Description
প্রজ্ঞা মৌসুমী। জন্ম এক শরতে কুমিল্লায়, বেড়ে উঠা সুনামগঞ্জে। তারপর ঊনিশ বছর বয়সে মায়ের সাথে প্রবাসে চলে আসা। এইসব টানাপোড়েনে লেখা ছিল সেতুর মতোন- বেঁধে চলি, অতিক্রম করি।
$ 2.12 $ 2.82
জীবনানন্দ জেনেছিলেন পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ আবিষ্কারের ঘোর। কখনো কখনো সাদা কাগজকে মনে হয় পশ্চিমের মেঘ, যেখানে দেখেছি ঘোরমাখা এইসব গল্পের মুখ।
প্রজ্ঞা মৌসুমী। জন্ম এক শরতে কুমিল্লায়, বেড়ে উঠা সুনামগঞ্জে। তারপর ঊনিশ বছর বয়সে মায়ের সাথে প্রবাসে চলে আসা। এইসব টানাপোড়েনে লেখা ছিল সেতুর মতোন- বেঁধে চলি, অতিক্রম করি।
Weight | 0.265 kg |
---|---|
Published Year |
লেখকের কথা
প্রতিটি মানুষের জীবনেই রয়েছে অজস্র গল্প। গল্প ছাড়া মানুষের জীবন হতেই পারে না! আর সেইসব গল্প বাস্তবতার- আদৌ কল্পনার নয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের নানা রকম সম্পর্ক গড়ে ওঠে শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। গল্পগুলো সেই সম্পর্কজাত। যা জীবদ্দশায় ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। যারা লিখতে পারেন তারা চেষ্টা করেন সেইসব জীবনস্মৃতির গল্পগুলোকে জনসম্মুখে তুলে ধরতে লেখনীর মাধ্যমে। আর যারা লেখায় অভ্যস্ত নন, তারা নিভৃতে মনের ভেতরে সেসব লালন করেন এবং সময়-সুযোগ পেলে অন্যকে বলেন। অনেক লেখক আছেন যারা বিভিন্ন সময় নানা চরিত্রের মানুষের কাছ থেকে তাদের জীবনে অর্জিত অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতার গল্প, দুঃখ-বেদনার গল্প, হাসি-খুশির ঘটনা, বিয়োগান্তক কাহিনী ইত্যাদি শুনে উপন্যাস বা গল্পে রূপ দেন।
সাধারণ মানুষ বলি আর বিশিষ্টজন বলি; লেখক বলি আর শিল্পী বলি- তাদের জীবনের গল্পগুলো সাধারণ গল্প নয় বলেই গণমাধ্যমে বা পাঠ্যপুস্তকে সেগুলো প্রকাশিত হয়ে থাকে। শিক্ষামূলক গল্পের যেমন শেষ নেই তেমনি প্রেম-ভালোবাসা, ব্যর্থতা, আশা-নিরাশা, বিচ্ছেদ, লড়াইমুখর গল্পেরও সীমা-পরিসীমা নেই। সেসব জীবনস্মৃতির গল্প পড়ে আমরা বিচিত্র চরিত্র, চিন্তা ও মন মানসিকতার মানুষকে চিনতে, জানতে পারি। এর মধ্যে অনেক গল্পই আছে সাহিত্যরসে টইটুম্বুর- রোমান্টিক, ভাবনার উদ্রেককারী এবং শিক্ষামূলক।
গল্প সাধারণত দুধরনের বলা যায়, এক হচ্ছে, বানানো গল্প বা কল্পলোকের গল্প। দুই হচ্ছে, জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বাস্তব গল্প। বানানো গল্পগুলোর চেয়ে জীবনস্মৃতির গল্পগুলো বেশি নাড়া দেয় মানুষ তথা পাঠককে। কারণ সেইসব গল্প অনেক মানুষের জীবনের গল্প। বানানো গল্প যেভাবে সুন্দর ভাষা ও অলঙ্কারে আদর্শ চিত্রকলার মতো করে প্রকাশ করা হয়, জীবনস্মৃতির বাস্তব গল্পগুলো সেই রঙে আঁকা সম্ভব হয় না। এতে করে গল্পের প্রাণ হারিয়ে যায়, সংবেদনশীলতা শীতল হয়ে পড়ে। হারিয়ে যায় আকর্ষণও। বানানো গল্প মনে থাকে না, যদি না তাতে বাস্তবতার নোনাজলের ধারা প্রবাহবান থাকে।
মানুষ হিসেবে আমিও ব্যতিক্রম নই। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমার এই ষাট ছুঁইছুঁই বয়সে বহু ঘটনার সঙ্গে বেড়ে উঠেছি, অর্জিত হয়েছে বিস্তর অভিজ্ঞতা। কত চরিত্রের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটেছে তার হিসেব নেই। সেইসব ঘটনা অমূল্য স্মৃতি এবং অকাট্য সম্পর্ক। এই সম্পর্ক এতই অম্ল-মধুর যে, পড়ন্ত বেলায় এসে যতই ভাবি ততই নিজেকে ফিরে ফিরে দেখার সাধ জাগে, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে যুগপৎ আনন্দিত এবং বিষণ হই। জীবনস্মৃতির সেইসব অজানা গল্পগুলোই পড়ে অনেকে নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নেন। যুগ যুগ ধরে এটাই সাহিত্যে চলে আসছে। এভাবে কালজয়ী, রসোত্তীর্ণ গল্পও আমরা অনেক পেয়েছি। ভবিষ্যতেও পাব।
জীবনস্মৃতির এই গল্পগুলো ‘সম্পর্ক’ শিরোনামে একটি গল্পসংকলনে পত্রস্থ করে স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা ‘অনুপ্রাণন প্রকাশন’ ঢাকা প্রকাশ করে আমাকে চিরঋণী করেছেন। আশা করি গল্পগুলো পাঠককে গভীরভাবে নাড়া দেবে।
‘অনুপ্রাণন’কে জানাই অন্তঃস্থল থেকে অজস্র ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
প্রবীর বিকাশ সরকার, টোকিও.জাপান, ৭, অক্টোবর, ২০১৭
জীবনস্মৃতির গল্প সম্পর্ক
