Additional information
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
$ 1.41 $ 1.88
শহরের প্রতিটি দরজা জানালার মতোই নিঃসঙ্গ, শহরের মানুষগুলো। এ নিঃসঙ্গ মানুষগুলোই হাসির লিফলেট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তার সংসার, তার সমাজ, তার রাষ্ট্রে। আর মন জুড়ে জমতে থাকে কিছু উত্তরহীন প্রশ্ন, কিছু আক্ষেপ, কিছু ক্ষোভ। এমন কিছু উত্তরহীন প্রশ্ন, কিছু আক্ষেপ আর কিছু ক্ষোভের সংকলনই ‘যে শব্দ ঠিকানা জানে না’।
কবিতার নামকরণে ও কবিতা নির্বাচনে আমার বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। এ ক্ষেত্রে যাঁর অকৃপণ সহযোগিতায় ‘কাব্য’ ‘গ্রন্থে’ পরিণত হয়েছে, তিনি আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। অনেক ব্যস্ততার মাঝে কবিতাগুলো নির্বাচন করে, কিছু কবিতার অংশ বিয়োজন, কিছু কবিতার নতুন নামকরণ করে গ্রন্থরূপে প্রকাশযোগ্য করে দেয়ার জন্য স্যারের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা। এখানেই শেষ নয়, কাব্যগ্রন্থটি যে ‘স্বনাম’ ধারণ করেছে, এর একচ্ছত্র কৃতিত্ব স্যারেরই।
কবিতার বানানে কিছুটা স্বেচ্ছাচারিতা থাকে, যা পূর্ববর্তী কবিদের ক্ষেত্রেও দেখেছি। তবে আধুনিক বানানরীতির শুদ্ধতাকে তো এড়ানো যায় না! কবিতার শুদ্ধ বানানের ক্ষেত্রে যাঁর একটি রাতের বেশিরভাগ সময় নির্ঘুম কেটেছে, তিনি আমার আরেক শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ইমন সালাউদ্দিন স্যার। আমি তাঁর কাছেও সমানভাবে কৃতজ্ঞ।
Weight | 0.200 kg |
---|---|
Published Year |
লেখক পরিচিতি :
হান্নান হামিদ, লেখক নাম কালের লিখন। জন্ম: আগস্ট, ১৯৮৪। জামালপুর। ‘বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস’ লেখকের প্রথম বই।
বিশ্বাস শুধুই নিঃশ্বাস
মুর্শিদা জামান। জন্ম: ১৯৮৩ সনে বর্তমান বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায়। শৈশব ও বেড়ে ওঠা দক্ষিণের খুলনা শহরে। বাংলায় অনার্স সহ এমএ করেন ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির সূত্রপাত। কবিতা লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট কাগজ ও সাহিত্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকাতে ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃতি ও পশু-পাখির প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও সখ্যতা রয়েছে। বর্তমানে তিনি লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত।
অদৃশ্য ছায়ার প্রজাপতি
রঞ্জনা বিশ্বাস। জন্ম: ১০ডিসেম্বর, ১৯৮১। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামে খ্রিস্টিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ ও ‘আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি’ কাব্যগ্রন্থ দু’টি কবির প্রকাশিত কাব্যফসল। এছাড়া কবি কবিতাচর্চার পাশাপাশি ফোকলোরচর্চাকেও ব্রত হিসাবে নিয়েছেন। নৃ-তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মী কবির আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবি বাংলা একাডেমির ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’ ও ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ প্রকল্পে কাজ করছেন। এছাড়া এখন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগে কর্মরত আছেন।
বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস
রাজন্য রুহানি। পরিবারের দেওয়া সনদসাক্ষ্য নাম মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। জন্ম: ২রা নভেম্ভর ১৯৮০, জামালপুর জেলা শহরের হাটচন্দ্রায়। কলেজে পা দেবার সাথে সাথেই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মফস্বল সাংবাদিকতার পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে বারবার কবিতার কছেই ফেরা। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং। ১৯৯৮ থেকে কবিতার ভাঁজপত্র শব্দদূত সম্পাদনার সাথে যুক্ত। ঐ বছরই অন্যান্য লেখক সহযোগে আলোচনাগ্রন্থ- ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ; আতিয়ার রহমানের ৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এটি লেখকের প্রকাশিত এককবই।
