Additional information
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.06 $ 1.76
সত্তর দশকের কবি সৈয়দ আবদুস সাদিক। এক প্রত্যাশিত সন্ধিক্ষণে বাংলা কবিতার মঞ্চে হাজির হয়েছেন গ্রহণ পূর্ণিমার ছায়াচারী হিসেবে। তাঁর কবিতার শরীর শব্দ সম্পদে ভরপুর। উপমা, শিল্প-সৌন্দর্যবোধ ও মিথ মিলে কাব্যমাঠ যেমন উর্বর, গড়ন-কৌশলেও ভাষা হয়ে ওঠেছে তেমনি অনন্যমাত্রার। তাঁর কবিতায় মন-ময়ূখজুড়ে সমাজ ও স্বদেশ প্রেমের ক্যানভাস আবার বিষয়বস্তুর নিরীখটা জুড়ে যেনো প্রেমই প্রধান। প্রেমই প্রকৃতি এই আকুতি, এই উচ্চারণ সর্বোপরি রসমগ্নতাও গভীরভাবে বিম্বিত। কোথাও বিশুদ্ধ নৈয়ায়িক দুর্বোদ্ধতা থাকলেও, পাঠস্বাদে তা প্রতীকী কাব্যানুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। তিনি এ কাব্য’র এ মাঠে রোপন করেছেন বিভিন্ন স্বাদের ফ্রয়েডীয়, পরাবাস্তব কবিতা সহ সনেট, রুবাই এবং গজল। তবে, নিশ্চয় পাঠক কবির এই কারিশমায় দ্রবীভূত হলেও দ্রোহ আর প্রেমের নানান সমাসবদ্ধ শব্দের উতরোলে, বিরহের ব্যঞ্জনধ্বনিতে, এইসব কবিতার বাহারি রূপ, রস, গন্ধ কবিতাঞ্চলকে করে তুলেছে মন্ময় ও তন্ময়। “তুমি শ্রমণ, আমি ভিক্ষু’ গ্রন্থের ভিন্ন স্বাদ, বিভিন্ন বোধ ও বিচিত্রতা তাকে দিয়েছে বিশিষ্টতা। পাঠ করা গেলে সহজেই সে আবহাওয়া অনুধাবন করা যায়। গ্রন্থটির ‘অনাথ অন্ধকার’ কবিতায় কবি শব্দ, স্বর ও ধ্বনিকে ভিন্ন মাত্রার সুরে প্রকাশ করেছেন এভাবে :
‘এতোকাল কুহকের ভেতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে
জেনে গেলাম গন্ধ-বর্ণময় সময়ের ভেতর
অনাথ অন্ধকার খেলা করে;’…
লিটন আব্বাস
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
কাজী রহমান। পরবাসী লেখক নিজের পছন্দ মতো বাঁচতে দু-যুগ আগে মার্কিন মুলুকে চলে আসেন স্ত্রী ও প্রথম শিশুকন্যা সাথে নিয়ে। বড় হয়েছেন পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া’য়। জ্ঞান হবার পরপরই নিজেকে আবিষ্কার করেছেন ঘরের পাশের গ্রন্থাগারে, বিভিন্ন শিশু সংগঠন আর সমাজসেবামূলক সংগঠনের আলোছায়ায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দুরন্ত কিশোর স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখেছেন কাছ থেকে আর আতঙ্কের দিন গুনেছেন সারাক্ষণ মুক্তিযোদ্ধা দু’ভাইয়ের ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। গ্রাজুয়েশন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবন কেটেছে বিদেশী এয়ার লাইন্সের কর্মকর্তা হিসেবে।
তারাধুলো জল ও নস্টালজিয়া
সাঈদা মিমি। জন্ম: ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮। বরিশালে। শৈশবের পুরোটাই এবং অর্ধেক কৈশোর কেটেছে পদ্মাপাড়ে, মানিকগঞ্জের ঘোনাপাড়া গ্রামে। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবনে। প্রথম প্রকাশিত হয় ইত্তেফাকে। ফ্রীল্যান্স সাংবাদিকতা, স্কুল মাস্টারিং, বায়িং হাউজের এডমিন, হাউজিং কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ইত্যাদি বিচিত্র কর্মজীবন মেষে অতঃপর গৃহিণী। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সব নিয়ে গেছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস’ ‘ফারাও কুমারী’ ও ই-বুক ‘কীর্তনখোলা’।
একজন মৃতের ডাইরি
লেখক পরিচিতি :
শঙ্করী দাস। জন্ম: ৮ই মে, ১৯৫৮ সনে নিজ জেলা জামালপুরে। কবি প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থগুলোÑ গল্প: ‘প্রতিবিম্ব ও অন্যান্য গল্প’ ‘জলমাটির গল্প’ ও ‘রাহুর চন্দ্রগ্রাস’। কবিতাÑ ‘ঘাসবোনা গ্রাম তাঁতবোনা গ্রাম’। স্মৃতিচারণমূলকÑ ‘গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’। গল্পের জন্যে পেয়েছেন পাক্ষিক ঐকতান (বর্ধমান) পত্রিকা পদক। শিশু কবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ও নক্ষত্র সাহিত্য পুরস্কার।
বিহান বেলার ঈশ্বর