সোলায়মান সুমন। জন্ম ১মে ১৯৭৯, চাঁপাই নবাবগঞ্জ। তরুণ বয়সে লেখালেখি শুরু। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস। পেশায় শিক্ষক। ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন এর সম্পাদনা পরিষদের সদস্য।
ভগ্ন সময়ের কোলাজ
অনিন্দ্য আসিফ। জন্ম- ২৩ মে, ১৯৮১। কতিয়াচর, কিশোরগঞ্জ। পিতা- মোঃ আব্দুল হাই, মা- হাওয়া আক্তার।
শাদা অথবা শূন্য
আবু সাঈদ আহমেদের জন্ম ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নের সময়েই জনপ্রিয় সাপ্তাহিক সন্দ্বীপে প্রতিবেদন লেখার মাধ্যমে লেখক জীবনে প্রবেশ। কলেজ জীবন হতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছেন। কিন্তু লেখাকে কখনোই গুরুত্বের সাথে নেন নাই। তিনিই বাংলা ব্লগের অন্যতম জনপ্রিয় ব্লগার ‘হরবোলা’। অনলাইনে নির্মোহ রাজনৈতিক প্রবন্ধ, তীক্ষ্ম স্যাটায়ার, কবিতা আর অণুগল্প তাকে এনে দিয়েছে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা। আমমানুষের পক্ষের একজন লেখক ও এক্টিভিস্ট হিসেবে একাধিকবার শারীরিক হামলার স্বীকার হয়েছেন, কিন্তু নীরব হন নাই।
লংকা কিন্তু জ্বলছে না
সোলায়মান সুমনÑ জন্ম ১মে ১৯৭৯, চাঁপাই নবাবগঞ্জ। তরুণ বয়সে লেখালেখি শুরু। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস। পেশায় শিক্ষক। ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন প্রকাশনের সাথে যুক্ত।
ছায়াগুলো জেগে থাকে
মঞ্জু সরকার, বাংলাদেশের অন্যতম কথা সাহিত্যিক। জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩, রংপুর। ছোটগল্প উপন্যাস ও শিশু-কিশোর গ্রন্থ মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ অর্ধশতাধিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ মৃত্যুবাণ, উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা, যৌথ একাকিত্ব, তমস, নগ্ন আগন্তুক, ছোট্ট এক বীরপুরুষ ইত্যাদি। বাংলা একাডেমি, ফিলিপস, ব্যাংক সাহিত্যসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।
রূপান্তরের গল্পগাথা
সুলতানা শাহরিয়া পিউ, জন্ম ২ অক্টোবর। লেখালেখি, আবৃত্তি ও সংগীত চর্চা করেন। অনুপ্রাণন সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। শিক্ষকতা করেন। তার প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থ- মেঘের সাথে কথা (কাব্যগ্রন্থ), ইংরেজী কাব্যগ্রন্থ ‘ট্রান্সকুইল সেরেনেইড এর অনুবাদ ‘নিমগ্র জলধারা’। বাংলা গীতিকবিতার অনুবাদ ‘অচিন’ দঁহশহড়হি’.
এ্যালবাম- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেলপ্রাপ্ত ংড়হম ড়ভভবৎরহমং থেকে আবৃত্তি ‘ভয়েজ টু দ্যা ইটারনাল হোম’ পঞ্চকবির গানের সমবেত কণ্ঠে ‘পঞ্চপ্রভা’।
মেঘের দেশে ফিরে যাবার গল্প
হাসান অরিন্দম। বাংলাদেশের একজন প্রাবন্ধিক ও গল্পকাররূপে পরিচিত। কথাসাহিত্যই তার সৃষ্টি ও আগ্রহের প্রধান ক্ষেত্র। জন্ম ২৭ এপ্রিল ১৯৭২। শিক্ষাজীবনÑ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাংলার লোকজীবন ও আবু ইসহাকের কথাসাহিত্য বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশায় অধ্যাপক। ‘একজন মানুষের সম্ভাবনা’, ‘বিদ্যাছায়াবিদ্যা ও অন্যান্য গল্প’, ‘দুরবিনে দেখা কতিপয় দৃশ্য’সহ আরো অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।
আমাদের দৃষ্টিসীমায় কোন বাতিঘর ছিলো না
ভাস্কর চৌধুরী মূলত গল্প ও উপন্যাস লেখক। কবি হিসেবেও তার সমান খ্যাতি। লেখার মূল বিষয়বস্তু বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি ও মানুষ। জন্ম- চাঁপাইনবাবগঞ্জ। শিক্ষাজীবন কেটেছে রাজশাহী শহরে। কর্মজীবনে চলে আসেন ঢাকায়। আশির দশক থেকে তার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। মাঝে দশ বছর দীর্ঘবিরতির পর আবার লেখালেখিতে ফিসে আসেন। রক্তপাতের ব্যাকরণ তার প্রথম গল্পগ্রন্থ। এ পর্যন্ত বিশটিরও অধিক বই লিখেছেন। এর মধ্যে উপন্যাস ধনসা মাতি ও তার জীবনবৃক্ষ, গল্পÑ কৃষ্ণপুরাণ, গন্তব্যহীন যাত্রা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
গল্পের বনসাই
হাসান মাহবুব। জন্ম ১৯৮১ সালের ৭ নভেম্বর, ঢাকায়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় তিনি বুঝেছিলেন এ জায়গা তার জন্য নয়। চলে আসেন
আনন্দভ্রম
আমি কী আর জন্মেছিলাম মানুষ হিশেবে?
