Additional information
Weight | 0.77 kg |
---|---|
Published Year |
$ 0.71 $ 1.18
কিরণ আকরামুল হক এর “অহেতুক মানুষ” বইয়ের কবিতাগুলি আমাকে পড়তে হয়েছে নানকারণে। প্রথম বই প্রকাশের পর দু’বছর বিরতি দিয়ে কবি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। কবিতার ভেতরের শিল্পকে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। রূপক, উপমার সেলাই শিখেছেন। সাথে প্রগতিশীলতার চর্চা থাকায়, ‘অহেতুক মানুষ’ গ্রন্থের প্রায় প্রতিটি কবিতাই কবিতা হয়ে উঠেছে। সমকালীন চিন্তা, বিষয় ভাবনা, আর পরিমিত নির্বাচিত শব্দ-প্রয়োগে অহেতুক মানুষ গ্রন্থের কবিতাগুলিকে কবি কিরণ আকরামুল হক এর ভাবনার পরিণত বুনন বলা যায়। গ্রন্থখানার দারুণ পাঠকপ্রিয়তা আশা করছি।
-ফিরোজ আহমেদ
Weight | 0.77 kg |
---|---|
Published Year |
সরদার ফারুক। জন্ম ১৯৬২ সালের ৯ নভম্বের, কপোতাক্ষ নদের তীরে খালিশপুরে। পৈত্রিক নিবাস বরিশালের কাশীপুর। পেশায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বরিশালে ঘাট শ্রমিকদের ?আন্দোলন, ডেমরায় শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদের সংগ্রাম ও বাজিতপুরের জেলেদের লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
নব্বইয়ের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তিনি সরকারী চাকরি ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনও করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। ১৯৮০ সালে বরিশালের অধুনালুপ্ত ‘সাপ্তাহিক লোকবাণী’ পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে শামসুর রাহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক বিচিত্রা, দৈনিক দেশ, সংবাদসহ দেশ-বিদেশের নানা পত্র-পত্রিকা, সাহিত্য সাময়িকীতে তার লেখা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
নোনা শহর
প্রাক-কথন
একটি সফল নাটক উচ্চারণ করে সময়ের সত্য, মানুষের অন্তর্গতে শায়িত থাকা সম্পর্কের সুস্পষ্ট স্বর।
নিজের শরীরে ধারণ করে জীবনের বহুমাত্রিক রং, যাপনের বর্ণমালা।
নাটক ‘ঈশান রাজকুমার’ এমনতর বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল।
ইতিহাস-নির্ভর রচনার ক্ষেত্রে লেখকের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। ঐতিহাসিক ঘটনা গুলির জন্য তাঁকে প্রাচীন পুঁথি, নথি এবং মানুষের মুখে মুখে ফেরা কথা ও কাহিনি থেকে নিজের লেখার উপাদান সংগ্রহ করতে হয়।
এবং এক্ষেত্রে লেখক হয়ে ওঠেন ভ্রামণিক। সময়ের সম্মুখে নয়, তিনি যাত্রা করেন অতীত সময়েরদিকে। পৌঁছাতে হয় পার-হয়ে-আসা-সময়ের হলুদ বৃত্তান্তগুলির কাছে। যে-লেখক তাঁর পুরোনো জন্মকালের মুহূর্তগুলিকে যত নিবিড় করে ছুঁতে পারেন, তিনিই তত সফলভাবে ঐতিহাসিক সত্যকে অধিগত করতে পারেন। সত্যের সেই বৃত্তান্তকে হাজির করতে পারেন তাঁর পাঠকের কাছে।
