বিষণ্ন দ্বীপের মানুষ – সাইফুল কামাল
সাইফুল কামালের এই বইটি সামাজিক রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত সংকটের একটি তীব্র বিশ্লেষণ। শুধু নিয়মকানুন জানলেই কবি হওয়া যায় না- নিজস্ব বোধের ব্যাপার-স্যাপার থাকতে হয়। নিভৃতচারী ও প্রচারবিমুখ এই কবি, তার বোধের বিষয়গুলো অন্তরের গভীরে লালন করেন। কবির অন্তর্দৃষ্টি ভাষার শক্তি, কবিতার গঠন একদিকে সামাজিক অবস্থার প্রতি সমালোচনা অন্যদিকে ব্যক্তিগত কষ্টের প্রকাশ। যা অনেকটাই গভীর এবং সূক্ষ্ণভাবে চিন্তার উদ্রেক করে। সেই সাথে প্রেম তথা যৌবনের দুরন্তপনাও দেখার মতো যা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। দ্রোহের এই কবিকে কীভাবে বললে বা লিখলে তার উপর্যুক্ত মর্যাদা বা কবিত্বের পূর্ণতা তুলে ধরা যেতে পারে সেটা আমার জানা নেই। শুধু জানি তার কবিতার প্রকাশভঙ্গি পাঠককে প্রবলভাবে আকর্ষণ করবে। আমার বিশ্বাস তার এই কাব্যগ্রন্থ মানুষের মনকে স্পর্শ করবে এবং সমাজের বিভিন্ন আলোচনার সূচনা ঘটাবে। তার কাব্যিক অন্বেষণ আমাদের সকলের মাঝে সোনালি আলোর প্রসন্নতা ছড়াক।
মোখলেস মুকুল
কথাসাহিত্যিক
Bishonno Diper Manush by Saiful Kamal
যে কথা হয়নি বলা যে কথা শোনার – রওশন রুবী
আপনার বুকের চাতালে তখনও ফসল শুকাচ্ছেন কৃষাণ কৃষাণী,
আপনার চোখ সাঁতরে যাচ্ছেন একদল নাবিক, কাচের দেয়াল নেই
তবুও শত্রুর ফাঁদ, তবুও আপনি চুপচাপ নিশানার কেন্দ্র বিন্দু।
অমৃতা আমার আত্মার কোণে একটুকরো আলোক বিন্দুর নাম,
কারণ- প্রচলিত ধারার বিরুদ্ধে বলে ওঠতে পারেন আপনি-
মরেও মরে না যে তার নাম এই অমৃতা, ক্ষুধার হাঙর অসহিষ্ণু,
গিলে ফেলছে আমাদের, তুমি শীত বস্ত্র নিয়ে চলে যাও চলে যাও-
… কী মসৃণ তকতকে অপরূপ তিলরঙা নদীতট
ওর ভেতর ধিকিধিকি জ্বলে এ কীসের আগুন?
ছুঁতে নেই এমন আগুন যে ব্যক্তিগত নয়…
… ও চাঁদ সরো, ও চাঁদ সরো কাঁপছে বেবাক ছই
কেমন করে আমি বলো অন্যকারো হই?
… বুকের উপর যখনি নদী থেমে যায়- হাঙরের গন্ধ পাই,
নিবিড় হয় জলপাই-রঙ, মাথা তুলে দম নেই, আকাশ দেখি
টের পাই ইন্দ্রিয় শান্তির জন্য কতটা কাঙ্গাল…
… তোমাকে ছোঁয়া যদি সহজ হতো আমি কি তোমাকে ছুঁয়ে দিতাম?
