বিবিধ গল্প – পারভেজ আহসান
পারভেজ আহসানের কবিতা বহুমাত্রিক বোধের আয়না। বিভিন্ন তন্তুতে তাঁর কবিতার বুনন। দেশাত্ববোধ, সংকীর্ণতার বৃত্ত ভেঙে দ্যুতিময় সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যাশা, অন্তর্লীন সৌন্দর্যের অনুসন্ধান , শেকড় ও ঐতিহ্য প্রবণতা, দুঃস্বাপ্নিক যন্ত্রণার ভেতরে আনন্দবিকেল খোঁজার ব্যাকুলতা মূর্ত হয়ে ওঠে তাঁর কবিতায়। অভিনব রূপক এবং প্রতীকের ব্যবহারে এ কবির কবিতা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে অনন্য উচ্চতায়। তাঁর কবিতা পাঠককে নিয়ে যায় ভাবনার অতলান্তে।
Bibidha Galpo - Parvej Ahsan
আমি আর সরদার – সরদার ফারুক
সায়ংসন্ধ্যা শেষে তুলসীতলায় নামে
সারবন্দী নীরবতা, নিবিড় কুহক
মাটির ঘরের দীপে কাঁপা কাঁপা মুখ
স্পর্শের অপেক্ষা নিয়ে ফুটে আছে
অধীর প্রসূন
দূরের দিঘির দিক থেকে
সারারাত ভেজা হাওয়া আসে
Ami R Sardar - Sardar Faruque
সেলাই – টিপু সুলতান
মুখ থেকে শেষ কথাটি কেড়ে নিয়ে যে পাখি রেলিঙের ডানায় আজও বসে রয়েছে। তার যাপনযোগ্য স্পর্শ আর আলগোছ চোখ-
সেসব আমার পুরানো দিনের অবশিষ্ট পরমায়ু ও কবিতা।
টিপু সুলতান
কেশবপুর। যশোর
Selai By Tipy Sultan
শীতগ্ধ – সানজিদা সিদ্দিকা
দীর্ঘ বালুময় পথ অতিক্রম করে আচানক নীরসতা ভেদ করে মায়া ছড়িয়ে ফুটে থাকে বুনোফুল। অথবা জনারণ্যে কোনো শিশু ফুটপাতে বসে মেলাতে চেষ্টা করে জীবনের কূল। সারি সারি বৈদ্যুতিক তারের ভীড়ে নীড় ছেড়ে একা বসে সূর্যাস্ত দেখে একটি ফিঙে। বৈশাখী সন্ধ্যায় হাওয়া ওঠে, পথে পড়ে থাকা বেনামী কাগজ উড়ে যেতে চায় হাওয়ার সঙ্গে। কত মুখ আর মুখোশের খেলা, লেনদেনের পশরা নানা রঙে ও ঢঙে। বেদনা ও সুখের উদযাপন হয় এই মাটি দেহে মৃদঙ্গে। অসুখ, অসময়, মহাজনের মিথ্যা প্ররোচনায় দেশটাও বুড়িয়ে যায়। ইতিহাসের ইতিটুকু বাদ দিয়ে যেটুকু রয়ে যায়, কাঙালি ভোজের মতো সেটুকুও ফুরিয়ে যায়। ভালোবাসা চাঁদের কসম খেয়ে জোয়ার-ভাটায় ডুবে মরে মেঘনায়, ফের পলিমাটির চরে লখীন্দরের সাথে সাক্ষাৎ করে বেহুলায়। শুরু থেকে শেষ কিংবা জীবনের উধ্বর্চাপ-নিম্নচাপ-লঘুচাপ এছাড়াও পাপ-নিষ্পাপ যা কিছু কিছু ঘটে অবচেতন ও চেতনায় তার নিযার্সটুকু নিংড়ে অক্ষর-শব্দ-ভাবনার মিলনের কথা লিখে রাখা হয় কবিতার কাবিননামায়।
