Additional information
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.41 $ 1.88
‘বারুদ মিশ্রিত মৃত্তিকা’ দ্বিতীয় দশকের কবি বিষাদ আব্দুল্লাহ’র প্রথম কবিতাবই। চর্চার শুরু থেকেই নিভৃতচারি হিসেবে চলতি দশকের শেষ সময়ে এসে তাঁর বই প্রকাশ হলো। প্রচারের মোহে ভেসে যায় নি বিষাদ বরং হৃদয়ে বারুদ মেখে বুক ঘষে ঘষে নিজেকে তৈরি করেছেন। এই সময়ে সমাজ, রাষ্ট্র, দর্শন আর রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠতে পারা এত সহজ না। করপোরেট পৃথিবী যেখানে নিয়ত রঙিন হাতছানি দিয়ে ডাকছে, সেই রঙিন পৃথিবী থেকে নিজেকে নিভৃত করাও কঠিন। যে সময়ে প্রেমিকা কবিতা লেখার কারণে টেলিভিশনে দেখে না বলে অভিযোগ করে, পত্রিকার পাতায় বড়-বড় ছবি দেখে না বলে কবিকে নিয়ে হেয়ালি করে, সেই সময়ে নিজেকে এসব দেখানোর বারোবাজি থেকে দূরে রাখা অত্যন্ত দুরূহ। অন্তত প্রেমিকার দাবি মেটাতে গেলেও। বিশেষ করে প্রেমিকার আবদার, সমাজকে দেখানোর বিষয় থেকে বিষাদ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। যার কারণে তথাকথিত দ্বিতীয় দশকের সংকলনগুলোতেও তার কবিতা নেই। কবিতা লেখা সহজ কোন বিষয় নয়, জীবনের দর্শনকে ধারণ করে চিন্তার জগত তৈরি করাও অত মসৃণ নয়। জগতের সবচে কঠিন কাজের একটি। সেই কর্মের দায়ভাগ শুধু কবিতা চর্চাকারী তরুণের একার নয়, দেশেরও। সেই দায়িত্ব দেশকেও নিতে হবে, সুকুমার সৌন্দর্য লালন করতে হবে। শিল্পের জন্য শিল্প, না মানুষের জন্য শিল্প এই বুজরুকি প্রতারণাও শেষ করে দিতে হবে। মানুষের জন্য শিল্পই হোক শিল্পীর অভিস্পা। সেই শিল্প করেও কবিতাকে শিল্পের শর্তে নির্মাণ করা যায়। সুতরাং মানবিক দায় এড়াতে যারা শিল্পের জন্য শিল্প বলে জগতকে ধোঁকা দিতে চায় তাদের কথা আমরা বলবো না। লড়াই দরকার, বিপ্লব প্রয়োজন। ‘বারুদ মিশ্রিত মৃত্তিকা’ হোক সেই বিপ্লবের মন্ত্র। মধ্যবিত্ত তারুণ্যকে আঘাত করে এ লড়াই চলবে…
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
তুহিন দাস, কবি ও লিটলম্যাগ কর্মী। জন্ম: ১১ জানুয়ারি ১৯৮৫, জল ও কবিতার শহর বরিশালে। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। প্রথম কবিতার শিরোনাম ‘সমাধিপৃষ্ঠা’। ২০০০ সালে ‘আরণ্যক’ সাহিত্যপত্র সম্পাদনা শুরু করেন। সম্পাদনার জন্যে ২০১১ সালে ‘চিহ্ন সন্মাননা’ পেয়েছেন। বর্তমানে ‘আরক’ পত্রিকা ও প্রকাশনায় কর্মরত আছেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ছয়, ‘বনসাই প্রকল্পের মানুষ’ ‘অসুখময় দিনরাত্রি’ ‘বিষাদনীলঘোড়া’ ‘কাজল বিক্রেতার স্বপ্ন’ ‘বাগান সিরিজ’ ও ‘দূরের পাড়া কাছের বাড়ি’।
কাঠের মুখ
লেখক পরিচিতি :
হান্নান হামিদ, লেখক নাম কালের লিখন। জন্ম: আগস্ট, ১৯৮৪। জামালপুর। ‘বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস’ লেখকের প্রথম বই।
বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস
আবু জাঈদ। জন্ম: ২২শে জুলাই ১৯৮৩, ঢাকা। পড়াশুনা অসমাপ্ত রেখে একসময় কবি বাউণ্ডুলে জীবনের এলোমেলো আলপথে নেমে যান বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, তাই বলে কাব্যচর্চা থেমে থাকেনি। এক সন্তানের জনক। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
মানচিত্রের ফাঁসি চাই
সিদ্দিক প্রামানিক। জন্ম: ২১শে আগস্ট ১৯৭৯, কুস্টিয়ার কুমারখালী থানার চরভবানীপুরগ্রামে। বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন এবং বাম প্রগতিশীল সংগঠনের সক্রিয় সংগঠক ও সংস্কৃতকর্মী। প্রথম বই ‘হাঙরের সমুদ্রে মননশীল মাছ’।
উন্মাদের কনসার্ট
রঞ্জনা বিশ্বাস। জন্ম: ১০ডিসেম্বর, ১৯৮১। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে খ্রিস্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ ও ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’ কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবির প্রকাশিত কাব্যফসল। এছাড়া কবি কবিতাচর্চার পাশাপাশি ফোকলোরচর্চাকেও ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। নৃ-তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মী কবির আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ ও ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ প্রকল্পে কাজ করছেন। এছাড়া এখন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগে কর্মরত আছেন।
বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস
লেখক পরিচিতি :
মোহাম্মদ হোসাইন। জন্ম: ৩১শে অক্টোবর। বিএসসি ও এমএসসি’র শিক্ষা সমাপন শেষে এখন শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত আছেন। লেখকের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ মোট ১১টি। ‘ভালোবাসা নির্বাসনে গেছে’ ‘মেঘগুলো পাখিগুলো’ ‘অরণ্যে যাবে অস্তিত্বে পাপ’ উল্লেখযোগ্য বইয়ের শিরোনাম।
অনুদিত রোদের রেহেল
লেখক পরিচিতি :
নিখিল নওশাদ। জন্মসন: ১৯৮৯ইং। বড়িয়া, ধুনট, বগুড়া, বাংলাদেশ। ‘বিরোধ, ‘নিওর’ ও ‘নীড়’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই। এছাড়া ছোটগল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।
এটি একটি চিৎকার
দেবাশীষ ধর। জন্ম: ৫ই জানুয়ারি, ১৯৮৯। চট্টগ্রাম। কবিতার ছোটকাগজ ‘বাঙাল’ এর সম্পাদক। কবির এটি প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
ফসিলের কারুকাজ
মুর্শিদা জামান। জন্ম: ১৯৮৩ সনে বর্তমান বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায়। শৈশব ও বেড়ে ওঠা দক্ষিণের খুলনা শহরে। বাংলায় অনার্স সহ এমএ করেন ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির সূত্রপাত। কবিতা লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট কাগজ ও সাহিত্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকাতে ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃতি ও পশু-পাখির প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও সখ্যতা রয়েছে। বর্তমানে তিনি লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত।
অদৃশ্য ছায়ার প্রজাপতি
বাবুল হোসেইন। জন্ম: তেঘরিয়া, সৈয়দপুর, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।
আত্মমুগ্ধ শিকল
ফারহানা খানম। জন্ম: ১৯শে এপ্রিল ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপে। ‘ভুগোল ও পরিবেশ’ বিষয়ে স্নাততোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে ব্যাংকে চাকুরি শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। নয় ভাই-বোনের মাঝে সবার ছোট বলেই আদরও পেয়েছেন বেশি। প্রথম প্রকাশিত বই, ‘ইছামতি’ (কলকাতা থেকে প্রকাশিত)।
তৃষ্ণার্ত বালুতট
অয়ন্ত ইমরুল। জন্ম: ১২ই এপ্রিল ১৯৮৭ইং, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার আজিমনগর গ্রামে। পদ্মা নদীর ভয়াল গ্রাসে শৈশবেই ঠিকানার পরিবর্তন ঘটে বর্তমানে সাভার আশুলিয়ায় বসবাসরত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই।
ছায়াসমুদ্র
সোলায়মান সুমনÑ জন্ম ১মে ১৯৭৯, চাঁপাই নবাবগঞ্জ। তরুণ বয়সে লেখালেখি শুরু। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস। পেশায় শিক্ষক। ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন প্রকাশনের সাথে যুক্ত।
ছায়াগুলো জেগে থাকে
লেখক পরিচিতি :
দেবাশীষ মজুমদার। জন্ম চাঁদপুরে, তার বয়স যখন সাত, সরকারি চাকরিজীবী বাবা’র বদলি হয় চট্টগ্রামে, এ শহরেই বেড়ে ওঠা। ভারতে কিছুদিন পড়াশোনা ছাড়া পুরো জীবনটাই এখনো পর্যন্ত কাটিযেছেন এই বন্দর নগরীতে। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অন্যদিন’।
অস্তিরতার নাম দেশলাই কাঠি
রামিশা বিয়ের পরই মাহীকে কেবল ভালোবাসেনি মাহীও রামিশাকে ভালোবেসে ছিলো। ডাক্তার মাহী বছর দুয়েক পর হঠাৎ স্কলারশিপ পেয়ে রাশিয়ায় পি.এইচ.ডি. করার জন্য চলে যায়। তখন রামিশা দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। প্রতিদিনই কথা হতো ইন্টারনেটে, কথা না হলে যেনো দু’জনার কারো ঘুম হতো না। হঠাৎ করেই দু’বছর যেতে না যেতেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলো। মানুষের জীবনের বিশ্বাসী ভালোবাসার গল্পগুলো কখনো কখনো বড় অদ্ভুত। গতবাঁধা জীবনে কষ্টের ভিন্নতার গল্প কখনো মনে হয় একই রকম। কখন যে হারিয়ে যায় জীবনে সুখের গানগুলো তা কেই-বা বলতে পারে। প্রেম ভালোবাসা যেনো নিত্য নিকানো উঠানে ঘিরে থাকা স্মৃতি। বদলে যায় প্রণয়ের রীতিনীতি। অথচ রামিশার মনজগত ছিলো এতোটাই প্রখর আর স্বচ্ছ সে পারেনি সর্ম্পক ছিন্ন করে সুহাসকে নিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে যেতে। সন্তানের পিতৃ পরিচয় আর এক দিকে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ীকে একা ফেলে স্বার্থপরের মতো চলে যেতে পারেনি। তাছাড়া মাহীতো ডিভোর্স দেইনি। তাই জীবনে নতুন কোনো ভোরের প্রত্যাশা করেনি। এই চিঠি লেখার ভিতর বাস্তবতার ছোঁয়া অজান্তে থেকে গেলেও যেতে পারে। তবুও একতরফা ভালোবাসার ত্যাগ, সন্তানের পরিচয় তাকে পৃথিবীর আলো দেখানোর জন্য, সন্তান যেনো জানে তার বাবা আছেন। তাই সব কিছুই গোপন করে রামিশা। লড়াই ছিলো তার একার তাই সব সময় একতরফা ভালোবাসায় মাহীকে চিঠি লিখে যেতো। এতো ভালোবাসার সম্পর্কের ভিতর একটি নারীর একাকীত্বের সাথী ছিলো এই চিঠি, আর কল্পনায় ঘেরা তার আর্তনাদের ভিতর স্বপ্ন সে বুনে যেতো অবিরাম…
ভালো থেকো ভালোবাসা
প্রবন্ধ এমন এক সাহিত্যকর্ম, যার রস পাঠকমনে তীরের মতো অথবা বুলেটের মতো বিদ্ধ হয়। হেঁয়ালিহীন এই সাহিত্যকর্ম পাঠককে চালিত করে জ্ঞানের পথে। ক্রমশ পেছনের দিকে হাঁটতে থাকা বর্তমান বাংলাদেশে প্রবন্ধ-সাহিত্য খানিকটা শক্তিহীন। লেখকরা অজ্ঞাত কারণে সাহিত্যের এই শাখার প্রতি উদাসীন। ফলে এর পাঠকও কমেছে আগের তুলনায়। মানবিক পৃথিবী নির্মাণে মূর্খতার অন্ধকার তাড়াতে যাঁরা শিল্পের প্রদীপ জ¦ালিয়েছেন, যাঁরা নিজ নিজ কর্মে হয়ে উঠেছেন প্রদীপতুল্য, তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, হকিং, মেরি শেলী, নাইপল, বব ডিলান, ইশিগুরো প্রমুখ নিঃসন্দেহে অগ্রগামী। তাঁদের শিল্পকর্মের গভীরে ডুব দিয়ে অবগাহন করেছেন প্রাবন্ধিক উদয় শংকর দুর্জয়। দক্ষ ডুবুরির মতো তুলে এনেছেন তাঁদের বহুমাত্রিক চিন্তার নির্যাস। টুকরো টুকরো সব নির্যাসকে একত্র করে তিনি যে মালা গেঁথেছেন, তার নাম দিয়েছেন প্রবন্ধ সংগ্রহ। এসব প্রবন্ধে কঠিন বিষয়ের মর্মভেদ করতে তাঁর সরল বয়ান পাঠককে আকৃষ্ট করে, আন্দোলিত করে; জন্ম দেয় এক নতুন চিন্তার। প্রবন্ধ-সাহিত্যের এই দুর্দিনের দুর্জয়ের প্রবন্ধ সংগ্রহ হয়ে উঠবে সুখপাঠ্য, ফিরিয়ে আনতে পারে এই সাহিত্যের সুদিন।
স্বকৃত নোমান
২০.১১.২০২০
প্রবন্ধ সংগ্রহ
ভূমিকা-
ঘুরে বেড়ানোর স্বভাবটা ছোটবেলা থেকেই ছিলো। এ অভ্যাসটা বাবা‘ই করিয়েছেন। মায়েরও মনে হয় প্রছন্ন প্রশ্রয় ছিলো। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছি ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছি। এরপর পেশাটাও বেছে নিয়েছি ঘুরে বেড়ানোর। এ ঘুরে বেড়ানোর মাধ্যমে মানুষকে নানাভাবে জানার সুযোগ হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে দুরে বসে মানুষ দেখতে আমার বেশ লাগে। প্রতিদিনের নতুন অভিজ্ঞতা থেকে আজো প্রকৃতি, পরিবেশ, সমাজ, সংসার থেকে জানার চেষ্টা করছি। মানুষের মনসতত্ত্ব আমাকে বেশ ভাবায়। একজন মানুষের বহুরকম ভাবনা। সে থেকে যদি কিছু অর্জন করে থাকি তা কলমের ভাষায় বলবার এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
অন্যজীবন
সম্পাদকীয়, অনুপ্রাণন—১০ম বর্ষ ২য় সংখ্যা
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, চীনের উহান প্রদেশ থেকে গতবছর অর্থাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম করোনা সংক্রমণের সংবাদ মিলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নভেল করোনা ভাইরাসটি ২০১৯-এর ডিসেম্বরেই চীনে শনাক্ত হয়েছিল, ফলে ভাইরাসটির নামের সাথে ১৯ সংখ্যাটি জুড়ে গিয়ে এর পুরো নাম হয় কোভিড-১৯। চীন থেকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুতই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গিয়ে অতিমারীর আকার ধারণ করে।
