার পিছনে তার অর্থলিপ্সু কবিরাজ বাবার দুষ্কর্ম ধরে ফেলে শেষ পর্যন্ত। শেষতম বউ বেঁচে যায়। ভূতনাথ বলে, “এ বৌটার পরমায়ু আছে তাই কলেরায় মরল না, বাবা! পারেন তো নিজেই খেয়ে ফেলুন।” মানুষের এক অন্ধকার অধ্যায় বেরিয়ে পড়ে। শিবরাম চক্রবর্তীর ‘দেবতার জন্ম’ গল্পের কথক যে-পাথরে হোঁচট খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে উঠেছিল বসন্ত রোগ থেকে বাঁচতে সেই পাথরেই মাথা নোয়ায়। সুকুমার রায়ও তাঁর ‘নানাগল্পে’-র ‘পেটুক’-এ লিখেছেন, “চারদিকে যে রকম প্লেগ আর ব্যারাম এই পাড়াসুদ্ধ ইঁদুর না মারলে আর রক্ষা নেই।”
বাংলা কবিতাতেও বাদ যায়নি মড়ক-মহামারি প্রসঙ্গ। উনিশ শতকের ঢাকার এক ‘বটতলার কবি’ কুশাই সরকার লোকমুখে প্রচলিত বুলিতে ওলাওঠার মহামারি নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তো বহু আগেই তাঁর ‘বোধন’ কবিতায় বলে গেছেনÑ ‘মারী ও মড়ক মন্বন্তর, ঘন ঘন বন্যার/ আঘাতে আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন/ ভাঙা নৌকার পাল/ এখানে দারুণ দুঃখে কেটেছে সর্বনাশের কাল’। কবি জীবনান্দ দাশের আট বছর আগে একদিন কবিতায়, “এই ঘুম চেয়েছিল বুঝি!/ রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি” Ñউপমায় প্লেগের জীবাণুবাহী হিসেবে বর্র্ণিত। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ‘আসামনী’ কবিতায় পাই- ‘ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে।’
অদৃশ্য ঘাতক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর থাবায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে দেশ ও বিশ্ব। এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিণতি ভাবনায় সমাজের আর দশজনের মত আমাদের শিল্পী, কবি-সাহিত্যকরাও উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠিত। কবি-সাহিত্যিকরা করোনাকে ঘিরে তাদের অনুভব-অভিব্যক্তিকে তুলে ধরে রচনা করছেন ছড়া, কবিতা, গল্প। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে এগুলো প্রকাশিতও হচ্ছে। করোনা কালে রচিত কবিতা নিয়ে ইতোমধ্যে সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে। কারও কারও কবিতার আবৃত্তিও স্থান পেয়েছে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে।
শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন এর এই সংখ্যায় অল্পসংখ্যক করোনা কালের কবিতা ও গদ্য ছাপা হয়েছে। মনে হয়, করোনা কাল দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে আর অনুপ্রাণন এর পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে আরো অনেক করোনাকালের কবিতা, ছোট গল্প, অণুগল্প, নাটক, চিত্র-চলচ্চিত্র আলোচনা, প্রবন্ধ ও গদ্য প্রকাশিত হবে, প্রত্যাশা রাখি।
নবম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা
রোবট শিশুর পিতা-মাতা
লেখকের কথা