Sitagdha by Sanjida Siddiqua
নির্বিকার কফির ঘ্রাণ (গৌরী সিরিজ- ৩) – আব্দুল্লাহ্ জামিল
কবি আব্দুল্লাহ্ জামিল সমকালীন বাংলা কবিতার একজন সনিষ্ঠ সাধক। একাধারে তিনি কবি, সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও পেশায় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তাঁর কবিতা পাঠ এক ধরনের নিমগ্নতার ঘোরে পরিভ্রমণ করায়। বন্ধুত্ব বা আন্তরিকতার সুবাদে হোক, তাঁর প্রায় প্রতিটি গ্রন্থ ও কবিতা পাঠের সুযোগ হয়েছে। তাঁর কবিতার প্রধান প্রবণতা হলো, যেন তিনি কবিতায় স¤পূর্ণ নির্লিপ্ত থেকে অত্যন্ত বলিষ্ঠ উচ্চারণ করেন। অত্যন্ত কমনীয় সুরে গভীর ও উচ্চকিত বোধের চূড়ান্তে পৌঁছে দেন পাঠককে। তাঁর কবিতাগুলি আকারে ছোট কিন্তু বিষয় ও উচ্চারণে ব্যাপক প্রেক্ষাপট। গৌরী সিরিজ তাঁর কবিতার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। তাঁর পাঠকগণ হয়তো অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছেন যে, এই গৌরী কবিকে আচ্ছন্ন করেছে। গৌরী সিরিজের প্রতিটি কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি স্বদেশ, সমাজ, বিশ্ব রাজনীতি থেকে মানবমন, একাকিত্ব, বিচ্ছিন্নতা, প্রেম, বিরহ, বিষাদ কিংবা অসিÍত্ব-অনস্তিত্বের টানাপোড়েনও ধারণ
করেছেন। গৌরী সম্মুখে বসে নেপথ্যে রেখেছেন এক বিশাল কালখণ্ড, যা কবির ভাবনায়-মননে।
‘নির্বিকার কফির ঘ্রাণ’ গৌরী সিরিজের তৃতীয় পর্ব। এ গ্রন্থের কবিতাগুলো ঋজু, নির্মেদ ও সাবলীল।
ছন্দোবদ্ধ কবিতাগুলো কখনো কখনো প্রবল শক্তিশালী হয়ে কবির শক্তিকে ইঙ্গিত করেছে।
আব্দুল্লাহ্ জামিলের কাব্যভাষা সমসাময়িক ও শব্দ নির্বাচনে তিনি সতর্ক পরিব্রাজক। কবিতার মেটাফোর ও চিত্রকল্পগুলো নতুন ভাবনাতাড়িত কবির গভীর অনুধ্যান।
— কবি ওবায়েদ আকাশ
Nirbikar Kofir Ghran - Gouri series- 3
Anu-Poromanuvuti by Hisham M Nazer
সীমান্ত ডাইনিং – রফিক বকুল
‘শাদা পতাকা ওড়াবেই তবু এপারের অনুনয়ের মাছি…’
কী ভীষণ সাহসী উচ্চারণ!