এই ভাইরাসটি কৃত্রিম না প্রাকৃতিক এই নিয়ে কূটনৈতিক বিতর্ক আছে। বিজ্ঞান এটাকে প্রাকৃতিক বলেই রায় দিয়েছে। কৃত্রিম হলে চীনের দায় আছে না হলে নয়, এটা ঠিক নিশ্চিত বলে দেয়া যায় না। প্রকৃতিতে পশুপাখির শরীরে, বিশেষ করে লোমে ও লালায় নানারকম ভাইরাস আছে। গৃহপালিত জীবজন্তুর শরীরে যে সকল ভাইরাস আছে, সেসব ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে ক্ষতির মাত্রা খুব কম, কিন্তু বন্যপ্রাণির শরীরে মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও প্রাণঘাতী যেসব ভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে সেসব ভাইরাসের মধ্য থেকে অনেকগুলো সম্পর্কে প্রাণিবিজ্ঞানে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। নভেল করোনা ভাইরাস উহানের একটি বন্যপ্রাণির বাজার থেকেই ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রকৃতির জীববৈচিত্র্য ও ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে বন্যপ্রাণি আহরণ ও নিধন বিশ্বজুড়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই বাজারে বন্যপ্রাণি এবং গৃহপালিত জীবজন্তু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য আনয়ন করা এবং তার ফলে জনস্বাস্থ্য হানিকর ভাইরাস পশুর দেহ থকে মানবসমাজে প্রবেশের পথ করে দেয়া কোনোভাবেই বিচক্ষণ ও নীতিসম্মত কাজ বলে মেনে নেয়া যায় না।
আমরা যদি অতিমারীর বিশ্ব-ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, ৫৪১ থেকে ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিউবোনিক প্লেগের সংক্রমণের ফলে ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল, ইউরোপ, তৎকালীন বাইজেন্টাইন ও কনস্ট্যান্টিনোপল সাম্রাজ্যভুক্ত সকল এলাকা, মিশর এবং আরব উপদ্বীপে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ জনগোষ্ঠীর প্রাণহানি ঘটে। মধ্যযুগে ১৩৩১ সালে চীন থেকে একই বিউবোনিক প্লেগের বিশ্বমহামারী দ্বিতীয়বার শুরু হয়। প্লেগের এই মহামারী এবং পাশাপাশি চলমান গৃহযুদ্ধে তখন চীনের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর মৃত্যু ঘটে। ক্রমে চীন থেকে তখনকার বিশ্ববাণিজ্যের গমনপথ ধরে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় এই প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে। ১৩৪৭ সাল থেকে ১৩৫১ সাল, এই চার বছরে ইউরোপের ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীর মৃত্যু হয়। শুধুমাত্র সিয়েনা এবং ইতালিতে বিউবোনিক প্লেগে মৃত্যুর হার ছিল প্রায় অর্ধেক। তারপর পুনরায় ১৮৫৫ সনে চীনে বিউবোনিক প্লেগ দ্বারা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। উল্লেখ করা যায় যে, বিউবনিক প্লেগ একধরনের বাদামি ইঁদুরের শরীর থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়েছিল যা কি-না চীনের বাজারে তখন বিক্রয় হতে দেখা গিয়েছিল। চীন থকে বিউবোনিক প্লেগের তৃতীয় ঢেউ ক্রমেই পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আর তখন শুধুমাত্র ইন্ডিয়াতেই এই প্লেগের সংক্রমণের ফলে প্রায় এক কোটি কুড়ি লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। মোম্বাইয়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই প্লেগের সংক্রমণ রোধকল্পে সংক্রমিত অধিবাসী সহকারে একেকটি পাড়া-মহল্লা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ফ্র্যাঙ্ক স্নোডেন উল্লেখ করেছেন যে, এতে করে যে সত্যি কোনো উপকার হয়েছে কেউ তার প্রমাণ দিতে পারেনি। এগনোলো ডি টুরা নামে চতুর্দশ শতাব্দীর একজন কাহিনিকারের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, এই ভয়ানক ঘটনার সত্য বিবরণ মানুষের জিহ্বা দিয়ে উচ্চারণ করাই অসম্ভব। বলা যেতে পারে যে, এই ভয়াবহ ঘটনা যে দেখেনি, সে বিশেষভাবে আশীর্বাদপ্রাপ্ত। সংক্রমিত ব্যক্তির বাহুমূল এবং কুঁচকি অস্বাভাবিক ফুলে যায় এবং কথা বলতে বলতেই ধপ করে পড়ে মৃত্যু লাভ করতে থাকে। মৃতের সংখ্যাধিক্যের কারণে তাদেরকে গণকবরে দাফন করা হয়। ফ্লোরেন্স নগরীর জিয়োভানি বোকাচ্চিওর বর্ণনায়, মৃতদেহ সৎকারের জন্য ন্যূনতম শ্রদ্ধাটুকু দেখানো হয়নি যেটা কি-না একটি মৃত ছাগলের জন্যও প্রাপ্য হতে পারতো। কেউ কেউ মৃতদেহ বাড়িতে লুকিয়ে রাখতো। অনেকেই সংক্রমণের ভয়কে মানসিকভাবে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু তারপরও ভুগতে ভুগতে মানুষ এক পর্যায়ে বেপরোয়া হয়ে যায়। বোকাচ্চিওর ভাষায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানুষ অতিরিক্ত মদ্যপান করতে থাকে, নাচে-গানে মত্ত হয়ে থাকে এবং পৃথিবীর যাবতীয় সুখ এবং আনন্দ উপভোগ করাতেই নিজেদের নিয়োজিত করতে থাকে। সংক্রমণ ও মহামারীর বিষয়টি তারা ঘাড় থেকে এমনভাবে ঝেড়ে ফেলতে চাইতো যেন সেটা একটা বিশাল কৌতুক ছাড়া আর কিছু না। আমরা সেই একই ধরনের পরিণতির দিকে এগোচ্ছি কি-না?
