Additional information
Weight | 0.67 kg |
---|---|
Published Year |
$ 0.53 $ 0.71
Weight | 0.67 kg |
---|---|
Published Year |
প্রাক-কথন
একটি সফল নাটক উচ্চারণ করে সময়ের সত্য, মানুষের অন্তর্গতে শায়িত থাকা সম্পর্কের সুস্পষ্ট স্বর।
নিজের শরীরে ধারণ করে জীবনের বহুমাত্রিক রং, যাপনের বর্ণমালা।
নাটক ‘ঈশান রাজকুমার’ এমনতর বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল।
ইতিহাস-নির্ভর রচনার ক্ষেত্রে লেখকের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। ঐতিহাসিক ঘটনা গুলির জন্য তাঁকে প্রাচীন পুঁথি, নথি এবং মানুষের মুখে মুখে ফেরা কথা ও কাহিনি থেকে নিজের লেখার উপাদান সংগ্রহ করতে হয়।
এবং এক্ষেত্রে লেখক হয়ে ওঠেন ভ্রামণিক। সময়ের সম্মুখে নয়, তিনি যাত্রা করেন অতীত সময়েরদিকে। পৌঁছাতে হয় পার-হয়ে-আসা-সময়ের হলুদ বৃত্তান্তগুলির কাছে। যে-লেখক তাঁর পুরোনো জন্মকালের মুহূর্তগুলিকে যত নিবিড় করে ছুঁতে পারেন, তিনিই তত সফলভাবে ঐতিহাসিক সত্যকে অধিগত করতে পারেন। সত্যের সেই বৃত্তান্তকে হাজির করতে পারেন তাঁর পাঠকের কাছে।
ইকবাল রাশেদীন শক্তিশালী কবি। কবির মননজাতবোধ এবং সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি দিয়ে তিনি ছুঁয়েছেন দু’শো পঞ্চাশ বছর আগের পৃথিবীকে। নিজের পরিশ্রমী গবেষণা দিয়ে তুলে এনেছেন ইতিহাসের বুকে ধুসর হয়ে যাওয়া ঘটনাক্রমকে। কবি থেকে নাট্যকার হয়ে ওঠা খুব সহজ কাজ নয়, সেই অসহজ কাজটিই ইকবাল করে দেখিয়েছেন তাঁর ‘ঈশান রাজপুত্র’নাটকে।
আমার মনে হয়েছে, নাটকের জাহাজটি একটি দেশ এবং ঈশান রাজকুমার সেই দেশের যোগ্য নেতৃত্ব। এবং সেইসাথে নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ঈশান আসলে ডানামেলা এক পাখি। যার দেশ নেই, সীমান্তনেই। আছে কেবল পৃথিবীময় একজগত বাড়ি। সেই বাড়ির বাসিন্দা হয়ে অন্তরমহল আর অন্দরমহলের কথাই সে উচ্চারণ করেছে আত্ম মগ্নস্বরে।
ইকবাল রাশেদীন কবি বলেই হয়তো এই আত্মমগ্নস্বরের নির্মাণে তিনি অনায়াস। এবং নাট্যকার হিসাবে তাঁর কৃতিত্ব এখানেই যে, এই আত্মমগ্ন স্বর শুধু তাঁর ‘আত্মমগ্নস্বর’ হয়েই থাকেনি, পাঠক/দর্শক ও খুঁজে পাবেন তার নিজের মতো করে নিজের ‘আত্মমগ্নস্বর’।
রেহান কৌশিক
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
১৬ ডিসেম্বর ২০১৭
ঈশান রাজকুমার