ইকবাল রাশেদীন শক্তিশালী কবি। কবির মননজাতবোধ এবং সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি দিয়ে তিনি ছুঁয়েছেন দু’শো পঞ্চাশ বছর আগের পৃথিবীকে। নিজের পরিশ্রমী গবেষণা দিয়ে তুলে এনেছেন ইতিহাসের বুকে ধুসর হয়ে যাওয়া ঘটনাক্রমকে। কবি থেকে নাট্যকার হয়ে ওঠা খুব সহজ কাজ নয়, সেই অসহজ কাজটিই ইকবাল করে দেখিয়েছেন তাঁর ‘ঈশান রাজপুত্র’নাটকে।
আমার মনে হয়েছে, নাটকের জাহাজটি একটি দেশ এবং ঈশান রাজকুমার সেই দেশের যোগ্য নেতৃত্ব। এবং সেইসাথে নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ঈশান আসলে ডানামেলা এক পাখি। যার দেশ নেই, সীমান্তনেই। আছে কেবল পৃথিবীময় একজগত বাড়ি। সেই বাড়ির বাসিন্দা হয়ে অন্তরমহল আর অন্দরমহলের কথাই সে উচ্চারণ করেছে আত্ম মগ্নস্বরে।
ইকবাল রাশেদীন কবি বলেই হয়তো এই আত্মমগ্নস্বরের নির্মাণে তিনি অনায়াস। এবং নাট্যকার হিসাবে তাঁর কৃতিত্ব এখানেই যে, এই আত্মমগ্ন স্বর শুধু তাঁর ‘আত্মমগ্নস্বর’ হয়েই থাকেনি, পাঠক/দর্শক ও খুঁজে পাবেন তার নিজের মতো করে নিজের ‘আত্মমগ্নস্বর’।
রেহান কৌশিক
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
১৬ ডিসেম্বর ২০১৭
ঈশান রাজকুমার
আবু সাঈদ আহমেদের জন্ম ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নের সময়েই জনপ্রিয় সাপ্তাহিক সন্দ্বীপে প্রতিবেদন লেখার মাধ্যমে লেখক জীবনে প্রবেশ। কলেজ জীবন হতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছেন। কিন্তু লেখাকে কখনোই গুরুত্বের সাথে নেন নাই। তিনিই বাংলা ব্লগের অন্যতম জনপ্রিয় ব্লগার ‘হরবোলা’। অনলাইনে নির্মোহ রাজনৈতিক প্রবন্ধ, তীক্ষ্ম স্যাটায়ার, কবিতা আর অণুগল্প তাকে এনে দিয়েছে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা। আমমানুষের পক্ষের একজন লেখক ও এক্টিভিস্ট হিসেবে একাধিকবার শারীরিক হামলার স্বীকার হয়েছেন, কিন্তু নীরব হন নাই।
লংকা কিন্তু জ্বলছে না
সাঈদা মিমি। জন্ম: ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮। বরিশালে। শৈশবের পুরোটাই এবং অর্ধেক কৈশোর কেটেছে পদ্মাপাড়ে, মানিকগঞ্জের ঘোনাপাড়া গ্রামে। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবনে। প্রথম প্রকাশিত হয় ইত্তেফাকে। ফ্রীল্যান্স সাংবাদিকতা, স্কুল মাস্টারিং, বায়িং হাউজের এডমিন, হাউজিং কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ইত্যাদি বিচিত্র কর্মজীবন মেষে অতঃপর গৃহিণী। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সব নিয়ে গেছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস’ ‘ফারাও কুমারী’ ও ই-বুক ‘কীর্তনখোলা’।
একজন মৃতের ডাইরি
বিলাল হোসেন
জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৭৪।
জন্মস্থান- মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার রাজারচর কাজিকান্দি গ্রামে।
প্রকাশিত বই-
১. কাব্যগ্রন্থ- বিরুপা’র শূঁড়িবাড়ি(২০১৪)
২. অণুগল্প সংকলন- পঞ্চাশ(২০১৫)
৩. মহাপ্রভু ও অন্যান্য অণুগল্প(২০১৬)
৪. কাব্যগ্রন্থ- একজ্বলাপঙক্তি(২০১৬)
স¤পাদিত বইসমূহ-
সেরা ১০০ অণুগল্প(২০১৫) (প্রিন্ট ভার্সন)