জন্মেছিল আবু তাহের, এই লোকটা কে?
মুখ চিনি না তবু মুখের আদল ধরে হাঁটি
শরীর খুলে বাইরে এসে ছায়ায় পরিপাটি।
আমি হয়তো ছায়ার মানুষ, শরীর আরেকজন
তার শরীরেই আড়াল হয়ে বাঁচার আয়োজন।
কার সে জীবন আমার কাঁধে, আমি-ই যে হায় কার
একই সাথে খাচ্ছি-দাচ্ছি ঘুমোচ্ছি আবার।
আমার যে, সে কোথায় থাকে? কোথায় বাড়িঘর?
তার সাথে কী বদলেছে এই আমার টিনের ঘর?
গোধূলির জাদুকর
মাহতাব হোসেনের জন্ম ১৯৮৮ সালের ৮ জানুয়ারি। দিনাজপুর জেলার রেলওয়ে শহর পার্বতীপুরে। বর্তমানে দৈনিক কালের কণ্ঠে সাব এডিটর হিসেবে কর্মরত। শৈশবে ছড়া লিখে সাহিত্যের পথে পা বাড়ান। তনিমার সুইসাইড নোট তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
তনিমার সুইসাইড নোট
ধুন-জলে জেগেছি নোঙর
শিমুল মাহমুদ তথাকথিত প-িতগণের একাডেমিক ট্র্যাশ থেকে ঘোষণা দিয়েই দূরে সরিয়ে রেখেছেন নিজেকে; সেইসাথে অস্বীকার করেছেন যাবতীয় লিয়াজোবাদি পুরস্কার ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক পিঠ-চাপড়ানো অসভ্যতা। কবিতার সাথে তাঁর সখ্য স্বৈরশাসনের দুঃসহকাল গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে। সমান্তরালে কথাসাহিত্যে রেখেছেন নির্মোহ ছাপ; সেইসাথে সক্ষম হয়েছেন নিজেকে একজন সিদ্ধহস্ত সমালোচক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। সহজাত বৈশিষ্ট্যে শিমুল মাহমুদের গদ্যমাত্রই হয়ে ওঠে মুক্তকণ্ঠ ও মুক্তচিন্তার বাহন; যা অবশ্যই সিরিয়াস পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত।
শিমুল মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পাঠ গ্রহণ শেষে ইউজিসি-র স্কলার হিসেবে পৌরাণিক বিষয়াদির ওপর গবেষণা করে অর্জন করেছেন ডক্টরেট ডিগ্রি। বর্তমানে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, চেয়ারপারসন ও কলা অনুষদের ডিন-এর দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যের কাগজ ‘কারুজ’। লেখকের জন্ম : ১৯৬৭ সালের ৩ মে
প্রকাশিত গ্রন্থ: ২৫টি
কাব্যকথা কাকবিদ্যা
সম্পাদকীয়, অনুপ্রাণন—নবম বর্ষ প্রথম সংখ্যা
ফেব্রুয়ারি যখন আসে তখনই আমরা আমাদের ভাষা তথা, বাঙলা ভাষা ব্যবহারের পরিধি, মান, চর্চা এবং গবেষণার ক্ষেত্র ঘিরে অপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি; কিন্তু ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনার পর এবং বিশেষ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৮ বছর পর আজও আমরা সারা বছর বাঙলা ভাষার সমৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য কোনো পদ্ধতিগত ও সদা চলমান কোনো কর্মসূচি প্রণয়ন করতে সক্ষম হইনি। এই অক্ষমতার কারণ আমার জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের মাঝেই বিদ্যমান।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তিনটি ভাগে বিভক্ত–বাংলা মাধ্যম, আরবি/ফারসি মাধ্যম এবং ইংরেজি মাধ্যম। ইংরেজি অথবা আরবি/ফারসি মাধ্যমে যারা পড়াশোনা করে একটি বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে সীমিত কয়েক শ্রেণি পর্যন্ত বাঙলা ভাষা ও বাঙলা ব্যাকরণের সাথে তাদের যৎসামান্য পরিচয় ঘটে। কিন্তু সেটা দৈনন্দিন জীবনে কথ্যভাষা ছাড়া লিখিত কোনো নথি, রচনা, প্রবন্ধ অথবা প্রতিবেদন লেখার জন্য যথেষ্ট হয়ে ওঠে না। যার ফলে, সরকারি কার্যক্রম চালানোর জন্য নথিতে অথবা আইন ও বিচারব্যবস্থার কাজে ব্যবহৃত যাবতীয় আইন, আদেশ ও রায়ের সকল প্রতিবেদনে অথবা চিকিৎসা ও বিজ্ঞানচর্চার উচ্চতর স্তরে বাঙলা ভাষার ব্যবহার সঙ্কুচিত হওয়া অনেকটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। আর সেটাই হতে আমরা দেখে থাকি।
আইন ও বিচারের নথি প্রস্তুতিতে অথবা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শ্রেণি অথবা মেডিকেল শিক্ষা ও চর্চার কাজে সহজে ব্যবহৃত হতে পারে সেজন্য সহজ ও বোধগম্য শব্দ সংবলিত উপযোগী এবং পূর্ণাঙ্গ পরিভাষা কোষ তৈরি করতে আমরা এখনও সফল হইনি। এই কাজটা কঠিন কিন্তু তাই বলে কাজটা শুরুই কি হলো? আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো কোনো কাজ যদি হয়ে থাকে, সেটাও অত্যন্ত নগণ্য এবং অস¤পূর্ণ। একটা ক্ষুদ্র এবং অসম্পূর্ণ পরিভাষা কোষ দিয়ে কি কোনো একটি গ্রন্থ সম্পূর্ণ অনুবাদ হতে পারে? তাই আমরা আইন, বিচারব্যবস্থা, বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার সকল ক্ষেত্রে এখনো বাঙলা ভাষার প্রচলন করতে পারিনি।
আইন, বিচারব্যবস্থা, চিকিৎসা-বিজ্ঞানসহ সকল বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে শুধু নয়, সাহিত্য ক্ষেত্রেও বিদেশি ভাষা থেকে বাঙলায় অনুবাদ এবং বাঙলা ভাষা থেকে বিদেশি ভাষায় অনুবাদের ক্ষেত্রটিও অবহেলিত রয়ে গেছে। ব্যক্তি উদ্যোগে যৎসামান্য যেটুকু হচ্ছে সেটা বাঙলা সাহিত্যকে বিদেশে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য বিন্দুসম প্রচেষ্টাই বলা যেতে পারে। বাঙলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তোলার জন্যই উভয়বিধ অনুবাদের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি ও প্রসার ঘটানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অথচ এটা আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকরা কতটুকু বোঝেন এটা জানা খুব কষ্ট। অথচ বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে তারা আপসহীন সংগ্রামী। কিন্তু জাতিকে সমৃদ্ধ করে তোলার ক্ষেত্রে ভাষার বহুমাত্রিক বিকাশ যে কতটুকু প্রয়োজনীয় সেটা তারা কী আদৌ বোঝেন?
পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ রয়েছে যাদের মাতৃভাষা বাঙলা। শুধু এই সংখ্যাটার জোরেই আমরা জাতিসংঘে অন্যান্য প্রচলিত ভাষাসমূহের পাশাপাশি বাঙলা ভাষাকেও ব্যবহারের জন্য অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করতে চাই। কিন্তু শুধু সংখ্যার জোরেই কি জাতিসংঘের কাছে এই দাবি গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব? বস্তুতপক্ষে আমরা যদি বাঙলা ভাষাকে বিশ্বের একটি অন্যতম ভাষা হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তাহলে বাঙলা ভাষাকে উচ্চতর জ্ঞান-বিজ্ঞান, আইন ও বিচারব্যবস্থা পরিচালনার জন্য উপযোগী করে তুলতে হবে। যদি আন্তর্জাতিকভাবে বাঙলা ভাষা ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো কোনো প্রতিশব্দের অভাবে বিকল্প হিসেবে বিদেশি ভাষাই ব্যবহার করতে হয় তাহলে কি করে আমরা বাঙলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক অথবা বহুদেশীয় কোনো ফোরামে ব্যবহারে জন্য অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হতে পারি? এই বক্তব্যের সাথে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয় মিলিয়ে ফেলা যাবে না। কেননা, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ, বাঙালির ভাষার জন্য সংগ্রাম ও আত্মদানের প্রতি সম্মান দেখানোর কারণেই সম্ভব হয়েছে। এর সাথে বহুজাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য প্রচলিত অন্যান্য ভাষাসমূহের পাশাপাশি বাঙলা ভাষাকে ব্যবহারের জন্য গ্রহণ করার সম্পর্ক নেই। এটা সফল করে তুলতে চাইলে বাঙলা ভাষার বিকাশ ও সমৃদ্ধি এবং পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিকাশ ও সমৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে।
বক্তব্যটিকে বাঙলা ভাষার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ এবং সমৃদ্ধির প্রশ্নে সীমাবদ্ধ রেখে বলতে চাই যে, প্রয়োজন ছিল পরিভাষা এবং অনুবাদ সাহিত্যের বিকাশ এবং সমৃদ্ধির জন্য একটি স্বতন্ত্র এবং দক্ষ ও মেধাবী সাহিত্যিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় পারদর্শী ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। কিন্তু বেসরকারিভাবে এই কাজটা করা সম্ভব না। এটা করতে হলে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে এবং যার জন্য চাই সরকারের সিদ্ধান্ত। কেন যে সরকার আজ অবধি এডহক-ভিত্তিতে দেশ ও জাতির জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বাঙলা একাডেমিকেই দিয়ে রাখলো সেটা আমার বোধগম্য না।
এদিকে মাদরাসা ও ইংরেজি শিক্ষা থেকে পাস করে বেরিয়ে আসা ছাত্রদের উচ্চতর শিক্ষা এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করার সুযোগ অবারিত করা হয়েছে। এ-কথা জানা সত্ত্বেও যে উচ্চতর শিক্ষায় অথবা চাকরি-জীবনে আগত এসব ছাত্ররা বাঙলা ভাষা ব্যবহার না করে অন্য বিদেশি ভাষা ব্যবহার করার প্রবণতা নিয়ে উচ্চশিক্ষা এবং চাকরিতে ঢোকে। যার ফলে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে অথবা সরকারি প্রশাসন এবং আইন ও বিচারব্যবস্থার উচ্চতর মহলে সার্বিকভাবে বাঙলা ভাষা ব্যবহার প্রচেষ্টায় তাদের আগ্রহী হয়ে উঠতে দেখা যায় না। বরঞ্চ উল্টোটাই ঘটে। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে বিদেশি ভাষা ব্যবহার পরিহার করার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে অনীহার ফলে একপ্রকার বাধা সৃষ্টি করতেও তাদের দেখা যায়।
ভাষার বহুমাত্রিক বিকাশ যদি না ঘটে, তাহলে বদ্ধজলের মতোই ভাষা ও একপ্রকার বন্ধ্যা অবস্থায় পতিত হয়। বিকাশ না ঘটলে যে কোনো অস্তিত্ব সঙ্কুচিত হতে থাকে এবং সঙ্কুচিত হতে হতে একসময় সেই বস্তুর অস্তিত্বই হুমকির মধ্যে পড়ে। কথ্য অথবা লিখিত ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে অস্তিত্বের এই বিনাশ শুরু হয় নানা বাঙলা শব্দ বা প্রতিশব্দের বদলে বিদেশি শব্দের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে যেটা এখন হরহামেশা ঘটছে। নাগরিক কথাবার্তায় অথবা লেখালেখিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলার বদলে আরবি অথবা ইংরেজি শব্দের ব্যবহার এখন আমরা প্রায়শই হতে দেখছি, কিন্তু তবুও আমাদের সাহিত্যিক অথবা বুদ্ধিজীবী মহলে কিংবা নীতিনির্ধারক মহলের টনক নড়তে দেখা যায় না। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই যে এটা প্রকৃত বাঙলা শব্দের অভাবে হচ্ছে, সেটা যে তা নয়। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, এদের মন-মানসিকতায় বাঙালি জাতীয়তাবাদী সচেতনতা ততোটুকু দৃঢ় নয়। এটা কেন হচ্ছে? কেন বহুসংখ্যক নাগরিক বাঙলার বদলে আরবি অথবা ইংরেজি ব্যবহারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন?