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কোন এক গুহায় নির্বাসিত স্বাধীনতাকামী এমনই এক বাঙালি রাজপুতের সাহসী শিরদাঁড়া চাবুকের আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছিল। কাফনের কাপড়ে কাঁপা কাঁপা হস্তে কয়লা দিয়ে সেদিন সে বিমূর্ত কবি লিখেছিলেন স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাপত্র।
অন্ধকার প্রকোষ্ঠের চোরাগলিতে তাঁরই উত্তর পুরুষেরা সেই সাহসের মগডালে ঝুলে ঝুলে স্বাধীনতার বুভুক্ষু হৃদে বাঙালি জাতিসত্তার বুনেছিল বীজ।
এর ধারাবাহিকতার পললে জন্ম নেওয়া লাল সবুজের পতাকায় আজ আবারও আধিপত্যবাদী শকুনের থাবা আর সুচের গ্রীবায় উড়ে বেড়ানো উপনিবেশবাদী সারসপক্ষীর স্বর্ণঠোঁট দেখে বিবেক আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। কবির সমুখে ফেলানিরা লাশ হয়ে ঝুলে থাকে বৈষম্যের কাঁটাতারে। বঞ্চনার মেঘ কেটে কেটে কবি তাই খনন করেন সাম্যের খরস্রোতা নদী, কখনো গোলাপজলে ভাসা প্রিয়তমার রক্তোচ্ছ্বাস ভালোবাসার স্বপ্নরাত, কখনো একান্ত স্নেহালয়ে হাহাকার করে ওঠা বাবার সুহৃদয়েষু বাজারের থলে। সময়ের আয়ুষ্কালে কখনোবা কবি লিখে ফেলেন মানুষের মুক্তির ধারাপাত।
অন্যরকম এই বিমূর্ত অন্তর্বস্তু ও রহস্যময় বোধ আর শব্দের এইসকল মারাত্মক স্বরে জন্ম নেয় কতক অনুরণন…
চলুন এই অনুরণন অনুধাবন করি…
শাহীন খন্দকার।। সুমন সৈকত
সীমান্ত ডাইনিং - Shimanto Dining
অশেষ আলোর উপলক্ষ – আলী ইব্রাহিম
‘অশেষ আলোর উপলক্ষ’ বইয়ের সব কবিতাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা। কবিতাগুলোতে আমাদের ত্যাগ, আবেগ ও আক্ষেপ; দেশপ্রেম বলিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সেই সাথে রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার, স্বাধীন দ্যোতনায় উদ্দীপ্ত ও উত্থিত। প্রতিটি কবিতায় রয়েছে স্বতন্ত্র সৌরভ। কবিতাগুলো সব বয়সি পাঠকের উপযোগী এবং সহজ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা আমার জন্য সহজ ছিল না। তাকে কোনোদিন দেখিনি। তার মুখের কথা শুনিনি। মুক্তিযুদ্ধ করিনি। টুঙ্গিপাড়া দেখা হয়নি। তার সমাধিসৌধ দেখিনি। সেই মধুমতির জল স্পর্শ করিনি। শুধু উপলব্ধির আলোয় লেখা এই কবিতায় অনুরক্ত হয়ে প্রকাশের আগ্রহ ও সাহস দেখিয়েছেন অনুপ্রাণন প্রকাশনের প্রকাশক আবু মোহাম্মদ ইউসুফ। তার প্রতি রইল অশেষ ভালোবাসা।
আমার সমস্ত কবিতার বনফুল আমার ঘরের ডাক্তার রিতি আক্তার। সে সবকিছু সামলে না রাখলে আমি এতটা অসামাজিক হতে পারতাম না। এই উদ্ভট জীবন উপভোগে আমি তার কাছে ঋণী।
আলী ইব্রাহিম
অশেষ আলোর উপলক্ষ - Asesh Alor Upolokkho
নিঃসঙ্গ মনোভূমি – হাফিজ রহমান
নীরবতার ভাষাও স্তব্ধ হবে
বোধটুকু মুছে দাও-
ছুঁয়ে দেখ সূর্য কিম্বা চাঁদের আলো
পৃথিবীর তাপমাত্রা জেনে যাবে।
ছুঁয়ে দেখ আমার এই বুকের জমিন
জেনে যাবে ভালবাসার সূত্রগুলো!