যাবতীয় কর্ম-শেষে ছন্নছাড়া দশটি অঙুল
উর্ধমুখী রাখি ঠিকই, তাই বলে কী ছুঁয়ে দিতাম…
… সীমান্তের চিহ্ন তুলে দেখ বহুবার পৃথিবী হতে চেয়েছি
উদ্যম ভালোবাসায় মানুষের কাছে হারিয়ে যেতে চেয়েছি।
তুমিতো জাননি বাঁচার লোভে কতটা কাঙাল মন
কতটা অনিহায় আঙুল থেকে মুছে দিয়েছি আঙুলের ক্রন্দন
… এই খঞ্জর কাটুক তার সুতীক্ষ্ণ আবেগে, কাটুক করাতকলের চেয়ে দ্রুত গতিতে,
দোহন করে নিঃশেষ করুক পৃথিবীর ওলান
তৃষ্ণাকাতর সুবিধাবাদীর দল-অপেক্ষায় সনদের।
Je Katha Hoyni Bola Je Katha Shonar by Roshon Rube
সুর ভুলে যেই ঘুরে বেড়াই – শঙ্করী দাসের কবিতা সমগ্র
বিমূর্ত ভাবনার মূর্ত প্রকাশ কবিতা। কবি ঘোরলাগা নেশার ঘোরে মননে সৃষ্টি করেন কবিতার অন্তর্নিহিত ভাব। অন্তর্নিহিত ভাবে কবি ভাবনার শিল্প-দ্যোতনায় তৈরি হয় নান্দনিকতা। সংবেদনশীল কবিমনই কবিতার জন্মভূমি। কবির নিজের মনে শুরু হয় কবিতার ফল্গুধারা, বন্ধনহীন, অনির্দিষ্টভাবে। কবি কবিতাকে খোঁজে জীবনের ভেতর, অসীম প্রকৃতি, স্বপ্ন ও কল্পনার ভেতর। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘ক্ষ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফেরে পরশপাথর।’ কবিমন জীবন ও জগতের সংস্পর্শে এসে ভাবাবেগে স্পন্দিত হয়ে ছন্দিত বাণী বিকশিত করে। কবিতার ছন্দময় শরীরে চরম শৈল্পিক উৎকর্ষতায় কবি কবিতার আত্মা সৃষ্টি করেন। চিত্রকল্প, রূপকল্প, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অলংকার, চৈতন্যে মুগ্ধতার আবেশ ইত্যাদি দিয়ে সাজিয়ে তোলেন দেহসৌষ্ঠব। কবিতা হয়ে ওঠে আলো-আঁধারি। বোঝা না বোঝার রহস্য জাদু প্রতিভাত। যেন শীতের শেষ বিকেলের রোদ, ছুঁতে ছুঁতে না ছোঁয়া। বাঁশের ঝাঁড়ে হঠাৎ ওঠা ক্ষ্যাপা বাতাসের চেনা অথচ অচেনা সুর। সম্বরের পিছু ডাকে দুরন্ত মায়া হরিণীর ত্রস্ত-বিক্ষিপ্ত চকিত মদির চাহনি। ক্রৌঞ্চ-ক্রৌঞ্চি দম্পতির বিরহী আর্তস্বর, বিস্মিত, বিমোহিত আদি কবি বাল্মিকীর কবিতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা।
ড. হুমায়ূন আজাদ বলেছেন, ‘কবিতা বোঝার জিনিস নয়, কবিতা অনুভবের, উপলব্ধির।’ কবিতা দুর্জ্ঞেয় কিন্তু স্বতঃস্ফ‚র্ত প্রণোদনা। বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার, নিজের সঙ্গে অন্যের, বর্তমানের সঙ্গে অবর্তমানের, সমকালের সঙ্গে মহাকালের যোগ যত নিবিড় হয় কবিতা তত মহার্ঘ্য হয়ে ওঠে। কবির বিমূর্ত ভাবনায় কবিতা কখনো শোকাহত হৃদয়ের আর্তনাদ, বেদনাবিধুর কান্না, আবার কখনো অধিকারবঞ্চিত শোষিত, নিপীড়িত মানুষের ধ্বনি এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত সৈনিক। কবিতা এভাবেই কালের প্রতিভ‚ হয়ে এসেছে। হয়ে উঠেছে শাশ্বত। কবির ভাব প্রকাশের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম কবিতা, কেননা এই শিল্পটি নান্দনিকতা ও জীবনমুখিতায় ভরপুর। কবি এর মাধ্যমে বুদ্ধিভিত্তিক স্ফ‚রণ ও মননশীলতার নিখুঁত চিত্রকর্মটি সম্পাদন করতে পারেন।
