Additional information
Weight | 0.275 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.84 $ 3.06
প্রেমের গল্প
—একটা লতা চাই, যাকে বেয়ে বেয়ে নিচে নামতে পারি। তুই হবি সেই লতা, বল?
এই বলে চোখের দিকে তাকিয়ে রইল সূর্য। যার দিকে সে তাকিয়ে ছিল তার মাথায় দুই বিনুনি। চোখে কাজল। লম্বা গলা আর তিরতির করে কাঁপতে থাকা নাকের বাঁশি। থুঁতনিতে তিল।
সূর্য থুঁতনি ধরে আবার বলল—এই লতা, তুই আমার লতা হবি?
বিকেলের আলো যাই যাই করেও যেন যেতে পারছে না, লতা কি বলে, সেটা সে দেখবে—দেখবেই। ছাদের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল বিন্দুপাখি। প্রশ্নটা তাদের কানেও পৌঁছেছিল কি না কে বলবে—কিন্তু তারা অনেকখানি নেমে এল নিচে। তারপর আরও কত জায়গায় কুজায়গায় যে প্রশ্নের এই রেশ চলে গিয়েছিল বিকালবেলাটি তার হিসাব দিতে পারবে না। যেমন—লতাদের ছাদের একপাশে কবুতরের ঘর। তাদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দিল। পুবকোণার দেয়ালের পাশে কয়েকটি সন্ধ্যামালতি ফুটব ফুটব করছিল কিন্তু সূর্যর প্রশ্নে লতা কি উত্তর দেয় তা শোনার জন্যে আগেভাগেই ফুটে গেল।
সূর্য থুঁতনি ধরেই ছিল। লতা মুখ নিচু করেই ছিল। ছাদের ভেতরে এত বাতাসের যাওয়া আসা তবু লতার গরম লাগতে লাগল। নাকের ডগায় চিকচিক করতে লাগল ঘাম।
ধীরে ধীরে চোখ তুলে লতা যখন কথা বলবে, হয়েছে কি, গলা দিয়ে আর কথা বের হয় না। জিব শুকিয়ে গেছে। গলা দিয়ে ফিসফিসানো শব্দ বের হল। আর সেই শব্দের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে—সূর্য ভাইয়া! আমার খুব ভয় করে।
সূর্য কলেজ। লতা নাইন। কিন্তু এই মুহূর্তে সূর্য যেন আরও বড় হয়ে গেল। ভয় করে? আমি ত আছি।
বলে লতাকে বুকের ভেতরে লুকিয়ে ফেলল।
সিঁড়ির কাছে চামেলি ফুলের ঝাড়। ঝাড়ের ভেতরে অন্ধকার। অন্ধকারের ভেতরের কে ফুঁপিয়ে উঠল—
পাতা। লতার বোন। হাতে ধরা প্রেমপত্র। সূর্য ভাইয়া—I Love You।
Weight | 0.275 kg |
---|---|
Published Year |
গ্রামের পাশে যে বিশাল বাদাম ক্ষেত আর ক্ষেতের পাশে যে ছোট নদী, সে নদীতে মাঝারি সব ঢেউ ওপার থেকে এপাড়ে আসে খড়কুটো মুখে নিয়ে। আর কত কিছু ভেসে আসে আর চলেও যায়—সারা দিনভর ছোটনেরা সেইসব দেখে পাড়ে বসে বসে।
ছোটনেরা মানে হলো—হাবিবুল, রতন, মোবারক, শেফালি বকুল এরা। কালিয়াখোল গ্রামের ছোটরা। তারা প্রতিদিন নদীতে আসে আর কাঁচা বাদাম খেতে খেতে লক্ষ করে নদীটাকে। নদীর ভেতরে কত কিছু। কাদাখোঁচা একটি দুটি। বালিয়া হাঁসের সাদা পাখনা উড়তে থাকে। আর ওপারের মেঘ যখন উড়তে উড়তে এপারে আসে তখন জলিল কাকার সময় হয় জোয়ালের গাই দুটাকে গোসল দেয়ার। গাই দুটার গোসল দেখতে দেখতে আর বাদাম খেতে খেতে দলের মধ্যে মোবারক নামে যে আছে, সে একটা প্রস্তাব দিল। প্রস্তাব দেয়ার আগে বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নিয়ে কয়েকটা জানাশোনা তথ্যও দিল। যেমন—এই নদীতে কিছুই ডোবে না।
বাকিরা মাথা নাড়ে—হুম।
গরু ডোবে না, খড় ডোবে না। নাও-লঞ্চ কিছুই ডোবে না। ভেলা ডোবে না।
সবাই মাথা নাড়ে। কাঁচা বাদাম খায়।
—চল আজকে একটা খেলা খেলি। মিনুরে ডুবাই দেই। দেখি ডোবে কি না?
ছোটনরা একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। প্রস্তাবে জোর সমর্থন দেয় নুরু। প্রস্তাব সমর্থন নিয়ে নুরু কারো দিকে তাকায় না। নদীর পেটে জলের প্রবাহ দেখতে দেখতে তারা স্কুলঘর দেখে। দূরের আকাশছোঁয়া মিনার মসজিদ দেখে।
—মিনুও ডুবত না। এই নদীতে কিছুই ডোবে না–বলে সাহস দেয় নুরু। ততক্ষণে মিনুকে নিয়ে এসেছে মোবারক।
মিনু জল দেখে ভয় পায়। বলে—মিঁউ!