অতীত অতিমারীর বিশ্ব-ইতিহাসে দেখা যায় যে, সংক্রমণের ধাপগুলোর মধ্যে প্রথম ঢেউ থেকে দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় ঢেউ অধিক থেকে অধিকতর প্রাণঘাতী হয়েছে। অন্যদিকে টিকা আবিষ্কারের ইতিহাসে বিজ্ঞানীরা চমক দেখিয়ে করোনা ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাব ও অতিমারীর এক বছরের কম সময়ের মধ্যে টিকা আবিষ্কার ও প্রয়োগ শুরু করেছেন। যার ফলে আশা করা যায় যে, সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপটি হয়তো অতীতের মতো ততটা মারাত্মক আকার ধারণ করবে না। কিন্তু তারপরও জীবন অথবা জীবিকা এসব প্রশ্নে, বিশেষ করে লকডাউনের মধ্যেও কীভাবে অর্থনীতিকে ন্যূনতম চলমান রাখা যায়, এসব প্রশ্নে বাস্তবে সর্বোত্তম ভারসাম্য রক্ষা করা দিন দিন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, সরকারের দেয়া লকডাউন নীতিমালা ও স¦াস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে না। তার পরিবারের অন্ন জোগাড়ের প্রয়োজনের চাপে উপার্জনক্ষম মানুষ ঘরে বসে থাকতে পারছে না।
কিন্তু, অন্যদিক নভেল করোনা ভাইরাস মানুষের শরীরে পুনঃপৌনিক সংক্রমণের মাধ্যমে ক্রমে ক্রমে রূপান্তরিত হয়ে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। যার ফলে, সংক্রমণের প্রথম ঢেউ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও ভাইরাসের রূপান্তরিত রূপ এই বছরের মার্চ থেকে ক্রমেই প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণের বাঁধ ভেঙে দিয়ে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের চূড়া যে প্রথম ঢেউয়ের থেকে আরো উঁচু এটা মৃত্যু ও সংক্রমণের হার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই বোঝা যায়। বাংলাদেশে এ-পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়েছে প্রায় ৮ লাখ এবং একইসময়ে বিশ্বে সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৬৩ লাখ। মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশে প্রায় ১২ হাজার এবং বিশ্বে প্রায় ৩৪ লাখ। সংক্রমণ ও মৃত্যুর নিছক সংখ্যাগুলোর মধ্যে এক একজনের আপন হারানোর অপার বেদনা লুকিয়ে আছে। আর আমরা আপন হারানোর বেদনার মতোই বেদনা অনুভব করি যখন আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার জগৎ থেকে হারিয়ে যায় তারকা ব্যক্তিরা। এই সংখ্যার শ্রদ্ধাস্মরণ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এপার ও ওপার বাংলার ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের এরকম কয়েকজন ব্যক্তির জীবন ও কর্ম নিয়ে এক বা একাধিক আলোচনা। যারা সকলেই এই করোনাকালে সম্প্রতি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তা ছাড়াও এই সংখ্যাটিতে অতিমারীর অভিঘাতের নানাদিক উঠে এসেছে শিল্প ও সাহিত্যের নানা শাখায়। অন্তর্ভুক্ত গল্প ও কবিতার কোনো কোনোটির মাঝে আমরা দেখতে পাই, অতিমারীর আঘাতের চিহ্ন। মানবতার অসহায়ত্ব ও দুর্ভোগের করুণ বর্ণনা এসব রচনাকে করেছে অশ্রুসিক্ত।
এই অতিমারীর মধ্যে শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, অনুপ্রাণন পত্রিকাটির নিয়মিত প্রকাশনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন ছিল। অনুপ্রাণন পত্রিকাটির ৯ম বর্ষ ২য় সংখ্যা থেকে ৯ম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা নির্ধারিত সময় থেকে কিছুটা দেরিতে হলেও প্রকাশিত হয়েছে। ১০ম বর্ষ ১ম সংখ্যাটি ফেব্রুয়ারি, ২০২১ একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়া নির্ধারিত ছিল, কিন্তু বইমেলা পিছিয়ে যাওয়ায় সেটা প্রকাশিত হয় ২ এপ্রিল ২০২১। এই অতিমারীর মধ্যে অমর একুশে বইমেলা শুরু হয় ১৭ মার্চ এবং লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে শেষ হয় ১২ এপ্রিল। অনুপ্রাণন প্রকাশন থেকে ২০২০-২০২১ অতিমারীকালে এ-পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ৬৮টি গ্রন্থ। গ্রন্থগুলোর কোনো কোনোটাতে উঠে এসেছে অতিমারীর অনুভব চিত্র।
বাঙালি, লেখক-আড্ডার মধ্য দিয়ে সৃজনশীল সাহিত্যের সূত্র খুঁজে পায়। বিভিন্ন লোকালয় ভ্রমণের মাধ্যমে গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলো ধরা দেয় এবং চলমান জীবনের নানামাত্রিক রূপ তাদের গল্প-উপন্যাসে উঠে আসে। অতিমারীর পূর্বে ঢাকা শহরে এবং দেশের জেলা পর্যায়ে লেখক আড্ডার কতগুলো আয়োজনের কর্মসূচি নিয়মিত অথবা অনিয়মিতভাবে বছরজুড়ে চলতে থেকেছে। লেখকরা ব্যক্তি এবং গ্রুপ পর্যায়ে লেখার বিষয়বস্তু তৈরির জন্য, গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বই সংগ্রহ ও বইপড়ার কাজ চালিয়ে গেছে। কিন্তু এই অতিমারীর সময় আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়। লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় লেখার জন্য, গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভ্রমণ অথবা বই সংগ্রহের কাজে বিঘ্ন ঘটেছে। কিন্তু তাতে কি লেখা বন্ধ থেকেছে? অতিমারীকালে লেখকরাও নতুন পরিস্থিতির, নয়া-স্বাভাবিক অবস্থার সাথে লেখার কার্যক্রমের রুটিন ও পদ্ধতি পরিবর্তন করে তাদের লেখা চালিয়ে গেছে। এই প্যান্ডেমিকের লকডাউন বা বিধিনিষেধ অথবা সতর্ক অবস্থান নিয়ে বাসায় থাকার সময় অনেক নতুন লেখকের জন্ম হয়েছে। যারা আগে থেকে লেখালেখি করতো অথবা যারা নতুন লেখক তারা সবাই লেখালেখির মধ্য দিয়েই ঘরবন্দী সময়টাকে নিয়োজিত করেছে।
