Description
মানুষ ভুল করে
অগোচরে নাড়ে পাপ
উন্মেষ রাখে তার
উপলব্ধির ছাপ।
মাসুলে মানুষ করে
সে ভুলের অনুতাপ;
অমানুষ অজুহাতে
ঢাকে গ্লানির উত্তাপ।
$ 0.56 $ 0.94
কিছু একটা বলাটাই যখন বাধ্যবাধকতাÑবাহুল্য এবং আপেক্ষিক বাতুলতা বাদ রাইখা মাহবুব লীলেন থাইকা ধার কইরা বলতে হয়Ñ ‘আনফিট মিসফিট হইয়া হামাগুড়ি দিয়া হাঁটি, আর রাত্তিরে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ টাইনা চিক্কুর দিয়া কইÑ যাহ শালা বাঁইচা গেলাম আরও একটা দিন।’
এইটা বড়োবেশি জৈবিক বাঁচা
মানবিক বাঁচনের স্বপ্নও দেখি না বহুদিন
বড়ো তরাসে আছি
বড়ো বেশি চাইপা আছি, নিজের গলা নিজে।
মানুষ ভুল করে
অগোচরে নাড়ে পাপ
উন্মেষ রাখে তার
উপলব্ধির ছাপ।
মাসুলে মানুষ করে
সে ভুলের অনুতাপ;
অমানুষ অজুহাতে
ঢাকে গ্লানির উত্তাপ।
Weight | 0.67 kg |
---|---|
Published Year |
সিদ্দিক প্রামানিক। জন্ম: ২১শে আগস্ট ১৯৭৯, কুস্টিয়ার কুমারখালী থানার চরভবানীপুরগ্রামে। বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন এবং বাম প্রগতিশীল সংগঠনের সক্রিয় সংগঠক ও সংস্কৃতকর্মী। প্রথম বই ‘হাঙরের সমুদ্রে মননশীল মাছ’।
উন্মাদের কনসার্ট
রঞ্জনা বিশ্বাস। জন্ম: ১০ডিসেম্বর, ১৯৮১। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে খ্রিস্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ ও ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’ কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবির প্রকাশিত কাব্যফসল। এছাড়া কবি কবিতাচর্চার পাশাপাশি ফোকলোরচর্চাকেও ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। নৃ-তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মী কবির আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ ও ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ প্রকল্পে কাজ করছেন। এছাড়া এখন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগে কর্মরত আছেন।
বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস
সাঈদা মিমি। জন্ম: ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮। বরিশালে। শৈশবের পুরোটাই এবং অর্ধেক কৈশোর কেটেছে পদ্মাপাড়ে, মানিকগঞ্জের ঘোনাপাড়া গ্রামে। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবনে। প্রথম প্রকাশিত হয় ইত্তেফাকে। ফ্রীল্যান্স সাংবাদিকতা, স্কুল মাস্টারিং, বায়িং হাউজের এডমিন, হাউজিং কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ইত্যাদি বিচিত্র কর্মজীবন মেষে অতঃপর গৃহিণী। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সব নিয়ে গেছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস’ ‘ফারাও কুমারী’ ও ই-বুক ‘কীর্তনখোলা’।
একজন মৃতের ডাইরি
সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব। জন্ম: ১৯৭৮ সালে বরিশাল জেলা সদরে করিমকুটির নামক স্থানে। তার লেখার বিষয় মূলতঃ কবিতা। সময় নাট্যদলের সাথে একযুগ পার করেছেন। গানও লিখতেন কিন্তু বন্ধুবরের প্রয়ানে, অভিমানে আর সেপথ মারাননি। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকলেও নিজেকে একজন কবিতার শতরঞ্জি মোড়ানো শ্রমিক বলেই মনে করেন। এটি কবির প্রথম বই।
রূপোর দ্যুতি