গল্প সমাপ্তির গান
রনক জামান। জন্ম:১৬ই ডেসেম্বর ১৯৯১, মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায়। লেখালেখির হাতেখড়ি ছোটবেলাতেই কবিতার প্রতি মুগ্ধতা থেকেই তার প্রতি ভালোবাসা। এটাই কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে, যৌথ কবিতাগুচ্ছ ‘মায়ানগরীর বৃষ্টিকথন’, কবিতার ই-বুক ‘শরীর ছোঁয়া আঙুলগুলো’ এবং অনুবাদ উপন্যাস ‘ললিতা’।
ঘামগুলো সব শিশিরফোঁটা
লেখক পরিচিতি :
শঙ্করী দাস। জন্ম: ৮ই মে, ১৯৫৮ সনে নিজ জেলা জামালপুরে। কবি প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থগুলোÑ গল্প: ‘প্রতিবিম্ব ও অন্যান্য গল্প’ ‘জলমাটির গল্প’ ও ‘রাহুর চন্দ্রগ্রাস’। কবিতাÑ ‘ঘাসবোনা গ্রাম তাঁতবোনা গ্রাম’। স্মৃতিচারণমূলকÑ ‘গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’। গল্পের জন্যে পেয়েছেন পাক্ষিক ঐকতান (বর্ধমান) পত্রিকা পদক। শিশু কবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ও নক্ষত্র সাহিত্য পুরস্কার।
বিহান বেলার ঈশ্বর
লেখক পরিচিতি :
নিখিল নওশাদ। জন্মসন: ১৯৮৯ইং। বড়িয়া, ধুনট, বগুড়া, বাংলাদেশ। ‘বিরোধ, ‘নিওর’ ও ‘নীড়’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সাথে যুক্ত। এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই। এছাড়া ছোটগল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।
এটি একটি চিৎকার
সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব। জন্ম: ১৯৭৮ সালে বরিশাল জেলা সদরে করিমকুটির নামক স্থানে। তার লেখার বিষয় মূলতঃ কবিতা। সময় নাট্যদলের সাথে একযুগ পার করেছেন। গানও লিখতেন কিন্তু বন্ধুবরের প্রয়ানে, অভিমানে আর সেপথ মারাননি। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকলেও নিজেকে একজন কবিতার শতরঞ্জি মোড়ানো শ্রমিক বলেই মনে করেন। এটি কবির প্রথম বই।
রূপোর দ্যুতি
লেখক পরিচিতি :
শারমিন রাহমান। জন্ম: ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩। দ্ইু সন্তানের জননী। বাংলাদেশের স্বনামধন্য স্কুলগুলোতে দীর্ঘ ১৫ বছর শিক্ষকতা শেষ করে বর্তমানে চট্টগ্রাম আর্ট সেন্টার ‘ধ্যান’ এর পরিচালক। বিশেষ আগ্রহ আছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে। এটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
অপ্রাকৃত কবচ
নাহিয়ান ফাহিম। জন্ম: ২৩শে মার্চ, ১৯৮৪। ময়মনসিংহ জেলা। ঢাকাতে বেড়ে ওঠা। মূলতঃ পাঠক, ফলতঃ লেখক। সাহিত্য পত্রিকা ‘জলমাঝি’র সম্পাদক। মার্কেংটিং বিভাগে স্নাতকোত্তর। পেশাগত জীবনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিনদুপুরের নোটবই’।
মধ্যবিত্ত কবিতা
ফারহানা খানম। জন্ম: ১৯শে এপ্রিল ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপে। ‘ভুগোল ও পরিবেশ’ বিষয়ে স্নাততোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে ব্যাংকে চাকুরি শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। নয় ভাই-বোনের মাঝে সবার ছোট বলেই আদরও পেয়েছেন বেশি। প্রথম প্রকাশিত বই, ‘ইছামতি’ (কলকাতা থেকে প্রকাশিত)।
তৃষ্ণার্ত বালুতট
মেঘ অদিতি। কবি ও গল্পকার হিসেবে ‘দু’বাংলাতে পরিচিত। জন্ম: ৪মে, জামালপুর। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘জলডুমুরের ঘুম (কাব্য)’ ‘অস্পষ্ট আলোর ঘোড়া (গল্প)’ ‘অদৃশ্যতা হে অনিশ্চিতি (কাব্য)’ এবং ‘সময় শূন্যতার বায়োস্কোপ (মুক্তগদ্য)।
প্রবেশিধকার সংরক্ষিত
এক.
