সীমান্তের দুই পারে – মো. রেজাউল করিম
১৯৪৭ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয় ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করার মধ্য দিয়ে। অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও সত্য যে ব্রিটিশরাজ ভারতকে হিন্দু সংখ্যা-প্রধান ও মুসলমান সংখ্যা-প্রধান হিসেবে দুটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যায়। এ-সময় বাংলার কিছু নেতা বাংলাকেও ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে সচেষ্ট হয়। ১৯০৫ সালে যে সব দল ও নেতা ব্রিটিশ কর্তৃক বাংলা বিভাগের বিরোধিতা করেন, তারাই ভারতের স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাংলা বিভাগে সচেষ্ট হয়। কেননা তাঁদের বিশ্লেষণ ছিল এমন যে, বাংলা প্রদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও সংখ্যাধিক্যের জন্য মুসলমানরাই বাংলাকে শাসন করবে। যে-কারণে তাদের নেতৃবৃন্দ বাংলার একাংশ, মূলত পশ্চিমবঙ্গকে হিন্দু ধর্ম-প্রধান ভারতের অঙ্গীভূত করতে চায়। ১৯৪৬ সাল থেকেই শুরু হয় উত্তেজনা।
১৯৪৬ সালে কলকাতায় হয় মহাদাঙ্গা, যা ইতিহাসে ‘দ্য গ্রেট কিলিং’ নামে অভিহিত হয়েছে। কলকাতা দাঙ্গাই বাংলাভাগের মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই মনে করতে থাকে ভাংলা ভাগেই রয়েছে সমাধান।
ব্রিটিশরাজও রাজি হয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গ ভারতে এবং পূর্ব-বাংলা হয় পাকিস্তানের প্রদেশ। উভয় বাংলা থেকেই মানুষের দেশান্তর চলতে থাকে; যা ’৪৬ সালে শুরু হয়ে ষাটের দশক পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। একটি প্রদেশ যখন ভাগ হয় এবং দুই অংশ দুই দেশের অংশ হয়ে যায়, মানুষ তখন উভয় প্রদেশের মানুষ এক অংশ ত্যাগ করে অপর অংশে গমণ করে; তখন তাদের পরিচয় হয় ‘শরণার্থী’। এক দেশের মানুষ অন্য দেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস জন্য আবাসন, কর্মসংস্থান, লেখাপড়া, মোট কথা জীবনের সর্বক্ষেত্রে নেমে আসে চূড়ান্ত অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা।
বাংলা ভাগ নিয়ে ‘৪৬ এর ১৫ই আগস্ট থেকে ’৪৭ এর পুরো আগস্ট জুড়ে ঘটতে থাকে একটার পর একটা ঘটনা। হিন্দু-মুসলমান প্রায় সমান হওয়ার কারণে সেখানে গণভোট হলো। গণভোটে সিলেটবাসী পাকিস্তানে যোগদানের ইচ্ছা পোষণ করলেও মুসলিমপ্রধান করিমগঞ্জ মহকুমায় ১৪ই আগস্ট থেকে পাকিস্তানী পতাকা উড়লেও ৭দিন পরে মহকুমাটি কেন, কিভাবে ভারতের অন্তভর্ভূক্ত হলো? মুসলিমপ্রধান মুর্শিদাবাদ ও মালদা কেন, কিভাবে ভারতের অন্তর্ভূক্ত হলো?