জাপানের প্রাতঃস্মরণীয় মনীষী শিল্পাচার্য ওকাকুরা (কাকুজোও) তেনশিন বলেছিলেন, জাপান এশিয়ার জাদুঘর। আমি বলি, জাপান একটি বৈশ্বিক দর্পণ। বিশ্বের চতুর্দিক তথা চারটি মহাদেশের ছবি এই দর্পণে প্রতিফলিত হয়ে আসছে হাজার বছর ধরে। বিশ্বের প্রায় সব সংস্কৃতিরই ধারা এসে মিলিত হয়েছে জাপানের মূলধারার সঙ্গে। বিশেষ করে ধর্ম ও সংস্কৃতির অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে এই দেশের জনধারায়। সন্দেহ নেই যে, চীন ও ভারতের প্রভাব অত্যন্ত গভীর। মধ্য যুগ পর্যন্ত ক্রমাগত জাপান প্রভাবিত হয়েছে প্রাচীন চীন ও ভারতের ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, পুরাণদ্বারা। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী, গোত্রের মানুষ প্রাচীনকালেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপবর্তী জাপানের ভূখণ্ডে এসে স্থানীয়দের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে। যে কারণে জাপানিরা সংকর জাতির লোক। আর এর ফলেই জাপান হয়ে উঠেছে সংস্কৃতির মনোরম বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি দেশ। যার তুলনা খুঁজে পাওয়া যায় না। যে সংস্কৃতির টানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঁচবার ভ্রমণ করেছেন জাপান। প্রতিবারই তিনি জাপানকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন।
জাপানে যারা আসেন প্রথমে তাদের কাছে সবকিছুই অদ্ভুত প্রতিভাত হয়। কেননা জাপানিদের জীবনধারাটাই স্বাতন্ত্রিক। কিন্তু দীর্ঘদিন এ দেশে বসবাস করলে পরে তাদের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, তারা সঠিক দেশেই এসে পড়েছেন! এখানে জীবনযাপন যেমন খুব বাস্তব ও কঠিন তেমনি স্বপ্নের বাস্তবায়ন বা ইচ্ছেপূরণের সমূহ সম্ভাবনাও বিদ্যমান। বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা। কাজের দেশ জাপান, ইচ্ছে করলে কাজ জোগাড় করা কঠিন কিছু নয়। আর রয়েছে উচ্চশিক্ষার বিস্তর সুযোগ। তবে, অবশ্যই জাপানিদের নিয়মনীতি মেনে চলা প্রথম ও শেষ শর্ত। কেননা, যতোই তারা বহির্বিশ্বের প্রভাব গ্রহণ করে একটি সর্বজনীন সংস্কৃতি ও বাতাবরণ নির্মাণ করে থাকুন না কেন, জাপানিরা কিন্তু মনেপ্রাণে ও আদর্শে জাপানিই। “জাপানিজম” বা “জাপানিত্ব” তাদের মধ্যে সর্বক্ষণ সর্বক্ষেত্রে জাগরুক। শান্তি ও বিশ্বাস এই দেশের মূল ভিত্তি। বিশ্বাস হারালে জাপানে আর বসবাস সম্ভবপর নয়, শান্তি বিঘিœত হওয়ার মতো কাজ জাপানিরা প্রশ্রয় দেন না। আস্থা, বিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম, মহাধৈর্যগুণ, অনুচ্চকণ্ঠ, সময়ানুগ, প্রতিবেশী-সম্প্রীতি, সহমর্মিতা, সমবায়মনস্কতা, অনুসন্ধিৎসা জাপানিদের চারিত্রিক পরিচয়। আর এইসব গুণাগুণ জাপানি সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা ও কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিহিত আছে।
জাপান প্রবাসের চার দশক হতে চললো। এই দীর্ঘ সময়ে জাপানকে দেখা, জানা ও পড়ার মধ্য দিয়ে যে ধারণা ও অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে তারই প্রতিফলন রয়েছে এই গ্রন্থের ২৫টি ছোটবড় প্রবন্ধের পরতে পরতে। প্রবন্ধগুলো ২০১৫ থেকে ২০০২১ পর্যন্ত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার উপসম্পাদকীয়, সাহিত্য সাময়িকী, সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন এবং সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। সংকলনভুক্ত করার তাগিদে নতুন করে তথ্য-উপাত্ত সংশোধিত ও সংযোজিত করার প্রয়াস নিয়েছি। আশা করি পাঠক বহুকিছু জানতে পারবেন এই প্রবন্ধগুলো থেকে যা বাঙালির ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবনকে উন্নত করার জন্য শিক্ষণীয় বলে বিশ্বাস করি। সেইসঙ্গে জানা যাবে বাংলাদেশ ও জাপান সম্পর্কবিষয়ক তথ্যসমূহ যা দুর্লভ বলেই বিবেচিত।