ই-বুক স¤পাদনা-
অণুগল্প সংগ্রহ-১,২,৩,৪; গোয়েন্দা অণুগল্প সমগ্র, ভূত অণুগল্প সমগ্র, রূপকথা অণুগল্প সমগ্র, নীতি অণুগল্প সমগ্র, চিয়ার্স চিয়ার্স চিয়ার্স, দুনিয়ার মাতাল এক হও, মাতালে মাতালে চেনে, মধুগন্ধেভরা, যুগলবন্দী (সুবর্না রায়), অণুগল্পের বিষয় বৈচিত্র্যের সন্ধানে, তাহাদের গল্প, অণুগল্পের অস্তিত্ব আছে, অণুগল্পের শিরদাঁড়া, অণুগল্পের রোজনামচা।
বাংলা ভাষার সেরা অণুগল্প
রাজন্য রুহানি। পরিবারের দেওয়া সনদসাক্ষ্য নাম মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। জন্ম: ২রা নভেম্ভর ১৯৮০, জামালপুর জেলা শহরের হাটচন্দ্রায়। কলেজে পা দেবার সাথে সাথেই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মফস্বল সাংবাদিকতার পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে বারবার কবিতার কছেই ফেরা। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং। ১৯৯৮ থেকে কবিতার ভাঁজপত্র শব্দদূত সম্পাদনার সাথে যুক্ত। ঐ বছরই অন্যান্য লেখক সহযোগে আলোচনাগ্রন্থ- ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ; আতিয়ার রহমানের ৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এটি লেখকের প্রকাশিত এককবই।
গল্প সমাপ্তির গান
নাহিয়ান ফাহিম। জন্ম: ২৩শে মার্চ, ১৯৮৪। ময়মনসিংহ জেলা। ঢাকাতে বেড়ে ওঠা। মূলতঃ পাঠক, ফলতঃ লেখক। সাহিত্য পত্রিকা ‘জলমাঝি’র সম্পাদক। মার্কেংটিং বিভাগে স্নাতকোত্তর। পেশাগত জীবনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিনদুপুরের নোটবই’।
মধ্যবিত্ত কবিতা
সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব। জন্ম: ১৯৭৮ সালে বরিশাল জেলা সদরে করিমকুটির নামক স্থানে। তার লেখার বিষয় মূলতঃ কবিতা। সময় নাট্যদলের সাথে একযুগ পার করেছেন। গানও লিখতেন কিন্তু বন্ধুবরের প্রয়ানে, অভিমানে আর সেপথ মারাননি। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকলেও নিজেকে একজন কবিতার শতরঞ্জি মোড়ানো শ্রমিক বলেই মনে করেন। এটি কবির প্রথম বই।
রূপোর দ্যুতি
ভূমিকা
‘সীমান্তিনী’ আমার লেখা দীর্ঘ কবিতার মধ্যে অন্যতম। বারোটি কবিতা নিয়ে এই বইটি। কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে প্রেমের পাশাপাশি পাহাড়ি সৌন্দর্য, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো, হাজং প্রভৃতি আদিবাসীদের সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও তাদের জীবনধারা। পাহাড়ি নারীর সৌন্দর্য, বালুকণা, সমুদ্র, আঁকাবাঁকা-উঁচুনিচু পথের দৃশ্যও এই বইতে চিত্রিত হয়েছে। প্রতিটি কবিতার পাতা রাঙানো হয়েছে ভালোবাসার রঙে।
কিসিঞ্জার ভূঁইয়া
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সীমান্তিনী
আবু জাঈদ। জন্ম: ২২শে জুলাই ১৯৮৩, ঢাকা। পড়াশুনা অসমাপ্ত রেখে একসময় কবি বাউণ্ডুলে জীবনের এলোমেলো আলপথে নেমে যান বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, তাই বলে কাব্যচর্চা থেমে থাকেনি। এক সন্তানের জনক। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