সিদ্দিক প্রামানিক। জন্ম: ২১শে আগস্ট ১৯৭৯, কুস্টিয়ার কুমারখালী থানার চরভবানীপুরগ্রামে। বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন এবং বাম প্রগতিশীল সংগঠনের সক্রিয় সংগঠক ও সংস্কৃতকর্মী। প্রথম বই ‘হাঙরের সমুদ্রে মননশীল মাছ’।
উন্মাদের কনসার্ট
গ্রামের পাশে যে বিশাল বাদাম ক্ষেত আর ক্ষেতের পাশে যে ছোট নদী, সে নদীতে মাঝারি সব ঢেউ ওপার থেকে এপাড়ে আসে খড়কুটো মুখে নিয়ে। আর কত কিছু ভেসে আসে আর চলেও যায়—সারা দিনভর ছোটনেরা সেইসব দেখে পাড়ে বসে বসে।
ছোটনেরা মানে হলো—হাবিবুল, রতন, মোবারক, শেফালি বকুল এরা। কালিয়াখোল গ্রামের ছোটরা। তারা প্রতিদিন নদীতে আসে আর কাঁচা বাদাম খেতে খেতে লক্ষ করে নদীটাকে। নদীর ভেতরে কত কিছু। কাদাখোঁচা একটি দুটি। বালিয়া হাঁসের সাদা পাখনা উড়তে থাকে। আর ওপারের মেঘ যখন উড়তে উড়তে এপারে আসে তখন জলিল কাকার সময় হয় জোয়ালের গাই দুটাকে গোসল দেয়ার। গাই দুটার গোসল দেখতে দেখতে আর বাদাম খেতে খেতে দলের মধ্যে মোবারক নামে যে আছে, সে একটা প্রস্তাব দিল। প্রস্তাব দেয়ার আগে বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নিয়ে কয়েকটা জানাশোনা তথ্যও দিল। যেমন—এই নদীতে কিছুই ডোবে না।
বাকিরা মাথা নাড়ে—হুম।
গরু ডোবে না, খড় ডোবে না। নাও-লঞ্চ কিছুই ডোবে না। ভেলা ডোবে না।
সবাই মাথা নাড়ে। কাঁচা বাদাম খায়।
—চল আজকে একটা খেলা খেলি। মিনুরে ডুবাই দেই। দেখি ডোবে কি না?
ছোটনরা একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। প্রস্তাবে জোর সমর্থন দেয় নুরু। প্রস্তাব সমর্থন নিয়ে নুরু কারো দিকে তাকায় না। নদীর পেটে জলের প্রবাহ দেখতে দেখতে তারা স্কুলঘর দেখে। দূরের আকাশছোঁয়া মিনার মসজিদ দেখে।
—মিনুও ডুবত না। এই নদীতে কিছুই ডোবে না–বলে সাহস দেয় নুরু। ততক্ষণে মিনুকে নিয়ে এসেছে মোবারক।
মিনু জল দেখে ভয় পায়। বলে—মিঁউ!
বিশাল নদী। বিশাল চর। মিনু ভয় পায়। ডাকাডাকি শুরু করে দেয়—মিঁউ মিঁউ।
মিনুকে কোলে নেয় হাবিবুল। হাবিবুল থেকে নেয় রতন। রতন থেকে নেয় শেফালি। শেফালি থেকে নেয় রাজন। রাজন থেকে নেয়া নুরু। নুরু থেকে কেউ নেয় না। কারণ নুরু কাউকে দেয় না। সে মিনুকে ছুড়ে দেয় নদীতে।
সবাই হাসে। মিনু সাঁতার কাটে। ঠিকমতো পারে না। নদীতে ঢেউ। তলিয়ে যায়। ছোট্ট মাথা। ডোবে ভাসে। সবাই হাসে–খুশিতে হাততালি দেয়।
দুই ঢেউয়ের চাপে পড়ে মিনু ডাকে—মিঁউ মিঁউ।
প্রাণপণ চেষ্টা করে মিনু কচি পা দিয়ে পাড়ে আসতে পারে না। দূরে সরে যায়। আবার আসে। পাড়ের কাছে আসেও। কিন্তু নুরুরা ঢিল ছোড়ে। হি হি করে হাসে। হাত তালি দেয়।