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আবুল ফয়েজ, যার বাড়ি বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদ। ১৯৪৬ সালের আগস্টে সে পড়াশোনা করত কলকাতা মেডিকেলের প্রথম বর্ষে। তরুন ফয়েজ দাঙ্গার সম্ভাবনা আঁচ করতে পারেনি। দাঙ্গা হতে যাচ্ছে সে বুঝতে পারে ১৫ই আগস্ট যখন কলকাতা শহরে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে কোনোক্রমে আশ্রয় নেয় মুসলিম ছাত্রাবাস- বেকার হোস্টেলে। দাঙ্গা থামলে বহরমপুরে গিয়ে জানতে পারে জলঙ্গিতে তাদের আদি পৈত্রিক নিবাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তার বাবার জমি দখল হয়ে গিয়েছে। বহরমপুরেও তার জীবনাশংকা দেখা দিলে রাজশাহীতে চাচার বাসায় চলে আসে। তিন মাস পরে কলকাতায় ফিরে জানতে পারে দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারণে তাকে ক্লাস করার সুযোগ দেয়া হবে না। বহরমপুরেও বসবাস কঠিন হয়ে উঠলে রাজশাহীতে গিয়ে দুই বছর মেয়াদী গ্রাজুয়েশানে ভর্তি হয়। লেখাপড়া শেষে চাকরি নেয় কুষ্টিয়াতে। দুই বোনকে পর্যায়ক্রমে এদেশ নিয়ে আসে। তার মা আসতে চাইলেও সরকারি চাকুরে বাবা আসতে চায় না; উপরন্তু তার বাবা হারানো জমি উদ্ধারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এরই মধ্যে পদ্মার পানিপ্রবাহের মতো জীবনপ্রবাহও বইতে থাকে- ঘটতে একের পর এক ঘটনা। বাংলা বিভাগের সাথে সাথে ফয়েজের পরিবারও দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ে। ইতিহাসের প্রেক্ষিতে উপন্যাস লেখার কষ্টকর দিক হচ্ছে উপন্যাসের চরিত্রসমূহকে ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্তকরণ। ‘সীমান্তের দুই পারে’ সেই কাজটিই সম্পন্ন হয়েছে দক্ষতার সাথে। রাজনৈতিক ঘটনাক্রম ফয়েজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনকে কিভাবে পর্যুদস্ত করে তুলল তার নির্মম অথচ নির্মোহ বয়ান লেখক উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। পরিশেষে ফয়েজের পরিবার মর্মান্তিক পরিস্থিতির শিকার হয়।
Sheemanter Dui Paree by Md. Rezaul Karim
Muktijuddher Nirbachita Golpo by Shahab Uddin Hizol
পাঠ শেষে কবি – পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
কবিতা এক নান্দনিক শিল্প। কবিতা ইশারা ভাষায় ব্যক্তির চিন্তা ও মননকে ঋদ্ধ করে তোলে। কোন কবিতার নিবিড় পাঠেও সম্পূর্ণ মর্মোদ্ধার যেমন সম্ভব নয়, তেমনি পাঠ প্রতিক্রিয়াহীন কবিতাও জগতে বিরল। কবিতা বুদ্ধিমান ব্যক্তির ভাবনার জগতকে যেমন প্রসারিত করে তেমনি কবিতা মননশীল ব্যক্তির জন্যে অমূল্য বিনোদনেরও উৎস হয়ে দাঁড়ায়। কবিতা পাঠককে কল্পনা ও বাস্তবতার জগতে ভ্রমণ করিয়ে আনে স্বল্প সময়ের যাত্রায়। কবিতার মধ্য দিয়ে কবি যেমন পাঠকের কাছে উন্মোচিত হন, তেমনি সময়ও অনাবৃত হয়ে ওঠে কবিতার নিবিড় পাঠ ও পরাপাঠে। কবিকে পাঠ করে, কবিতাকে পাঠ করে তার অর্জিত প্রতিক্রিয়ার নির্যাসটুকু ভবিষ্যতের জন্যে অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে দাঁড়ায়। কেননা ভবিষ্যতে এই পাঠ প্রতিক্রিয়াই অনাগত পাঠকের কাছে কবি ও কবিতাকে কালজয়ী করে তোলে