কবিতার ভেতরে থাকে উন্মাদনা, উত্তেজনা, ভাব-সাধনা। যেকোনো শিল্পের ভাবই প্রধান। কবির কবিতার ছন্দ, বুনন, অলংকরণ, রস ইত্যাদির ভিন্নতা প্রাপ্তি হয় বটে, কিন্তু সংবেদনশীলতা অপূর্ণ থাকে না। ক্ষুণ্ন হয় না শিল্পগুণ। কবিতা বিশুদ্ধ মননচর্চার ফসল। যে ফসলের পরিচর্যা কবি নিরন্তর করেন। তবে কবিতার আত্মা ও শরীরের শৈল্পিক আচ্ছাদনই কবিতার সার্থকতা। কবিতা বহুরৈখিক, সরল একরৈখিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। কবিতা বোদ্ধারা অনেক কথা বলেছেন। কীটস মনে করেন, কবিতা যুদ্ধ করবে তার সূক্ষ্ম অপরিমেয়তায়, ঝংকারে নয়। এমিল ডিকিনসন বলেন, আমি যদি কোনো বই পড়ি এবং যা আমার শরীরকে এত শীতল করে তোলে যে, কোনো আগুনই আমাকে উষ্ণ করতে পারে না। আমি জানি সেটাই কবিতা। কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ কবিতাকে বলেছেন, তীব্র অনুভূতির স্বতঃস্ফ‚র্ত উৎসারণ। বোদলেয়ার কবিতাকেই কবিতার শেষ কথা বলেছেন। তাই কবিতা নিয়ে বলা যায়, ‘বলো বলো তোমার কুশল শুনি, তোমার কুশলে কুশল মানি।’
Sur Vule Jei Ghure Berai - Shankari Daser Kabita Somogro
মৃত্যু এক দারুণ রোমান্স – আসমা সুলতানা শাপলা
মনের গোপন ব্যাথা-বেদনা, শোক ও দ্রোহের বাসনা-সবকিছুকে পিছনে ফিরে দেখলে মনে হতে পারে, কতো মৃত্যুকেই বরণ করে এসেছি! এই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিকে তর্কে আলিঙ্গন করে নয় বরং আত্ম-অভিজ্ঞতার নিরিখে ছন্দবদ্ধ করার যে প্রয়াস- এখানে তার নাম “‘মৃত্যু এক দারুণ রোমান্স।” কবিতা উপভোগের সৌন্দর্য সৃষ্টি করে মাত্র। আসমা সুলতানা শাপলার লেখা সংকলনে প্রেমের এপিঠ ওপিঠ সমান্তরাল। সঙ্গ চাওয়ার মাঝে কন্ঠজুড়ে প্রেমীর নামকে সম্বল করে রাখা আছে, বলা আছে, ভালবাসার দরজা খোলা রেখে দেই। তুমি তুমি তুমি নামে তবু যে প্রেম থেকে গেছে। নিখোঁজ সংবাদ কবিতাটায় আছে, তোমার কোনও খবর নেই, উড়ে গেছো হাওয়ায়? আবার প্রেমই একমাত্র বস্তুজাগতিক না। প্রায়োগিক জীবনরেখায় কঠিন বাস্তবের সামনে কবি আসমা সুলতানা শাপলা পুরাপুরি রাজনৈতিক। সকল অসভ্যতারে মানব আর দানবে চিহ্নায়িত করতে গিয়ে কবি কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানির মরদেহকে স্মরণ করেন। বিপ্লবী হয়ে ওঠেন পুঁজিবাদী দালালির বিরুদ্ধে। কবিতাও শেষপর্যন্ত ভাষা, তবু তাতে সুর আর স্বরের প্রক্ষেপণ মিশিয়ে এ-যাত্রায় পাঠককে কম্পিত করবে প্রেমের সান্নিধ্য, বিচ্ছেদ, অবশিষ্ট পূর্ণতা ও দ্রোহের ভিতর জাগতিক চেতনা। কবিতায় অতিক্রম করে আসা এইসব ঘটনাগুলোকে মৃত্যুর রুমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায় সুখপাঠ্য করা যেতে পারে।
Mrittu Ek Darun Romance - Asma Sultana Shapla
পৃথিবীতে সুন্দর বলে আর কিছুই রবে না – শাহীদ লোটাস
মনে করো আমরা আছি আগের সময়েই !
