Additional information
Weight | 0.220 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.13 $ 1.88
দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী রমণীদের বসবাস এখানে। ওই সুন্দরীদের রূপের সাথে পাল্লা দেয় যৌবন আর যৌবনের সাথে পাল্লা দেয় রূপ কিন্তু সেটা এক রক্ত নহর বহা একনগরী… স্ত্রীর জন্য ৭ পুরের (গ্রামের) জল ও মাটি সংগ্রহ করে পুব্যা এক যুবক। তবে শর্ত ছিল পথিমধ্যে কারো সাথে কথা-টথা বলতে পারবে না সে। যুবকটি কেন বলছে, হায় নারী! হায় স্ত্রী আমার! তুমি আমার অর্ধেক নও, তুমি আমার পুরো পৃথিবী… এরকম অসংখ্য মজাদার কথামালায় রচিত এই দুই প্রহরের প্রেম ও বিপরীত যাত্রা উপন্যাসটি। শরীফ শামিলের লেখনী শক্তি ও কল্পনা শক্তি প্রশংসার দাবি রাখে। তাঁর প্রথম উপন্যাস দীর্ঘ রাত্রির বিরুদ্ধে জেগে থাকা এর ব্যাপারে লিখেছিলাম, ওটি বাংলা উপন্যাসে এক নতুন সংযোজন। আর এ ‘দুই প্রহরের প্রেম ও বিপরীত যাত্রা’ উপন্যাসটি বাংলা উপন্যাসে আরেক (সম্পূর্ণ) নতুন সংযোজন।
আবু এম ইউসুফ
প্রকাশক
Weight | 0.220 kg |
---|---|
Published Year |
ভূমিকা
লেখালেখি আমার কোনো পেশা নয়, এমন কি নেশাও নয়। তাহলে লিখি কেন? আসলে এখনও পর্যন্ত আমি একজন জীবিত মানুষ। এই সমাজ-সংসারের আরও দশ জন মানুষের একজন। তাদের মতো আমারও ক্ষুধা-তৃষ্ণা আছে। সুখ-দুঃখ আছে। হাসি-কান্না আছে। তাদের মতো আমারও কিছু বলার আছে। তাই কিছু বলতে চাই আমি। যেহেতু আমার অদৃষ্ট আমাকে নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, আমি একজন গল্প লিখিয়েই হবো, তাই আমার বলতে চাওয়া কথাগুলো হবে কিছুটা গল্পের মতো। কিন্তু এই গল্প কাকে বলবো? নিশ্চয়ই আমার চার পাশের আর দশ জনকেই বলতে হবে কথাগুলো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমি কোনো নেতা নই, কোনো বক্তা নই। শব্দ যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে গেলে আমার কথা কেউ শুনবে না। কারণ, আমি নিতান্তই নিরীহদের একজন। তাই কাগজ-কলমই আমার সম্বল। সুতরাং কোনো শব্দযন্ত্র ছাড়াই বলতে হবে নীরবে। কিন্তু তবু আমাকে বলতে হবে, যা আমি বলতে চাই। বলতে না পরলে হয়তো দম বন্ধ হয়ে আমি মারা যাবো। হয়তো কান দিয়ে শুনতে পাবেন না কথাগুলো, তবে চোখের আলোয় পড়তে পারবেন কাগজে মুদ্রিত কালো অক্ষরে।
জিয়াউল হক
গাইবান্ধা।
ধু-ধু বালুচর
মফস্বলের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে বীথিকা রায় তথা বীথির জন্ম। যে শৈশবেই একাধিক উন্নত রাষ্ট্র ভ্রমণ এবং ধ্র”পদী গ্রন্থাদি পাঠ করে বাঙালি হিসেবে নিজের অবস্থান বুঝতে পারে। একইসঙ্গে স্বনামধন্য বাঙালিদের গৌরবময় কর্মকাণ্ডের ইতিহাসও পাঠ করে—কিন্তু তাঁদের প্রতি বর্তমান বাঙালি জাতির বিস্মরণ আর চারিত্রিক অধঃপতন দেখে বিচলিতবোধ করে। উন্নত বিশ্বে বাঙালির বৈষম্যের শিকার হওয়াও তাকে আঘাত করে। ফলে তার ভেতরে দেশোদ্ধারের জাতীয়তাবাদী চেতনার স্ফুরণ ঘটতে থাকে।
বীথিকা জাতিগঠনের পেছনে যে সংস্কারমুক্ত আধুনিক শিক্ষাই প্রধান নিয়ামক সেটা ভালো করেই বুঝতে পারে। আরও অনুধাবন করে, বহির্বিশ্বের জ্ঞানে ঋদ্ধ, অভিজ্ঞ, দেশাত্ববোধসম্পন্ন মেধাবী শিক্ষকরাই কেবল জাতি গঠনে প্রধান ভূমিকা রাখে—রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সেনাপ্রধান নয়।
ভবিষ্যতের সেই রকম একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতিকৃতি ও সম্ভাবনা বীথি দেখতে পেয়েছিল কিশোর শংকরের মধ্যে। কিন্তু সামাজিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে ছেলেটি ছিল খুবই বিভ্রান্ত এবং দুর্বল তথাপি, একরোখা—ঋজু বীথি হাল না ছেড়ে শংকরকে তার স্বপ্নের আরাধ্য আদর্শ শিক্ষকে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়। এর জন্য তাকে বিনিয়োগ করতে হয় যৌবনের মূল্যবান দীর্ঘ সতেরটি বসন্ত। কিন্তু হারানোর বেদনায় বীথি ব্যথিত নয়, বরং সে সফল, তৃপ্ত এই কারণে যে, দেশ ও জাতি একজন মহান শিক্ষককে পেয়েছে, যে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও স্বদেশপ্রত্যাগত। তারই ইতিবৃত্ত এই উপন্যাস।
প্রবীর বিকাশ সরকার
অপরাহ্ণে বৃষ্টি
মানুষের জীবন তো গল্পময়। গল্প ছাড়া জীবন হয় না। কেউ সে গল্প অপরকে শুনিয়ে তৃপ্তি পায়। কেউ নিজের মধ্যে গল্প পুষে রেখে জীবনকে ভোগ করে। কোনো একজনকে গল্প শুনাতে ইচ্ছে ছিল। সে গল্পের মধ্যে ডুব দেওয়া আর হয়নি। সে গল্পটা সামনাসামনি শুনাতেও পারিনি ।
তবে শুরুটা করেছিলাম গল্প শোনানোর জন্য, সেই শুরুটা নেশাতে পরিণত হয়ে গেছে। সেই কোনো একজন তো চোখের আড়ালে থাকে, মনের আড়াল হয়নি। তাই গল্প শুনাই আড়ালে-আবডালে- অন্তরালে।
গল্পের কথা বলার কারণ, আমি আসলে গল্পই লিখি। লিখতে লিখতে গল্পটি উপন্যাসে রূপ নেবে কিনা, সেটাও আমার জানা নেই। উপন্যাস তো বৃহৎ পরিসরের বিষয়। তাই এক্ষেত্রে আমি শিশুই। একটি কথা জোর দিয়েই বলতে পারি, অভিজ্ঞতার বাইরে আমি লিখতে পারি না। যেভাবেই হোক অভিজ্ঞতাটা তার জায়গা দখল করে নেয়। অর্থাৎ বলতে চাচ্ছি, বাস্তবতার বাইরে আমার লেখাতে কাল্পনিক বলে কিছু নেই। যদি আগেই বুঝতাম গল্প দিয়ে জীবন চলে তাহলে হয়তো লিখতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা, আষাঢ়ে বৃষ্টি পড়ার মত।
আমার গল্প প্রকাশ হবে, ছড়িয়ে যাবে, এমন ভাবনা মাথায় ছিল না। শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক ‘অনুপ্রাণন’ গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমার চেতনাকে জাগ্রত করে দিয়েছে। গল্প লিখতে লিখতে তিনটি উপন্যাসও লিখে ফেলেছি।
“স্বপ্ন জলে জ্যোৎস্না” তৃতীয় উপন্যাস। পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে বিমুখ হইনি। বরং বুকভরা আনন্দ পেয়েছি। কৃতজ্ঞতা জানাই অনুপ্রাণন প্রকাশকের স্বত্বাধিকারী শ্রদ্ধেয় আবু এম ইউসুফ ভাইকে।
মফস্বলে থেকে লেখক হয়ে, বই প্রকাশ করা বড়ই কঠিন কাজ। অথচ সেই কঠিন কাজটা অনেক অনেক সহজ করে দিয়েছে অনুপ্রাণন প্রকাশন। আবারও অসংখ্য ধন্যবাদসহ ও কৃতজ্ঞতা জানাই অনুপ্রাণন প্রকাশনের সাথে জড়িতে সকলকে।