উদীয়মান “অনুপ্রাণন প্রকাশন” কর্তৃপক্ষ এর আগে “জানা অজানা জাপান” ৩য় খণ্ড প্রকাশ করে আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। এবারও ৪র্থ খণ্ড প্রকাশ করে আমাকে চিরঋণী করছেন। এজন্য জানাই আনত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। যেহেতু প্রবন্ধগুলো গবেষণামূলক, তাই ভুলভ্রান্তি যেমন থাকবে, তেমনি লেখকের মতামতের সঙ্গে পাঠকের মতভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। তার জন্য সকল দায়দায়িত্ব লেখকেরই, প্রকাশকের নয়।
Jana Ajana Japan Part-4 By Probir Bikash Sarkar
সচৈতন্যের শূন্যবাদ অস্তিত্বাশ্রয়ী যে ভাবনা রয়েছে গহনে প্রবিষ্ট তাকে উজ্জ্বল চেতনার রূপ দেবো ভাষার হাত ধরে— সর্বতোমান্য আবেগে কাব্যকে লক্ষ্যভেদী করার সে সাধনা আমার অর্জিত হয়নি। ভাবনাকে আবেগতাড়িত ও আবেগকে ভাবনাতাড়িত করার ধীমতি উপপাদ্য সুদূরের কুয়াশায় ধূসরিত হৃদয়ের মন্থনদণ্ড উজ্জ্বলতা হারায় মানসিক পরিশ্রমে। সুশিক্ষিত কাব্যকে ঘিরে জ্বালাতে চাই তবু বিদগ্ধ দীপাবলী। সকল ব্যথিত বাঁধনের যে মহাছন্দ অসীম শূন্যের অলঙ্ঘ্য নিয়মপথে তরঙ্গিত হয়, সে উন্মত্ত রাগিনী নিয়ত ছুটে চলছে যে অমোঘ আলোর পথে, সে পথে তপতীর ছায়ার মত থেকে যেতে চাই কবিতার বুকে নিভৃতনিলয় সুখে। আমার চিন্ময় প্রকৃতির গভীরে অনুরণিত হয় যে কম্পিত সুর, সে সুরের বন্ধনহীন বারতা সুহৃদের সাথে ভাগ করে নিতে চাই “যে সুর বাজে গহীনপুরে” কবিতাগ্রন্থের মধ্য দিয়ে।
অবিরাম এই যে ছুটে চলি মাঠে-পথে, হাওয়ায়-শূন্যে, জলে-ডাঙায়, উপরে-নিচে, আকাশে-দিগন্তে—এই পরিক্রমায় সারা পথজুড়ে আমাকে যারা জড়িয়ে আছে অনুভাবুক হয়ে—রতন কুমার ঢালী- আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন, চন্দ্রাত্মজ ঢালী—যার গভীরে আমি ডুবে যেতে চাই, রিখিয়া ঢালী—যার ভালবাসা আমার জীবনকে অর্থবহ করেছে, সন্তোষ কুমার শীল—যে আমাকে কাব্য জগতে আহ্বান জানিয়েছে, এছাড়া ড. অশোক মিস্ত্রী, নির্জন মজুমদারসহ আমার সকল প্রিয়জন যারা আমাকে কাছে বা দূরে থেকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন—তাদের সকলের প্রতি রইল আমার গভীর কৃতজ্ঞতা।
যে সুর বাজে গহীনপুরে
মৃত্যু সংবাদ এমনই একটা বিষয় মুহূর্তে পৃথিবীর গতি স্তব্ধ করে দেয়। পরিচিত বা কাছের জনের মৃত্যু হলে তা আরও ভারী বোধহয়। মনে হয় যেন নিজেরই একটা অংশ মরে গেছে। এত সুন্দর মায়াময় প্রভাতটা নিমেষের মধ্যে অর্থহীন, শ্রীহীন হয়ে যায়।
একটি স্বেচ্ছামৃত্যু ও কিছু রসিকতা
সম্পাদকীয়-
মহান একুশে- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও এক দুঃখিনী বর্ণমালার ইতিহাস
বাংলা ভাষা ও বাংলা বর্ণমালার উদ্ভব ও বিবর্তনের একটি স্বতন্ত্র ও মৌলিক ইতিহাস রয়েছে। আমরা জানি যে, প্রাচীন কাল থেকে পাঁচটি স্তর পার হয়ে আধুনিক বর্ণমালা এসেছে। প্রাচীনকালে কোনো বর্ণমালা ছিলো না। গাছপালা-মানুষ-প্রাণী’র ছবি এঁকে মনের ভাব প্রকাশ করা হতো। এটা হচ্ছে বর্ণমালার প্রথম স্তর- “গ্রন্থিলিপি”। আনুমানিক দশ-বারো হাজার বছর আগে মানুষ গ্রন্থিলিপি দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করতো। এরপর এলো “ভাবলিপি”- সম্পূর্ণ ছবি না এঁকে সংকেত বা চিহ্ন বা