Additional information
Weight | 0.210 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.32 $ 1.76
Weight | 0.210 kg |
---|---|
Published Year |
দেবাশীষ ধর। জন্ম: ৫ই জানুয়ারি, ১৯৮৯। চট্টগ্রাম। কবিতার ছোটকাগজ ‘বাঙাল’ এর সম্পাদক। কবির এটি প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
ফসিলের কারুকাজ
কিছু একটা বলাটাই যখন বাধ্যবাধকতাÑবাহুল্য এবং আপেক্ষিক বাতুলতা বাদ রাইখা মাহবুব লীলেন থাইকা ধার কইরা বলতে হয়Ñ ‘আনফিট মিসফিট হইয়া হামাগুড়ি দিয়া হাঁটি, আর রাত্তিরে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ টাইনা চিক্কুর দিয়া কইÑ যাহ শালা বাঁইচা গেলাম আরও একটা দিন।’
এইটা বড়োবেশি জৈবিক বাঁচা
মানবিক বাঁচনের স্বপ্নও দেখি না বহুদিন
বড়ো তরাসে আছি
বড়ো বেশি চাইপা আছি, নিজের গলা নিজে।
দ্বান্দ্বিক দ্বন্দ্ব বিষয়ক আজাইরা প্রলাপ
মেঘ অদিতি। কবি ও গল্পকার হিসেবে ‘দু’বাংলাতে পরিচিত। জন্ম: ৪মে, জামালপুর। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘জলডুমুরের ঘুম (কাব্য)’ ‘অস্পষ্ট আলোর ঘোড়া (গল্প)’ ‘অদৃশ্যতা হে অনিশ্চিতি (কাব্য)’ এবং ‘সময় শূন্যতার বায়োস্কোপ (মুক্তগদ্য)।
প্রবেশিধকার সংরক্ষিত
লেখক পরিচিতি :
নিখিল নওশাদ। জন্মসন: ১৯৮৯ইং। বড়িয়া, ধুনট, বগুড়া, বাংলাদেশ। ‘বিরোধ, ‘নিওর’ ও ‘নীড়’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই। এছাড়া ছোটগল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।
এটি একটি চিৎকার
সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব। জন্ম: ১৯৭৮ সালে বরিশাল জেলা সদরে করিমকুটির নামক স্থানে। তার লেখার বিষয় মূলতঃ কবিতা। সময় নাট্যদলের সাথে একযুগ পার করেছেন। গানও লিখতেন কিন্তু বন্ধুবরের প্রয়ানে, অভিমানে আর সেপথ মারাননি। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকলেও নিজেকে একজন কবিতার শতরঞ্জি মোড়ানো শ্রমিক বলেই মনে করেন। এটি কবির প্রথম বই।
রূপোর দ্যুতি
অয়ন্ত ইমরুল। জন্ম: ১২ই এপ্রিল ১৯৮৭ইং, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার আজিমনগর গ্রামে। পদ্মা নদীর ভয়াল গ্রাসে শৈশবেই ঠিকানার পরিবর্তন ঘটে বর্তমানে সাভার আশুলিয়ায় বসবাসরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ছায়াসমুদ্র
ফারহানা খানম। জন্ম: ১৯শে এপ্রিল ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপে। ‘ভুগোল ও পরিবেশ’ বিষয়ে স্নাততোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে ব্যাংকে চাকুরি শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। নয় ভাই-বোনের মাঝে সবার ছোট বলেই আদরও পেয়েছেন বেশি। প্রথম প্রকাশিত বই, ‘ইছামতি’ (কলকাতা থেকে প্রকাশিত)।
তৃষ্ণার্ত বালুতট
লেখক পরিচিতি :
তানভীর আহমেদ হৃদয়। জন্ম: ৩ডিসেম্বর, ১৯৮৫ইং। মুন্সিগঞ্জ, বিক্রমপুর। প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকায় আছে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়া। এছাড়া সম্পাদিত গ্রন্থের তালিকায় আছে কবিতা ও গল্প। লেখকের লেখা প্রতিনিয়ত দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে।
অচেনা রৌদ্রের রঙ
আলী রেজা। জন্ম: ১৯৫৭। মুক্তিযুদ্ধে আলোড়িত কবি, সত্তর দশকে মূলত ছোটকাগজে লেখালেখি শুরু করেন। সদ্য অবসরে যাওয়া একটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক। এটি কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
আলী রেজা
আবু জাঈদ। জন্ম: ২২শে জুলাই ১৯৮৩, ঢাকা। পড়াশুনা অসমাপ্ত রেখে একসময় কবি বাউণ্ডুলে জীবনের এলোমেলো আলপথে নেমে যান বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, তাই বলে কাব্যচর্চা থেমে থাকেনি। এক সন্তানের জনক। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