অয়ন্ত ইমরুল। জন্ম: ১২ই এপ্রিল ১৯৮৭ইং, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার আজিমনগর গ্রামে। পদ্মা নদীর ভয়াল গ্রাসে শৈশবেই ঠিকানার পরিবর্তন ঘটে বর্তমানে সাভার আশুলিয়ায় বসবাসরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ছায়াসমুদ্র
ডালিয়া চৌধুরী। তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছেন। কবিতার প্রতি ভালোবাসা থেকে কবিতা লেখার সূত্রপাত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, ‘অনুভবে সুখ’ ‘মেঘময় নিকুঞ্জে রধুন‘ ও ‘জলজ কামনা’।
নীল গোধূলি
লেখক পরিচিতি :
সুলতানা শাহরিয়া পিউ। জন্ম: ২রা অক্টোবর। লেখালেখি, আবৃত্তি ও সঙ্গীতচর্চা তার শখ। অনুপ্রাণন সম্পাদনা পর্ষদ এর সদস্য, বর্তমানে দীপ্ত টেলিভিশনের স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘মেঘের সাথে কথা’। অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ: ‘নিমগ্ন জলধারা’। স্ক্রিপ্ট সঙ্কলন: ‘আমরা করব জয়’। গীতিকবিতার অনুবাদ: ‘অচিন’। গল্প সংকলন: ‘মেঘের দেশে ফিরে যাবার গল্প’।
আমার দিনগুলো রইলো অসম্পূর্ণ
মুর্শিদা জামান। জন্ম: ১৯৮৩ সনে বর্তমান বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায়। শৈশব ও বেড়ে ওঠা দক্ষিণের খুলনা শহরে। বাংলায় অনার্স সহ এমএ করেন ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির সূত্রপাত। কবিতা লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট কাগজ ও সাহিত্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকাতে ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃতি ও পশু-পাখির প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও সখ্যতা রয়েছে। বর্তমানে তিনি লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত।
অদৃশ্য ছায়ার প্রজাপতি
দেবাশীষ ধর। জন্ম: ৫ই জানুয়ারি, ১৯৮৯। চট্টগ্রাম। কবিতার ছোটকাগজ ‘বাঙাল’ এর সম্পাদক। কবির এটি প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
ফসিলের কারুকাজ
নাহিয়ান ফাহিম। জন্ম: ২৩শে মার্চ, ১৯৮৪। ময়মনসিংহ জেলা। ঢাকাতে বেড়ে ওঠা। মূলতঃ পাঠক, ফলতঃ লেখক। সাহিত্য পত্রিকা ‘জলমাঝি’র সম্পাদক। মার্কেংটিং বিভাগে স্নাতকোত্তর। পেশাগত জীবনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিনদুপুরের নোটবই’।
মধ্যবিত্ত কবিতা
আলী রেজা। জন্ম: ১৯৫৭। মুক্তিযুদ্ধে আলোড়িত কবি, সত্তর দশকে মূলত ছোটকাগজে লেখালেখি শুরু করেন। সদ্য অবসরে যাওয়া একটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক। এটি কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
আলী রেজা
লেখক পরিচিতি :
নিখিল নওশাদ। জন্মসন: ১৯৮৯ইং। বড়িয়া, ধুনট, বগুড়া, বাংলাদেশ। ‘বিরোধ, ‘নিওর’ ও ‘নীড়’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই। এছাড়া ছোটগল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।
এটি একটি চিৎকার
অরণ্যক তপু। জন্ম: ১৯৯৪ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর, ঢাকার ঝিগাতলা। পৈত্রিক নিবাস বরিশালের পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলায়। বর্তমানে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ব্যথিত ভায়োলিন
তুহিন দাস, কবি ও লিটলম্যাগ কর্মী। জন্ম: ১১ জানুয়ারি ১৯৮৫, জল ও কবিতার শহর বরিশালে। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। প্রথম কবিতার শিরোনাম ‘সমাধিপৃষ্ঠা’। ২০০০ সালে ‘আরণ্যক’ সাহিত্যপত্র সম্পাদনা শুরু করেন। সম্পাদনার জন্যে ২০১১ সালে ‘চিহ্ন সন্মাননা’ পেয়েছেন। বর্তমানে ‘আরক’ পত্রিকা ও প্রকাশনায় কর্মরত আছেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ছয়, ‘বনসাই প্রকল্পের মানুষ’ ‘অসুখময় দিনরাত্রি’ ‘বিষাদনীলঘোড়া’ ‘কাজল বিক্রেতার স্বপ্ন’ ‘বাগান সিরিজ’ ও ‘দূরের পাড়া কাছের বাড়ি’।
কাঠের মুখ
আশরাফ উদ্দীন আহ্মদ-