বর্তমান ইরাকের মসুল যে শহর, প্রাচীনকালে তাকে বলা হতো নিনেভেহ। সে সময়ের আসিরীয় রাজা আসুরবানিপালের লাইব্রেরির ধ্বংসাবশেষ থেকে ১৮৪৩ সালে গবেষকরা প্রাচীন আক্কাডিয়ান ভাষায় লেখা কিছু মাটির ফলক খুঁজে পেয়েছিলেন। আসুরবানিপালের সময়ে লেখার পদ্ধতি ছিল এমন যে, প্রথমে মাটির ফলকে খোদাই করে লেখা হতো। তারপর সেটাকে স্থায়ী রূপ দিতে পোড়ানো হতো। তখনকার দিনে লেখার এই পদ্ধতিকে ‘কিউনিফর্ম’ বলা হতো। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে গবেষকরা মাটির ফলকের সেই লেখার অর্থ উদ্ধার করেছিলেন, যা ছিল আধুনিক সাহিত্যবিশ্বের জন্য চমকস্বরূপ। মোট ১২টি মাটির ফলক থেকে উদ্ধার হয় এমন এক অসাধারণ কল্পকাহিনী, যা পরবর্তীতে ‘উর শহরের রাজা গিলগামেশ ও তার বন্ধু এনকিদুর কাহিনী’ হিসেবে সমাদৃত হয় বিশ্বসাহিত্যের বোদ্ধাদের কাছে! ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর প্রথম লিখিত গল্প এটাকেই ধরা হয়ে থাকে। মাটির ফলকগুলোতে গবেষণা চালিয়ে জানা যায়, সেগুলোর বয়স ছিল প্রায় ৪০০০ থেকে ৪৫০০ বছর, যা শুধু রামায়ণ বা মহাভারতই নয়, গ্রিসের অডিসি আর ইলিয়ডের চেয়েও পুরোনো ছিল।
সাহিত্য জগতে প্রচলিত একটা কথা আছেÑ ‘যারা গল্প বা উপন্যাস লেখেন, তাঁরা স্বভাবজাত নিঃসঙ্গ হন’। এই নিঃসঙ্গতাই লেখককে বিভিন্ন গল্পের ভিতরে একাকার করে দেয়, উদ্বুদ্ধ করে গল্প রচনায়। কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললে এভাবেও বলা যায়, ‘গল্পের ভিতরে যা কিছু থাকে, তা লেখকের মনোজগতে বিচরণ করা পুঞ্জিভূত বিভিন্ন ঘটনা, চরিত্র আর দিনরাত্রির গুচ্ছভাবনা’। লেখকের মনোজগতের যে বিশাল সময়ভা-ার, তা টইটম্বুর থাকে এসব ঘটনা, চরিত্র আর দিনকাল দিয়ে। ঘটনা, চরিত্র, দিনকাল বলতে গল্পের ভিতর যা কিছু থাকে, তা তো লেখকের ভাবনারই ‘কার্বনকপি’। সুতরাং ভাবনার জগতে লেখক কোনো অর্থেই নিঃসঙ্গ নন! বরং পার্থিব জগতের যে কোনো মানব-মানবীর অভ্যস্ত সমাজ-জীবনের চেয়ে লেখক অনেক বেশি সামাজিক এবং ব্যস্ত! লেখকের পার্থিব জীবন বিবিধ ‘অনুষঙ্গে’ পূর্ণ থাকলে গল্পের যে ঘটনা, চরিত্র বা আবহাওয়াগুলো থাকে, তা সৃষ্টিতে হয়তো লেখক সেভাবে সফল হতে পারতেন না। তাহলে কি লেখক সামাজিক জীব নন? লেখক কি তাহলে সংসারত্যাগী এমন কেউ যাকে সন্ন্যাসী, বাউল বা ব্রহ্মচারী বলে? এর জবাব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৪ সালের ২৭ জুন শিলাইদহ থেকে ইন্দিরা দেবীকে এভাবেই দিয়েছিলেন- ‘আজকাল মনে হচ্ছে যদি আমি আর কিছু না করে ছোট ছোট গল্প লিখতে বসি, তাহলে কতকটা মনের সুখে থাকি এবং কৃতকার্য হতে পারলে হয়তো পাঁচজন পাঠকেরও মনের সুখের কারণ হওয়া যায়। গল্প লেখার একটা সুখ এই, যাদের কথা লিখব তাঁরা আমার দিনরাত্রির সমস্ত অবসর একেবারে ভরে রেখে দেবে, আমার একলা মনের সঙ্গী হবে, বর্ষার সময় বদ্ধঘরের সংকীর্ণতা দূর করবে এবং রৌদ্রের সময় পদ্মাতীরের উজ্জ্বল দৃশ্যের মধ্যে আমার চোখের পরে বেরিয়ে বেড়াবে’! রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প রচনার প্রাথমিক প্রেরণা বা উদ্দেশ্যের যে রূপকল্প, তার কিছুটা আভাস এই কথাগুলোর ভিতরেই পাওয়া যায়।
রেহানা বীথি এমনই একজন গল্প-লেখক। বীথির পৈতৃক নিবাস চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহাডাঙা গ্রামে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম পাস করার পর ২০০১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় একজন আইনজীবী হিসেবে বীথির কর্মজীবন শুরু হয় এবং বর্তমানে তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘শনিবারের আসর’ নামে একটি সংকলনে তাঁর প্রথম গল্পটি প্রকাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে রেহানা বীথির গল্প-লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ।