মানচিত্রের ফাঁসি চাই
রঞ্জনা বিশ্বাস। জন্ম: ১০ডিসেম্বর, ১৯৮১। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে খ্রিস্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ ও ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’ কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবির প্রকাশিত কাব্যফসল। এছাড়া কবি কবিতাচর্চার পাশাপাশি ফোকলোরচর্চাকেও ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। নৃ-তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মী কবির আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ ও ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ প্রকল্পে কাজ করছেন। এছাড়া এখন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগে কর্মরত আছেন।
বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস
লেখক পরিচিতি :
শঙ্করী দাস। জন্ম: ৮ই মে, ১৯৫৮ সনে নিজ জেলা জামালপুরে। কবি প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থগুলোÑ গল্প: ‘প্রতিবিম্ব ও অন্যান্য গল্প’ ‘জলমাটির গল্প’ ও ‘রাহুর চন্দ্রগ্রাস’। কবিতাÑ ‘ঘাসবোনা গ্রাম তাঁতবোনা গ্রাম’। স্মৃতিচারণমূলকÑ ‘গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’। গল্পের জন্যে পেয়েছেন পাক্ষিক ঐকতান (বর্ধমান) পত্রিকা পদক। শিশু কবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ও নক্ষত্র সাহিত্য পুরস্কার।
বিহান বেলার ঈশ্বর
হাসানআল আব্দুল্লাহ। জন্ম: ১৪ই এপ্রিল, ১৯৬৭। গোপালগঞ্জ জেলার গোপিনাথপুর গ্রামে। তিনি প্রবর্তন করেছেন নুতনধারার সনেট। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থর সংখ্যা দশ। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার কবিতার অনুবাদে প্রকাশ করেছেন বিশ্ব কবিতার কয়েকছত্র। অন্যান্য প্রকাশিত গ্রন্থ- সনেটগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা, আঁধারের সমান বয়স, এক পশলা সময় প্রভৃতি। ২০০৭ ও ২০১৫ সালে নিউইয়র্কের কুইন্স শহরের পোয়েট লরিয়েট ফাইনালিস্টের সন্মান পেয়েছেন।
বৃত্তের কেন্দ্রেও কবিতার মুখ
অপুষ্পক বারুদ
“ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট দুঃখ ছোট কথা… অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ।।” -কথাগুলো ছোট গল্পের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রবিন্দ্রনাথ তাঁর ‘বর্ষাযাপন’ কবিতায় বলেছিলেন।
ইংরেজি সাহিত্য অধ্যায়নের শুরুর দিকে পড়া জেমস জয়েসের অনবদ্য ছোট গল্প ‘এরাবি’। রবিন্দ্রনাথের কথার মতই গল্পের ছোট ছোট ব্যথাগুলো ছোট করে গভীর দাগ কেটে গিয়েছিল মনে। তখনও ভাবিনি কোনদিন এমন গল্প অনুবাদ করার সাহস করতে পারব। বেশ কয়েক বছর পর ছোট গল্পের প্রতি তীব্র টান আর অদ্ভুত এক তাড়নায় গল্প অনুবাদ শুরু করলাম প্রিয় গল্প ‘এরাবি’ দিয়ে। অতঃপর একে একে আরও অনেক বিদেশী ছোট গল্প যোগ হতে লাগল প্রিয় গল্পের তালিকায়। এর মধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত ছোট গল্পকার মান্টো, প্যাট্রিক ওয়াডিংটন, কেইট শোপেন, শার্লি জ্যাকশন আর গারশিনের মত লেখকের কিছু গল্প মাতৃভাষায় রূপান্তরের লোভ সামলানো গেল না। চমৎকার ১১ টি গল্পের অনুবাদ নিয়েই তৈরি এই নির্বাচিত ভিনদেশী গল্প গ্রন্থ।
নির্বাচিত ভিনদেশী গল্প
জন্ম বিক্রমপুরের দিঘলী গ্রামে। ছোটবেলা থেকে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে জড়িত। বর্তমানে বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের কার্যকরী সদস্য। দৈনিক আমাদের সময়ের প্রাক্তন সাব-এডিটর।
গন্তব্যহীন দুঃখবিলাস
সম্পাদকীয়, অনুপ্রাণন–১০ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা
শিল্প-সাহিত্যে নারীর ভাষা, ভাষ্য ও দৃষ্টিকোণ নির্মাণে শিল্পী ও সাহিত্যিকদের ভূমিকা
ভাষা সমভাষীদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের সহজ ও বোধগম্য উপায়। কিন্তু যখনই বৈষম্যমূলক সমাজ জাতি, বর্ণ, ধর্ম, শ্রেণি, অঞ্চল ও লিঙ্গভেদ সৃষ্টি করে, তখন সমভাষীদের মধ্যে নানারকম উপভাষা, আঞ্চলিক ভাষা এবং একইসাথে উপ-সংস্কৃতিতে জাতি বিভক্ত হয়ে পড়ে। ভাষা ও ভাষ্যের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে তর্ক ও ক্ষেত্রবিশেষে বিবাদ দেখা দিতে পারে। শব্দ ও বাক্যের ব্যবহার ভেদের সাথে সাথে উচ্চারণেরও নানা ভেদ ও ব্যতিক্রম সৃষ্টি হয়। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, বাক্যগঠন, শব্দ ব্যবহার এবং উচ্চারণে বিভেদ ঘোচালেই মানুষে মানুষে বাস্তব ভেদাভেদসমূহ দূর হয়ে যায়। সমাজে যে সকল বর্ণ, শ্রেণি, লিঙ্গ ও অন্যান্য প্রকার ভেদাভেদ রয়েছে, সেসব ভেদাভেদের শেকড় সমাজের গভীরে নিহিত। এ সকল ভেদাভেদের পেছনে কলকাঠি নাড়ে ইতিহাস, পরম্পরা, প্রথা, প্রচলন, শাস্ত্র, প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক-সামাজিক তত্ত্ব ও দর্শন। এসব ইতিহাস, পরম্পরা, প্রথা, প্রচলন, শাস্ত্র এবং প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক-সামাজিক তত্ত্ব ও দর্শন নির্মাণ ও বর্ণনার ভাষা, ভাষ্য, শব্দ, বাক্য ও বাগধারার একটি নির্দিষ্ট ছক থাকে। প্রতিষ্ঠাতার নিজের অবস্থান সুরক্ষিত করার জন্য সংগঠিত, অন্যদিকে বৈষম্য দূর করার জন্য পরিবর্তন ও মানবিক বিকল্পের প্রয়াসে যারা ভাষা, ভাষ্য, শব্দ, বাক্য, বাগধারা অথবা প্রবাদের আলোচনা-সমালোচনা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করায় ব্রত রয়েছেন, তারা যেন এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ অথবা যদি তাদের কোনো সংগঠন থেকে থাকে, তবে সেটাও নিতান্ত দুর্বল।
সরল ও স্বাভাবিকভাবে দেখলে শিল্প-সাহিত্য দেশ, সমাজ, রাষ্ট্রের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং চলমান ঘটনারই প্রতিফলন। তাই সমাজে বিরাজমান ভেদাভেদ ও বৈষম্যের প্রতিফলন শিল্প-সাহিত্যে এসেছে। কিন্তু সবক্ষেত্রে সেসব প্রতিফলন যে, সহজ ও স্বতঃস্ফূর্ত ছিল তা নয়। ক্ষমতাশালী শ্রেণি-গোষ্ঠী, তাদের মত ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার ও প্রসারে যেমন ব্রতী হয়েছে, তেমন একইভাবে নানারকম লিখিত-অলিখিত সেন্সরশিপ আইনের প্রকাশ্য অথবা আড়ালে প্রয়োগ করার মাধ্যমে ক্ষমতার বাইরের শ্রেণি-গোষ্ঠীর প্রতিবাদী মানবিক ও নান্দনিক শিল্প-সাহিত্যকে দমন করেছে, নিশ্চিহ্ন করেছে অথবা নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে নিষ্ঠুরভাবে। কোনো ভালো অথবা ন্যায্য কাজেও সমাজের ক্ষমতাধরদের রাগ-বিরাগ দেখা দিলে সেসব কাজ নিরুৎসাহিত করার উপায় নানাভাবেই উদ্ভাবিত হয়েছে, সুকৌশলে এসবের প্রয়োগ হয়েছে এবং হচ্ছে।
সুতরাং শিল্প-সাহিত্যে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর ভাষা, ভাষ্য ও দৃষ্টিকোণ নির্মাণের পথে এক দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করা; এমনকি আত্মদানের অতীত ইতিহাস রয়েছে, যা কি-না সমকালীন সমাজেও চলমান রয়েছে। শিল্প-সাহিত্য শরীরী কোনো খেলা নয় যে, সেটার জন্য দুটো পৃথক মাঠ থাকবে, যেমন—পুরুষ ফুটবল-নারী ফুটবল বা পুরুষ হকি-নারী হকি। শিল্প-সাহিত্য বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ। নারী ও পুরুষের মাঝে বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতার বিভেদ রেখা টানার বিধান শাস্ত্রে উল্লেখ করে এই বিভেদ রেখাটাকে স্থায়ী করার চেষ্টা হয়েছে এবং সেই চেষ্টা চলমান রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, নারী ও পুরুষের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক কোনো বৈষম্য নেই। তাই যত চেষ্টাই করা হয়ে থাকুক না-কেন, শিল্প ও সাহিত্যচর্চার মাঠটাকে নারী-পুরুষে ভাগ করা যায়নি।