স্বপ্ন জলে জ্যোৎস্না
জন্ম বিক্রমপুরের দিঘলী গ্রামে। ছোটবেলা থেকে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে জড়িত। বর্তমানে বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের কার্যকরী সদস্য। দৈনিক আমাদের সময়ের প্রাক্তন সাব-এডিটর।
গন্তব্যহীন দুঃখবিলাস
আবু তাহের সরফরাজ। সবার মাঝে থেকেও সে আলাদা। দৃশ্যের ভেতরও অদৃশ্য। বেঁচে থাকতে চান লেখালেখির মাঝে।
যখন আঁধার যখন কুয়াশা
উপন্যাস ত্রয়ীর চরিত্র, এলাকা, প্রেক্ষাপট, নিসর্গ—সবই কাল্পনিক। লেখকের তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টির শস্ত্রে ব্যবচ্ছেদ করা সমাজের নিগূঢ় সত্য বাস্তবতার ক্যানভাসে পরিস্ফুটিত হয়েছে। তিনটি উপন্যাস দখল করেছে তিন ধরনের উপচার। ফাঁদ উপন্যাসটির ব্যাপক সংস্করণ হয়েছে। পরিবর্তন, পরিমার্জন ছাড়াও কলেবরও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রথম মুদ্রণের পর এই মলাটের উপন্যাসটি একই পাঠক পাঠ করলে হোঁচট খাবেন। ত্রয়ীর মলাটের বাকি দুটি উপন্যাসের সামান্য সংশোধন হয়েছে।
ফাঁদ
পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য নারীর শরীরই প্রধান মাধ্যম। যুগ যুগ ধরে পুরুষের মর্ষকামিতা, ভোগ-বিলাস ও নিষ্পেষণের শিকার নারীদেরকে খাঁচায় বন্দি করতে শুধু পুরুষই নয়, বরং স্খলিত ও হীন চরিত্রের নারীরাও সেই ক্ষেত্র তৈরি করায় ভূমিকা রাখে। এমনই এক নারী সাবরিনা তার বাসায় কিশোর বয়সী মেয়েদের ফাঁদে ফেলে পতিতাবৃত্তিতে লাগিয়ে বিত্তবৈভবের মালিক হয় সে। সাবরিনার মতো অনেক মাধুকরীর প্ররোচনায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় শহরের অনেক বাসায় পতিতাবৃত্তির বিস্তার লাভ করে। শিকার হয় পুষ্পর মতো নিষ্পাপ কিশোরীরা। সাবরিনার যোগসাজশে আপন ভগ্নিপতি নওয়াব আলী পুষ্পকে দেহ-ব্যবসায় বাধ্য করায়। এক রাতের ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙেপড়া পুষ্প প্রতিশোধ স্পৃহায় নওয়াব আলীর ছোট বোন টুনিকে এই ফাঁদে ফেলে ঢাকায় নিয়ে আসে। টুনিকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে গড়ায়। এই উপন্যাসের মূল কাহিনি থেকে একটি পূর্ণদৈর্ঘ চলচিত্র (প্রিয়াংকা) নির্মাণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
শেষ কথাটি যাও বলে
একটি অভিজাত, নিপাট ও নিষ্কাম প্রেমের আখ্যান। শুরুর দিকে ত্রিভুজ প্রেমের ইঙ্গিত থাকলেও ঘটনাক্রমে প্রথম প্রেমিকার নিরাসক্তির কারণে দুজনের প্রেমই পরিণতির দিকে গড়ায়। বাংলাদেশের ছয়জন পেশাজীবীর কিছুদিনের প্রণোদনা প্রশিক্ষণের সময় দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে উপন্যাসটি নির্মিত হয়। প্রেমের গভীর স্পন্দন অনুভূত হয় বাংলাদেশের নির্ঝর এবং দক্ষিণ ভারতের ট্যুরিস্ট গাইড অধরার বুকের গহিনে।
জলের লিখন
যুদ্ধকন্যা মারিয়াকে ঘিরে নির্মিত হয় জলের লিখন। কোনো এক অশুভ মুহূর্তে কলহপ্রিয় মাকে আতিকের বাবা তালাক দেওয়ার পর যখন হিল্লা বিয়ের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হচ্ছিল তখন, এরূপ হিল্লা বিয়ের মতো ন্যক্কারজনক ও অপমানজনক ঘটনা প্রত্যক্ষ করার কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পেতে মেধাবী কিশোর গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ঢাকায় এসে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম করে সার্টিফিকেটবিহীন ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে একটি এনজিওতে চাকরি পায় এবং যুদ্ধকন্যা মারিয়ার দোভাষীর কাজ করার সময় উভয়ের মধ্যে সরল প্রেম-রসায়নের সৃষ্টি হয়। অবৈধ সন্তানের মা পারভিনের সঙ্গে প্রেমের কলি ফুটলেও পাপড়ি মেলেনি। উপন্যাসটির বিস্তর ক্যানভাস জুড়ে খোদিত হয়েছে এনজিওর কুহনিকা।
জনপ্রিয় লেখক না হলে তিনটি উপন্যাসকে একটি মলাটে মুদ্রণ নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যবসায়িক দিক থেকে অসাফল্যের দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ শুনেও এত বড় ঝুঁকিপূর্ণ বোঝার কঠিন দায় নিয়ে অনুপ্রাণন প্রকাশনের পক্ষ থেকে আবু ইউসুফ ভাই বড় ঋণী করলেন। সীমাহীন আন্তরিকতা, অত্যন্ত যত্ন ও দায়িত্ব নিয়ে তিনি ‘উপন্যাস ত্রয়ী’ প্রকাশ করেছেন। তাঁর প্রতি রইল অশেষ কৃতজ্ঞতা।
উপন্যাস ত্রয়ী
জহিরুল হক বাপি। জন্ম ১৯৭৯ সালে নোয়াখালির এক মফস্বলী ঝড়ো সন্ধ্যায়।
চলচ্চিত্র শিক্ষায় স্নাতক। ব্লগার ও গণজাগরণ কর্মী।
লেখকের প্রকাশিত অন্যান্য বই:
ঈস্রাফীলের শিঙ্গা বাজছে (উপন্যাস)
শোকগাথা’৭১ (উপন্যাস)
আমি আমাকে খেয়ে বেঁচে আছি (কবিতা)
মাটির বাকসো লড়োচড়ো
লেখকের কথা:
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী “রু” আমার প্রথম প্রকাশিত বই হলেও আমার লেখা প্রথম উপন্যাস ছিল এই “প্রজেক্ট পাই”, যেটা আমি লিখেছিলাম দুই হাজার পনেরো সালে, অর্থাৎ আজ থেকেও আরো প্রায় চার বছর আগে। কিন্তু নানা কারণে এই উপন্যাসটা আর প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি। তবে কোথাও প্রকাশ না করলেও উপন্যাসটার কথা আমার মাথায় সবসময়ই ছিল। এ-কারণে প্রায়ই “প্রজেক্ট পাই”-এর ফাইলটা বের করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখ বুলাতাম। এ-রকম করতে করতেই একদিন হঠাৎ মাথায় চলে এলো “রু”-এর প্লট। লেখা শুরুও করে দিলাম আমার দ্বিতীয় উপন্যাস “রু”। মাঝখানে অনিবার্য কারণবশত নেয়া একটা লম্বা বিরতিসহ প্রায় দুই বছরের মতো সময় লাগলো “রু” লিখে শেষ করতে। লেখা শেষ হবার বেশ কয়েক মাস পর আমার লেখা দ্বিতীয় উপন্যাসটি অনুপ্রাণন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হলো আমার প্রথম বই হিসেবে। বইটি অনুপ্রাণনের সে বছরের বেস্টসেলারও হলো। “রু”-এর পর এবার আমার মাথায় এলো আমার প্রথম সন্তান, অর্থাৎ আমার লেখা প্রথম উপন্যাস “প্রজেক্ট পাই”-এর কথা, যে কিনা গত চার বছর ধরে ঘরবন্দী হয়ে আছে। ভাবলাম, এবারে যে তাকেও মুক্তি দিতে হয়!