এসব শিল্প-সাহিত্যকর্মে কি জনবিচ্ছিন্নতা, একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতার স্বাক্ষর থেকেছে? আমার হাতে পত্রিকার জন্য যেসব লেখা অথবা পুস্তক প্রকাশের জন্য যেসব পাণ্ডুলিপি এসেছে, আমার পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে যে, এই নয়া-স্বাভাবিক পরিস্থিতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লেখার ধারায় পরিবর্তনের কোনো ছাপ ফেলতে পারেনি। স্বাভাবিক জীবনের তীব্র আকাক্সক্ষা নয়া-স্বাভাবিকতাকে গৌণ বোধেরই একটা অন্তহীন প্রচেষ্টা। আর যেসব লেখায় অতিমারী কবলিত নাগরিক অথবা গ্রাম্য জীবনের বাস্তব চিত্র এসেছে সেসব বাস্তব চিত্রে অতিমারীর ভয়াবহতা অথবা ভয়ঙ্কর রূপটি মুখ্য হয়ে ওঠেনি। যদিও আমরা দেখতে পাই, প্রতিদিনই মানুষের মৃত্যু হচ্ছে কিন্তু এর সংখ্যাটা স্বাভাবিক পরিস্থিতির মোট মৃত্যুহারকে অল্পই প্রভাবিত করেছে। এ-রকম একটা ধারণা থেকেই হয়তো মানুষ লকডাউনের বিধিনিষেধ অথবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা হালকাভাবেই নিয়েছে।
কিন্তু তাহলেও দেশে গত মার্চ ২০২০ থেকে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হওয়ার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেনাবেচায় পণ্যভেদে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বই কেনাবেচার মোট মূল্যমান স্বাভাবিক সময়েও এমনিতে কম। তারপর এই নয়া-স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সেটা কমে নেমে এসেছে স্বাভাবিক পরিস্থিতিকালে বিক্রয় মূল্যমানের তুলনায় শতকরা ২৫ ভাগে। তবে এটা যদি সাময়িক পরিস্থিতি হয়, তাহলে যে ক্ষতিসাধন হয়েছে সেটা হয়তো স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এলে অধিকাংশ প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট মুদ্রণশিল্প মিটিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু অতিমারী যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে পুস্তক প্রকাশনা ও মুদ্রণশিল্পে যে ক্ষতি হবে, সে ক্ষতির ফলে প্রকাশনা ও মুদ্রণশিল্পের একটি বিরাট অংশ এই জগত থেকে চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে। মানুষের জীবিকা রক্ষা করার তাড়নার বাস্তবতায় ব্যাপকহারে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন অথবা লকডাউনের নীতিমালা উপেক্ষা করার যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে, এসব ঘটনা যাদের জীবিকা প্রকাশনা এবং মুদ্রণশিল্পের ওপর নির্ভরশীল তাদের একটি বিরাট অংশকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না। কারণ, বইপড়া এই নয়া-স্বাভাবিককালের একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা দূর করার মাধ্যম হয়ে উঠতে আবারো ব্যর্থ হচ্ছে। এই অতিমারীকালে অনলাইনে কেনাবেচার পরিমাণ সামগ্রিক বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, সেটা বই ও পত্রিকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি।
আমাদের দেশে প্রকাশকদের মধ্যে বই অথবা ম্যাগাজিন প্রকাশের ধরনের ওপর ভিত্তি করে কতগুলো ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ভাগটি পাঠ্যপুস্তক, নোট অথবা গাইড বইয়ের প্রকাশক। দ্বিতীয় ভাগটি পাঠ্যপুস্তক, নোট অথবা গাইড বই প্রকাশের পাশাপাশি সৃজনশীল সাহিত্য অথবা গবেষণাগ্রন্থও প্রকাশ করে থাকে। আর তৃতীয় ভাগটি শুধুমাত্র সৃজনশীল সাহিত্য অথবা গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ করে থাকে।
এই তিনটি ভাগ বা শ্রেণির প্রকাশকরা সকলেই এই অতিমারীকালে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকতো, তবে প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ততার হাত থেকে বেশ ভালোভাবেই রক্ষা পেতো। অন্যদিকে যেসব প্রকাশক শুধুমাত্র সৃজনশীল সাহিত্য ও সামাজিক গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ করে তাদের পরিস্থিতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকা-না থাকার সাথে সম্পর্কিত নয়। অতিমারীর কারণে বই ক্রয়-বিক্রয় সামগ্রিক হ্রাস পাওয়ার সাথেই তাদের অর্থনীতি জড়িত এবং যেটা শোচনীয় বললেও কম বলা হবে।
