Additional information
Weight | 0.100 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.32 $ 1.76
গ্রামের পাশে যে বিশাল বাদাম ক্ষেত আর ক্ষেতের পাশে যে ছোট নদী, সে নদীতে মাঝারি সব ঢেউ ওপার থেকে এপাড়ে আসে খড়কুটো মুখে নিয়ে। আর কত কিছু ভেসে আসে আর চলেও যায়—সারা দিনভর ছোটনেরা সেইসব দেখে পাড়ে বসে বসে।
ছোটনেরা মানে হলো—হাবিবুল, রতন, মোবারক, শেফালি বকুল এরা। কালিয়াখোল গ্রামের ছোটরা। তারা প্রতিদিন নদীতে আসে আর কাঁচা বাদাম খেতে খেতে লক্ষ করে নদীটাকে। নদীর ভেতরে কত কিছু। কাদাখোঁচা একটি দুটি। বালিয়া হাঁসের সাদা পাখনা উড়তে থাকে। আর ওপারের মেঘ যখন উড়তে উড়তে এপারে আসে তখন জলিল কাকার সময় হয় জোয়ালের গাই দুটাকে গোসল দেয়ার। গাই দুটার গোসল দেখতে দেখতে আর বাদাম খেতে খেতে দলের মধ্যে মোবারক নামে যে আছে, সে একটা প্রস্তাব দিল। প্রস্তাব দেয়ার আগে বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নিয়ে কয়েকটা জানাশোনা তথ্যও দিল। যেমন—এই নদীতে কিছুই ডোবে না।
বাকিরা মাথা নাড়ে—হুম।
গরু ডোবে না, খড় ডোবে না। নাও-লঞ্চ কিছুই ডোবে না। ভেলা ডোবে না।
সবাই মাথা নাড়ে। কাঁচা বাদাম খায়।
—চল আজকে একটা খেলা খেলি। মিনুরে ডুবাই দেই। দেখি ডোবে কি না?
ছোটনরা একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। প্রস্তাবে জোর সমর্থন দেয় নুরু। প্রস্তাব সমর্থন নিয়ে নুরু কারো দিকে তাকায় না। নদীর পেটে জলের প্রবাহ দেখতে দেখতে তারা স্কুলঘর দেখে। দূরের আকাশছোঁয়া মিনার মসজিদ দেখে।
—মিনুও ডুবত না। এই নদীতে কিছুই ডোবে না–বলে সাহস দেয় নুরু। ততক্ষণে মিনুকে নিয়ে এসেছে মোবারক।
মিনু জল দেখে ভয় পায়। বলে—মিঁউ!
বিশাল নদী। বিশাল চর। মিনু ভয় পায়। ডাকাডাকি শুরু করে দেয়—মিঁউ মিঁউ।
মিনুকে কোলে নেয় হাবিবুল। হাবিবুল থেকে নেয় রতন। রতন থেকে নেয় শেফালি। শেফালি থেকে নেয় রাজন। রাজন থেকে নেয়া নুরু। নুরু থেকে কেউ নেয় না। কারণ নুরু কাউকে দেয় না। সে মিনুকে ছুড়ে দেয় নদীতে।
সবাই হাসে। মিনু সাঁতার কাটে। ঠিকমতো পারে না। নদীতে ঢেউ। তলিয়ে যায়। ছোট্ট মাথা। ডোবে ভাসে। সবাই হাসে–খুশিতে হাততালি দেয়।
দুই ঢেউয়ের চাপে পড়ে মিনু ডাকে—মিঁউ মিঁউ।
প্রাণপণ চেষ্টা করে মিনু কচি পা দিয়ে পাড়ে আসতে পারে না। দূরে সরে যায়। আবার আসে। পাড়ের কাছে আসেও। কিন্তু নুরুরা ঢিল ছোড়ে। হি হি করে হাসে। হাত তালি দেয়।
মিঁউ মিঁউ করতে করতে নদীর ভেতরে চলে যায় মিনু। ঢেউয়ের ভাঁজের ভেতরে চলে যায়। ডুবে যায়। পাড়ে বসে রাজন শিস দেয়।
…………
রাতের বেলায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে পুরো ব্যাপারটা আবার দেখে ছোটন। মিনু ডুবে যাচ্ছে। ভেসে উঠছে। চিৎকার করে ওঠে ছোটন। ঘামে নেয়ে ওঠে সে। কিন্তু তার ঘুম ভাঙে না। ঘুমের মধ্যেই ছোটন বোঝে ঘুম না ভাঙলে সে নদী থেকে আর মিনুকে উঠাতে পারবে না।
সকালবেলা তাড়াতাড়ি মিনু যে কাজটি করে তা হলো ছোটনের বাবা-মাকে নিয়ে নদীর পাড় চলে এলো। তারা দেখল—নদীর ভেতরে একটা লাল জামা ভাসছে ছোটনের।
২৪১৯
Weight | 0.100 kg |
---|---|
Published Year |
সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব। জন্ম: ১৯৭৮ সালে বরিশাল জেলা সদরে করিমকুটির নামক স্থানে। তার লেখার বিষয় মূলতঃ কবিতা। সময় নাট্যদলের সাথে একযুগ পার করেছেন। গানও লিখতেন কিন্তু বন্ধুবরের প্রয়ানে, অভিমানে আর সেপথ মারাননি। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকলেও নিজেকে একজন কবিতার শতরঞ্জি মোড়ানো শ্রমিক বলেই মনে করেন। এটি কবির প্রথম বই।
রূপোর দ্যুতি
ভূমিকা