Path Sheshe Kabi by Pijush Kanti Barua
টুলুর মুক্তিযুদ্ধ – শানু মজুমদার
কৃষ্ণপক্ষ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। এবার রেজ্জাক আলী হাতে একটা রাইফেল তুলে নিলো। নতুন রাইফেল। চাইনিজ রাইফেল। এর ধাতব অংশগুলো চক চক করছে। মনে হচ্ছে ম্যাগজিন ভরা গুলি।
রাজ্জাক আলী টুলুর দিকে রাইফেল তাক করে ধরে আছে। বারবার দমক দিয়ে মুক্তি বাহিনীর কথা জানতে চাইছে। টুলু নির্বিকার। সে একটুও ভয় পাচ্ছে না।সে অপলক দৃষ্টিতে রেজ্জাকের হাতের রাইফেলের দিকে তাকিয়ে আছে। তার ভীষণ পানি পিপাসা লেগেছে।
রেজ্জাক আলী আর দেরি করল না। শক্তভাবে ট্রিগার চেপে ধরল। রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে দিয়ে রাইফেলের গুলি টুলুর বুকটা ঝাঝরা করে দিলো। টুলুর মাথাটা বুকের কাছে ঝুলে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর দুজন রাজাকার টুলুর মৃতদেহখানার বাঁধন খুলে নিয়ে পানিতে ফেলে দিলো। প্রায় সাত দিন মৃতদেহখানা কৈবল্যধামের আশপাশেই ভেসে ছিলো। তার ছোটো শরীরখানা নিয়ে কবরস্থ করার সাহস কারো হয়নি।
টুলুকে আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার বয়স তখন মাত্র দশ বছর। টুলু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তার বয়স হতো ষাট বছর।
শহর বানু এখনও বেঁচে আছেন। তার আরও দুটি ছেলে আছে। তারা বিয়ে থা করেছে। তাদের ছেলেপিলে আছে। কিন্তু শহর বানুর স্মৃতির উঠোনে টুলু আজও হাফ প্যান্ট পরে ঘুরেফিরে আসে।
Tulur Muktijuddho by Shanu Majumder
তিন হাজার সোনার মোহর – আনসার উদ্দিন আহমেদ
শিশুদের জন্য সহজ সরল ভাষায় লেখা বিভিন্ন দেশ ও জাতির ১০ টি রূপকথা উপকথা শ্রেণির গল্প রয়েছে বইটিতে। ‘তিন হাজার সোনার মোহর’ গল্পে পারস্য দেশের এক গরীব জেলের বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে পারস্যের শাহ খসরু তিন হাজার সোনার মোহর জেলেকে পুরস্কৃত করেন।
‘ মায়ের হাসি’ আফ্রিকার এবং ‘সারসের পা কেন লম্বা’ উত্তর আমেরিকার উপকথা। ‘স্কীর গল্প’ ফিনল্যান্ডের উপকথা। ‘এক যে ছিল ডাইনী’ গল্পে দুষ্টু শীত বুড়িকে পরাজিত করে প্রকৃতিতে বসন্ত আগমনের গল্প। ‘হাতি কি বোকা’ এক চালাক খরগোসের কাছে এক দুষ্টু হাতির পরাজয়ের গল্প। ‘সমুদ্রের পানি লোনা কেন’ হিংসা ও লোভীর পরিণতি যে ভালো হয় না, এ তারই গল্প। কাজ না করে সারাদিন মজা করে বেড়ালে তার ভবিষ্যৎ যে ভালো হয় না ‘কুটুসের গান’ পড়ে তোমরা তা বুঝতে পারবে। আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে একটি বাসের আত্মত্যাগের গল্প ‘একটি বাস ও শিপুর গল্প’। প্রতিটি গল্পে শিক্ষনীয় বার্তা আছে, যা শিশুদের মানবিক গুণ বিকশিত হতে সহায়তা করবে।
Teen Hajar Sonar Mohor by Ansar Uddin Ahmed
উদ্বাস্তু – আব্দুল মান্নান সরকার