সাঈদা মিমি। জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৮। বরিশালে। পেশাগত দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের সাহিত্য সম্পাদক। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচটি। শ্রাবন প্রকাশনী থেকে ২০০৮ এ প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই ‘সব নিয়ে গ্যাছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস।’ দীর্ঘ বিরতির পর আগুনমুখা থেকে ‘ফারাও কুমারী’ Ñ২০১৪ সালে। বাংলার ই-বুক থেকে ই-বই ‘কীর্তনখোলা।’ -২০১৫ সালে। ২০১৬ তে অনুপ্রাণন থেকে কাব্যগ্রন্থ ‘একজন মৃতের ডায়েরী’ এবং কালজয়ী প্রকাশ থেকে ‘শুশুনিয়া পাহাড়’।
ঔরঙ্গজেবের নীল ঘোড়া
কিরণ আকরামুল হক এর “অহেতুক মানুষ” বইয়ের কবিতাগুলি আমাকে পড়তে হয়েছে নানকারণে। প্রথম বই প্রকাশের পর দু’বছর বিরতি দিয়ে কবি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। কবিতার ভেতরের শিল্পকে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। রূপক, উপমার সেলাই শিখেছেন। সাথে প্রগতিশীলতার চর্চা থাকায়, ‘অহেতুক মানুষ’ গ্রন্থের প্রায় প্রতিটি কবিতাই কবিতা হয়ে উঠেছে। সমকালীন চিন্তা, বিষয় ভাবনা, আর পরিমিত নির্বাচিত শব্দ-প্রয়োগে অহেতুক মানুষ গ্রন্থের কবিতাগুলিকে কবি কিরণ আকরামুল হক এর ভাবনার পরিণত বুনন বলা যায়। গ্রন্থখানার দারুণ পাঠকপ্রিয়তা আশা করছি।
-ফিরোজ আহমেদ
অহেতুক মানুষ
আবু জাঈদ। জন্ম: ২২শে জুলাই ১৯৮৩, ঢাকা। পড়াশুনা অসমাপ্ত রেখে একসময় কবি বাউণ্ডুলে জীবনের এলোমেলো আলপথে নেমে যান বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, তাই বলে কাব্যচর্চা থেমে থাকেনি। এক সন্তানের জনক। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
মানচিত্রের ফাঁসি চাই
বিলাল হোসেন-
জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৭৪।
জন্মস্থান- মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার রাজারচর কাজিকান্দি গ্রামে।
প্রকাশিত বই-
১. কাব্যগ্রন্থ- বিরুপা’র শূঁড়িবাড়ি(২০১৪)
২. অণুগল্প সংকলন- পঞ্চাশ(২০১৫)
৩. মহাপ্রভু ও অন্যান্য অণুগল্প(২০১৬)
৪. কাব্যগ্রন্থ- একজ্বলাপঙক্তি(২০১৬)
স¤পাদিত বইসমূহ-
সেরা ১০০ অণুগল্প(২০১৫) (প্রিন্ট ভার্সন)
ই-বুক স¤পাদনা-
দেখবে এসো তিলের বাগান
বিলাল হোসেন
জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৭৪।
জন্মস্থান- মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার রাজারচর কাজিকান্দি গ্রামে।
প্রকাশিত বই-
১. কাব্যগ্রন্থ- বিরুপা’র শূঁড়িবাড়ি(২০১৪)
২. অণুগল্প সংকলন- পঞ্চাশ(২০১৫)
৩. মহাপ্রভু ও অন্যান্য অণুগল্প(২০১৬)
৪. কাব্যগ্রন্থ- একজ্বলাপঙক্তি(২০১৬)
স¤পাদিত বইসমূহ-
সেরা ১০০ অণুগল্প(২০১৫) (প্রিন্ট ভার্সন)
ই-বুক স¤পাদনা-
অণুগল্প সংগ্রহ-১,২,৩,৪; গোয়েন্দা অণুগল্প সমগ্র, ভূত অণুগল্প সমগ্র, রূপকথা অণুগল্প সমগ্র, নীতি অণুগল্প সমগ্র, চিয়ার্স চিয়ার্স চিয়ার্স, দুনিয়ার মাতাল এক হও, মাতালে মাতালে চেনে, মধুগন্ধেভরা, যুগলবন্দী (সুবর্না রায়), অণুগল্পের বিষয় বৈচিত্র্যের সন্ধানে, তাহাদের গল্প, অণুগল্পের অস্তিত্ব আছে, অণুগল্পের শিরদাঁড়া, অণুগল্পের রোজনামচা।
বাংলা ভাষার সেরা অণুগল্প
কামরুজ্জামান কাজল বয়সে অনেক নবীন হওয়া সত্ত্বেও [জন্ম ২৫ মার্চ ১৯৯১] এবং অণুগল্প চর্চায় খুব বেশিদিন অতিবাহিত না করলেও ‘দলছুট শালিকগণ’ নামে যে বইটি প্রকাশিত হল;-এর বৈচিত্র্যপুর্ণ বিষয়বস্তু এবং অণুগল্প সম্পর্কিত ধারণার সাথে লেখকের যে নিবিড় ঐক্য স্থাপিত হয়েছে- বইটির পাঠশেষে এই কথাটাই মনে করবেন বিজ্ঞপাঠকগণ।