প্রতীকের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করার মাধ্যম। ভাবলিপি ছিলো অনেকটা এমন- দিন বোঝাতে পূর্ণ বৃত্ত, অর্থাৎ সূর্য আঁকা হতো, আর রাত বোঝাতে অর্ধ বৃত্তের সাথে তারকা আঁকা হতো। এরপর এলো তৃতীয় স্তর- “শব্দলিপি”, এই স্তরে ব্যাপক হারে ছবির বদলে চিহ্নের ব্যবহার হতে লাগলো। শব্দলিপি আরো সংক্ষিপ্ত হয়ে এলো চতুর্থ স্তর- “অক্ষরলিপি”। অক্ষরলিপি আরো সংক্ষিপ্ত হয়ে পঞ্চম স্তর হিসেবে এলো “ধ্বনিলিপি”। এই ধ্বনিলিপি থেকেই আধুনিক বর্ণমালার উৎপত্তি। সেই সময় বিভিন্ন বর্ণে বা রঙে বিভিন্ন অক্ষর লিখা হতো, সেখান থেকেই অক্ষরের নাম হয়েছে বর্ণ, বর্ণমালা।
আমাদের বাঙলা বর্ণমালা এসেছে প্রাচীন ভারতীয় “ব্রাহ্মীলিপি” থেকে। পৌরাণিক উপ-কথামতে হিন্দু দেবতা ব্রহ্মা ভারতবর্ষের প্রাচীন লিপি আবিষ্কার করেছিলেন এবং ধ্বনির সাথে মানুষকে এই লিপি দান করেছিলেন, তার নামানুসারে ঐ লিপির নাম হয় ব্রাহ্মীলিপি। কেউ কেউ বলেন, বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণরা ছিলেন শ্রেষ্ঠ পুরোহিত। ব্রাহ্মণদের দ্বারা এই লিপি আবিষ্কৃত হয়েছিল বলেই এর নাম ব্রাহ্মীলিপি। যে যাই বলুক, ভারতবাসী নিজেরাই সৃষ্টি করেছিলেন ব্রাহ্মীলিপি। ব্রাহ্মীলিপির পেছনে ফিনিশীয় লিপির প্রভাব আছে বলে দাবী করা হয়। তবে প্রাচীন ভারতীয়রা সম্ভবত স্বাধীনভাবেই নিজেদের লিপি উদ্ভাবন করেছিল- কারণ ফিনিশীয় লিপির চেয়ে ব্রাহ্মীলিপির পার্থক্য অনেক। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে ৩৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে ব্রাহ্মীলিপি প্রচলিত ছিল। এরপর “অশোক লিপি” বা “মৌর্য লিপি”তে এর বিবর্তন শুরু হয়। এর পরের ধাপে আসে “কুষাণ লিপি”, এগুলি কুষাণ রাজাদের আমলে প্রচলিত ছিল। এরপর ব্রাহ্মীলিপিটি উত্তরী ও দক্ষিণী- এই দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। উত্তরী লিপিগুলির মধ্যে পূর্বদেশীয় গুপ্তলিপি প্রধান, এটি ৪র্থ ও ৫ম শতাব্দীতে প্রচলিত ছিল। গুপ্তলিপি থেকে আবির্ভাব হয় “কুটিল লিপির”, এটি ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শতক পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। কুটিল লিপি থেকে উদ্ভব হয় নাগরী লিপির। প্রাচীন নাগরী লিপির পূর্ব শাখা থেকে ১০ম শতকের শেষভাগে এসে উৎপত্তি হয়েছে বাঙলা লিপির। অর্থাৎ ব্রাহ্মীলিপি > অশোক লিপি বা মৌর্য লিপি > কুষাণ লিপি > উত্তরী গুপ্তলিপি (পূর্বদেশীয়) > কুটিল লিপি > নাগরী লিপি > বাঙলা লিপি।
ব্রাহ্মীলিপি থেকে সৃষ্ট বাঙলা বর্ণমালা দেখতে কিন্তু এখনকার বর্ণমালার মতো ছিলো না, সময়ের পরিবর্তনে বর্ণ’র চেহারারও পরিবর্তন হয়েছে। তখন যেহেতু ছাপাখানা ছিলো না, শুদ্ধতা বজায় থাকবে কী করে? তখন মানুষ হাতে কাব্য লিখতো, পুঁথি লিখতো। একেকজনের হাতের লেখা একেকরকম, দশজন দশরকম করে “ক” “খ” লিখেছে। এভাবেই পরিবর্তিত হতে হতে পাল্টে গেছে বাঙলা বর্ণমালা। কম্বোজের রাজা নয়পালদেবের ইর্দার দানপত্রে এবং প্রথম মহীপালের বাণগড়ের দানপত্রে সর্বপ্রথম আদি বাংলা বর্ণমালা দেখতে পাওয়া যায়। ব্রাহ্মীলিপি’র প্রথম পাঠোদ্ধার করেন প্রাচ্যবিদ্যা-বিশারদ প্রিন্সসেপ। আমাদের দেশের সিলেটের উপভাষারও কিছু বর্ণমালা ছিলো, আধুনিক বাঙলা বর্ণমালা থেকে একটু আলাদা, প্রায় অবিকৃত ‘নাগরী লিপি’র মতো।