মিঁউ মিঁউ করতে করতে নদীর ভেতরে চলে যায় মিনু। ঢেউয়ের ভাঁজের ভেতরে চলে যায়। ডুবে যায়। পাড়ে বসে রাজন শিস দেয়।
…………
রাতের বেলায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে পুরো ব্যাপারটা আবার দেখে ছোটন। মিনু ডুবে যাচ্ছে। ভেসে উঠছে। চিৎকার করে ওঠে ছোটন। ঘামে নেয়ে ওঠে সে। কিন্তু তার ঘুম ভাঙে না। ঘুমের মধ্যেই ছোটন বোঝে ঘুম না ভাঙলে সে নদী থেকে আর মিনুকে উঠাতে পারবে না।
সকালবেলা তাড়াতাড়ি মিনু যে কাজটি করে তা হলো ছোটনের বাবা-মাকে নিয়ে নদীর পাড় চলে এলো। তারা দেখল—নদীর ভেতরে একটা লাল জামা ভাসছে ছোটনের।
২৪১৯
কালিয়াখোল গ্রামের ছোটরা
কিরণ আকরামুল হক এর “অহেতুক মানুষ” বইয়ের কবিতাগুলি আমাকে পড়তে হয়েছে নানকারণে। প্রথম বই প্রকাশের পর দু’বছর বিরতি দিয়ে কবি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। কবিতার ভেতরের শিল্পকে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। রূপক, উপমার সেলাই শিখেছেন। সাথে প্রগতিশীলতার চর্চা থাকায়, ‘অহেতুক মানুষ’ গ্রন্থের প্রায় প্রতিটি কবিতাই কবিতা হয়ে উঠেছে। সমকালীন চিন্তা, বিষয় ভাবনা, আর পরিমিত নির্বাচিত শব্দ-প্রয়োগে অহেতুক মানুষ গ্রন্থের কবিতাগুলিকে কবি কিরণ আকরামুল হক এর ভাবনার পরিণত বুনন বলা যায়। গ্রন্থখানার দারুণ পাঠকপ্রিয়তা আশা করছি।
-ফিরোজ আহমেদ
অহেতুক মানুষ
সাঈদা মিমি। জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৮। বরিশালে। পেশাগত দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের সাহিত্য সম্পাদক। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচটি। শ্রাবন প্রকাশনী থেকে ২০০৮ এ প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই ‘সব নিয়ে গ্যাছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস।’ দীর্ঘ বিরতির পর আগুনমুখা থেকে ‘ফারাও কুমারী’ Ñ২০১৪ সালে। বাংলার ই-বুক থেকে ই-বই ‘কীর্তনখোলা।’ -২০১৫ সালে। ২০১৬ তে অনুপ্রাণন থেকে কাব্যগ্রন্থ ‘একজন মৃতের ডায়েরী’ এবং কালজয়ী প্রকাশ থেকে ‘শুশুনিয়া পাহাড়’।
ঔরঙ্গজেবের নীল ঘোড়া
সাঈদা মিমি। জন্ম: ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮। বরিশালে। শৈশবের পুরোটাই এবং অর্ধেক কৈশোর কেটেছে পদ্মাপাড়ে, মানিকগঞ্জের ঘোনাপাড়া গ্রামে। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবনে। প্রথম প্রকাশিত হয় ইত্তেফাকে। ফ্রীল্যান্স সাংবাদিকতা, স্কুল মাস্টারিং, বায়িং হাউজের এডমিন, হাউজিং কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ইত্যাদি বিচিত্র কর্মজীবন মেষে অতঃপর গৃহিণী। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সব নিয়ে গেছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস’ ‘ফারাও কুমারী’ ও ই-বুক ‘কীর্তনখোলা’।