বিশাল নদী। বিশাল চর। মিনু ভয় পায়। ডাকাডাকি শুরু করে দেয়—মিঁউ মিঁউ।
মিনুকে কোলে নেয় হাবিবুল। হাবিবুল থেকে নেয় রতন। রতন থেকে নেয় শেফালি। শেফালি থেকে নেয় রাজন। রাজন থেকে নেয়া নুরু। নুরু থেকে কেউ নেয় না। কারণ নুরু কাউকে দেয় না। সে মিনুকে ছুড়ে দেয় নদীতে।
সবাই হাসে। মিনু সাঁতার কাটে। ঠিকমতো পারে না। নদীতে ঢেউ। তলিয়ে যায়। ছোট্ট মাথা। ডোবে ভাসে। সবাই হাসে–খুশিতে হাততালি দেয়।
দুই ঢেউয়ের চাপে পড়ে মিনু ডাকে—মিঁউ মিঁউ।
প্রাণপণ চেষ্টা করে মিনু কচি পা দিয়ে পাড়ে আসতে পারে না। দূরে সরে যায়। আবার আসে। পাড়ের কাছে আসেও। কিন্তু নুরুরা ঢিল ছোড়ে। হি হি করে হাসে। হাত তালি দেয়।
মিঁউ মিঁউ করতে করতে নদীর ভেতরে চলে যায় মিনু। ঢেউয়ের ভাঁজের ভেতরে চলে যায়। ডুবে যায়। পাড়ে বসে রাজন শিস দেয়।
…………
রাতের বেলায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে পুরো ব্যাপারটা আবার দেখে ছোটন। মিনু ডুবে যাচ্ছে। ভেসে উঠছে। চিৎকার করে ওঠে ছোটন। ঘামে নেয়ে ওঠে সে। কিন্তু তার ঘুম ভাঙে না। ঘুমের মধ্যেই ছোটন বোঝে ঘুম না ভাঙলে সে নদী থেকে আর মিনুকে উঠাতে পারবে না।
সকালবেলা তাড়াতাড়ি মিনু যে কাজটি করে তা হলো ছোটনের বাবা-মাকে নিয়ে নদীর পাড় চলে এলো। তারা দেখল—নদীর ভেতরে একটা লাল জামা ভাসছে ছোটনের।
২৪১৯
কালিয়াখোল গ্রামের ছোটরা
‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’। ‘পাতা নড়ে’ এর স্পন্দনটা যদি এখানেই শেষ হয়ে যেত তাহলে কোনো কথাই ছিল না। আসলে তো ঝরেপড়া জলবিন্দু পাতার সাথে আমাদের অন্তরাত্মাকে নাড়াতে নাড়াতে নিয়ে যায় সমুদ্র থেকে মহাসমুদ্রে। অণুগল্প সে-রকমই কিছু।
রুখসানা কাজলের অণুগল্প
কামরুজ্জামান কাজল বয়সে অনেক নবীন হওয়া সত্ত্বেও [জন্ম ২৫ মার্চ ১৯৯১] এবং অণুগল্প চর্চায় খুব বেশিদিন অতিবাহিত না করলেও ‘দলছুট শালিকগণ’ নামে যে বইটি প্রকাশিত হল;-এর বৈচিত্র্যপুর্ণ বিষয়বস্তু এবং অণুগল্প সম্পর্কিত ধারণার সাথে লেখকের যে নিবিড় ঐক্য স্থাপিত হয়েছে- বইটির পাঠশেষে এই কথাটাই মনে করবেন বিজ্ঞপাঠকগণ।
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা এই যুবকের ইতিপুর্বে ‘ শ্যাম পাহাড়ের আড়ালে’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৬’র একুশে বইমেলায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগ্রিকালচারে স্নাতক শেষ করে লেখক বর্তমানে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে মাস্টার্স করছেন।
‘দলছুট শালিকগণ’ কামরুজ্জামান কাজলের প্রথম অণুগল্পগ্রন্থ। অণুগল্পের ভিত্তি, বিকাশ এবং প্রচারে এই বইটি একটি মাইলফলক হিসেবে ভবিষ্যতে উচ্চারিত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
দলছুট শালিকগন
সাঈদা মিমি। জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৮। বরিশালে। পেশাগত দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের সাহিত্য সম্পাদক। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচটি। শ্রাবন প্রকাশনী থেকে ২০০৮ এ প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই ‘সব নিয়ে গ্যাছে এক সময়ের লুটেরা বাতাস।’ দীর্ঘ বিরতির পর আগুনমুখা থেকে ‘ফারাও কুমারী’ Ñ২০১৪ সালে। বাংলার ই-বুক থেকে ই-বই ‘কীর্তনখোলা।’ -২০১৫ সালে। ২০১৬ তে অনুপ্রাণন থেকে কাব্যগ্রন্থ ‘একজন মৃতের ডায়েরী’ এবং কালজয়ী প্রকাশ থেকে ‘শুশুনিয়া পাহাড়’।
ঔরঙ্গজেবের নীল ঘোড়া
বিলাল হোসেন-
জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৭৪।
জন্মস্থান- মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার রাজারচর কাজিকান্দি গ্রামে।
প্রকাশিত বই-
১. কাব্যগ্রন্থ- বিরুপা’র শূঁড়িবাড়ি(২০১৪)