‘সীমান্তিনী’ আমার লেখা দীর্ঘ কবিতার মধ্যে অন্যতম। বারোটি কবিতা নিয়ে এই বইটি। কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে প্রেমের পাশাপাশি পাহাড়ি সৌন্দর্য, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো, হাজং প্রভৃতি আদিবাসীদের সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও তাদের জীবনধারা। পাহাড়ি নারীর সৌন্দর্য, বালুকণা, সমুদ্র, আঁকাবাঁকা-উঁচুনিচু পথের দৃশ্যও এই বইতে চিত্রিত হয়েছে। প্রতিটি কবিতার পাতা রাঙানো হয়েছে ভালোবাসার রঙে।
কিসিঞ্জার ভূঁইয়া
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সীমান্তিনী
সঞ্চয় সুমন। ঢাকাবাসী এক কবি। যে শুধু কল্পনার রঙে আঁকে শব্দ খেলার মাঠ। এই গ্রন্থটি কবির প্রথম কাব্যফসল।
গুপ্ত সমরে মুক্তির ঠিকানা
কিছু একটা বলাটাই যখন বাধ্যবাধকতাÑবাহুল্য এবং আপেক্ষিক বাতুলতা বাদ রাইখা মাহবুব লীলেন থাইকা ধার কইরা বলতে হয়Ñ ‘আনফিট মিসফিট হইয়া হামাগুড়ি দিয়া হাঁটি, আর রাত্তিরে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ টাইনা চিক্কুর দিয়া কইÑ যাহ শালা বাঁইচা গেলাম আরও একটা দিন।’
এইটা বড়োবেশি জৈবিক বাঁচা
মানবিক বাঁচনের স্বপ্নও দেখি না বহুদিন
বড়ো তরাসে আছি
বড়ো বেশি চাইপা আছি, নিজের গলা নিজে।
দ্বান্দ্বিক দ্বন্দ্ব বিষয়ক আজাইরা প্রলাপ
ফারহানা খানম। জন্ম: ১৯শে এপ্রিল ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপে। ‘ভুগোল ও পরিবেশ’ বিষয়ে স্নাততোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে ব্যাংকে চাকুরি শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। নয় ভাই-বোনের মাঝে সবার ছোট বলেই আদরও পেয়েছেন বেশি। প্রথম প্রকাশিত বই, ‘ইছামতি’ (কলকাতা থেকে প্রকাশিত)।
তৃষ্ণার্ত বালুতট
ভূমিকা-
আমার ৪টি কবিতার বই বিভিন্ন সময়ে কলকাতা এবং আগরতলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের পাঠক বইগুলো হাতে পাননি বলেই সেখান থেকে ১০০টি কবিতা বাছাই করে এই প্রকাশনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুপ্রাণন প্রকাশনের প্রাণপুরুষ শ্রদ্ধাভাজন আবু এম ইউসুফ ভাইয়ের সহৃদয় সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ।
অনুজপ্রতিম তুহিন ভূঁইয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রূপনগর আবাসিক এলাকা
মিরপুর, ঢাকা।
সরদার ফারুকের ১০০ কবিতা
বিলাল হোসেন
জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৭৪।
জন্মস্থান- মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার রাজারচর কাজিকান্দি গ্রামে।
প্রকাশিত বই-
১. কাব্যগ্রন্থ- বিরুপা’র শূঁড়িবাড়ি(২০১৪)
২. অণুগল্প সংকলন- পঞ্চাশ(২০১৫)
৩. মহাপ্রভু ও অন্যান্য অণুগল্প(২০১৬)
৪. কাব্যগ্রন্থ- একজ্বলাপঙক্তি(২০১৬)
স¤পাদিত বইসমূহ-
সেরা ১০০ অণুগল্প(২০১৫) (প্রিন্ট ভার্সন)
ই-বুক স¤পাদনা-
অণুগল্প সংগ্রহ-১,২,৩,৪; গোয়েন্দা অণুগল্প সমগ্র, ভূত অণুগল্প সমগ্র, রূপকথা অণুগল্প সমগ্র, নীতি অণুগল্প সমগ্র, চিয়ার্স চিয়ার্স চিয়ার্স, দুনিয়ার মাতাল এক হও, মাতালে মাতালে চেনে, মধুগন্ধেভরা, যুগলবন্দী (সুবর্না রায়), অণুগল্পের বিষয় বৈচিত্র্যের সন্ধানে, তাহাদের গল্প, অণুগল্পের অস্তিত্ব আছে, অণুগল্পের শিরদাঁড়া, অণুগল্পের রোজনামচা।
বাংলা ভাষার সেরা অণুগল্প
অয়ন্ত ইমরুল। জন্ম: ১২ই এপ্রিল ১৯৮৭ইং, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার আজিমনগর গ্রামে। পদ্মা নদীর ভয়াল গ্রাসে শৈশবেই ঠিকানার পরিবর্তন ঘটে বর্তমানে সাভার আশুলিয়ায় বসবাসরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ছায়াসমুদ্র
সিদ্দিক প্রামানিক। জন্ম: ২১শে আগস্ট ১৯৭৯, কুস্টিয়ার কুমারখালী থানার চরভবানীপুরগ্রামে। বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন এবং বাম প্রগতিশীল সংগঠনের সক্রিয় সংগঠক ও সংস্কৃতকর্মী। প্রথম বই ‘হাঙরের সমুদ্রে মননশীল মাছ’।
উন্মাদের কনসার্ট
ঝুমকি
কত পথ পার হলাম ঝুমকি;
তবু মানুষ চেনা হলো না!