জ্ঞান-বিজ্ঞান অথবা প্রযুক্তির উচ্চতর ক্ষেত্রে যখন বাঙলা প্রতিশব্দের অভাব হয়, তখন সম্পূর্ণভাবেই বাঙলা ভাষার বদলে ইংরেজি ব্যবহার যেন অপরিহার্য হয়ে যায়। সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে এই বাঙলায় একসময় আরবি, ফারসি অথবা উর্দু শব্দ সুকৌশলে ব্যবহার করার একটা প্রবণতা কোনো কোনো কবি-সাহিত্যিকের ক্ষেত্রে ঘটেছে, কিন্তু সেটা ছিল পাকিস্তান আমল এবং পাকিস্তানি শাসক মহলকে তোষণ করার জন্যই এটা সচেতনভাবেই করা হতো। কিন্তু এখন কেন আরবি, ফারসি, উর্দু অথবা ইংরেজি শব্দের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। বাঙলা ভাষার বিকাশের ক্ষেত্রে যেহেতু চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে কাজ হচ্ছে না তাই বাঙলা ভাষার অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ছে এবং এর জন্য ত্রিমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা শতভাগ দায়ী। তাহলে আমরা কি করতে পারি? এটা কি বলতে পারি যে, ভাষার জন্য আমাদের সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটেছে?
আমাদের একথা বুঝে নিতে হবে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাঙলা ভাষার অস্তিত্ব সুরক্ষা করা, এর বিকাশ ঘটানো এবং চলমান রাখা এবং সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাঙলা ভাষার সমৃদ্ধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা চলার আন্দোলন ও সংগ্রাম, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের চাইতেও জটিল ও কঠিন। যার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চাই নিয়মানুবর্তিতা ও অধ্যবসায়।
খুব নীরবে হলেও বিশ্বজুড়ে ভাষার ব্যবহার এবং প্রসার নিয়ে চলছে এক তীব্র প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতার পেছনে রয়েছে উন্নত রাজনীতি এবং অর্থনীতির অধিকারী দেশ ও জাতিসমূহের উৎপাদিত পণ্যসমূহের বাজার সম্প্রসারণ করার সম্প্রসারণবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা। যেসব পরিকল্পনাকে তারা কোনো কোনো সময় তাদের নিজ জাতি ও দেশের সুরক্ষা নীতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে প্রচার করে থাকে। এসব পরিকল্পনার বিষয় আমাদের বুঝতে হবে। ভাষা, যা কিনা শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, চিত্র ও চলচ্চিত্রের বাহক সেগুলো তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বব্যাপী এবং স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তাদের তৈরি সাহিত্য, সংগীত ও চলচ্চিত্রের বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত করে চলেছে। আমাদের দেশেই বিদেশিদের বিদেশি ভাষার বই এবং চলচ্চিত্রের যে বাজার রয়েছে, সে তুলনায় আমাদের বাঙলা সাহিত্য অথবা চলচ্চিত্রের বিদেশি বাজার নিতান্তই ক্ষুদ্র। এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমরা যদি আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংগীত ও চলচ্চিত্রের বিদেশি বাজার সৃষ্টি না করতে পারি এবং সেসব বাজার সম্প্রসারিত না করতে পারি, এই প্রতিযোগিতার কোনো ভবিষ্যৎকালে একদিন আমাদের প্রাণপ্রিয় বাঙলা ভাষাই বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে।
সারা বিশ্বে নানা দেশে ছড়িয়ে প্রায় সোয়া কোটি বাঙালি রয়েছে। যাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম ক্রমেই বাঙলা ভাষা ব্যবহারের সীমিত সুযোগ পাওয়াতে বাঙলা ভাষা, সংগীত অথবা চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এইভাবে চলতে থাকলে প্রবাসী বাঙালি সমাজে বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিলোপ ঘটবে এবং তারা মানসিকভাবে স¤পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। প্রবাসী বাঙালিদের ব্যক্তি উদ্যোগে গুটিকয়েক বাঙলা ভাষা শিক্ষা স্কুল এবং সংগীত বিদ্যালয় আছে, যা কি-না প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমাদের বিদেশি দূতাবাসগুলো এই ব্যাপারটাই নজর দেয়ার একটা বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে এবং বিদেশে বিশেষ করে যে সকল শহরে অধিক সংখ্যায় প্রবাসী পরিবার রয়েছে সেখানে বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র এবং পাশাপাশি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। যেসব লাইব্রেরিতে বাঙলা ভাষায় রচিত অথবা বাঙলা ভাষায় অনূদিত সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প ও কলাবিভাগের গ্রন্থসমূহ এবং বাঙলা চলচ্চিত্রের একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডার থাকতে পারে। পাশাপাশি বাঙলা ভাষা ও সংগীত শিক্ষার জন্য স্কুল থাকতে পারে।
আমাদের দেশে যদি ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইউএস, রুশ অথবা ফ্রেঞ্চ কালচারাল সেন্টার থাকতে পারে, তবে প্রবাসে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে আমরা কেন ‘বাঙলা শিল্প-সাহিত্য কেন্দ্র’ নাম দিয়ে বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরে বাঙলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে তাদের পরিচিতি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারি না? এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের জাতীয় বাজেটে এই কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখার কথা ভাবি না?