একজন শিল্পী অথবা সাহিত্যিককে প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থার বাস্তবতার সাথে লড়াই করেই নিজের স্থান করে নিতে হয়। আমরা বিষয়টা বুঝে নিতে পারি যে, কেন ইতিহাসে একজন পুরুষ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি পাওয়া যায়, কিন্তু একজন নারী মাইকেলেঞ্জেলো পাওয়া যায় নাই। প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসে আমরা উল্লেখযোগ্য কোনো নারীশিল্পী অথবা সাহিত্যিকের নাম দেখতে পাই না। যদিও এসবকালে মৌখিক সাহিত্য রচিত হয়েছে, যা কি-না পরবর্তীতে নামহীন সাহিত্য হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এমনকি রেনেসাঁর যুগেও যখন শিল্প ও সাহিত্যের ব্যাপক জাগরণ ঘটেছিল, তখনও আমরা কি সে-রকম উল্লেখযোগ্য নারীশিল্পী অথবা সাহিত্যিকের নাম পাই? বস্তুত আধুনিক যুগে এসেই বহু লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নারীরা রচিত শিল্প-সাহিত্যে যেমন স্বমহিমা ও মর্যাদার স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে সে-রকম নিজের অসীম মানসিক শক্তি অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বল্প সংখ্যায় হলেও শিল্প ও সাহিত্যের জগতে শিল্পী অথবা লেখক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এসব কারণে নারীদের হৃদয়ের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের মাত্রাটা অনেক সময়েই সমাজসচেতন ব্যক্তির কাছেও অননুধাবনযোগ্য হয়ে পড়ে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ভয়ার্ত শৈশব, অব্যক্ত কৈশোর, বৈষম্যের যৌবন, অতৃপ্তির দাম্পত্য, সামাজিক নিষ্পেষণ যে বিষয়বৈচিত্র্য, কোনোরকম রাখঢাক না করেই সেসব কাহিনির কতটা বাস্তবে উন্মোচন ও প্রকাশে সমাজ সাহসী হয়ে উঠবে? কিন্তু ইঞ্চি ইঞ্চি করে হলেও কুসংস্কারগুলো ঝেড়ে ফেলে সমাজ একটু একটু করে এগিয়েছে।
কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিল্প-সাহিত্যে নারীর অবয়বকে জন্মদাত্রী মায়ের অথবা যৌন আবেদনময়ী রমণীর বিভিন্ন প্রতীকী উপস্থাপন হয়েছে অনেকটা সান্ত্বনা পুরস্কারের মতো করে। নারীকে শৃঙ্খলিত করার জন্য যেমন প্রতীক সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি নারীমুক্তির জন্যও প্রতীক রয়েছে। নারী নিজে কখনো প্রতীক হয়েছেন, নারীর পোশাকে প্রতীক ছড়িয়েছে, নারীকে অবমাননার জন্য প্রতীকের ব্যবহার হয়েছে। নারীর প্রতীকী উপস্থাপন শিল্পকলায়, সাহিত্যে, সভ্যতায় যেভাবে এসেছে, বাস্তবের নারী সেখান থেকে বহুদূরেই রয়ে গেছে। অথবা পুরো বিশ্বব্যবস্থা নারীকে প্রতীকী উপস্থাপনের মাধ্যমে বেঁধে ফেলতে চেয়েছে, নারী কেবলই সেই বাঁধন ছিঁড়ে বেরোবার জন্য নিরন্তর যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অজস্র প্রতীকের অচলায়তন ভেঙে এগিয়ে যাওয়াটাই নারী জীবনের প্রতিদিনের সংগ্রাম।
শিল্প-সাহিত্যে নারীর প্রবেশ ও অগ্রগতির পথে সমস্যার ব্যাপ্তি ও গভীরতা অনুধাবন করার জন্য নারীশিল্পী ও সাহিত্যিকদের শিল্প-সাহিত্য জগতে প্রারম্ভিক প্রবেশ করা, এগিয়ে আসা এবং অগ্রগতির বিষয়গুলো উল্লেখ করে, আমরা কিছুটা আলোচনা করতে পারি। সভ্যতার হাজার হাজার বছর পেরিয়ে গেছে যখন শিল্প-সাহিত্যচর্চায় একমাত্র পুরুষদেরই পদচারণা ছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপ যখন ধীরে ধীরে রেনেসাঁর দিকে গুটি গুটি পা বাড়াচ্ছিল, তখনও মাত্র অল্প কয়েকজন নারীশিল্পী অথবা সাহিত্যিক রেনেসাঁর প্রস্তুতি পর্বে ‘মর্ত্যরে ভগবান’ তথা পুরুষদের বাধা অতিক্রম করে নিজেদের প্রকাশ্যে নিয়ে আসার জন্য কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। এই সারিতে যে আটজন নারীর নাম উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা হয়ে থাকে, তারা হচ্ছেনÑ সোফোনিসবা এঙ্গুইসোলা, লেভিনা তিরলিঙ্ক, লাভিনিয়া ফনটানা, ক্যাথারিনা ভন হেমেসিন, এলিজাবেথ সিরানি, ক্লারা পিটার্স, জুডিথ লেইস্টার এবং আর্টমেসিয়া জেনটিলেসিন।