হরিজন বা ধাঙর সম্প্রদায়ের জীবন ও সমাজবাস্তবতা নিয়ে এই উপন্যাসটি লেখা। দলিত শ্রেণির এই মানুষগুলোর জীবন, আশা-আকাক্সক্ষা, সুখ-দুঃখ যথাসম্ভব বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ধাঙরেরা সমাজে শুধু অবহেলিত নয়, বলা যায় মানুষ হিসেবে এদের সামান্য স্বীকৃতিটুকু পর্যন্ত নেই। সব দিক থেকে এরা বঞ্চিত। অবিভক্ত ভারতের কোনো এক প্রদেশ থেকে এরা উদ্বাস্তু বা শেকড়হীন হয়ে এসেছিল। আজও তারা কোথাও শেকড় গাড়তে পারে নাই অর্থাৎ সেই উদ্বাস্তুই রয়ে গেছে। ইংরেজগণ এদের অতি কৌশলে নানারূপ প্রলোভন দেখিয়ে পয়ঃপরিষ্কার, চা বাগানে কাজ করার জন্য নিয়ে আসে। কবে এদের দলিত নাম দিয়ে উচ্চবর্গের মানুষেরা তাদের মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল তা বলা মুশকিল। এই গ্রন্থে যে কাহিনির মধ্য দিয়ে ধাঙর সমাজের অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে তা একটি মিলের ধাঙর কলোনির ঘটনা। যদিও আজ আর সেই মিল নেই, সেই ধাঙর কলোনি নেই। উপন্যাসের চরিত্রগুলোও হয়তো-বা বেঁচে নেই। এক সময় লেখকের এই গ্রন্থভুক্ত কয়েকটি চরিত্রের সাথে পরিচয় ছিল। তাদের জীবনের সেই ঘটনার মধ্য দিয়ে ধাঙর সমাজের অবস্থান, আর্থ-সামাজিক অবস্থা অনেকটাই উপলব্ধি করা যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
Udbastu by Abdul Mannan Sarker
প্রেম এসেছিল – সন্তোষ কুমার শীল
মানুষ নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলার মতো একটামাত্র হৃদয়ৈশ্বর্য আছে- তা হলো প্রেম। প্রেম জীবনকে করেছে মহিমান্বিত, সৃষ্টিকে করেছে সুন্দর। প্রেমহীন সবকিছু নিরর্থক, মিছে। কিন্তু পৃথিবীতে প্রেম বড়োই দুর্লভ। কখন চুপিসারে আসে, আবার চকিতে মিলিয়ে যায়। অনুভব করার আগেই জীবন জুড়ে জেগে ওঠে বিশাল শূন্যতা। রাজীবের জীবনেও প্রেম এসেছিল। রুবীকে ভালোবেসেছিল মনপ্রাণ দিয়ে। কিন্তু প্রেমহীনতার মরুপথে তার ধারাটি শুকিয়ে যায়। তারপর শূন্য জীবন সে বয়ে চলছিল এক রকম। রুবীর সাথে পুনরার দেখা হওয়ায় সেখানেও বেজে ওঠে ভাঙনের গান। অতঃপর দুজনের দুর্বার জীবন কেমন করে কাটবে!
শিরোনামের এই গল্পটির আখ্যান বাদে অন্য গল্পগুলোতেও প্রেমহীন সমাজচিত্রের ছবি চিত্রিত হয়েছে। মহার্ঘ্য যা কিছু তা হৃদয়ে লালন করতে হয়, অনুশীলন করতে হয়। কিন্তু আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রে কোথাও প্রেম-ভালোবাসার চর্চা নেই। তাই মানুষ অপ্রেমেই জীবন কাটায়। সেখানে যদি গল্প-পাঠকের অন্তর প্রেমে ঋদ্ধ হয়ে ওঠে তবেই সার্থকতা।
Prem Esechilo by Santosh Kumar Shill
শবনম – সায়লা সুলতানা লাকী
শবনম এতক্ষণ বেশ মজা নিয়েই এসব উপভোগ করছিল কিন্তু এখন যেই শুনতে পেল ওর বর দাঁড়িয়ে আছে বাহিরে ওর জন্য, এখন ওকে যেতে হবে তার কাছে। তখনই ভেতরে কেমন এক চাপা উত্তেজনা কাজ করতে শুরু হল এই স্বামী নামক মানুষটাকে দেখার জন্য। এখনও দেখেনি মানুষটা কেমন, জানেও না তার আচার-আচরণ সম্পর্কে। অথচ বাবা মা কীভাবে হাত পা বেঁধে উঠিয়ে দিল পালকিতে। বাড়ি থেকে বের করে দিল সারা জীবনের জন্য। ওই বাড়ি থেকে এই পর্যন্ত যতজন মেয়ে ওই পালকিতে চড়ে বের হয়েছে তারা আর কেউ কোনো দিন ফেরেনি আপনালয়ে। যে যায় সে মনে হয় সব বাঁধন ছিন্ন করেই যায়। কিন্তু শবনম তো কারো সাথে কোন বাঁধনই ছিন্ন করে আসেনি, তবে কী ও আর কখনও ফিরতে পারবে ওর নিজের আপনালয়ে?