নবম বর্ষ প্রথম সংখ্যা
প্রজ্ঞা প্রসঙ্গে :
বাক্-ফসলের মতো জন্ম হয় আমি ও অ্যান্টি-আমি’র। নিজেকে ঘিরে এই অপব্যয়িত ঘুরে দেখা, এরপর বহিরঙ্গে ঘূর্ণন, এই নিয়েই কবিতার কাজ। কখনও কখনও মনে হয়, জেনবাদের Abstruseness হলো, কবিতা।
ভেদ আছে, সংযোগ আছে; আছে Zero Thinking- প্রকৃতই যা না, তাই যদি কবিতা হতো, তবে ঈশ্বর এবং কবিতায় পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যেতো না। আমি সেই খুঁজে ফেরার দিকে এক খণ্ড গোলাপযান।
গোলাপ ও আফিমের প্রজ্ঞা
রাহমান ওয়াহিদ। মূলত কবি। পাড়ি দিয়ে এসেছেন তিনি দীর্ঘ এক রোদমেঘবৃষ্টির জীবন। মধ্যবিত্তের সেই জীবনে ঘটে যাওয়া নানান ধরনের গল্প নিয়ে সাজিয়েছেন এই ‘বিহঙ্গ সময়ের অ্যালবাম।’ কিছু গল্পের দিকে নজর দেয়া যাক।
ঢাকায় চাকরি করতে করতে বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজেছেন লেখক। ফোনে আলাপে ভালোলাগা এক অসুন্দর মেয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর দমে যান তিনি। ফোনে মেয়েটি কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলতে থাকে: আমার চেহারা নেই। রূপ নেই। তাতে কী? মন তো মিলেছে বন্ধু। অনেক ভালোবাসবো আমি তোমাকে। সমুদ্রকেও হার মানাবে সে ভালোবাসা।’ আর ফোনের ওপাশে? মধ্যবিত্তের সস্তা হিসেব নিকেশ। পারলেন না লেখক তার কান্নায় সাড়া দিতে। নিজেকে সান্তনা দিলেন এভাবেঃ সমুদ্র মধ্যবিত্তের ঘরে আসে না।
গ্রামের মহিলাদের দৃষ্টিভঙ্গির স্ববিরোধীতাও তার দৃষ্টি এড়ায় নি। একবার তিনি এক গ্রামের পুকুর পাড়ের দিকে যেতে যেতে বলছেনঃ পুকুরটার বাম পাশে সরু পায়ে চলার পথ। দুই চারজন পুরুষ আমাকে অতিক্রম করিয়া সেই পথ দিয়া চলিয়া গেল। সমস্যা হইল না। আমি আর আগাইবো কিনা ভাবিতেছি,এমন সময় এক ঝাঁঝালো নারীকণ্ঠ কর্ণে আসিয়া ধাক্কা মারিলঃ’এইদিকে আসে ক্যা? পুরুষটার কপালে কি চক্ষু নাই?’ আমার আশেপাশে তখন আর কেহ নাই। বুঝিলাম- কণ্ঠটি আমাকেই উদ্দেশ্য করিয়া। শুনিয়া আমি তো হতবাক! খানিক পূর্বে যে কয়েকজন পুকুরের পাশ দিয়া চলিয়া গেল,তাহারা তবে কী? পুরুষ নহে?
আরেক গল্পে এক শাশ্বত নারী শিশির তার স্বপ্নপুরুষকে খানিকটা ক্ষোভ দেখিয়ে বলছে,‘আচ্ছা, তোমার মাথায় এসব আজেবাজে ব্যাপার আসে কী করে,বল তো? তুমি না আমার রাজা; রাজা কেন এক টুকরো কিসমিসের ভিখেরি হবে? পারলে পুরো আমাকেই নিয়ে নাও না? পারবে? সে সাহস আছে?’