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা এই যুবকের ইতিপুর্বে ‘ শ্যাম পাহাড়ের আড়ালে’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৬’র একুশে বইমেলায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগ্রিকালচারে স্নাতক শেষ করে লেখক বর্তমানে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে মাস্টার্স করছেন।
‘দলছুট শালিকগণ’ কামরুজ্জামান কাজলের প্রথম অণুগল্পগ্রন্থ। অণুগল্পের ভিত্তি, বিকাশ এবং প্রচারে এই বইটি একটি মাইলফলক হিসেবে ভবিষ্যতে উচ্চারিত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
দলছুট শালিকগন
গ্রামের পাশে যে বিশাল বাদাম ক্ষেত আর ক্ষেতের পাশে যে ছোট নদী, সে নদীতে মাঝারি সব ঢেউ ওপার থেকে এপাড়ে আসে খড়কুটো মুখে নিয়ে। আর কত কিছু ভেসে আসে আর চলেও যায়—সারা দিনভর ছোটনেরা সেইসব দেখে পাড়ে বসে বসে।
ছোটনেরা মানে হলো—হাবিবুল, রতন, মোবারক, শেফালি বকুল এরা। কালিয়াখোল গ্রামের ছোটরা। তারা প্রতিদিন নদীতে আসে আর কাঁচা বাদাম খেতে খেতে লক্ষ করে নদীটাকে। নদীর ভেতরে কত কিছু। কাদাখোঁচা একটি দুটি। বালিয়া হাঁসের সাদা পাখনা উড়তে থাকে। আর ওপারের মেঘ যখন উড়তে উড়তে এপারে আসে তখন জলিল কাকার সময় হয় জোয়ালের গাই দুটাকে গোসল দেয়ার। গাই দুটার গোসল দেখতে দেখতে আর বাদাম খেতে খেতে দলের মধ্যে মোবারক নামে যে আছে, সে একটা প্রস্তাব দিল। প্রস্তাব দেয়ার আগে বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নিয়ে কয়েকটা জানাশোনা তথ্যও দিল। যেমন—এই নদীতে কিছুই ডোবে না।
বাকিরা মাথা নাড়ে—হুম।
গরু ডোবে না, খড় ডোবে না। নাও-লঞ্চ কিছুই ডোবে না। ভেলা ডোবে না।
সবাই মাথা নাড়ে। কাঁচা বাদাম খায়।
—চল আজকে একটা খেলা খেলি। মিনুরে ডুবাই দেই। দেখি ডোবে কি না?
ছোটনরা একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। প্রস্তাবে জোর সমর্থন দেয় নুরু। প্রস্তাব সমর্থন নিয়ে নুরু কারো দিকে তাকায় না। নদীর পেটে জলের প্রবাহ দেখতে দেখতে তারা স্কুলঘর দেখে। দূরের আকাশছোঁয়া মিনার মসজিদ দেখে।
—মিনুও ডুবত না। এই নদীতে কিছুই ডোবে না–বলে সাহস দেয় নুরু। ততক্ষণে মিনুকে নিয়ে এসেছে মোবারক।
মিনু জল দেখে ভয় পায়। বলে—মিঁউ!
বিশাল নদী। বিশাল চর। মিনু ভয় পায়। ডাকাডাকি শুরু করে দেয়—মিঁউ মিঁউ।
মিনুকে কোলে নেয় হাবিবুল। হাবিবুল থেকে নেয় রতন। রতন থেকে নেয় শেফালি। শেফালি থেকে নেয় রাজন। রাজন থেকে নেয়া নুরু। নুরু থেকে কেউ নেয় না। কারণ নুরু কাউকে দেয় না। সে মিনুকে ছুড়ে দেয় নদীতে।
সবাই হাসে। মিনু সাঁতার কাটে। ঠিকমতো পারে না। নদীতে ঢেউ। তলিয়ে যায়। ছোট্ট মাথা। ডোবে ভাসে। সবাই হাসে–খুশিতে হাততালি দেয়।
দুই ঢেউয়ের চাপে পড়ে মিনু ডাকে—মিঁউ মিঁউ।
প্রাণপণ চেষ্টা করে মিনু কচি পা দিয়ে পাড়ে আসতে পারে না। দূরে সরে যায়। আবার আসে। পাড়ের কাছে আসেও। কিন্তু নুরুরা ঢিল ছোড়ে। হি হি করে হাসে। হাত তালি দেয়।
মিঁউ মিঁউ করতে করতে নদীর ভেতরে চলে যায় মিনু। ঢেউয়ের ভাঁজের ভেতরে চলে যায়। ডুবে যায়। পাড়ে বসে রাজন শিস দেয়।
…………
রাতের বেলায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে পুরো ব্যাপারটা আবার দেখে ছোটন। মিনু ডুবে যাচ্ছে। ভেসে উঠছে। চিৎকার করে ওঠে ছোটন। ঘামে নেয়ে ওঠে সে। কিন্তু তার ঘুম ভাঙে না। ঘুমের মধ্যেই ছোটন বোঝে ঘুম না ভাঙলে সে নদী থেকে আর মিনুকে উঠাতে পারবে না।