এখন পর্যন্ত তিন ধরনের ব্রাহ্মীলিপির নমুনা আবিষ্কৃত হয়েছে, যাতে ৪৪টি বর্ণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে স্বরবর্ণ ৯টি, ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৫টি। বাঙলা বর্ণমালার “ঔ” ও “ঋ” ব্রাহ্মীলিপির স্বরবর্ণে না পাওয়া গেলেও ব্যঞ্জনবর্ণে এ দুটি বর্ণের নমুনা পাওয়া গেছে। আমরা এখন যে কয়টি স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণ দেখি, আগে এর চেয়ে কয়েকটি বেশি ছিলো। এই তো কিছুদিন আগেও স্বরবর্ণতে ৯ ছিলো, এখন আর ৯-এর অস্তিত্ব নেই। এর সাথে ছিলো ঋৃ। ব্যঞ্জনবর্ণতে ছিলো ল (মূর্ধন্য ল), ছিলো হ্ল (মহাপ্রাণ ল), ছিলো ব (অন্তঃস্থ ব)। যুগে যুগে বাঙলা বর্ণমালার আকার-আকৃতি বদলাতে বদলাতে মুদ্রণযন্ত্রের ঢালাই ধাতুতে তৈরি বর্ণের কল্যাণে ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা বর্ণমালার স্বরূপ মোটামুটি স্থির রূপ পায়।
বাংলা বর্ণমালা একসময় ব্রাহ্মীলিপি থেকে উদ্ভূত হলেও মধ্যযুগে এসে বাংলা বর্ণমালা বাংলার স্বাধীন শাসন ব্যবস্থার মতোই স্বতন্ত্র পথ ধরে বিবর্তিত হয়ে নিজস্ব একটি মৌলিক রূপ পরিগ্রহ করে। বাংলা বর্ণমালার এসব বিবর্তনের ইতিহাসের মধ্যেও বাংলার স্বাধীন পরিচয় নির্মাণ ও পরিগ্রহণের আকাক্সক্ষা সম্পৃক্ত রয়েছে।
অথচ ১৯৪৭-এর পর পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের অপরাপর প্রাদেশিক জনগোষ্ঠী অর্থাৎ সিন্ধি, বেলুচি, পাঞ্জাবি ও পশতু ভাষার বর্ণলিপির মতোই বাংলা বর্ণমালা পরিবর্তন করে ফারসি-আরবি অথবা ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে লেখার পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। বাংলা ভাষা ও বাংলা বর্ণমালা তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর ভাষা ও ভাষায় ব্যবহৃত বর্ণমালা হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলমান অভিজাত শ্রেণির ভাষা ও বর্ণমালা অর্থাৎ উর্দুকেই এবং ফারসি-আরবি লিপিকেই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ও বর্ণমালা হিসেবে চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। পাকিস্তানের সিন্ধ, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান ও উঃ পঃ সীমান্ত প্রদেশে এখনও শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাদেশিক ভাষা স্থান করে নিতে পারেনি। পাকিস্তানের এরকম অসভ্য, আধিপত্যবাদী, অমানবিক এবং অন্যায় পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বাঙলায় গর্জে ওঠে প্রতিবাদ কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে বাঙালির এই দাবি এবং প্রতিবাদের যুক্তি অনুধাবন করার চেষ্টা গ্রহণ না করে তৎকালীন পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বুলেটের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার পথ গ্রহণ করে। বুকের রক্ত দিয়ে সেদিন বাঙালি তাদের মাতৃভাষা ও বর্ণমালার অধিকার আদায় করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং এই বাঙলায় বাঙলা ভাষা ও বর্ণমালা ব্যবহারের দাবি মেনে নিতে পাকিস্তানি শাসকদের বাধ্য করেছিল। এটাই ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস।