এরকম নানান আঙ্গিকে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের গল্প এসেছে এই আখ্যানে। নিজ জীবনের গল্পের শৈল্পিক বুনন ও সরল কথন কখন যে পাঠকের মনও স্পর্শ করে যায় তা পাঠক নিজেও হয়তো টের পাবেন না। এটুকু অন্তত জোর দিয়েই বলা যায়।
বিহঙ্গ সময়ের অ্যালবাম- Bihongo Somoyer Album
ভূমিকা
লোকমান তাজ রচিত লাশপুরীর লাশের গল্প কিশোর উপযোগী রহস্যময় উপন্যাস। সমকালীন অনেক লেখক এ জাতীয় রচনা সৃষ্টিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সাইন্স ফিকশন, রম্য কথা, ভৌতিক থ্রিলিং ইত্যাদি ব্যবহার করে প্রচুর লেখালেখি অব্যাহত রয়েছে। কারো কারো বেলায় ব্যাপক জনপ্রিয়তাও লক্ষণীয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব লেখা অনির্দেশ্য বায়বীয় ভাব ভাবনায় সমর্পিত।
সঠিক কোনো জীবনবোধ বা আদর্শ অন্বেষার বালাই নেই। দিকভ্রান্ত কাহিনী চরিত্রের মোহমুগ্ধ ঘনঘটা একটা আবেশ ছাড়িয়ে দেয়।
এ অবস্থায় লোকমান তাজ এর লাশপুরীর লাশের গল্প নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এখানে গাছতলা গ্রামের সবিস্তার কাহিনী সাব্বির, মাহি ও মেহেক চরিত্রের মাধ্যমে রূপায়িত হয়েছে। তাছাড়া আরো কিছু শাখা কাহিনীও এখানে প্রযুক্ত হতে দেখা যায়। যেখানে মীরাকে কেন্দ্র করে ছাত্রীনিবাসের এক মর্মান্তিক কাহিনী এখানে বর্ণিত হয়েছে। গল্পের প্রধান চরিত্র সাব্বিরই পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করেছে।
লাশপুরীর লাশের গল্পে সত্যিকার অর্থেই গল্পের একটা মুগ্ধতা ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে অপরিসীম আবেগ, কৌতূহল, স্বপ্ন আকস্মিকতা উৎকণ্ঠা বজায় রয়েছে। যা পাঠক সাধারণের মনকে একটা সম্মোহ সীমানায় ধরে রাখতে সক্ষম। তাছাড়া এর কাহিনী চরিত্রে বরাবরই একটা আদর্শবোধ ব্যাপ্ত আছে। এ সুবাদে সেখানে সমাজ মানসের কিছু বিশ্বস্ত চিত্রগাথা পরিস্ফুট উঠার সুযোগ পায়। যা শুধু এদেশীয় সংস্কৃতির আদলে গড়ে ওঠেছে। যেমন মীরা কেন্দ্রিক সারিনা জামান এর ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। মেয়েটির আত্মহত্যা ও এর আনুপূর্বিক ঘটনা যে কাউকে ছুঁয়ে যেতে সক্ষম। সংসারের অভাব-অনটন, বন্ধুবান্ধবীদের নিগ্রহ-নিপীড়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবজ্ঞা, অবহেলা-সবমিলিয়ে মেয়েটির জীবন বিষিয়ে তোলে। এছাড়া সাব্বিরের দাদিবাড়ি গাছতলা গ্রামের নানাবিধ ঘটনা এ গল্পের আড়ম্বরের সাথে বনিত হয়েছে। যা পাঠ করে অনাস্বাদিত জগতের উপমিত আস্বাদন করা সম্ভব। আমি লাশপুরীর লাশের গল্প ও এর লেখক লোকমান তাজ এর পর্যায়ক্রমিক সমুন্নতি কামনা করছি।
-ড. মুহাম্মদ জমির হোসেন
লাশপুরীর লাশের গল্প
অপু শহীদ। ১ লা ফাল্গুন ১৯৭১ সাল। গর্ভের অন্ধকার থেকে পৃথিবীর অন্ধকারে বসবাসের শুরু। পুরোনো ঢাকার নারিন্দার- বেগমগঞ্জ লেনের গাড়ি না ঢোকা সরু গলির শেষ মাথার একতলা ঘরে জন্ম। চুন-সুরকির খসে পড়া দেয়াল ধরে ধরে বেড়ে ওঠা। স্কুলজীবন নারিন্দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। পরবর্তিতে অনিচ্ছাসত্ত্বেও বন্ধুর অনুরোধে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন।
জীবন ধারণের জন্য দাসত্ব না মানায় কেবলই এক থেকে আরেক অনিশ্চিত জীবনে প্রবেশ। বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার সাথে আজন্ম বিরোধ। এখনও স্বপ্ন দেখেন কপর্দকশূন্য ভবঘুরে হওয়ার।
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাহাদুরশাহ পার্কের ছাউনিতে বসে লেখালেখির শুরু। এই সময় থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে সম্পর্ক। অভিনয়-নির্দেশনা-নাট্য রচনায় সক্রিয় অস্তিত্ব। আক্ষরিক অর্থেই খাদ্যাভ্যাসে সর্বভূক। পঠন-পাঠনেও সর্বভূক। পাঠের মধ্য দিয়েই একা একা নির্জন গভীর পথের সন্ধান করেন। জীবনের গভীরে ডুব দিয়ে তুলে আনেন স্মৃতির কোলাজ। লেখার সময় ঘোরের মধ্যে থাকেন। অথবা ঘোরের মধ্যেই লেখেন। প্রায়শই লেখা হারিয়ে ফেলেন।
ধর্ম-অধর্ম প্রথা-বিদ্রোহ কিংবা ভবঘুরেশাস্ত্র কোনও কিছুর জন্যই আর অস্থিরতা নেই। নিগূঢ় ধ্যানমগ্ন হয়ে সময়কে প্রিজমে ফেলে বহুবর্ণ কাচের ভেতর দিয়ে দেখেন। সেখান থেকেই খুঁজে নেন গল্প-কবিতা-নাটক। কোনও তত্ত্বে-তথ্যে বাস্তবিকই কোনও আস্থা নেই আর। নেই ঈশ্বর থেকে ঈশ্বরী কোনও কিছুতেই বিশ্বাস। নেই অবিশ্বাসও। একে ঠিক সংশয়বাদ বলে কিনা তা নিয়েও আছে সংশয়।
নগর জীবনের সাজানো মূল্যবোধ দাঁতাল যন্ত্রণা ক্লান্তি-বিকার ধরা পড়ে তাঁর লেখায়।
সার্বজনীন নিরবতা চুক্তি
সুলতানা শাহরিয়া পিউ, জন্ম ২ অক্টোবর। লেখালেখি, আবৃত্তি ও সংগীত চর্চা করেন। অনুপ্রাণন সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। শিক্ষকতা করেন। তার প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থ- মেঘের সাথে কথা (কাব্যগ্রন্থ), ইংরেজী কাব্যগ্রন্থ ‘ট্রান্সকুইল সেরেনেইড এর অনুবাদ ‘নিমগ্র জলধারা’। বাংলা গীতিকবিতার অনুবাদ ‘অচিন’ দঁহশহড়হি’.
