Description
মানুষ ভুল করে
অগোচরে নাড়ে পাপ
উন্মেষ রাখে তার
উপলব্ধির ছাপ।
মাসুলে মানুষ করে
সে ভুলের অনুতাপ;
অমানুষ অজুহাতে
ঢাকে গ্লানির উত্তাপ।
$ 0.56 $ 0.94
কিছু একটা বলাটাই যখন বাধ্যবাধকতাÑবাহুল্য এবং আপেক্ষিক বাতুলতা বাদ রাইখা মাহবুব লীলেন থাইকা ধার কইরা বলতে হয়Ñ ‘আনফিট মিসফিট হইয়া হামাগুড়ি দিয়া হাঁটি, আর রাত্তিরে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ টাইনা চিক্কুর দিয়া কইÑ যাহ শালা বাঁইচা গেলাম আরও একটা দিন।’
এইটা বড়োবেশি জৈবিক বাঁচা
মানবিক বাঁচনের স্বপ্নও দেখি না বহুদিন
বড়ো তরাসে আছি
বড়ো বেশি চাইপা আছি, নিজের গলা নিজে।
মানুষ ভুল করে
অগোচরে নাড়ে পাপ
উন্মেষ রাখে তার
উপলব্ধির ছাপ।
মাসুলে মানুষ করে
সে ভুলের অনুতাপ;
অমানুষ অজুহাতে
ঢাকে গ্লানির উত্তাপ।
Weight | 0.67 kg |
---|---|
Published Year |
সঞ্চয় সুমন। ঢাকাবাসী এক কবি। যে শুধু কল্পনার রঙে আঁকে শব্দ খেলার মাঠ। এই গ্রন্থটি কবির প্রথম কাব্যফসল।
গুপ্ত সমরে মুক্তির ঠিকানা
মেঘ অদিতি। কবি ও গল্পকার হিসেবে ‘দু’বাংলাতে পরিচিত। জন্ম: ৪মে, জামালপুর। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘জলডুমুরের ঘুম (কাব্য)’ ‘অস্পষ্ট আলোর ঘোড়া (গল্প)’ ‘অদৃশ্যতা হে অনিশ্চিতি (কাব্য)’ এবং ‘সময় শূন্যতার বায়োস্কোপ (মুক্তগদ্য)।
প্রবেশিধকার সংরক্ষিত
অরণ্যক তপু। জন্ম: ১৯৯৪ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর, ঢাকার ঝিগাতলা। পৈত্রিক নিবাস বরিশালের পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলায়। বর্তমানে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ব্যথিত ভায়োলিন
রঞ্জনা বিশ্বাস। জন্ম: ১০ডিসেম্বর, ১৯৮১। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে খ্রিস্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ ও ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’ কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবির প্রকাশিত কাব্যফসল। এছাড়া কবি কবিতাচর্চার পাশাপাশি ফোকলোরচর্চাকেও ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। নৃ-তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মী কবির আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ ও ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ প্রকল্পে কাজ করছেন। এছাড়া এখন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগে কর্মরত আছেন।
বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস
কিরণ আকরামুল হক এর “অহেতুক মানুষ” বইয়ের কবিতাগুলি আমাকে পড়তে হয়েছে নানকারণে। প্রথম বই প্রকাশের পর দু’বছর বিরতি দিয়ে কবি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। কবিতার ভেতরের শিল্পকে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। রূপক, উপমার সেলাই শিখেছেন। সাথে প্রগতিশীলতার চর্চা থাকায়, ‘অহেতুক মানুষ’ গ্রন্থের প্রায় প্রতিটি কবিতাই কবিতা হয়ে উঠেছে। সমকালীন চিন্তা, বিষয় ভাবনা, আর পরিমিত নির্বাচিত শব্দ-প্রয়োগে অহেতুক মানুষ গ্রন্থের কবিতাগুলিকে কবি কিরণ আকরামুল হক এর ভাবনার পরিণত বুনন বলা যায়। গ্রন্থখানার দারুণ পাঠকপ্রিয়তা আশা করছি।
-ফিরোজ আহমেদ
অহেতুক মানুষ
আবু সাঈদ আহমেদের জন্ম ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নের সময়েই জনপ্রিয় সাপ্তাহিক সন্দ্বীপে প্রতিবেদন লেখার মাধ্যমে লেখক জীবনে প্রবেশ। কলেজ জীবন হতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছেন। কিন্তু লেখাকে কখনোই গুরুত্বের সাথে নেন নাই। তিনিই বাংলা ব্লগের অন্যতম জনপ্রিয় ব্লগার ‘হরবোলা’। অনলাইনে নির্মোহ রাজনৈতিক প্রবন্ধ, তীক্ষ্ম স্যাটায়ার, কবিতা আর অণুগল্প তাকে এনে দিয়েছে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা। আমমানুষের পক্ষের একজন লেখক ও এক্টিভিস্ট হিসেবে একাধিকবার শারীরিক হামলার স্বীকার হয়েছেন, কিন্তু নীরব হন নাই।
লংকা কিন্তু জ্বলছে না
ভূমিকা