এসব আবোলতাবোলই ভাবছিল আর তখনই একজন এসে ওর হাত ধরে টেনে ঘর থেকে বের করে নিল।
শবনম একবার মুখ ফোটে বলতে চেয়েছিল “আস্তে টানেন আমি তো শাড়িতে পা বাজাইয়া পইড়া যামু।”
কিন্তু না, কেন জানি কিছুই বলতে পারল না। তার আগেই দুলাল এসে পাশে দাঁড়াল
“ভাবি সাব আর কষ্ট করতে হইব না, অহন আমি পারমু। আহো শবনম, আহো। তুমি আমার পিছন পিছন আহো। বলেই কুপিটা এগিয়ে ধরে পথ দেখাতে লাগল।শবনম কী বলবে তা বুঝতে পারল না, শুধু চুপচাপ দুলালের পেছন পেছন হেঁটে এগিয়ে গেল নিজের ঘরে……..
এরপর কী ঘটেছিল শবনমের জীবনে? দুলাল কী ওর পুরো জীবনটাতেই আলো জ্বেলে পথ দেখাতে পেরেছিল এই কিশোরী মেয়েটিকে ? না কি……..
Shabnam by Shayla Sultana Lucky
পচা কস্তরির মৃগনাভি ঘ্রাণ – স.ম. শামসুল আলম
সুরতালির মা চমকে উঠল টর্চের আলোয়। এই টর্চ মারা তার পরিচিত। বহুদিন এটা নিয়ে পবনার সাথে কথা হয়েছে। এভাবে টর্চ মারা ঠিক নয়। তখন পবনার বয়স ছিল ত্রিশ-বত্রিশ। এখন পঞ্চাশোর্ধ। এই লোকটি আজ তার কাছে নয়, তার মেয়ের কাছে এসেছে। অদ্ভুত দুনিয়া! সুরতালির মা কুঁকড়ে ওঠে। কিন্তু কিছু বলার নেই। কেননা আজ তার গায়ে কোনো শক্তি নেই। শয্যাশায়ী। কতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে, জানা নেই। চোখ দুটোকে শক্ত করে ঢেকে ফেলে সুরতালির মা।
Pocha Kostorir Mrigonavi Ghran by S.M. Shamsul Alam
মুনশি প্রেমচাঁদ : নির্বাচিত ১০টি গল্প – এহছানুল মালিকী
গল্প মানবজীবনের প্রতিফলিত প্রতিবিম্ব। বিন্দুর ক্যানভাসে গল্পের কলকবজায় গল্পকার তুলে আনেন জীবনের বিচিত্র রূপ ও রূপান্তর। উর্দু ছোটোগল্পে মুনশি প্রেমচাঁদ ছিলেন স্থপতি পুরুষ বা যুগ প্রবর্তক। সামাজিক, রাজনৈতিক, মনস্তাত্তি¡ক, ঐতিহাসিক প্রায় সব ধরণের গল্পই লিখেছেন তিনি। প্রেমচাঁদের এই বইয়ের গল্পগুলোতে প্রতিফলিত হয়েছে স্বদেশের প্রতি প্রেম, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর লাঞ্ছনা, সামন্ততান্ত্রিক সমাজে কৃষিজীবি, শ্রমজীবি মানুষের শোষণ ক্লিষ্ট জীবনের ছবি, সাধারনের প্রতি ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের ভয়ংকর জুলুম এবং সেই সঙ্গে নিম্নবিত্ত, নিম্নবর্ণ শ্রমজীবি মানুষের জীবন সংগ্রাম ও সামাজিক আর্থিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অনন্য ছবি। “মুনশি প্রেমচাঁদ নির্বাচিত ১০টি গল্প” বইয়ের কালজয়ী গল্পগুলো ভাষান্তর করে বাঙালী পাঠক সমাজে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনুবাদক এহছানুল মালিকী খুব যত্ন করে ও আন্তরিকতার সাথে অনুবাদ সম্পন্ন করেছেন। পাঠক প্রেমচাঁদকে নতুন রূপে আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন এই বইয়ের গল্পগুলো পাঠ করে।