তুমি আমি অবাস্তব ভালোবাসায়
একবার এক পলক দেখার আশায়
মৃত্যু ও জীবনের মাঝে হেঁটে যাওয়া সুন্দর সময়ে ।
Prithibite Sundar Bole Ar Kichui Robe Na by Shaheed Lotus
করোটিমঞ্চে খেমটাওয়ালি – গৌরাঙ্গ মোহান্ত
প্রতীকাশ্রিত রূপকল্পের ভেতর দিয়ে করোটিমঞ্চে খেমটাওয়ালি অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের কিছু অন্তর্জ্ঞানীয় দৃশ্যকে সাকার করে তুলেছে। এখানে মহেঞ্জোদারো-নর্তকীর নির্মিত ত্রিভুজের ভেতর আঘ্রাত হয় পদ্মসৌরভ, আকাশে বিস্তৃত হয় পদ্মতন্তুর অসীম অংশুজাল, রক্তপদ্মের ছায়ার ভেতর মাছের সংকেতভাষা দীপ্যমান হয়ে ওঠে, জলপুষ্পের ত্রিভুজভ‚মির ভেতর তরঙ্গধ্বনি সংশ্রুত হয়, নির্জন জলদৃশ্যের ভেতর জেগে ওঠে কার্পাস-আচ্ছাদিত পদ্মদল যা কখনো স্বপ্নের ভেতর করতলে আঁকে সাইজমিক ঊর্মিকা; নারকেল বনের এসরাজ আর নিভৃত মাঠ সুষুম্নার ভেতর পার্থিব গান্ধার রচনা করে, অঞ্জন ফুলের অন্তরালে মাঠের রূপান্তরণ সমস্ত সত্তায় শিহরন জাগায়, কখনো নীল পপির গানে কেঁপে ওঠে মাঠ; প্রতিটি চন্দ্রকম্পের পর স্নিগ্ধ-কিরণ অপ্সরা আবির্ভূত হয়; সৈকতচারিণীর সেরিব্রামে কাক্সক্ষা ও শ্রান্তির দ্বৈরথ দৃশ্যমান হয়, গুলাচিনিলীন সৈকতে জলশব্দে খুলে যেতে থাকে সীমান্তের সকল দরজা; আর নীল বরফের নিচে নিস্পন্দ শরীরে শ্রুত হয় মাইক্রোবের গুঞ্জন।
Karotimanche Khemtawali by Gauranga Mohanto
কম্বুরেখপদাবলি – অহ নওরোজ
স¤প্রতি অহ নওরোজের কবিতার এক অনন্য নির্মিতি গড়ে উঠেছে, যা বিষয়কেও করেছে প্রবলভাবে প্রভাবিত; পুনরাবিষ্কারের মধ্য দিয়েই তাই এই কবি ও কবিতার মর্মে আমাদের পৌঁছাতে হবে।
ছন্দ সচেতন এই কবি আধুনিক কবিতার সমস্ত শৈলী নিজের মতো ব্যবহার করেছেন, ফলে কাঠামোগত দিক থেকে তিনি ক্ল্যাসিকও।
অহ নিজেকে ক্রমাগত খুঁড়ে চলেছেন, যদিও সেই লক্ষ্যমুখ আমাদের অজ্ঞাত, কিন্তু টের পাই কোথাও নিভৃতে গড়ে উঠেছে মাতৃভ‚মি ও পরবাসের মেটাফরজনিত দ্বৈরথ। তিনি জানেন কবির ফেরা বলে কিছু নেই, বৃত্তাকার পৃথিবীর পৃষ্ঠই তার দিশা ও বিদিশার পান্থশালা। ফলে তার চৈতন্য সৌন্দর্য ও শূন্যতায় ভরপুর।
কিন্তু এই কবিতা ঠিক কবিতা নয়, কবিতারও অধিক কিছু; যা অনতি তরুণদের কাছে হবে অননুকরণীয় আর পুরোনো আধেয়র জন্য হবে গ্রহণে অক্ষম।