অবশেষে “প্রজেক্ট পাই”ও মুক্তি পেলো। প্রজেক্ট পাই সম্পর্কে আমি আমার পাঠকদের আগে থেকে তেমন কিছুই বলব না। শুধু এটুকুই বলব, “রু” যেমন আমার এবং আমাদের গল্প ছিল, “প্রজেক্ট পাই”ও ঠিক তেমনি আমার এবং আমাদের গল্প। এখান থেকে আমাকে এবং আমাদেরকে খুঁজে নেয়া এবং আমাদের মাঝখানে নিজেদেরকেও খুঁজে নেয়ার দায়িত্ব আমি আমার পাঠকদের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছি।
Ñতানভীর আহমেদ সৃজন
আগস্ট ২০১৯
প্রজেক্ট পাই
ভূমিকা
‘ভাঙনের ডাক’ উপন্যাসটি ভাঙন কবলিত গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবি। উপন্যাসটিতে গ্রামের কৃষক জীবন, সবুজে ঢাকা গ্রাম নদী ভাঙনের ফলে কিভাবে তার সক্রিয়তা হারায়, সেই সাথে উঠে এসেছে ঐতিহাসিক একটি বাজারের বর্ণনা ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আর্তনাদ।
‘ভাঙনের ডাক’ উপন্যাস নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এখানে গ্রাম্য বধূর সবিস্তার কাহিনী সরলার চরিত্রের মাধ্যমে রূপায়িত হয়েছে। তাছাড়া করিম শেখ ও অন্তুর কাহিনীও এখানে প্রযুক্ত হতে দেখা যায়। বেজগাঁও গ্রামে রাজা রাজবল্লভের বাড়ি, দিঘলী বাজার, কদম পাগলের মাজার ঘিরে মেলা এখানে বর্ণিত হয়েছে।
‘ভাঙনের ডাক’ উপন্যাসে সত্যিকার অর্থেই ভাঙনের একটা সচিত্র ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে আবেগ, কৌতূহল, স্বপ্ন আকস্মিকতা উৎকণ্ঠা বজায় রয়েছে। যা পাঠক সাধারণের মনকে একটা সন্মোহ সীমানায় ধরে রাখতে সক্ষম। তাছাড়া এই উপন্যাসে সমাজ মানসের কিছু বিশ্বস্ত চিত্রগাথা পরিস্ফুট উঠার সুযোগ পায়। যা শুধু এদেশীয় সংস্কৃতির আদলে গড়ে ওঠেছে। যেমন ভেলা ভাসানি, বৈশাখী মেলা, কদম পাগলের বার্ষিক মেলা, বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য মেঘরানী উৎসব। সেই সাথে ফুটে উঠেছে একটি কৃষক পরিবারের অভাব-অনটন ও প্রকৃতির বৈরিতা। পদ্মার ভাঙন আর ঝড়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষের আর্তনাদ, যা পাঠ করে অনাস্বাদিত জগতের উপমিত আস্বাদন করা সম্ভব।
ভাঙনের ডাক
বুদ্ধদেব বলেছেন- জীবন দুঃখময়। কথাটা সর্বাংশে সত্য কিনা সংশয় রয়েছে মনে। তবে এটা সত্যি যে, বারে বারে দুঃখ আসে জীবনে। আসে বলতে মানুষ জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতে তার কামনা-বাসনার দ্বারা দুঃখকে ডেকে আনে। যদিও দুঃখকে কেউ চায় না। কিন্তু না চাইতেই মহাসমারোহে হানা দেয় জীবনে। কারণ, আলো-আঁধারের মত সুখ-দুঃখও হাত ধরাধরি করে চলে। তাই কোনমতেই দুঃখকে বাদ দিয়ে শুধু সুখ লাভ সম্ভব হয় না। কিন্তু মানুষ চায় সুখের বন্দরে নোঙ্গর গেড়ে জীবনটা কাটাতে। সেখানে পৌঁছতে গেলে দুঃখের পথ অতিক্রম করেই যেতে হয়। জীবনে দুঃখকে জয় করার মধ্যেই আছে পৌরুষ, আছে বীর্যবত্তা। তাই তাকে শক্তিধারণ করতে হয় দুঃখ জয় করার। “দুঃখ জয়ের গান” পাঠকের অন্তরে সেই প্রেরণা জোগাবে যাতে সে কর্ম-সাধনার মধ্য দিয়ে জীবনটাকে সঙ্গীতমুখর করে তুলতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
পরিশেষে, বইটির পান্ডুলিপি পাঠ করে মূল্যবান মতামত দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের প্রভাষক নির্জন মজুমদার, কবি দেবী চিত্রলেখা মন্ডল, সাহিত্যিক অমল হালদার, কবি ড. অশোক মিস্ত্রী। তাদের সকলকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। সুস্মিতা ও শ্রেষ্ঠা আমার দুই মেয়ে নিরন্তর স্বপ্ন দেখে চলে কবে বাবার লেখা নতুন বই প্রকাশিত হবে। ওদের প্রেরণা আমার সব সময়ের পাথেয়। প্রথম উপন্যাস প্রকাশ-লগ্নে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। মুদ্রণজনিত ভুল-ত্রুটি পরিহারের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তারপরও অজ্ঞাতসারে কিছু প্রমাদ থেকেই যেতে পারে। সেজন্যে পাঠকের কাছে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।
সন্তোষ কুমার শীল
শ্রীরামকাঠী, পিরোজপুর।
দুঃখ জয়ের গান
পিনু মামা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছিলেন। দেখছিলেন বললে মনে হয় ভুল হবে- বৃষ্টির গান শুনছিলেন। কারণ সাঁঝের ঘোলা আলোয় বাহিরটা তেমন দেখা যাচ্ছিল না। আর কী যেন ভাবছিলেন। হয়ত তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে কোন গল্পটা আমাদের শোনাবেন তাই ভাবছিলেন। আমরা অধীর হয়ে বসে আছি। পিনু মামা কখন গলা ঝেড়ে কথা বলা শুরু করবেন তার জন্য। আমরা মানে- আমি আর আমার বন্ধুরা। পিনু মামা কানাডায় থাকেন এখন। এর আগে তিনি ছিলেন আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে। তারও আগে ছিলেন আমাজানের গহীন বনে…। গোটা বিশ্ব মামার আবাস ভূমি। কী বিচিত্র অভিজ্ঞতাই না আছে তাঁর ঝুলিতে! মামার গল্প আমি আমার বন্ধুদের কাছে প্রায়ই করতাম। তাই সবার মাঝে মামা ভীষণ জনপ্রিয়। মামা দেশে এসেছেন এবং এখন আমাদের বাসায়- এই কথা শুনে আজ বন্ধুরা আমাদের বাসায় ভিড় করেছে, মামার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে গল্প শুনবে বলে। স্কুলে চলছে গ্রীষ্মের ছুটি তাই পড়াশোনার চাপটাও এখন কম।