এ্যালবাম- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেলপ্রাপ্ত ংড়হম ড়ভভবৎরহমং থেকে আবৃত্তি ‘ভয়েজ টু দ্যা ইটারনাল হোম’ পঞ্চকবির গানের সমবেত কণ্ঠে ‘পঞ্চপ্রভা’।
মেঘের দেশে ফিরে যাবার গল্প
হাসানআল আব্দুল্লাহ। জন্ম: ১৪ই এপ্রিল, ১৯৬৭। গোপালগঞ্জ জেলার গোপিনাথপুর গ্রামে। তিনি প্রবর্তন করেছেন নুতনধারার সনেট। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থর সংখ্যা দশ। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার কবিতার অনুবাদে প্রকাশ করেছেন বিশ্ব কবিতার কয়েকছত্র। অন্যান্য প্রকাশিত গ্রন্থ- সনেটগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা, আঁধারের সমান বয়স, এক পশলা সময় প্রভৃতি। ২০০৭ ও ২০১৫ সালে নিউইয়র্কের কুইন্স শহরের পোয়েট লরিয়েট ফাইনালিস্টের সন্মান পেয়েছেন।
বৃত্তের কেন্দ্রেও কবিতার মুখ
সোলায়মান সুমনÑ জন্ম ১মে ১৯৭৯, চাঁপাই নবাবগঞ্জ। তরুণ বয়সে লেখালেখি শুরু। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস। পেশায় শিক্ষক। ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন প্রকাশনের সাথে যুক্ত। অন্যান্য প্রকাশিত গ্রন্থ: মুই তোরে কোচ পাং (২০০৯), সম্পাদনাÑ পঞ্চায়ুথ। সম্পাদিত পত্রিকাÑ রুদ্র, গল্প।
বাংলা সাহিত্যের সেরা গল্প
সুজন হাজারী-
জন্ম :- ১৫ মে, ১৯৫৩
জন্মস্থান :- উজল, হিলি দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম বাংলা, ইন্ডিয়া; মাতুলালয়।
শিক্ষা :- ব্যচলার অফ আর্টস।
বৈবাহিক তথ্য :- বিবাহিত।
স্ত্রীর নাম :- মোসাম্মৎ নাসরিন আখতার।
সন্তানদের নাম :- সুবর্ণ সম্ভার, সুদিপ্ত সম্ভার, সুহিত সম্ভার।
ভাইবোন :- চার ভাই, এক বোন।
সিদাম পাহান
আমাকে শেখায় নিরক্ষর হাওয়া, আলাভোলা স্রোত
ছাতিম ফুলের ঘ্রাণে নারীগন্ধ চিনি
অনেক পিছিয়ে পড়ে নরম মাটিতে দেখি
খরগোশ রেখে গেছে পায়ের অস্পষ্ট ছাপ, আমার বাংলায়
কার ভিটে পড়ে আছে গ্রামের দক্ষিণে?
কিছুদূরে হা-করা মুখের নদী, কখনো সে অজগর
কখনো বা ঋতুমতী বউয়ের আদর
নিষাদের ডালপালা
লেখক পরিচিতি :
শামীম সাঈদ। জন্ম: ১০ই জানুয়ারি, ১৯৭৯। কলসনগর (লালপুর, নাটোর)। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘এই কথা বৃষ্টিবাচক’ ‘এভাবে খুলবে না আঁচলের খুঁট’। সম্পাদিত গ্রন্থ: ‘কুঁড়িকাল ও যুগযাপনের গল্প’। এটি লেখকের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ।
সদা ভাগতেছে ভববান
নাম : সৈয়দ ইলিয়াস আখতার ফারুকী
লেখালেখি যে নামে : ইলিয়াস ফারুকী
জন্ম : ১৯/০১/১৯৫৯ইং
জেলার নাম : চাঁদপুর সদর
লেখালেখি শুরু : ১৯৭৬ইং সাল থেকে
লেখার ধরন : কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, গান
প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা : সাতটি
আরশি (কবিতা) ২০১৬ইং
মঞ্জুরিত যতিপাত (কবিতা) ২০১৮ইং
ভালোবাসার জন্য (ছোটগল্প) ২০১৮ইং
ভালোবাসার নানান রঙ (ছোটগল্প) ২০১৯ইং
নীলপদ্ম (ছোটগল্প) ২০১৯ইং
রোদ বিকেলের ছায়া (ছোটগল্প) ২০২০ইং
শিমুলের যত রঙ (কবিতা) ২০২০ইং
ছয়টি গানের অডিও সিডি জিগীষা পরস্কারপ্রাপ্তি : ব্রিলিয়ান্ট সোসাইটি কর্তৃক ছোটগল্পের জন্য ‘নজরুল সম্মাননা’ ২০১৮ইং
সভাপতি, জিগীষা সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ। নয়াপল্টন (বালুর মাঠ), ঢাকা
শিক্ষাগত যোগ্যতা : এমএসসি (ভূগোল) ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়, এমবিএ (বিপণন) ‚
ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সংসার জীবন : মা, স্ত্রী ও দই পুত্র
বর্তমান ঠিকানা : ৩৯৭ পূর্ব গোড়ান,
খিঁলগাও,
ঢাকা।
পেশা : জাতীয় বিক্রয় ব্যবস্থাপক, জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লি.
ঢাকা।
মোবাইল : ০১৭১৫-১৪৮৫৯৯
অনেকগুলো মানুষ
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.