Additional information
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.13 $ 1.88
কবিতা জীবনের কথা বলে, জীবন বদলানোর কথা বলে। জীবনের নানাবিধ ঘটনাবলী একজন কবির মনে যে উদ্দীপনা জোগায় কবিতা তার সকল বাহির-রূপ প্রকাশে। কবি সামাজিক মানুষ, সমাজের অভিজ্ঞতাই কবির চেতনাকে আলোড়িত করে। তাই কবিতা কতো রকম, এবং সবটাই কবির চেতনা নির্ভর। কবি দ্বীপ সরকার এর কবিতায় আধুনিকতা অভিজ্ঞতার জাগরণে যে পঙক্তিমালা আমাদের কাব্যপ্রেমীদের কাছে উপস্থিত তাতে হয়তো নির্মাণ দূর্বলতা রয়েছে, কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস কবি এই শুরুর পর্যায় থেকে লাগাতার কাব্যপ্রীতির মধ্যদিয়ে একদিন কাব্যরাজ্যের সকল মনিকাঞ্চন কুড়িয়ে নিতে পারবেন তার কবিতায়। যেমন তিনি বলেছেন ‘আমার প্রকাশ্য এবং গোপন/কথাদের মর্মার্থ একটাই ‘মানুষ হও/ধর্ম একটা পতাকামাত্র;/মানুষ মানেই সকল ধর্মের মধুফুল’ (….ভারতবর্ষ থেকে হেঁটে হেঁটে তাঁবেদার ঘোড়া)। কিংবা যখন বলেন ‘এখনও এই উঠোনে কথারা নাচলে/ কিছু সুপ্ত কথা ঝুনুর ঝুনুর বাজে’ (…প্রাক্তন কথারোদ)। এমনি ভাষ্যগুলো আধুনিক মনোবৃত্তিকে ধারণ করে হয়ে ওঠে মুখরিত শব্দবলীর এক অন্তরধ্বনি যা খানিকটা চমকে দেয় আমাদের।
কবিতার রাজ্যে কবি দ্বীপ সরকার এখনও প্রস্তুতি পর্বে, তারপরও কবিতার প্রারম্ভিক ভাষ্য থেকে বেরিয়ে আসা উপ-ভাষ্যগুলোর উপস্থাপন তার কবিতা মনোবৃত্তিরই স্ফূর্ততা। গতি বিজ্ঞানের এই সময়ে কবিতার যে স্বাস্থ্যশ্রী রূপ বদল ঘটেছে কবি দ্বীপ সরকার তাকে খানিকটা হলেও ধারণ করেন এবং বহুল চর্চার মধ্যদিয়ে একদিন তিনি আরো বেশি সক্রিয় পঙক্তিমালা নির্মাণের উপকরণ পেয়ে যাবেন সমৃদ্ধ বাংলা কাব্য ভূমিতে।
আমি তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিন্ন ভাষার গোলাপজল’ প্রকাশনা মুহূর্তে সকল সফলতা কামনা করি।
মতিন বৈরাগী
কবি, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব। জন্ম: ১৯৭৮ সালে বরিশাল জেলা সদরে করিমকুটির নামক স্থানে। তার লেখার বিষয় মূলতঃ কবিতা। সময় নাট্যদলের সাথে একযুগ পার করেছেন। গানও লিখতেন কিন্তু বন্ধুবরের প্রয়ানে, অভিমানে আর সেপথ মারাননি। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকলেও নিজেকে একজন কবিতার শতরঞ্জি মোড়ানো শ্রমিক বলেই মনে করেন। এটি কবির প্রথম বই।
রূপোর দ্যুতি
সাঈদা মিমি। জন্ম: ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮। বরিশালে। শৈশবের পুরোটাই এবং অর্ধেক কৈশোর কেটেছে পদ্মাপাড়ে, মানিকগঞ্জের ঘোনাপাড়া গ্রামে। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবনে। প্রথম প্রকাশিত হয় ইত্তেফাকে। ফ্রীল্যান্স সাংবাদিকতা, স্কুল মাস্টারিং, বায়িং হাউজের এডমিন, হাউজিং কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ইত্যাদি বিচিত্র কর্মজীবন মেষে অতঃপর গৃহিণী। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সব নিয়ে গেছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস’ ‘ফারাও কুমারী’ ও ই-বুক ‘কীর্তনখোলা’।
একজন মৃতের ডাইরি
আবু জাঈদ। জন্ম: ২২শে জুলাই ১৯৮৩, ঢাকা। পড়াশুনা অসমাপ্ত রেখে একসময় কবি বাউণ্ডুলে জীবনের এলোমেলো আলপথে নেমে যান বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, তাই বলে কাব্যচর্চা থেমে থাকেনি। এক সন্তানের জনক। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
মানচিত্রের ফাঁসি চাই
কিছু একটা বলাটাই যখন বাধ্যবাধকতাÑবাহুল্য এবং আপেক্ষিক বাতুলতা বাদ রাইখা মাহবুব লীলেন থাইকা ধার কইরা বলতে হয়Ñ ‘আনফিট মিসফিট হইয়া হামাগুড়ি দিয়া হাঁটি, আর রাত্তিরে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ টাইনা চিক্কুর দিয়া কইÑ যাহ শালা বাঁইচা গেলাম আরও একটা দিন।’
এইটা বড়োবেশি জৈবিক বাঁচা
মানবিক বাঁচনের স্বপ্নও দেখি না বহুদিন
বড়ো তরাসে আছি
বড়ো বেশি চাইপা আছি, নিজের গলা নিজে।
দ্বান্দ্বিক দ্বন্দ্ব বিষয়ক আজাইরা প্রলাপ
সঞ্চয় সুমন। ঢাকাবাসী এক কবি। যে শুধু কল্পনার রঙে আঁকে শব্দ খেলার মাঠ। এই গ্রন্থটি কবির প্রথম কাব্যফসল।
গুপ্ত সমরে মুক্তির ঠিকানা
কাজী রহমান। পরবাসী লেখক নিজের পছন্দ মতো বাঁচতে দু-যুগ আগে মার্কিন মুলুকে চলে আসেন স্ত্রী ও প্রথম শিশুকন্যা সাথে নিয়ে। বড় হয়েছেন পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া’য়। জ্ঞান হবার পরপরই নিজেকে আবিষ্কার করেছেন ঘরের পাশের গ্রন্থাগারে, বিভিন্ন শিশু সংগঠন আর সমাজসেবামূলক সংগঠনের আলোছায়ায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দুরন্ত কিশোর স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখেছেন কাছ থেকে আর আতঙ্কের দিন গুনেছেন সারাক্ষণ মুক্তিযোদ্ধা দু’ভাইয়ের ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। গ্রাজুয়েশন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবন কেটেছে বিদেশী এয়ার লাইন্সের কর্মকর্তা হিসেবে।
তারাধুলো জল ও নস্টালজিয়া
রনক জামান। জন্ম:১৬ই ডেসেম্বর ১৯৯১, মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায়। লেখালেখির হাতেখড়ি ছোটবেলাতেই কবিতার প্রতি মুগ্ধতা থেকেই তার প্রতি ভালোবাসা। এটাই কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে, যৌথ কবিতাগুচ্ছ ‘মায়ানগরীর বৃষ্টিকথন’, কবিতার ই-বুক ‘শরীর ছোঁয়া আঙুলগুলো’ এবং অনুবাদ উপন্যাস ‘ললিতা’।