‘সীমান্তিনী’ আমার লেখা দীর্ঘ কবিতার মধ্যে অন্যতম। বারোটি কবিতা নিয়ে এই বইটি। কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে প্রেমের পাশাপাশি পাহাড়ি সৌন্দর্য, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো, হাজং প্রভৃতি আদিবাসীদের সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও তাদের জীবনধারা। পাহাড়ি নারীর সৌন্দর্য, বালুকণা, সমুদ্র, আঁকাবাঁকা-উঁচুনিচু পথের দৃশ্যও এই বইতে চিত্রিত হয়েছে। প্রতিটি কবিতার পাতা রাঙানো হয়েছে ভালোবাসার রঙে।
কিসিঞ্জার ভূঁইয়া
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সীমান্তিনী
আলী রেজা। জন্ম: ১৯৫৭। মুক্তিযুদ্ধে আলোড়িত কবি, সত্তর দশকে মূলত ছোটকাগজে লেখালেখি শুরু করেন। সদ্য অবসরে যাওয়া একটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক। এটি কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
আলী রেজা
সাঈদা মিমি। জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৮। বরিশালে। পেশাগত দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের সাহিত্য সম্পাদক। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচটি। শ্রাবন প্রকাশনী থেকে ২০০৮ এ প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই ‘সব নিয়ে গ্যাছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস।’ দীর্ঘ বিরতির পর আগুনমুখা থেকে ‘ফারাও কুমারী’ Ñ২০১৪ সালে। বাংলার ই-বুক থেকে ই-বই ‘কীর্তনখোলা।’ -২০১৫ সালে। ২০১৬ তে অনুপ্রাণন থেকে কাব্যগ্রন্থ ‘একজন মৃতের ডায়েরী’ এবং কালজয়ী প্রকাশ থেকে ‘শুশুনিয়া পাহাড়’।
ঔরঙ্গজেবের নীল ঘোড়া
সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব। জন্ম: ১৯৭৮ সালে বরিশাল জেলা সদরে করিমকুটির নামক স্থানে। তার লেখার বিষয় মূলতঃ কবিতা। সময় নাট্যদলের সাথে একযুগ পার করেছেন। গানও লিখতেন কিন্তু বন্ধুবরের প্রয়ানে, অভিমানে আর সেপথ মারাননি। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকলেও নিজেকে একজন কবিতার শতরঞ্জি মোড়ানো শ্রমিক বলেই মনে করেন। এটি কবির প্রথম বই।
রূপোর দ্যুতি
সরদার ফারুক। জন্ম ১৯৬২ সালের ৯ নভম্বের, কপোতাক্ষ নদের তীরে খালিশপুরে। পৈত্রিক নিবাস বরিশালের কাশীপুর। পেশায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বরিশালে ঘাট শ্রমিকদের ?আন্দোলন, ডেমরায় শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদের সংগ্রাম ও বাজিতপুরের জেলেদের লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
নব্বইয়ের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তিনি সরকারী চাকরি ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনও করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। ১৯৮০ সালে বরিশালের অধুনালুপ্ত ‘সাপ্তাহিক লোকবাণী’ পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে শামসুর রাহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক বিচিত্রা, দৈনিক দেশ, সংবাদসহ দেশ-বিদেশের নানা পত্র-পত্রিকা, সাহিত্য সাময়িকীতে তার লেখা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
নোনা শহর
সেদিন এক গরুচোরের সাথে সাক্ষাত হয়ে গেল সবার, চোরটি নিজে থেকেই বলল—আমার নাম মজিদ। আমি একটা গরুচোর।
দলে নিয়োগ চলছিল। ইন্টার ডিস্ট্রিক বাস ডাকাতদলের সভাপতি জুম্মন খাঁ, অজ্ঞানপার্টি অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি, নিখিলবাংলা পকেটমার মহাসঙ্ঘের সেক্রেটারি বসা। এরাই দলের নিয়োগদাতা।
কিন্তু মজিদকে দেখে মোটেও গরুচোরের মতো লাগছিল না। গরুচোর হবে গরুচোরের মতো কিন্তু এরে সে রকম লাগছে না। এরে মকবুলের মতো লাগে।
মকবুল কে? মকবুল হলো মুরগি চোর। একসময় এই দলের হয়ে কাজ করত। এখন দল ভেঙে আলাদা দল করেছে। টেক্কা দিতে চায়।
অজ্ঞান স্পেশালিস্ট একাব্বর আলি সরু চোখে মজিদের দিকে তাকাল। তার ইচ্ছে করছে চোখেমুখে মলম ঘষে দিতে। একরাশ সন্দেহ নিয়ে বলল—তা মজিদ মিয়া, কয়টা গরু তুমি চুরি করছ?