বারো প্যাচের নারী, চোখে জড়িচুমকির খেল্ দেখালো
অমলেশ সেই দেখে দেখে শেষে উন্মাদের খাতায় নাম লেখালো
পত্রিকার শেষ পাতায় ওকে নিয়ে কতো ফিচার হলো
তবুও অমলেশকে কেউ ভালোবাসলো না।
ঝুমকি পৃথীবির সবচে’ হিংস্র প্রাণী মানুষের
গায়ে বিপদের গন্ধ লেগে আছে;
ফাঁক পেলেই নষ্টামি করতে লেগে যায়
কেউ কেউ বলে সত্যিকারের ভালোবাসা নেই
বড় র্দূভাগা ওরা!
সত্যিকারের ভালোবাসাই দেখেনি চোখে; পাবে কোত্থেকে
প্রেমালিঙ্গম
তুহিন দাস, কবি ও লিটলম্যাগ কর্মী। জন্ম: ১১ জানুয়ারি ১৯৮৫, জল ও কবিতার শহর বরিশালে। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। প্রথম কবিতার শিরোনাম ‘সমাধিপৃষ্ঠা’। ২০০০ সালে ‘আরণ্যক’ সাহিত্যপত্র সম্পাদনা শুরু করেন। সম্পাদনার জন্যে ২০১১ সালে ‘চিহ্ন সন্মাননা’ পেয়েছেন। বর্তমানে ‘আরক’ পত্রিকা ও প্রকাশনায় কর্মরত আছেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ছয়, ‘বনসাই প্রকল্পের মানুষ’ ‘অসুখময় দিনরাত্রি’ ‘বিষাদনীলঘোড়া’ ‘কাজল বিক্রেতার স্বপ্ন’ ‘বাগান সিরিজ’ ও ‘দূরের পাড়া কাছের বাড়ি’।
কাঠের মুখ
সেদিন এক গরুচোরের সাথে সাক্ষাত হয়ে গেল সবার, চোরটি নিজে থেকেই বলল—আমার নাম মজিদ। আমি একটা গরুচোর।
দলে নিয়োগ চলছিল। ইন্টার ডিস্ট্রিক বাস ডাকাতদলের সভাপতি জুম্মন খাঁ, অজ্ঞানপার্টি অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি, নিখিলবাংলা পকেটমার মহাসঙ্ঘের সেক্রেটারি বসা। এরাই দলের নিয়োগদাতা।
কিন্তু মজিদকে দেখে মোটেও গরুচোরের মতো লাগছিল না। গরুচোর হবে গরুচোরের মতো কিন্তু এরে সে রকম লাগছে না। এরে মকবুলের মতো লাগে।
মকবুল কে? মকবুল হলো মুরগি চোর। একসময় এই দলের হয়ে কাজ করত। এখন দল ভেঙে আলাদা দল করেছে। টেক্কা দিতে চায়।
অজ্ঞান স্পেশালিস্ট একাব্বর আলি সরু চোখে মজিদের দিকে তাকাল। তার ইচ্ছে করছে চোখেমুখে মলম ঘষে দিতে। একরাশ সন্দেহ নিয়ে বলল—তা মজিদ মিয়া, কয়টা গরু তুমি চুরি করছ?
মজিদ মাথা চুলকায়। ঘাড় চুলকায়। একটু লজ্জাও পায়। বলল—খুব বেশি না ওস্তাদ, আমি তো রেনডম গরু চুরি করি না। যখন কোরবানি আসে, গরুর হাটে ঘোরাঘুরি করে চান্সে চুরি করি। বছরে ওই একটাই সিজন আমার।
—তাই বল! একাব্বর হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। সন্দেহ আমার ঠিকই ছিল—ভাবতে ভাবতে সবার দিকে তাকিয়ে একটু ফুলে ওঠে, গর্বে। আসলে এই ব্যাটাকে মুরগি চোরের মতো লাগছিল। বিশ্বাসঘাতক মকবুলের চেহারার লগে মিল আছে। মকবুলও ছিল বিরাট মুরগি চোর।
—তা এইখানে কি মনে করে?