মানচিত্রের ফাঁসি চাই
হায়াসিন্থ হাউজ
কামরুজ্জামান কাজল বয়সে অনেক নবীন হওয়া সত্ত্বেও [জন্ম ২৫ মার্চ ১৯৯১] এবং অণুগল্প চর্চায় খুব বেশিদিন অতিবাহিত না করলেও ‘দলছুট শালিকগণ’ নামে যে বইটি প্রকাশিত হল;-এর বৈচিত্র্যপুর্ণ বিষয়বস্তু এবং অণুগল্প সম্পর্কিত ধারণার সাথে লেখকের যে নিবিড় ঐক্য স্থাপিত হয়েছে- বইটির পাঠশেষে এই কথাটাই মনে করবেন বিজ্ঞপাঠকগণ।
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা এই যুবকের ইতিপুর্বে ‘ শ্যাম পাহাড়ের আড়ালে’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৬’র একুশে বইমেলায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগ্রিকালচারে স্নাতক শেষ করে লেখক বর্তমানে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে মাস্টার্স করছেন।
‘দলছুট শালিকগণ’ কামরুজ্জামান কাজলের প্রথম অণুগল্পগ্রন্থ। অণুগল্পের ভিত্তি, বিকাশ এবং প্রচারে এই বইটি একটি মাইলফলক হিসেবে ভবিষ্যতে উচ্চারিত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
দলছুট শালিকগন
সম্পাদকীয়, অনুপ্রাণন–১০ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা
শিল্প-সাহিত্যে নারীর ভাষা, ভাষ্য ও দৃষ্টিকোণ নির্মাণে শিল্পী ও সাহিত্যিকদের ভূমিকা
ভাষা সমভাষীদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের সহজ ও বোধগম্য উপায়। কিন্তু যখনই বৈষম্যমূলক সমাজ জাতি, বর্ণ, ধর্ম, শ্রেণি, অঞ্চল ও লিঙ্গভেদ সৃষ্টি করে, তখন সমভাষীদের মধ্যে নানারকম উপভাষা, আঞ্চলিক ভাষা এবং একইসাথে উপ-সংস্কৃতিতে জাতি বিভক্ত হয়ে পড়ে। ভাষা ও ভাষ্যের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে তর্ক ও ক্ষেত্রবিশেষে বিবাদ দেখা দিতে পারে। শব্দ ও বাক্যের ব্যবহার ভেদের সাথে সাথে উচ্চারণেরও নানা ভেদ ও ব্যতিক্রম সৃষ্টি হয়। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, বাক্যগঠন, শব্দ ব্যবহার এবং উচ্চারণে বিভেদ ঘোচালেই মানুষে মানুষে বাস্তব ভেদাভেদসমূহ দূর হয়ে যায়। সমাজে যে সকল বর্ণ, শ্রেণি, লিঙ্গ ও অন্যান্য প্রকার ভেদাভেদ রয়েছে, সেসব ভেদাভেদের শেকড় সমাজের গভীরে নিহিত। এ সকল ভেদাভেদের পেছনে কলকাঠি নাড়ে ইতিহাস, পরম্পরা, প্রথা, প্রচলন, শাস্ত্র, প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক-সামাজিক তত্ত্ব ও দর্শন। এসব ইতিহাস, পরম্পরা, প্রথা, প্রচলন, শাস্ত্র এবং প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক-সামাজিক তত্ত্ব ও দর্শন নির্মাণ ও বর্ণনার ভাষা, ভাষ্য, শব্দ, বাক্য ও বাগধারার একটি নির্দিষ্ট ছক থাকে। প্রতিষ্ঠাতার নিজের অবস্থান সুরক্ষিত করার জন্য সংগঠিত, অন্যদিকে বৈষম্য দূর করার জন্য পরিবর্তন ও মানবিক বিকল্পের প্রয়াসে যারা ভাষা, ভাষ্য, শব্দ, বাক্য, বাগধারা অথবা প্রবাদের আলোচনা-সমালোচনা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করায় ব্রত রয়েছেন, তারা যেন এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ অথবা যদি তাদের কোনো সংগঠন থেকে থাকে, তবে সেটাও নিতান্ত দুর্বল।