মজিদ মাথা চুলকায়। ঘাড় চুলকায়। একটু লজ্জাও পায়। বলল—খুব বেশি না ওস্তাদ, আমি তো রেনডম গরু চুরি করি না। যখন কোরবানি আসে, গরুর হাটে ঘোরাঘুরি করে চান্সে চুরি করি। বছরে ওই একটাই সিজন আমার।
—তাই বল! একাব্বর হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। সন্দেহ আমার ঠিকই ছিল—ভাবতে ভাবতে সবার দিকে তাকিয়ে একটু ফুলে ওঠে, গর্বে। আসলে এই ব্যাটাকে মুরগি চোরের মতো লাগছিল। বিশ্বাসঘাতক মকবুলের চেহারার লগে মিল আছে। মকবুলও ছিল বিরাট মুরগি চোর।
—তা এইখানে কি মনে করে?
মজিদ বলল—ওস্তাদ, আমারে দলে নেন। চুরিধারী দল থেকে না করলে পোষায় না। একলা একলা ভালো লাগে না। মামারা ধরলে ছাড়ানোর কেউ থাকে না কোর্টে চালান খাইয়া যাই।
মজিদের কথায় সিদ্ধান্তের জন্যে সেক্রেটারি তাকায় সহ-সভাপতির দিকে, সহ-সভাপতি তাকায় সভাপতির দিকে। সভাপতি কারো দিকে না তাকিয়ে নিজের ডানহাতের চার আঙুলে পরা আংটির দিকে তাকিয়ে রইল। দুর্লভ পাথর বসানো সব আংটি। কোনোটি হীরা। ইয়াকুত আর লাল জমরুদ পাথরের আংটি দুটি নাকি খুবই বিখ্যাত। সাদা চুনি নাকি পৃথিবীর কোথাও নেই। একটিই। তাও জুম্মনের হাতে, ভাবা যায়! এই আংটিগুলির বৈশিষ্ট্য হলো ডান হাতে পরতে হয়। কিন্তু জুম্মনের হাতে মোট আঙুল চারটি। একবার ডাকাতি করতে গিয়ে গৃহস্থের দায়ের কোপে একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল। ফলে চার আঙুলেই আংটি পরতে হয়।
কাটা আঙুলের দিকে তাকিয়ে জুম্মন ডাকাত হতাশায় মাথা নাড়ে—মজিদ, গরুচোর মুরগি চোরের বিষয় না, আমরা এমন এক হাত সাফাইয়ের খোঁজ করছি, যে মুরগি নয়—মুরগির পিত্তথলি হাত চালিয়ে বাইরে আনতে পারবে, কিন্তু মুরগি টের পাবে না। পারবে?
ওস্তাদের কথায় খুব হতাশ হয়ে গেল গরুচোর মজিদ। চোখেমুখে পানি চলে এলো প্রায়। এত সুক্ষ্ম কাজ পারবে না সে। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল—খুব ইচ্ছা ছিল আপনাদের সাথে কাজ করার। হলো না। বিদায় দেন ওস্তাদ।
বলে সবার সাথে হাত মিলিয়ে মজিদ চলে গেলে জুম্মন খাঁ নিজের আঙুলের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল—আমার আংটি, আমার আংটি!
…………
মকবুলের ডেরায় যখন মজিদ চারটি আংটি ছড়িয়ে দিল তখন খুব হাসাহাসি হলো, জুম্মন ওস্তাদের থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেছে কল্পনা করে। হাত সাফাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে গেল মজিদ।
মকবুল কথা দিলে কথা রাখে।
গরুচোর
সরদার ফারুক। জন্ম ১৯৬২ সালের ৯ নভম্বের, কপোতাক্ষ নদের তীরে খালিশপুরে। পৈত্রিক নিবাস বরিশালের কাশীপুর। পেশায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বরিশালে ঘাট শ্রমিকদের ?আন্দোলন, ডেমরায় শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদের সংগ্রাম ও বাজিতপুরের জেলেদের লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
নব্বইয়ের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তিনি সরকারী চাকরি ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনও করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। ১৯৮০ সালে বরিশালের অধুনালুপ্ত ‘সাপ্তাহিক লোকবাণী’ পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে শামসুর রাহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক বিচিত্রা, দৈনিক দেশ, সংবাদসহ দেশ-বিদেশের নানা পত্র-পত্রিকা, সাহিত্য সাময়িকীতে তার লেখা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
নোনা শহর
ভূমিকা
‘ভাঙনের ডাক’ উপন্যাসটি ভাঙন কবলিত গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবি। উপন্যাসটিতে গ্রামের কৃষক জীবন, সবুজে ঢাকা গ্রাম নদী ভাঙনের ফলে কিভাবে তার সক্রিয়তা হারায়, সেই সাথে উঠে এসেছে ঐতিহাসিক একটি বাজারের বর্ণনা ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আর্তনাদ।
‘ভাঙনের ডাক’ উপন্যাস নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এখানে গ্রাম্য বধূর সবিস্তার কাহিনী সরলার চরিত্রের মাধ্যমে রূপায়িত হয়েছে। তাছাড়া করিম শেখ ও অন্তুর কাহিনীও এখানে প্রযুক্ত হতে দেখা যায়। বেজগাঁও গ্রামে রাজা রাজবল্লভের বাড়ি, দিঘলী বাজার, কদম পাগলের মাজার ঘিরে মেলা এখানে বর্ণিত হয়েছে।
‘ভাঙনের ডাক’ উপন্যাসে সত্যিকার অর্থেই ভাঙনের একটা সচিত্র ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে আবেগ, কৌতূহল, স্বপ্ন আকস্মিকতা উৎকণ্ঠা বজায় রয়েছে। যা পাঠক সাধারণের মনকে একটা সন্মোহ সীমানায় ধরে রাখতে সক্ষম। তাছাড়া এই উপন্যাসে সমাজ মানসের কিছু বিশ্বস্ত চিত্রগাথা পরিস্ফুট উঠার সুযোগ পায়। যা শুধু এদেশীয় সংস্কৃতির আদলে গড়ে ওঠেছে। যেমন ভেলা ভাসানি, বৈশাখী মেলা, কদম পাগলের বার্ষিক মেলা, বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য মেঘরানী উৎসব। সেই সাথে ফুটে উঠেছে একটি কৃষক পরিবারের অভাব-অনটন ও প্রকৃতির বৈরিতা। পদ্মার ভাঙন আর ঝড়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষের আর্তনাদ, যা পাঠ করে অনাস্বাদিত জগতের উপমিত আস্বাদন করা সম্ভব।
ভাঙনের ডাক
সম্পাদকীয়
শিল্প-চেতনার ঐক্য
দেশে-বিদেশে সাধারণভাবে এটাই ধরে নেয়া হয় যে কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পীরা সাধারণ মানুষদের তুলনায় সমাজ সম্পর্কে অধিকতর সচেতন, সক্রিয় এবং অগ্রসর ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি গোষ্ঠী। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে এই গোষ্ঠীর সকলেই সমমনা এবং তারা একক কোন সংগঠনে মিলিত অবস্থায় রয়েছেন। এর কারণসমুহ সময়ের সাথে সম্পর্কিত সমাজের আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতির বাস্তব ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যেতে পারে।
ভাষা, শব্দ, কণ্ঠ, বাদ্যযন্ত্র, রঙ, তুলি অথবা যে কোন উপকরণ ব্যবহার করে সুর ও সুন্দরের চর্চা, অভিব্যক্তি ও নির্মান যা মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে, হৃদয়ে আবেগ-অনুভূতি আন্দোলিত করে, মন মুগ্ধ করে অথবা মেধা ও মননে গভীর ছাপ ফেলে যায়- কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পীরা সেই কাজেই নিজের প্রতিভা বিকাশের সাধনায় নিয়োজিত থেকে সমাজে সুর ও সুন্দরের সৃষ্টি করে যেতে থাকেন। সুতরাং তাঁদের স্বাভাবিক অবস্থান কুৎসিত, অন্যায়, অন্যায্য ও অসুন্দরের বিরুদ্ধে এবং এটাই একান্তভাবে প্রত্যাশিত। সেখানে বিভেদের কী কোন অবকাশ থাকে? সত্য ও সুন্দরের আরাধনা করতে চাইলে একজন শিল্পীকে বুদ্ধিবৃত্তির পরিচর্যায় নিমগ্ন হতে হবে এবং অনস্বীকার্যভাবে কুসংস্কার, ভীরুতা, জরাজীর্ণতা ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। কিন্তু, বাস্তবে আমরা কী দেখতে পাই? শুদ্ধ শিল্পসিদ্ধি এবং বাস্তবজীবন বীক্ষণ বোধ ব্যক্তি ও ক্ষেত্র বিশেষে যেন সম্পর্কবিহীন দুটো সেতুবিহীন রাজ্যের মতো বিভক্ত রয়ে যায়। কিন্তু, এটা কেন?