কবি, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক। জন্ম- ১৬ কার্তিক ১৩৮৪ বাংলা, ফরিদপুর বোয়ালমারী। শিক্ষা- বাংলায় স্নাতকোত্তর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা- বেসরকারি চাকুরী। লেখালেখি কৈশরেই, ছড়া দিয়ে হাতে খড়ি। এছাড়াও আরো চারটি গ্রন্থ লিখেছেন।
কথাকার ও কথা সাহিত্য
মির্জা মুজাহিদ। পেশাগতভাবে বিজ্ঞাপন শিল্পের সাথে জড়িত। জন্মেছেন নড়াইল শহরে। এখন ঢাকায় থাকেন। চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিয়মিত ‘কথা’র শিল্পী হতে।
বিপ্রতীপ
পিনু মামা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছিলেন। দেখছিলেন বললে মনে হয় ভুল হবে- বৃষ্টির গান শুনছিলেন। কারণ সাঁঝের ঘোলা আলোয় বাহিরটা তেমন দেখা যাচ্ছিল না। আর কী যেন ভাবছিলেন। হয়ত তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে কোন গল্পটা আমাদের শোনাবেন তাই ভাবছিলেন। আমরা অধীর হয়ে বসে আছি। পিনু মামা কখন গলা ঝেড়ে কথা বলা শুরু করবেন তার জন্য। আমরা মানে- আমি আর আমার বন্ধুরা। পিনু মামা কানাডায় থাকেন এখন। এর আগে তিনি ছিলেন আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে। তারও আগে ছিলেন আমাজানের গহীন বনে…। গোটা বিশ্ব মামার আবাস ভূমি। কী বিচিত্র অভিজ্ঞতাই না আছে তাঁর ঝুলিতে! মামার গল্প আমি আমার বন্ধুদের কাছে প্রায়ই করতাম। তাই সবার মাঝে মামা ভীষণ জনপ্রিয়। মামা দেশে এসেছেন এবং এখন আমাদের বাসায়- এই কথা শুনে আজ বন্ধুরা আমাদের বাসায় ভিড় করেছে, মামার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে গল্প শুনবে বলে। স্কুলে চলছে গ্রীষ্মের ছুটি তাই পড়াশোনার চাপটাও এখন কম।
পিনু মামার অ্যাডভেঞ্চার
কামরুজ্জামান কাজল বয়সে অনেক নবীন হওয়া সত্ত্বেও [জন্ম ২৫ মার্চ ১৯৯১] এবং অণুগল্প চর্চায় খুব বেশিদিন অতিবাহিত না করলেও ‘দলছুট শালিকগণ’ নামে যে বইটি প্রকাশিত হল;-এর বৈচিত্র্যপুর্ণ বিষয়বস্তু এবং অণুগল্প সম্পর্কিত ধারণার সাথে লেখকের যে নিবিড় ঐক্য স্থাপিত হয়েছে- বইটির পাঠশেষে এই কথাটাই মনে করবেন বিজ্ঞপাঠকগণ।
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা এই যুবকের ইতিপুর্বে ‘ শ্যাম পাহাড়ের আড়ালে’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৬’র একুশে বইমেলায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগ্রিকালচারে স্নাতক শেষ করে লেখক বর্তমানে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে মাস্টার্স করছেন।
‘দলছুট শালিকগণ’ কামরুজ্জামান কাজলের প্রথম অণুগল্পগ্রন্থ। অণুগল্পের ভিত্তি, বিকাশ এবং প্রচারে এই বইটি একটি মাইলফলক হিসেবে ভবিষ্যতে উচ্চারিত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
দলছুট শালিকগন
ফরিদ আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। শিক্ষকতা করেছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে টরেন্টোতে ।
ফরিদ আহমেদ
প্রেম বিনে ভাব নাই ভাব বিনে রস
ত্রিভুবনে যাহা দেখি প্রেম হূনতে বশ
যার হুদে জন্মিলেক প্রেমের অঙ্কুর
মুক্তি পাইল সে প্রেমের ঠাকুর ।
‘ পদ্মাবতী ’
আলাওল ( ১৫৯৭ – ১৬৭৩ )
বসন্তের শেষ বিকেল
সম্পাদকীয়, অনুপ্রাণন– নবম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা
মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীতের ভূমিকা
শিল্প ও সাহিত্য কীভাবে মানুষের চেতনায় মানবিক মূল্যবোধের প্রেরণা সৃষ্টি করতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকেই আসতে পারে। তাহলে, এটা কি একটি সমস্যা? একই স্থানে, একই সময়ে, একই বিষয় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মতামত আসলে আমাদের বোধের জগতে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে কি-না? এর উত্তর অবশ্যই না। কেননা শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ নিয়েই ভিন্ন ভিন্ন মানবিক মূল্যবোধের বিষয় নিয়ে নিরীক্ষা করতে পারে। কোনো একক দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে অটল বিশ্বাস উল্টো চেতনার জগতে গোঁড়ামির বীজ বপন করার প্রবণতার জন্ম দিতে পারে।