বাস্তবে আমাদের জানা দরকার যে, এই অতিমারীকালে কাদের আয় হ্রাস পেয়েছে এবং কাদের আয় যে পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে সে পরিমাণ হ্রাস তাদের আর্থিক সচ্ছলতার ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলেনি? কারা সৃজনশীল সাহিত্য, বই ও ম্যাগাজিনের মূল ক্রেতা? যাদের আয় সামগ্রিক হ্রাস পেয়েছ, তারাই কি সৃজনশীল সাহিত্য পুস্তক ও ম্যাগাজিনের ক্রেতা? আবার দৃশ্যত. এই অতিমারীকালেও কাপড়-জামার ঈদবাজার সরগরম হলেও সামগ্রিক ঈদের কেনাবেচার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে কি-না? না-কি স্বাভাবিক ছিল? না-কি স্বাভাবিক পরিস্থিতির সময়কাল থেকে কম ছিল? বস্তুত কাপড়-জামার ঈদবাজার এই অতিমারীকালে বেশ চাঙ্গা দেখা গেলেও সামগ্রিক হিসাবে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ অতীত স্বাভাবিক পরিস্থিতিকালের চেয়ে কম ছিল। বস্তুত এই অতিমারীকালে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের খরচের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে এবং খরচের সিংহভাগ ব্যয়িত হচ্ছে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে এই অতিমারীকালে যাদের আয় তাৎপর্যপূর্ণভাবে হ্রাস পায়নি এবং যারা সৃজনশীল সাহিত্যের বই পড়ে, তারা হয়তো এই অতিমারীকালেও বই কেনা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণির বড় অংশটি যারা আয়ের একটি ভাগ কষ্ট করে হলেও সৃজনশীল সাহিত্য অথবা গবেষণাগ্রন্থ ক্রয়ের জন্য ব্যয় করতো, অর্থের অভাবে তারা এই অতিমারীকালে বইয়ের বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না; করলেও ক্রয়ের পরিমাণ খুব বড় আকারেই হ্রাস পেয়েছে।
অর্থাৎ একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং অন্যদিকে বইয়ের ক্রেতাদের আয় হ্রাস, সামগ্রিকভাবেই বই ও ম্যাগাজিন প্রকাশনা এবং মুদ্রণশিল্পে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। অর্থনীতির অন্যান্য খাতে সরকার ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্পসুদে ঋণ দিয়ে এই অতিমারীকালে প্রণোদনা দিয়েছে, কিন্তু পুস্তক প্রকাশনা এবং মুদ্রণশিল্পের মালিকরা ব্যাংকখাত থেকে স্বল্পসুদে ঋণ গ্রহণ করার সুযোগ নানাকারণেই গ্রহণ করতে পারছে না। প্রকৃতপক্ষে প্রকাশনা ও মুদ্রণশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বার্ষিক এককালীন অনুদানের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের এগিয়ে আসা এখন এই অতিমারীকালে সময়ের দাবি। শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার তালিকা করে বার্ষিক এককালীন এই অনুদান প্রদান করার ব্যবস্থা করতে পারে।
সর্বশেষে, করোনাকালের গদ্য নিয়ে কথা। প্রশ্ন হচ্ছে, করোনাকালের গদ্যের বিষয়বস্তু কী হতে পারে? অবশ্যই অতিমারী ও অতিমারীর অভিঘাত। অতিমারীর অভিঘাত শুধু মানুষের অসুস্থতা, দেহত্যাগ এবং পরিবার ও সমাজে তার বাস্তব ও মানসিক অভিঘাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। করোনাকালের গদ্যের মধ্যে আসতে পারে বহুমাত্রিক বিষয়। যেমন- চিকিৎসা, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় অথবা সামগ্রিকভাবেই এই অতিমারীর বিরুদ্ধে জীবন ও জীবিকা রক্ষার লড়াই। অতিমারীর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা সম্বন্ধীয় চিন্তাভাবনা। নয়া-স্বাভাবিক পরিস্থিতির বিভিন্ন দিকের বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ এবং সুপারিশ। কবিতা ও গল্পের পাশাপাশি করোনাকালের গদ্য রচনায় কোনো কোনো লেখক মনোনিবেশ করতে পারেন।
১০ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা
ফেরদৌস নাহার, কবিতা ও গদ্য শ্রমিক। জন্ম, বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর। বর্তমানে কানাডায় বসবাস। কবিতার পাশাপাশি আঁকছেন ছবি, লিখছেন গদ্য ও গান। জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘মাইলস’-এর সংগীত রচয়িতা। প্রিয় বিষয়Ñ মানুষ এবং প্রকৃতি। আকাশের ঠিকানা:
ferdousnahar@gmail.com
প্রকাশিত হয়েছে ১৩টি কবিতা ও ৩টি প্রবন্ধের বইÑ
কবিতা: ছিঁড়ে যাই বিংশতি বন্ধন (চর্যাপদ ১৯৮৬) সময় ভেঙ্গেছে সংশয় (নিখিল ১৯৮৭)
উলঙ্গ সেনাপতি অক্টোপাস প্রেম (নসাস ১৯৮৮) দেহঘর রক্তপাখি (চর্যাপদ ১৯৯৩)
রূপান্তরের ঘোড়া