ঘামগুলো সব শিশিরফোঁটা
দেবাশীষ ধর। জন্ম: ৫ই জানুয়ারি, ১৯৮৯। চট্টগ্রাম। কবিতার ছোটকাগজ ‘বাঙাল’ এর সম্পাদক। কবির এটি প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
ফসিলের কারুকাজ
লেখক পরিচিতি :
মোহাম্মদ হোসাইন। জন্ম: ৩১শে অক্টোবর। বিএসসি ও এমএসসি’র শিক্ষা সমাপন শেষে এখন শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত আছেন। লেখকের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ মোট ১১টি। ‘ভালোবাসা নির্বাসনে গেছে’ ‘মেঘগুলো পাখিগুলো’ ‘অরণ্যে যাবে অস্তিত্বে পাপ’ উল্লেখযোগ্য বইয়ের শিরোনাম।
অনুদিত রোদের রেহেল
সিদ্দিক প্রামানিক। জন্ম: ২১শে আগস্ট ১৯৭৯, কুস্টিয়ার কুমারখালী থানার চরভবানীপুরগ্রামে। বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন এবং বাম প্রগতিশীল সংগঠনের সক্রিয় সংগঠক ও সংস্কৃতকর্মী। প্রথম বই ‘হাঙরের সমুদ্রে মননশীল মাছ’।
উন্মাদের কনসার্ট
লেখক পরিচিতি :
হান্নান হামিদ, লেখক নাম কালের লিখন। জন্ম: আগস্ট, ১৯৮৪। জামালপুর। ‘বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস’ লেখকের প্রথম বই।
বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস
মুর্শিদা জামান। জন্ম: ১৯৮৩ সনে বর্তমান বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায়। শৈশব ও বেড়ে ওঠা দক্ষিণের খুলনা শহরে। বাংলায় অনার্স সহ এমএ করেন ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির সূত্রপাত। কবিতা লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট কাগজ ও সাহিত্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকাতে ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃতি ও পশু-পাখির প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও সখ্যতা রয়েছে। বর্তমানে তিনি লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত।
অদৃশ্য ছায়ার প্রজাপতি
আর্থিক সংকট হতাশার জন্ম দেয়। হতাশাগ্রস্ত সরল মানুষ কখনো কখনো মনের অজান্তে অপরাধী হয়ে ওঠে- পরিবার ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা জসিম, সবিতা, বিপ্লবের গল্প এটি। ভরা যৌবনে এসে বিপ্লব আবার ফিরে পায় বাল্যবন্ধু জসিম ও তার বোন সবিতাকে। বিপ্লব-সবিতার আবছায়া বাল্যপ্রেম পূর্ণতা পায় এবার। কিন্তু শাহবাগের গণজাগরণ শুরু হলে চেতনাগত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে তারা। চেতনাগত দ্বন্দ্বে কি প্রেম টিকে থাকে? আবার প্রকৃত প্রেম কি নিঃশেষ হয়ে যায় কখনো হৃদয় থেকে?
কাহিনি নির্মাণে যুক্ত হয়েছে আরো অনেক চরিত্র। বিপ্লব, সবিতা, জসিম চরিত্র যেভাবে পাঠককে ভাবাবে- সাদিয়া, সাইদ, জব্বার চরিত্রও পাঠককে নাড়া দেবে।
শাহবাগের গণজাগরণ নিয়ে লেখা উপন্যাস বিষমায়া।
বিষমায়া
মাহবুব মিত্র বিশ্বাস করেন মানুষই শিল্প; মানবতাই ধর্ম। মানুষবিহীন পৃথিবী শস্যহীন প্রান্তরের মতো। তিনি মনে করেন সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ শিল্প মানুষের সৌন্দর্য। তাঁর প্রিয় বিখ্যাত দু’টি উক্তিÑ “মানুষ দেখার আনন্দে তুমি কখনো ক্লান্ত হয়ো না”, “ভুল মানুষের কাছে আমি নতজানু নই।” নীতির সাথে আপোসহীন চির প্রতিবাদী সতত ডানার মানুষ এক ক্লান্তিহীন গেয়ে যান ভালোবাসার গান, সমতার গান, মানবতার গান, সুন্দরের গান।
মাহবুব মিত্র বস্তুবাদী দার্শনিক মতবাদে বিশ্বাসী। আবার ভাববাদী দর্শনও মাঝে-মধ্যে তাঁকে ভাবায়। এই দুই মতবাদের ভিতর দিয়ে পথ হাঁটছেন। তিনি বুকে ধারণ করে আছেন সৃষ্টি জগতের সকল সুন্দরের নির্যাস। সাহিত্য ও শিল্পের বাগানে শব্দ বুনে-বুনে তৈরী করছেন মানব হৃদয়ের নৈবেদ্য। এই নিবিড় সংসারে একাকি নিঃসঙ্গ পথিক এক খুঁজে পেয়েছেন জীবনের সৌন্দর্যের অবিরাম ধারাপাত। তিনি মানব হৃদয়ে খুঁজে বেড়ান সুন্দরের স্বর্গভূমি।
তিনি সর্বদা আশাবাদী একজন প্রাণবন্ত-প্রফুল্ল মানুষ। তুমুল অন্ধকারের মাঝে খুঁজে ফেরেন আলোর ফোয়ারা। মানুষ তখনই মৃত যখন তার ভিতরের আনন্দ মরে যায়। চিরন্তন সুন্দরের জন্য হাহাকার-আকাক্সক্ষা, নৈতিক মূল্যবোধের উপলব্ধি, স্বতন্ত্র বোধের-চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত তাঁর ভাবনার আকাশ। তাঁর সুকুমার কোমল প্রবৃত্তি আপন আলোয় ভাস্বর, দীপ্ত-শোভান্বিত, সদা জাগ্রত।
শাদা কফিনে মেঘের শব্দ
এইসব গদ্যের জন্ম পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধে। যেখানে পূবের বাতাস উড়ে যেতে যেতে পারি দেয় দু দুটি মাহাসাগর- আটলান্টিক ও প্যাসিফিক। সেখানে বসে ফেরদৌস নাহার কবিতার পাশাপাশি লিখছেন গদ্য। সেসব থেকে নির্বাচিত আটটি লেখা নিয়ে পশ্চিমে হেলান দেয়া গদ্য । গদ্যগুলো তিনটি পর্বে: চিত্রকলায়, চলচ্চিত্রে, কবিতায়।
পশ্চিমে হেলান দেয়া গদ্য
সৈয়দ রায়হান বিন ওয়ালী। লেখক নাম: সৈয়দ ওয়ালী। জন্ম: ১৭ই জানুয়ারি ১৯৬৭। জন্মস্থান: পুরাতন ঢাকা। পিতা: সৈয়দ ওয়ালী হোসেন সুলতান। মাতা: সোহেলি ফেরদৌসী। পৈত্রিক ভিটে: কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার ইসলামপুর গ্রাম।