সভ্যতা, মানবতা ও ন্যায়ের পক্ষে ১৯৫২ সনে বাঙালির এই ভাষা সংগ্রাম প্রতিষ্ঠিত মানবিকতার ন্যায্য যুক্তির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে পরিচালিত ছিল বলেই এই আন্দোলন সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে আজ পৃথিবীতে প্রত্যেক মাতৃভাষার মর্যাদাবোধ জাগ্রত হয়েছে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালনের জন্য জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ করেছে।
সপ্তম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা
কবি কবির মুকুল প্রদীপ, এক তরুণ কবির নাম
কবির মুকুল প্রদীপে’র প্রথম কাব্য প্রকাশকালে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, তাঁকে পাঠকবৃন্দের কাছে আমার পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উপলক্ষ্য কতকটা অতিরিক্ত প্রয়াস, কারণ কবি কবির মুকুল প্রদীপ তার নিজগুণে ও ধ্যানে ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে নিজেকে গ্রহণীয় করে তুলতে পেরেছেন এবং নতুন এক রুচিধারা প্রবতর্নের চেষ্টায় যুক্ত রয়েছেন। আমি ফ্লাপে যে মন্তব্য লিখছি তা একজন অগ্রজের মুগ্ধতারই অভিব্যক্তি এবং সংশামুখরতা। তার কবিতা সমাজলগ্ন এবং সুস্থ সমাজচেতনা গড়ায় প্রত্যয়ী। আর তাই তিনি অনায়াশে বলেন ‘স্বৈরাচারী চেয়ার নিয়ে আবারও কয়েকযুগ নিশ্চিন্ত হয়।’ এই নিশ্চিন্ত হওয়ার পেছনের কারিগর হচ্ছে অশ্লীল রাজনীতি, যা জনগণকে ক্রমাগত চেতনাহীন নির্জীব প্রাণীকুলে পরিণত করে রেখেছে। আর তারা দেখে সমুদ্রের জলে পা দিয়ে হেঁটে যাওয়া, সমুদ্রে মিলিয়ে যাওয়া, দেখে সামান্য বিষয় নিয়ে মানুষগুলোর ‘অমানুষ’ আচরণে ডুবে যাওয়া এবং এসব ঘটে বাস্তবজীবনের অঙ্কগুলো সঠিক চেতনায় জারিত করে উপলব্ধি হীনতার কারণে।
কবির মুকুল প্রদীপ প্রথাকে ভাঙতে চান নতুন সমৃদ্ধি আনার জন্য, এবং পুরানো প্রথাবদ্ধতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নির্মাণচেষ্ট কবিতার নতুন শরীর। কিন্তু প্রথাকে তিনি উপলব্ধি না করে ছুঁড়ে দিতে চান না। তার ক্রিয়া নতুন প্রথা নির্মাণের মধ্যদিয়ে কবিতাকে নতুন সময়ের উপযোগী করা। যাতে পরিবর্তিত সময়ের অভ্যেস রুচি ও চেতনা কাঠামোর নবরূপায়ন সম্ভব হয়। কবির মুকুল প্রদীপ বলেন ‘মৃত্যু-মুহূর্ত পর্যন্ত যে ঘুণে খাওয়া চৌকিটিতে বাবা শুয়ে থাকতেন/আজ ভাঙতে গিয়ে—-পায়া-তক্তার মতো দেখি/ আমিও ঝুরঝুর করে খুলেÑ বর্জের স্তুপে পরিণত হয়ে যাচ্ছি’ মুকুল এ ভাবেই পুরানোকে ভাঙতে গিয়ে তার প্রতি যে মোহ তাকে উসকে দিয়ে নিজ কর্তব্যকে নির্ধারণ করেন ভাঙার প্রত্যয়ে। তিনি নানাভাবে কবিতায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবার একটা মানসিকতা নিজের মধ্যে গড়ে তুলছেন যা আমরা গত কতকটা সময় ধরে দেখছি। তিনি লিখছেন ভাষার নতুন অর্থযোজনার প্রয়াস নিয়ে।
যেমন তিনি বলেন ‘কোথা থেকে এক বিমূর্ত করুণ সুর ভেসে আসেÑ মনে হয়/ইটের নিচে চাপা পড়ে গোঙ্াচ্ছে বাদামি ঘাস/সর্বভূক কংক্রিট-ড্রাগন আর ধর্মের শৃগাল গিলে খাচ্ছে বনবাঁদাড়, খাল-বিল-মেধা’ তখন তো স্পষ্টই হয় কবি তার বিষয়কে কীভাবে নির্বাচিত করেন, কেন নির্বাচন করেন, কেন তিনি তাঁর আঁকুতিকে নিছক কল্পনা বিলাসে ভাসিয়ে না দিয়ে গড়ে নিচ্ছেন চেতনার শব্দবলীর মেলবন্ধন; আর শিল্পীর সামাজিক দায়িত্বকে কীভাবে কাঁধে নিয়ে হাঁটতে সক্রিয় হয়েছেন বর্তমানের কবিতায়।