রেহানা বীথি মোট চৌদ্দটি বাছাইকৃত ছোটগল্প দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর ‘আলো আসে ওখানেও’ বইটি। এটাই বীথির প্রথম বই। প্রথম বই প্রকাশের সময় সব লেখকই প্রচ- স্নায়ুচাপে থাকেন। এটা অবশ্য নিয়ম নয়; তবে অবধারিত! বই প্রকাশের বিভিন্ন চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজটি হচ্ছে বইয়ের একটা যুৎসই নাম দেয়া। শুধুমাত্র নাম খুঁজতে গিয়ে লেখককে অনেক রাত নির্ঘুম কাটাতে হয়, সলাপরামর্শ করতে হয় সজ্জনদের সাথে। তারপরেও কি লেখক সন্তুষ্ট হতে পারেন! ‘বইয়ের শ্রেষ্ঠ নাম পৃথিবীর কোনো লেখকই কোনোদিন খুঁজে পেয়েছেন বলে শুনিনি’। রেহানা বীথির ক্ষেত্রেও হয়তো এর ব্যত্যয় হয়নি! একটা বইয়ে অনেকগুলো গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ থাকতে পারে এবং সেখান থেকে কোনো একটা লেখার ‘শিরোনাম বা নাম’ ব্যবহার করে বইয়ের নামকরণ করাটা বেশ পুরোনো প্রথা, যা বীথির বইয়ের ক্ষেত্রেও হয়েছে। বইয়ে ব্যবহৃত নামটি যে লেখার শিরোনাম বা নাম থেকে নেয়া হয়, সেই লেখাটি তখন একই সাথে অন্যান্য লেখাগুলো থেকে কিছুটা আলাদা গুরুত্ব বা মর্যাদা পায় এবং বইয়ের অন্যান্য লেখাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বইয়ের নামকরণের ক্ষেত্রে লেখককে যথেষ্ট সচেতন এবং মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে হয়, যাতে ‘বইয়ের নাম’ পড়ে পাঠকের বুঝে নিতে অসুবিধা না হয় বাকি লেখাগুলোর আদি-অন্তের খবর এবং সেই সাথে বইয়ের পরিশোধিত আগাম কিছুটা স্বাদ!
দুই.
রেহানা বীথির চৌদ্দটি গল্পের একটি ‘আলো আসে ওখানেও’ এবং এই গল্পের নামেই লেখক মূল বইয়ের নামকরণ করেছেন। স্বভাবত কারণেই গল্পটির গুরুত্ব বা মর্যাদা বইয়ের অন্যান্য গল্পের চেয়ে কিছুটা আলাদা হয়েছে! ‘আলো আসে ওখানেও’ গল্পটি সমাজ-জীবনের হাজারো অনুচ্চারিত যে অধ্যায়গুলো রয়েছে তাঁদেরই একটি, যেখানে অন্ধগলির এক ববিতার কথা লিখেছেন বীথি। তাঁর বর্ণনায় ফুটে উঠেছে অন্ধকার গলির বাসিন্দাদের কথা। ‘দিনের আলোয় ঘুমিয়ে থাকে তাঁরা। দিন শেষে যখন রাত নামে, জেগে ওঠে ওরা। সাজানো পসারের মতো নিজেদের সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকে দোকানের মতো ঘরগুলোর সামনে; খদ্দেরের আশায়! উৎকট সাজ আর শরীরের মোহময় বিভঙ্গে খদ্দেরকে আকৃষ্ট করার প্রয়াসে ঢাকা পড়ে যায় পাহাড়সম বুকের মাঝে জমে থাকা কষ্টগুলো। কোনো অবসরে কষ্টগুলো কখনো-সখনো জেগে ওঠে, মনে করিয়ে দেয় অতীতের ভাসা ভাসা কিছু সুখস্মৃতি! ‘ফুলি’ নাম থেকে ববিতা হয়ে ওঠা নারীর মৃত বৃদ্ধ স্বামীর গায়ের আতরের কড়া গন্ধ আর হামানদিস্তায় পান ছেঁচার মতো কদর্য হাসি গায়ে জ্বালা ধরায়। মনে পড়ে যায় সময়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া ফুলির কথা, দুখিনী মা, সবুজ গ্রাম…’। গল্পের মূল নায়িকার ফুলি থেকে ববিতা হয়ে ওঠার অবিচারে ভরা অসম যে পথ, রেহানা বীথি চমৎকার শব্দশৈলীতে তা ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন এই গল্পে। আদিকাল থেকে বাংলাসাহিত্যে এ-ধরনের গল্পের পটভূমি পাঠকদের কাছে নতুন নয়। তবুও রেহানা বীথির ‘আলো আসে ওখানেও, পাঠকদের কাছে এক ‘ভিন্নতার’ স্বাদ এনে দেবে!