একজন মৃতের ডাইরি
আবু সাঈদ আহমেদের জন্ম ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নের সময়েই জনপ্রিয় সাপ্তাহিক সন্দ্বীপে প্রতিবেদন লেখার মাধ্যমে লেখক জীবনে প্রবেশ। কলেজ জীবন হতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছেন। কিন্তু লেখাকে কখনোই গুরুত্বের সাথে নেন নাই। তিনিই বাংলা ব্লগের অন্যতম জনপ্রিয় ব্লগার ‘হরবোলা’। অনলাইনে নির্মোহ রাজনৈতিক প্রবন্ধ, তীক্ষ্ম স্যাটায়ার, কবিতা আর অণুগল্প তাকে এনে দিয়েছে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা। আমমানুষের পক্ষের একজন লেখক ও এক্টিভিস্ট হিসেবে একাধিকবার শারীরিক হামলার স্বীকার হয়েছেন, কিন্তু নীরব হন নাই।
লংকা কিন্তু জ্বলছে না
বিলাল হোসেন
জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৭৪।
জন্মস্থান- মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার রাজারচর কাজিকান্দি গ্রামে।
প্রকাশিত বই-
১. কাব্যগ্রন্থ- বিরুপা’র শূঁড়িবাড়ি(২০১৪)
২. অণুগল্প সংকলন- পঞ্চাশ(২০১৫)
৩. মহাপ্রভু ও অন্যান্য অণুগল্প(২০১৬)
৪. কাব্যগ্রন্থ- একজ্বলাপঙক্তি(২০১৬)
স¤পাদিত বইসমূহ-
সেরা ১০০ অণুগল্প(২০১৫) (প্রিন্ট ভার্সন)
ই-বুক স¤পাদনা-
অণুগল্প সংগ্রহ-১,২,৩,৪; গোয়েন্দা অণুগল্প সমগ্র, ভূত অণুগল্প সমগ্র, রূপকথা অণুগল্প সমগ্র, নীতি অণুগল্প সমগ্র, চিয়ার্স চিয়ার্স চিয়ার্স, দুনিয়ার মাতাল এক হও, মাতালে মাতালে চেনে, মধুগন্ধেভরা, যুগলবন্দী (সুবর্না রায়), অণুগল্পের বিষয় বৈচিত্র্যের সন্ধানে, তাহাদের গল্প, অণুগল্পের অস্তিত্ব আছে, অণুগল্পের শিরদাঁড়া, অণুগল্পের রোজনামচা।
বাংলা ভাষার সেরা অণুগল্প
ঝুমকি
কত পথ পার হলাম ঝুমকি;
তবু মানুষ চেনা হলো না!
বারো প্যাচের নারী, চোখে জড়িচুমকির খেল্ দেখালো
অমলেশ সেই দেখে দেখে শেষে উন্মাদের খাতায় নাম লেখালো
পত্রিকার শেষ পাতায় ওকে নিয়ে কতো ফিচার হলো
তবুও অমলেশকে কেউ ভালোবাসলো না।
ঝুমকি পৃথীবির সবচে’ হিংস্র প্রাণী মানুষের
গায়ে বিপদের গন্ধ লেগে আছে;
ফাঁক পেলেই নষ্টামি করতে লেগে যায়
কেউ কেউ বলে সত্যিকারের ভালোবাসা নেই
বড় র্দূভাগা ওরা!