মজিদ বলল—ওস্তাদ, আমারে দলে নেন। চুরিধারী দল থেকে না করলে পোষায় না। একলা একলা ভালো লাগে না। মামারা ধরলে ছাড়ানোর কেউ থাকে না কোর্টে চালান খাইয়া যাই।
মজিদের কথায় সিদ্ধান্তের জন্যে সেক্রেটারি তাকায় সহ-সভাপতির দিকে, সহ-সভাপতি তাকায় সভাপতির দিকে। সভাপতি কারো দিকে না তাকিয়ে নিজের ডানহাতের চার আঙুলে পরা আংটির দিকে তাকিয়ে রইল। দুর্লভ পাথর বসানো সব আংটি। কোনোটি হীরা। ইয়াকুত আর লাল জমরুদ পাথরের আংটি দুটি নাকি খুবই বিখ্যাত। সাদা চুনি নাকি পৃথিবীর কোথাও নেই। একটিই। তাও জুম্মনের হাতে, ভাবা যায়! এই আংটিগুলির বৈশিষ্ট্য হলো ডান হাতে পরতে হয়। কিন্তু জুম্মনের হাতে মোট আঙুল চারটি। একবার ডাকাতি করতে গিয়ে গৃহস্থের দায়ের কোপে একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল। ফলে চার আঙুলেই আংটি পরতে হয়।
কাটা আঙুলের দিকে তাকিয়ে জুম্মন ডাকাত হতাশায় মাথা নাড়ে—মজিদ, গরুচোর মুরগি চোরের বিষয় না, আমরা এমন এক হাত সাফাইয়ের খোঁজ করছি, যে মুরগি নয়—মুরগির পিত্তথলি হাত চালিয়ে বাইরে আনতে পারবে, কিন্তু মুরগি টের পাবে না। পারবে?
ওস্তাদের কথায় খুব হতাশ হয়ে গেল গরুচোর মজিদ। চোখেমুখে পানি চলে এলো প্রায়। এত সুক্ষ্ম কাজ পারবে না সে। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল—খুব ইচ্ছা ছিল আপনাদের সাথে কাজ করার। হলো না। বিদায় দেন ওস্তাদ।
বলে সবার সাথে হাত মিলিয়ে মজিদ চলে গেলে জুম্মন খাঁ নিজের আঙুলের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল—আমার আংটি, আমার আংটি!
…………
মকবুলের ডেরায় যখন মজিদ চারটি আংটি ছড়িয়ে দিল তখন খুব হাসাহাসি হলো, জুম্মন ওস্তাদের থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেছে কল্পনা করে। হাত সাফাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে গেল মজিদ।
মকবুল কথা দিলে কথা রাখে।
গরুচোর
মুখর জীবনগদ্য
শিমুল মাহমুদ তথাকথিত প-িতগণের একাডেমিক ট্র্যাশ থেকে ঘোষণা দিয়েই দূরে সরিয়ে রেখেছেন নিজেকে; সেইসাথে অস্বীকার করেছেন যাবতীয় লিয়াজোবাদি পুরস্কার ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক পিঠ-চাপড়ানো অসভ্যতা। কবিতার সাথে তাঁর সখ্য স্বৈরশাসনের দুঃসহকাল গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে। সমান্তরালে কথাসাহিত্যে রেখেছেন নির্মোহ ছাপ; সেইসাথে সক্ষম হয়েছেন নিজেকে একজন সিদ্ধহস্ত সমালোচক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। সহজাত বৈশিষ্ট্যে শিমুল মাহমুদের গদ্যমাত্রই হয়ে ওঠে মুক্তকণ্ঠ ও মুক্তচিন্তার বাহন; যা অবশ্যই সিরিয়াস পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত।
শিমুল মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পাঠ গ্রহণ শেষে ইউজিসি-র স্কলার হিসেবে পৌরাণিক বিষয়াদির ওপর গবেষণা করে অর্জন করেছেন ডক্টরেট ডিগ্রি। বর্তমানে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, চেয়ারপারসন ও কলা অনুষদের ডিন-এর দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যের কাগজ ‘কারুজ’। লেখকের জন্ম : ১৯৬৭ সালের ৩ মে
প্রকাশিত গ্রন্থ: ২৫টি
কাব্যকথা কাকবিদ্যা
লেখক পরিচিতি :
সরদার ফারুক। জন্ম: ৯ই নভেম্বর, ১৯৬২। কপোতাক্ষ নদের তীর খালিশপুরে, পৈত্রিক নিবাস বরিশালের খালিশপুর। পেশায় বিশষজ্ঞ চিকিৎসক। ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বরিশালে ঘাট শ্রমিকদের আন্দোলন, ডেমরায় শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সংগ্রাম ও বাজিতপুরের জেলেদের লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি’ সহ মোট ৭টি।
অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি
ভূমিকা