সরল ও স্বাভাবিকভাবে দেখলে শিল্প-সাহিত্য দেশ, সমাজ, রাষ্ট্রের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং চলমান ঘটনারই প্রতিফলন। তাই সমাজে বিরাজমান ভেদাভেদ ও বৈষম্যের প্রতিফলন শিল্প-সাহিত্যে এসেছে। কিন্তু সবক্ষেত্রে সেসব প্রতিফলন যে, সহজ ও স্বতঃস্ফূর্ত ছিল তা নয়। ক্ষমতাশালী শ্রেণি-গোষ্ঠী, তাদের মত ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার ও প্রসারে যেমন ব্রতী হয়েছে, তেমন একইভাবে নানারকম লিখিত-অলিখিত সেন্সরশিপ আইনের প্রকাশ্য অথবা আড়ালে প্রয়োগ করার মাধ্যমে ক্ষমতার বাইরের শ্রেণি-গোষ্ঠীর প্রতিবাদী মানবিক ও নান্দনিক শিল্প-সাহিত্যকে দমন করেছে, নিশ্চিহ্ন করেছে অথবা নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে নিষ্ঠুরভাবে। কোনো ভালো অথবা ন্যায্য কাজেও সমাজের ক্ষমতাধরদের রাগ-বিরাগ দেখা দিলে সেসব কাজ নিরুৎসাহিত করার উপায় নানাভাবেই উদ্ভাবিত হয়েছে, সুকৌশলে এসবের প্রয়োগ হয়েছে এবং হচ্ছে।
সুতরাং শিল্প-সাহিত্যে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর ভাষা, ভাষ্য ও দৃষ্টিকোণ নির্মাণের পথে এক দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করা; এমনকি আত্মদানের অতীত ইতিহাস রয়েছে, যা কি-না সমকালীন সমাজেও চলমান রয়েছে। শিল্প-সাহিত্য শরীরী কোনো খেলা নয় যে, সেটার জন্য দুটো পৃথক মাঠ থাকবে, যেমন—পুরুষ ফুটবল-নারী ফুটবল বা পুরুষ হকি-নারী হকি। শিল্প-সাহিত্য বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ। নারী ও পুরুষের মাঝে বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতার বিভেদ রেখা টানার বিধান শাস্ত্রে উল্লেখ করে এই বিভেদ রেখাটাকে স্থায়ী করার চেষ্টা হয়েছে এবং সেই চেষ্টা চলমান রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, নারী ও পুরুষের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক কোনো বৈষম্য নেই। তাই যত চেষ্টাই করা হয়ে থাকুক না-কেন, শিল্প ও সাহিত্যচর্চার মাঠটাকে নারী-পুরুষে ভাগ করা যায়নি।
একজন শিল্পী অথবা সাহিত্যিককে প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থার বাস্তবতার সাথে লড়াই করেই নিজের স্থান করে নিতে হয়। আমরা বিষয়টা বুঝে নিতে পারি যে, কেন ইতিহাসে একজন পুরুষ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি পাওয়া যায়, কিন্তু একজন নারী মাইকেলেঞ্জেলো পাওয়া যায় নাই। প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসে আমরা উল্লেখযোগ্য কোনো নারীশিল্পী অথবা সাহিত্যিকের নাম দেখতে পাই না। যদিও এসবকালে মৌখিক সাহিত্য রচিত হয়েছে, যা কি-না পরবর্তীতে নামহীন সাহিত্য হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এমনকি রেনেসাঁর যুগেও যখন শিল্প ও সাহিত্যের ব্যাপক জাগরণ ঘটেছিল, তখনও আমরা কি সে-রকম উল্লেখযোগ্য নারীশিল্পী