২. অণুগল্প সংকলন- পঞ্চাশ(২০১৫)
৩. মহাপ্রভু ও অন্যান্য অণুগল্প(২০১৬)
৪. কাব্যগ্রন্থ- একজ্বলাপঙক্তি(২০১৬)
স¤পাদিত বইসমূহ-
সেরা ১০০ অণুগল্প(২০১৫) (প্রিন্ট ভার্সন)
ই-বুক স¤পাদনা-
দেখবে এসো তিলের বাগান
বিলাল হোসেন
জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৭৪।
জন্মস্থান- মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার রাজারচর কাজিকান্দি গ্রামে।
প্রকাশিত বই-
১. কাব্যগ্রন্থ- বিরুপা’র শূঁড়িবাড়ি(২০১৪)
২. অণুগল্প সংকলন- পঞ্চাশ(২০১৫)
৩. মহাপ্রভু ও অন্যান্য অণুগল্প(২০১৬)
৪. কাব্যগ্রন্থ- একজ্বলাপঙক্তি(২০১৬)
স¤পাদিত বইসমূহ-
সেরা ১০০ অণুগল্প(২০১৫) (প্রিন্ট ভার্সন)
ই-বুক স¤পাদনা-
অণুগল্প সংগ্রহ-১,২,৩,৪; গোয়েন্দা অণুগল্প সমগ্র, ভূত অণুগল্প সমগ্র, রূপকথা অণুগল্প সমগ্র, নীতি অণুগল্প সমগ্র, চিয়ার্স চিয়ার্স চিয়ার্স, দুনিয়ার মাতাল এক হও, মাতালে মাতালে চেনে, মধুগন্ধেভরা, যুগলবন্দী (সুবর্না রায়), অণুগল্পের বিষয় বৈচিত্র্যের সন্ধানে, তাহাদের গল্প, অণুগল্পের অস্তিত্ব আছে, অণুগল্পের শিরদাঁড়া, অণুগল্পের রোজনামচা।
বাংলা ভাষার সেরা অণুগল্প
সেদিন এক গরুচোরের সাথে সাক্ষাত হয়ে গেল সবার, চোরটি নিজে থেকেই বলল—আমার নাম মজিদ। আমি একটা গরুচোর।
দলে নিয়োগ চলছিল। ইন্টার ডিস্ট্রিক বাস ডাকাতদলের সভাপতি জুম্মন খাঁ, অজ্ঞানপার্টি অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি, নিখিলবাংলা পকেটমার মহাসঙ্ঘের সেক্রেটারি বসা। এরাই দলের নিয়োগদাতা।
কিন্তু মজিদকে দেখে মোটেও গরুচোরের মতো লাগছিল না। গরুচোর হবে গরুচোরের মতো কিন্তু এরে সে রকম লাগছে না। এরে মকবুলের মতো লাগে।
মকবুল কে? মকবুল হলো মুরগি চোর। একসময় এই দলের হয়ে কাজ করত। এখন দল ভেঙে আলাদা দল করেছে। টেক্কা দিতে চায়।
অজ্ঞান স্পেশালিস্ট একাব্বর আলি সরু চোখে মজিদের দিকে তাকাল। তার ইচ্ছে করছে চোখেমুখে মলম ঘষে দিতে। একরাশ সন্দেহ নিয়ে বলল—তা মজিদ মিয়া, কয়টা গরু তুমি চুরি করছ?
মজিদ মাথা চুলকায়। ঘাড় চুলকায়। একটু লজ্জাও পায়। বলল—খুব বেশি না ওস্তাদ, আমি তো রেনডম গরু চুরি করি না। যখন কোরবানি আসে, গরুর হাটে ঘোরাঘুরি করে চান্সে চুরি করি। বছরে ওই একটাই সিজন আমার।
—তাই বল! একাব্বর হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। সন্দেহ আমার ঠিকই ছিল—ভাবতে ভাবতে সবার দিকে তাকিয়ে একটু ফুলে ওঠে, গর্বে। আসলে এই ব্যাটাকে মুরগি চোরের মতো লাগছিল। বিশ্বাসঘাতক মকবুলের চেহারার লগে মিল আছে। মকবুলও ছিল বিরাট মুরগি চোর।
—তা এইখানে কি মনে করে?
মজিদ বলল—ওস্তাদ, আমারে দলে নেন। চুরিধারী দল থেকে না করলে পোষায় না। একলা একলা ভালো লাগে না। মামারা ধরলে ছাড়ানোর কেউ থাকে না কোর্টে চালান খাইয়া যাই।
মজিদের কথায় সিদ্ধান্তের জন্যে সেক্রেটারি তাকায় সহ-সভাপতির দিকে, সহ-সভাপতি তাকায় সভাপতির দিকে। সভাপতি কারো দিকে না তাকিয়ে নিজের ডানহাতের চার আঙুলে পরা আংটির দিকে তাকিয়ে রইল। দুর্লভ পাথর বসানো সব আংটি। কোনোটি হীরা। ইয়াকুত আর লাল জমরুদ পাথরের আংটি দুটি নাকি খুবই বিখ্যাত। সাদা চুনি নাকি পৃথিবীর কোথাও নেই। একটিই। তাও জুম্মনের হাতে, ভাবা যায়! এই আংটিগুলির বৈশিষ্ট্য হলো ডান হাতে পরতে হয়। কিন্তু জুম্মনের হাতে মোট আঙুল চারটি। একবার ডাকাতি করতে গিয়ে গৃহস্থের দায়ের কোপে একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল। ফলে চার আঙুলেই আংটি পরতে হয়।
কাটা আঙুলের দিকে তাকিয়ে জুম্মন ডাকাত হতাশায় মাথা নাড়ে—মজিদ, গরুচোর মুরগি চোরের বিষয় না, আমরা এমন এক হাত সাফাইয়ের খোঁজ করছি, যে মুরগি নয়—মুরগির পিত্তথলি হাত চালিয়ে বাইরে আনতে পারবে, কিন্তু মুরগি টের পাবে না। পারবে?