সকালবেলা তাড়াতাড়ি মিনু যে কাজটি করে তা হলো ছোটনের বাবা-মাকে নিয়ে নদীর পাড় চলে এলো। তারা দেখল—নদীর ভেতরে একটা লাল জামা ভাসছে ছোটনের।
২৪১৯
কালিয়াখোল গ্রামের ছোটরা
ভূমিকা-
আমার ৪টি কবিতার বই বিভিন্ন সময়ে কলকাতা এবং আগরতলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের পাঠক বইগুলো হাতে পাননি বলেই সেখান থেকে ১০০টি কবিতা বাছাই করে এই প্রকাশনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুপ্রাণন প্রকাশনের প্রাণপুরুষ শ্রদ্ধাভাজন আবু এম ইউসুফ ভাইয়ের সহৃদয় সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ।
অনুজপ্রতিম তুহিন ভূঁইয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রূপনগর আবাসিক এলাকা
মিরপুর, ঢাকা।
সরদার ফারুকের ১০০ কবিতা
ভূমিকা-
ঘুরে বেড়ানোর স্বভাবটা ছোটবেলা থেকেই ছিলো। এ অভ্যাসটা বাবা‘ই করিয়েছেন। মায়েরও মনে হয় প্রছন্ন প্রশ্রয় ছিলো। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছি ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছি। এরপর পেশাটাও বেছে নিয়েছি ঘুরে বেড়ানোর। এ ঘুরে বেড়ানোর মাধ্যমে মানুষকে নানাভাবে জানার সুযোগ হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে দুরে বসে মানুষ দেখতে আমার বেশ লাগে। প্রতিদিনের নতুন অভিজ্ঞতা থেকে আজো প্রকৃতি, পরিবেশ, সমাজ, সংসার থেকে জানার চেষ্টা করছি। মানুষের মনসতত্ত্ব আমাকে বেশ ভাবায়। একজন মানুষের বহুরকম ভাবনা। সে থেকে যদি কিছু অর্জন করে থাকি তা কলমের ভাষায় বলবার এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
অন্যজীবন
কবিমন হাঁটে দরিয়ানগর
পাথুরে মাটির কৃষাণ’ আনোয়ার হোসেন বাদলের সেই উপন্যাস যেখানে আছে টিকে
থাকার লড়াই, দুর্নীতির থাবা, মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ ও প্রত্যাশার ফাটল, আছে কিছু
হৃদয়বান মানুষের আশ্রয় আর নদী ভাঙনের ছোবল। একটি ভালো উপন্যাসে আমরা
অবশ্যই চাইবো সমাজের ভালো-মন্দ আদলের সবটুকু রূপায়ন। ‘পাথুরে মাটির কৃষাণ’
সে ক্ষেত্রে এক অপূর্ব সংযোজন।
দক্ষিণাঞ্চল দ্রোহ আর প্রেমে বরাবরই উর্বর। একদিকে সবুজের সামিয়ানা অন্যদিকে
নদী ভাঙনের হাহাকার। একদিকে প্রতারণা, হয়রানী অন্যদিকে সর্বরিক্ত মানুষের হাত
ধরে বাঁচার সংগ্রামে কতিপয় হৃদয়বান মানুষ। আনোয়ার হোসেন বাদলের চারপাশে
থাকা এইসব মানুষই, ‘পাথুরে মাটির কৃষাণের’ চরিত্র হয়ে উঠেছে। সমাজের কালোসাদা, অন্ধকার-আলো আনোয়ার হোসেন বাদলের উপন্যাসকে এতটাই কাছের করে
তলেছে যে, মনে হচ্ছে একজন প্রক ু ৃত লেখকের কলম থেকে এই ধাক্কাটা দরকার
ছিলো। উপন্যাসের শুরুতে কলকাতা যাবার ভ্রমণযাত্রী হিসেবে যে জমিরুদ্দিনকে দেখা
যায় উপন্যাসের শেষে তাকেই দেখা যায় অনেক উত্তর মিলিয়ে দিচ্ছেন দায়িত্ব নিয়ে।
জমিরুদ্দিনই এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র, যে বিবেকের গান হয়ে পাহারাদার হয়ে
উঠেছেন। আত্মসমালোচনার চাবুক উপন্যাসের গতিকে দুর্বার করেছে। রয়েছে
মনস্তাত্ত্বিক গাঢ়তা।
মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বেঁচে থাকার ঐশ্বর্য। এখানেও রয়েছে সত্য, অসত্য কুহক।
কখনো কখনো সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় আড়ালেই থেকে যায়। একজন