অথবা সাহিত্যিকের নাম পাই? বস্তুত আধুনিক যুগে এসেই বহু লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নারীরা রচিত শিল্প-সাহিত্যে যেমন স্বমহিমা ও মর্যাদার স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে সে-রকম নিজের অসীম মানসিক শক্তি অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বল্প সংখ্যায় হলেও শিল্প ও সাহিত্যের জগতে শিল্পী অথবা লেখক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এসব কারণে নারীদের হৃদয়ের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের মাত্রাটা অনেক সময়েই সমাজসচেতন ব্যক্তির কাছেও অননুধাবনযোগ্য হয়ে পড়ে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ভয়ার্ত শৈশব, অব্যক্ত কৈশোর, বৈষম্যের যৌবন, অতৃপ্তির দাম্পত্য, সামাজিক নিষ্পেষণ যে বিষয়বৈচিত্র্য, কোনোরকম রাখঢাক না করেই সেসব কাহিনির কতটা বাস্তবে উন্মোচন ও প্রকাশে সমাজ সাহসী হয়ে উঠবে? কিন্তু ইঞ্চি ইঞ্চি করে হলেও কুসংস্কারগুলো ঝেড়ে ফেলে সমাজ একটু একটু করে এগিয়েছে।
কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিল্প-সাহিত্যে নারীর অবয়বকে জন্মদাত্রী মায়ের অথবা যৌন আবেদনময়ী রমণীর বিভিন্ন প্রতীকী উপস্থাপন হয়েছে অনেকটা সান্ত্বনা পুরস্কারের মতো করে। নারীকে শৃঙ্খলিত করার জন্য যেমন প্রতীক সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি নারীমুক্তির জন্যও প্রতীক রয়েছে। নারী নিজে কখনো প্রতীক হয়েছেন, নারীর পোশাকে প্রতীক ছড়িয়েছে, নারীকে অবমাননার জন্য প্রতীকের ব্যবহার হয়েছে। নারীর প্রতীকী উপস্থাপন শিল্পকলায়, সাহিত্যে, সভ্যতায় যেভাবে এসেছে, বাস্তবের নারী সেখান থেকে বহুদূরেই রয়ে গেছে। অথবা পুরো বিশ্বব্যবস্থা নারীকে প্রতীকী উপস্থাপনের মাধ্যমে বেঁধে ফেলতে চেয়েছে, নারী কেবলই সেই বাঁধন ছিঁড়ে বেরোবার জন্য নিরন্তর যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অজস্র প্রতীকের অচলায়তন ভেঙে এগিয়ে যাওয়াটাই নারী জীবনের প্রতিদিনের সংগ্রাম।
শিল্প-সাহিত্যে নারীর প্রবেশ ও অগ্রগতির পথে সমস্যার ব্যাপ্তি ও গভীরতা অনুধাবন করার জন্য নারীশিল্পী ও সাহিত্যিকদের শিল্প-সাহিত্য জগতে প্রারম্ভিক প্রবেশ করা, এগিয়ে আসা এবং অগ্রগতির বিষয়গুলো উল্লেখ করে, আমরা কিছুটা আলোচনা করতে পারি। সভ্যতার হাজার হাজার বছর পেরিয়ে গেছে যখন শিল্প-সাহিত্যচর্চায় একমাত্র পুরুষদেরই পদচারণা ছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপ যখন ধীরে ধীরে রেনেসাঁর দিকে গুটি গুটি পা বাড়াচ্ছিল, তখনও মাত্র অল্প কয়েকজন নারীশিল্পী অথবা সাহিত্যিক রেনেসাঁর প্রস্তুতি পর্বে ‘মর্ত্যরে ভগবান’ তথা পুরুষদের বাধা অতিক্রম করে নিজেদের প্রকাশ্যে নিয়ে আসার জন্য কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। এই সারিতে যে আটজন নারীর নাম উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা হয়ে থাকে, তারা হচ্ছেনÑ সোফোনিসবা এঙ্গুইসোলা, লেভিনা তিরলিঙ্ক, লাভিনিয়া ফনটানা, ক্যাথারিনা ভন হেমেসিন, এলিজাবেথ সিরানি, ক্লারা পিটার্স, জুডিথ লেইস্টার এবং আর্টমেসিয়া জেনটিলেসিন।