পিনু মামার অ্যাডভেঞ্চার
সোলায়মান সুমনÑ জন্ম ১মে ১৯৭৯, চাঁপাই নবাবগঞ্জ। তরুণ বয়সে লেখালেখি শুরু। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস। পেশায় শিক্ষক। ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন প্রকাশনের সাথে যুক্ত।
ছায়াগুলো জেগে থাকে
নাহিয়ান ফাহিম। জন্ম: ২৩শে মার্চ, ১৯৮৪। ময়মনসিংহ জেলা। ঢাকাতে বেড়ে ওঠা। মূলতঃ পাঠক, ফলতঃ লেখক। সাহিত্য পত্রিকা ‘জলমাঝি’র সম্পাদক। মার্কেংটিং বিভাগে স্নাতকোত্তর। পেশাগত জীবনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিনদুপুরের নোটবই’।
মধ্যবিত্ত কবিতা
সম্পাদকীয়, অনুপ্রাণন—নবম বর্ষ প্রথম সংখ্যা
ফেব্রুয়ারি যখন আসে তখনই আমরা আমাদের ভাষা তথা, বাঙলা ভাষা ব্যবহারের পরিধি, মান, চর্চা এবং গবেষণার ক্ষেত্র ঘিরে অপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি; কিন্তু ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনার পর এবং বিশেষ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৮ বছর পর আজও আমরা সারা বছর বাঙলা ভাষার সমৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য কোনো পদ্ধতিগত ও সদা চলমান কোনো কর্মসূচি প্রণয়ন করতে সক্ষম হইনি। এই অক্ষমতার কারণ আমার জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের মাঝেই বিদ্যমান।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তিনটি ভাগে বিভক্ত–বাংলা মাধ্যম, আরবি/ফারসি মাধ্যম এবং ইংরেজি মাধ্যম। ইংরেজি অথবা আরবি/ফারসি মাধ্যমে যারা পড়াশোনা করে একটি বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে সীমিত কয়েক শ্রেণি পর্যন্ত বাঙলা ভাষা ও বাঙলা ব্যাকরণের সাথে তাদের যৎসামান্য পরিচয় ঘটে। কিন্তু সেটা দৈনন্দিন জীবনে কথ্যভাষা ছাড়া লিখিত কোনো নথি, রচনা, প্রবন্ধ অথবা প্রতিবেদন লেখার জন্য যথেষ্ট হয়ে ওঠে না। যার ফলে, সরকারি কার্যক্রম চালানোর জন্য নথিতে অথবা আইন ও বিচারব্যবস্থার কাজে ব্যবহৃত যাবতীয় আইন, আদেশ ও রায়ের সকল প্রতিবেদনে অথবা চিকিৎসা ও বিজ্ঞানচর্চার উচ্চতর স্তরে বাঙলা ভাষার ব্যবহার সঙ্কুচিত হওয়া অনেকটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। আর সেটাই হতে আমরা দেখে থাকি।
আইন ও বিচারের নথি প্রস্তুতিতে অথবা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শ্রেণি অথবা মেডিকেল শিক্ষা ও চর্চার কাজে সহজে ব্যবহৃত হতে পারে সেজন্য সহজ ও বোধগম্য শব্দ সংবলিত উপযোগী এবং পূর্ণাঙ্গ পরিভাষা কোষ তৈরি করতে আমরা এখনও সফল হইনি। এই কাজটা কঠিন কিন্তু তাই বলে কাজটা শুরুই কি হলো? আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো কোনো কাজ যদি হয়ে থাকে, সেটাও অত্যন্ত নগণ্য এবং অস¤পূর্ণ। একটা ক্ষুদ্র এবং অসম্পূর্ণ পরিভাষা কোষ দিয়ে কি কোনো একটি গ্রন্থ সম্পূর্ণ অনুবাদ হতে পারে? তাই আমরা আইন, বিচারব্যবস্থা, বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার সকল ক্ষেত্রে এখনো বাঙলা ভাষার প্রচলন করতে পারিনি।
আইন, বিচারব্যবস্থা, চিকিৎসা-বিজ্ঞানসহ সকল বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে শুধু নয়, সাহিত্য ক্ষেত্রেও বিদেশি ভাষা থেকে বাঙলায় অনুবাদ এবং বাঙলা ভাষা থেকে বিদেশি ভাষায় অনুবাদের ক্ষেত্রটিও অবহেলিত রয়ে গেছে। ব্যক্তি উদ্যোগে যৎসামান্য যেটুকু হচ্ছে সেটা বাঙলা সাহিত্যকে বিদেশে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য বিন্দুসম প্রচেষ্টাই বলা যেতে পারে। বাঙলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তোলার জন্যই উভয়বিধ অনুবাদের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি ও প্রসার ঘটানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অথচ এটা আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকরা কতটুকু বোঝেন এটা জানা খুব কষ্ট। অথচ বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে তারা আপসহীন সংগ্রামী। কিন্তু জাতিকে সমৃদ্ধ করে তোলার ক্ষেত্রে ভাষার বহুমাত্রিক বিকাশ যে কতটুকু প্রয়োজনীয় সেটা তারা কী আদৌ বোঝেন?
পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ রয়েছে যাদের মাতৃভাষা বাঙলা। শুধু এই সংখ্যাটার জোরেই আমরা জাতিসংঘে অন্যান্য প্রচলিত ভাষাসমূহের পাশাপাশি বাঙলা ভাষাকেও ব্যবহারের জন্য অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করতে চাই। কিন্তু শুধু সংখ্যার জোরেই কি জাতিসংঘের কাছে এই দাবি গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব? বস্তুতপক্ষে আমরা যদি বাঙলা ভাষাকে বিশ্বের একটি অন্যতম ভাষা হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তাহলে বাঙলা ভাষাকে উচ্চতর জ্ঞান-বিজ্ঞান, আইন ও বিচারব্যবস্থা পরিচালনার জন্য উপযোগী করে তুলতে হবে। যদি আন্তর্জাতিকভাবে বাঙলা ভাষা ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো কোনো প্রতিশব্দের অভাবে বিকল্প হিসেবে বিদেশি ভাষাই ব্যবহার করতে হয় তাহলে কি করে আমরা বাঙলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক অথবা বহুদেশীয় কোনো ফোরামে ব্যবহারে জন্য অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হতে পারি? এই বক্তব্যের সাথে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয় মিলিয়ে ফেলা যাবে না। কেননা, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ, বাঙালির ভাষার জন্য সংগ্রাম ও আত্মদানের প্রতি সম্মান দেখানোর কারণেই সম্ভব হয়েছে। এর সাথে বহুজাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য প্রচলিত অন্যান্য ভাষাসমূহের পাশাপাশি বাঙলা ভাষাকে ব্যবহারের জন্য গ্রহণ করার সম্পর্ক নেই। এটা সফল করে তুলতে চাইলে বাঙলা ভাষার বিকাশ ও সমৃদ্ধি এবং পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিকাশ ও সমৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে।
বক্তব্যটিকে বাঙলা ভাষার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ এবং সমৃদ্ধির প্রশ্নে সীমাবদ্ধ রেখে বলতে চাই যে, প্রয়োজন ছিল পরিভাষা এবং অনুবাদ সাহিত্যের বিকাশ এবং সমৃদ্ধির জন্য একটি স্বতন্ত্র এবং দক্ষ ও মেধাবী সাহিত্যিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় পারদর্শী ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। কিন্তু বেসরকারিভাবে এই কাজটা করা সম্ভব না। এটা করতে হলে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে এবং যার জন্য চাই সরকারের সিদ্ধান্ত। কেন যে সরকার আজ অবধি এডহক-ভিত্তিতে দেশ ও জাতির জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বাঙলা একাডেমিকেই দিয়ে রাখলো সেটা আমার বোধগম্য না।
এদিকে মাদরাসা ও ইংরেজি শিক্ষা থেকে পাস করে বেরিয়ে আসা ছাত্রদের উচ্চতর শিক্ষা এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করার সুযোগ অবারিত করা হয়েছে। এ-কথা জানা সত্ত্বেও যে উচ্চতর শিক্ষায় অথবা চাকরি-জীবনে আগত এসব ছাত্ররা বাঙলা ভাষা ব্যবহার না করে অন্য বিদেশি ভাষা ব্যবহার করার প্রবণতা নিয়ে উচ্চশিক্ষা এবং চাকরিতে ঢোকে। যার ফলে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে অথবা সরকারি প্রশাসন এবং আইন ও বিচারব্যবস্থার উচ্চতর মহলে সার্বিকভাবে বাঙলা ভাষা ব্যবহার প্রচেষ্টায় তাদের আগ্রহী হয়ে উঠতে দেখা যায় না। বরঞ্চ উল্টোটাই ঘটে। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে বিদেশি ভাষা ব্যবহার পরিহার করার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে অনীহার ফলে একপ্রকার বাধা সৃষ্টি করতেও তাদের দেখা যায়।
ভাষার বহুমাত্রিক বিকাশ যদি না ঘটে, তাহলে বদ্ধজলের মতোই ভাষা ও একপ্রকার বন্ধ্যা অবস্থায় পতিত হয়। বিকাশ না ঘটলে যে কোনো অস্তিত্ব সঙ্কুচিত হতে থাকে এবং সঙ্কুচিত হতে হতে একসময় সেই বস্তুর অস্তিত্বই হুমকির মধ্যে পড়ে। কথ্য অথবা লিখিত ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে অস্তিত্বের এই বিনাশ শুরু হয় নানা বাঙলা শব্দ বা প্রতিশব্দের বদলে বিদেশি শব্দের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে যেটা এখন হরহামেশা ঘটছে। নাগরিক কথাবার্তায় অথবা লেখালেখিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলার বদলে আরবি অথবা ইংরেজি শব্দের ব্যবহার এখন আমরা প্রায়শই হতে দেখছি, কিন্তু তবুও আমাদের সাহিত্যিক অথবা বুদ্ধিজীবী মহলে কিংবা নীতিনির্ধারক মহলের টনক নড়তে দেখা যায় না। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই যে এটা প্রকৃত বাঙলা শব্দের অভাবে হচ্ছে, সেটা যে তা নয়। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, এদের মন-মানসিকতায় বাঙালি জাতীয়তাবাদী সচেতনতা ততোটুকু দৃঢ় নয়। এটা কেন হচ্ছে? কেন বহুসংখ্যক নাগরিক বাঙলার বদলে আরবি অথবা ইংরেজি ব্যবহারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন?
জ্ঞান-বিজ্ঞান অথবা প্রযুক্তির উচ্চতর ক্ষেত্রে যখন বাঙলা প্রতিশব্দের অভাব হয়, তখন সম্পূর্ণভাবেই বাঙলা ভাষার বদলে ইংরেজি ব্যবহার যেন অপরিহার্য হয়ে যায়। সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে এই বাঙলায় একসময় আরবি, ফারসি অথবা উর্দু শব্দ সুকৌশলে ব্যবহার করার একটা প্রবণতা কোনো কোনো কবি-সাহিত্যিকের ক্ষেত্রে ঘটেছে, কিন্তু সেটা ছিল পাকিস্তান আমল এবং পাকিস্তানি শাসক মহলকে তোষণ করার জন্যই এটা সচেতনভাবেই করা হতো। কিন্তু এখন কেন আরবি, ফারসি, উর্দু অথবা ইংরেজি শব্দের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। বাঙলা ভাষার বিকাশের ক্ষেত্রে যেহেতু চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে কাজ হচ্ছে না তাই বাঙলা ভাষার অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ছে এবং এর জন্য ত্রিমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা শতভাগ দায়ী। তাহলে আমরা কি করতে পারি? এটা কি বলতে পারি যে, ভাষার জন্য আমাদের সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটেছে?
আমাদের একথা বুঝে নিতে হবে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাঙলা ভাষার অস্তিত্ব সুরক্ষা করা, এর বিকাশ ঘটানো এবং চলমান রাখা এবং সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাঙলা ভাষার সমৃদ্ধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা চলার আন্দোলন ও সংগ্রাম, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের চাইতেও জটিল ও কঠিন। যার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চাই নিয়মানুবর্তিতা ও অধ্যবসায়।
খুব নীরবে হলেও বিশ্বজুড়ে ভাষার ব্যবহার এবং প্রসার নিয়ে চলছে এক তীব্র প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতার পেছনে রয়েছে উন্নত রাজনীতি এবং অর্থনীতির অধিকারী দেশ ও জাতিসমূহের উৎপাদিত পণ্যসমূহের বাজার সম্প্রসারণ করার সম্প্রসারণবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা। যেসব পরিকল্পনাকে তারা কোনো কোনো সময় তাদের নিজ জাতি ও দেশের সুরক্ষা নীতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে প্রচার করে থাকে। এসব পরিকল্পনার বিষয় আমাদের বুঝতে হবে। ভাষা, যা কিনা শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, চিত্র ও চলচ্চিত্রের বাহক সেগুলো তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বব্যাপী এবং স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তাদের তৈরি সাহিত্য, সংগীত ও চলচ্চিত্রের বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত করে চলেছে। আমাদের দেশেই বিদেশিদের বিদেশি ভাষার বই এবং চলচ্চিত্রের যে বাজার রয়েছে, সে তুলনায় আমাদের বাঙলা সাহিত্য অথবা চলচ্চিত্রের বিদেশি বাজার নিতান্তই ক্ষুদ্র। এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমরা যদি আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংগীত ও চলচ্চিত্রের বিদেশি বাজার সৃষ্টি না করতে পারি এবং সেসব বাজার সম্প্রসারিত না করতে পারি, এই প্রতিযোগিতার কোনো ভবিষ্যৎকালে একদিন আমাদের প্রাণপ্রিয় বাঙলা ভাষাই বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে।
সারা বিশ্বে নানা দেশে ছড়িয়ে প্রায় সোয়া কোটি বাঙালি রয়েছে। যাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম ক্রমেই বাঙলা ভাষা ব্যবহারের সীমিত সুযোগ পাওয়াতে বাঙলা ভাষা, সংগীত অথবা চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এইভাবে চলতে থাকলে প্রবাসী বাঙালি সমাজে বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিলোপ ঘটবে এবং তারা মানসিকভাবে স¤পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। প্রবাসী বাঙালিদের ব্যক্তি উদ্যোগে গুটিকয়েক বাঙলা ভাষা শিক্ষা স্কুল এবং সংগীত বিদ্যালয় আছে, যা কি-না প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমাদের বিদেশি দূতাবাসগুলো এই ব্যাপারটাই নজর দেয়ার একটা বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে এবং বিদেশে বিশেষ করে যে সকল শহরে অধিক সংখ্যায় প্রবাসী পরিবার রয়েছে সেখানে বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র এবং পাশাপাশি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। যেসব লাইব্রেরিতে বাঙলা ভাষায় রচিত অথবা বাঙলা ভাষায় অনূদিত সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প ও কলাবিভাগের গ্রন্থসমূহ এবং বাঙলা চলচ্চিত্রের একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডার থাকতে পারে। পাশাপাশি বাঙলা ভাষা ও সংগীত শিক্ষার জন্য স্কুল থাকতে পারে।
আমাদের দেশে যদি ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইউএস, রুশ অথবা ফ্রেঞ্চ কালচারাল সেন্টার থাকতে পারে, তবে প্রবাসে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে আমরা কেন ‘বাঙলা শিল্প-সাহিত্য কেন্দ্র’ নাম দিয়ে বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরে বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে তাদের পরিচিতি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারি না? এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের জাতীয় বাজেটে এই কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখার কথা ভাবি না?