গভীর তমসা ঘেরা রাত
তারার আলোয় উদ্ভাসিত হয়-
যদি বোধ জেগে রয়।
দেখতে পাবে না কোনকিছু
হৃদয় বিদারক কোন চিৎকার
ফসিল নির্গত দীর্ঘশ্বাস কিম্বা আনন্দের ঝিলিক
শুধু জেগে থাকা বোধটুকু মুছে দাও।
নিঃসঙ্গ মনোভূমি - Nisongo Manavumi
জমা রাখি নির্যাতিত নক্ষত্রের অভিধান – উদয় শংকর দুর্জয়
জমা রাখি নির্যাতিত নক্ষত্রের অভিধান কাব্যে উদয় শংকর দুর্জয় একটি বৃহৎ ক্যানভাসে প্রাচ্য
ও প্রতীচ্যের প্রকৃতি ও সমাজ থেকে আহৃত উপচারে কল্পনার অংশুজাল ছড়ালেও জন্মভূমিকে
প্রাধান্য দিয়েছেন। ইয়েটস যেমন এনার্কি ও রক্তপ্রবাহের চিত্র আঁকেন তেমনি উদয় সামাজিক
নিগ্রহ, ধর্ষণ ও সংহারের নিখুঁত পটচিত্র উন্মোচন করেন। শ্রীময়ী চূর্ণিত, পদদলিত হবার পর
বুনো অন্ধকারে যেভাবে পরিপার্শ্ব আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, অথবা
ইয়াসমিন-পূর্ণিমা-রোজিনা-রোমানা-হেনা-নির্ভায়া-নাদিয়া-চাঁদনী-তনু-পূজা হিংস্র নখরে
রক্তাক্ত কিংবা সংহৃত হবার পর তাদের আর্তনাদ যেভাবে বায়ুস্তরে স্বনিত হতে থাকে
তার নির্ভুল দলিল এ কাব্যের রূপকল্পরাজিতে বাঙ্মময় হয়ে উঠেছে। ‘জীবনের মেঘময় প্রচ্ছদ’
জুড়ে যে ‘নিভৃত ক্রন্দন’ পরিব্যাপ্ত তার সমাজতাত্ত্বিক বীক্ষণ এ কাব্যের মূল সুর হলেও
স্বদেশপ্রেম, নিসর্গপ্রীতি ও আশাবাদের ব্যঞ্জনা পাঠককে স্পর্শ করে। ‘মধুখালির জোছনাফোটা
চাঁদের আলো’ কিংবা ‘ লক্ষ্মীবিলাস ধানের ওমে’, সুরভিত বাতাস কবির কাছে প্রিয়তর।
টেড হিউজের ‘Treed with iron’ ইমেজের সাথে উদয়ের ‘অরণ্যের পাঁজরজুড়ে ইস্পাতের
কারুকাজ’ তুলনীয়। উদয় শ্যামল বৃক্ষ, উদার মাঠ ও মীনবহুল নদীর কাছে ফিরে যেতে
চান। ‘চিকচিকে সূর্যের পারাবারে’ তিনি সমস্ত অন্ধকারের দলিল সরিয়ে লিখে
যেতে চান ‘শাশ্বত আলোর বর্ণমালা’।
গৌরাঙ্গ মোহান্ত
কবি ও গবেষক
জমা রাখি নির্যাতিত ঙ্কখত্রের অভিধান - Joma Rakhi Nirzatito Nakkhatrer Ovidhan
মৃত্যুই যেখানে শেষ নয় – কবির মুকুল প্রদীপ
যতবার নিজেকে প্রশ্ন করি। মানুষের কোন ভবিষ্যৎ আছে?
উত্তর একটাই, মানুষ স্মৃতি ছেনে বাঁচে। ভবিষ্যৎ এক মিছে সম্ভাবনা।
আমার এই কাব্যও তাই, স্মৃতির ভেতর থেকে তুলে আনা দানা
যা খেয়ে খেয়ে একটা জীবন–পাড়ি দিচ্ছে মৃত্যুর রহস্যময় মৃত্যুর ধাঁ ধাঁ।
মৃত্যুই যেখানে শেষ নয় - Mrityui Zekhane Shesh Noy
মিথ্যুক আবশ্যক – মুহাম্মদ ফরিদ
কবিতার পথ কণ্টকময়। চিরকাল কবির আরাধ্য, তবু কবিতা অধরা থেকে যায়। এটা সত্য, কবির ঔরসে কবিতার জন্ম। কিন্তু যখন কবি থাকেন না, তখন কবিতাই বহন করে কবির অলৌকিক স্বর।
এক যুগ ধরে কবিতা-পথের যাত্রী মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। তার লেখাগুলো প্রধানত প্রেম, সৌন্দর্য চেতনা, দর্শন যাপনের অভিঘাতকে কেন্দ্র করে। সরল বাক্যবন্ধে কবিতায় তার উচ্চারণ চিরকালীন।
মিথ্যুক আবশ্যক তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রিয় পাঠককে কবির শিল্পজগতে আমন্ত্রণ।
মিথ্যুক আবশ্যক - Mitthuk Abosshok