লোকমান তাজ রচিত লাশপুরীর লাশের গল্প কিশোর উপযোগী রহস্যময় উপন্যাস। সমকালীন অনেক লেখক এ জাতীয় রচনা সৃষ্টিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সাইন্স ফিকশন, রম্য কথা, ভৌতিক থ্রিলিং ইত্যাদি ব্যবহার করে প্রচুর লেখালেখি অব্যাহত রয়েছে। কারো কারো বেলায় ব্যাপক জনপ্রিয়তাও লক্ষণীয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব লেখা অনির্দেশ্য বায়বীয় ভাব ভাবনায় সমর্পিত।
সঠিক কোনো জীবনবোধ বা আদর্শ অন্বেষার বালাই নেই। দিকভ্রান্ত কাহিনী চরিত্রের মোহমুগ্ধ ঘনঘটা একটা আবেশ ছাড়িয়ে দেয়।
এ অবস্থায় লোকমান তাজ এর লাশপুরীর লাশের গল্প নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এখানে গাছতলা গ্রামের সবিস্তার কাহিনী সাব্বির, মাহি ও মেহেক চরিত্রের মাধ্যমে রূপায়িত হয়েছে। তাছাড়া আরো কিছু শাখা কাহিনীও এখানে প্রযুক্ত হতে দেখা যায়। যেখানে মীরাকে কেন্দ্র করে ছাত্রীনিবাসের এক মর্মান্তিক কাহিনী এখানে বর্ণিত হয়েছে। গল্পের প্রধান চরিত্র সাব্বিরই পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করেছে।
লাশপুরীর লাশের গল্পে সত্যিকার অর্থেই গল্পের একটা মুগ্ধতা ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে অপরিসীম আবেগ, কৌতূহল, স্বপ্ন আকস্মিকতা উৎকণ্ঠা বজায় রয়েছে। যা পাঠক সাধারণের মনকে একটা সম্মোহ সীমানায় ধরে রাখতে সক্ষম। তাছাড়া এর কাহিনী চরিত্রে বরাবরই একটা আদর্শবোধ ব্যাপ্ত আছে। এ সুবাদে সেখানে সমাজ মানসের কিছু বিশ্বস্ত চিত্রগাথা পরিস্ফুট উঠার সুযোগ পায়। যা শুধু এদেশীয় সংস্কৃতির আদলে গড়ে ওঠেছে। যেমন মীরা কেন্দ্রিক সারিনা জামান এর ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। মেয়েটির আত্মহত্যা ও এর আনুপূর্বিক ঘটনা যে কাউকে ছুঁয়ে যেতে সক্ষম। সংসারের অভাব-অনটন, বন্ধুবান্ধবীদের নিগ্রহ-নিপীড়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবজ্ঞা, অবহেলা-সবমিলিয়ে মেয়েটির জীবন বিষিয়ে তোলে। এছাড়া সাব্বিরের দাদিবাড়ি গাছতলা গ্রামের নানাবিধ ঘটনা এ গল্পের আড়ম্বরের সাথে বনিত হয়েছে। যা পাঠ করে অনাস্বাদিত জগতের উপমিত আস্বাদন করা সম্ভব। আমি লাশপুরীর লাশের গল্প ও এর লেখক লোকমান তাজ এর পর্যায়ক্রমিক সমুন্নতি কামনা করছি।
-ড. মুহাম্মদ জমির হোসেন
লাশপুরীর লাশের গল্প
লেখক পরিচিতি :
মারুফ রায়হান। জন্ম করাচিতে। পৈতৃক নিবাস খুলনার ফুলতলায়। আশির দশকের প্রথমার্ধে ছাত্রাবস্থায় নাট্যান্দোলন, লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন, সেই শুরু। প্রধানত কবিতাই লিখেন। এ পর্যন্ত ১৫টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া গুণীজনদের নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু বই। সাক্ষাৎকার মূলক বই আছে দু’টি। প্রবন্ধের বই আছে তিনটি।
হৃদয় ও রাজপথ
ইয়াকুব খান শিশির যতটা না অণুগল্পকার তারচেয়েও বেশি একজন অণুগল্পসমঝদার; বিজ্ঞ আলোচক। অণুগল্পকে অণুগল্প হিসেবে বুঝতে পারার মধ্যেও এক ধরণের মেধার প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় অণুগল্পসংশ্লিষ্ট জ্ঞান বা বোধ। এই জ্ঞান বা অণুগল্পবোধটির অভাব থাকলে অণুগল্পের মূল মূরতি দেখা পাওয়া সম্ভব হয় না। ইয়াকুব খান শিশির এমনি একজন পাঠক যার ভেতরে অণুগল্পবোধটি সবসময় জাগ্রত থেকেছে। অণুগল্পের ভেতর-বাহিরের জ্ঞান অর্জন করেছেন। সেই জ্ঞান দিয়ে তিনি ইতোমধ্যে অণুগল্পের প্রচার প্রসার এবং বাংলা সাহিত্যের একটি নবতর শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন।
রাজহাঁস ও অন্যান্য অণুগল্পের সফলতা কামনা করছি।
-বিলাল হোসেন
রাজহাঁস ও অন্যান্য অণুগল্প
মেঘ অদিতি। কবি ও গল্পকার হিসেবে ‘দু’বাংলাতে পরিচিত। জন্ম: ৪মে, জামালপুর। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘জলডুমুরের ঘুম (কাব্য)’ ‘অস্পষ্ট আলোর ঘোড়া (গল্প)’ ‘অদৃশ্যতা হে অনিশ্চিতি (কাব্য)’ এবং ‘সময় শূন্যতার বায়োস্কোপ (মুক্তগদ্য)।
প্রবেশিধকার সংরক্ষিত
সুন্দরীদের উপর একক কোনো মালিকানা থাকে না- কোনো একক যুবকের…
একজন তরুণ ও একজন নারীর সম্পর্কহীন- সম্পর্কে’র, নামটা কী?