নবম বর্ষ প্রথম সংখ্যা
শহরের প্রতিটি দরজা জানালার মতোই নিঃসঙ্গ, শহরের মানুষগুলো। এ নিঃসঙ্গ মানুষগুলোই হাসির লিফলেট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তার সংসার, তার সমাজ, তার রাষ্ট্রে। আর মন জুড়ে জমতে থাকে কিছু উত্তরহীন প্রশ্ন, কিছু আক্ষেপ, কিছু ক্ষোভ। এমন কিছু উত্তরহীন প্রশ্ন, কিছু আক্ষেপ আর কিছু ক্ষোভের সংকলনই ‘যে শব্দ ঠিকানা জানে না’।
কবিতার নামকরণে ও কবিতা নির্বাচনে আমার বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। এ ক্ষেত্রে যাঁর অকৃপণ সহযোগিতায় ‘কাব্য’ ‘গ্রন্থে’ পরিণত হয়েছে, তিনি আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। অনেক ব্যস্ততার মাঝে কবিতাগুলো নির্বাচন করে, কিছু কবিতার অংশ বিয়োজন, কিছু কবিতার নতুন নামকরণ করে গ্রন্থরূপে প্রকাশযোগ্য করে দেয়ার জন্য স্যারের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা। এখানেই শেষ নয়, কাব্যগ্রন্থটি যে ‘স্বনাম’ ধারণ করেছে, এর একচ্ছত্র কৃতিত্ব স্যারেরই।
কবিতার বানানে কিছুটা স্বেচ্ছাচারিতা থাকে, যা পূর্ববর্তী কবিদের ক্ষেত্রেও দেখেছি। তবে আধুনিক বানানরীতির শুদ্ধতাকে তো এড়ানো যায় না! কবিতার শুদ্ধ বানানের ক্ষেত্রে যাঁর একটি রাতের বেশিরভাগ সময় নির্ঘুম কেটেছে, তিনি আমার আরেক শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ইমন সালাউদ্দিন স্যার। আমি তাঁর কাছেও সমানভাবে কৃতজ্ঞ।
যে শব্দ ঠিকানা জানে না
অনুপ্রাণন ১১তম বর্ষ ১ম সংখ্যা- সম্পাদকীয়
শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, অনুপ্রাণনের সূচনা সংখ্যা প্রকাশিত হয় নভেম্বর, ২০১২। এ-পর্যন্ত ৩২টি সংখ্যা প্রকাশ করে ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন ১০ টি বছর অতিক্রম করেছে। এ দশটি বছর অনুপ্রাণন’কে নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়েই এগিয়ে যেতে হয়েছে। আজ একাদশ বর্ষের প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশ করার মুহূর্তে পেছনের দশটি বছরের দিকে ফিরে স্মৃতিতে অনেক কিছুই ভেসে আসে। লেখক, পাঠক এবং সম্পাদনা পরিষদের সাথে ভাগ করে নেয়ার মতো অনেক কথাই হয়তো বলার থাকে, বলার ছিল। কেননা ১০ বছর তো কম সময় নয়। তবে, শিল্প-সাহিত্যের পত্রিকা অথবা লিটল ম্যাগ প্রকাশের ইতিহাসে প্রায় একই ধরনের ঘটনা হয়তো হর-হামেশাই ঘটে থাকে।
টেকসই সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি এবং সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক নির্মাণে পেশাদারিত্বের অভাব আমাদের সমাজের সব ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। এখনো সেখানে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অহমবোধ প্রতিটি সংগঠনের ভিত কুরে কুরে খাচ্ছে। বাইরের থেকে যেটা দেখা যায় সেটা ঠিক ভেতরের চিত্র না। আর তাছাড়া অর্থনীতির বিষয়টা তো আছেই। আর সেটার গুরুত্ব অনুধাবন করার ঘাটতি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্রই বিদ্যমান। আমাদের দেশের শিল্প-সাহিত্য এবং সংস্কৃতির জগতে সাধারণভাবেই অর্থের সংকট রয়েছে। সাধারণভাবেই বলা যায় যে, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধির গুরুত্ব আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র এখনো যথার্থভাবে বুঝতে ব্যর্থ। ভাবা হচ্ছে ভৌত কাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের মধ্য দিয়ে উন্নতির চাকা ঘুরলে দেশের উন্নয়ন হবে। কিন্তু আমরা জানি উন্নত সভ্যতা মানেই হচ্ছে উন্নত শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি।
তাই, অনুপ্রাণন যেসব সাংগঠনিক সমস্যা মোকাবেলা করে টিকে আছে সেসবের সাথে অন্যান্য শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য বা ব্যতিক্রম হয়তো নির্মাণ করা যায়নি। কেননা আমরা শেষ পর্যন্ত, এদেশের প্রকৃতি ও মনুষ্যসমাজেরই অঙ্গ। দেশের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি- এসবের সংকট ও সম্ভাবনা থেকে অনুপ্রাণন বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ তো নয়।
এটা ঠিক অনুপ্রাণন পত্রিকাটিকে ঘিরে এই দশ বছরে লেখক-পাঠক ও সুভানুধ্যায়ীদের একটি বৃত্ত তৈরি হয়েছে। এই বৃত্ত কোনো বিশেষ সীমানা রেখা দিয়ে ঘেরা কোনো বৃত্ত না। এই বৃত্ত শিল্প-সাহিত্যের মুক্ত চর্চার মতোই উন্মুক্ত। অনুপ্রাণন মুক্ত চিন্তার চর্চাকেই সবসময় সমর্থন করেছে, অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেছে। আর অনুপ্রাণন চেষ্টা করেছে এদেশের তরুণরা যেন বেশী বেশী করে বই পড়া আর শিল্প-সাহিত্যের চর্চায় আগ্রহী হয়ে উঠে। সারাদেশ জুড়ে অনুপ্রাণনকে ঘিরে আছে একদল তরুণ-তরুণী, যারা নিয়মিত শিল্প-সাহিত্য চর্চার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারাই অনুপ্রাণনের প্রাণশক্তি। যাদের সাথে অনুপ্রাণনের সম্পর্ক হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক সৌহার্দের। একে আরেকের পরিপূরক।
দশ বছর নিয়মিত বিভাগ নিয়ে ছাপার সংস্করণ আকারে অনুপ্রাণন পত্রিকাটি প্রকাশ করার পথে লেখক ও পাঠকদের কাছ থেকে ক্রমেই দুটি দাবী জোরালো হয়ে উঠেছে। প্রথমটি হচ্ছে, অনুপ্রাণনের একটি অন্তর্জাল সংস্করণ প্রকাশ করা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণনের মুদ্রিত সংস্করণে সাহিত্য ও শিল্পের বিশেষ ধারা, ধরন অথবা বিষয়ভিত্তিক বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা।