-জাহিদ সোহাগ, কবি
Komburekhpadabali (Verses of Helix) by Aho Nouroz
একটি মৃত্যু এবং – ডালিয়া চৌধুরী
বৃত্তের বাইরে কিছুই হলো না,
অতীত বিচ্ছুরিত রশ্মি
বিগত পাণ্ডুলিপির উন্মোচনে
বর্ণমালা পুড়ে আগুন আয়োজনে
বিষাদ লেগে থাকে চোখে।
দূরের কিছু মেঘ ঝলকে উঠে
বলে, রোদ আছে অদূরে
অনেক শূন্যতা আকাশ হয়ে
ছড়িয়ে পড়ে বুকের পাঁজরে।
বৃত্তের বাইরে হাত বাড়াই
বিষাদ লেগে থাকে নখে।
Ekti Mrittu Ebong by Dalia Chowdhury
আমি তার উপেক্ষার ভাষা – ইভান অনিরুদ্ধ
তোর সাথে কথার তসবিহ আর জপবো না
তাই কুফুরি-কালাম দিয়ে তাবিজ করে
বড় হুজুরের পানিপড়া এনে,
উতার পানি ছিটিয়ে দিয়ে
তোর দেহমনের বাইরাগ, চৌকাঠ, উষারা
সব বেঁধে দেব।
তুই কোথাও যেতে পারবি না আমাকে ছেড়ে
অন্য কাউকে প্রেমিকের মতো আসতেও
দেব না তোর চৌহদ্দিতে।
তুই হবি আমার সর্বনাশের ফুলতোলা রুমাল
আমিও হব তোর দু:খনাশী কৃষ্ণচূড়ার ডাল!
Ami Tar Upekkhar Vasha
সুতরাং দীর্ঘশ্বাস – আদ্যনাথ ঘোষ
কবিতার স্বরের পরিবর্তন যেকোনো কবির ক্ষেত্রেই আলাদা মূল্যায়নের দাবি রাখে। একুশ শতকে দাঁড়িয়ে উত্তরাধুনিক যুগে কবি আদ্যনাথ ঘোষের কবিতায় আলাদা স্বরের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে কবিতার ক্ষেত্রে এ কবি ইতোমধ্যে পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। কবিতায় তিনি পরাবাস্তবতা, ঘোর, আলো-আঁধারীর খেলায় পাঠক-সমাজকে ভাববিহ্বলতায় এক সত্যানুসন্ধানের অন্তরে ধাবিত করেন। তাঁর কবিতায় ইমেজ, রূপবৈচিত্র্য, সতন্ত্রতা, ভাব, প্রকৃতি, অলংকার, উপমা সবকিছুই আলাদা। তিনি কবিতাকে সাজিয়েছেন রূপের ডালায়। আমি মনে করি আদ্যনাথ ঘোষ কবিতার নিসর্গ, কবিতার স্বরূপ, নান্দনিকতা বুঝেশুনেই কবিতার সঙ্গে ঘর-গৃহস্থালি সাজিয়েছেন। তাঁর কবিতার রূপময়তায় পাঠক সমাজ হয়ে উঠুক চিরসবুজ।
প্রকাশক
Sutorong Dirghosash - A collection of poem by Adyonath Ghosh
প্রিয় অমলতাস – মুর্শিদা জামান
‘গোপনে যে আগুনে পুড়ি
সেখানে ক্যাথেড্রাল তুমি’
অথবা
‘তিন জোড়া ক্লান্ত পা, নিয়েছে বিশ্রাম।
তবু উলটে থাকে চোরা সেলাই