সত্যিকারের ভালোবাসাই দেখেনি চোখে; পাবে কোত্থেকে
প্রেমালিঙ্গম
ফারহানা খানম। জন্ম: ১৯শে এপ্রিল ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপে। ‘ভুগোল ও পরিবেশ’ বিষয়ে স্নাততোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে ব্যাংকে চাকুরি শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। নয় ভাই-বোনের মাঝে সবার ছোট বলেই আদরও পেয়েছেন বেশি। প্রথম প্রকাশিত বই, ‘ইছামতি’ (কলকাতা থেকে প্রকাশিত)।
তৃষ্ণার্ত বালুতট
সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব। জন্ম: ১৯৭৮ সালে বরিশাল জেলা সদরে করিমকুটির নামক স্থানে। তার লেখার বিষয় মূলতঃ কবিতা। সময় নাট্যদলের সাথে একযুগ পার করেছেন। গানও লিখতেন কিন্তু বন্ধুবরের প্রয়ানে, অভিমানে আর সেপথ মারাননি। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকলেও নিজেকে একজন কবিতার শতরঞ্জি মোড়ানো শ্রমিক বলেই মনে করেন। এটি কবির প্রথম বই।
রূপোর দ্যুতি
রঞ্জনা বিশ্বাস। জন্ম: ১০ডিসেম্বর, ১৯৮১। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে খ্রিস্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ ও ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’ কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবির প্রকাশিত কাব্যফসল। এছাড়া কবি কবিতাচর্চার পাশাপাশি ফোকলোরচর্চাকেও ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। নৃ-তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মী কবির আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ ও ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ প্রকল্পে কাজ করছেন। এছাড়া এখন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগে কর্মরত আছেন।
বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস
সম্পাদকীয়
অনুপ্রাণন: ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়
গত নভেম্বর ২০১২ থেকে অনুপ্রাণন ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকাটি প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর সাহিত্য ও শিল্প বিভাগের বিবিধ সৃজনশীল ও মননশীল লেখায় সমৃদ্ধ হয়ে নিয়মিত ভাবেই প্রকাশিত হয়ে আসছিল। কিন্তু, পঞ্চম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যাটি বৃহৎ কলেবরে অর্থাৎ নিয়মিত ১৬ ফর্মার বদলে ১৯ ফর্মা আকারে প্রকাশিত হওয়ার পর পরবর্তী ৫ টি সংখ্যা প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সম্পাদকের অসুস্থতা ছাড়াও অলিখিতভাবে সম্পাদনা পরিষদের যে সদস্যবন্ধুটি পত্রিকার কাজে অফিস সমন্বয়কের গুরুদায়িত্ব পালন করছিলেন নিরবচ্ছিন্ন ধারায় প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যেতে তিনি নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে থাকলে পত্রিকার কাজে ছেদ পড়তে থাকে। তাছাড়া সম্পাদনা পরিষদের আর একজন বন্ধু অন্য একটি অনলাইন পত্রিকার কাজে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করার ফলে তাঁর পক্ষে অনুপ্রাণন পত্রিকায় প্রয়োজনীয় সময় দেয়া আর সম্ভব হয়ে উঠছিল না। সম্পাদনা পরিষদের অন্য আর একজন সংগঠক পর্যায়ের সদস্য পত্রিকার চাইতে গ্রন্থ প্রকাশনায় বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়ায় প্রকৃতপক্ষে অনুপ্রাণন পত্রিকাটি প্রকাশের কাজে লোকবলের এক বিরাট সংকট দেখা যায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে- ২০১২’এর নভেম্বরে অনুপ্রাণন ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকাটি প্রকাশ করার উদ্যোগ যারা নিয়েছিলেন তারা প্রত্যেকেই শিল্প ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে যার যার নিজ অবদান ও স্বাক্ষর রাখার উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রম ও ব্যক্তিগত অনুদানের ভিত্তিতে পত্রিকাটির প্রকাশনার কাজের যাবতীয় কাজ ও ব্যয় নির্বাহ করার অভিপ্রায় গ্রহণ করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, সমাজ সংস্কৃতিতে এবং বিশেষ করে তরুণদের মনের মাঝে মানবতা, সহমর্মীতা, সৃজনশীলতা, মননশীলতা, শিল্পরুচি, নান্দনিকতা এবং মুক্তচিন্তার চর্চার জানালাটাকে উন্মূক্ততর করার কাজে নিয়োজিত অনুপ্রাণনের এই প্রচেষ্টা যেন বাধাহীন হয় এবং কোনভাবেই যেন প্রতিষ্ঠা ও কর্পোরেট ভোগবাদীতার কূট সাংস্কৃতিক আবর্তে পড়ে দিক হারিয়ে না যায়।
যশ ও প্রতিষ্ঠার মোহ যখন শিল্পীকে পেয়ে বসে তখন শিল্পচর্চা তপস্যা অথবা সাধনা থাকে না। কিন্তু, এটাই বাস্তব যে তপস্যা ও সাধনা ছাড়া শিল্পের উৎকর্ষতার শীর্ষ স্পর্শ সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রতিষ্ঠা ও কর্পোরেট ভোগবাদের বলয়ে যেসব শিল্প-সাহিত্য চর্চা ও উদ্যোগ ফেনার মত আমাদের চারদিক ভরিয়ে তুলছে সেসবের স্থায়িত্ব সম্পর্কে কী কোন সন্দেহ থাকা উচিত?