অর্থাৎ, মানবিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের উৎস এবং অভিব্যক্তি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো সুত্র বা সংজ্ঞা নির্বাচন করা হয়তো সংকীর্ণতার দিকেই ঠেলে দিতে পারে। আমরা যেমন মানবিক সমাজ চাই, সাথে সাথে আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুত্ববাদী সমাজ চাই। সমাজে যদি মুক্তমত ও ভিন্নমতের চর্চা বা অনুসরণ করার সুযোগ রহিত থাকে তবে মুক্তমনা ও মানবিক শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীতের চর্চা বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী হতে দেখা যেতে পারে। তবে মুক্তমত অর্থে অতিশয়োক্তি আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাইবো না সমাজের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ এবং অশান্তি সৃষ্টি করে–এরকম মানবতাবিরোধী শিল্প-সাহিত্য অথবা সঙ্গীতের চর্চা অবারিত হোক। শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীত সৃষ্টির সৃজনশীল প্রেরণা ভিন্নতর কোণ থেকে উৎসারিত হলেও লক্ষ্য একটাই হওয়া বাঞ্ছনীয় যেন সেসব সৃষ্টিশীল কাজের অভিব্যক্তি, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মধ্যে উপস্থিত থাকে নান্দনিকতা; জাতি-উপজাতি-বর্ণ-সম্প্রদায় ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বিস্তৃত হয় মানবিক সহমর্মিতা, প্রেম, সাম্য ও সমতা। মনে রাখতে হবে যে, ইহজগতে মানুষ বিভিন্ন সামাজিক প্রথা-প্রচলন, বিশ্বাস ও কুসংস্কারের কারণে বহুমাত্রিক শোষণ ও নিপীড়নের দুর্ভোগ নিয়ে জীবন যাপন করছে। যদি সৃজনশীল ও নান্দনিক শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীত এর লক্ষ্য হয় পশ্চাৎপদ প্রথা-প্রচলন, জাতি-উপজাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়-বর্ণ ও লিঙ্গ বৈষম্য এবং নানাবিধ কুসংস্কার এর হাত থেকে মুক্তির জন্য মানুষের চেতনা জাগ্রত করা, তবেই বলা যেতে পারে যে, সেসব সৃজনশীল ও নান্দনিক শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীত এর মানবিক মূল্য রয়েছে।
সৃজনশীল ও মননশীল সাহিত্য, নাট্যকলা, চলচ্চিত্র, নৃত্যকলা, সঙ্গীত, কারুশিল্প, ভাস্কর্য-শিল্প, স্থাপত্যকলা, এবং শিল্পের সকল মাধ্যমের মধ্য দিয়েই মানুষের রুচি ও সংস্কৃতির আত্মপরিচয়, উন্মেষ ও উপলব্ধি ঘটে–মানুষের চেতনায় তার স্বপ্নের জগতটি দানা বাঁধে ও বিকশিত হয়। সংস্কৃতির বিকাশ সাধনের জন্য শিল্পের এই মাধ্যমগুলো একেবারে যেন মনের এক-একটি জানালা। এই জানালাগুলো ব্যবহার করে যেমন একটি সংস্কৃতির ইতিবাচক রূপান্তর সম্ভব, ঠিক সেরকম মনের এসব জানালা দিয়েই কলুষিত বাতাস প্রবেশ করে একটি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই কোনো শিল্পকর্মটি সমাজের ইতিবাচক মানবতাবাদী রূপান্তর এর পক্ষে, আর কোন শিল্প ও সাহিত্যকর্মে মানবিক সংস্কৃতির উন্মেষ ও বিকাশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বিদ্যমান–এটা শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে। সাহিত্য, নাট্যকলা, চলচ্চিত্র, নৃত্যকলা, সঙ্গীত, কারুশিল্প, ভাস্কর্য-শিল্প, স্থাপত্যকলা, এবং শিল্পের অন্যান্য মাধ্যম দিয়ে যেসব কর্ম আমাদের জগতে প্রবেশ করছে–সেসব কর্মসমুহের প্রত্যেকটি কাজের নিবিড় ও যথার্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যুক্তিসঙ্গত এবং বিশ্লেষণমূলক আলোচনা-সমালোচনা প্রকাশ করা তাই অত্যন্ত জরুরী একটা কাজ। পশ্চাৎপদ সমাজে এসব আলোচনা-সমালোচনা রচনা ও প্রকাশ করার কাজে বাধা আসতে পারে। কিন্তু, এই বাধা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলার প্রেরণা সৃজন করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে। সেজন্য কবি, সাহিত্যিক, নাট্য-কলাবিদ, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত কলাকুশলী ও শিল্পী, নৃত্য-কলাবিদ ও নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী, কারুশিল্পী, ভাস্কর এবং স্থপতিবৃন্দকে সমাজে ইতিবাচক রূপান্তর আনয়নের প্রয়োজনে প্রতিবাদী ও সংগ্রামী হয়ে ওঠার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