খুলে দেয় নগর বন্দর গ্রাম।’
প্রিয় অমলতাস, কবি মুর্শিদা জামানের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। অমলতাস, সোনালু ফুলের সংস্কৃত নাম, ইংরেজিতে যা গোল্ডেন শাওয়ার। নামের সাথে সাথে কবিতাগুলোও নানা বৈচিত্রবার্তা ও মন-মিশ্রণের সংযোগ ঘটিয়েছে। ভাবনার জগতকে ভিন্নমাত্রার ভাব যোগান দিয়ে, নতুন ভঙ্গিতে পরিচিত করে তুলেছে চিরন্তন চেনা দৃশ্য। তাই, কবিতাগুলো পড়তে গেলে নতুন পোশাকের ভাঁজ-ভাঙা শব্দ শুনতে পাই। যে-শব্দ অনেক পরিচিত হয়েও পরিচিত নয়। নিরুত্তাপ উত্তাপের ডানা মেলার গন্ধ, ভালোবাসার পরিধিতে হৃদযোগের তপ্ত-যাত্রা, সব মিলিয়ে নাগরিক ঊর্ধ্বশ্বাসের অবিমিশ্র ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পেলাম মুর্শিদা জামানের ‘প্রিয় অমলতাস’-এর কবিতায়।
আশা করি নতুন হাতে, নতুন করে কবিতার স্বাদ, পাঠককে মশগুল করবে নিঃসন্দেহে। বইটির সাফল্য ও পাঠক প্রিয়তা কামনা করছি।
ফেরদৌস নাহার
(কবি ও প্রাবন্ধিক)
Priyo Amoltas by Murshida Zaman
মাথার এপ্রোন – সানাউল্লাহ সাগর
সৌন্দর্য আশ্রিত ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী চেতনার মানবিক স্বাধীনতার নাম রোমান্টিসিজম। যেখানে ক্রিয়াশীল থাকে উদ্বেগ ও ভয় : সেইসাথে অসম্ভবের গোয়ার্তুমি : একাধারে মনোরোগ ও প্রশান্তি। এই মনোরোগ আর প্রশান্তির নাম ‘মাথার এপ্রোন’- যে এপ্রোন নিজেই নিজের সাথে কথা বলছে স্বন্মোচিত আবেগ আর স্বগতকথনের আড়াল থেকে। প্রকৃত প্রস্তাবে এইগুলান হইল সানাউল্লাহ সাগরের ভাষিক ‘প্ররোচনা’ : এমনকি ইহা হয় ‘প্যারাডক্স’ : এইগুলান বাদ দিয়া একজন জন্মজাত কবি স্ফূর্তি লাভ করতে পারে না : পারে না রাজকীয় নকশার আড়ালে আউশের বাক্য গুছিয়ে নিয়ে হাতে হাতে কৈশোর বিলানো ব্যথা উচ্চারণ করতে।
‘ওই যে এপ্রোনগার্ল
তার চশমা
ওখানে ঢেউ জমা রেখেছ
– এই জমা রাখা ঢেউয়ের মর্মপাঠই তার কবিতা : যাকে ঠিক ভাষার ভিতর আটকিয়ে রাখা যায় না : যা এতটাই সূক্ষ্ম প্ররোচনা যে যাকে চিন্তা ও শব্দ দিয়ে ধরতে গেলে ফাঁক ফোকর গলে পালিয়ে যায়। ভাষা-অতিরিক্ত এই পালিয়ে যাওয়া অনুভবের প্রিফেক্স ‘মাথার এপ্রোন’।
শিমুল মাহমুদ
Mathar Apron by Sanaullah Sagor