ওস্তাদের কথায় খুব হতাশ হয়ে গেল গরুচোর মজিদ। চোখেমুখে পানি চলে এলো প্রায়। এত সুক্ষ্ম কাজ পারবে না সে। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল—খুব ইচ্ছা ছিল আপনাদের সাথে কাজ করার। হলো না। বিদায় দেন ওস্তাদ।
বলে সবার সাথে হাত মিলিয়ে মজিদ চলে গেলে জুম্মন খাঁ নিজের আঙুলের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল—আমার আংটি, আমার আংটি!
…………
মকবুলের ডেরায় যখন মজিদ চারটি আংটি ছড়িয়ে দিল তখন খুব হাসাহাসি হলো, জুম্মন ওস্তাদের থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেছে কল্পনা করে। হাত সাফাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে গেল মজিদ।
মকবুল কথা দিলে কথা রাখে।
গরুচোর
হাতেগোনা যে-ক’জন লেখক অণুগল্পের ভিত্তি গাড়তে কিংবা প্রচার প্রসার করার মাধ্যমে প্রথম দশকেই একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছেন কিংবা বলা যায়, অণুগল্পের বিভিন্ন ধরন এবং ধারণায় সাহিত্যের এ-মাধ্যমটি বর্তমানে বহুচর্চার ফল্গুধারায় দুইবাংলার পার ছাপিয়ে গেছে বটে, আশার কথা হচ্ছে, কামরুজ্জামান কাজল বিশুদ্ধ অণুগল্পের ধারক-বাহক হয়েই পাঠকমহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে সক্ষম হয়েছেন। পূর্ববর্তী ৩টি গ্রন্থে আমরা তা-ই দেখেছি। আর এখানেই প্রকৃত অণুগল্প আর কাজল সমার্থক হয়ে উঠেছেন।
‘জোড়া নারিকেল বাড়ি’ লেখকের চতুর্থ অণুগল্পের বই। বইটির সাফল্য কামনা করি।
-বিলাল হোসেন
জোড়া নারিকেল বাড়ি
কামরুজ্জামান কাজল। অণুগল্প বর্গের লেখক-পাঠকদের কাছে একজন পরিচিত মানুষ। সুদর্শন, পরিশ্রমী আর অণুগল্প সাহিত্যের প্রতি একনিষ্ঠতার জন্যে সবার কাছে এক ধরনের সমীহ আদায় করে নিয়েছেন স্বল্প সময়ের মধ্যেই]। অণুগল্প লেখার পাশাপাশি অণুগল্পের প্রচার-প্রসার এবং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাংগঠনিক কর্মকা-েও সম্পৃক্ত আছেন।
অণুগল্প যারা লেখেন তারা জানেন, অণুগল্প লেখা যেমন একটি কঠিন কাজ, একইভাবে দীর্র্ঘদিন এর সাথে লেগে থাকা প্রায় দুঃসাধ্য একটি সাধনা। কামরুজ্জামান কাজল এই সাধনায় অত্যন্ত সফলভাবে টিকে আছেন। তারই প্রমাণ প্রথম অণুগল্পগ্রন্থ ‘দলছুটশালিকগণ’ থেকে তিনি যে যাত্রা শুরু করেছেন ‘আটপুকুরের ফুল’ হয়ে ২০১৯ সালের অণুগল্পগ্রন্থ ‘ভেতরে ভেতরে খেলা করে যারা’য় এসে থেমেছেন। থেমেছেনÑ তবে যাত্রা সম্পূর্ণ করেননি।
যাত্রা কেবল শুরু। আমি তা-ই বিশ্বাস করি।
এ-বইটি অন্যান্য বইয়ের মতো পাঠকপ্রিয় হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
Ñবিলাল হোসেন
ভেতরে ভেতরে খেলা করে যারা
আবু সাঈদ আহমেদের জন্ম ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নের সময়েই জনপ্রিয় সাপ্তাহিক সন্দ্বীপে প্রতিবেদন লেখার মাধ্যমে লেখক জীবনে প্রবেশ। কলেজ জীবন হতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছেন। কিন্তু লেখাকে কখনোই গুরুত্বের সাথে নেন নাই। তিনিই বাংলা ব্লগের অন্যতম জনপ্রিয় ব্লগার ‘হরবোলা’। অনলাইনে নির্মোহ রাজনৈতিক প্রবন্ধ, তীক্ষ্ম স্যাটায়ার, কবিতা আর অণুগল্প তাকে এনে দিয়েছে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা। আমমানুষের পক্ষের একজন লেখক ও এক্টিভিস্ট হিসেবে একাধিকবার শারীরিক হামলার স্বীকার হয়েছেন, কিন্তু নীরব হন নাই।
লংকা কিন্তু জ্বলছে না
রোজনামচা বা দিনলিপি কেন পড়ে মানুষ? কী দরকারে আসে এই দিনপঞ্জীপাঠ? স্যামুয়েল পেপিস (১৬৩৩-১৭০৩) কেন বিখ্যাত হয়ে গেলেন কেবলমাত্র ডায়েরি লিখে? কেননা তাঁর ডায়েরি তৎকালীন লন্ডনে (১৬৬৫) ছড়িয়ে পড়া মহামারী প্লেগ ও চারদিন (২রা-৬ই সেপ্টেম্বর, ১৬৬৬) ধরে চলা লন্ডন শহরকে পুড়িয়ে খাক করে দেওয়া বিধ্বংসী অগ্নিকা-ের অনুপুঙ্খ বিবরণ তাঁর ডায়েরিতে ধরেছেন পেপিস। যা আজ ইতিহাসের মর্যাদা পেয়েছে। কিংবা ধরুন, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি’-র ‘নোটবুক’ বা পাবলো নেরুদার ‘মেমোয়্যার্স’ আমাদের কাছে আকর্ষণীয় কেন? না, যে যুগ আমরা পেরিয়ে এসেছি আর কোনোদিন যাওয়া যাবে না সেখানে, দিনপঞ্জী আমাদের নিয়ে যায় সে মুহূর্তক্ষণে! চিলেকোঠায় অথবা বহুদিন বন্ধ থাকা তোরঙ্গের গর্ভান্ধকার থেকে খুঁজে পাওয়া কোনো ডায়েরি এক অপরিসীম আনন্দে মন ভরায়, দেয় আবিষ্কারের আনন্দ-মূর্ছনা!
রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’-র যে অংশে কবি নানান মানুষের স্নান করার দৃশ্যের বর্ণনা দিচ্ছেন, সে ছবি রচনার মধ্যে সেই পুরোনো কলকাতার যে স্কেচ উঠে আসে, তা আর কোনোদিন ফিরে আসবে না, অথচ কী আশ্চর্য চিত্রময় লিপ্যাঙ্কন। মনের ভেতর ছবি হয়ে বেঁচে আছে শতাব্দী পেরিয়ে। এও তো সেই রোজনামচাই! কবিগুরুর অজস্র চিঠিতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য তাৎক্ষণিকতা, ‘হে ক্ষণিকের অতিথি’ হিসেবে নানান দৃশ্যকল্প, ছবি সে-ও সেই দিনপঞ্জীর কথাই মনে করায়। পুরোনো দিন, পুরোনো সম্পর্ক সবই ধরা থাকে প্রকৃত শিল্পীর কলমে। সে কারণেই একজন শক্তিমান লেখকের লেখা রোজনামচা বা দিনলিপি আমাদের সাগ্রহবস্তু। যে দিন চলে গেছে, যাকে ধরে রাখতে পারিনি, সে সন্ধানে ডুব দিতে পারি ইচ্ছে করলেই। মনে করতে পারি, ‘বন্ধু কী খবর বল, কতদিন দেখা হয়নি!’
এ-কারণেই ‘রোজনামচা’-র বহুল প্রচার আশা করি।
সিদ্ধার্থ দত্ত
৮.১০.১৮
রোজনামচা
১০০ অণুগল্প
বর্তমান শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক চলছে। এ দশকে কিছু নবীন কবিদের দেখা মেলে। যাদের শব্দশিল্প, অনুভবভেদ্য চিন্তাশৈলী নিজস্ব কাব্যভাষার নির্মাণের অভিঘাতে শিল্পিত হয়ে উঠতে দেখি। নতুন শতাব্দীর এসব কবিগণও বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য থেকে সরে আসেননি, বরং শিল্পের দায় স্বীকার এবং এর চাহিদার সঙ্গে মানবিক উৎকর্ষতা সন্নিবেশনে ছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী। তাঁদেরই একজন কবি বঙ্গ রাখাল।
এই কবি সময়কে জীবনের অনুষঙ্গ মেনে চিত্তের মৌনতা ও দ্রোহকে কবিতার ক্যানভাসে তুলে আনেন, যা যাপিত জীবনের পরম্পরা ও সমূহ সত্যটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণসহ উদ্ভাসিত করে। কবির মনোজলোকে কামনা-বাসনার জটিল আবর্তে তাকে পরিগ্রহ হতে দেখি। তখন কবিতা হয়ে ওঠে রূপবিশ্বের অমেয় আঁধারের শক্তিশালী এক রূপকল্প। তবে এ বিষয়টি কবি বঙ্গ রাখালের গদ্যফর্মে লিখিত কবিতার মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
বঙ্গ রাখালের কবিতাকেও কখনো কখনো উদ্দেশ্যহীনভাবে গন্তব্যমুখী হতে দেখা যায়। এই দ্বন্দ্ব মূলত কবির দৃষ্টিভঙ্গিগত এবং সামষ্টিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে স্পষ্ট। সাম্প্রতিক কবিদের কবিতার নিবিড় পাঠে এই সত্য নিদারুণভাবে উঠে আসে। তথাপি বঙ্গ রাখালের কবিতায় মা-মাটি-মানুষের গন্ধ যে নেই তা বলা যাবে না। বিশেষত এই কাব্য লণ্ঠনের গ্রাম-এর ‘পদ্মপুরাণ: অর্ধেক জীবন অর্ধেক ছেদন’ পর্বের কবিতাগুলোতে তা প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেছে। বঙ্গ রাখালের কবিতায় পাঠক যেমন বিজ্ঞানচেতনার নিরাসক্তি খুঁজে পাবেন, তেমনি আবেগ ও মননশীলতার উজ্জীবনও উপলব্ধি করবেন।
-মামুন মুস্তাফা
লণ্ঠনের গ্রাম
অয়ন্ত ইমরুল।
জন্ম ১২ ই এপ্রিল ১৯৮৭ ইং মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার অন্তর্গত আজিম নগর গ্রামে।পিতা— শাজাহান মিয়া ছিলেন একজন ব্যাবসায়ী।২০০১ সালের মার্চ মাসে তিনি হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
মা— বিউটি বেগম একজন গৃহিণী। ডিগ্রী পরিক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার ফলে পুনরায় আর পরিক্ষা দেয়া হয়নি।বর্তমানে চাকুরীজীবি।দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা এবং সমকাল পত্রিকা লেখা ছাপালেও বর্তমানে কোন প্রিন্ট মিডিয়ায় লেখা দিচ্ছি না।তবে
অনলাইন ভিত্তিক ওয়েবজিন—অংশুমালী,কালিমাটি,অপরজন পত্রিকা,ওয়াকিং ডিস্ট্যান্স সহ আরো দু একটা পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখী করছি।প্রকাশিত বই চারটি—
“ছায়া সমুদ্র” অনুপ্রাণন প্রকাশন—২০১৬
“বুদ্ধের ভায়োলিন “তিউড়ি প্রকাশন—২০১৮
” সাদা ধূলির দূরত্বে “ইতিকথা পাবলিকেশন—কলকাতা থেকে ২০২০
এবং ” স্বৈর হাওয়ার হরিণী”পরিবার পাবলিকেশন ২০২০ ঢাকা বইমেলা।
কিসমত আলী অথবা শূন্য