ধবধবে জ্যোৎস্নায় সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদে গিয়ে দেখা যায় ডাকঘর, যেখানে গচ্ছিত রয়েছে প্রিয়জনদের অসংখ্য চিঠি। অথচ কেউ সেখানে নেই! সিঁড়ির সবক’টা ধাপ পেরিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে স্বপ্নভঙ্গের এক অনবদ্য গল্প ‘সামনে সিঁড়িপথ’। ‘স্বপ্নচাষী’ গল্পে একজন টিউশন মাস্টারের স্বপ্নহীন জীবন কীভাবে একটু একটু করে রঙিন স্বপ্নের বুননে বদলে দেয়া যায়, তারই গল্প! বাস্তবতার পরাশৃঙ্খলতাকে অস্বীকার করে অলীক স্বপ্নের জালে বোনা অবাস্তব জীবনের যে উপাখ্যান, লেখক শব্দের নিপুণ কারুকার্যতায় ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর ‘স্বপ্নচাষী’ গল্পে। গ্রামের সহজ-সরল ভ্যানচালকের গল্প ‘আলাদিনের চেরাগ এবং…’। আধুনিক গল্পের সাথে রূপকথার অনবদ্য সংমিশ্রণ ঘটিয়ে গল্পকারের ভূমিকায় লেখক রেহানা বীথি এক অনবদ্যতার ছাপ রেখেছেন এই গল্পে, যেখানে যথেষ্ট সতর্কতার সাথে তিনি দারিদ্র্যের কষাঘাতে পতিত নিম্ন-মধ্যবিত্তের মনস্তাত্ত্বিক ঘোর-প্যাঁচগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন। বেদে বহরের মেয়ে ললিতার ডাঙার প্রতি আকর্ষণ, ডাঙার ছেলে গণেশের সাথে তার প্রেম এবং সংসার বাঁধার স্বপ্ন, ‘এই তিনকে’ বেঁধেছেন লেখক তাঁর ‘মধুমতির বেদেনী’ গল্পটিতে। এছাড়াও বইটিতে রয়েছে নগরে দেবদূত, অতিক্রম, দলছুট প্রজাপতি, সুখকেদারা এবং অতসীপ্রেম, বিষধর, ফেরা, কাঁসার বাটি, শোরগোল অতঃপর…ইত্যাদি শিরোনামের অত্যন্ত সুপাঠ্য গল্পগুলো।
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ শহর উরের রাজা ছিলেন গিলগামেশ। একাধারে তিনি ছিলেন অত্যাচারী এবং খামখেয়ালী। তিনি শারীরিকভাবে তিনভাগের দুই ভাগ ছিলেন দেবতা। ভাবতেন, দেবতাদের মতো তিনিও ছিলেন অসীম ক্ষমতাশালী এবং অসাধ্য বলে তাঁর ভাবনায় কিছু ছিল না। গিলগামেশের গল্পটি ছিল মূলত ‘অহংবোধ ভেঙ্গে একজন সাধারণ মাটির মানুষে রূপান্তর হওয়ার’ গল্প। ‘রাজা গিলগামেশ’ গল্পে রূপকের ব্যবহার অত্যন্ত প্রাঞ্জল। কয়েক হাজার বছরের পুরোনো গল্পে রূপকের ব্যবহারে এবং তার মাত্রায় যে পা-িত্যের বহর দেখা যায়, তা গল্পটিকে করেছে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য। রেহানা বীথির গল্পগুলোতেও রয়েছে রূপকের অকৃপণ ব্যবহার। তাঁর প্রতিটা গল্পে একই সাথে রয়েছে জীবনের বিবিধ বৈচিত্র্য এবং অবিচারে পতিত জীবন, যা খোলা চোখে দেখা গেলেও লেখকের বর্ণনাশৈলীতে হয়েছে আরো বেশি প্রাঞ্জল।
‘রাজা গিলগামেশ’ যদি পৃথিবীর প্রথম স্বীকৃত গল্প হয়, তাহলে তারই ধারাবাহিকতায় আজ-অবধি যত গল্প লেখা হয়েছে এবং রেহানা বীথির গল্পগুলোও একই ধারাবাহিকতায় এবং ফ্রেমে বাঁধা বললে অত্যুক্তি করা হবে না। বইয়ের প্রতিটা গল্পে রূপক ব্যবহারের আধিক্য, সূক্ষ্ম বিবেচনায় সমাজ-সংসারের চুলচেরা বিশ্লেষণ, জীবনের বিস্তৃত স্বপ্ন, গল্পের ছলে বিবিধ সমস্যার সমাধান ইত্যাদি বিষয়াদিগুলো গল্পকে শুধু গল্পের সীমারেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, আগবাড়িয়ে ক্ষেত্রবিশেষে তার সমাধানও দিয়েছেন লেখক। বীথির প্রতিটি গল্পে যে মিলের জায়গাটি রয়েছে, তা হলো ’স্বপ্ন’। গল্পের উপাদান হিসেবে স্বপ্নের ব্যবহার একটি স্বভাব বা অভ্যাস। সে কারণে গল্প-লেখক হিসেবে রেহানা বীথির ‘লেখক-চিহ্ন’ হতে পারে ‘স্বপ্ন’, যা তাঁকে পাঠকসমাজে স্বতন্ত্রভাবে উপস্থাপন এবং স্বপ্রতিভূ করবে!