কিন্তু তারও অনেক পূর্বে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীকালে পারস্য ও মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে সহস্রার্ধ মৌখিক গল্প মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে সম্রাট শাহরিয়ারের স্ত্রী শাহ্রজাদের কথাসাহিত্য হিসেবে। শাহ্রজাদের সৌভাগ্য যে, ইতিহাস তার নামটি মুছে বেনামী নামকরণ করেনি। পৃথিবীর কথাসাহিত্যের জগতে এ-রকম নানা বিষয়ভিত্তিক ১০০১টি গল্পের রচনা বিস্ময়কর, যেখানে প্রতিটি গল্পের শেষে সম্রাটের কাছে তার স্ত্রী শাহ্রজাদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করার প্রার্থনা গৃহীত হওয়ার কথা যুক্ত রয়েছে। সিন্ধু সভ্যতায় গুহাচিত্র ও পাথরের ভাস্কর্যে নারী জন্মদাত্রী মাতা অথবা যৌন আবেদনময়ী বস্তু হিসেবেই চিত্রিত হয়েছে। বৈদিক পর্বে শাস্ত্রমতে, নারীর অবস্থান জন্মদাত্রী মাতার অবস্থান হিসেবে নারীকে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নির্দিষ্ট করে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, এই মর্যাদা লাভের কারণে নারী-পুরুষতন্ত্রের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত ছিল। বাস্তবে প্রাক-উপনিবেশবাদ আমল পর্যন্ত সিন্ধু ও ভারতীয় সভ্যতায় নারী, বংশ রক্ষাকারী মাতার বাইরে আর অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত হয়ে উঠতে পারে নাই। চীন সভ্যতায়ও সপ্তম থেকে দশম শতাব্দীতে তাং রাজত্বকালে নারীদের অবস্থানে স্বকীয়তা অর্জনের কিছু সুযোগ গ্রহণ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো নারীশিল্পী অথবা সাহিত্যিকের নাম পাওয়া যায় না। নারীদের নান্দনিক ক্ষুদ্র অঙ্কন ও সুচি শিল্পের নিদর্শন জাদুঘরে দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বসাহিত্যে প্রথম নারী কবি প্রাচীন গ্রিসের স্যাফো। ষষ্ঠ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে নব কবিদের একজন ছিলেন এই গীতিকবি। চর্যাপদকে বলা হয় বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন। চর্যাপদের পদকর্তাদের মধ্যে একজন নারী পদকর্তা ছিলেন বলে মত প্রকাশ করেছেন ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়। এই নারী পদকর্তার নাম কুক্কুরিপা। রজকিনীকে অনেকে চেনেন চণ্ডীদাসের প্রেমিকা হিসেবে। তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে, তিনি একজন কবি। তিনি রামী ও রামমনি—এই দুই নামে কবিতা লিখতেন। তাঁর পদগুলোর নাম ছিল রামীর পদ। ঋগে¦দ-এ কয়েকজন নারী দার্শনিকের নাম পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে একজন লোপামুদ্রা। তিনি কৌষীতকি নামেও পরিচিত ছিলেন। ঋগে¦দে ২৭ জন নারী ঋষির রচিত সূক্তের উল্লেখ রয়েছে। ইতিহাসে এসব উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সংখ্যাবিচারে বলা যেতে পারে যে, বস্তুত আধুনিক যুগে এসেই নারীরা শিল্প-সাহিত্যে ধীর লয়ে প্রবেশ করার সুযোগ গ্রহণ করে, যখন শিল্প-সাহিত্যে নারীর ভাষা, ভাষ্য ও দৃষ্টিকোণ নির্মাণের বিবরণ পাওয়া যায়।