শহিদ মুক্তিযোদ্ধার মা বানেছা বুড়ি তাই ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করে। মুক্তিযুদ্ধের
কথা এলেই সেখানে থাকবে রাজাকার অরেছ শিকদারের মতো চরিত্র যাদের দেখলে
আজও ঘৃণার সমুদ্র জেগে ওঠে বানেছা বুড়ির শরীরে। চাঁন গাজী, লালু শরিফ,
প্রতিবাদী যুবক রুস্তম মোল্লা, জেলে জীবন, নদীর তীব্র ভাঙন খেলা, খেটে খাওয়া
মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রাম আনোয়ার হোসেন বাদলের উপন্যাসকে দিয়েছে উত্তাল
উত্তাপ। সেই ধারাবাহিকতায় গভীর অনুরাগ জ্যোৎস্না জামিলা। যা বিরহের জলে ধোয়া
এই কঠিন জীবনের শরীরে দিয়েছে মধুর টান। সমাজের নিয়মে তৈরি দেয়াল বুঝিয়ে
দেয় অসম, অসার প্রতিদিনের ক্ষত। আনোয়ার হোসেন বাদলের উপন্যাস, ‘পাথুরে
মাটির কৃষাণ’ অনেক ছোট ছোট কাহিনি, নানা মানুষ, ভ্রমণপথের বর্ণনায় সমৃদ্ধ।
প্রকৃতি, প্রেম, রাজনীতি, প্রতিবাদ, সরলতায় জীবন্ত এই উপন্যাস হৃদয়বান পাঠকের
কাছে পৌঁছে যাবে আমার বিশ্বাস।
আসমা চৌধুরী
০৮.০৮.২০২২
পাথুরে মাটির কিষাণ - Pathure Matir Kishang
লেখক পরিচিতি :
হাসান মসফিক। পুরো নাম: সৈয়দ মাহবুব মসফিকুল হাসান। জন্ম: লোহাগড়া, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। পড়াশুনা শেষ করে বর্তমানে দেশীয় ঔষধ কোম্পানীর বানিজ্যিক বিভাগে কর্মরত আছেন। ২০১১ সালের শেষের দিকে লেখালেখি শুরু। সাহিত্যের জনপ্রিয় ওয়েবজিন বিভুঁই এর সম্পাদনা পরিষদের সাথে জড়িত।
মায়া ফড়িঙ
সাহিত্যের অন্যতম সংরূপ ছোটগল্প। জীবনের খণ্ড খণ্ড মুহূর্তগুলোকে গল্পকারগণ শিল্পরূপ দিতে ব্যপ্ত হলেও বোদ্ধাদের তীর্যক চোখের তরবারি দীপ্তিতে শিল্পস্বীকৃতি পেতে বাধা পায়। তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণদৃষ্টিতে গল্পের ভাব-সুষমা, আঙ্গিক-প্রাঙ্গিক, গঠনশৈলী, পরিবেশনভঙ্গিতে ত্রুটি দৃশ্যত হলেও সৌমেন দেবনাথের গল্পগুলি পাঠান্তে মনে হয়েছে বর্ণনা নান্দনিক, শিল্পশর্তেও উত্তীর্ণ। দৈর্ঘ্যে হ্রস্ব কাহিনি-কল্পে মাধুর্য ও সৌন্দর্য সুপরিস্ফুট। সমাজ-সমস্যা, আদর্শ-বৈষম্য, অসামঞ্জস্য, বিসংগতির পাশাপাশি সৌন্দর্যতন্ময়তা, ভাবাদর্শ, স্বপ্ন-কল্পনার সংমিশ্রণে যে গল্পসৌষ্ঠব নির্মিত হয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। মহাকালের ঘূর্ণাবর্তে ব্যক্তিসত্ত্বা হারালেও সৃষ্টিশীল কর্ম মূর্ত-বিমূর্ত পাতায় বেঁচে থাকে। যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের পাড়ে জন্ম সৌমেন দেবনাথের গল্পের ভেতরের যে জীবন বীক্ষণ-পর্যবেক্ষণ, চারিত্রিক লীলার বিকার-বিকাশ, রস-সৌন্দর্য, যুগ-চিত্ত চৈতন্য উন্মোচিত তা বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় প্রাসঙ্গিক যা কালোত্তীর্ণ হতেও পারে। সৃষ্টিশীল কর্ম শিল্পমানে অনুত্তীর্ণ হলেও সমালোচনার পরিবর্তে সাধুবাদ জানানো যুক্তিযুক্ত। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দারিদ্র্যের কাঠগড়ায়’ এর মতই তাঁর এই দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘এক উপেনের জীবনালেখ্য’ পাঠকমহলে জনপ্রিয়তা পাক এবং তাঁর মনের মধ্যের গল্পসাহিত্যের সত্ত্বা চারাটি বৃক্ষ রূপ নিয়ে পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয়ে ফুলে-ফলে মঞ্জুরিত-বিকশিত হোক এই প্রত্যাশা থাকলো।
এক উপেনের জীবনালেখ্য
বাজে অন্তহীন দ্রিমি
ভেসে বেড়াই…
বুকের ভেতরে দ্রিমি দ্রিমি বেজে ওঠে
নিজের বুকে কান লাগিয়ে শুনি সেই শব্দ
কেমন ঘোর, নেশা লাগে!