বিমূর্ত ভাবনার মূর্ত প্রকাশ কবিতা। কবি ঘোরলাগা নেশার ঘোরে মননে সৃষ্টি করেন কবিতার অন্তর্নিহিত ভাব। অন্তর্নিহিত ভাবে কবি ভাবনার শিল্প-দ্যোতনায় তৈরি হয় নান্দনিকতা। সংবেদনশীল কবিমনই কবিতার জন্মভূমি। কবিমন জীবন ও জগতের সংস্পর্শে এসে ভাবাবেগে স্পন্দিত হয়ে ছন্দিত বাণী বিকশিত করে। কবিতার ছন্দময় শরীরে চরম শৈল্পিক উৎকর্ষতায় কবি কবিতার আত্মা সৃষ্টি করেন। চিত্রকল্প, রূপকল্প, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অলঙ্কার, চৈতন্যে মুগ্ধতার আবেশ ইত্যাদি দিয়ে সাজিয়ে তোলেন দেহসৌষ্ঠব। কবিতা হয়ে ওঠে আলো-আঁধারি। বোঝা না বোঝার রহস্য জাদু প্রতিভাত। যেন শীতের শেষ বিকেলের রোদ, ছুঁতে ছুঁতে না ছোঁয়া। বাঁশের ঝাড়ে হঠাৎ ওঠা ক্ষ্যাপা বাতাসের চেনা অথচ অচেনা সুর। ডঃ হুমায়ূন আজাদ বলেছেন, ‘কবিতা বোঝার জিনিস নয়। কবিতা অনুভবের, উপলব্ধির।’ কবিতা দুজ্ঞেয় কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত প্রণোদনা। বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার, নিজের সঙ্গে অন্যের, বর্তমানের সঙ্গে অবর্তমানের, সমকালের সঙ্গে মহাকালের যোগ যত নিবিড় হয় কবিতা তত মহার্ঘ হয়ে ওঠে। কবির বিমূর্ত ভাবনায় কবিতা কখনো শোকাহত হৃদয়ের আর্তনাদ, বেদনা বিধুর কান্না, আবার কখনো অধিকার বঞ্চিত শোষিত, নিপীড়িত মানুষের ধ্বনি এবং স্বাধীনতা মন্ত্রে উজ্জীবিত সৈনিক। কবিতা এভাবেই কালের প্রতিভূ হয়ে এসেছে। হয়ে উঠেছে শাশ্বত। কবির ভাব প্রকাশের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম কবিতা, কেননা এই শিল্পটি নান্দনিকতা ও জীবনমুখীনতায় ভরপুর। কবি এর মাধ্যমে বুদ্ধিভিত্তিক স্ফুরণ ও মননশীলতার নিখুঁত চিত্রকর্মটি সম্পাদন করতে পারেন।
কবিতার ভেতরে থাকে উন্মাদনা, উত্তেজনা, ভাব-সাধনা। যে কোনো শিল্পের ভাবই প্রধান। কবির কবিতার ছন্দ, বুনন, অলঙ্করণ, রস ইত্যাদির ভিন্নতা প্রাপ্তি হয় বটে, কিন্তু সংবেদনশীলতা অপূর্ণ থাকে না। ক্ষুণœ হয় না শিল্পগুণ। কবিতা বিশুদ্ধ মননচর্চার ফসল। যে ফসলের পরিচর্যা কবি নিরন্তর করেন। তবে কবিতার আত্মা ও শরীরের শৈল্পিক আচ্ছাদনই কবিতার সার্থকতা। কবিতা বহুরৈখিক, সরল একরৈখিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। কবিতা বোদ্ধারা অনেক কথা বলেছেন। কীটস মনে করেন, কবিতা যুদ্ধ করবে তার সূক্ষ্ম অপরিমেয়তা, ঝংকারে নয়। বোদলেয়ার কবিতাকেই কবিতার শেষ কথা বলেছেন। তাই কবিতা নিয়ে বলা যায়, ‘বল বল তোমার কুশল শুনি, তোমার কুশলে কুশল মানি।’
বল তোমার কুশল শুনি
লেখক পরিচিতি :
প্রজ্ঞা মৌসুমী। জন্ম: এক শরতে দাদুবাড়ি কুমিল্লায়, বেড়ে ওঠা সুনামগঞ্জে। ঊনিশ বছর থেকে পড়াশুনার জন্যে প্রবাস জীবন। এক এসাইনমেন্টের জন্যে প্রথম ইংরেজি কবিতা লিখার শুরু। প্রথম জীবনের কবিতাগুলো ইংরেজিতেই লেখা, কিন্তু মন আঁকুপাঁকু করে বাংলায় লিখতে; তারই ফলশ্রুতিতে আজকের প্রথম কবিতা ফসল ‘পৌরাণিক রোদ এবং অতিক্রান্ত কাঠগোলাপ’। লেখক কবিতা ও গল্প লিখে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার তাই বাংলা সাহিত্যের অত্যুজ্জল আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করার স্বপ্ন দেখেন অহর্নিশ।
পৌরাণিক রোদ এবং অতিক্রান্ত কাঠগোলাপ
ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন ১০ম বর্ষ ৩য় সংখ্যা
ভূমিকাঃ
যে কথা অন্য কোনভাবেই প্রকাশ করা যায় না । যে কথা প্রকাশ করার জন্য কোন মাধ্যমের দরকার হয়ে পড়ে। যে কথা চার দেয়ালের মাঝে গুমরে গুমরে কাঁদে কখনো কখনো। এমনি একদিন বড় দুঃসময় কবিতা এসেছিল আমার ঘরে আত্মার আত্মীয় হয়ে। বন্ধু, সমাজ, সংসার, প্রিয়জন, স্বজন কেউ কোত্থাও একাকিত্বের স্বর শুনতে পায়নি যখন। নিঃসঙ্গতার সংগে মিশে যেতে যেতে যে কথা কবিতা হয়ে উঠেছিল। কবিতায় খুঁজে ফিরেছিল প্রেরণা, প্রত্যাশা বেঁচে থাকবার অবলম্বন। যে কবিতারা চোখে দেখেছিল অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন, ধর্ষণ আবার সৌন্দর্যমহিত অবারিত ফসলের মাঠ, চিরসবুজ নিসর্গ, প্রকৃতি, ঋতু পরিবর্তন, মানবতার বন্ধন, দেশ, রাজনীতি, নৈতিক শিক্ষা, কত শৈস্যের দীপ্তমহিত সম্ভার। কত স্মৃতি, চেনা -অচেনার সুস্থ প্রতিভার বিশালতা অন্তর্লীনে ঢেউ তুলে কখন যে গড়ে ওঠে কাব্য হয়ে কে তা জানে! স্বপ্ন তাই নতুন প্রত্যাশায় মেলেছে পাখা। লিখে যাব যতদিন প্রাণ আছে পদচ্ছাপ রেখে যাবার প্রত্যয়ে অর্ন্তদেশের অব্যক্ত বর্ণমালার সুনিপুণ কারিগর হয়ে প্রকৃতি ও প্রেমে।
দ্বিধাগ্রস্ত পা রাখি পথে
শরতের মেঘ
শরতের মেঘ যেন
বড় আলাভোলা
কালিঝুলি নেই মনে
বেশ দিলখোলা!
নিষ্পাপ শিশু হয়ে
ছোটাছুটি করে
আকাশের ঘরে
দিন কিবা রাতে
সহজতা, মুগ্ধতা
ভরে দুই হাতে!
মনে নেই এক তিল
জিলাপির প্যাঁচ
বজ্রেরা অকারণ
করে না তো ঝনঝন
কোনো খ্যাঁচ খ্যাঁচ!
মায়া দিয়ে আকাশটা
ঢেকেঢুকে রাখে
রোদবালা তার বুকে দুধেভাতে থাকে!
সকলেই তাকে নিয়ে
দিনভর মেতে
মধুচোখে চেয়ে রয়
পথে যেতে যেতে…
আমি তাই হতে চাই
শরতের মেঘ
যার বুকে থোকা থোকা
সরল আবেগ!
রাঙা ছড়ার রঙধনু
আলী রেজা। জন্ম: ১৯৫৭। মুক্তিযুদ্ধে আলোড়িত কবি, সত্তর দশকে মূলত ছোটকাগজে লেখালেখি শুরু করেন। সদ্য অবসরে যাওয়া একটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক। এটি কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
আলী রেজা
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.