ইতোমধ্যেই গত ৯ ফেব্রুয়ারি অনুপ্রাণনের পক্ষ থেকে, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণনের সূচনা সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। অন্তর্জালভিত্তিক এই সংখ্যাটিতে থাকছে ২০ টি বিভাগ। যথাক্রমে- শ্রদ্ধাস্মরণ, স্মৃতিচারণ, প্রবন্ধ, অনুবাদ প্রবন্ধ, গুচ্ছ কবিতা, যুগল কবিতা, একক কবিতা, অনুবাদ কবিতা, বড়ো গল্প, ছোট গল্প, অণুগল্প, অনুবাদ গল্প, মুক্তগদ্য, ভ্রমণকাহিনী, বই আলোচনা, ম্যাগ আলোচনা, পাঠ প্রতিক্রিয়া, চলচ্চিত্রকথা, ধারাবাহিক উপন্যাস, নাট্যকথা এবং শিল্প-সাহিত্য সংবাদ।
শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, অনুপ্রাণন ইতিমধ্যে অনিয়মিতভাবে ৬ টি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। সেগুলো হচ্ছে, (১) তৃতীয় বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা- প্রিয় উপন্যাস সংখ্যা; (২) অষ্টম বর্ষ প্রথম সংখ্যা- গল্প সংখ্যা; (৩) অষ্টম বর্ষ তৃতীয় সংখা- অণুগল্প সংখ্যা; (৪) অষ্টম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা- কুহক মাহমুদ স্মৃতি সংখ্যা; (৫) নবম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা- কবি ও কবিতা সংখ্যা; এবং (৬) দশম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা- বাংলাদেশের ১৫টি সেরা গল্প- পাঠ ও আলোচনা সংখ্যা।
একাদশ বর্ষ প্রথম সংখ্যার মধ্য দিয়ে শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, সকল মুদ্রিত সংস্করণে নিয়মিতভাবেই শুধুমাত্র দেশের শিল্প, সাহিত্য, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে আরো নিবিড়ভাবে তুলে ধরার জন্য বিশেষ ধরন, বিশেষ বিভাগ, বিশেষ ধারা অথবা বিশেষ বিষয় নিয়ে লেখা প্রকাশ করার সূচনা করতে চায়।
লেখক, পাঠক এবং অনুপ্রাণনের সম্পাদনা পরিষদের সেই চাওয়া থেকেই ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণনের একাদশ বর্ষের প্রথম সংখ্যাটি নির্বাচিত কবি ও কবিতা সংখ্যা- প্রথম পর্ব হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। এই সংখ্যাটিতে বাংলাদেশের ২৭ জন নির্বাচিত কবির জীবনী, প্রকাশনা, পুরস্কার ও সম্মাননা, উল্লেখযোগ্য কবিতা এবং আলোচনা প্রকাশিত হয়ছে। বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রবীণ ও তরুণ কবিদের নিয়ে এই ধরনের লেখা ও আলোচনা নিয়ে আরো কয়েকটি পর্ব প্রকাশিত হবে বলে আমরা আশা করি।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবিদের জীবনী ও সাহিত্য কর্ম নিয়ে শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিকের কয়েকটি পর্বের এই আয়োজনগুলোর মধ্য দিয়ে আশা করি আমাদের দেশের তরুণ সমাজ বাংলাদেশের কবিদের কবিতার সাথে সুপরিচিত হবেন এবং আমাদের দেশের সম্মানিত এই কবিদের কবিতা নিয়ে আলাপ, আলোচনা এবং আড্ডার অনুষ্ঠানের আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের শিল্প ও সাহিত্য চর্চার বৃত্তটিকে প্রসারিত করতে পারবেন।
অনুপ্রাণন ১১ম বর্ষ ১ম সংখ্যা
ভূমিকা
‘সীমান্তিনী’ আমার লেখা দীর্ঘ কবিতার মধ্যে অন্যতম। বারোটি কবিতা নিয়ে এই বইটি। কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে প্রেমের পাশাপাশি পাহাড়ি সৌন্দর্য, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো, হাজং প্রভৃতি আদিবাসীদের সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও তাদের জীবনধারা। পাহাড়ি নারীর সৌন্দর্য, বালুকণা, সমুদ্র, আঁকাবাঁকা-উঁচুনিচু পথের দৃশ্যও এই বইতে চিত্রিত হয়েছে। প্রতিটি কবিতার পাতা রাঙানো হয়েছে ভালোবাসার রঙে।
কিসিঞ্জার ভূঁইয়া
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সীমান্তিনী
ফকির ইলিয়াস৷ মূলত: কবি৷ এছাড়া অবাধ যাতায়াত আছে প্রবন্ধ ও গ্রন্থসমালোনায়৷ সাংবাদিক হিসাবেও ব্যাপক পরিচিতি আছে৷ প্রবাসে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি-লালন ও চর্চায় তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন৷ এযাবত্ প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা তেরটি৷ বিভিন্ন দেশের সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখা ছাপা হচ্ছে৷ ‘ঠিকানা শ্রেষ্ট গ্রন্থ পুরস্কার’ ‘ফোবানা সাহিত্য পুরস্কার’সহ আরও অকে পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন দেশে ও বিদেশে৷ বর্তমানে স্বপরিবারে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন৷
সাহিত্যের শিল্পঋণ
রাজন্য রুহানি। পরিবারের দেওয়া সনদসাক্ষ্য নাম মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। জন্ম: ২রা নভেম্ভর ১৯৮০, জামালপুর জেলা শহরের হাটচন্দ্রায়। কলেজে পা দেবার সাথে সাথেই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মফস্বল সাংবাদিকতার পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে বারবার কবিতার কছেই ফেরা। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং। ১৯৯৮ থেকে কবিতার ভাঁজপত্র শব্দদূত সম্পাদনার সাথে যুক্ত। ঐ বছরই অন্যান্য লেখক সহযোগে আলোচনাগ্রন্থ- ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ; আতিয়ার রহমানের ৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এটি লেখকের প্রকাশিত এককবই।
গল্প সমাপ্তির গান
কলকাতার স্মৃতিকথা