একটা অসহ্য ভালোবাসার ঘ্রাণ পাই
মানুষ যার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরে মরছে
সেই ভালোবাসা…আহা
তার বর্ণিল শব্দ- ঘ্রাণে ঘূর্ণি খেয়ে খেয়ে
মহাকাশ সমান আনন্দে ঘুর-পাক খাই
যাই, অনন্ত অভিযাত্রায়
কবিতার রূপ ধরে প্রেম নামছে পৃথিবীতে
কসমিক খেলা মেতে উঠেছে
সৌরবিভা বসেছে তাকে কেন্দ্র করে
দেখো, কীভাবে বিষণ্ন-প্রচণ্ডতা জেগে ওঠে !
উজ্জ্বল হাসি হয়ে ছায়াপথে ঘুরে বেড়াই
বেজে যায় অন্তহীন দ্রিমি…
বাজে অন্তহীন দ্রিমি
ভূমিকা-
ভেতরটা খালি, গল্পের অভাব, যুতসই প্লট পাচ্ছি না- এমন অবস্থায় সচরাচর বাইরে বের হই। হাঁটতে থাকি। সামনের মোড়টা পার হলেই বিশাল হাইওয়ে। এই হাইওয়ে দিয়ে চাইলে যেকোনো জায়গায় যাওয়া যায়। আমারও ইচ্ছা, যাই।
একা একা বেশিক্ষণ হাঁটা যায় না। একটু আগাতেই, কয়েকগুচ্ছ আলো এসে ভিজিয়ে দেয় অন্ধকারের শরীর। আগ্রহ নিয়ে ঘাড়টা ঘোরাতেই দেখি দুটি যান্ত্রিক চোখ। গাড়িটা আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
এরই মধ্যে টের পাই আমার সাথে আরেকজন। সেও হাঁটছে। ল্যাম্পোষ্টের আলোর সাথে সাথে পাল্টে যাচ্ছে তার শরীর। বুঝতে পারি, তার কিছু বলার আছে। তবুও থামতে ইচ্ছা করে না। নিজের ছায়ার সাথে আমার কথা হয় না, বহুদিন!
সামনে থাকা অনেক কিছুই ইশারা করে! রাতের নিষিদ্ধ সেই সব ডাক, না শুনে পারি না। বৃদ্ধ পাইকর গাছ, একটা চিঠির লাল বাক্স, পাশে ড্রেন, সেখানে জোড় হারানো একপাটি স্যান্ডেল উল্টে পড়ে আছে। আমি ওদের কাছে যাই। নেড়ে চেড়ে পরখ করি, ভেতরে গল্প আছে কী না।
আটপুকুরের ফুল
জারিফ আলমের কবিতায় একধরনের মুগ্ধতা আছে। এ মুগ্ধতা কবিতার বিষয় নির্বাচন, শব্দচয়ন এবং উপস্থাপনার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে যা পাঠের মধ্য দিয়েই পাঠকমনকে আলোড়িত করে। এই কাব্যে যাপিত জীবনের নানা অনুষঙ্গ কবির ব্যক্তি জীবনেরই যেন ছবি। প্রকৃতি ও প্রেমের অপূর্ব সমন্বয় আছে বলেই কাব্যের মধ্যে ভাবনা ও আবেগের ভারসাম্য লক্ষ করা য়ায়। এই কাব্যে তীব্র বেদনাবোধ যেমন আছে আনন্দেরও বার্তা আছে। ছন্দকে মেখে খেয়ে যে রসায়ন তিনি তৈরি করেন তাতেই তার কবিতাকে চিহ্নিত করা যায়। সেই চিত্রই অমার দেখি বর্তমান কাব্যে।
-মাহমুদ কামাল।
মুখোশ বদলে গেলে - Mukhosh Bodle Gele
চারপাশে ঘটে যাওয়া জীবনের গল্প নিয়ে এই উপস্থাপনা। পরপার্থিব গল্প মায়ায় যেমন উঠে এসেছে মাতৃত্ববঞ্চিত জীবনের একটি অধ্যায়, তেমনি বিবর্ণ গল্পে উঠে এসেছে স্ত্রী এবং সন্তানহারার বেদনা। আড়িখোলা গল্পটি যেমন একটি কিশোর মনের অভিমানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে, তেমনি হৃদয় ও গায়েন গল্পটি জীবন সংগ্রামের সফল পরিসমাপ্তির গল্প। রম্য অংশে সীমা নামক এক মাঝবয়সী মধ্যবিত্ত গৃহিণীর সাথে স্বামীর সংসারিক খুনসুটির একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব কিছুই আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া জীবনের গল্প।
বিবর্ণ
আমি কী আর জন্মেছিলাম মানুষ হিশেবে?