বেড়ে উঠা: সৈয়দ ওয়ালীর শৈশবের প্রথম কয়েক বছর কাটে পুরাতন ঢাকার বংশালে। তবে দেশ স্বাধীন হবার বছর খানেক পর পারিবারিক আর্থিক সংকটের কারণে পিতার নানী-বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর-জমিদার- বাড়ির গ্রামীণ পরিবেশে কাটে শৈশব ও কৈশোরের পরবর্তী কয়েক বছর। যার সুবাদে সে শহর ও গ্রামের দ্বৈত জীবনের অভিজ্ঞতায় বেড়ে উঠার সুযোগ পায়। যে দ্বৈত-জীবনের অভিজ্ঞতার বিবিধ বৈশিষ্ট তার বিভিন্ন কবিতায় গদিয়ান। শিশুকাল থেকে সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমের প্রতি তীব্র টান অনুভব করলেও মূলত যৌবনে এসেই সৈয়দ ওয়ালী ধীরে ধীরে কবিতা জগতের প্রতি মুগ্ধ হতে থাকে এবং নিজের কবিতা সৃজনের তৃষ্ণা নিজের ভেতর অনুভব করতে থাকে, যে তৃষ্ণা পরিশেষে তাকে কবিতা চর্চায় নিমগ্ন করে; সৃষ্টিশীলতা শুরুর বছর বিচারে যা ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৯৮৯/১৯৯০। সেই থেকেই সৈয়দ ওয়ালী কবিতার ভাব ভাষা ছন্দ ও শৈলী নিয়ে বিচিত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করা ও এইসব উপাদানের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে সৃজন করে চলেছেন তার কবিতার নিজস্ব ও স্বতন্ত্র এক জগৎ, যা আজ অবধি চলমান।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ ‘তুমি ও তোমাদের হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে’, ‘বিনত খসড়া’।
……………………………
জলজ স্বাক্ষর
লেখক পরিচিতি :
তানভীর আহমেদ হৃদয়। জন্ম: ৩ডিসেম্বর, ১৯৮৫ইং। মুন্সিগঞ্জ, বিক্রমপুর। প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকায় আছে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়া। এছাড়া সম্পাদিত গ্রন্থের তালিকায় আছে কবিতা ও গল্প। লেখকের লেখা প্রতিনিয়ত দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে।
অচেনা রৌদ্রের রঙ
মওলানা জালাল উদ্দিন রুমির খোঁজে তুরস্কে
’৫০-এর দশকে যাত্রা শুরু করা ‘সমকাল’ কবিতা পত্রিকাকে কেন্দ্র করে বাংলা কবিতার ক্ষেত্র নির্মাণে যে গুটিকয়েক মননশীল কবি সফল হয়েছিলেন তাঁদেরই অন্যতম কবি আবুবকর সিদ্দিক (জ. ১৯৩৪)। এই ’৫০-এর দশকে ছাত্রাবস্থায় আবুবকর সিদ্দিক যাত্রা শুরু করেছিলেন প্রথমত কবিতা ও ছোটগল্পের ভেতর দিয়ে। প্রায় সত্তুর বছরেরও অধিক সময় ধরে সাহিত্য সাধনায় নিয়োজিত আবুবকর সিদ্দিক প্রধানত কবি, তারপরে কথাসাহিত্যিক; লিখেছেন মননশীল প্রবন্ধ ও স্মৃতিকথা। অন্যদিকে গণসঙ্গীত তাঁর স্বাতন্ত্রিক পরিচয়ের এক ব্যতিক্রম মাধ্যম। সুতরাং বিচিত্র ধারায় তাঁর লেখনীশক্তি আমাদের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ।
ব্যক্তিগত ভাবে এই মানুষটিকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি ছেলেবেলা থেকে। প্রথম জীবনে বর্তমান বাগেরহাটের সরকারি প্রফুল্লচন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে আমার পিতার সহকর্মী ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিশেবে যোগ দেন। কিন্তু জন্মসূত্রে তিনি বাগেরহাটের মানুষ। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের বৈটপুরে। ফলে যখনই বাগেরহাটে আসতেন, প্রায়ই সময় আমাদের বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন। সেই থেকে বুঝেছি তিনি আমাদের পারিবারিক বন্ধু।
আবুবকর সিদ্দিক বহুপ্রজ নন, বিরলপ্রজ। যা লিখেছেন, তাই এপিক। কী কবিতা, কী কথাসাহিত্য! তারই নিদর্শন হিশেবে আমার দেখতে পাই, সেই ষাটের দশকে তিরিশের পঞ্চপা-ব হিশেবে খ্যাত কবি বিষ্ণু দে তাঁর সংবাদ মূলত কাব্য কবিতাগ্রন্থটি আবুবকর সিদ্দিককে উৎসর্গ করলেন, সঙ্গে শামসুর রাহমান। আমাদের কাব্যযাত্রার এ এক অনন্য অধ্যায় বললে অত্যুক্তি হবে না।
আবুবকর সিদ্দিক, আপাদমস্তক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষটির সাহিত্যকৃতির বোধ ও বোধিকে ছুঁয়ে দেখার সক্ষমতা তৈরি হয়নি এই পাঠককুলের। আবার তিনি নিজেকে বাজারচলতি করেননি কখনো। সে স্পর্ধাও নেই আজকের মিডিয়াবাজদের। আর তাই কাছ থেকে দেখা এই অনন্য কবি ও কথাকার আবুবকর সিদ্দিককে আজকের পাঠকের কাছে তুলে ধরতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। বিভিন্ন সময়ে আবুবকর সিদ্দিকের কবিতা, কথাসাহিত্য ও গদ্য প্রসঙ্গে আমার যে যৎকিঞ্চিৎ প্রচেষ্টা ছিল, তারই সারবত্তা এই গ্রন্থ ‘আবুবকর সিদ্দিক সমগ্রতার চিরন্তনী’। এর মাধ্যমে আগামীর পাঠক নতুন ভাবে কবি ও কথাকার আবুবকর সিদ্দিককে আবিষ্কার করবেন বলে আমার বিশ্বাস। সেইসঙ্গে গণসঙ্গীতেরও তিনি যে দিকপাল, তা পাঠক নতুন করে জানবেন এবং বুঝবেন।
বলা আবশ্যক, এই ক্ষণজন্মা যশস্বী কবি ও লেখক সম্পর্কে আমি লিখতে গিয়ে তাঁর রচিত গল্প-উপন্যাস-কবিতাগ্রন্থসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত আবুবকর সিদ্দিকের রচনাসমূহের সাহায্য গ্রহণ করেছি। উপরন্তু তাঁকে নিয়ে অন্যান্য বিভিন্ন লেখকদের লেখাগুলোও আমাকে সহায়তা করেছে। এছাড়াও আবুবকর সিদ্দিকের গুণগ্রাহী ছাত্ররা এবং তাঁর কাছের লেখকদের সঙ্গে তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন আলাপচারিতাও আমার এসব লেখাকে সমৃদ্ধ করেছে। সুতরাং এ গ্রন্থ শেষে আলাদাভাবে তথ্য নির্দেশিকা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনি। যদি এ আমার সীমাবদ্ধতা হয়ে থাকে, তার জন্যে আমি পাঠকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