অনুবাদকের কথা : মুনশি প্রেমচাঁদ উর্দু সাহিত্যের এক কিংবদন্তি ছোটোগল্পকার। তার কলম চলেছে হিন্দি, উর্দু উভয় ভাষাতেই। প্রেমচাঁদ ছিলেন একান্নবর্তী পরিবারের প্রবক্তা। এই একান্নবর্তী পরিবারই ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। আর একে কেন্দ্র করেই ছোটোগল্প ও উপন্যাস রচনায় একটি আদর্শ রূপ দাঁড় করিয়েছিলেন প্রেমচাঁদ।
মুনশি প্রেমচাঁদ সমাজের বঞ্চিত মানুষের না বলা কথাগুলো তাঁর কলমে লিপিবদ্ধ করেন। তাঁর গল্পগুলো পড়লে পাঠকের চোখে ভেসে উঠে জমিদার কর্তৃক কৃষকের শেষ রক্তটুকু শোষণ, মহাজন বা সুদি ব্যবসায়ী কর্তৃক দরিদ্র জনবলকে উচ্চহারে সুদ দিয়ে তাকে সর্বস্বান্ত করে দেয়া। মহাজন থেকে পিতা সুদে টাকা গ্রহণ করে, যা সুদে আসলে ছেলে পর্যন্ত গড়ায়। তবুও তা শেষ করতে পারে না, যা পরবর্তী বংশধর পর্যন্ত বর্তায়। প্রাক ঐতিহাসিক যুগে নারীদের যেমন কোনো মূল্য ছিল না তেমনি আঠারো শতকে সমাজে নারীরা ছিল উপেক্ষিত। না ছিল বাবা-মার কাছে সম্মান, না ভাই-বোন, না শ্বশুর-শাশুড়ি, না স্বামী-সন্তানের কাছে, আর না সমাজে বসবাসরত আধুনিক মানব সমাজে। শুধু মহাজন, কৃষক বা নারীকে নিয়েই নয়, তিনি মসজিদ-মন্দির, পশু-পাখি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অচ্ছুতবর্গ সহ নানান বিষয় নিয়ে গল্প লিখেছেন।
‘‘মুনশি প্রেমচাঁদ নির্বাচিত ১০টি গল্প” বইটিতে প্রেমচাঁদের বিভিন্ন গল্প সংকলন থেকে নেয়া হয়েছে এ গল্পগুলো। বইটি অনুবাদ করার ক্ষেত্রে বাঙালী মনন, চিন্তার ও রুচির উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের যে সমাজব্যবস্থা সে সমাজের সাথে মিল রেখে ১০টি গল্প বেছে নেয়া হয়েছে। তবে তার গল্পে এমন কিছু স্থানীয় শব্দ ব্যবহার হয়েছে সে গুলোর অর্থ উদ্ধার করা অনেক দুঃসাধ্য ছিল। সামগ্রিক ভাবে বাঙালী পাঠকদের জন্য বইটি সহজ ভাষায় অনুবাদ করতে চেষ্টা করেছি। পাঠক বইটি পড়লেই উপলব্ধি করবে গল্পগুলো যেনো আজও জীবন্ত, যা সমাজ জীবনের অনুভূতি আজকের জীবনেও বর্তমান। যদি আমার এ অনুবাদের মাধ্যমে বাঙালী পাঠক সমাজ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়, অনুবাদক হিসেবে সেখানেই আমার সার্থকতা।
এহছানুল মালিকী
Munshi Premchand : Nirbachita 10 golpo by Ehsanul Maliki
দর্পণ – অনুবাদ : আসাদ মিরণ মূল : এদুয়ার্দো গালেয়ানো
স্প্যানিশে Historia শব্দটি যেমন ‘ইতিহাস’ অর্থে ব্যবহৃত হয়, তেমনি ‘গল্প’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যদিও শাস্ত্রীয় বিচারে এ দুয়ের পার্থক্য সত্য ও মিথ্যার মতোই পরস্পর-বিরোধী। কিন্তু লাতিন আমেরিকান লেখকরা, বিশেষ করে কথাসাহিত্যিকরাই এই দুইয়ের ভেদরেখা বা পরস্পরবিরোধিতাকে কখনো কখনো এতটাই মুছে দিয়েছেন যে তা পড়তে গিয়ে মনে হবে ইতিহাস ও গল্প যেন সহোদরা। আর এই কারণে লাতিন আমেরিকান কোনো লেখকের গল্প বা আখ্যানগুলো ইতিহাস হয়ে ওঠার শোরগোল তুলে