জন্মেছিল আবু তাহের, এই লোকটা কে?
মুখ চিনি না তবু মুখের আদল ধরে হাঁটি
শরীর খুলে বাইরে এসে ছায়ায় পরিপাটি।
আমি হয়তো ছায়ার মানুষ, শরীর আরেকজন
তার শরীরেই আড়াল হয়ে বাঁচার আয়োজন।
কার সে জীবন আমার কাঁধে, আমি-ই যে হায় কার
একই সাথে খাচ্ছি-দাচ্ছি ঘুমোচ্ছি আবার।
আমার যে, সে কোথায় থাকে? কোথায় বাড়িঘর?
তার সাথে কী বদলেছে এই আমার টিনের ঘর?
গোধূলির জাদুকর
Ekti Khuner Prostuti Boithok
শহর মাত্রই একটি নদী। আর শহরে বসবাসকারী মানুষগুলো হচ্ছে নদীর জলে ভাসমান কচুরিপানা। কারো পানায় পাতা গজিয়েছে তো কারো পানায় বায়ুকুঠুরি। নদীতে যেমন জোয়ার-ভাটা হয়, শহরেও তেমনি জোয়ার-ভাটা হয়। জোয়ার কালে কচুরিপানারা সব ভেসে ভেসে চলতে থাকে স্রোতের সাথে। মানুষও সেরকম ভাবেই চলে, যখন বাতাস যেদিকে ধায়। সন্ধ্যায় আবার ভাটার টানে একইভাবে ফিরে আসে আপন ঠিকানায়। এই জোয়ার-ভাটার মাঝেও কখনো কখনো নদী বিশ্রাম নেয়, বুকে ধারণ করা বিশাল জলরাশিকে স্থবির করে রাখে ক্ষণিকের জন্য। আর ঠিক তখনই কচুরিপানারা স্ব স্ব দম্ভে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে মরিয়া হয়ে পড়ে। যদিও কচুরিপানারা এটা জানে, তার কান্ড থেকে বের হওয়া দীর্ঘ, তন্তুময়, বহুধা বিভক্ত মূলগুলো যত দীর্ঘই হোক না কেন, নদীর ছোট্ট একটা ঢেউ উপেক্ষা করার ক্ষমতা তাদের নেই। তাই হয়তো জলজ এই উদ্ভিদগুলো মাটির সাথে তাদের শিকড়ের সম্পর্ক স্থাপন করে না কখনো।
এই শহরের মানুষগুলোও জানে, নগর নদীর ছোট্ট একটা ঢেউ সবকিছু তছনছ করে দিতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। তবুও মানুষ প্রতিনিয়ত হাজারো স্বপ্ন নিয়ে ঢেউয়ের মতো ছুটে এসে আছড়ে পড়ছে এই শহর নামক নদীর বুকে। এই নিশ্চিত অনিশ্চয়তার মধ্যেই কি দিব্যি আগামীকালের স্বপ্ন দেখে। নানা শ্রেণির মানুষ, নানা রকম স্বপ্ন।
“নগর নদীর ঢেউ” একটি জীবনমুখী সামাজিক উপন্যাস; যেখানে লেখক তার যাপিত জীবনের সূক্ষ্ম বোধগুলিকে থরে থরে বিন্যস্ত করেছেন সুনিপুণ হাতে। একজন মধ্যবিত্ত অতি সাধারণ মানুষ থেকে পরিশ্রম আর মেধার সঠিক সন্নিবেশ ঘটিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করা একজন সফল মানুষের জীবনগল্প এটি। এই উপন্যাসে শহরকেন্দ্রিক জীবন-যাপনের নানা দিকগুলি উঠে এসেছে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। উপন্যাসটির পটভূমি একটি দীর্ঘ কাহিনি। যেখানে শফিক নামের কেন্দ্রীয় চরিত্রটিকে ঘিরে গল্পের ডালপালা ছড়িয়েছে বিস্তর। পাশাপাশি ব্যক্তি জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ঘাত-প্রতিঘাত, আশা-আকাক্সক্ষা, খুনসুটি, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, ভালোবাসা-ঘৃণা, প্রতিশোধ পরায়ণতা ইত্যাদি বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে নানা ঘটনার ধারাবাহিকতায়। উপন্যাসটির প্লট বা আখ্যান খুবই সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত। প্লটের মধ্যে ঘটনা ও চরিত্রের ক্রিয়াকা-কে এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে যাতে তা বাস্তব জীবনকে প্রতিফলিত করে এবং কাহিনিকে আকর্ষণীয়, আনন্দদায়ক ও বাস্তবোচিত করে তোলে।