বাংলা ভাষায় প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী। তাঁর রচিত রামায়ণে তিনি রামের পুরুষালি বাহুবলের পরিবর্তে সীতার বঞ্চনা ও পীড়নের বর্ণনাকে মাহাত্ম্য দিয়েছেন। বলা যায়, নারীকবি চন্দ্রাবতী বাংলা সাহিত্যে নারীর ভাষা, ভাষ্য এবং দৃষ্টিকোণ নির্মাণের সূচনা করেন। নারী লেখক রচিত প্রথম উপন্যাসের নাম মনোত্তমা। এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬৭ সালে নবপ্রবন্ধ পত্রিকায়। তবে এ উপন্যাসের লেখকের কোনো নাম জানা যায়নি। লেখক-নামের স্থলে কেবল লেখা ছিল ‘হিন্দুকুল-কামিনী প্রণীত’। আবার বাঙালি মুসলমান নারীদের মধ্যে প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাহিত্যগ্রন্থ রচনা করেন ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী। ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত তাঁর বইয়ের নাম ছিল রূপজালাল। ওই বছরই ঠাকুর পরিবারের মেয়ে ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় বোন স্বর্ণকুমারী দেবী লেখেন উপন্যাস, ‘দীপ নির্বাণ’। এ ছাড়া পৃথিবীর প্রথম নারী ঔপন্যাসিক বলা হয়, জাপানি লেখিকা মুরাসাকি শিকিবুকে। তাঁর উপন্যাসের নাম গেঞ্জি, যার ইংরেজি অনুবাদ দ্য টেল অব গেঞ্জি। বাঙালি মুসলমান নারীদের মধ্যে প্রথম গদ্যরচনার কৃতিত্ব হলো তাহেরুন্নেসার। ১৮৬৫ সালে ‘বামাগণের রচনা’ নামে বামাবোধিনী পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল তাঁর গদ্য। বাঙালি মুসলমান নারীদের মধ্যে প্রথম ঔপন্যাসিক হলেন এস এফ খাতুন। ১৯২১ সালে লেখা তাঁর উপন্যাসের নাম জোবেদা।
নারী শিল্পী ও লেখকদের শিল্প ও সাহিত্য রচনার কাজে নিয়োজিত হওয়ার পথ কখনো মসৃণ ছিল না—এখনো নেই। অন্যদিকে নারী অথবা পুরুষ শিল্পী ও সাহিত্যিকদের দ্বারা নারীর সামাজিক সমস্যাগুলো চিত্রিত করার কাজেও বিস্তর বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ সকল পরিস্থিতিতে নারীদের মধ্যে শিল্প-সাহিত্যে আধুনিক নারীর সংগ্রামের ভাষ্য ও রূপরেখা নিয়ে নানা মতভেদও দেখা যায়। প্রশ্ন উঠেছে, এসব মতভেদ শিল্প-সাহিত্যে নারীর অবস্থান সৃষ্টিতে নারী আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কি-না? তবে আমরা মনে করি, মতভেদ থাকবেই এবং এসব মতভেদ দ্বান্দ্বিক নিয়মেই দূরীভূত হয়ে একটি নতুন স্তরে উন্নীত হতে পারে।
শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, অনুপ্রাণন, শিল্প ও সাহিত্যে নারীর সরব উপস্থিতি কামনা করে। অনুপ্রাণন আশা করে, শিল্প-সাহিত্যের মাধ্যম দিয়ে নারীর ভাষা, ভাষ্য এবং দৃষ্টিকোণ ক্রমেই সমাজে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করার কাজে যেন অগ্রসর হতে পারে।
১০ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা
ভূমিকা
লেখালেখি আমার কোনো পেশা নয়, এমন কি নেশাও নয়। তাহলে লিখি কেন? আসলে এখনও পর্যন্ত আমি একজন জীবিত মানুষ। এই সমাজ-সংসারের আরও দশ জন মানুষের একজন। তাদের মতো আমারও ক্ষুধা-তৃষ্ণা আছে। সুখ-দুঃখ আছে। হাসি-কান্না আছে। তাদের মতো আমারও কিছু বলার আছে। তাই কিছু বলতে চাই আমি। যেহেতু আমার অদৃষ্ট আমাকে নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, আমি একজন গল্প লিখিয়েই হবো, তাই আমার বলতে চাওয়া কথাগুলো হবে কিছুটা গল্পের মতো। কিন্তু এই গল্প কাকে বলবো? নিশ্চয়ই আমার চার পাশের আর দশ জনকেই বলতে হবে কথাগুলো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমি কোনো নেতা নই, কোনো বক্তা নই। শব্দ যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে গেলে আমার কথা কেউ শুনবে না। কারণ, আমি নিতান্তই নিরীহদের একজন। তাই কাগজ-কলমই আমার সম্বল। সুতরাং কোনো শব্দযন্ত্র ছাড়াই বলতে হবে নীরবে। কিন্তু তবু আমাকে বলতে হবে, যা আমি বলতে চাই। বলতে না পরলে হয়তো দম বন্ধ হয়ে আমি মারা যাবো। হয়তো কান দিয়ে শুনতে পাবেন না কথাগুলো, তবে চোখের আলোয় পড়তে পারবেন কাগজে মুদ্রিত কালো অক্ষরে।
জিয়াউল হক
গাইবান্ধা।
ধু-ধু বালুচর
বাজে অন্তহীন দ্রিমি
ভেসে বেড়াই…
বুকের ভেতরে দ্রিমি দ্রিমি বেজে ওঠে
নিজের বুকে কান লাগিয়ে শুনি সেই শব্দ
কেমন ঘোর, নেশা লাগে!