গল্প লেখার মানুষ পৃথিবীতে খুব বেশি নেই; তবে গল্প বলতে পারে প্রায় সবাই। গল্প লেখা আর গল্প বলা এক জিনিস নয়। গল্প লেখা এক ধরনের কাজ, যা তৈরি করতে হয়। ‘ঘরে তো মানুষই থাকে। কিন্তু ঘর বানাতে পারে কয়জন’! গল্প লেখারও কিছু শৈলী এবং কলাকৌশল আছে, যা সবাই রপ্ত করতে পারেন না। এ ব্যাপারে কয়েকজন লেখকের সাথে একাধিকবার আলাপও হয়েছে আমার। সবাই একমত হয়েছেন যে, গল্প লেখা গল্পবাজদের কাজ নয়। গল্প লেখার সুনির্দিষ্ট কলাকৌশল বা ব্যাকরণ হয়তো নেই। তবে যা কিছু আছে, তা নিজ থেকেই আয়ত্ত করতে হয়। লেখকের সিদ্ধতা লাভ হয় নিজ তাগিদেই। গল্প লেখা ‘গুরুমুখী বিদ্যা নয়’! পৃথিবীর সবকিছুই সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলে। গল্প লেখারও কিছু নিয়ম আছে, যার অনুসরণে লেখকের সিদ্ধতার পরিমাপ হয়। ভিন্ন কথায়, একজন লেখকের সাথে অন্য লেখকের পার্থক্যের জায়গাটা মূলত তাঁদের সিদ্ধতা পরিমাপের মধ্য দিয়েই হয়। আর এই পরিমাপের গুরুদায়িত্বটি পালন করেন পাঠক! ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় রেহানা বীথির প্রথম প্রকাশিত গল্পের বই ‘আলো আসে ওখানেও’ নিঃসন্দেহে পাঠকদের কাছে সমাদৃত হবে।
সাব্বির খান, লেখক ও সাংবাদিক
আলো আসে ওখানেও
কবি ফিরোজ আহমেদ এর জন্ম ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুংগীপাড়া থানার অন্তর্গত গিমাডাংগা গ্রামে। পিতা শেখ আব্দুর সাত্তার ও মা সুফিয়া বেগমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহনের পর তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং একটি পুত্র সন্তানের জনক। ছোটবেলা থেকেই তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। প্রাথমিক পথ চলার পর ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ” গহীনে শূন্যতা” প্রকাশিত হয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শোভা প্রকাশ থেকে। তারপর নিয়মিত তার কবিতা প্রকাশ হতে থাকে নানা প্রকাশ মাধ্যমে। সাহিত্যের ছোট কাগজগুলোতে তার কবিতা নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে। “ঘাসফুল” নামক সাহিত্য সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে তিনি বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক পত্রিকা “স্বদেশ খবর” এর সাহিত্য সম্পাদচকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দুই বাংলার মুখপত্র ” পূর্বপশ্চিম” পত্রিকার উপসম্পাদক হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছেন।
কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থসমূহঃ
১। গহীনে শূন্যতাÑ একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৩ Ñশোভা প্রকাশ।
২। দ্বীপের সবুজÑ একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫ Ñঘাসফুল প্রকাশনী।
৩। জলবাড়িÑ একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫ Ñঘাসফুল প্রকাশনী।