যখন বলা হচ্ছে, পাঠকের অপ্রতুলতার কথা; বলা হচ্ছে, জাতি হিশেবে আমরা আজ বইবিমুখ; ঠিক তখন একটি নিরেট গদ্যবিষয়ক বই প্রকাশের দায়িত্ব নিয়ে অনুপ্রাণন প্রকাশনের কর্ণধার আবু এম ইউসুফ আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। পরিশেষে বন্ধুবর প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক শহীদ ইকবালের ঋণ স্বীকার করতেই হয়, এ গ্রন্থের নামকরণের ক্ষেত্রে সহযোগিতাদানের জন্য। একইসঙ্গে আরও ধন্যবাদ জানাই অনুজপ্রতিম কবি ও গবেষক বঙ্গ রাখালকে। তাঁর উৎসাহ ও নিরন্তর তাগাদা ছাড়া বইটি প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না।
মামুন মুস্তাফা
মিরপুর, ঢাকা।
আবুবকর সিদ্দিক- সমগ্রতার চিরন্তনী
সমাজ, দেশ এবং বৈশ্বিক সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহকে কবি মনিরুল হক এমরান কবিতার শৈল্পিক ভাষায় নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই কাব্য গ্রন্থে কবি প্রেম-দ্রোহ, কষ্ট-ক্ষোভ ও মনের মাধুরী মিশিয়ে জীবনের চিত্র এঁকেছেন। তাঁর কবিতায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উপজীব্য। হিংসা-প্রতিহিংসা, বকধার্মিকদের ধর্মাধর্মের বাড়াবাড়ি, মানুষের প্রতি মানুষের নিষ্ঠুরতাকে প্রতিবাদ করেছেন কবিতার মাধ্যমে শব্দের দক্ষ কারিগরের হাতে। পাঠকের জন্য সুখপাঠ্য করে তুলেছেন প্রতিটি কবিতা। এই গ্রন্থে পাঠকের মনকে আনন্দে আন্দোলিত করার মত রয়েছে তাঁর তের্জারিমা ছন্দে লেখা পনেরটি তের্জারিমা কবিতা। দুই খ-ের তের্জারিমা বই প্রথম প্রকাশিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে। যা পরবর্তীতে পাঠক ও কবিদের মাঝে সমাদৃত হয় এবং অনেক নবীন কবি চর্চা করতে শুরু করেন। এবারের কবিতার বইটি খানিকটা ভিন্নভাবে, কবির নিজস্ব ছন্দের কয়েকটি কবিতা রয়েছে। আশা করি পাঠক বইটি পড়ে নির্মল আনন্দ পাবেন। -প্রকাশক
ঠোঁটের কারফিউ ভাঙ্গে নিষিদ্ধ আঙুল
রঞ্জনা বিশ্বাস। জন্ম: ১০ডিসেম্বর, ১৯৮১। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে খ্রিস্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ ও ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’ কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবির প্রকাশিত কাব্যফসল। এছাড়া কবি কবিতাচর্চার পাশাপাশি ফোকলোরচর্চাকেও ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। নৃ-তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মী কবির আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ ও ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ প্রকল্পে কাজ করছেন। এছাড়া এখন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগে কর্মরত আছেন।
বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস
কিছু একটা বলাটাই যখন বাধ্যবাধকতাÑবাহুল্য এবং আপেক্ষিক বাতুলতা বাদ রাইখা মাহবুব লীলেন থাইকা ধার কইরা বলতে হয়Ñ ‘আনফিট মিসফিট হইয়া হামাগুড়ি দিয়া হাঁটি, আর রাত্তিরে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ টাইনা চিক্কুর দিয়া কইÑ যাহ শালা বাঁইচা গেলাম আরও একটা দিন।’
এইটা বড়োবেশি জৈবিক বাঁচা
মানবিক বাঁচনের স্বপ্নও দেখি না বহুদিন
বড়ো তরাসে আছি
বড়ো বেশি চাইপা আছি, নিজের গলা নিজে।
দ্বান্দ্বিক দ্বন্দ্ব বিষয়ক আজাইরা প্রলাপ
ভূমিকাঃ
হরর গল্পের প্রতি ভালো লাগা সেই ছোটোবেলা থেকেই । হরর মুভি, বই, কমিক যখনিই যা পেয়েছি গ্রোগ্রাসে গিলেছি। লেখালেখির জীবনের শুরু থেকেই হরর গল্প লিখায় পেতাম অন্যরকমের আনন্দ। ইতোপূর্বে বিভিন্ন মাসিক, ত্রৈমাসিক পত্র-পত্রিকায় এবং হরর গল্প সঙ্কলনে আমার ভৌতিক লিখা প্রকাশিত হবার ফলশ্রুতিতে হরর বই পাঠকদের দরবারে তুলে ধরলাম । বইতে যেমন বিদেশি পটভূমিকার গল্প অন্তর্ভুক্ত করেছি তেমনি দেশিও ঢঙের গল্পও যুক্ত রয়েছে যা সকলের ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস।
বিশেষ ধন্যবাদ লেখক রুবেল কান্তি নাথকে, বইটির নামকরণ থেকে শুরু করে প্রচ্ছদ অবধি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও সময় প্রদান করায়। এছাড়াও অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা অনুপ্রাণন প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী আবু মোহাম্মদ ইউসুফ আংকেলকে, সব ধরনের সহযোগীতা ও অনুপ্রেরণা দেয়ায় ।
লেখক পরিচিতিঃ
নাঈম হাসানের জন্ম ১৭ ডিসেম্বর, ঢাকায়। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে মিরপুরে। পড়াশোনা করেছেন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে। লিখছেন গল্প, উপন্যাস আর কবিতা। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর বই পড়া ও লেখালেখির প্রতি প্রবল আগ্রহ। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন মাসিক,ত্রৈমাসিক, ছোট কাগজ , লিটল ম্যাগ এবং অনলাইন মিডিয়ায় নিয়মিত লেখালেখি করছেন। এছাড়া তাঁর দু’টি একক গ্রন্থ এবং কিছু গল্প-কবিতার সঙ্কলনও প্রকাশিত হয়েছে। ভালোবাসেন ভ্রমণ , সিনেমা , আবৃত্তি ও ক্রিকেট। প্রিয় লেখক সত্যজিৎ রায়, রকিব হাসান , কাজী আনোয়ার হোসেন, চেতন ভগত।
হ্যালোইনের রাত
নাম : সৈয়দ ইলিয়াস আখতার ফারুকী
লেখালেখি যে নামে : ইলিয়াস ফারুকী
জন্ম : ১৯/০১/১৯৫৯ইং
জেলার নাম : চাঁদপুর সদর
লেখালেখি শুরু : ১৯৭৬ইং সাল থেকে
লেখার ধরন : কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, গান
প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা : সাতটি
আরশি (কবিতা) ২০১৬ইং
মঞ্জুরিত যতিপাত (কবিতা) ২০১৮ইং
ভালোবাসার জন্য (ছোটগল্প) ২০১৮ইং
ভালোবাসার নানান রঙ (ছোটগল্প) ২০১৯ইং
নীলপদ্ম (ছোটগল্প) ২০১৯ইং
রোদ বিকেলের ছায়া (ছোটগল্প) ২০২০ইং
শিমুলের যত রঙ (কবিতা) ২০২০ইং
ছয়টি গানের অডিও সিডি জিগীষা পরস্কারপ্রাপ্তি : ব্রিলিয়ান্ট সোসাইটি কর্তৃক ছোটগল্পের জন্য ‘নজরুল সম্মাননা’ ২০১৮ইং
সভাপতি, জিগীষা সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ। নয়াপল্টন (বালুর মাঠ), ঢাকা
শিক্ষাগত যোগ্যতা : এমএসসি (ভূগোল) ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়, এমবিএ (বিপণন) ‚
ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সংসার জীবন : মা, স্ত্রী ও দই পুত্র
বর্তমান ঠিকানা : ৩৯৭ পূর্ব গোড়ান,
খিঁলগাও,
ঢাকা।
পেশা : জাতীয় বিক্রয় ব্যবস্থাপক, জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লি.
ঢাকা।
মোবাইল : ০১৭১৫-১৪৮৫৯৯
অনেকগুলো মানুষ
ভূমিকা-
কবিতার ভিতর দিয়ে বহুবিধ বহুকালের অমীমাংসিত জটিল সমীকরণের সমাধান খুঁজে চলা কবির নাম সালাহউদ্দিন সালমান, কবি যেন কলমের ডানায় আর খাতার বাতিঘরে লুকিয়ে রাখে বেঁচে থাকার মৌলতম রসদ, তার কবিতায় পাঠক খুঁজে পায় অনন্য স্থির নির্ভেজাল ধনাত্মক-ঋণাত্মক ডান বাম, ভালো মন্দ সুখ দুঃখ, অনুভূতি চিন্তা ভাবনা বোধের শৈল্পিক নিরপেক্ষতা। মানুষের সাধ্যাতীতের বিপরীতে কবি তার কবিতায় ফুটিয়ে তুলে নরম জীবনের কারুকাজ, কবি তার কবিতায় দ্রোহের রক্ত নিয়ে আলো খুঁজে অসম্ভব অনিশ্চয়তার নিঃসীম অন্ধকারে, তার একেকটি কবিতা মূর্তিমান জীবনের একেকটি দীর্ঘশ্বাস, সমাজ সংস্করণে এই জীবনমুখী কবির কবিতা যেন প্রয়োজনীয় বিদ্রোহের প্রতীক। কবির প্রেমময় কবিতাগুলো যেনও প্রেমিক প্রেমিকার বুকপকেটে ভরে রাখা কখনো কালো মেঘের আহাজারী, কখনো শূন্যতার নিঠুর মহামারী, আবার কখনো কখনো চালচুলোহীন স্বপ্নাতুর লালিত সঞ্চয়ের সমুদ্রখচিত বিশাল আকাশ। কবির একটি কবিতা পড়েছিলাম পোড়ামাটি নামক- শুইয়ে থাকা নীরব জ্যোৎস্না কে ছুঁতেই /নিজের ছায়া ছুটে চলে অন্ধকারের দিকে/ মেঘঘন আকাশের ফিকে বিছানায়/অগণিত জোনাকিদের সদ্য ঘুম মুখে/আঙুল রাখতেই খলবলিয়ে উঠে নিস্তরঙ্গ নদী/ ভাঙি দ্রোহ আর আকাক্সক্ষার জড়ানো ইমারত/ অনিবার্য পিপাসা ফুরায় অন্তর্গত অভিবাসী জলে/ অবাধ্য হাতের অকুতোভয় আঙুলগুলো বোটা ছুঁতেই/ অঝোর আষাঢ় আসে থই থই লুণ্ঠিত হয় ঘরবাড়ি/ ঘাম শুকায় ঘামে কাঁচা দেহ হয় পোড়ামাটি/ -সশরীরে দেখে মনেই হবে না সালাহউদ্দিন সালমান এমন অসংখ্য কবিতার কবি, কবির নিজের একটি উক্তি আছে কবিতাকে নিয়ে কবি প্রায় বলেন-কবিতা সত্য সুন্দর স্বপ্নিল জীবনের সাথে চলে আমরা কবিতার সাথে চলি। বিশ্বব্যাপী কবিতার মিছিলে কবি সালাহউদ্দিন সালমান এর উজ্জ্বল পদচারণ তারই দৃপ্ত প্রমাণ।
পকেট সেলাই করি ছেঁড়া জামার
আশরাফ উদ্দীন আহ্মদ
কবি-কথাশিল্পী-প্রাবন্ধিক।
জম্ম- ১৬ কার্তিক, ১৩৮৪ বাং, বোয়ালমারী, ফরিদপুর।
আম্মা- বেগম সালেহা আহ্মদ,
আব্বাÑআফতাব উদ্দীন আহ্মদ,
শিক্ষা- স্নাতকোত্তর (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখালেখি কৈশোরেই, ছড়া দিয়ে হাতেখড়ি, কবিতা-ছোটগল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখা মূলত। বাংলা একাডেমী পরিচালিত ১৯৯৬ এর ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ র তৃতীয় কোর্সে অংশ এবং প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ সীমান্তরেখা ’ ১৯৯৭ সালে প্রকাশ, দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘ চতুর্ভূজ’ (যৌথ) ২০০২ সালে প্রকাশ বইমেলায়, তৃতীয় গল্পগ্রন্থ‘ ভালোবাসা ও এসব নিছক গল্প’ ২০০৬ সালের বইমেলায় প্রকাশ, চতুর্থ গল্পগ্রন্থ ‘পদ্মাপাড়ের গল্প (যৌর্থ) ২০০৭ সালে প্রকাশ বইমেলায়, পঞ্চম প্রকাশ, প্রবন্ধগ্রন্থ ‘কথাকার ও কথাসাহিত্য’ ২০১৬ সালে বইমেলায়, ষষ্ট প্রকাশ, প্রবন্ধগ্রন্থ ‘ মুলধারা সাহিতের রকমফের’ ২০১৯, সপ্তম প্রকাশ, গল্পগ্রন্থ ‘তারপর অন্ধকার দুঃসময়’ ২০১৯, অষ্টম প্রকাশ, গল্পগ্রন্থ ‘ হামিদালীর সুখ-স্বপ্ন ও অন্যান্য গল্প’ ২০২০ সালের একুশে বইমেলায়, নবম প্রকাশ, গল্পগ্রন্থ ‘ সেদিনও উঠেছিলো চাঁদ দিয়েছিলো জ্যোৎস্না’ (প্রকাশিতব্য)।
পৈত্রিক আদিনিবাস পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরে, সীমান্ত-সীমান্তের এপার-ওপারের প্রকৃতি ও মানুষ এবং তাদের জীবন ও জীবিকার পিচ্ছিল বিড়ম্বনা গল্পের মূল বিষয়-আশয়। সে সমস্ত চরিত্রগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে গল্পের আখ্যানে কাহিনীর মেজাজ বা স্বরে, কখনো মনে হয় তারাই গল্পের স্বপ্নবীজ, স্বপ্নের আঙ্গিকে নির্মিত হয়েছে কাঠামো, বাস্তবিকই মানুষ যেন মানুষের আবরণে শুধুই খোলস পাল্টে দন্ডায়মান, চেনা খুবই কঠিন, সেই কঠিনের আধোছায়ায় মোক্ষম যে পৃথিবী, তারই রূপ বর্ণিত হয়েছে গল্পবীক্ষায়।
ভালো লাগে নিভৃতে কবিতা-গল্প লিখতে নিজের মতো করে, সাহিত্যিক অগ্রজ বন্ধুদের পরামর্শে, লিটল ম্যাগাজিন বা দৈনিক সাহিত্য সম্পাদক বন্ধুদের কল্যাণে প্রবন্ধ লেখা, সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধের প্রতি বরারবই ঝোঁক, সে’ কারণে প্রবন্ধ লেখা। যা লিখি, পড়তে ভালো লাগে সময়ে-অসময়ে, নেশা বলতে পড়া, ইতিহাস-সাহিত্য-নৃতত্বদর্শন নানাবিষয়। পেশা, বেসরকারী চাকুরী, জীবনধারণের জন্য যা আবশ্যক, তার বাইরে অবলম্বন সাহিত্যই । ###
কথাসাহিত্যের বারান্দায়
সম্পাদকীয়, অনুপ্রাণন– নবম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা
মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীতের ভূমিকা
শিল্প ও সাহিত্য কীভাবে মানুষের চেতনায় মানবিক মূল্যবোধের প্রেরণা সৃষ্টি করতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকেই আসতে পারে। তাহলে, এটা কি একটি সমস্যা? একই স্থানে, একই সময়ে, একই বিষয় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মতামত আসলে আমাদের বোধের জগতে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে কি-না? এর উত্তর অবশ্যই না। কেননা শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ নিয়েই ভিন্ন ভিন্ন মানবিক মূল্যবোধের বিষয় নিয়ে নিরীক্ষা করতে পারে। কোনো একক দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে অটল বিশ্বাস উল্টো চেতনার জগতে গোঁড়ামির বীজ বপন করার প্রবণতার জন্ম দিতে পারে।
অর্থাৎ, মানবিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের উৎস এবং অভিব্যক্তি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো সুত্র বা সংজ্ঞা নির্বাচন করা হয়তো সংকীর্ণতার দিকেই ঠেলে দিতে পারে। আমরা যেমন মানবিক সমাজ চাই, সাথে সাথে আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুত্ববাদী সমাজ চাই। সমাজে যদি মুক্তমত ও ভিন্নমতের চর্চা বা অনুসরণ করার সুযোগ রহিত থাকে তবে মুক্তমনা ও মানবিক শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীতের চর্চা বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী হতে দেখা যেতে পারে। তবে মুক্তমত অর্থে অতিশয়োক্তি আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাইবো না সমাজের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ এবং অশান্তি সৃষ্টি করে–এরকম মানবতাবিরোধী শিল্প-সাহিত্য অথবা সঙ্গীতের চর্চা অবারিত হোক। শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীত সৃষ্টির সৃজনশীল প্রেরণা ভিন্নতর কোণ থেকে উৎসারিত হলেও লক্ষ্য একটাই হওয়া বাঞ্ছনীয় যেন সেসব সৃষ্টিশীল কাজের অভিব্যক্তি, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মধ্যে উপস্থিত থাকে নান্দনিকতা; জাতি-উপজাতি-বর্ণ-সম্প্রদায় ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বিস্তৃত হয় মানবিক সহমর্মিতা, প্রেম, সাম্য ও সমতা। মনে রাখতে হবে যে, ইহজগতে মানুষ বিভিন্ন সামাজিক প্রথা-প্রচলন, বিশ্বাস ও কুসংস্কারের কারণে বহুমাত্রিক শোষণ ও নিপীড়নের দুর্ভোগ নিয়ে জীবন যাপন করছে। যদি সৃজনশীল ও নান্দনিক শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীত এর লক্ষ্য হয় পশ্চাৎপদ প্রথা-প্রচলন, জাতি-উপজাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়-বর্ণ ও লিঙ্গ বৈষম্য এবং নানাবিধ কুসংস্কার এর হাত থেকে মুক্তির জন্য মানুষের চেতনা জাগ্রত করা, তবেই বলা যেতে পারে যে, সেসব সৃজনশীল ও নান্দনিক শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীত এর মানবিক মূল্য রয়েছে।
সৃজনশীল ও মননশীল সাহিত্য, নাট্যকলা, চলচ্চিত্র, নৃত্যকলা, সঙ্গীত, কারুশিল্প, ভাস্কর্য-শিল্প, স্থাপত্যকলা, এবং শিল্পের সকল মাধ্যমের মধ্য দিয়েই মানুষের রুচি ও সংস্কৃতির আত্মপরিচয়, উন্মেষ ও উপলব্ধি ঘটে–মানুষের চেতনায় তার স্বপ্নের জগতটি দানা বাঁধে ও বিকশিত হয়। সংস্কৃতির বিকাশ সাধনের জন্য শিল্পের এই মাধ্যমগুলো একেবারে যেন মনের এক-একটি জানালা। এই জানালাগুলো ব্যবহার করে যেমন একটি সংস্কৃতির ইতিবাচক রূপান্তর সম্ভব, ঠিক সেরকম মনের এসব জানালা দিয়েই কলুষিত বাতাস প্রবেশ করে একটি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই কোনো শিল্পকর্মটি সমাজের ইতিবাচক মানবতাবাদী রূপান্তর এর পক্ষে, আর কোন শিল্প ও সাহিত্যকর্মে মানবিক সংস্কৃতির উন্মেষ ও বিকাশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বিদ্যমান–এটা শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে। সাহিত্য, নাট্যকলা, চলচ্চিত্র, নৃত্যকলা, সঙ্গীত, কারুশিল্প, ভাস্কর্য-শিল্প, স্থাপত্যকলা, এবং শিল্পের অন্যান্য মাধ্যম দিয়ে যেসব কর্ম আমাদের জগতে প্রবেশ করছে–সেসব কর্মসমুহের প্রত্যেকটি কাজের নিবিড় ও যথার্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যুক্তিসঙ্গত এবং বিশ্লেষণমূলক আলোচনা-সমালোচনা প্রকাশ করা তাই অত্যন্ত জরুরী একটা কাজ। পশ্চাৎপদ সমাজে এসব আলোচনা-সমালোচনা রচনা ও প্রকাশ করার কাজে বাধা আসতে পারে। কিন্তু, এই বাধা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলার প্রেরণা সৃজন করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে। সেজন্য কবি, সাহিত্যিক, নাট্য-কলাবিদ, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত কলাকুশলী ও শিল্পী, নৃত্য-কলাবিদ ও নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী, কারুশিল্পী, ভাস্কর এবং স্থপতিবৃন্দকে সমাজে ইতিবাচক রূপান্তর আনয়নের প্রয়োজনে প্রতিবাদী ও সংগ্রামী হয়ে ওঠার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
কিন্তু, সমাজে এ বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে যে, সমাজ পরিবর্তনের কাজে প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে তো নয়ই এমনকি স্ব স্ব অবস্থান থেকেও প্রতিবাদী সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের কাজ না। শিল্পী ও সাহিত্যিকদের এই অংশের মত হচ্ছে, সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে পরিচালিত সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া রাজনৈতিক কর্মী অথবা সামাজিক আন্দোলনের সাথে জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাজ। যেন শিল্পীর কাজ সুন্দরের অন্বেষণ করা, অন্তর্নিহিত সত্যের নয়।
আবার, কোনো কোনো কবি, সাহিত্যিক, নাট্য-কলাবিদ, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত কলাকুশলী ও শিল্পী, নৃত্য-কলাবিদ ও নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী, কারুশিল্পী, ভাস্কর এবং স্থপতিবৃন্দকে সমাজের ক্ষমতাধর অধিকর্তাদের তোষণেই ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়েই এসব শিল্পী ও সাহিত্যিকরা তাদের কাজে এসব চিহ্ন রেখে গেছেন। প্রতিক্রিয়াশীল শিল্প ও সাহিত্য বর্জন না করে শিল্পী ও সাহিত্যিক সমাজের একটি অংশকে নান্দনিকতার দোহাই দিয়ে ঐসব শিল্পকর্মকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে দেখা যায়। কিন্তু, সত্যি কি সমাজের পরিবর্তন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে এবং সেসব শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীতকে কালজয়ী আসনে সমাসীন করার কাজে তারা কি সফলতা লাভ করতে পারে?
একটি সেনাবাহিনী উদ্দীপনামূলক সঙ্গীত ঠোঁটে করেই ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে। আবেগপূর্ণ নাট্যকলা, বাগ্মী বক্তৃতা অথবা অসাধারণ গান, ভাস্কর্য ও অভাবনীয় সৌধ নির্মাণ করে ধর্ম তাদের বাণী মানুষের মনে সঞ্চার ঘটায়। জাতিগত গোষ্ঠী–সঙ্গীত ও নৃত্যের মাঝে তাদের সাংস্কৃতিক শেকড় খুঁজে পায়। অসাধারণ স্থাপত্যশিল্প, যেমন: রোডস্ (জযড়ফবং) এ অবস্থিত সূর্য দেবতা হেলিওস এর অতিকায় মূর্তি, জাপানের একটি পীঠস্থানে ১০৩ টন ওজনের সর্ববৃহৎ বুদ্ধ-মূর্তি, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, ইত্যাদি কোনো সম্প্রদায় বা জাতি’র আদর্শের প্রতীক হিসেবে মানুষের গভীরে প্রোথিত হতে থাকে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে, যখন একটি নতুন সম্প্রদায় অথবা জাতি-গোষ্ঠী পুরানো কোনো সম্প্রদায় অথবা জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে তখন পুরানো শাসনব্যবস্থায় প্রচলিত নৃত্য ও সঙ্গীত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তাদের আদর্শিক গ্রন্থসমুহ পুড়িয়ে ফেলা হয়, মন্দির ও পীঠস্থানগুলো বিনষ্ট করা হয়, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যকর্ম সমূহ মাটিতে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়। আবার অন্যদিকে উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় যে, শাসকের আমূল পরিবর্তনের কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল রক্ষা পায় প্রেমের অভিব্যক্তি, স্থাপত্য ও মর্মর পাথরে নান্দনিক অলংকরণ শিল্পের এক অসাধারণ নিদর্শন হিসেবে। যদিও শাহজাহান নিজ সন্তানের হাতে বন্দী হয়ে অনেক দুঃখ-কষ্টে নিজের শেষ জীবনটি অতিবাহিত করেন কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে, অনেক নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার মধ্যে দিয়েই তিনি শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন। একটা সময় পর্যন্ত সম্রাট শাহজাহান নিকৃষ্টতম কূটচাল আশ্রয় করে দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়েই প্রজাদের শোষণ করে ও প্রতিপক্ষদের নৃশংসভাবে হত্যা অথবা দমন করে রাজ্যের বিস্তার ঘটান এবং রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন। কথিত আছে যে বিশ হাজার শ্রমিক ও শিল্পী যারা তাজমহল নির্মাণ করেছিল তাদেরকে শুধু দাসের মতোই শোষণ করা হয়নি, একটি বড় অংশকে শিল্পের কলাকৌশলের গোপনীয়তা রক্ষা করার অজুহাতে সম্রাট শাহজাহান হত্যা করেছিলেন। অথচ শাহজাহান ও নুরজাহানের প্রেম বিবৃত করে অন্য ভাষায় তো বটেই এমনকি বাংলা ভাষায় গান ও কবিতা রচিত হয়েছে।
ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ে শাসকশ্রেণি কর্তৃক শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীতের উপর নানারূপ আদর্শিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে দেখা গেছে। ব্যতিক্রমী শিল্পী-সাহিত্যিকদের উপর নেমে এসেছে দমন ও নির্যাতনের স্টিম রোলার। আধুনিক কালে, হয়তো শিল্পকলার উপর সবচেয়ে নাটকীয় আদর্শিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে দেখা যায় নাৎসি, কট্টর কমিউনিস্ট এবং মৌলবাদী ও কট্টর এক শ্রেণির ইসলামপন্থীর শাসনে। হিটলারের জার্মানী, মাও সে তুং এর চীন, স্ট্যালিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন অথবা আফগানিস্তানে মোল্লা ওমরের শাসনের অধীনে যেসব শিল্প, সাহিত্য অথবা সঙ্গীত গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল, সাধারণ শৈল্পিক সূত্রসমুহ অনুসরণ করে সেসব শিল্প, সাহিত্য অথবা সঙ্গীতকে নিষ্ফলা এবং বৈচিত্র্যহীন হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে। একটি সুনির্দিষ্ট মতবাদের প্রচার, প্রজ্ঞাপন সৃষ্টি করার প্রচেষ্টার প্রভাবে শিল্পকর্মটি হয়ে ওঠে নিস্তেজ ও অনুজ্জ্বল। এইরূপ শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীত মানুষের জন্য কথা না বলে, তাদের নির্দেশ করেই কথা বলে। যেখানে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার পরিবর্তে রাষ্ট্রের আশা-আকাক্সক্ষার কথাই প্রকাশ ঘটেছে। মানুষের চেতনার বিশোধনের পরিবর্তে এসব শিল্প রচনার উদ্দেশ্য মানুষের আবেগ-অনুভূতি-ভাবনার উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
যে কোনো কালে যখন কোনো কবি, সাহিত্যিক, নাট্য-কলাবিদ, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত কলাকুশলী ও শিল্পী, নৃত্য-কলাবিদ ও নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী, কারুশিল্পী, ভাস্কর এবং স্থপতি তার কাজটি মুক্ত পরিবেশে সৃজন করে থাকেন অথবা যে কোনো সময় যখন বহির্জগতে প্রতিকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও শিল্পীরা তারা নিজের অভ্যন্তরে বন্ধনহীন মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সক্ষম হতে পারেন, তাহলে সেই অবস্থায় প্রকাশিত শিল্পকর্মটি হয়তো মানবতাবাদী এবং উদারনৈতিক মানুষের ভালোবাসা ও প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হতে পারে অথবা যে কোনো মানুষকে চেতনাগতভাবে মানবতাবাদী হয়ে ওঠার গভীর উদ্দীপনা এবং অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে, তাহলে নান্দনিকতার কোনো সুনির্দিষ্ট মানবিক তত্ত্ব সাজিয়ে দেয়ার চেষ্টার কোনো প্রয়োজন নেই। যথাযথ কোনো বিশদ বিবরণ-বিবৃতি, অভিব্যক্তি অথবা বার্তা প্রদানের চেষ্টা করারও কোনো প্রয়োজন নাই। আমাদের যেটা করা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে জাতি-উপজাতি-ধর্মীয় সম্প্রদায় ও লিঙ্গ নির্বিশেষে একটি স্বাধীন, সহমর্মী, মানবতাবাদী ও বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন সামাজিক পরিবেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা গ্রহণ করার জন্য সৎ ও আন্তরিকভাবে সকল মানুষের মনে সুগভীর অনুপ্রেরণা বিস্তার করা। এই কাজটি একটি সৃজনশীল কাজ এবং কোনো বাধাহীন সহজ-সরল পথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগও সীমিত। কিন্তু এর কোনো বিকল্প আছে বলে আমার ধারণায় আসে না। তবে এটা বুঝি যে, এই অনুপ্রেরণা হৃদয়ে প্রোথিত হলে–কবি, সাহিত্যিক, নাট্য-কলাবিদ, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত কলাকুশলী ও শিল্পী, নৃত্য-কলাবিদ ও নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী, কারুশিল্পী, ভাস্কর এবং স্থপতিরা নিজেদের স্বাভাবিক কাজের মধ্যেই যে শিল্প সৃজন করবেন কি-না, সেটাই মানবিক বোধ ধারণ করবে এবং একজন মানবতাবাদীর কাছে অতি প্রিয় হয়ে উঠবে।
পরিশেষে এটা বুঝে নিতে হবে যে, ইতিহাসের অধ্যায়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সত্যেরও পরিবর্তন ঘটতে দেখা গেছে। কিন্তু সুন্দর তার রূপ পরিবর্তন করলেও বোধ এবং অনুভূতিতে সুন্দরের কোনো পরিবর্তন হয় না। তাই, সত্যের মধ্যে সুন্দর এর অনুসন্ধান অনেক সময় বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, সুন্দর সৃষ্টির মধ্যে সত্যের অনুসন্ধান ও প্রতিষ্ঠা করেই আমাদের অগ্রসর হতে হবে। কেননা কবি, সাহিত্যিক, নাট্য-কলাবিদ, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত কলাকুশলী ও শিল্পী, নৃত্য-কলাবিদ ও নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী, কারুশিল্পী, ভাস্কর এবং স্থপতিরা মিলিতভাবে শিল্পের সকল কর্মীরা চিন্তা-চেতনা, আবেগ ও অনুভূতিতে আমাদের সমাজের অগ্রসর অংশেরই প্রতিনিধি।
উদার পুঁজিবাদ ও মুক্ত বাজার, মানুষের মূল্যবোধের জমিনটিতে পচন ঘটিয়ে চলেছে। মাটিতে যখন পচন ঘটে তখন আর কোনো কিছুই নির্মল থাকতে পারে না। মানুষ কষ্টে আছে। তাই, অবশ্যই সমাজের অগ্রসর অংশটির সামনে পরিবর্তন সাধনের লক্ষ্যে নান্দনিক অথচ সত্য শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীত সৃজনের একটি মহান দায়িত্ব এসে পড়েছে। অনুপ্রাণন এই দায়িত্বের স্থানটিকে মজবুত করে গড়ে তোলার কাজে অবিরাম প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকতে চাই।
নবম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.