কিন্তু, সমাজে এ বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে যে, সমাজ পরিবর্তনের কাজে প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে তো নয়ই এমনকি স্ব স্ব অবস্থান থেকেও প্রতিবাদী সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের কাজ না। শিল্পী ও সাহিত্যিকদের এই অংশের মত হচ্ছে, সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে পরিচালিত সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া রাজনৈতিক কর্মী অথবা সামাজিক আন্দোলনের সাথে জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাজ। যেন শিল্পীর কাজ সুন্দরের অন্বেষণ করা, অন্তর্নিহিত সত্যের নয়।
আবার, কোনো কোনো কবি, সাহিত্যিক, নাট্য-কলাবিদ, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত কলাকুশলী ও শিল্পী, নৃত্য-কলাবিদ ও নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী, কারুশিল্পী, ভাস্কর এবং স্থপতিবৃন্দকে সমাজের ক্ষমতাধর অধিকর্তাদের তোষণেই ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়েই এসব শিল্পী ও সাহিত্যিকরা তাদের কাজে এসব চিহ্ন রেখে গেছেন। প্রতিক্রিয়াশীল শিল্প ও সাহিত্য বর্জন না করে শিল্পী ও সাহিত্যিক সমাজের একটি অংশকে নান্দনিকতার দোহাই দিয়ে ঐসব শিল্পকর্মকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে দেখা যায়। কিন্তু, সত্যি কি সমাজের পরিবর্তন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে এবং সেসব শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীতকে কালজয়ী আসনে সমাসীন করার কাজে তারা কি সফলতা লাভ করতে পারে?
একটি সেনাবাহিনী উদ্দীপনামূলক সঙ্গীত ঠোঁটে করেই ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে। আবেগপূর্ণ নাট্যকলা, বাগ্মী বক্তৃতা অথবা অসাধারণ গান, ভাস্কর্য ও অভাবনীয় সৌধ নির্মাণ করে ধর্ম তাদের বাণী মানুষের মনে সঞ্চার ঘটায়। জাতিগত গোষ্ঠী–সঙ্গীত ও নৃত্যের মাঝে তাদের সাংস্কৃতিক শেকড় খুঁজে পায়। অসাধারণ স্থাপত্যশিল্প, যেমন: রোডস্ (জযড়ফবং) এ অবস্থিত সূর্য দেবতা হেলিওস এর অতিকায় মূর্তি, জাপানের একটি পীঠস্থানে ১০৩ টন ওজনের সর্ববৃহৎ বুদ্ধ-মূর্তি, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, ইত্যাদি কোনো সম্প্রদায় বা জাতি’র আদর্শের প্রতীক হিসেবে মানুষের গভীরে প্রোথিত হতে থাকে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে, যখন একটি নতুন সম্প্রদায় অথবা জাতি-গোষ্ঠী পুরানো কোনো সম্প্রদায় অথবা জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে তখন পুরানো শাসনব্যবস্থায় প্রচলিত নৃত্য ও সঙ্গীত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তাদের আদর্শিক গ্রন্থসমুহ পুড়িয়ে ফেলা হয়, মন্দির ও পীঠস্থানগুলো বিনষ্ট করা হয়, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যকর্ম সমূহ মাটিতে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়। আবার অন্যদিকে উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় যে, শাসকের আমূল পরিবর্তনের কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল রক্ষা পায় প্রেমের অভিব্যক্তি, স্থাপত্য ও মর্মর পাথরে নান্দনিক অলংকরণ শিল্পের এক অসাধারণ নিদর্শন হিসেবে। যদিও শাহজাহান নিজ সন্তানের হাতে বন্দী হয়ে অনেক দুঃখ-কষ্টে নিজের শেষ জীবনটি অতিবাহিত করেন কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে, অনেক নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার মধ্যে দিয়েই তিনি শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন। একটা সময় পর্যন্ত সম্রাট শাহজাহান নিকৃষ্টতম কূটচাল আশ্রয় করে দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়েই প্রজাদের শোষণ করে ও প্রতিপক্ষদের নৃশংসভাবে হত্যা অথবা দমন করে রাজ্যের বিস্তার ঘটান এবং রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন। কথিত আছে যে বিশ হাজার শ্রমিক ও শিল্পী যারা তাজমহল নির্মাণ করেছিল তাদেরকে শুধু দাসের মতোই শোষণ করা হয়নি, একটি বড় অংশকে শিল্পের কলাকৌশলের গোপনীয়তা রক্ষা করার অজুহাতে সম্রাট শাহজাহান হত্যা করেছিলেন। অথচ শাহজাহান ও নুরজাহানের প্রেম বিবৃত করে অন্য ভাষায় তো বটেই এমনকি বাংলা ভাষায় গান ও কবিতা রচিত হয়েছে।
ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ে শাসকশ্রেণি কর্তৃক শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীতের উপর নানারূপ আদর্শিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে দেখা গেছে। ব্যতিক্রমী শিল্পী-সাহিত্যিকদের উপর নেমে এসেছে দমন ও নির্যাতনের স্টিম রোলার। আধুনিক কালে, হয়তো শিল্পকলার উপর সবচেয়ে নাটকীয় আদর্শিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে দেখা যায় নাৎসি, কট্টর কমিউনিস্ট এবং মৌলবাদী ও কট্টর এক শ্রেণির ইসলামপন্থীর শাসনে। হিটলারের জার্মানী, মাও সে তুং এর চীন, স্ট্যালিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন অথবা আফগানিস্তানে মোল্লা ওমরের শাসনের অধীনে যেসব শিল্প, সাহিত্য অথবা সঙ্গীত গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল, সাধারণ শৈল্পিক সূত্রসমুহ অনুসরণ করে সেসব শিল্প, সাহিত্য অথবা সঙ্গীতকে নিষ্ফলা এবং বৈচিত্র্যহীন হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে। একটি সুনির্দিষ্ট মতবাদের প্রচার, প্রজ্ঞাপন সৃষ্টি করার প্রচেষ্টার প্রভাবে শিল্পকর্মটি হয়ে ওঠে নিস্তেজ ও অনুজ্জ্বল। এইরূপ শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীত মানুষের জন্য কথা না বলে, তাদের নির্দেশ করেই কথা বলে। যেখানে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার পরিবর্তে রাষ্ট্রের আশা-আকাক্সক্ষার কথাই প্রকাশ ঘটেছে। মানুষের চেতনার বিশোধনের পরিবর্তে এসব শিল্প রচনার উদ্দেশ্য মানুষের আবেগ-অনুভূতি-ভাবনার উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
যে কোনো কালে যখন কোনো কবি, সাহিত্যিক, নাট্য-কলাবিদ, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত কলাকুশলী ও শিল্পী, নৃত্য-কলাবিদ ও নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী, কারুশিল্পী, ভাস্কর এবং স্থপতি তার কাজটি মুক্ত পরিবেশে সৃজন করে থাকেন অথবা যে কোনো সময় যখন বহির্জগতে প্রতিকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও শিল্পীরা তারা নিজের অভ্যন্তরে বন্ধনহীন মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সক্ষম হতে পারেন, তাহলে সেই অবস্থায় প্রকাশিত শিল্পকর্মটি হয়তো মানবতাবাদী এবং উদারনৈতিক মানুষের ভালোবাসা ও প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হতে পারে অথবা যে কোনো মানুষকে চেতনাগতভাবে মানবতাবাদী হয়ে ওঠার গভীর উদ্দীপনা এবং অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে, তাহলে নান্দনিকতার কোনো সুনির্দিষ্ট মানবিক তত্ত্ব সাজিয়ে দেয়ার চেষ্টার কোনো প্রয়োজন নেই। যথাযথ কোনো বিশদ বিবরণ-বিবৃতি, অভিব্যক্তি অথবা বার্তা প্রদানের চেষ্টা করারও কোনো প্রয়োজন নাই। আমাদের যেটা করা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে জাতি-উপজাতি-ধর্মীয় সম্প্রদায় ও লিঙ্গ নির্বিশেষে