৪। নির্বাসনের আগেÑ একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ Ñশোভা প্রকাশ।
৫। নিষিদ্ধ সুন্দরÑ একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ Ñকালজয়ী প্রকাশ।
প্রকাশিতব্য গ্রন্থসমূহঃ
১। জীবনের পদাবলি
২। মধুমতির তীরে
৩। উত্তরাধুনিক ছায়াবাড়ি
জল ও মাটির গল্প
রবিউল ইসলাম। হাস্যরসের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রসিক আর আড্ডাপ্রিয়। হাস্যরসিক বন্ধুপ্রিয় এ মানুষটির জন্ম ১৯৭৭ সালেÑ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাধীন গোমস্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী শিবরামপুর গ্রামে। লেখাপড়া করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে। বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর অনেক প্রবন্ধ, কবিতা ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে। ইতোপূর্বে লেখকের ‘কই মাছটি এখনো নড়ছে’ (২০১৯) এবং ‘বিরুদ্ধ বাতাসে বালক’ (২০২০) শিরোনামে দুটি রম্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যাপিত জীবনের বাস্তবতা থেকে উৎসারিত তাঁর রম্যগল্পগুলো। গল্পগুলোতে ভারত সীমান্তের কোল ঘেঁষে বিরাজমান শিবরামপুর গ্রামের প্রকৃতি ও মানুষের সহজাত ঘটনা বর্ণিত হলেও এটি মূলত আবহমান গ্রামবাংলার রসময় চিত্র ।
রবিউল ইসলাম ২৬তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। তিনি ২০০৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজে প্রভাষক বাংলা পদে যোগদানের মাধ্যমে চাকুরিজীবন শুরু করেন। ইতোপূর্বে তিনি সহকারী অধ্যাপক, বাংলা পদে চাকুরি করেছেনÑ রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী, বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, বদলগাছী, নওগাঁ ও ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজে। বর্তমানে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পি-এইচ.ডি গবেষণারত।
বাংলা সাহিত্যের বিচিত্র বিষয়ের তিনি একজন অনুসন্ধিৎসু পাঠক। লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছেন ছাত্রজীবন থেকেই।
‘চেরাগ আলীর ফুটবল কাল’ লেখকের প্রথম শিশুতোষ গ্রন্থ। এ গ্রন্থে তিনটি গল্প রয়েছে। গল্পগুলো শিশুদের উপযোগী করে লেখা হলেও যে কোনো বয়সের পাঠক এর গল্পরস থেকে বঞ্চিত হবেন না। গল্পগুলোতে লেখকের শৈশবকালীন স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা শিশুমনের উপযোগী করে ব্যক্ত করা হয়েছে। কাহিনি বর্ণনায় হালকা রসের আশ্রয় নেয়া হয়েছে Ñ যা শিশুমনে অফুরান আনন্দ জোগাবে।
এ গ্রন্থে লেখকের শৈশব কৈশোরের দুরন্ত ও ঘটনাবহুল দিনগুলোর ছবি জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
চেরাগ আলীর ফুটবল কাল
মেঘনা তোমার নাম দিল কে
কোনখানে তার বাড়ি–
মুখে কি তার ভরা ছিল
লম্বা লম্বা দাঁড়ি?
মেঘনা তুমি কার বিরহে
কলকলিয়ে কাঁদো–
কখনও কি পড়েছিলে
মলমপার্টির ফাঁদো?
মেঘনা তুমি লুট করে সব
কাকে নিয়ে দাও–
তোমারও কি সঙ্গী থাকে
অতল জলের গাঁও?
মেঘনা তুমি কোনোকালেই
চুপ হবে না আর–
সারা জীবন বইবে কাঁধে
রঙিন দুঃখের ভার?