আমাদের নন্দনবোধের সাগরে প্রকৃতি যেমন একটা বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে, ঠিক তেমনই জীবন যাপনের ক্ষেত্রে পরিবেশ চেতনা কী বাস্তব পর্যবেক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়? এই দুটি বিষয়কে কল্পনা বা বাস্তবে কী কোন প্রভাবেই বিচ্ছিন্ন করা যায়? অসীমের অন্বেষণ ও স্বপ্নচারিতা একজন শিল্পীর থাকতে পারে। সৌন্দর্যের সন্ধানে অসীম ও অনন্তের দিকে যাত্রা করাও দোষের নয়। পরম সত্যের সৃষ্টির রহস্যকে ঘিরে অনুসন্ধান অনুসন্ধিৎসা আলো-অন্ধকারের উজ্জীবনে না হয় ক্লান্তিতে হয়ত হাবুডুবু খাবে। কখনো কখনো অন্ধকারের স্তব্ধতা নৈঃশব্দের দ্যোতকরূপে চেতনায় সংগুপ্ত থাকবে কিন্তু চিন্তায় সংকীর্ণতা, স্বার্থবাদী ও ক্ষমতাশালী উপনিবাশবাদী শক্তি পরিচালিত ভেদ ভাবনা অথবা মৌলবাদ কখনো মানবমুক্তির স্বপ্নের উজ্জ্বল আলোকে স্পর্শ করতে সাহায্য করতে পারবে না।
কালোত্তীর্ণ শিল্প কী জীবন বিচ্ছিন্ন ছিল? মানুষের দেহ ও তার অবয়বকে, তার যাপিত জীবনের সংগ্রাম অথবা উৎসবের বাইরে মানুষকে ছুঁড়ে দিয়ে মৌলবাদী কোন বিশ্বাসে শৃঙ্খলিত করার কোন অপচেষ্টায় সেসব শিল্প কর্ম কী লিপ্ত ছিল? এমন কোন অভিযোগ অথবা এমন কোন বিশেষণে সেসব শিল্প কর্মকে কী বিশেষায়িত করা সম্ভব? মানবসভ্যতার ইতিহাসে কালোত্তীর্ণ শিল্পের আধারে আত্মার মুক্তি কখনোই অধিক যথার্থ প্রশ্ন ছিল না- যতনা ছিল প্রেম, মানবতা ও মানব মুক্তির বিষয়াবলী। আর এ-কারণেই বুঝে নেয়া দরকার যে ক্ষমতার বর্বরতা ও নৃশংসতার সঙ্গী-সমর্থক হয়ে কখনোই প্রেম, মানবতা ও সুন্দরের পূজা সার্থক সিদ্ধি লাভ করতে পারে না। কেননা যখন ঘৃণা অথবা প্রেম থেকে শিল্পকে যে কোন একটাকে বেঁছে নেয়ার প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় তখন মানবতাই শিল্পের ধর্ম হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। কেননা- প্রেমই সুন্দর এবং প্রেমই মানবতার বৈশিষ্ট।
যদিও প্রতিটি মানুষের মধ্যেই সংবেদনশীলতা বিরাজমান কিন্তু এর মাত্রা ও স্বাতন্ত্র্য সবার অস্তিত্বে সমভাবে লালিত হয় না। যারা একটু অধিক মাত্রায় সংবেদনশীল তাদের ইন্দ্রিয় সদা জাগ্রত থাকে, তাঁরা প্রকৃতি থেকে সৃষ্টির চিরন্তনতার নির্যাস পায়, অসীমের অস্তিত্ব এবং সৃষ্টিতত্ত্বের মহিমা হৃদয়াঙ্গম করতে পারে। শিল্পী সমাজের সদস্যগণ জীবন প্রবাহের সব উপকরণের মধ্যে সত্য, সুন্দর, সততা ও সরলতাকে অবিচ্ছেদ্যতার সাথে তাঁর অস্তিত্ব দিয়ে আকাঙ্খা করেন। মানুষ ও মানবজাতির কল্যাণ চিন্তায় হন সবচেয়ে অগ্রগামী এবং এ-কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বৈষয়িক জীবনে বঞ্চিত রয়ে যান। বৈষয়িকভাবে তাঁর বঞ্চিত হওয়া অবাঞ্ছিত নয়, কারণ লেখক ভোগবাদের উপাসক নন, তিনি উপাসক প্রেম ও সত্যের- যে প্রেম, যে সহমর্মিতা, যে ভালোবাসা, মানবজাতির চিন্তা-চেতনা ও জীবন যাপনের সেই সত্য ও সুন্দরতা- যে সত্য থেকে, যে সৌন্দর্য থেকে জীবন সত্য- সদা প্রসারিত ও স্পন্দিত।
জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি যাই থাকুক না কেন, ন্যূনতম ক্ষুধা ও তৃষ্ণার দাবি মিটিয়ে শিল্পী তাঁর মনে কল্পনার একটি সুন্দর জগৎ সৃষ্টি করেন, যে জগতে অপ্রাপ্তির ইতিহাসও প্রমূর্ত হয়ে ওঠে। কল্পনাকে সত্য বলে উপলব্ধি করে লেখক বিশ্বের স্বর্ণযুগ কল্পনা করেন। যদিও স্বপ্ন ও বাস্তবের মধ্যে অন্তহীন শূন্যতা থাকে তবুও শিল্পী যেমন নিজে স্বপ্ন দেখেন তেমনই অন্যকেও স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসেন। এসব সুন্দর স্বপ্ন দেখতে দেখতে একসময় অন্যদের মনোজগৎও স্বাপ্নিক ও সুন্দর হয়ে ওঠে। অনেকের ধারণা- শিল্পী শুধু কল্পনারাজ্যে বিরাজ করেন কিন্তু হৃদয়রাজ্যেও যে তাঁর অপ্রতিহত অবস্থান সে বিষয়টি ভেবে দেখেন না। একজন শিল্পী যুক্তিকে স্বীকার করেন, গ্রহণ করেন, ব্যবহার করেন হৃদয় দিয়ে এবং সেভাবেই সৌন্দর্য ও সত্যের অভিন্নতাকে প্রত্যক্ষ করেন। শিল্পী তাঁর চারপাশের সমাজ সংস্কৃতি পর্যবেক্ষণ করে অভিজ্ঞতা সঞ্জাত অন্তরের নির্যাসটুকু শিল্পিতরূপে ছেনী-হাতুরী, রং-তুলি অথবা কলমের ডগা থেকে শূন্যতার সময়পটে চিহ্নিত করেন। নৃশংসতা, বর্বরতা, দমন-নিপীড়নের সাথে যেমন সত্য ও সুন্দরের ঐক্য হতে পারে না তেমনই একজন শিল্পী সমকালীন সমাজের শক্তির বিভাজনে অবশ্যই নির্যাতিতের পক্ষেই তার অবিচ্ছেদ্য অবস্থান নিশ্চিত করেন। এটাই শিল্পী সমাজের ঐক্যের মূল সূত্র। অনুপ্রাণন, শিল্প-চেতনার ঐক্যের এই মূল সূত্রের দিকেই সবাইকে ধাবিত করার প্রচেষ্টা করে যেতে চায়।