নারী’র, কান্না’র, নামটা কী? এ কান্না’র নাম উদ্ধারের দায়় কারো না কারো’র, উপর বর্তায়়। এটা কারো না কারো’র জানার/ জানাবার প্রয়োজন আছে। এজন্যই আমার কবিতা লেখা দিদি…
শরীফ শামিলের এ গল্প গ্রন্থ’র অধিকাংশ গল্প ভালোবাসার তবে অন্যান্য গল্পগুলোও বেশ ভালো। সবশ্রেণির পাঠকদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাবে।
আবু এম ইউসুফ
প্রকাশক
ভালোবাসার গল্প
লেখক পরিচিতি :
নিখিল নওশাদ। জন্মসন: ১৯৮৯ইং। বড়িয়া, ধুনট, বগুড়া, বাংলাদেশ। ‘বিরোধ, ‘নিওর’ ও ‘নীড়’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই। এছাড়া ছোটগল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।
এটি একটি চিৎকার
ইলিয়াস ফারুকী একজন ভিন্নস্বাদের লেখক। যেমন অদ্ভুত তার প্রেমের ধরণ, তেমনি অদ্ভুত তার প্রতিবাদের ধরণ। বইটির নাম গল্পে প্রেমকে তিনি চিত্রিত করেন এভাবে “নিজস্ব অদ্ভুত এই দোলাচলের চিন্তা আমাকে অস্থীর করে তুললো। আমি গভিরভাবে অনুভব করতে পারছি যে আমার জীবনে পিতা, মাতা, ভাই বোনের ভালোবাসা ছাড়াও
আরো একটা ভালোবাসার প্রয়োজন রয়েছে, যেটা নিয়ম পঞ্জির মধ্যে পড়বে না। সেখানে আরো কিছু বেশি থাকবে। সেখানে আদিমতা থাকবে, কাম থাকবে, দেহজ দান-দক্ষিনা থাকবে। যারা পূর্বে আমাকে ত্যাগ করেছে হয়ত তাদের ভেতরে আরো আকাঙ্ক্ষা ছিল, যা আমি পূরন করতে পারি নাই।”
একটি প্রাক বিবাহ সাক্ষাৎকার গল্পে একজন পাত্র বিচিত্র ভাবে তার কনেকে নির্বাচন করে “বিবাহের সাক্ষাৎকারের সাথে এই বলধা গার্ডেনের কী সম্পর্ক জানো? তোমার সাথে দেখা করার আগে এই বলধা গার্ডেনে আমি নিয়মিত এসেছি। সাথে আমার উদ্ভিদ বিদ্যার এক বন্ধুকে নিয়ে। আজ আমি এই যে দুই ঘন্টারও অধিক সময় যে পাণ্ডিত্য দেখালাম তা আসলে ওই সাত দিনের ফলাফল। আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যে মেয়ে আমার সাথে জীবন কাটাতে রাজি হবে তাকে আমি প্রথমেই কোন একটি বিষয় নিয়ে বিরক্ত করবো। যদি সে আমার এই বিরক্তি সহ্য করতে পারে তাহলেই আমার ঘর সংসার সম্ভব, তা নাহলে না।” জলরঙ ও টিয়া পাখি তার একটি দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদি গল্প। “অজিতের বন্ধুরা এবং আপনজনেরা যখন তার পাগলামি সহ্য করে নিয়েছে ঠিক তখনই এক সুন্দর সকালে শহরের লোকজন চমকে উঠল। শহরের গুরুত্বপূর্ন অফিস আদালতের প্রধান ফটকে দুটো করে টিয়া পাখি এবং কিছু জলরঙে বাংলার প্রাকৃতিক চিত্র আঁকা কাগজ সাঁটানো, নিচে লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ পায়ে সুতলি দিয়ে বাঁধা টিয়া পাখি মানুষজন দেখলেই বলছে ‘ছি: ছি: করছোটা কী, ভালো হয়ে যাও’।
প্রেম অপ্রেম এবং বিভ্রম
এই গ্রন্থের কবি ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘকাল কবিতায় নিমগ্ন থেকেছেন- এখনো তিনি তাঁর সৃজনশীল স্পর্ধা নিয়ে অবিচল।
তিনি বহু ধরনের কবিতা লিখেছেন এবং সেগুলো বিভিন্ন নিরীক্ষাপ্রবণতায় সংশ্লিষ্ট। তাঁর কবিতায় জীবন আছে, সমাজ আছে, প্রকৃতি আছে, মানুষ আছে, দেশ-কাল আছে এবং আছে প্রতীকের ব্যঞ্জনাও, আছে রূপক, আছে ছন্দের বিভিন্নমুখী ব্যবহার, অনুপ্রাসের নতুনমাত্রা, মিলবিন্যাসের নীরিক্ষা ও অন্যান্য সূক্ষ্ম কারুকাজ। একেক কাব্যগ্রন্থ একেক বৈশিষ্ট্য নিয়ে উজ্জ্বল। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ১৭টি কাব্যগ্রন্থ। এইসব কবিতায় চৈতন্যের যে বহুতল ও স্তর কবি উন্মোচন করেছেন- পাঠককে নিয়ে যায়–সেই স্তরে ও তলের গভীরে।
একজন উৎপিপাসু কবিতার পাঠক, এই গ্রন্থের কবিতাগুলোতে বহু বর্ণিল ও বিভিন্ন ভূগোলের খোঁজ পেয়ে যাবেন, তা পাঠকের সংবেদন সৃষ্টি করে এক ধরনের ইন্দ্রিয়ানুভূতিও তৈরি করবে, যা ইন্দ্রিয়জ্ঞানে পরিণত হবে, সেইসাথে ভালো কবিতার শিল্প-সৌন্দর্য নিয়েÑস্বতঃস্ফূর্ত ও আনন্দময় অনুভূতিরও জন্ম দেবে।