লেখক পরিচিতি :
অঞ্জন আচার্য। জন্ম: ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্র গাঙ্গিনারপাড়ের অধুনালুপ্ত লালালজে (স্থানীয় ভাষায় যাকে লাইলিপট্টি নামে ডাকা হতো)। লেখক মূলতঃ কবি, এছাড়া ভাষার ওপর বিভিন্ন সময় গবেষণার প্রকল্পে কাজ করেছেন। তারমধ্যে উল্লেখ্য, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন ‘জেন্ডার ও উন্নয়ন’ বিষয়ে, পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স লিমিটেডে ভাষা বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন, বাংলা একাডেমির অধীনে ‘বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান’ প্রকল্পের গবেষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। লেখকের এটি তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। এছাড়া আরও বেশকিছু গবেষণামূলক গদ্যের বইও প্রকাশিত হয়েছে।
তুমুল কোলাহলে কুড়াই নৈঃশব্দ্য
বঙ্গ রাখাল
জন্ম : ১২ জুন, ঝিনাইদহ।
শিক্ষা : ঝিনাইদহের বসন্তপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, দুঃখী মাহমুদ ডিগ্রী কলেজ (ঝিনাইদহ) থেকে এইচ.এস.সি। সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে স্নাতক (সম্মান) এবং একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা স্কুল অফ ইকনোমিকস থেকে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ইকোনমিকস ডিগ্রী। গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থেকে গণহত্যার উপর পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী অর্জন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সদস্য।
কর্মজীবন : লক্ষীপুর, ভবানীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের বাংলার প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে তিনি সমাজসেবামূলক একটা বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত।
প্রকাশিত গ্রন্থ :
১. সংস্কৃতির দিকে ফেরা (প্রবন্ধ, ২০১৫)
২. লোক মানুষের গান ও আত্ম অন্বেষণ (গবেষণা, ২০১৬)
৩. মানবতাবাদী লালন জীবন অন্বেষণ (প্রবন্ধ, ২০১৭)
৪. হাওয়াই ডাঙ্গার ট্রেন (কবিতা, ২০১৮)
৫. মনীষা বীক্ষণ ও অন্যান্য (প্রবন্ধ, ২০১৮)
৬. অগ্রন্থিত রফিক আজাদ (সম্পাদনা, ২০১৯)
৭. পাগলা কানাই ও তাঁর তত্ত্ব দর্শন (সম্পাদনা, ২০১৯)
৮. লণ্ঠনের গ্রাম (কবিতা-২০১৯)
৯. ছোটবোয়ালিয়া-জয়ন্তীনগর-বসন্তপুর গণহত্যা (অভিসন্দর্ভ)
সম্পাদিত ছোট কাগজ : নিহারণ, বঙ্গস্বর, শঙ্খধ্বনি, শব্দকুঠি ।
ই-মেইল : bangorakhal.bd@gmail.com
কবিতার করতলে
বিজ্ঞানের যে কোনও বিষয়ে আমি খুবই কৌতূহল বোধ করি ! আমি একজন মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার! আমি কয়েক দশক ধরে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সামরিক বাহিনীতে কাজ করি। আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের ইতিবৃত্ত বিশ্লেষণ করতে আমি যথেষ্ট পরিমানে সীমাবদ্ধতা বজায় রাখি ! এখানে আমার কাজ হলো এন্ড-টু-এন্ড বিশ্লেষণ এবং কিরকিসিয়া যুদ্ধে মূলত মিলিশিয়া এবং জয়েন্টফোর্সের মধ্যে লড়াইয়ের খুঁটিনাটি তোলে ধরা। তার আগে সাইবার হামলা নিয়ে চালু একটি জোকসটি বলে আমি যুদ্ধের বর্ণনায় যেতে চাই । মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সাথে পারমানবিক চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে “আক্রমণাত্মক” সাইবার হামলার অনুমোদন দিলেন ।অনুমোদন দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে তিনি তার জেনারেলদের ফোন করলেন ।জেনারেলের দিকে চিৎকার করে বললেন ,”আক্রমনের খবর কি?”
জেনারেল বললেন,”আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি স্যার।”
ট্রাম্প ক্ষেপে গিয়ে বললেন, “আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমরা সৈন্য পাঠাচ্ছি না?”
জেনারেল বললেন, “কিন্তু..কিন্তু…স্যার, এটা সাইবার স্পেসের মাধ্যমে একটি আক্রমণ..”