একটি স্বাধীন, সহমর্মী, মানবতাবাদী ও বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন সামাজিক পরিবেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা গ্রহণ করার জন্য সৎ ও আন্তরিকভাবে সকল মানুষের মনে সুগভীর অনুপ্রেরণা বিস্তার করা। এই কাজটি একটি সৃজনশীল কাজ এবং কোনো বাধাহীন সহজ-সরল পথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগও সীমিত। কিন্তু এর কোনো বিকল্প আছে বলে আমার ধারণায় আসে না। তবে এটা বুঝি যে, এই অনুপ্রেরণা হৃদয়ে প্রোথিত হলে–কবি, সাহিত্যিক, নাট্য-কলাবিদ, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত কলাকুশলী ও শিল্পী, নৃত্য-কলাবিদ ও নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী, কারুশিল্পী, ভাস্কর এবং স্থপতিরা নিজেদের স্বাভাবিক কাজের মধ্যেই যে শিল্প সৃজন করবেন কি-না, সেটাই মানবিক বোধ ধারণ করবে এবং একজন মানবতাবাদীর কাছে অতি প্রিয় হয়ে উঠবে।
পরিশেষে এটা বুঝে নিতে হবে যে, ইতিহাসের অধ্যায়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সত্যেরও পরিবর্তন ঘটতে দেখা গেছে। কিন্তু সুন্দর তার রূপ পরিবর্তন করলেও বোধ এবং অনুভূতিতে সুন্দরের কোনো পরিবর্তন হয় না। তাই, সত্যের মধ্যে সুন্দর এর অনুসন্ধান অনেক সময় বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, সুন্দর সৃষ্টির মধ্যে সত্যের অনুসন্ধান ও প্রতিষ্ঠা করেই আমাদের অগ্রসর হতে হবে। কেননা কবি, সাহিত্যিক, নাট্য-কলাবিদ, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত কলাকুশলী ও শিল্পী, নৃত্য-কলাবিদ ও নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী, কারুশিল্পী, ভাস্কর এবং স্থপতিরা মিলিতভাবে শিল্পের সকল কর্মীরা চিন্তা-চেতনা, আবেগ ও অনুভূতিতে আমাদের সমাজের অগ্রসর অংশেরই প্রতিনিধি।
উদার পুঁজিবাদ ও মুক্ত বাজার, মানুষের মূল্যবোধের জমিনটিতে পচন ঘটিয়ে চলেছে। মাটিতে যখন পচন ঘটে তখন আর কোনো কিছুই নির্মল থাকতে পারে না। মানুষ কষ্টে আছে। তাই, অবশ্যই সমাজের অগ্রসর অংশটির সামনে পরিবর্তন সাধনের লক্ষ্যে নান্দনিক অথচ সত্য শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীত সৃজনের একটি মহান দায়িত্ব এসে পড়েছে। অনুপ্রাণন এই দায়িত্বের স্থানটিকে মজবুত করে গড়ে তোলার কাজে অবিরাম প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকতে চাই।
নবম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা
ভূমিকা-
কবিতার ভিতর দিয়ে বহুবিধ বহুকালের অমীমাংসিত জটিল সমীকরণের সমাধান খুঁজে চলা কবির নাম সালাহউদ্দিন সালমান, কবি যেন কলমের ডানায় আর খাতার বাতিঘরে লুকিয়ে রাখে বেঁচে থাকার মৌলতম রসদ, তার কবিতায় পাঠক খুঁজে পায় অনন্য স্থির নির্ভেজাল ধনাত্মক-ঋণাত্মক ডান বাম, ভালো মন্দ সুখ দুঃখ, অনুভূতি চিন্তা ভাবনা বোধের শৈল্পিক নিরপেক্ষতা। মানুষের সাধ্যাতীতের বিপরীতে কবি তার কবিতায় ফুটিয়ে তুলে নরম জীবনের কারুকাজ, কবি তার কবিতায় দ্রোহের রক্ত নিয়ে আলো খুঁজে অসম্ভব অনিশ্চয়তার নিঃসীম অন্ধকারে, তার একেকটি কবিতা মূর্তিমান জীবনের একেকটি দীর্ঘশ্বাস, সমাজ সংস্করণে এই জীবনমুখী কবির কবিতা যেন প্রয়োজনীয় বিদ্রোহের প্রতীক। কবির প্রেমময় কবিতাগুলো যেনও প্রেমিক প্রেমিকার বুকপকেটে ভরে রাখা কখনো কালো মেঘের আহাজারী, কখনো শূন্যতার নিঠুর মহামারী, আবার কখনো কখনো চালচুলোহীন স্বপ্নাতুর লালিত সঞ্চয়ের সমুদ্রখচিত বিশাল আকাশ। কবির একটি কবিতা পড়েছিলাম পোড়ামাটি নামক- শুইয়ে থাকা নীরব জ্যোৎস্না কে ছুঁতেই /নিজের ছায়া ছুটে চলে অন্ধকারের দিকে/ মেঘঘন আকাশের ফিকে বিছানায়/অগণিত জোনাকিদের সদ্য ঘুম মুখে/আঙুল রাখতেই খলবলিয়ে উঠে নিস্তরঙ্গ নদী/ ভাঙি দ্রোহ আর আকাক্সক্ষার জড়ানো ইমারত/ অনিবার্য পিপাসা ফুরায় অন্তর্গত অভিবাসী জলে/ অবাধ্য হাতের অকুতোভয় আঙুলগুলো বোটা ছুঁতেই/ অঝোর আষাঢ় আসে থই থই লুণ্ঠিত হয় ঘরবাড়ি/ ঘাম শুকায় ঘামে কাঁচা দেহ হয় পোড়ামাটি/ -সশরীরে দেখে মনেই হবে না সালাহউদ্দিন সালমান এমন অসংখ্য কবিতার কবি, কবির নিজের একটি উক্তি আছে কবিতাকে নিয়ে কবি প্রায় বলেন-কবিতা সত্য সুন্দর স্বপ্নিল জীবনের সাথে চলে আমরা কবিতার সাথে চলি। বিশ্বব্যাপী কবিতার মিছিলে কবি সালাহউদ্দিন সালমান এর উজ্জ্বল পদচারণ তারই দৃপ্ত প্রমাণ।