কবিতা জীবনের কথা বলে, জীবন বদলানোর কথা বলে। জীবনের নানাবিধ ঘটনাবলী একজন কবির মনে যে উদ্দীপনা জোগায় কবিতা তার সকল বাহির-রূপ প্রকাশে। কবি সামাজিক মানুষ, সমাজের অভিজ্ঞতাই কবির চেতনাকে আলোড়িত করে। তাই কবিতা কতো রকম, এবং সবটাই কবির চেতনা নির্ভর। কবি দ্বীপ সরকার এর কবিতায় আধুনিকতা অভিজ্ঞতার জাগরণে যে পঙক্তিমালা আমাদের কাব্যপ্রেমীদের কাছে উপস্থিত তাতে হয়তো নির্মাণ দূর্বলতা রয়েছে, কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস কবি এই শুরুর পর্যায় থেকে লাগাতার কাব্যপ্রীতির মধ্যদিয়ে একদিন কাব্যরাজ্যের সকল মনিকাঞ্চন কুড়িয়ে নিতে পারবেন তার কবিতায়। যেমন তিনি বলেছেন ‘আমার প্রকাশ্য এবং গোপন/কথাদের মর্মার্থ একটাই ‘মানুষ হও/ধর্ম একটা পতাকামাত্র;/মানুষ মানেই সকল ধর্মের মধুফুল’ (….ভারতবর্ষ থেকে হেঁটে হেঁটে তাঁবেদার ঘোড়া)। কিংবা যখন বলেন ‘এখনও এই উঠোনে কথারা নাচলে/ কিছু সুপ্ত কথা ঝুনুর ঝুনুর বাজে’ (…প্রাক্তন কথারোদ)। এমনি ভাষ্যগুলো আধুনিক মনোবৃত্তিকে ধারণ করে হয়ে ওঠে মুখরিত শব্দবলীর এক অন্তরধ্বনি যা খানিকটা চমকে দেয় আমাদের।
কবিতার রাজ্যে কবি দ্বীপ সরকার এখনও প্রস্তুতি পর্বে, তারপরও কবিতার প্রারম্ভিক ভাষ্য থেকে বেরিয়ে আসা উপ-ভাষ্যগুলোর উপস্থাপন তার কবিতা মনোবৃত্তিরই স্ফূর্ততা। গতি বিজ্ঞানের এই সময়ে কবিতার যে স্বাস্থ্যশ্রী রূপ বদল ঘটেছে কবি দ্বীপ সরকার তাকে খানিকটা হলেও ধারণ করেন এবং বহুল চর্চার মধ্যদিয়ে একদিন তিনি আরো বেশি সক্রিয় পঙক্তিমালা নির্মাণের উপকরণ পেয়ে যাবেন সমৃদ্ধ বাংলা কাব্য ভূমিতে।
আমি তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিন্ন ভাষার গোলাপজল’ প্রকাশনা মুহূর্তে সকল সফলতা কামনা করি।
মতিন বৈরাগী
কবি, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক
ভিন্ন ভাষার গোলাপজল
দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী রমণীদের বসবাস এখানে। ওই সুন্দরীদের রূপের সাথে পাল্লা দেয় যৌবন আর যৌবনের সাথে পাল্লা দেয় রূপ কিন্তু সেটা এক রক্ত নহর বহা একনগরী… স্ত্রীর জন্য ৭ পুরের (গ্রামের) জল ও মাটি সংগ্রহ করে পুব্যা এক যুবক। তবে শর্ত ছিল পথিমধ্যে কারো সাথে কথা-টথা বলতে পারবে না সে। যুবকটি কেন বলছে, হায় নারী! হায় স্ত্রী আমার! তুমি আমার অর্ধেক নও, তুমি আমার পুরো পৃথিবী… এরকম অসংখ্য মজাদার কথামালায় রচিত এই দুই প্রহরের প্রেম ও বিপরীত যাত্রা উপন্যাসটি। শরীফ শামিলের লেখনী শক্তি ও কল্পনা শক্তি প্রশংসার দাবি রাখে। তাঁর প্রথম উপন্যাস দীর্ঘ রাত্রির বিরুদ্ধে জেগে থাকা এর ব্যাপারে লিখেছিলাম, ওটি বাংলা উপন্যাসে এক নতুন সংযোজন। আর এ ‘দুই প্রহরের প্রেম ও বিপরীত যাত্রা’ উপন্যাসটি বাংলা উপন্যাসে আরেক (সম্পূর্ণ) নতুন সংযোজন।
আবু এম ইউসুফ
প্রকাশক
দুই প্রহরের প্রেম ও বিপরীত যাত্রা
সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির বিত্তশালী নারী সাবরিনা যে কিনা নিজেও এক সময় পতিতাবৃত্তি করে বিপুল ধনসম্পদের মালিক হয়েছে এবং নিজের বিলাশবহুল ফ্ল্যাটে নানা কৌশলে-প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে দালালদের মাধ্যমে সুন্দরী তরণীদের নিজের ফ্ল্যাটে রেখে প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জন করে। তারই ফাঁদে পড়ে হতদরিদ্র পরিবারের কিশোরী পুষ্প আপন ভগ্নিপতির প্রলোভনে ঢাকায় এসে সাবরিনার বাসাবন্দি হয়ে যৌনকর্মী হতে বাধ্য হয়। পুষ্প ও সাবরিনাকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাসে বর্ণচোরাদের চরিত্র উন্মোচিত করে উপন্যাসটি নির্মিত। এক সময় পুষ্প গ্যাং রেপড হলে প্রতিহিংসার আগুনে সে দগ্ধ হয়ে নওয়াব আলীর ওপর প্রতিশোধ নিতে চায়। পুষ্পর জীবন হয়ে ওঠে আরও দুর্বিষহ। এরপরও একটু ভরসা ও স্বপ্নের স্থান: পুষ্পর যৌনবৃত্তির কথা জেনেও সাবরিনার ফ্ল্যাটের দারোয়ান যে কিনা অত্যন্ত পড়ুয়া আবদুল কাদের তাকে ভালোবাসে। এতটুকুন মিষ্টি প্রেম কারারুদ্ধ জীবনে পুষ্পর জন্য যেন নিশ্বাস নেওয়ার সতেজ অম্লজান…
ফাঁদ
আকাশের বুকে মানুষের পা হাঁটে না, চোখ হাঁটে। দিগন্তের দিকে যেই চোখ পড়ে মন ছুটে যায় নিমিষে। এই যে চোখের সাথে মনের অন্তর্নিহিত যোগসূত্র সেখানেই কবিতার বসবাস। কবিতা মানুষকে আকাশে হাঁটায়, দিগন্তে ঘুরায় আর সৌন্দর্যের আতিশয্যে বসবাস করায়। বর্তমানে বিজ্ঞানের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, এই যে আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল- এসবের সুন্দর ও নান্দনিক প্রতিফলন মেলে কবিতায়। সমালোচক কবি Arnold কবিতাকে বলছেন, ‘Criticism of life.’ সিডনি তাঁর ‘An Apology for Poetry’-তে কবিতাকে দেখছেন ‘A divine gift’ হিসেবে। আমরা বাঙালি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। ভাষার জন্য আমাদের প্রাণ দিতে হয়েছে। আমাদের দেশ বাংলাদেশ। দেশের জন্য লক্ষ লক্ষ জনতার প্রাণ গেছে। ভাষার জন্য, দেশের জন্য যে মানুষটি আমাদের পথ হাঁটিয়েছেন তিনি হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
কিছু বিপথগামী সেনাবাহিনীর হাতে বঙ্গবন্ধুর প্রাণহরণ কবি মাহবুব জন-কে গভীরভাবে আলোড়িত করে। সৃষ্টিশীল মানসপটে নতুন প্রজন্মের কবি মাহবুব জন দেশ, মাটি তথা মাতৃভূমি, সমাজ, গোষ্ঠী, চারপাশের দৃশ্যাবলী- তীক্ষè অনুভূতির এক উজ্জ্বল আলোকছটা তাঁর এ ‘ধুন্ধুমার’ কাব্যগ্রন্থটি। যেমনটি Arnold তাঁর`The Study of Poetry’ -তে বলেছেন, ‘Greatness of matter is inseparable from the greatness of manner’- পাঠক অনায়াসেই মাহবুব জন-এর ‘ধুন্ধুমার’ কাব্যগ্রন্থের সুন্দর বিষয়বস্তু এবং কাব্যিক বিন্যাসে মুগ্ধ হবেন।
ধুন্ধুমার
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.