সপ্তম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা
ছৌ মুখোশের মুখ
লেখক পরিচিতি :
কুহক মাহমুদ। জন্ম: ৬ই সেপ্টেম্বর। তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে পুরানো ঢাকায় বসবাস আর বেড়ে ওঠা যৌথ পরিবারে। নিজের অজান্তেই কবিতা প্রেমিক হয়ে ওঠায় কবিতাকেই বেশি ভালোবাসা হচ্ছে ব্যস্তানুপাতিক সাংসারিক মায়াজালে। এটি লেখকের প্রথম কাব্য গ্রন্থ।
গোধূলির প্রস্থানে জ্বালাও পূর্ণিমা
শহরের প্রতিটি দরজা জানালার মতোই নিঃসঙ্গ, শহরের মানুষগুলো। এ নিঃসঙ্গ মানুষগুলোই হাসির লিফলেট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তার সংসার, তার সমাজ, তার রাষ্ট্রে। আর মন জুড়ে জমতে থাকে কিছু উত্তরহীন প্রশ্ন, কিছু আক্ষেপ, কিছু ক্ষোভ। এমন কিছু উত্তরহীন প্রশ্ন, কিছু আক্ষেপ আর কিছু ক্ষোভের সংকলনই ‘যে শব্দ ঠিকানা জানে না’।
কবিতার নামকরণে ও কবিতা নির্বাচনে আমার বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। এ ক্ষেত্রে যাঁর অকৃপণ সহযোগিতায় ‘কাব্য’ ‘গ্রন্থে’ পরিণত হয়েছে, তিনি আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। অনেক ব্যস্ততার মাঝে কবিতাগুলো নির্বাচন করে, কিছু কবিতার অংশ বিয়োজন, কিছু কবিতার নতুন নামকরণ করে গ্রন্থরূপে প্রকাশযোগ্য করে দেয়ার জন্য স্যারের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা। এখানেই শেষ নয়, কাব্যগ্রন্থটি যে ‘স্বনাম’ ধারণ করেছে, এর একচ্ছত্র কৃতিত্ব স্যারেরই।
কবিতার বানানে কিছুটা স্বেচ্ছাচারিতা থাকে, যা পূর্ববর্তী কবিদের ক্ষেত্রেও দেখেছি। তবে আধুনিক বানানরীতির শুদ্ধতাকে তো এড়ানো যায় না! কবিতার শুদ্ধ বানানের ক্ষেত্রে যাঁর একটি রাতের বেশিরভাগ সময় নির্ঘুম কেটেছে, তিনি আমার আরেক শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ইমন সালাউদ্দিন স্যার। আমি তাঁর কাছেও সমানভাবে কৃতজ্ঞ।
যে শব্দ ঠিকানা জানে না
কবিতার পথ কণ্টকময়। চিরকাল কবির আরাধ্য, তবু কবিতা অধরা থেকে যায়। এটা সত্য, কবির ঔরসে কবিতার জন্ম। কিন্তু যখন কবি থাকেন না, তখন কবিতাই বহন করে কবির অলৌকিক স্বর।
এক যুগ ধরে কবিতা-পথের যাত্রী মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। তার লেখাগুলো প্রধানত প্রেম, সৌন্দর্য চেতনা, দর্শন যাপনের অভিঘাতকে কেন্দ্র করে। সরল বাক্যবন্ধে কবিতায় তার উচ্চারণ চিরকালীন।
মিথ্যুক আবশ্যক তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রিয় পাঠককে কবির শিল্পজগতে আমন্ত্রণ।
মিথ্যুক আবশ্যক - Mitthuk Abosshok
কবির কবিতা চৈতী হাওয়ায় ভেসে যাওয়া কোনো সামান্য ফুল নয়; সে ফোটে বিরল আষাঢ়ে, উপোষী ফাল্গুনে আর ঝলসে ওঠে অমলধবল দারুণ আগুনে।
কন্যারা জলজ নয়
আর্থিক সংকট হতাশার জন্ম দেয়। হতাশাগ্রস্ত সরল মানুষ কখনো কখনো মনের অজান্তে অপরাধী হয়ে ওঠে- পরিবার ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা জসিম, সবিতা, বিপ্লবের গল্প এটি। ভরা যৌবনে এসে বিপ্লব আবার ফিরে পায় বাল্যবন্ধু জসিম ও তার বোন সবিতাকে। বিপ্লব-সবিতার আবছায়া বাল্যপ্রেম পূর্ণতা পায় এবার। কিন্তু শাহবাগের গণজাগরণ শুরু হলে চেতনাগত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে তারা। চেতনাগত দ্বন্দ্বে কি প্রেম টিকে থাকে? আবার প্রকৃত প্রেম কি নিঃশেষ হয়ে যায় কখনো হৃদয় থেকে?