বছরখানেক বন্ধ থাকার পরও যখন আমরা অনুপ্রাণনের এই সংখ্যাটি প্রকাশের উদ্যোগ নেই তখন আমরা আমাদের পত্রিকার পাঠক, লেখক ও শুভান্যুধ্যায়ীদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সারা পেয়েছি। এই সারা থেকে এই বিশ্বাস আমাদের জন্মেছে যে, আমরা যে পথ অবলম্বন করে এগিয়ে চলতে চাই সেই পথে বাস্তবেই সঙ্গ-সাথীর আমাদের কোন অভাব নেই। এখনও আমাদের দেশের তরুণ সমাজের একটি বিরাট অংশ মিথ্যা যশ, প্রতিষ্ঠা ও কর্পোরেট ভোগবাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে শিল্প-সাহিত্যের মানবিক ও নান্দনিক চর্চা অব্যহত রাখতেই অধিক আগ্রহী। তাই, লেখা আহ্বানে যে সংখ্যক মানসম্পন্ন লেখা আমরা পেয়েছি সেগুলো দিয়ে অনায়াসেই দুটো সংখ্যা প্রকাশ করা সম্ভব ছিল। চলতি সংখ্যার জন্য লেখা বাছাই করতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় দিতে হয়েছে এবং স্থান সংকুলানের অভাবে প্রায় অর্ধেক লেখাই পরবর্তী সংখ্যার জন্য রেখে দিতে হয়েছে।
লেখা বাছাই করতে গিয়ে আবারো আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, সাহিত্য আলোচনা ও সমালোচনা বিভাগে আমরা যথেষ্ট সমৃদ্ধ লেখা পাচ্ছি না যেখানে পেশাদার সমালোচকের কলমের স্পর্শ আরো তীক্ষè অথচ আরো গঠনমূলক হতে পারে। বিশেষ করে কবি ও কবিতা নিয়ে আমাদের আরো তীক্ষè, তীব্র ও গঠনমূলক আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। কেননা সাহিত্য জগতে কবি ও কবিতার সংখ্যা যতই বাড়ছে কিন্তু আগ্রহী কবিতার পাঠকের সংখ্যা যেন সেই তূলনায় বৃদ্ধি হচ্ছে না। মনে হয়, কবি ও পাঠকের মাঝে বোধ, অনুভব ও ভাষার কোন একটা অন্তর থেকে যাচ্ছে যে অন্তরটি ঘুচে যাওয়া অত্যন্ত জরুরী কেননা বোধ করি, মূলত কবিতার মধ্যেই রয়েছে তরুণ সমাজের জন্য ভবিষ্যতের বিশেষ বার্ত্তা। অর্থাৎ সাহিত্যের সত্যপাঠ।
দেশে এখন হেমন্ত ঋতু। হাওরের অকাল বন্যা ও দেশব্যাপী অতিবৃষ্টির ফলে ফসলহানী ঘটায় এবছর দেশের সামগ্রিক সমাজ জীবনে খাদ্যের ঊর্ধ্বমূল্য সকল মানুষকেই কষ্ট দিয়েছে। হেমন্তের নতুন ফসল যেমন কৃষকের ঘড়ে ঘড়ে জীবনে ঘুরে দাড়ানোর বার্ত্তা দিয়ে যাচ্ছে- দীর্ঘ বিরতির পর অনুপ্রাণন ত্রৈমাসিকের এই সংখ্যাটি এ-বছর অনুপ্রাণনের ঘুরে দাঁড়ানোরই প্রতীক ও স্বাক্ষর হোক- এটাই আশাবাদ।
ষষ্ঠ বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.