অতল জলের গাঁও
সঞ্চয় সুমন। ঢাকাবাসী এক কবি। যে শুধু কল্পনার রঙে আঁকে শব্দ খেলার মাঠ। এই গ্রন্থটি কবির প্রথম কাব্যফসল।
গুপ্ত সমরে মুক্তির ঠিকানা
কিছু একটা বলাটাই যখন বাধ্যবাধকতাÑবাহুল্য এবং আপেক্ষিক বাতুলতা বাদ রাইখা মাহবুব লীলেন থাইকা ধার কইরা বলতে হয়Ñ ‘আনফিট মিসফিট হইয়া হামাগুড়ি দিয়া হাঁটি, আর রাত্তিরে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ টাইনা চিক্কুর দিয়া কইÑ যাহ শালা বাঁইচা গেলাম আরও একটা দিন।’
এইটা বড়োবেশি জৈবিক বাঁচা
মানবিক বাঁচনের স্বপ্নও দেখি না বহুদিন
বড়ো তরাসে আছি
বড়ো বেশি চাইপা আছি, নিজের গলা নিজে।
দ্বান্দ্বিক দ্বন্দ্ব বিষয়ক আজাইরা প্রলাপ
গল্পগ্রন্থের নাম-করোনা ভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণু। এই নামকরণ বলে দেয় আমরা কত রকক জীবাণুর সাথে বসবাস করছি! করোনা-জীবাণুর তান্ডব তো সাম্প্রতিক! জীবন ঘনিষ্ঠ নাকি জীবন-অন্বিষ্ট গল্পকার স্বাতী চৌধুরী! দুটোই সমান প্রাসঙ্গিক; চাইলে তৃতীয় কোনো অভিধা আবিষ্কারও সম্ভব। দৃষ্টি থাকলেই সব দেখা যায় না, যদি না যুক্ত হয় মেধা-প্রজ্ঞার মিশেল। তৃতীয় চোখ তথা অন্তর্দৃষ্টিও জরুরি। স্বাতীর ত্রিনয়ন প্রখর– গেঁথে যেতে পারেন মানুষের প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ কাহিনি। মানবিকতার আখ্যান রচনার কুশল ও চাতুর্যে সংবেদী পাঠককে চমকে উঠতে হয় ক্ষণে ক্ষণে। গল্পকার স্বদেশ-সমকাল ও সমাজ-বাস্তবতার অগ্রসর দর্শক। তার ভাষ্যে ঈগলের শ্যেনদৃষ্টি যেমনউচ্চকিত, ডানাভাঙা পাখির উড়ে আসা পালকও আন্দোলিত করে। লেখকের অন্তর্জমিন সততই ক্ষত-বিক্ষত– চৌচির। জাগতিক নানাবিধ রঙ্গ-তামাশায় ধ¦সে পড়ে তাঁর স্বপ্ন-প্রাচীর, উল্টেপাল্টে যায় মানসভূগোল। তাই বলে সেখানে ফুলের সৌরভ, নদীর কলতান, তৃণ কিংবা লতাগুল্মের কোলাহল থাকে না? অচ্যুত জীবনের কথাকার স্বাতী নিস্পৃহভাবে বুনে যান উদ্বাস্তু জীবনের গল্প, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টিকে থাকার রকমারি মকশো’র ইতিবৃত্ত
দুর্বলের উপর সবলের আগ্রাসী মনোভাব অন্ধকার-প্রাচীন। দাবিয়ে রাখার অপকৌশলের বিপরীতে সংকট মোকাবেলা করে লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। জীবন-শিল্পীর গল্পে খিন্ন জীবনের মুক্তি-প্রচেষ্টা দ্যুতি ছড়ায়। চিনিয়ে দেন সর্বহারার শক্তি-সামর্থ্যরে জায়গা; অস্তিত্বের প্রশ্নে কীভাবে জ্বলে ওঠে দ্রোহের দাবানল! স্বাতী গল্প লেখেন নাকি সমাজতাত্ত্বিকের মতো গ্রাফ আঁকেন! গল্পের শরীরে ক্লেদাক্ত জীবনের নড়াচড়া না থাকলে সাংবাদিকের ‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদন’ হিসেবেও চালিয়ে দেওয়া যেত অনায়াসে! প্রচার ও খ্যাতির ডামাডোলের বহু দূরে অবস্থান করেও মূর্ত করে চলেছেন অবাক বাংলার মানুষের মুখ ও মুখশ্রী। কয়েকটি রেখাচিত্রে স্কেচ এঁকে দেওয়া ‘শ্রী’ ও ‘বিশ্রী’র সামনে দাঁড়িয়ে পাঠক অস্বস্তি বোধ করে, পথ খোