Additional information
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.41 $ 1.88
সমালোচকের মতে, আধুনিককালের কবির ধর্ম উপস্থিতকালের প্রধান অসুখ শনাক্ত করা। একইসঙ্গে সমাজ বিনির্মাণে জাতিকে স্বপ্ন দেখানো। পাশাপাশি ব্যক্তির মনোবিকলন ও আর্থ-সামাজিক- রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে কবিতার অনুষঙ্গে রূপান্তর করা। ফারহানা রহমানের কবিতায় এই বিষয়গুলো রয়েছে কখনো প্রচ্ছন্নভাবে, কখনো প্রকটরূপে। বিশেষ করে নর-নারীর প্রেম-বিরহ, বিশ্বাস-বিশ্বাস ভঙ্গ, হাহাকার, নিঃসঙ্গতাকে তিনি ব্যক্তির অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে প্রকাশ করেন। তবে তাকে করে তোলেন সর্বজনীন। এছাড়া তার কবিতার একটি বিশেষ গুণ হলোÑ সহজ ও কোমল শব্দের সমারোহ। এর ফলে তার কবিতার প্রতিটি শব্দ সহৃদয়বান পাঠককে ছুঁয়ে যায় হেমন্তের হালকা হাওয়ার কোমল পরশের মতো। পাঠক মনে করেন, এই কথাগুলো তারই মনের কথা। এভাবেই ফারহানা রহমানের কবিতা ব্যক্তির রচনা হয়েও হয়ে ওঠে মানুষের কবিতা।
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
সাঈদা মিমি। জন্ম: ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮। বরিশালে। শৈশবের পুরোটাই এবং অর্ধেক কৈশোর কেটেছে পদ্মাপাড়ে, মানিকগঞ্জের ঘোনাপাড়া গ্রামে। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবনে। প্রথম প্রকাশিত হয় ইত্তেফাকে। ফ্রীল্যান্স সাংবাদিকতা, স্কুল মাস্টারিং, বায়িং হাউজের এডমিন, হাউজিং কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ইত্যাদি বিচিত্র কর্মজীবন মেষে অতঃপর গৃহিণী। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সব নিয়ে গেছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস’ ‘ফারাও কুমারী’ ও ই-বুক ‘কীর্তনখোলা’।
একজন মৃতের ডাইরি
অরণ্যক তপু। জন্ম: ১৯৯৪ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর, ঢাকার ঝিগাতলা। পৈত্রিক নিবাস বরিশালের পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলায়। বর্তমানে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ব্যথিত ভায়োলিন
সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব। জন্ম: ১৯৭৮ সালে বরিশাল জেলা সদরে করিমকুটির নামক স্থানে। তার লেখার বিষয় মূলতঃ কবিতা। সময় নাট্যদলের সাথে একযুগ পার করেছেন। গানও লিখতেন কিন্তু বন্ধুবরের প্রয়ানে, অভিমানে আর সেপথ মারাননি। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকলেও নিজেকে একজন কবিতার শতরঞ্জি মোড়ানো শ্রমিক বলেই মনে করেন। এটি কবির প্রথম বই।
রূপোর দ্যুতি
আলতাফ হোসেন-এর জন্ম ২৭ অক্টোবর ১৯৪৯। পৈতৃক নিবাস কিশোরগঞ্জ। বাবার চাকরিসূত্রে শৈশব কৈশোর কেটেছে পাটনা, কলকাতা, চাটগাঁ, করাচি ও ঢাকায়। ১৯৬৪ থেকে পুরোপুরিভাবে ঢাকায় বসবাস। অনার্স ও এমএ করেছেন বাংলায়। আলিয়ঁস ফ্রঁসেস, ঢাকা থেকে দু-বছর ফরাসি ভাষা শিখে সনদ পেয়েছেন।
কফি জেগে থাকে
লেখক পরিচিতি :
হান্নান হামিদ, লেখক নাম কালের লিখন। জন্ম: আগস্ট, ১৯৮৪। জামালপুর। ‘বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস’ লেখকের প্রথম বই।
বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস
মেঘ অদিতি। কবি ও গল্পকার হিসেবে ‘দু’বাংলাতে পরিচিত। জন্ম: ৪মে, জামালপুর। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘জলডুমুরের ঘুম (কাব্য)’ ‘অস্পষ্ট আলোর ঘোড়া (গল্প)’ ‘অদৃশ্যতা হে অনিশ্চিতি (কাব্য)’ এবং ‘সময় শূন্যতার বায়োস্কোপ (মুক্তগদ্য)।
প্রবেশিধকার সংরক্ষিত
আলী রেজা। জন্ম: ১৯৫৭। মুক্তিযুদ্ধে আলোড়িত কবি, সত্তর দশকে মূলত ছোটকাগজে লেখালেখি শুরু করেন। সদ্য অবসরে যাওয়া একটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক। এটি কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
আলী রেজা
লেখক পরিচিতি :
প্রজ্ঞা মৌসুমী। জন্ম: এক শরতে দাদুবাড়ি কুমিল্লায়, বেড়ে ওঠা সুনামগঞ্জে। ঊনিশ বছর থেকে পড়াশুনার জন্যে প্রবাস জীবন। এক এসাইনমেন্টের জন্যে প্রথম ইংরেজি কবিতা লিখার শুরু। প্রথম জীবনের কবিতাগুলো ইংরেজিতেই লেখা, কিন্তু মন আঁকুপাঁকু করে বাংলায় লিখতে; তারই ফলশ্রুতিতে আজকের প্রথম কবিতা ফসল ‘পৌরাণিক রোদ এবং অতিক্রান্ত কাঠগোলাপ’। লেখক কবিতা ও গল্প লিখে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার তাই বাংলা সাহিত্যের অত্যুজ্জল আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করার স্বপ্ন দেখেন অহর্নিশ।
পৌরাণিক রোদ এবং অতিক্রান্ত কাঠগোলাপ
আবু জাঈদ। জন্ম: ২২শে জুলাই ১৯৮৩, ঢাকা। পড়াশুনা অসমাপ্ত রেখে একসময় কবি বাউণ্ডুলে জীবনের এলোমেলো আলপথে নেমে যান বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, তাই বলে কাব্যচর্চা থেমে থাকেনি। এক সন্তানের জনক। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
মানচিত্রের ফাঁসি চাই
ডালিয়া চৌধুরী। তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছেন। কবিতার প্রতি ভালোবাসা থেকে কবিতা লেখার সূত্রপাত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, ‘অনুভবে সুখ’ ‘মেঘময় নিকুঞ্জে রধুন‘ ও ‘জলজ কামনা’।
নীল গোধূলি
রঞ্জনা বিশ্বাস। জন্ম: ১০ডিসেম্বর, ১৯৮১। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে খ্রিস্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ ও ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’ কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবির প্রকাশিত কাব্যফসল। এছাড়া কবি কবিতাচর্চার পাশাপাশি ফোকলোরচর্চাকেও ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। নৃ-তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মী কবির আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ ও ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ প্রকল্পে কাজ করছেন। এছাড়া এখন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগে কর্মরত আছেন।
বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস
লেখক পরিচিতি :
নিখিল নওশাদ। জন্মসন: ১৯৮৯ইং। বড়িয়া, ধুনট, বগুড়া, বাংলাদেশ। ‘বিরোধ, ‘নিওর’ ও ‘নীড়’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই। এছাড়া ছোটগল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।
এটি একটি চিৎকার
সচৈতন্যের শূন্যবাদ অস্তিত্বাশ্রয়ী যে ভাবনা রয়েছে গহনে প্রবিষ্ট তাকে উজ্জ্বল চেতনার রূপ দেবো ভাষার হাত ধরে— সর্বতোমান্য আবেগে কাব্যকে লক্ষ্যভেদী করার সে সাধনা আমার অর্জিত হয়নি। ভাবনাকে আবেগতাড়িত ও আবেগকে ভাবনাতাড়িত করার ধীমতি উপপাদ্য সুদূরের কুয়াশায় ধূসরিত হৃদয়ের মন্থনদণ্ড উজ্জ্বলতা হারায় মানসিক পরিশ্রমে। সুশিক্ষিত কাব্যকে ঘিরে জ্বালাতে চাই তবু বিদগ্ধ দীপাবলী। সকল ব্যথিত বাঁধনের যে মহাছন্দ অসীম শূন্যের অলঙ্ঘ্য নিয়মপথে তরঙ্গিত হয়, সে উন্মত্ত রাগিনী নিয়ত ছুটে চলছে যে অমোঘ আলোর পথে, সে পথে তপতীর ছায়ার মত থেকে যেতে চাই কবিতার বুকে নিভৃতনিলয় সুখে। আমার চিন্ময় প্রকৃতির গভীরে অনুরণিত হয় যে কম্পিত সুর, সে সুরের বন্ধনহীন বারতা সুহৃদের সাথে ভাগ করে নিতে চাই “যে সুর বাজে গহীনপুরে” কবিতাগ্রন্থের মধ্য দিয়ে।
অবিরাম এই যে ছুটে চলি মাঠে-পথে, হাওয়ায়-শূন্যে, জলে-ডাঙায়, উপরে-নিচে, আকাশে-দিগন্তে—এই পরিক্রমায় সারা পথজুড়ে আমাকে যারা জড়িয়ে আছে অনুভাবুক হয়ে—রতন কুমার ঢালী- আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন, চন্দ্রাত্মজ ঢালী—যার গভীরে আমি ডুবে যেতে চাই, রিখিয়া ঢালী—যার ভালবাসা আমার জীবনকে অর্থবহ করেছে, সন্তোষ কুমার শীল—যে আমাকে কাব্য জগতে আহ্বান জানিয়েছে, এছাড়া ড. অশোক মিস্ত্রী, নির্জন মজুমদারসহ আমার সকল প্রিয়জন যারা আমাকে কাছে বা দূরে থেকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন—তাদের সকলের প্রতি রইল আমার গভীর কৃতজ্ঞতা।
যে সুর বাজে গহীনপুরে
সোনারতরী কাব্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার যে রূপ-সৌন্দর্যের কথা বলেছেন, তা তো সত্যিই বিস্ময়কর, জীবনানন্দ-বিষ্ণু দে-অমিয় চক্রবর্তী-বুদ্ধদেব বসু-সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-জসীমউদদীন থেকে শামসুর রাহমান, তারপর এতোটা পথ, আছে আল মাহমুদ-শহীদ কাদেরী-ওমর আলী-জয় গোস্বামী, বাংলা কবিতা শাখাটিকে করেছেন সমৃদ্ধ, সেখানে দাঁড়িয়ে আর কি নতুন লেখার আছে, তারপরও কেন জানি মনে হয়, ভালোবাসা তো বিভিন্নজনের বিভিন্নভাবে আসে, আমি কেন নতুনভাবে ভাবতে পারবো না, আমারও তো একটা মন আছে, সে মনটা না হয় অন্যভাবে প্রকৃতি-মাটি-মানুষকে অনুধাবন করবে, ভালোবাসবে শীতের কোমল সকালের ঘাসে পড়া শিশিরকণার মতো, আমি কেন নদী হতে পারবো না, কেন আকাশ হবো না, কেন মেঘমল্লা বা বৃষ্টিমেয়ে, আমারও তো ইচ্ছে করে প্রজাপতির ডানায় আবির হয়ে ছড়িয়ে যাই সর্বত্র, দিগন্তে আমার সমস্ত ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়ে নীড়ে ফেরা গোধূলি সন্ধ্যের পাখি হয়ে কবিতার দেশে হারিয়ে যায়।
কেন আমি নীলনদের মতো ভালোবাসা বুকে নিয়ে পিরামিডের বুক ছুঁতে পারবো না, আমি তো বিন্দু-বিন্দু রক্ত দিয়ে পৃথিবীটাকে জয় করে ভালোবাসার মন্ত্রে দীক্ষিত হতে চাই, আর হতে চাই রাজহংসী, হতে চাই ধান শালিকের দেশের বনটিয়া, সত্যিই কি আমি আর আমিতে আছি, আমার মধ্যে বসত করে নদীর দেশের ভাটিয়ালী-জারি আর সারিগান, আর সে গানে নিজেকে তোলপাড় করে ভালোবাসতে চাই বাংলাদেশকে, বাংলার মাটি মানুষ আর মাকে, যার ভেতর দিয়ে আমি একটু-একটু করে প্রবহমান নদীর মতো বড় হয়েছি, বিকশিত হয়েছি আর বাংলার রঙ-ঘ্রাণ আর মানুষের সান্নিধ্যে নিজেকে রজনীগন্ধার মতো ফুটিয়ে তুলেছি, জানি না আমি কি আর আমাতে আছি।
খোশবু জান্নাত
বৈশাখ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ
তারুণ্যের জয়গান
আশরাফ উদ্দীন আহ্মদের গল্প রচনার দক্ষতা স্বীকৃত। সমাজের পিছিয়ে পড়া সামান্য মানুষদের অসামান্য করে উপস্থাপন করা তাঁর গল্পগুলো পাঠককে গভীরভাবে জাগ্রত করবে। নি¤œবিত্ত এবং নি¤œমধ্যবিত্ত বা বিত্ত ছাড়া মানুষকে নিয়েই তাঁর গল্পের আঙ্গিক গল্পের বিষয়, গল্পের অস্থি-মজ্জা। ভাষায় সরলতা এবং তাঁর গল্পের চরিত্রেরা চেনা-জানা মানুষের মুখ। তবে প্রতি গল্পই স্বতন্ত্র কাহিনী সূত্রে গাঁথা। কখনো হয়তো মনে হবে, গল্পের ভাষায় কাব্যিকতায় ঠাসা, কিন্তু পরক্ষণে মনে হবে, আমারই মনের কথাগুলো সাজিয়ে তুলেছেন এখানে। জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন গল্পের বিষয়ে। তাঁর প্রতিটি গল্পই জীবন-জগতের অর্থাৎ মানুষেরই কথা বলে এবং সে মানুষগুলো হয়ে ওঠে গল্পের একেকটা পাত্র-পাত্রী এবং সেখানেও আশরাফ নিজেকে মিলিয়ে ফেলেন গল্পের চরিত্রে। প্রকৃত কথাশিল্পী হিসেবে তাঁকে এখানে খুঁজে পাওয়া যায়, তিনি হয়ে যান জীবনশিল্পী। মৃত্তিকা সংলগ্ন যে সমস্ত মানুষ, যারা গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে দিনগুজরান করেন, জীবনে যাদের কোনো আশা নেই, ভাষা নেই, স্বপ্ন নেই, আমাদের চারপাশে তাদের অবাধ বিচরণ, কিন্তু আমরা তাদের চিনেও চিনি না, দেখেও দেখি না, কতো সামান্য মানুষ তারা, তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আশরাফ প্রতিনিধিত্ব করেন গল্পের মাধ্যমে তার পরিচয় পাওয়া যায়।
তারপর অন্ধকার, দুঃসময়
ফজিলা ইসলাম ফৌজি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ১৯৭২ সালের ৮ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃনিবাস মেহেরপুর জেলার কোলা গ্রামের বাবু পাড়ায়। পিতার নাম মোঃ হাফিজ উদ্দিন মাতার নাম মোছাঃ রাকিবা বেগম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগ (অনার্স মাস্টার্স) শেষ করে ১৯৯৯ সালে রাজশাহীর ইসলামিয়া কলেজে শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে কলেজ পরিবর্তন করে বর্তমানে তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গাংনী মহিলা ডিগ্রী কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসাবে নিয়োজিত আছেন।
একান্ত নিভৃতে লেখালেখি দিয়ে কাব্য চর্চা শুরু। কবিতা, ছোট গল্প লেখার পাশাপাশি তিনি উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছেন। লেখকের লেখা কবিতার বই “ মা‘কে মনে পড়ে” (২০১৪ অমর একুশে বইমেলা) থেকে প্রকাশিত, গল্পগ্রন্থ “মানচিত্রে রক্তক্ষরণ” (২০১৬) অনুপ্রাণন প্রকাশনা। স্বামী মোঃ আমিরুল ইসলাম। দুই সন্তানের জননী ফজিলা ইসলাম ফৌজির প্রিয় শখ বই পড়া, গান শোনা ও ক্রিকেট খেলা দেখা।
একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে
গল্পগ্রন্থের নাম-করোনা ভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণু। এই নামকরণ বলে দেয় আমরা কত রকক জীবাণুর সাথে বসবাস করছি! করোনা-জীবাণুর তান্ডব তো সাম্প্রতিক! জীবন ঘনিষ্ঠ নাকি জীবন-অন্বিষ্ট গল্পকার স্বাতী চৌধুরী! দুটোই সমান প্রাসঙ্গিক; চাইলে তৃতীয় কোনো অভিধা আবিষ্কারও সম্ভব। দৃষ্টি থাকলেই সব দেখা যায় না, যদি না যুক্ত হয় মেধা-প্রজ্ঞার মিশেল। তৃতীয় চোখ তথা অন্তর্দৃষ্টিও জরুরি। স্বাতীর ত্রিনয়ন প্রখর– গেঁথে যেতে পারেন মানুষের প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ কাহিনি। মানবিকতার আখ্যান রচনার কুশল ও চাতুর্যে সংবেদী পাঠককে চমকে উঠতে হয় ক্ষণে ক্ষণে। গল্পকার স্বদেশ-সমকাল ও সমাজ-বাস্তবতার অগ্রসর দর্শক। তার ভাষ্যে ঈগলের শ্যেনদৃষ্টি যেমনউচ্চকিত, ডানাভাঙা পাখির উড়ে আসা পালকও আন্দোলিত করে। লেখকের অন্তর্জমিন সততই ক্ষত-বিক্ষত– চৌচির। জাগতিক নানাবিধ রঙ্গ-তামাশায় ধ¦সে পড়ে তাঁর স্বপ্ন-প্রাচীর, উল্টেপাল্টে যায় মানসভূগোল। তাই বলে সেখানে ফুলের সৌরভ, নদীর কলতান, তৃণ কিংবা লতাগুল্মের কোলাহল থাকে না? অচ্যুত জীবনের কথাকার স্বাতী নিস্পৃহভাবে বুনে যান উদ্বাস্তু জীবনের গল্প, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টিকে থাকার রকমারি মকশো’র ইতিবৃত্ত
দুর্বলের উপর সবলের আগ্রাসী মনোভাব অন্ধকার-প্রাচীন। দাবিয়ে রাখার অপকৌশলের বিপরীতে সংকট মোকাবেলা করে লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। জীবন-শিল্পীর গল্পে খিন্ন জীবনের মুক্তি-প্রচেষ্টা দ্যুতি ছড়ায়। চিনিয়ে দেন সর্বহারার শক্তি-সামর্থ্যরে জায়গা; অস্তিত্বের প্রশ্নে কীভাবে জ্বলে ওঠে দ্রোহের দাবানল! স্বাতী গল্প লেখেন নাকি সমাজতাত্ত্বিকের মতো গ্রাফ আঁকেন! গল্পের শরীরে ক্লেদাক্ত জীবনের নড়াচড়া না থাকলে সাংবাদিকের ‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদন’ হিসেবেও চালিয়ে দেওয়া যেত অনায়াসে! প্রচার ও খ্যাতির ডামাডোলের বহু দূরে অবস্থান করেও মূর্ত করে চলেছেন অবাক বাংলার মানুষের মুখ ও মুখশ্রী। কয়েকটি রেখাচিত্রে স্কেচ এঁকে দেওয়া ‘শ্রী’ ও ‘বিশ্রী’র সামনে দাঁড়িয়ে পাঠক অস্বস্তি বোধ করে, পথ খোঁজে পালানোর! লেখকের ক্ষুরধার বয়ান চাবুক হয়ে তাড়া করে। শেষপর্যন্ত ‘অপরাধী’ পাঠক পথ খুঁজে পায় কি! এখানেই স্বাতী চৌধুরীর সার্থকতা, অনন্যতা।
শফিক হাসান
সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
করোনা ভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণু
কামরুজ্জামান কাজল। অণুগল্প বর্গের লেখক-পাঠকদের কাছে একজন পরিচিত মানুষ। সুদর্শন, পরিশ্রমী আর অণুগল্প সাহিত্যের প্রতি একনিষ্ঠতার জন্যে সবার কাছে এক ধরনের সমীহ আদায় করে নিয়েছেন স্বল্প সময়ের মধ্যেই]। অণুগল্প লেখার পাশাপাশি অণুগল্পের প্রচার-প্রসার এবং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাংগঠনিক কর্মকা-েও সম্পৃক্ত আছেন।
অণুগল্প যারা লেখেন তারা জানেন, অণুগল্প লেখা যেমন একটি কঠিন কাজ, একইভাবে দীর্র্ঘদিন এর সাথে লেগে থাকা প্রায় দুঃসাধ্য একটি সাধনা। কামরুজ্জামান কাজল এই সাধনায় অত্যন্ত সফলভাবে টিকে আছেন। তারই প্রমাণ প্রথম অণুগল্পগ্রন্থ ‘দলছুটশালিকগণ’ থেকে তিনি যে যাত্রা শুরু করেছেন ‘আটপুকুরের ফুল’ হয়ে ২০১৯ সালের অণুগল্পগ্রন্থ ‘ভেতরে ভেতরে খেলা করে যারা’য় এসে থেমেছেন। থেমেছেনÑ তবে যাত্রা সম্পূর্ণ করেননি।
যাত্রা কেবল শুরু। আমি তা-ই বিশ্বাস করি।
এ-বইটি অন্যান্য বইয়ের মতো পাঠকপ্রিয় হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
Ñবিলাল হোসেন
ভেতরে ভেতরে খেলা করে যারা
বাংলা ছোটগল্প নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে সম্প্রতি, গল্পে বাস্তববোধকে রূপায়িত সম্ভব, নাকি গল্প ছাড়া ছোটগল্প এগিয়ে যাবে এবং তা নতুন রীতির গল্প বলে আখ্যা পাবে, বাস্তব কথা মেনে চলা বড়ই কঠিন, হয়তো তা সম্ভব নাও হতে পারে, রূঢ় সত্য হলো সময়ই সঠিক মূল্যায়ন করবে।
তাহলে ছোটগল্পের সংজ্ঞা কি? কাকে ছোটগল্প বলবো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘ছোট কথা ছোট ব্যথা, ছোট-ছোট… অবশেষে শেষ হয়েও হইলো না শেষ’, কেউ বা বলেন, রবীন্দ্রনাথ তো ছোটগল্পকে মাটি আর মানুষের কাছাকাছি নিয়ে এসে দফারফা করেছেন, আসলে ছোটগল্প মানে জগদীশ গুপ্ত-অমিয়ভূষণ মজুমদার-কমলকুমার মজুমদার-জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী-দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ কথাশিল্পীদের গল্পকেই বোঝায়। তাহলে তো পথ রুদ্ধ, কেননা এই চিন্তায় বসে থাকো, নতুন গল্প আর লেখো না, কি দরকার তাই না! এই বয়ান খয়রাত করেন বিশ্ববিদ্যালয়-কেন্দ্রিক অধ্যাপক-বুদ্ধিজীবী বা সমালোচকগণ। আমার এক বন্ধুবর প্রায়শ বলে, “গল্প কাকে বলে, কীভাবে গল্প লিখতে হয়, এ-গল্পটি গল্পই হয়নি, হয়তো হতে পারতো শেষ ফিনিশিং মাঠে মারা গেছে, রমাপদ চৌধুরী-বিমল কর বা সমরেশ বসুর গল্পই আসলে গল্প আর সব ফালতু জঙ্গল”। লেখকেরা তাদের পেছনে হন্যে হয়ে ধরনা দেয়, অধ্যাপক নামধারী বুদ্ধিজীবী-সমালোচক তাকে নিয়ে একটু লেখেন, তাতেই ধন্য, কৃতার্থ হয়ে বিগলিত হাসি, “আহা কি ফতোয়া দিলেন গুরু, শনির দশা কেটে গেলো” অর্থাৎ প-িতদের শেখানো-দেখানো ছকে শেষঅবধি গল্প নির্মিত হচ্ছে, সমালোচকরা সাহিত্যের ইতিহাসে জায়গা দিলেই তো লেখক, নয়তো জীবনটাই বরবাদ! সময়-স্থান-পাত্র ভেদে যুগের সাথে চিন্তা এবং প্রকৃতি-পরিবেশের সঙ্গেই তো আমাদের পথচলা, এই পথচলা নিরন্তর, এখানে কতো নতুন ঘটনা কতো নতুন চিন্তা প্রতিনিয়ত উপস্থিত হচ্ছে, মানুষ কি সামনে যাবে না, পুরোনোর ভেতর দিয়ে নতুনকে চিনবো না, সমস্ত নতুনই তো পুরোনোকে অবলম্বন করে, কথাটা ভুলে গেলেও চলবে না। যুগ-যুগান্তর ধরে সমস্ত পুরোনোর ভেতরেই তো নতুনের জন্ম দেখি, সেই নতুনই আগামীর চলার গন্তব্য।
সেদিক বিচার করলে, মোটা দাগে বলতেই হয়, ছোটগল্পের বিষয়বস্তু খুব একটা পালটায় না, পালটায় শুধুমাত্র লেখকের দৃষ্টিকোণ বা ভঙ্গি-কাঠামো বা আঙ্গিক এবং স্বরভঙ্গি, ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার করা যাক, একই বিষয় নিয়ে এক শতাব্দী ব্যবধানেও গল্প লেখা যেতে পারে, মানুষ সামাজিক জীব, সমাজের মধ্যে জীবনযাপন, সে সর্বপ্রথম জীবন-জগতের শিক্ষা নেয়, একজন লেখকও পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রের ভেতরের তাবৎ অসামঞ্জস্য তাবৎ অনিয়ম এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে যাবতীয় ক্ষত-দুঃখ-কষ্ট-ক্ষোভ আনন্দ-ভালোবাসা নিয়ে আপন ভুবন বা বলয়, সে বলয় নিয়ে জীবন, সেখান থেকে শুরু-শেষ, অনেকে জীবনকে ভিন্নভাবে দেখে, কেউ বা সে বলয় থেকে খুব একটা বেরিয়ে আসতেও পারে না, মনে রাখা আবশ্যক যে, ছোটগল্প যুগযন্ত্রণার ফসল, বহু প্রচলিত বক্তব্য মেনে বলতেই হয়, এ-শিল্পটি শুধুমাত্র যুগযন্ত্রণারই নয়, সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক প্রয়োজনও ছোটগল্পের জন্মকে ত্বরান্বিত করেছে, শিল্পবিপ্লবের ফলে ধনতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ, সামন্ততান্ত্রিক মন্থর জীবনযাত্রার অবসান ঊনিশ শতকের শেষপ্রান্তে ছোটগল্প রচনার পরিবেশ সৃষ্টি, ইউরোপ-আমেরিকান বুদ্ধিজীবীরা পারিবারিক গ্লানি বা ব্যক্তিগত সমস্যার দিকে তর্জনী উঁচু করলেন। পাশাপাশি ফ্রান্স ও রাশিয়ার সেই সমস্ত কথাসাহিত্যিকগণ সামাজিক সমস্যা ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তিলাভের জন্য তীব্রভাবে ব্যাকুল হয়েছিলেন, এডগার অ্যালান পো-ফ্লবেয়ার-মোপাসাঁ-তুর্গেনিভ-গোর্কী-গোগোল-পুশকিন-চেখভের গল্পে কঠিন বাস্তবতা ও সামাজিক চিন্তার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। দুর্গত মানুষের বেদনা-ক্লেশ, অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনের তীব্র কঠিন বিভীষিকাময় প্রতিচ্ছবি, কখনো বা জীবনের প্রতি অন্যরকম নিবিড় মমতা গল্পের বিষয়বস্তু হিসেবে আসে, তাদের লেখনী শক্তির মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যে ছোটগল্প মর্যাদার আসন লাভ। যে যৌনতার মধ্যে টি.এস এলিয়ট দেখেছেন দৈহিক বিকৃতি মানসিক অবমাননা ও আত্মিক অবক্ষয়, সেই যৌনতার মধ্যেই হুইটম্যান দেখেছেন মানসিক ও দৈহিক উৎকর্ষতা ও আত্মিক মুক্তি। এর কারণ অবশ্যই সময় এবং দৃষ্টিভঙ্গি, সময়ের সাথে-সাথে মানুষের চিন্তাভাবনার স্বর মানসিকতা ভাষাগত ব্যাপারখানিক পালটে যায়, হুইটম্যানের আমেরিকা তথা পাশ্চাত্য, টি.এস এলিয়টের আমেরিকা তথা পাশ্চাত্যের সত্তর বছর আগের, অন্যদিকে এলিয়টের অভিজ্ঞতা হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের, এলিয়ট ধরে রেখেছেন সেই সময়কার তছনছ হওয়া মানবিক মূল্যবোধ, পাশাপাশি হুইটম্যান গড়ে তুলেছেন সত্য ও সুন্দরকে। তাই হুইটম্যানের কাছে যৌনতা ও প্রেম মানসিক উৎকর্ষতা ও আত্মিক মুক্তি। আর এলিয়টের কাছে যৌনতা ও প্রেম মানে যান্ত্রিক জীবনের তাৎক্ষনিক উচ্চারণ। কবিতায় হুইটম্যান প্রেমকে অন্যতম শিল্পসৌন্দর্যের ধারক হিসেবে উপস্থাপিত করেছেন, জীবনের প্রতি তার সমান কৌতূহল, দেহ ও আত্মার প্রতি যেমন আগ্রহ, জড়বাদ ও ভাববাদ উভয়বাদেই তার সমান আস্থা। তার কবিতায় রয়েছে অস্তিত্বের প্রশ্ন, কখনো তা দেহে সীমিত, আবার কখনো দেহকে ছাড়িয়ে তা গগনবিহারী। জীবনকে বিভিন্নভাবে দেখতেই তার চরম কৌতূহল। বোদলেয়ার বলেছেন, ‘নিছক সৌন্দর্য সৃষ্টির আকুতি থেকেই সাহিত্যের উন্মেষ, সৌন্দর্য সৃষ্টি ছাড়া সাহিত্যের আর কোনো উদ্দেশ্যে নেই’। শিল্পসাহিত্যের মাধ্যমে নান্দনিক উপলব্ধির দ্বারা মানুষ আপন আত্মার সত্যে উপনীত হলে যে সামঞ্জস্যের সুষমা প্রতিষ্ঠিত হবে তার ব্যক্তিগত ও সমষ্টি জীবনে, হয়তো তাতেই প্রকৃত মঙ্গল, টলস্টয়ও বিশ্বাস করতেন, ‘শিল্পসাহিত্যের সার্থকতা এখানেই’।
জীবনানন্দের গল্পের মূল উপজীব্য মানুষ, মানুষের জীবনের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, সামাজিক-রাজনৈতিক বিচিত্র অবস্থার পরিবর্তনের ফলে মানুষের উপর প্রতিফলিত প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি সমস্ত কিছুই খুটিয়ে-খুটিয়ে তুলে ধরেছেন গল্পে, ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের পাশাপাশি নদী-আকাশ গাছগাছালি-পানি গরু-ছাগল অন্ধকার নৌকা ঝাউবন-প্রেম-ভালোবাসা-যৌনক্ষুধা-অত্যাচার-লালসা কাঁটাঝোপ সকাল-দুপুর গ্রাম-শহর শহরতলী-বসতি ভোরের সোনালি রোদ্দুর তারপর এসেছে বেকারত্ব-দাম্পত্যকলহ-হীনতা প্রভৃতি কোনো কিছুই তার বিশ্লেষণের বাইরে যায়নি, সমস্ত উপাদান নিজের মতো ছকে সাজিয়ে পরিবেশন করেছেন পাঠকের দরবারে। মৃত্তিকা সংলগ্ন জনমানুষের যে জীবনালেখ্য, যে বৈচিত্র্যময় পরিবেশের অনুসন্ধান, তাকে কি বলবো, অবশ্যই জীবনের গল্প, জীবন এখানে বৈচিত্র্যময়-অনুভূতিপ্রবল আর তিক্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
গ্রামীণ জীবনের বিচিত্র রূপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিলো তারাশঙ্করের, কঠিন ও অসুন্দর কর্কশ সংসারের চিত্র তিনি এঁকেছেন অনেক, গল্পের চরিত্রগুলো বিচিত্র পেশাজীবী-বৃত্তিধারী, গল্প ভাষাও ভিন্ন ধরনের। জীবনানন্দ দাশ বাংলাসাহিত্যে এমনই একজন, গল্পে তিনি চরিত্রের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়েছেন, গ্রামীণ জীবন-সমাজচিত্র তার নখদর্পণে, বেশ জমিয়ে বলতে পারেন, ভিন্ন-ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে যেতেও জুড়ি নেই, কোথাও-কোথাও বড় বেশি তাড়াহুড়োও দৃষ্টিগোচর হয়। গল্প জমতে না জমতে দেখা গেলো বনফুলের মতো শেষও হয়ে গেলো, তখনই পাঠক কেমন একটু হোঁচট খায় বৈ কি! তারপরও একাধিক বিচিত্র জীবিকা এসেছে গল্পে, তার গল্প বিকৃতির ভাষা ভিন্ন ধরনের, গল্পের উদ্দিষ্ট অভিপ্রায়ের কেন্দ্রীয় ভাববস্তুর উপযোগী আবহবদ্ধ-বিশ্লেষণী ভাষা প্রথম থেকে ব্যবহার করেন, জীবনানন্দের কয়েকটি গল্প নিয়ে আলোচনা করলে দেখা যাবে গল্পের শক্তিমত্তা কতোখানি, গল্পের মনস্তাত্ত্বিকতা ও বিষয়বিন্যাস আলোচ্য প্রবন্ধে তুলে ধরা।
‘গ্রাম ও শহরের গল্প’ শুধুমাত্র অনুভূতির ওপর নির্ভর করেই গড়ে ওঠেনি, গল্পটি একটা ঘেরাটোপের মধ্যে আবদ্ধ, এখানে একটা শক্তমক্ত কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে, চরিত্র আছে তিনটি, ঘটনা-উপঘটনার ভেতর দিয়ে কাহিনী এগিয়ে গেছে, ত্রিকোণ প্রেমের একটা সুখানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে, প্রকাশ, যে কিনা একজন সচ্ছল চাকুরে, তার স্ত্রী শচী শুধুমাত্র গৃহকত্রী, গুছিয়ে সংসার করছে, সন্তান হয়নি বলে কষ্টও নেই তেমন। এদের মাঝে জুটেছে পুরোনো বন্ধু সোমেন, যে কিনা খবরের কাগজে কাজ করে, শচী বিয়ে করেছে প্রকাশকে, সুখের সংসার লক্ষেèৗয়ে থেকে কলকাতায় এসেছে তারা, কলকাতার পরিবেশ তেমন একটা ভালোও লাগে না প্রকাশের, কেমন একটা ঘিনঘিনে স্বভাবের সে, সোমেনকে একদিন রাস্তা থেকে তুলে আনে প্রকাশ, সেই থেকে অবাধ যাতায়াত শুরু হয়ে যায় এ-বাড়িতে সোমেনের, ক্রমে-ক্রমে আবার ভালোবাসা যেন দানা বেঁধে ওঠে, কেউই ভুল করছে না তবুও ভুলের মধ্যে হারিয়ে যেতে থাকে শচী। একটা নেশা তাদের হাওয়ায় তুলে নিয়ে যায়, সময়ে-অসময়ে আসা-যাওয়ার ভেতর দিয়ে নতুন করে ভালোবাসা জাগ্রত হলে শচী ফিরে যেতে চায় অতীতে, তার কামনা-বাসনা ফুলে-ফেঁপে ওঠে, সোমেন বলে, মনে পড়ে একদিন বকমোহনার নদীর পাড়ে ভাঁট শ্যাওড়া জিউলি ময়নাকাটা আলোকলতার জঙ্গলে তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম…শচীর মধ্যে গ্রাম্যজীবনের প্রতি যে আকর্ষণ তাতে সোমেন আরো আগুন উসকে দেয়, এই নস্টালজিয়া তাকে কোনোক্রমে আর স্বস্তি দেয় না, তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়, ভাবাবেগে বলে ওঠে, চলো না পাড়াগাঁয়ে, বকমোহনা নদীর ধারে! সোমেন বললো, সে পাড়াগাঁর জীবন তুমি কোনোদিন ফিরে পাবে না, সেই তেলাকুচো-ফণীমনসা বনধুঁধুল কোনো অন্ধকারে কোনো জ্যোৎস্নার কতো দূরে চলে গিয়েছে, আমরা তো আর সেখানে নেই, কি হবে সেসব দিয়ে? পেছনের স্মৃতিময় জীবনের গল্পগুলো একে একে সামনে এলেও তা যে আর কোনোদিন পুনরাবৃত্তি হবে না, অর্থাৎ মানুষ ইচ্ছে করলেই আর পেছনে ফিরে যেতে পারে না, বর্তমানেই থাকতে হয়, অতীত সে তো মৃত একটা ধ্বংসস্তূপ, তাকে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, যেমন শচী ইচ্ছে করলেই প্রকাশকে ছাড়তে পারবে না এবং সোমেন ইচ্ছে করলেই শচীকে ফিরে পাবে না, সময় এবং স্মৃতি সর্বদা জ্বলন্ত শিখা হয়ে জ্বালায় বনভূমি-মনভূমি, হয়তো মানুষ দাবানল বলে কিন্তু বুকের ভেতর যে আগুন জ্বলে তাকে কি বলবে, অন্তর্জ¡ালা, নাকি আত্মার কষ্ট! যে মানুষ একবার চলে আসে, সে কি আর ফিরে যেতে পারে, পাড়াগাঁর মাঠ জঙ্গল কিংবা একটা সন্ধ্যা অথবা একটা রাত্রি, সোমেন বলে, তুমি তো ফিরে চলে আসবে আবার, মেয়েরা ভুলে যায় যতো সহজে, কারণ তারা পরিবর্তিত হতে সময় নেয় না, কিন্তু কি নিয়ে থাকবো আমি, ওই ক্ষতে আর আঘাত দিও না…এ-গল্পে জীবনানন্দের আত্মাকে দেখতে পাওয়া যায়, সোমেন যেন জীবনানন্দ হয়ে রূপান্তিত হয়েছে গল্পের আখ্যানে। নগরজীবনের আনন্দ যেভাবে এসেছে তেমনি পুরোনো স্মৃতি বা ফেলে আসা গ্রামীণ জীবনের যে আকর্ষণ তাও স্পষ্ট জলছবি হয়ে ফুটে উঠেছে ‘গ্রাম ও শহরের গল্পে’। গ্রামীণ এবং নাগরিক জীবনের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে তিনি সুকৌশলে পৌঁছাতে পেরেছেন বলেই তো জীবনশিল্পী। বাংলা ছোটগল্প গ্রামীণ ও নাগরিক জীবনের বিস্তৃত উপাখ্যানে সুসমৃদ্ধ। এমনকি গ্রামীণ ও নাগরিক জীবনের সমবায়ী তরঙ্গও দুর্নিরীক্ষা নয়। কিন্তু যান্ত্রিক কোলাহলে সমস্ত স্মৃতি ও ঐতিহ্য আবেগ, কোমল অনুভবময়তা কালের নির্মম পদপাতে পিষ্ট-বিনষ্ট হয়ে গ্রামীণ সমাজ ও জীবনের ক্রমশ নাগরিক হয়ে ওঠার হৃদয় চুরমার করা হাহাকারে শিল্পিত রূপান্তর বাংলা ছোটগল্পের এলাকার দুর্লভ। পরের গল্পে জীবন যন্ত্রণার ছবি অঙ্কিত হয়েছে।
‘মেয়ে মানুষ’ জীবনানন্দের গুরুত্বপূর্ণ গল্প, মনস্তাত্ত্বিক দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে মানুষ কখনো নিজেকে হারিয়ে ফেলে, তখন সে নিজেই সৌন্দর্যের একটি রূপ নির্মাণ করে, অথবা কদাচিৎ তুলে ধরে, এখানে তারই প্রকাশ পেয়েছে, হেমেন এবং দ্বিজেন গল্পের প্রধান চরিত্র, হেমেন ছোট্ট একটা ব্যবসা থেকে প্রচুর অর্থের মালিক, কিন্তু দ্বিজেন মূলত আইনজীবী, অথচ দুজনই নিঃসন্তান, সন্তানের হাহাকার সেভাবে কারো মধ্যে না থাকলেও একটা শূন্যতা তাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়, হেমেনের স্ত্রী চপলা স্বামীহৃদয় নারী, আর দ্বিজেন স্ত্রী লীলা অন্যমূর্তির মানুষ, কিন্তু লীলার স্বামী সুদর্শন হলেও হেমেন সুপুরুষ নয়, দু’বন্ধুর জীবনের স্ত্রী প্রভাব নিয়েই গল্পের মূল বিষয়, কঠোর পরিশ্রম এবং সংগ্রামের জীবন অতিবাহিত করবার পর আর্থিক উন্নতি লাভ করে হেমেন, কিন্তু নিঃসন্তান তারা, মানসিকভাবে বিমর্ষ-অবসন্ন, তাই স্বপ্নহীন জীবন যেন, তাদের জীবনে মেয়েমানুষ একটা বিশাল প্রভাব বিস্তার করে আছে, মানুষ সত্যি সত্যিই ওই একটা শেকড়ের কাছে বারংবার ফিরে আসে, স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্কের গভীর যে বন্ধন, তা কেবল অর্থবিত্তের উপর দাঁড়িয়ে থাকে না, শ্রদ্ধা-ভক্তি বা বিশ্বাস-ভালোবাসা জীবনের জন্য প্রয়োজন হয়, কিন্তু লীলা ওই সত্যকে মানতে চায় না, জীবনানন্দ প্রত্যক্ষ করেছেন একজন পুরুষের জীবনে হৃদয়বতী নারীর প্রেম কতোটা আবশ্যক, বিবাহিত স্ত্রীর কাছে থেকেই হোক বা পরস্ত্রীর নিকট থেকেই হোক কিংবা অন্য কোনো নারী থেকেই হোক না কেন, প্রতি পুরুষই নারী ভালোবাসা পেতে ইচ্ছুক, জীবনানন্দ সচেতন কথাশিল্পী বলেই হেমেন-চপলা দ্বিজেন-লীলার ভেতরের দ্বন্দ্ব চাক্ষুস করেছেন, প্রকৃতপক্ষে সমাজের বা সংসারের এই টানাপোড়েন মানুষের জীবনকে অতিক্রম করে এবং তারপরও মানুষ নিজের প্রয়োজনে নিজেকে গড়ে তোলে।
‘মা হবার কোনো সাধ’ গল্পে জীবনের লেনদেনের হিসাব বেশ সাবলীলভাবে ধরা দিয়েছে, জীবন সত্যি বিচিত্র বিভীষিকাময় ছবি হয়তো একেই বলে, গল্পের প্রধান চরিত্র প্রমথ, যে গ্রাম থেকে সুদূর কলকাতায় একটা মেসে থাকে, চাকুরী সন্ধান করাটাই যেন তার একটা কাজ, সে বছর দুই আগে বিয়ে করেছে, মেয়েটির নাম শেফালী, জীবনের কোনো মানেই সে বোঝে না, হয়তো বোঝার মতো বয়স তার হয়নি বা পরিস্থিতির মধ্যে সে পড়েনি, শেফালী অন্তঃসত্ত্বা, গ্রাম থেকে স্বামীকে সে চিঠি লেখে পাতার পর পাতা কাকুতি ভরা প্রেমে সিক্ত, কতো গল্প তাতে রঙে রঙিন হয়ে থাকে, দিন দিন সে আসন্নপ্রসবা হয়, গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে প্রমথ বেশ কয়েক মাস গ্রামেই ছিলো, অথচ শেফালী যখন ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়ে, সেসময় প্রমথ কলকাতা পালিয়ে যায়, জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানো যাকে বলে, কিন্তু শেফালী নিয়মিত চিঠি লেখে, কয়েকটি টাকা যেন পাঠায়, কারণ গর্ভের শিশুটিকে নিয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছে, দুধ-ডিম-কলা বা ভালো কিছু খাওয়াটা প্রয়োজন, নয়তো সে নিশ্চিত মারা যাবে, এভাবে বাঁচার আর ইচ্ছেও তার নেই, তারপরও সে বাঁচতে চায়, জীবনকে সুন্দরভাবে দেখতে চায়। কিন্তু তার স্বামী প্রমথ বেকার, একটা চাকুরীর জন্য কলকাতায় পড়ে আছে, শাশুড়িও দেখতে পারে না শেফালীকে, ডানা কাটা পরীর মতো শেফালীর মা হবার কোনো সাধ ছিলো না, কারণ সে জানতো, মা হলে তার স্বামী প্রমথকে চাকুরীর সন্ধানে যেতে হবে, খরচের বিষয়টা দেখতে হবে, অর্থাৎ স্বামীকে কাছ ছাড়া করার কোনো ইচ্ছে তার ছিলো না, তারপরও একটা শিশু আসছে এবং সে কারণে প্রমথকে কাজের জন্য অথবা শেফালীর কষ্ট দেখতে না হয় সেজন্য দূরে পালিয়ে থাকতে হয়, নিয়মিত চিঠি আসে এবং সে পড়ে, জীবনের প্রতি ঘৃণা ধরে যায়, সর্বশেষে বারো টাকা পাঠাতে বলে, কলিকাতার মেসের খরচা থেকে বারো টাকা পাঠানো কঠিন, কিন্তু বারো টাকা না হলেই নয়, বাচ্চা হওয়ার জন্য ওই টাকা অতি প্রয়োজনীয়, চিঠির ভাষা রঙের মতো বদলে যায়, ভালোবাসা যেন আরো প্রগাঢ় হয়ে ধরা পড়ে, প্রমথ তবুও নিশ্চুপ থাকে, তার যেন কিছুই করার নেই, দরিদ্রতা এভাবেই মানুষকে কর্তব্যজ্ঞান থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তারপর এক পূর্ণিমার দিন টেলিগ্রাম এলো, শেফালীর মেয়ে হয়েছে মেয়ে, কিন্তু শেফালী চলে গেছে, গল্পে যে মস্ত একটা ধাক্কা, তা হলো দারিদ্র্যে আশাহীন জীবনের জীবন। মানুষ বুঝি এভাবেই হেরে যায়, হারতে-হারতে জীবন হয় ধোঁয়ার ধূসর পা-ুলিপি।
সম্বোধনহীন চিঠির আকারে লেখা গল্প ‘সঙ্গ নিঃসঙ্গ’, চিঠি এবং ডায়েরির মতো ভঙ্গি, কখনো মনে হবে কতোগুলো চিঠি পরপর সাজানো, ‘মা হবার কোনো সাধ’ গল্পের মতোই একই আঙ্গিকে নির্মিত রচনা, ঘটনাপ্রবাহে আছে অনেক কবিত্বময়তা, আছে বিরহকাতর উপমা, অনেকটা কবিতার মতো করেই বলা, তবে গল্পের বা চিঠির বিষয় ভিন্ন, পত্রলেখক একজন হতভাগ্য পুরুষ, যার জীবনে অনেক শখ ছিলো, বউ তার পা টিপে দেবে, পাখা দিয়ে বাতাস করবে, কিন্তু বাস্তব বড়ই কঠিন, তিন বছরের বিবাহিত জীবন, অথচ স্ত্রী অনুপমা বাপের বাড়ি, বিয়ের পর কয়েক মাস স্বামীর কাছে ছিলো, আজ বাড়ি অন্ধকার, মা কাশী গিয়েছে বিধবা বোন চারুকে নিয়ে, বাপ আর গল্পকথক ছেলে দুই বিঘের উপর বাড়িতে থাকে, বাড়ি-ঘরের প্রাচীনতম অবস্থা, দেখাশোনার কোনো মেয়েমানুষ নাই, তাই চারদিকে জঙ্গল, শিয়ালের চিৎকার, লক্ষ্মীপেঁচা-জোনাকি তো আছেই, ইঁদুর-ছুঁচা-সাপও বাড়ির আনাচে-কানাচে বাসা বেঁধেছে, তেলাপোকা-চামচিকেয় ভরা বাড়ি, কাজের মানুষ হিমাংশুর মা রান্না করে দেয় বটে, তা মুখে দেওয়া না গেলেও খেতে হয় বাধ্য হয়ে, এসব কথা ইনিয়ে-বিনিয়ে পত্রের মাধ্যমে জানায়, পত্রের ভাষায় স্বভাবতই প্রত্যাশিত রোমান্টিক বা অনন্ত বিকাশিত প্রেমের রূপায়ণ দৃষ্টি কাড়ে, অথচ প্রত্যাশা কখনো পূরণ হয় না, দীর্ঘশ্বাসের একটা কু-ুলী হয়ে সঞ্চিত হয়, অনুপমা পিতাগৃহে গেছে তিন বছর, স্বামী বেচারির কোনো খোঁজ-খবর নেয় না, সে নিজের ভেতর নিজে মৃতপ্রায়, একটা জিজ্ঞাসা এবং হতাশা সর্বসময় কাজ করে, জীবনানন্দের অন্যান্য গল্পের মতোই হতাশা-বিচ্ছেদ মৃত্যু-কষ্ট দুঃখ-দৈন্যতা ‘সঙ্গ নিঃসঙ্গ’ গল্পেও ফুটে উঠেছে।
‘কুষ্ঠের স্ত্রী’ গল্পের প্রধান চরিত্র সুশোভন, যার মুখপোড়া দাগ দেখে লোকে কুষ্ঠের দাগ বলে এবং বিয়েও হতে চায় না, অনেক ভালো-সুন্দরী পাত্রী হাতছাড়া হয়, কন্যাপক্ষকে যতোই বোঝানো যায় কিন্তু তারা গঙ্গাযাত্রীর কাছে মেয়ে বিসর্জন দেবে না। অবশেষে বাপ-মা নেই, এমন একটা এতিম মেয়ে অতসীকে পাওয়া গেলো, যে বুড়ো মামার ঘাড়ে আছে, যথারীতি বিয়ে হলেও অতসী প্রথমে চন্দনের ফোঁটা মনে করে কিছু না বুঝলেও পরে শিউরে ওঠে, ভয়ে দূরে সরে যায় এবং সে একসময় বলে যেহেতু তুমি আমার মামাকে ঠকিয়েছো, আমাকে ঠকিয়েছো, তোমার বিষয়-সম্পত্তি আমাকে সব লিখে দেবে, নয়তো মামার সঙ্গে চিরকালের মতো চলে যাবো। পরবর্তী সময়ে সুশোভন দেখে, অতসীর দাঁতের দু’পাটি ক্ষয় ধরেছে, মুখের ভেতরটা পায়খানার গহ্বরের মতো গভীর বিকৃত ছোট-বড় এবড়ো-থেবড়ো খাদ। স্নানের পর মনে হলো যতোটা সুন্দরী ভেবেছিলো প্রকৃতপক্ষে তা সম্পূর্ণ ভুল, হয়তো চোখের ভুল, মানুষ কি এভাবেই নেশায় পড়ে ভালোমন্দ বিচার না করে অন্ধকারে হারিয়ে যায়। গল্পটি একটা দোলাচলের নবদাম্পত্যজীবন কাহিনী, নবজীবনের স্বাদের পূর্বেই একটা ভাঙাগড়া একটা অমীমাংসিত কুহুকের হাতছানি।
‘অশ্বত্থের ডালে’ গল্পে একজন প্রধান চরিত্র নির্মল, যার আর্থিক দৈন্যতা ঘুরেফিরে ফুটে উঠেছে, ওর বাবা-মা আছে, বোনও আছে, একটি মেয়ে এবং মেয়ের মা অর্থাৎ বউও আছে, কিন্তু তারপরও নির্মল সেখানে নেই, দারিদ্র্যের পোড়াকাষ্ঠে প্রতিনিয়ত জর্জরিত, জীবনে শখ-সাধ বলতে বই পড়া, অথচ তাও জোটে না, কলিকাতা থেকে নতুন-নতুন বই কিনে আনার সাধ্য নেই, আর তাই পুরোনো পত্রিকা পড়ে নিজেকে ভুলে থাকতে হয়, পাড়াগাঁর রাত্রি কাটে না, ঘুমও আসে না, পেঁচা-বাদুড়ের ডাক শোনে, জ্যোৎস্নার ভেতর খড়ের মাঠের খেঁকশিয়ালের দৌড় দেখে, জীবনটাকে ছোট নদী ভাবে, আবার নিজেকে গুটিয়ে নেয়, একদিন রাত্রের অন্ধকারে মজুমদারের উঠোনের দিকে যায়, সেখানে বংশলোচন নামের একজন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, সে কি ভূত নাকি মজুমদারের আত্মা, কিন্তু সে জীবনের অনেক গল্প করে, হয়তো ভৌতিক কিংবা রহস্যজনক কিছু হবে, তবে গল্পে যে মানুষের কথা এসেছে, সে তো জীবনের কাছ থেকে পুরোদস্তুর উপেক্ষিত।
‘জামরুলতলা’ গল্পেও সেই আর্থিক সংকট প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে, গ্রাম্যজীবনের রোমান্স হিসেবে জামরুলতলাকে দেখেছেন লেখক, হারানি নামের যে মেয়েটিকে কথক একটু-একটু ভালোবেসেছিলো, হয়তো তা পরিপূর্ণ না-ও হতে পারে, দেখাসাক্ষাৎ হতো কখনো-সখনো, সে হারানি কলিকাতায় বি.এ পড়বে, চাকুরী একটা করবে হয়তো, কিন্তু অবনী কি একটা কাজ করেছে, হারানির বাবার বয়সী অবনীর সঙ্গে বিয়ে, জীর্ণ অসুস্থ মানুষ কিনা সুন্দরী-সুশ্রী হারানির সাতপাঁকে বাঁধা কথকের মর্মপীড়ার কারণ হয়, চাকুরিহীন-রোজগারহীন কথক তাই শুধু নির্বাক দর্শক, তার বুকের ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই সমাজের কাছে, হারানিকে নিয়ে কিছু স্মৃতি আছে পোড়া দাগের মতো, জামরুলতলায় রোজ দুপুরবেলায় আসতো কিশোরী মেয়েটি, কথক টেবিলের ওপর কলম রেখে চুপচাপ দেখতো, সে দেখার মধ্যে অন্যরকম একটা নির্মল আনন্দ বা আকর্ষণ ছিলো, জীবনানন্দের গল্প ভিন্নধর্মী মেজাজ-স্বর এবং জীবনতৃষ্ণায় লালিত, জীবনের অনেক গভীরে তার গল্পের শেকড়, গল্পটি উত্তমপুরুষে লেখা, আশিরনখ যে কবি এবং গল্প লেখে, কখনো অন্তরের তাগিদে আবার কখনো বা গল্পকার হওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষায়, কথক বলে যায়, তার কথা একটানা নয়, কিছু অবিন্যস্ত-অসংলগ্ন এবং খাপছাড়া। ভাষায় যতোই বুনোট থাকুক না কেন, কাব্যিকতাকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠলেও গল্প যেন ভাসা-ভাসা রয়ে যায়, জীবনানন্দের সেই এলোমেলো জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যার ফলে জামরুলতলা গল্পে গল্পকথক বলেছে, অনেক বাংলা গল্প অনেক জায়গায় তো পড়েছি, গল্পটা আমার সে সমস্ত গল্পের কোনো একটার মতো হবে নাকি? যে দ্বিধা নিয়ে তার পথ চলা তা যেন আরো স্পষ্ট হয়েছে। গল্পে অভিনতুন আঙ্গিক, কাহিনী উপস্থাপনের স্বতন্ত্রভঙ্গি গ্রামীণ পটভূমি, বিষয় ও ভাষাশৈলী আপাদমস্তক স্বাতন্ত্র্য, স্বতঃস্ফূর্ত তার বর্ণনাবিন্যাস, প্রয়োজনীয় ডিটেলস্ বা প্রতিবেশ বর্ণনায় জীবনানন্দ সার্থক।
‘রক্তমাংসহীন’ মনস্তাত্ত্বিক গল্প, এ গল্পে নির্মম সত্য হলো, দারিদ্র্য স্বামী মানুষটি বড় সহজ-সরল, নিজেকে গুছিয়ে রাখার মতো ক্ষমতাও নেই, দীর্ঘদিন পর স্ত্রী ঊষা বাপের বাড়ি যাবে, কিন্তু যাবে-যাবে করেও ইচ্ছে করেই যায়নি, এদিকে তিন বছর বিয়ে হওয়া, দারিদ্র্যের মধ্যে বাস, কিন্তু বাপের বাড়ি যাবে, সেখানেও বাপ-মা নেই, ভাই-বোন আছে, হয়তো সে কারণে বাপের বাড়ি যাওয়ার কোনো উৎসাহ নেই, স্বামী বেচারী বারংবার ঊষাকে সাবধান করে, স্টিমারে যেন ঠান্ডা না লাগে, বুঝে-শুনে যেতে, তার সঙ্গী আছে যদিও হিমাংশু, ঊষারই ভাই, নিঃসন্তান এক নারীর কষ্ট বেশ ফুটে উঠেছে গল্পে, তার যদি একটা বাচ্চা থাকতো, স্টিমারে স্পিরিট স্টোভ জ্বালিয়ে দুধ গরম করে খাওয়াতে হতো, গম্ভীর হয়ে ঊষা বলে, ছেলেপিলের সুখ আর পেলাম না, আমাদের দুজনের মাঝখানে এই শূন্যতাটা রয়ে গেলো। তারপর স্বামী বেচারী অজ্ঞাতসারেই কিন্তু অনিবার্যভাবেই ঊষাকে তার বাপের বাড়ি ভাই-বোনদের কাছে যেতে দেয়, যেন কয়েকদিন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে স্বামী, একটু নিরিবিলি একটু নিজের মতো করে থাকা যাকে বলে, যখন বলে, যাও কিছুদিন গিয়ে থাকো, অনেকদিন তো বাপের বাড়ি যাওনি…ঊষা ক্ষেপে যায়, তাই বুঝি তোমার চক্ষুশূল হয়েছি। স্ত্রী যেন কোনোভাবেই স্বামী ছেড়ে যেতে চায় না, দুঃখ-দারিদ্র্যের মধ্যে থাকতে-থাকতে স্ত্রী ঊষাও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে, সেখান থেকে দূরে যেতে তার মন সায় দেয় না, তারপরও যেতে হয় তাকে, যায় সে। এভাবে কয়েকদিন কেটে যায়, অজ্ঞাত অন্ধকারে হাত তার নিজের নিয়মে চলে, দিন দশেক পরে খবর এলো, ঊষার মৃত্যু! সন্ধ্যার সময় কলেরা…শেষ রাতে চলে গেছে, কলেরায় এ-রকম প্রায়ই হয়ে থাকে। মৃত্যু কি ভয়াবহ, তার কাছে ভালোবাসা বা দারিদ্র্য অথবা সন্তানহীনের কষ্টের কোনো দাম নেই, সে যেন ভয়ংকর একটা দানব, সমস্ত পৃথিবী অন্ধকার করে সে চলে যায়, তার কোনো হাত নেই, সবই নিয়তি!
‘শাড়ি’ গল্পে এক দারিদ্র্যনিমজ্জিত দম্পতি এখানে মুখ্য হয়ে উঠেছে, দরিদ্রতা যে একটা অভিশাপ তার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। স্বামী রণজিৎ অনেক কষ্ট এবং যন্ত্রণা সহ্য করতে পারলেও স্ত্রী ঊষা বুঝেও বুঝতে চায় না, কিংবা কখনো-সখনো ভুলেই যায় যে তারা কতোটা বাস্তবতার মুখোমুখি, জীবনানন্দ হয়তো এভাবেই জীবনকে দেখেছেন, নানান রঙে নানান ভাবনায়, শাড়ি গল্পটিকে প্রতীকধর্মী বললেই হয়তো বেশ ইঙ্গিতবাহী হয়, ঊষার নিকটাত্মীয় রমেন বেড়াতে আসতে চায় কয়েক দিনের জন্য তাদের কাছে কিন্তু রণজিৎ সোজাসাপটা জবাব, নিষেধ করে দাও, নইলে পূর্বের মতো অপমান সহ্য করতে হবে মনে রেখো, মানুষ কতোখানি অসহায় হলে এমন কথা বলতে পারে, শেষাবধি দেখা যায় চিঠি কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলে ঘরে খিড়কি দিয়ে ফুপিয়ে-ফুপিয়ে কাঁদে ঊষা, হয়তো এছাড়া তার কি বা করার আছে! অথচ যখন দরজায় ফেরিওয়ালা বিশ্বেশ্বর কাপড়ের গাঁটরি নামায় এবং হাঁকে, বউমা কোথায়, নতুন ফ্যাশনের কাপড় এনেছি…তারপর সত্যি অবাক লাগে, কাপড় দেখার জন্য দুজন কেমন হুমড়ি খেয়ে পড়ে, নিজের জন্য কিনতে না পারলেও দেখে বা নেড়েচেড়ে শখ মেটায়, বেনারসী-ভাগলপুরী শাড়ির জন্য মন কেমন ছটফট করে, কিন্তু কেনার সমর্থ্য নেই, গাঁটরির প্রতি লোলুপতায় ঊষার মন কেমন করলেও চোখ দুটো ছানাবড়া হয়, তারপরও দেখার যে বিলাস তা থেকে তারা সরতে রাজি নয়, একটা আকাক্সক্ষা মরে গেলেও অবশিষ্ট পড়ে থাকে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে, উভয়ের মধ্যে যে কিছুক্ষণ আগে একতরফা ঝগড়া হয়ে গেছে, তা যেন তাদের কারো স্মরণে নেই, তারা যে শাড়ির নেশায় মগ্ন, সেই মগ্নতার ভেতর দিয়ে মানুষ বাঁচে এবং হাসে অথবা ভালোবেসে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। গল্পের পটভূমি নিম্ন মধ্যবিত্ত একটা পরিবারকে কেন্দ্র করে, আবহ বেশ রহস্যময়তা সৃষ্টি করেছে, অনুভূতি সর্বদা কাজ করে, একটা দেয়াল ঘিরে আছে, সে দেয়াল ভাঙতে হবে। সে দেয়াল ভাঙনের ফলেই প্রত্যাশিত সেই সমাজ আসবে। বেঁচে থাকার জন্য সমাজতন্ত্রের চেতনা জাগ্রত আবশ্যক, সমাজকে যে অন্যভাবে দেখতে চায়, গাল্পিক জীবনযাপনের জন্য রাজনৈতিক আবহ-কালচেতনাকে শিল্পের ভাষায় চিত্রায়িত করেছেন, এ গল্পের তার স্বাক্ষর বহমান।
মূলত গ্রামীণ জনপদের ভাঙন-সামাজিক শোষণ, কখনো প্রতিবাদ বা বাঁচার সংগ্রাম, এ সমস্ত বিষয়াদি জীবনানন্দের গল্পজগত। বাংলাসাহিত্যাকাশে কথাশিল্পী জীবনানন্দ দাশ এক অনন্য প্রতিভা বলতেই হয়। তার জীবদ্দশায় গল্পগুলো আলোর মুখ দেখতে পারেনি। গল্পের ভাষা নির্মাণ বাক্যশৈলী ও গল্পের উপস্থাপনায় স্বীকৃত পাওয়া যায়, গ্রামীণ গল্প বাংলাসাহিত্যে প্রাণ, তার গল্পের বিশাল একটা অংশ গ্রামীণ জীবনধারার অস্বীকার করা যায় না।