কিন্তু তারও অনেক পূর্বে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীকালে পারস্য ও মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে সহস্রার্ধ মৌখিক গল্প মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে সম্রাট শাহরিয়ারের স্ত্রী শাহ্রজাদের কথাসাহিত্য হিসেবে। শাহ্রজাদের সৌভাগ্য যে, ইতিহাস তার নামটি মুছে বেনামী নামকরণ করেনি। পৃথিবীর কথাসাহিত্যের জগতে এ-রকম নানা বিষয়ভিত্তিক ১০০১টি গল্পের রচনা বিস্ময়কর, যেখানে প্রতিটি গল্পের শেষে সম্রাটের কাছে তার স্ত্রী শাহ্রজাদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করার প্রার্থনা গৃহীত হওয়ার কথা যুক্ত রয়েছে। সিন্ধু সভ্যতায় গুহাচিত্র ও পাথরের ভাস্কর্যে নারী জন্মদাত্রী মাতা অথবা যৌন আবেদনময়ী বস্তু হিসেবেই চিত্রিত হয়েছে। বৈদিক পর্বে শাস্ত্রমতে, নারীর অবস্থান জন্মদাত্রী মাতার অবস্থান হিসেবে নারীকে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নির্দিষ্ট করে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, এই মর্যাদা লাভের কারণে নারী-পুরুষতন্ত্রের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত ছিল। বাস্তবে প্রাক-উপনিবেশবাদ আমল পর্যন্ত সিন্ধু ও ভারতীয় সভ্যতায় নারী, বংশ রক্ষাকারী মাতার বাইরে আর অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত হয়ে উঠতে পারে নাই। চীন সভ্যতায়ও সপ্তম থেকে দশম শতাব্দীতে তাং রাজত্বকালে নারীদের অবস্থানে স্বকীয়তা অর্জনের কিছু সুযোগ গ্রহণ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো নারীশিল্পী অথবা সাহিত্যিকের নাম পাওয়া যায় না। নারীদের নান্দনিক ক্ষুদ্র অঙ্কন ও সুচি শিল্পের নিদর্শন জাদুঘরে দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বসাহিত্যে প্রথম নারী কবি প্রাচীন গ্রিসের স্যাফো। ষষ্ঠ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে নব কবিদের একজন ছিলেন এই গীতিকবি। চর্যাপদকে বলা হয় বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন। চর্যাপদের পদকর্তাদের মধ্যে একজন নারী পদকর্তা ছিলেন বলে মত প্রকাশ করেছেন ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়। এই নারী পদকর্তার নাম কুক্কুরিপা। রজকিনীকে অনেকে চেনেন চণ্ডীদাসের প্রেমিকা হিসেবে। তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে, তিনি একজন কবি। তিনি রামী ও রামমনি—এই দুই নামে কবিতা লিখতেন। তাঁর পদগুলোর নাম ছিল রামীর পদ। ঋগে¦দ-এ কয়েকজন নারী দার্শনিকের নাম পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে একজন লোপামুদ্রা। তিনি কৌষীতকি নামেও পরিচিত ছিলেন। ঋগে¦দে ২৭ জন নারী ঋষির রচিত সূক্তের উল্লেখ রয়েছে। ইতিহাসে এসব উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সংখ্যাবিচারে বলা যেতে পারে যে, বস্তুত আধুনিক যুগে এসেই নারীরা শিল্প-সাহিত্যে ধীর লয়ে প্রবেশ করার সুযোগ গ্রহণ করে, যখন শিল্প-সাহিত্যে নারীর ভাষা, ভাষ্য ও দৃষ্টিকোণ নির্মাণের বিবরণ পাওয়া যায়।