Manush Poshak Porleo ulongo Mone Hoy - মানুষ পোশাক পরলেও উলঙ্গ মনে হয়
১৯০৬ সাল থেকে রচিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ী ক্ষুরধার গানগুলো নিয়ে কাজ করার তীব্র অনুভবে তাড়িত হই। গান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা না-করার অভাব থেকে এ গবেষণার জন্ম। সুযোগ আসে ২০০৯ সালে। তা অবশ্য কিছু দূর এগোনোর পর শেষও হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আবার কাজটি শুরু হয় সরকারি অর্থায়নে। তখন নতুন করে সাজাই ফেলোশিপ গবেষণার সূচিপত্র।
আগে চেয়েছিলাম সময়ক্রমে গবেষণা কাজটা করতে; পরে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণা-সৃষ্টিতে দেশাত্মবোধক গানের ভূমিকা (১৯৪৭-৭১)’ গবেষণার অধ্যায় বিভাজন করি—
ভূমিকা, দেশাত্মবোধক গানের পটভূমি, ১৯৪৭-৫২ সনের ভাষা আন্দোলন পর্বের গান, ১৯৬৯-৭০ সনের গণ-অভ্যুত্থান পর্বের গান এবং ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ পর্বের গান।
তবে শেষের পর্বটিতে তিনটি সেমি-পর্ব যুক্ত হয়—প্রেরণামূলক বঙ্গবন্ধুর গান, সংগ্রামে-সংগীতে নারীর অবদান এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান।
গ্রন্থটিতে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন এবং নজরুল স্বরলিপিকার সুধীন দাস এবং বিশিষ্ট গণ সংগীতশিল্পী শুভেন্দু মাইতি (যিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অর্থ সংগ্রাহক ছিলেন)—তিন বিশিষ্ট জনের সাক্ষাৎকার সংযোজিত হয়েছে। প্রায় ৯০০টি দেশপ্রেরণামূলক গানের তালিকা দেয়া হয়েছে।
গবেষণার দীর্ঘ পথে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হই। তবে ধৈর্য ধারণ করে সবটা সহ্য করেছি; গবেষণা কর্মের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে। পরম করুণাময়ের অপার কৃপায় কাজটি শেষ করতে পেরেছি। তিনি সর্বোতভাবে সাহায্য করেছেন; সে প্রমাণ প্রতি মুহূর্তেই পেয়েছি। বাকিটা বিবেচনার ভার সম্মানিত পাঠকদের।
ফেলোশিপ গবেষণাটির প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সার্বিক দায়িত্বে ছিলাম আমি।
যাদের আন্তরিকতা, সহযোগিতা পেয়েছি, তারা হলেন—
শ্রী গোবিন্দলাল দাস, শ্রী করুণাময় অধিকারী, জনাব ড. মূহ: আব্দুর রহীম খান, লিপিকা ভদ্র, সঞ্জয় কুমার বণিক, মল্লিকা দাস, ড. সাইম রানা, ড. সেলুবাসিত, ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন (গিয়াস শামীম), ড. রঘুনাথ ভট্টাচার্য, আবদুল মতিন, সুধীন দাস, শুভেন্দু মাইতি, মোবারক হোসেন খান, সেলিম রেজা প্রমুখ সুহৃদগণ। সবাইকে কৃতজ্ঞ-চিত্তে স¥রণ করছি।
সময়ে-অসময়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় যাদের, তারা হলেন আমার পূজনীয় শিক্ষক—ড. সাঈদ-উর রহমান এবং অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক।
গবেষণা কাজটির মূল্যায়ন করেছেন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। তার আশীর্বাদকে ভক্তি জানাই।
‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম’-এ প্রেরণাদায়ী গানগুলোর যাদুমন্ত্রে যুদ্ধ জয়ের নেশায় বীর বাঙালি দুর্বার গতিতে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা।
সেই গানগুলোর পটভূমি এবং গানগুলো সম্পর্কে সকলে জানতে পারবেন যার সহযোগিতা, সহমর্মিতায় তিনি—অনুপ্রাণন প্রকাশনের সত্ত্বাধিকারী আবু এম ইউসুফ ভাই। এই ফেলোশিপ গবেষণা ও সমীক্ষা ধর্মীগ্রন্থটি অনুমোদন ও প্রকাশের উদ্যোগ নেবার জন্য তার প্রতি অপরিসীম আন্তরিকতা প্রকাশ করছি। ২০২০ সালের বইমেলার বই-প্রকাশনার সীমাহীন ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও গ্রন্থটির নামকরণ করে তিনি কৃতজ্ঞাপাশেবদ্ধ করেছেন।