বাংলাসাহিত্যে ছোটগল্প গ্রামীণ জীবন অতিক্রম করে ক্রমশ শহরমুখী হয়ে উঠছে, তুলনাসূত্রে উল্লেখ করা আবশ্যক, আমাদের ছোটগাল্পিকরা নিম্নবিত্ত বা গ্রামীণ জীবন চিত্রণে যতোখানি সুদক্ষ-স্বচ্ছন্দ-বস্তুনিষ্ঠ অপরদিকে কিন্তু নগরজীবনের মধ্যবিত্ত জীবনযাপন চিত্রণে অতোখানি আগ্রহী বা স্বচ্ছন্দ নয়। জীবনানন্দ দাশের কাব্যে ইউরোপীয় শিল্প মতবাদকে আত্মস্থ করে লোকজ মিথ-রূপকথা-পুরাণ ও ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে যুগগত ভাবকে বাণীরূপ দেন অবলীলায়। বিষয়-বিষয়ী ও ভাবের অন্তরে ফল্গুধারার ন্যায় বাহিত হয় অখ- কালচেতনা। এ কারণেই শ্বাশত সত্যের শানিত শরীর ঠেলে কোনো বিশেষ একটি শিল্প মতবাদ তার কাব্যদেহে কুত্রাপি প্রাধান্য বিস্তার করেছে, ফলত জীবনানন্দ দাশের কালচেতনা-উপস্থাপনার কৌশল হিসেবে গ্রামীণ জীবন থেকে আহরিত উপাদান ব্যবহার তাকে ত্রিশোত্তর বাংলাভাষী বা বাঙালি কবিদের দলভুক্ত না করে অভিষিক্ত করেছে স্বতন্ত্র মর্যাদায়।
মূলধারা সাহিত্যের রকমফের
স্বপ্নগুলো জলের, ঝড়ের, সীমাহীন প্রবঞ্চনা ও অস্বাভাবিকতার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। মানুষের ভেতর অন্য মানুষের উপস্থিতি দেখতে দেখতে তারা মানুষের অংশ হয়ে যায়। মানুষগুলোকে করে তোলে স্বপ্নভূক। এই স্বপ্নভূকেরা চারপাশেই আছে।
যেদিন বোকা হাবা ঘেঁটু জীবনে প্রথম একশো টাকা পায় সেদিন তার জীবনে একটা উল্লম্ফণ ঘটে। নিজ এলাকা থেকে কখনো বেশি দূরে যায় নি যে দরিদ্র যুবা, সংসারের জন্য কিছু জিনিস কিনতে সে পা দেয় পথে। সে হয়তো পথ থেকে নিজের কুটিরেই ফিরে যেতো যদি না আরেক স্বপ্নভূকের সাথে তার দেখা হতো। যদি না তাকে তার মানবিকতা দেখাতে হতো। যদি না প্রবঞ্চকের হাতে পড়ে ফাঁকা পকেটে হেঁটেই রাজধানীতে যাওয়ার ইচ্ছা তার প্রবল হয়ে উঠতো। যদি না রাজধানীতে গিয়ে দৈনিক কতো টাকা আয় করে সে বউকে খুশী করে দিতে পারে তার এ হিসেব অবিরাম তালগোল পাকিয়ে না যেতো।
এগারোটি গল্পের স্বপ্নভূক মানুষদের চালচিত্র এই ঝড়-জলের জীবন ও অন্যান্য গল্প।
ঝড়-জলের জীবন ও অন্যান্য গল্প
ভূমিকা-
আমার ৪টি কবিতার বই বিভিন্ন সময়ে কলকাতা এবং আগরতলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের পাঠক বইগুলো হাতে পাননি বলেই সেখান থেকে ১০০টি কবিতা বাছাই করে এই প্রকাশনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুপ্রাণন প্রকাশনের প্রাণপুরুষ শ্রদ্ধাভাজন আবু এম ইউসুফ ভাইয়ের সহৃদয় সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ।
অনুজপ্রতিম তুহিন ভূঁইয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রূপনগর আবাসিক এলাকা
মিরপুর, ঢাকা।
সরদার ফারুকের ১০০ কবিতা
লেখক পরিচিতি :
শঙ্করী দাস। জন্ম: ৮ই মে, ১৯৫৮ সনে নিজ জেলা জামালপুরে। কবি প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থগুলোÑ গল্প: ‘প্রতিবিম্ব ও অন্যান্য গল্প’ ‘জলমাটির গল্প’ ও ‘রাহুর চন্দ্রগ্রাস’। কবিতাÑ ‘ঘাসবোনা গ্রাম তাঁতবোনা গ্রাম’। স্মৃতিচারণমূলকÑ ‘গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’। গল্পের জন্যে পেয়েছেন পাক্ষিক ঐকতান (বর্ধমান) পত্রিকা পদক। শিশু কবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ও নক্ষত্র সাহিত্য পুরস্কার।
বিহান বেলার ঈশ্বর
বিশ্বাস কথাটা উঠায় সেদিন বন্ধু আমাকে বিশ্বাস নিয়ে মস্ত বড় একটা ক্লাস নিয়ে নিল। আমাকে একজন নিষ্পাপ মানুষের মতো প্রশ্ন করল, বিশ্বাস! বিশ্বাস কী জিনিস তা কি জানো? সে নিজেই তার উত্তর দিল, বিশ্বাস হলো মানুষের মনের রং। আবার এটাকে একটা রংধনু বলতে পারো। দেখ না রংধনুর রং যেমন সাতটা তেমনি বিশ্বাসের রং অনেকটা। কেউ বিশ্বাস করে কেউ অবিশ্বাস করে। আবার কেউ কেউ জীবন মৃত্যুর মাঝখানে বসবাস করার মতো অবস্থায় পড়ে। না পারে বিশ্বাস করতে আবার না পারে অবিশ্বাস করতে। জগতে এই একটা মুহূর্ত খুবই বিভীষিকার। বুঝলে?
শেষ রজনীর চাঁদ
মুঠো জীবনের কেরায়া
শৈশব থেকেই খুব প্রাণচঞ্চল ও প্রাণবন্ত একজন উদার-উদাসী মানুষ; সদা হাস্যোজ্জ্বল এক প্রিয় মুখ। ভাববাদী দর্শনে বিশ্বাসী এই মানুষটির ভিতরে বাস করে এক শিশুহৃদয়। কবি মুহাম্মদ মঈনুল হাসান সরল আত্মমগ্নতার এক বিমুগ্ধ প্রতিচ্ছবি। ঐন্দ্রজালিক শব্দবিন্যাসে জীবন-উপলব্ধির আনন্দ-বেদনা, কোমল অনুভূতি আর ঘন কুয়াশার ছবি এঁকেছেন তাঁর সরল ব্যঞ্জনার কবিতায়। প্রেম ভালোবাসা প্রকৃতি দেশাত্মবোধ ও ঐতিহ্যের সৌন্দর্য অনুধাবনে নস্টালজিক ভাবাবেগে তাড়িত।
স্বভাবজাত কবি তাঁর কবিতায় সহজ-সরল ভাষায় প্রেম ভালোবাসা প্রকৃতি সংসারের বন্দনাগীত গেয়েছেন। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি; যেখানে মেঘালয়ের পাদদেশ ছুঁয়ে ছুটে চলে ঝরনাপ্রবাহে সোমেশ্বরীর জল নিরবধি। এই মানবজীবন পূর্ণতা-অপূর্ণতার এক বহমান নদী। একাকিত্ব-নিঃসঙ্গতা, দুঃখ-কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণা, আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশাকে বন্দি করেছেন তাঁর বুকের নীল পাঁজরে; যা বারবার দোল খেতে থাকে মনের গভীর প্রকোষ্ঠে। কবিতা শ্বাসমূল ছুঁয়ে বেরিয়ে আসা এক তপ্ত বুদবুদ; এই বুদবুদের সম্মিলিত শক্তিই আজকের ‘দ্বীপ জ্বলে কুয়াশায়’। শব্দযানে চড়ে অলীক ভেলায় ভেসে বেড়ানোর ভালোলাগা থেকেই অনুপ্রাণন প্রকাশনের হাত ধরে প্রকাশিত হচ্ছে এই কবিতাগ্রন্থ।
কবিতায় প্রকাশিত হয় আমাদের চিত্তলোকের লুকায়িত চিন্তা-ভাবনা, জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও ভাবের কথামালা, অন্তর্লোকে উজ্জ¦ল হতে থাকে শব্দের কল্পচিত্র; মনের গহীনে অঙ্কিত হতে থাকে প্রিয় বর্ণমালার মানচিত্র। কবিতায়-কবিতায় আলাদা সুর, ঢেউ ও ঝঙ্কার তুলে। সারা পৃথিবীতে কবিতার তীর্থস্থান আমাদের এই সোনার বাংলা। এরই ধারাবাহিকতায় কবি মুহাম্মদ মঈনুল হাসান ধীরে-ধীরে হয়ে উঠবেন বাংলা কবিতার উত্তরাধিকার। কবি’র জন্য রইলো আমার আন্তরিক অভিনন্দন, শুভকামনা ও ভালোবাসা।
কবি মাহবুব মিত্র
১৬ অক্টোবর ২০১৯, মিরপুর, ঢাকা।
দ্বীপ জ্বলে কুয়াশায়
রোবট শিশুর পিতা-মাতা
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.