কাহিনি নির্মাণে যুক্ত হয়েছে আরো অনেক চরিত্র। বিপ্লব, সবিতা, জসিম চরিত্র যেভাবে পাঠককে ভাবাবে- সাদিয়া, সাইদ, জব্বার চরিত্রও পাঠককে নাড়া দেবে।
শাহবাগের গণজাগরণ নিয়ে লেখা উপন্যাস বিষমায়া।
বিষমায়া
একটি মেয়ে, জন্ম থেকে বোধ করি আলাদা ব্যতিক্রমী ভাবনায় গড়ে উঠেছে। দেশভাগের পর, নানান টানা-পোড়েনে বেড়ে ওঠা তাদের পরিবার। এক একটা ঘটনা হয়তো তুচ্ছ, অতি তুচ্ছ। সেই সময় তার কাছে বিশাল বিস্ময় হয়ে উঠেছিল। এক একটা আঘাত প্রতিনিয়ত তাকে সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছে। জীবনের মধ্যপ্রান্তে ক্লান্ত ‘বিকেলের আলোয়’ সে সবকিছুই দেখতে পায়। সেই সব হারানো না ফিরে পাওয়া দিনগুলো। সেই সব দিনগুলো আজো খুঁজে বেড়ায়। আজো বেলিফুলের তীব্র ঘ্রাণ নাকে আসে বাতাসের সাথে। শেষ প্রহরের সিনেমা ভাঙা গান আজো বাজে। ট্রেনের হুইসেলের শব্দে আজো যেনো ঘুম ভেঙ্গে যায়।
ভালো লাগবে আশা করি প্রিয় পাঠকের।
বিকেলের আলোয়
লেখক পরিচিতি :
নিখিল নওশাদ। জন্মসন: ১৯৮৯ইং। বড়িয়া, ধুনট, বগুড়া, বাংলাদেশ। ‘বিরোধ, ‘নিওর’ ও ‘নীড়’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই। এছাড়া ছোটগল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।
এটি একটি চিৎকার
বর্তমান শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক চলছে। এ দশকে কিছু নবীন কবিদের দেখা মেলে। যাদের শব্দশিল্প, অনুভবভেদ্য চিন্তাশৈলী নিজস্ব কাব্যভাষার নির্মাণের অভিঘাতে শিল্পিত হয়ে উঠতে দেখি। নতুন শতাব্দীর এসব কবিগণও বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য থেকে সরে আসেননি, বরং শিল্পের দায় স্বীকার এবং এর চাহিদার সঙ্গে মানবিক উৎকর্ষতা সন্নিবেশনে ছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী। তাঁদেরই একজন কবি বঙ্গ রাখাল।
এই কবি সময়কে জীবনের অনুষঙ্গ মেনে চিত্তের মৌনতা ও দ্রোহকে কবিতার ক্যানভাসে তুলে আনেন, যা যাপিত জীবনের পরম্পরা ও সমূহ সত্যটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণসহ উদ্ভাসিত করে। কবির মনোজলোকে কামনা-বাসনার জটিল আবর্তে তাকে পরিগ্রহ হতে দেখি। তখন কবিতা হয়ে ওঠে রূপবিশ্বের অমেয় আঁধারের শক্তিশালী এক রূপকল্প। তবে এ বিষয়টি কবি বঙ্গ রাখালের গদ্যফর্মে লিখিত কবিতার মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
বঙ্গ রাখালের কবিতাকেও কখনো কখনো উদ্দেশ্যহীনভাবে গন্তব্যমুখী হতে দেখা যায়। এই দ্বন্দ্ব মূলত কবির দৃষ্টিভঙ্গিগত এবং সামষ্টিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে স্পষ্ট। সাম্প্রতিক কবিদের কবিতার নিবিড় পাঠে এই সত্য নিদারুণভাবে উঠে আসে। তথাপি বঙ্গ রাখালের কবিতায় মা-মাটি-মানুষের গন্ধ যে নেই তা বলা যাবে না। বিশেষত এই কাব্য লণ্ঠনের গ্রাম-এর ‘পদ্মপুরাণ: অর্ধেক জীবন অর্ধেক ছেদন’ পর্বের কবিতাগুলোতে তা প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেছে। বঙ্গ রাখালের কবিতায় পাঠক যেমন বিজ্ঞানচেতনার নিরাসক্তি খুঁজে পাবেন, তেমনি আবেগ ও মননশীলতার উজ্জীবনও উপলব্ধি করবেন।