মুকুলের এটা প্রস্তুতি পর্ব, তার উত্থান পর্বে আমরা আরো সংহত শক্তপোক্ত কবিতা পাবো, পাবো নতুন ভাষা নির্মাণের পঙক্তিমালা, যা দৃশ্যমান অর্থ থেকে নানা অর্থকে দ্যোতিত করবে, কাব্যসুন্দরকে প্রজ্ঞাপূর্ণ করবে। আমি খুবই আশাবাদী এই তরুণ কবির কাব্যক্ষমতার বর্তমান প্রকাশে। তার জয় হোক।
-মতিন বৈরাগী
অলীক জোছনা
‘গোপনে যে আগুনে পুড়ি
সেখানে ক্যাথেড্রাল তুমি’
অথবা
‘তিন জোড়া ক্লান্ত পা, নিয়েছে বিশ্রাম।
তবু উলটে থাকে চোরা সেলাই
খুলে দেয় নগর বন্দর গ্রাম।’
প্রিয় অমলতাস, কবি মুর্শিদা জামানের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। অমলতাস, সোনালু ফুলের সংস্কৃত নাম, ইংরেজিতে যা গোল্ডেন শাওয়ার। নামের সাথে সাথে কবিতাগুলোও নানা বৈচিত্রবার্তা ও মন-মিশ্রণের সংযোগ ঘটিয়েছে। ভাবনার জগতকে ভিন্নমাত্রার ভাব যোগান দিয়ে, নতুন ভঙ্গিতে পরিচিত করে তুলেছে চিরন্তন চেনা দৃশ্য। তাই, কবিতাগুলো পড়তে গেলে নতুন পোশাকের ভাঁজ-ভাঙা শব্দ শুনতে পাই। যে-শব্দ অনেক পরিচিত হয়েও পরিচিত নয়। নিরুত্তাপ উত্তাপের ডানা মেলার গন্ধ, ভালোবাসার পরিধিতে হৃদযোগের তপ্ত-যাত্রা, সব মিলিয়ে নাগরিক ঊর্ধ্বশ্বাসের অবিমিশ্র ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পেলাম মুর্শিদা জামানের ‘প্রিয় অমলতাস’-এর কবিতায়।
আশা করি নতুন হাতে, নতুন করে কবিতার স্বাদ, পাঠককে মশগুল করবে নিঃসন্দেহে। বইটির সাফল্য ও পাঠক প্রিয়তা কামনা করছি।
ফেরদৌস নাহার
(কবি ও প্রাবন্ধিক)
Priyo Amoltas by Murshida Zaman
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ২০২৩ এর জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। বিবিসি’র খবর, ২০০৯ থেকে গত ১৩ বছরে খেলাপি বেড়েছে ৬ গুণ।
খেলাপি কমানোর দায়িত্ব ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের নিতে হবে- এ বক্তব্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স-বাংলাদেশ (এবিবি) বলেছে- খেলাপি নিয়ন্ত্রণ একাকী সম্ভব নয়। তবে এবিবি’র সুপারিশ মত ব্যবস্থা নিলে নাকি ২ বছরে খেলাপি শূন্যে নামিয়ে আনা যাবে।
খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বিল পাস। খেলাপিদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, পিপলস ব্যাংক চেয়ারম্যান আটক। বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি: ৫৮ মামলার আসামি চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুদকের চিঠি।
২০২৩ এর ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭,৮৬,০৬৫ জন। অর্থমন্ত্রী ২০২০ সালে সংসদে ৮,২৩৮ প্রতিষ্ঠানের খেলাপির তালিকা দেন। এই সংখ্যাগুলো বাড়ে বেশি, কমে খুবই সামান্য।
২০১৯ এর জুন পর্যন্ত খেলাপির অর্থে কী কী হতো? সিপিডি’র সমীক্ষায় এর জবাব পাওয়া গেছে। ১ লাখ ১২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকায় পদ্মা সেতু সড়কে ব্যয়ের অঙ্কের সমান ৩টি সড়ক সেতু অথবা পদ্মা সেতু রেল লিংকের সমান আরও ৩টি রেল সেতু বা মাতারবাড়ীর মতো ৩টি বিদ্যুৎ প্রকল্প অথবা ঢাকা মেট্রোরেলের মতো ৫টি প্রকল্প বা দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং ঘুমধুমের মতো ৬টি রেলপথ কিংবা রামপালের মতো ৭টি বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা যেতো।
তাই প্রশ্ন উঠছে, জনগণ ও রাষ্ট্রের এই বিপুল পরিমাণ খেলাপির টাকা বছরের পর বছর কেন অনাদায়ী পড়ে থাকবে?
বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল কান্ডারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ। এর দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতা ও আলোর দিশারী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ অনেক দৃশ্যমান সাফল্যলাভ হয়েছে। মানুষের বিশ্বাস, দেশপ্রেমিক এই জাতীয় নেতার নির্মোহ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই লাখ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণও পুনরুদ্ধার হবে। এবং দেশে শুরু হবে আরও মৌলিক সমস্যা নিরসন, উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের উৎসব।
Khelapi Rin : Khomotaboly Ebong Unnoyon Prekkhit
আকাশের জলচিত্র
তুহিন দাস, কবি ও লিটলম্যাগ কর্মী। জন্ম: ১১ জানুয়ারি ১৯৮৫, জল ও কবিতার শহর বরিশালে। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। প্রথম কবিতার শিরোনাম ‘সমাধিপৃষ্ঠা’। ২০০০ সালে ‘আরণ্যক’ সাহিত্যপত্র সম্পাদনা শুরু করেন। সম্পাদনার জন্যে ২০১১ সালে ‘চিহ্ন সন্মাননা’ পেয়েছেন। বর্তমানে ‘আরক’ পত্রিকা ও প্রকাশনায় কর্মরত আছেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ছয়, ‘বনসাই প্রকল্পের মানুষ’ ‘অসুখময় দিনরাত্রি’ ‘বিষাদনীলঘোড়া’ ‘কাজল বিক্রেতার স্বপ্ন’ ‘বাগান সিরিজ’ ও ‘দূরের পাড়া কাছের বাড়ি’।
কাঠের মুখ
হুমায়ুন কবির।
জন্ম ১৯৫৯ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার দেউটি গ্রামে। বাবা জালাল আহমেদ ও মা জফুরা বেগম। লেখালেখির শুরু ছাত্রাবস্থায়। মাঝে দীর্ঘ বিরতি। আবারও ফিরে এসেছেন লেখালেখিতে। কবিতা, উপন্যাস, গল্পগ্রন্হসহ তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আটটি। ইতোপূর্বে প্রকাশিত তার উপন্যাস ‘ কানফুল, আনছার আলীর গৃহত্যাগ এবং কবিতা অন্তহীন দীর্ঘশ্বাস পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য জিগীষা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ তাকে জিগীষা সাহিত্য সম্মাননা -২০১৯ প্রদান করেছে।
সাবেক সরকারি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বর্তমানে দৈনিক বাংলার সাহিত্য সম্পাদক। তিনি সালমা ফৌজিয়া সুমি, ডা. শারমিন ফৌজিয়া ও সাইফুল কবির সোয়েবের বাবা। স্ত্রী নাজমুন নাহার লক্ষ্মী গৃহিণী।
প্রকাশিত বই সমুহঃ-
কবিতা-
আমি তাকে ফিরছি খুঁজে
অন্তহীন দীর্ঘশ্বাস
উপন্যাস-
দায়
কানফুল
মেঘনাপারের শেফালী
আনছার আলীর গৃহত্যাগ
গল্পগ্রন্থ-
শাহজাদী উপাখ্যান
আমিও ডিকশনারি দেখেছি কিন্তু পাইনি।
জ্বিনকন্যা নার্গিসের প্রেম
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.