চলার পথে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যে বিষয়গুলি আমরা সাধারণত এড়িয়ে যাই, এই উপন্যাসে লেখক সেই বিষয়গুলিকে খুব গভীর অথচ সহজভাবে মেলে ধরেছেন। এবং প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনার পেছনে নিজস্ব একটা ‘দর্শন’ রেখে গেছেন পাঠকের উদ্দেশ্যে, যা আসলে একজন গুণি লেখকের পক্ষেই সম্ভব।
একজন ভাড়াটে মাস্তান কাজের কন্ট্রাকসহ এডভ্যান্স টাকা হাতে নিয়ে যখন তার ক্লায়েন্টের বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় হাঁটে, তখন সে মনে মনে কী ভাবে বা ভাবতে পারে? সে হয়তো ভাবতে পারে, এই টাকাগুলি সে কোথায় কোথায় ফুর্তি করে কিভাবে উড়াবে। অথবা বিশেষ কোনো খায়েশ মেটানোর কথাও ভাবতে পারে। আর যাই’ই ভাবুক মাস্তান নিশ্চয় তার টাকাগুলি রাস্তায় ছিনতাই হয়ে যেতে পারে এই ভেবে দুশ্চিন্তা করবে না! সাধারণ মানুষ হয়তো এমনটাই ভাববেন। কিন্তু না, ঔপন্যাসিকের চিন্তা জগত তো সাধারণ মানুষের মতো নয়। একজন মাস্তানও তার টাকা লুট হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক নিয়ে গন্তব্যের দিকে দুরুদুরু বুকে চলতে পারে। লেখকের ভাষায়, “টাকার দুশ্চিন্তায় থাকা পথিকের কখনোই মাথার উপর খোলা আকাশে পূর্ণ চাঁদ দেখা হয়ে উঠবে না, এটাই স্বাভাবিক।”
এই শহরে মূলত দুই শ্রেণির পেশাজীবী মানুষের বসবাস। চাকরিজীবী আর ব্যবসায়ী। এখানে যে বা যারা একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক, সে বা তারা ব্যবসায়ী; হোক সেটা চায়ের একটি টং দোকান বা বহুমুখী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে যে বা যারা কাজ করতে আসে তারা চাকরিজীবী, হোক সে কাস্টমারের হাতে চায়ের কাপটি তুলে দেয়া কোনো ছোটু কিংবা গলায় টাই ঝুলিয়ে নয়টা-পাঁচটা ডিউটি করা কোনো কর্মকর্তা। দিনশেষে একদল মানুষ এই শহরে মালিক এবং একদল মানুষ চাকর। আর এই চাকর শ্রেণির মানুষের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লেখকের ভাষায় বর্ণিত হয়েছে এইভাবে, “যে প্রতিষ্ঠানের মালিকবৃন্দ মাস শেষ হতেই ঠিক সময়ে মাইনে দিতে পারে, তাদের শত অপরাধেও সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলার মুরুদ থাকে না চাকুরে নামক মেরুদন্ডহীন প্রাণীগুলোর।”
পুরো উপন্যাস জুড়েই নানা ঘটনার পাশাপাশি প্যারালালভাবে এমন সব দর্শনের বিস্তার ঘটিয়ে গেছেন লেখক, যা পাঠকের ভাবনা জগতে একটু হলেও নাড়া দিয়ে যাবে। ব্যাপারটি আবার এমনও নয় যে, লেখক বিনা কারণে শুধু তার নিজস্ব দর্শন কপচিয়ে গেছেন, বরং এই দর্শনগুলোই প্রতিটি ঘটনাকে একটি সঠিক উপলব্ধিতে এনে দাঁড় করিয়েছে।
পরিশেষে বলতে চাই, মানবজীবন সংক্রান্ত যে সত্যের উদঘাটন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে পরিষ্ফূট হয় সেটাই লেখকের জীবনদর্শন। আমরা একটি উপন্যাসের মধ্যে একই সঙ্গে জীবনের চিত্র ও জীবনের দর্শন এই দুইকেই খুঁজি। এর ফলে সার্থক উপন্যাস পাঠ করলে পাঠক মানবজীবন সংক্রান্ত কোনো সত্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। এই উপন্যাসটি পাঠ শেষেও পাঠকের তেমনই এক উপলব্ধি হবে।
তুষার অপু
মহাখালী, ঢাকা
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
নগর নদীর ঢেউ
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.