-মামুন মুস্তাফা
লণ্ঠনের গ্রাম
গ্রামের পাশে যে বিশাল বাদাম ক্ষেত আর ক্ষেতের পাশে যে ছোট নদী, সে নদীতে মাঝারি সব ঢেউ ওপার থেকে এপাড়ে আসে খড়কুটো মুখে নিয়ে। আর কত কিছু ভেসে আসে আর চলেও যায়—সারা দিনভর ছোটনেরা সেইসব দেখে পাড়ে বসে বসে।
ছোটনেরা মানে হলো—হাবিবুল, রতন, মোবারক, শেফালি বকুল এরা। কালিয়াখোল গ্রামের ছোটরা। তারা প্রতিদিন নদীতে আসে আর কাঁচা বাদাম খেতে খেতে লক্ষ করে নদীটাকে। নদীর ভেতরে কত কিছু। কাদাখোঁচা একটি দুটি। বালিয়া হাঁসের সাদা পাখনা উড়তে থাকে। আর ওপারের মেঘ যখন উড়তে উড়তে এপারে আসে তখন জলিল কাকার সময় হয় জোয়ালের গাই দুটাকে গোসল দেয়ার। গাই দুটার গোসল দেখতে দেখতে আর বাদাম খেতে খেতে দলের মধ্যে মোবারক নামে যে আছে, সে একটা প্রস্তাব দিল। প্রস্তাব দেয়ার আগে বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নিয়ে কয়েকটা জানাশোনা তথ্যও দিল। যেমন—এই নদীতে কিছুই ডোবে না।
বাকিরা মাথা নাড়ে—হুম।
গরু ডোবে না, খড় ডোবে না। নাও-লঞ্চ কিছুই ডোবে না। ভেলা ডোবে না।
সবাই মাথা নাড়ে। কাঁচা বাদাম খায়।
—চল আজকে একটা খেলা খেলি। মিনুরে ডুবাই দেই। দেখি ডোবে কি না?
ছোটনরা একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। প্রস্তাবে জোর সমর্থন দেয় নুরু। প্রস্তাব সমর্থন নিয়ে নুরু কারো দিকে তাকায় না। নদীর পেটে জলের প্রবাহ দেখতে দেখতে তারা স্কুলঘর দেখে। দূরের আকাশছোঁয়া মিনার মসজিদ দেখে।
—মিনুও ডুবত না। এই নদীতে কিছুই ডোবে না–বলে সাহস দেয় নুরু। ততক্ষণে মিনুকে নিয়ে এসেছে মোবারক।
মিনু জল দেখে ভয় পায়। বলে—মিঁউ!
বিশাল নদী। বিশাল চর। মিনু ভয় পায়। ডাকাডাকি শুরু করে দেয়—মিঁউ মিঁউ।
মিনুকে কোলে নেয় হাবিবুল। হাবিবুল থেকে নেয় রতন। রতন থেকে নেয় শেফালি। শেফালি থেকে নেয় রাজন। রাজন থেকে নেয়া নুরু। নুরু থেকে কেউ নেয় না। কারণ নুরু কাউকে দেয় না। সে মিনুকে ছুড়ে দেয় নদীতে।
সবাই হাসে। মিনু সাঁতার কাটে। ঠিকমতো পারে না। নদীতে ঢেউ। তলিয়ে যায়। ছোট্ট মাথা। ডোবে ভাসে। সবাই হাসে–খুশিতে হাততালি দেয়।
দুই ঢেউয়ের চাপে পড়ে মিনু ডাকে—মিঁউ মিঁউ।
প্রাণপণ চেষ্টা করে মিনু কচি পা দিয়ে পাড়ে আসতে পারে না। দূরে সরে যায়। আবার আসে। পাড়ের কাছে আসেও। কিন্তু নুরুরা ঢিল ছোড়ে। হি হি করে হাসে। হাত তালি দেয়।
মিঁউ মিঁউ করতে করতে নদীর ভেতরে চলে যায় মিনু। ঢেউয়ের ভাঁজের ভেতরে চলে যায়। ডুবে যায়। পাড়ে বসে রাজন শিস দেয়।
…………
রাতের বেলায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে পুরো ব্যাপারটা আবার দেখে ছোটন। মিনু ডুবে যাচ্ছে। ভেসে উঠছে। চিৎকার করে ওঠে ছোটন। ঘামে নেয়ে ওঠে সে। কিন্তু তার ঘুম ভাঙে না। ঘুমের মধ্যেই ছোটন বোঝে ঘুম না ভাঙলে সে নদী থেকে আর মিনুকে উঠাতে পারবে না।
সকালবেলা তাড়াতাড়ি মিনু যে কাজটি করে তা হলো ছোটনের বাবা-মাকে নিয়ে নদীর পাড় চলে এলো। তারা দেখল—নদীর ভেতরে একটা লাল জামা ভাসছে ছোটনের।
২৪১৯
কালিয়াখোল গ্রামের ছোটরা
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.