ড. শিল্পী ভদ্র
ঢাকা।
মুক্তি-সংগ্রামের গান
‘বারুদ মিশ্রিত মৃত্তিকা’ দ্বিতীয় দশকের কবি বিষাদ আব্দুল্লাহ’র প্রথম কবিতাবই। চর্চার শুরু থেকেই নিভৃতচারি হিসেবে চলতি দশকের শেষ সময়ে এসে তাঁর বই প্রকাশ হলো। প্রচারের মোহে ভেসে যায় নি বিষাদ বরং হৃদয়ে বারুদ মেখে বুক ঘষে ঘষে নিজেকে তৈরি করেছেন। এই সময়ে সমাজ, রাষ্ট্র, দর্শন আর রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠতে পারা এত সহজ না। করপোরেট পৃথিবী যেখানে নিয়ত রঙিন হাতছানি দিয়ে ডাকছে, সেই রঙিন পৃথিবী থেকে নিজেকে নিভৃত করাও কঠিন। যে সময়ে প্রেমিকা কবিতা লেখার কারণে টেলিভিশনে দেখে না বলে অভিযোগ করে, পত্রিকার পাতায় বড়-বড় ছবি দেখে না বলে কবিকে নিয়ে হেয়ালি করে, সেই সময়ে নিজেকে এসব দেখানোর বারোবাজি থেকে দূরে রাখা অত্যন্ত দুরূহ। অন্তত প্রেমিকার দাবি মেটাতে গেলেও। বিশেষ করে প্রেমিকার আবদার, সমাজকে দেখানোর বিষয় থেকে বিষাদ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। যার কারণে তথাকথিত দ্বিতীয় দশকের সংকলনগুলোতেও তার কবিতা নেই। কবিতা লেখা সহজ কোন বিষয় নয়, জীবনের দর্শনকে ধারণ করে চিন্তার জগত তৈরি করাও অত মসৃণ নয়। জগতের সবচে কঠিন কাজের একটি। সেই কর্মের দায়ভাগ শুধু কবিতা চর্চাকারী তরুণের একার নয়, দেশেরও। সেই দায়িত্ব দেশকেও নিতে হবে, সুকুমার সৌন্দর্য লালন করতে হবে। শিল্পের জন্য শিল্প, না মানুষের জন্য শিল্প এই বুজরুকি প্রতারণাও শেষ করে দিতে হবে। মানুষের জন্য শিল্পই হোক শিল্পীর অভিস্পা। সেই শিল্প করেও কবিতাকে শিল্পের শর্তে নির্মাণ করা যায়। সুতরাং মানবিক দায় এড়াতে যারা শিল্পের জন্য শিল্প বলে জগতকে ধোঁকা দিতে চায় তাদের কথা আমরা বলবো না। লড়াই দরকার, বিপ্লব প্রয়োজন। ‘বারুদ মিশ্রিত মৃত্তিকা’ হোক সেই বিপ্লবের মন্ত্র। মধ্যবিত্ত তারুণ্যকে আঘাত করে এ লড়াই চলবে…
বারুদ মিশ্রিত মৃত্তিকা
সত্তর দশকের কবি সৈয়দ আবদুস সাদিক। এক প্রত্যাশিত সন্ধিক্ষণে বাংলা কবিতার মঞ্চে হাজির হয়েছেন গ্রহণ পূর্ণিমার ছায়াচারী হিসেবে। তাঁর কবিতার শরীর শব্দ সম্পদে ভরপুর। উপমা, শিল্প-সৌন্দর্যবোধ ও মিথ মিলে কাব্যমাঠ যেমন উর্বর, গড়ন-কৌশলেও ভাষা হয়ে ওঠেছে তেমনি অনন্যমাত্রার। তাঁর কবিতায় মন-ময়ূখজুড়ে সমাজ ও স্বদেশ প্রেমের ক্যানভাস আবার বিষয়বস্তুর নিরীখটা জুড়ে যেনো প্রেমই প্রধান। প্রেমই প্রকৃতি এই আকুতি, এই উচ্চারণ সর্বোপরি রসমগ্নতাও গভীরভাবে বিম্বিত। কোথাও বিশুদ্ধ নৈয়ায়িক দুর্বোদ্ধতা থাকলেও, পাঠস্বাদে তা প্রতীকী কাব্যানুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। তিনি এ কাব্য’র এ মাঠে রোপন করেছেন বিভিন্ন স্বাদের ফ্রয়েডীয়, পরাবাস্তব কবিতা সহ সনেট, রুবাই এবং গজল। তবে, নিশ্চয় পাঠক কবির এই কারিশমায় দ্রবীভূত হলেও দ্রোহ আর প্রেমের নানান সমাসবদ্ধ শব্দের উতরোলে, বিরহের ব্যঞ্জনধ্বনিতে, এইসব কবিতার বাহারি রূপ, রস, গন্ধ কবিতাঞ্চলকে করে তুলেছে মন্ময় ও তন্ময়। “তুমি শ্রমণ, আমি ভিক্ষু’ গ্রন্থের ভিন্ন স্বাদ, বিভিন্ন বোধ ও বিচিত্রতা তাকে দিয়েছে বিশিষ্টতা। পাঠ করা গেলে সহজেই সে আবহাওয়া অনুধাবন করা যায়। গ্রন্থটির ‘অনাথ অন্ধকার’ কবিতায় কবি শব্দ, স্বর ও ধ্বনিকে ভিন্ন মাত্রার সুরে প্রকাশ করেছেন এভাবে :
‘এতোকাল কুহকের ভেতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে
জেনে গেলাম গন্ধ-বর্ণময় সময়ের ভেতর
অনাথ অন্ধকার খেলা করে;’…
লিটন আব্বাস
তুমি শ্রমণ আমি ভিক্ষু
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.