বৈষম্যবিরোধী পাঠকের ইতিহাসপাঠের ক্ষুধা মেটায়। কিন্তু বিপরীতে ঐতিহাসিকরা ওই রকম কিছু করেছেন কখনো? করাটাই ছিল স্বাভাবিক, কিন্তু এদুয়োর্দো গালেয়ানো আসার আগে পর্যন্ত কখনোই তা ঘটতে দেখা যায়নি। গালেয়ানো মূলত ঐতিহাসিক। অসামান্য সব ইতিহাস গ্রন্থের জনক। এক একটি গ্রন্থে তিনি ইতিহাসের শিরা-উপশিরা উন্মোচন করে দেখিয়েছেন মানুষের রক্তের ক্রন্দন। পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণী শক্তিতে তিনি অসামান্য এক ইতিহাসবিদ হলেও, The Mirror নামক বইটি লেখার আগে পর্যন্ত ইতিহাসের ঘটনাকে গল্পে রূপান্তরিত করার সৃজনী পরীক্ষা তিনি করেননি। বইটি একই সঙ্গে যেমন ইতিহাসের, তেমনি গল্পেরও। গল্প ও ইতিহাস এমন এক সঙ্গমে রঙিন হয়ে উঠেছে যা পাঠবিমুখ পাঠককেও উজ্জীবিত করে তোলে। এই গ্রন্থের আরও একটি বড় আকর্ষণ এর বৈশ্বিক পরিসর আর সর্বজনীনতা, কিন্তু গালেয়ানোর শৈল্পিক মিতভাষিতায় তা হয়ে উঠেছে বহনযোগ্য এক দর্পণের মতো, যেখানে যেকোনো কাল, যেকোনো জাতি, এমনকি ইতিহাস-বঞ্চিত অজ্ঞাতকুলশীল ব্যক্তিও তার নিজের চেহারা দেখে নিজেকে চিনে নিতে পারবে। এটি এমনই এক দর্পণ যেখানে পৃথিবীর অন্য সব মহাদেশের মতো আমাদের এই উপমহাদেশ, এমনকি রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের ঘটনাও প্রতিফলিত হয়েছে ঐতিহাসিক নিষ্ঠায় আর সাহিত্যিক সুজনশীলতায়। অমূল্য হীরকখণ্ডের এই লোভনীয় ভার পাঠকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বিশ্বস্ত বাংলা তর্জমায় আসাদ মিরণ।
Dorpon (Mirror) by Eduardo Galeano. Translated by Asad Miron
বিষণ্ন দ্বীপের মানুষ – সাইফুল কামাল
সাইফুল কামালের এই বইটি সামাজিক রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত সংকটের একটি তীব্র বিশ্লেষণ। শুধু নিয়মকানুন জানলেই কবি হওয়া যায় না- নিজস্ব বোধের ব্যাপার-স্যাপার থাকতে হয়। নিভৃতচারী ও প্রচারবিমুখ এই কবি, তার বোধের বিষয়গুলো অন্তরের গভীরে লালন করেন। কবির অন্তর্দৃষ্টি ভাষার শক্তি, কবিতার গঠন একদিকে সামাজিক অবস্থার প্রতি সমালোচনা অন্যদিকে ব্যক্তিগত কষ্টের প্রকাশ। যা অনেকটাই গভীর এবং সূক্ষ্ণভাবে চিন্তার উদ্রেক করে। সেই সাথে প্রেম তথা যৌবনের দুরন্তপনাও দেখার মতো যা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। দ্রোহের এই কবিকে কীভাবে বললে বা লিখলে তার উপর্যুক্ত মর্যাদা বা কবিত্বের পূর্ণতা তুলে ধরা যেতে পারে সেটা আমার জানা নেই। শুধু জানি তার কবিতার প্রকাশভঙ্গি পাঠককে প্রবলভাবে আকর্ষণ করবে। আমার বিশ্বাস তার এই কাব্যগ্রন্থ মানুষের মনকে স্পর্শ করবে এবং সমাজের বিভিন্ন আলোচনার সূচনা ঘটাবে। তার কাব্যিক অন্বেষণ আমাদের সকলের মাঝে সোনালি আলোর প্রসন্নতা ছড়াক।
মোখলেস মুকুল
কথাসাহিত্যিক
Bishonno Diper Manush by Saiful Kamal