বাংলা ভাষায় প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী। তাঁর রচিত রামায়ণে তিনি রামের পুরুষালি বাহুবলের পরিবর্তে সীতার বঞ্চনা ও পীড়নের বর্ণনাকে মাহাত্ম্য দিয়েছেন। বলা যায়, নারীকবি চন্দ্রাবতী বাংলা সাহিত্যে নারীর ভাষা, ভাষ্য এবং দৃষ্টিকোণ নির্মাণের সূচনা করেন। নারী লেখক রচিত প্রথম উপন্যাসের নাম মনোত্তমা। এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬৭ সালে নবপ্রবন্ধ পত্রিকায়। তবে এ উপন্যাসের লেখকের কোনো নাম জানা যায়নি। লেখক-নামের স্থলে কেবল লেখা ছিল ‘হিন্দুকুল-কামিনী প্রণীত’। আবার বাঙালি মুসলমান নারীদের মধ্যে প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাহিত্যগ্রন্থ রচনা করেন ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী। ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত তাঁর বইয়ের নাম ছিল রূপজালাল। ওই বছরই ঠাকুর পরিবারের মেয়ে ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় বোন স্বর্ণকুমারী দেবী লেখেন উপন্যাস, ‘দীপ নির্বাণ’। এ ছাড়া পৃথিবীর প্রথম নারী ঔপন্যাসিক বলা হয়, জাপানি লেখিকা মুরাসাকি শিকিবুকে। তাঁর উপন্যাসের নাম গেঞ্জি, যার ইংরেজি অনুবাদ দ্য টেল অব গেঞ্জি। বাঙালি মুসলমান নারীদের মধ্যে প্রথম গদ্যরচনার কৃতিত্ব হলো তাহেরুন্নেসার। ১৮৬৫ সালে ‘বামাগণের রচনা’ নামে বামাবোধিনী পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল তাঁর গদ্য। বাঙালি মুসলমান নারীদের মধ্যে প্রথম ঔপন্যাসিক হলেন এস এফ খাতুন। ১৯২১ সালে লেখা তাঁর উপন্যাসের নাম জোবেদা।
নারী শিল্পী ও লেখকদের শিল্প ও সাহিত্য রচনার কাজে নিয়োজিত হওয়ার পথ কখনো মসৃণ ছিল না—এখনো নেই। অন্যদিকে নারী অথবা পুরুষ শিল্পী ও সাহিত্যিকদের দ্বারা নারীর সামাজিক সমস্যাগুলো চিত্রিত করার কাজেও বিস্তর বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ সকল পরিস্থিতিতে নারীদের মধ্যে শিল্প-সাহিত্যে আধুনিক নারীর সংগ্রামের ভাষ্য ও রূপরেখা নিয়ে নানা মতভেদও দেখা যায়। প্রশ্ন উঠেছে, এসব মতভেদ শিল্প-সাহিত্যে নারীর অবস্থান সৃষ্টিতে নারী আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কি-না? তবে আমরা মনে করি, মতভেদ থাকবেই এবং এসব মতভেদ দ্বান্দ্বিক নিয়মেই দূরীভূত হয়ে একটি নতুন স্তরে উন্নীত হতে পারে।
শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, অনুপ্রাণন, শিল্প ও সাহিত্যে নারীর সরব উপস্থিতি কামনা করে। অনুপ্রাণন আশা করে, শিল্প-সাহিত্যের মাধ্যম দিয়ে নারীর ভাষা, ভাষ্য এবং দৃষ্টিকোণ ক্রমেই সমাজে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করার কাজে যেন অগ্রসর হতে পারে।
১০ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.