পকেট সেলাই করি ছেঁড়া জামার
জীবনের গল্প
শৈশব থেকেই খুব প্রাণচঞ্চল ও প্রাণবন্ত একজন উদার-উদাসী মানুষ; সদা হাস্যোজ্জ্বল এক প্রিয় মুখ। ভাববাদী দর্শনে বিশ্বাসী এই মানুষটির ভিতরে বাস করে এক শিশুহৃদয়। কবি মুহাম্মদ মঈনুল হাসান সরল আত্মমগ্নতার এক বিমুগ্ধ প্রতিচ্ছবি। ঐন্দ্রজালিক শব্দবিন্যাসে জীবন-উপলব্ধির আনন্দ-বেদনা, কোমল অনুভূতি আর ঘন কুয়াশার ছবি এঁকেছেন তাঁর সরল ব্যঞ্জনার কবিতায়। প্রেম ভালোবাসা প্রকৃতি দেশাত্মবোধ ও ঐতিহ্যের সৌন্দর্য অনুধাবনে নস্টালজিক ভাবাবেগে তাড়িত।
স্বভাবজাত কবি তাঁর কবিতায় সহজ-সরল ভাষায় প্রেম ভালোবাসা প্রকৃতি সংসারের বন্দনাগীত গেয়েছেন। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি; যেখানে মেঘালয়ের পাদদেশ ছুঁয়ে ছুটে চলে ঝরনাপ্রবাহে সোমেশ্বরীর জল নিরবধি। এই মানবজীবন পূর্ণতা-অপূর্ণতার এক বহমান নদী। একাকিত্ব-নিঃসঙ্গতা, দুঃখ-কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণা, আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশাকে বন্দি করেছেন তাঁর বুকের নীল পাঁজরে; যা বারবার দোল খেতে থাকে মনের গভীর প্রকোষ্ঠে। কবিতা শ্বাসমূল ছুঁয়ে বেরিয়ে আসা এক তপ্ত বুদবুদ; এই বুদবুদের সম্মিলিত শক্তিই আজকের ‘দ্বীপ জ্বলে কুয়াশায়’। শব্দযানে চড়ে অলীক ভেলায় ভেসে বেড়ানোর ভালোলাগা থেকেই অনুপ্রাণন প্রকাশনের হাত ধরে প্রকাশিত হচ্ছে এই কবিতাগ্রন্থ।
কবিতায় প্রকাশিত হয় আমাদের চিত্তলোকের লুকায়িত চিন্তা-ভাবনা, জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও ভাবের কথামালা, অন্তর্লোকে উজ্জ¦ল হতে থাকে শব্দের কল্পচিত্র; মনের গহীনে অঙ্কিত হতে থাকে প্রিয় বর্ণমালার মানচিত্র। কবিতায়-কবিতায় আলাদা সুর, ঢেউ ও ঝঙ্কার তুলে। সারা পৃথিবীতে কবিতার তীর্থস্থান আমাদের এই সোনার বাংলা। এরই ধারাবাহিকতায় কবি মুহাম্মদ মঈনুল হাসান ধীরে-ধীরে হয়ে উঠবেন বাংলা কবিতার উত্তরাধিকার। কবি’র জন্য রইলো আমার আন্তরিক অভিনন্দন, শুভকামনা ও ভালোবাসা।
কবি মাহবুব মিত্র
১৬ অক্টোবর ২০১৯, মিরপুর, ঢাকা।
দ্বীপ জ্বলে কুয়াশায়
ফিনিক্স পাখির ডানা
ধুন-জলে জেগেছি নোঙর
শিমুল মাহমুদ তথাকথিত প-িতগণের একাডেমিক ট্র্যাশ থেকে ঘোষণা দিয়েই দূরে সরিয়ে রেখেছেন নিজেকে; সেইসাথে অস্বীকার করেছেন যাবতীয় লিয়াজোবাদি পুরস্কার ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক পিঠ-চাপড়ানো অসভ্যতা। কবিতার সাথে তাঁর সখ্য স্বৈরশাসনের দুঃসহকাল গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে। সমান্তরালে কথাসাহিত্যে রেখেছেন নির্মোহ ছাপ; সেইসাথে সক্ষম হয়েছেন নিজেকে একজন সিদ্ধহস্ত সমালোচক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। সহজাত বৈশিষ্ট্যে শিমুল মাহমুদের গদ্যমাত্রই হয়ে ওঠে মুক্তকণ্ঠ ও মুক্তচিন্তার বাহন; যা অবশ্যই সিরিয়াস পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত।
শিমুল মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পাঠ গ্রহণ শেষে ইউজিসি-র স্কলার হিসেবে পৌরাণিক বিষয়াদির ওপর গবেষণা করে অর্জন করেছেন ডক্টরেট ডিগ্রি। বর্তমানে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, চেয়ারপারসন ও কলা অনুষদের ডিন-এর দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যের কাগজ ‘কারুজ’। লেখকের জন্ম : ১৯৬৭ সালের ৩ মে
প্রকাশিত গ্রন্থ: ২৫টি
কাব্যকথা কাকবিদ্যা
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.