একটা অসহ্য ভালোবাসার ঘ্রাণ পাই
মানুষ যার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরে মরছে
সেই ভালোবাসা…আহা
তার বর্ণিল শব্দ- ঘ্রাণে ঘূর্ণি খেয়ে খেয়ে
মহাকাশ সমান আনন্দে ঘুর-পাক খাই
যাই, অনন্ত অভিযাত্রায়
কবিতার রূপ ধরে প্রেম নামছে পৃথিবীতে
কসমিক খেলা মেতে উঠেছে
সৌরবিভা বসেছে তাকে কেন্দ্র করে
দেখো, কীভাবে বিষণ্ন-প্রচণ্ডতা জেগে ওঠে !
উজ্জ্বল হাসি হয়ে ছায়াপথে ঘুরে বেড়াই
বেজে যায় অন্তহীন দ্রিমি…
বাজে অন্তহীন দ্রিমি
লেখক পরিচিতি :
প্রজ্ঞা মৌসুমী। জন্ম: এক শরতে দাদুবাড়ি কুমিল্লায়, বেড়ে ওঠা সুনামগঞ্জে। ঊনিশ বছর থেকে পড়াশুনার জন্যে প্রবাস জীবন। এক এসাইনমেন্টের জন্যে প্রথম ইংরেজি কবিতা লিখার শুরু। প্রথম জীবনের কবিতাগুলো ইংরেজিতেই লেখা, কিন্তু মন আঁকুপাঁকু করে বাংলায় লিখতে; তারই ফলশ্রুতিতে আজকের প্রথম কবিতা ফসল ‘পৌরাণিক রোদ এবং অতিক্রান্ত কাঠগোলাপ’। লেখক কবিতা ও গল্প লিখে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার তাই বাংলা সাহিত্যের অত্যুজ্জল আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করার স্বপ্ন দেখেন অহর্নিশ।
পৌরাণিক রোদ এবং অতিক্রান্ত কাঠগোলাপ
এতো মানুষ অথচ বনের বৃক্ষ ধরেই একদিন খুব কেঁদেছিলাম
মানুষ হয়ে গাছের কাছেই বলেছিলাম আরেকজন মানুষের দেওয়া
আমার অযাচিত নষ্ট হওয়া অফুরান কষ্টের কথা
বোবা বৃক্ষ চোখের থৈ-থৈ জল বুকের অন্ধগলির দ্বন্দ্ব আঁধার
সেদিন মুছে দিতে পারেনি তবুও প্রায় ছুটে যেতাম বৃক্ষের কাছে
সমস্ত মনস্তাপ ক্রুশবিদ্ধ স্বপ্নিল রামধনু তথা সুখে অসুখে
সেই বৃক্ষই ছিলো আমার একান্ত আপন সহচর;
জীবনভর কতশত-বার ফিসফিস শব্দে বুকে জাবের বলেছি মনের কথা
স্থির কোন পরিত্রাণ পাইনি, কিন্তু কোনদিন বলেনি
আর কখনো এসো না আমি বনের বৃক্ষমাত্র মানুষজাতের ভাষা বুঝি না
চোখের সামনে আমার সহচর বৃক্ষটি তিলে তিলে মরে যাচ্ছে দেখে
আজ আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে অনেক কাঁদলাম;
তুমি অকাল প্রয়াত হতে পার না কিন্তু হতে যাচ্ছ আমারই কারণে
আমার ব্যথার ভার তোমাকেও ব্যথাতুর করেছে মনে প্রাণে
তুমি বনের বৃক্ষ হয়েও আমাকে ধারণ করেছ বুকে
অথচ মানুষ হয়ে মানুষের ভাষা বোঝে না অনেক মানুষ আছে এ সংসারে।
কবিতা বুক ব্যান্ডেজ করে
লেখক পরিচিতি :
সাদাত হোসাইন। জন্ম: ২১মে. ১৯৮৪।
তরুণ লেখক, আলোকচিত্রী ও নির্মাতা। যার কবিতার বইটি প্রকাশের আগে উপন্যাস ও ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের কবিতা ভাবনাটা খুব সোজা, কবিতা হচ্ছে এমন এক শিল্প যার মাঝে যখন ইচ্ছে তখন টুপ করে ডুব দেয়া যায়। লেখকের নির্মাণ ÔবোধÕ স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্বাক চলচ্চিত্রটি দেশে বিদেশে যথেস্ট সমাদৃত হয়েছে। ২০১৩ সালে Ôকালচারাল এচিভমেন্টÕ ক্যাটাগরিতে জিতে নিয়েছেন Ôজুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালÕ-এর Ôটেন আইটস্ট্যান্ডিং ইয়াং পারসনস অফ বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ডÕ।
যেতে চাইলে যেও