ট্রাম্প বললেন, “আপনি কি মনে করেন আমি স্টুপিড প্রেসিডেন্ট??” ………
সাইবার যুদ্ধের পাগলা ঘোড়া
ভূমিকা
‘ভাঙনের ডাক’ উপন্যাসটি ভাঙন কবলিত গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবি। উপন্যাসটিতে গ্রামের কৃষক জীবন, সবুজে ঢাকা গ্রাম নদী ভাঙনের ফলে কিভাবে তার সক্রিয়তা হারায়, সেই সাথে উঠে এসেছে ঐতিহাসিক একটি বাজারের বর্ণনা ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আর্তনাদ।
‘ভাঙনের ডাক’ উপন্যাস নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এখানে গ্রাম্য বধূর সবিস্তার কাহিনী সরলার চরিত্রের মাধ্যমে রূপায়িত হয়েছে। তাছাড়া করিম শেখ ও অন্তুর কাহিনীও এখানে প্রযুক্ত হতে দেখা যায়। বেজগাঁও গ্রামে রাজা রাজবল্লভের বাড়ি, দিঘলী বাজার, কদম পাগলের মাজার ঘিরে মেলা এখানে বর্ণিত হয়েছে।
‘ভাঙনের ডাক’ উপন্যাসে সত্যিকার অর্থেই ভাঙনের একটা সচিত্র ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে আবেগ, কৌতূহল, স্বপ্ন আকস্মিকতা উৎকণ্ঠা বজায় রয়েছে। যা পাঠক সাধারণের মনকে একটা সন্মোহ সীমানায় ধরে রাখতে সক্ষম। তাছাড়া এই উপন্যাসে সমাজ মানসের কিছু বিশ্বস্ত চিত্রগাথা পরিস্ফুট উঠার সুযোগ পায়। যা শুধু এদেশীয় সংস্কৃতির আদলে গড়ে ওঠেছে। যেমন ভেলা ভাসানি, বৈশাখী মেলা, কদম পাগলের বার্ষিক মেলা, বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য মেঘরানী উৎসব। সেই সাথে ফুটে উঠেছে একটি কৃষক পরিবারের অভাব-অনটন ও প্রকৃতির বৈরিতা। পদ্মার ভাঙন আর ঝড়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষের আর্তনাদ, যা পাঠ করে অনাস্বাদিত জগতের উপমিত আস্বাদন করা সম্ভব।
ভাঙনের ডাক
এতো মানুষ অথচ বনের বৃক্ষ ধরেই একদিন খুব কেঁদেছিলাম
মানুষ হয়ে গাছের কাছেই বলেছিলাম আরেকজন মানুষের দেওয়া
আমার অযাচিত নষ্ট হওয়া অফুরান কষ্টের কথা
বোবা বৃক্ষ চোখের থৈ-থৈ জল বুকের অন্ধগলির দ্বন্দ্ব আঁধার
সেদিন মুছে দিতে পারেনি তবুও প্রায় ছুটে যেতাম বৃক্ষের কাছে
সমস্ত মনস্তাপ ক্রুশবিদ্ধ স্বপ্নিল রামধনু তথা সুখে অসুখে
সেই বৃক্ষই ছিলো আমার একান্ত আপন সহচর;
জীবনভর কতশত-বার ফিসফিস শব্দে বুকে জাবের বলেছি মনের কথা
স্থির কোন পরিত্রাণ পাইনি, কিন্তু কোনদিন বলেনি
আর কখনো এসো না আমি বনের বৃক্ষমাত্র মানুষজাতের ভাষা বুঝি না
চোখের সামনে আমার সহচর বৃক্ষটি তিলে তিলে মরে যাচ্ছে দেখে
আজ আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে অনেক কাঁদলাম;
তুমি অকাল প্রয়াত হতে পার না কিন্তু হতে যাচ্ছ আমারই কারণে
আমার ব্যথার ভার তোমাকেও ব্যথাতুর করেছে মনে প্রাণে
তুমি বনের বৃক্ষ হয়েও আমাকে ধারণ করেছ বুকে
অথচ মানুষ হয়ে মানুষের ভাষা বোঝে না অনেক মানুষ আছে এ সংসারে।
কবিতা বুক ব্যান্ডেজ করে
লেখকের কথা
জাপানের প্রাতঃস্মরণীয় মনীষী শিল্পাচার্য ওকাকুরা (কাকুজোও) তেনশিন বলেছিলেন, জাপান এশিয়ার জাদুঘর। আমি বলি, জাপান একটি বৈশ্বিক দর্পণ। বিশ্বের চতুর্দিক তথা চারটি মহাদেশের ছবি এই দর্পণে প্রতিফলিত হয়ে আসছে হাজার বছর ধরে। বিশ্বের প্রায় সব সংস্কৃতিরই ধারা এসে মিলিত হয়েছে জাপানের মূলধারার সঙ্গে। বিশেষ করে ধর্ম ও সংস্কৃতির অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে এই দেশের জনধারায়। সন্দেহ নেই যে, চীন ও ভারতের প্রভাব অত্যন্ত গভীর। মধ্য যুগ পর্যন্ত ক্রমাগত জাপান প্রভাবিত হয়েছে প্রাচীন চীন ও ভারতের ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, পুরাণদ্বারা। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী, গোত্রের মানুষ প্রাচীনকালেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপবর্তী জাপানের ভূখণ্ডে এসে স্থানীয়দের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে। যে কারণে জাপানিরা সংকর জাতির লোক। আর এর ফলেই জাপান হয়ে উঠেছে সংস্কৃতির মনোরম বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি দেশ। যার তুলনা খুঁজে পাওয়া যায় না। যে সংস্কৃতির টানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঁচবার ভ্রমণ করেছেন জাপান। প্রতিবারই তিনি জাপানকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন।
জাপানে যারা আসেন প্রথমে তাদের কাছে সবকিছুই অদ্ভুত প্রতিভাত হয়। কেননা জাপানিদের জীবনধারাটাই স্বাতন্ত্রিক। কিন্তু দীর্ঘদিন এ দেশে বসবাস করলে পরে তাদের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, তারা সঠিক দেশেই এসে পড়েছেন! এখানে জীবনযাপন যেমন খুব বাস্তব ও কঠিন তেমনি স্বপ্নের বাস্তবায়ন বা ইচ্ছেপূরণের সমূহ সম্ভাবনাও বিদ্যমান। বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা। কাজের দেশ জাপান, ইচ্ছে করলে কাজ জোগাড় করা কঠিন কিছু নয়। আর রয়েছে উচ্চশিক্ষার বিস্তর সুযোগ। তবে, অবশ্যই জাপানিদের নিয়মনীতি মেনে চলা প্রথম ও শেষ শর্ত। কেননা, যতোই তারা বহির্বিশ্বের প্রভাব গ্রহণ করে একটি সর্বজনীন সংস্কৃতি ও বাতাবরণ নির্মাণ করে থাকুন না কেন, জাপানিরা কিন্তু মনেপ্রাণে ও আদর্শে জাপানিই। “জাপানিজম” বা “জাপানিত্ব” তাদের মধ্যে সর্বক্ষণ সর্বক্ষেত্রে জাগরুক। শান্তি ও বিশ্বাস এই দেশের মূল ভিত্তি। বিশ্বাস হারালে জাপানে আর বসবাস সম্ভবপর নয়, শান্তি বিঘিœত হওয়ার মতো কাজ জাপানিরা প্রশ্রয় দেন না। আস্থা, বিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম, মহাধৈর্যগুণ, অনুচ্চকণ্ঠ, সময়ানুগ, প্রতিবেশী-সম্প্রীতি, সহমর্মিতা, সমবায়মনস্কতা, অনুসন্ধিৎসা জাপানিদের চারিত্রিক পরিচয়। আর এইসব গুণাগুণ জাপানি সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা ও কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিহিত আছে।
জাপান প্রবাসের চার দশক হতে চললো। এই দীর্ঘ সময়ে জাপানকে দেখা, জানা ও পড়ার মধ্য দিয়ে যে ধারণা ও অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে তারই প্রতিফলন রয়েছে এই গ্রন্থের ২৫টি ছোটবড় প্রবন্ধের পরতে পরতে। প্রবন্ধগুলো ২০১৫ থেকে ২০০২১ পর্যন্ত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার উপসম্পাদকীয়, সাহিত্য সাময়িকী, সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন এবং সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। সংকলনভুক্ত করার তাগিদে নতুন করে তথ্য-উপাত্ত সংশোধিত ও সংযোজিত করার প্রয়াস নিয়েছি। আশা করি পাঠক বহুকিছু জানতে পারবেন এই প্রবন্ধগুলো থেকে যা বাঙালির ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবনকে উন্নত করার জন্য শিক্ষণীয় বলে বিশ্বাস করি। সেইসঙ্গে জানা যাবে বাংলাদেশ ও জাপান সম্পর্কবিষয়ক তথ্যসমূহ যা দুর্লভ বলেই বিবেচিত।
উদীয়মান “অনুপ্রাণন প্রকাশন” কর্তৃপক্ষ এর আগে “জানা অজানা জাপান” ৩য় খণ্ড প্রকাশ করে আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। এবারও ৪র্থ খণ্ড প্রকাশ করে আমাকে চিরঋণী করছেন। এজন্য জানাই আনত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। যেহেতু প্রবন্ধগুলো গবেষণামূলক, তাই ভুলভ্রান্তি যেমন থাকবে, তেমনি লেখকের মতামতের সঙ্গে পাঠকের মতভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। তার জন্য সকল দায়দায়িত্ব লেখকেরই, প্রকাশকের নয়।
Jana Ajana Japan Part-4 By Probir Bikash Sarkar
লেখক পরিচিতি :
হাসান মসফিক। পুরো নাম: সৈয়দ মাহবুব মসফিকুল হাসান। জন্ম: লোহাগড়া, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। পড়াশুনা শেষ করে বর্তমানে দেশীয় ঔষধ কোম্পানীর বানিজ্যিক বিভাগে কর্মরত আছেন। ২০১১ সালের শেষের দিকে লেখালেখি শুরু। সাহিত্যের জনপ্রিয় ওয়েবজিন বিভুঁই এর সম্পাদনা পরিষদের সাথে জড়িত।
মায়া ফড়িঙ
চেনা কোনো সংকেত নেই
লেখক পরিচিতি :
সাবরিনা সিরাজী তিতির। জন্ম: ২৬শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫। বেড়ে ওঠা ফরিদপুরে। শিক্ষকতা করেছেন ফরিদপুরেই। বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। প্রকাশিত হয়েছে দু’টি কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘ হয়ে যাই’ ও ‘আগুনজল’। একটি গল্পগ্রন্থ ‘রঙের ওপারে’।
সত্যি মুখোশ মিথ্যে মুখোশ
এই জন্মটা দলিল করেছি তোমার নামে
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.