হাহাকার হৃদয়কে পোড়ায়। অন্তরে রক্তক্ষরণ হয়! এই জগৎ-সংসারে হাহাকার নেই, এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না! কেউ হয়তো হাহাকার এর প্রকাশ করে, কেউ তা নিঃশব্দে বহন করে, তফাত এখানেই। জীবনের দৈনন্দিন কাজে মগ্ন থেকে মানুষ হাহাকারের তীব্রতা অনুভব করে। এমন আটটি গল্পের সমন্বয়ে হুমায়ুন কবিরের গল্পগ্রন্হ ‘নিঃশব্দ হাহাকার’। এর প্রতিটি গল্প পাঠককে ভাবনার জগতে নিয়ে যাবে। পাঠক নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবে। পাঠকের ভাবনার আকাশে গল্পগুলো কিছুটা হলেও তরঙ্গ সৃষ্টি করবে। এই গল্পগুলো পড়তে গিয়ে পাঠক নিজেকে খুঁজে পাবেন বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে। সূক্ষ্ম অনুভবের সহজ-সাবলীল বর্ণনা পাঠককে আপ্লুত করবে । পাঠকের অনুভূতিহীন অন্তরকেও নাড়া দেবে।
নিঃশব্দ হাহাকার
লেখক পরিচিতি :
মোহাম্মদ হোসাইন। জন্ম: ৩১শে অক্টোবর। বিএসসি ও এমএসসি’র শিক্ষা সমাপন শেষে এখন শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত আছেন। লেখকের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ মোট ১১টি। ‘ভালোবাসা নির্বাসনে গেছে’ ‘মেঘগুলো পাখিগুলো’ ‘অরণ্যে যাবে অস্তিত্বে পাপ’ উল্লেখযোগ্য বইয়ের শিরোনাম।
অনুদিত রোদের রেহেল
ফারহানা খানম। জন্ম: ১৯শে এপ্রিল ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপে। ‘ভুগোল ও পরিবেশ’ বিষয়ে স্নাততোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে ব্যাংকে চাকুরি শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। নয় ভাই-বোনের মাঝে সবার ছোট বলেই আদরও পেয়েছেন বেশি। প্রথম প্রকাশিত বই, ‘ইছামতি’ (কলকাতা থেকে প্রকাশিত)।
তৃষ্ণার্ত বালুতট
অনুভবের রক্তাপ্লুত প্রতিটি নির্ণীত ফোটাই কবিতা। কবিতা রহস্যের অনুসন্ধানে নিয়োজিত থেকে অন্ধকারে আলোর কণায় সোনার প্রতিমা গড়ে। অথৈ জলের তোড়ে জ্বলে যে কৌণিক বিন্দু, কবিতা সেই বিন্দুর জ্যা।
কবিতার এইসব নিগুঢ় নিপুণ রহস্যে মহাবিশ্বের পথিক মিলি রায়। মিলি রায় কবিতার মগ্ন শরীরে আঁকেন জলডুবুরীর কুহক, বাজান প্রেমের খোল করতাল। জমে জমে কবিতার অশ্বত্থ ছায়া শরীর হয়ে ওঠে হাজার বছরের দুগ্ধ সংস্কৃতির ক্ষীর।
মিলি রায় কবিতার শরীরে অযথা বা অকারণ কাঠিন্য আরোপ করেন না। প্রতিদিনের পান সুপারী বাটার মতো সরল নিক্তিতে কবিতা বয়ন করেন কবিতার উষ্ণ চাদরে।
মিলি রায়ের কবিতার প্রেম আসে অনিবার্য তিথি ও করতলের পরম কামনার একান্ত ঐশ্বর্যে।
প্রত্নতাত্ত্বিক প্রেম কবিতার শেষ দুটি লাইন, প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাসের পথ ধরে জানা গেছে
আলোকবর্ষ আগে প্রাণ ছিলো ভালোবাসার।
প্রেম যেমন সংহারী উল্টোপথে প্রেম কামনায় মাখা মধুর অমাবস্যাও। মিলি রায়ের কবিতা পাঠে প্রেম যমুনার জলে ঘুঙুরের ছলে ডুব সাঁতার খেলে।
তোমার প্রেমিকারা আমার একান্ত শহরে কাব্যনামের কবিতায় তিনি শব্দ আর হৃদ চেতনার অনুবাদে অনন্য এক সুন্দর সাজিয়েছেন, শূন্য উঠোনে।
মিলি রায় তোমার প্রেমিকারা আমার একান্ত শহরে কাব্যে প্রেমের পাশে প্রকৃতি, সমাজ ও ব্যক্তিমানুষের আশা ও হতাশার মানচিত্র এঁকেছেন নিজস্ব চৈতন্যর রসায়নে।
মিলি রায়ের কবিতার ঘর গেরস্থালীর সৌরভ ছড়িয়ে পড়ুক বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের মধ্যে।
মনি হায়দার
কথাসাহিত্যিক
বাংলা একাডেমি, ঢাকা।
তোমার প্রেমিকারা একান্ত শহরে
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.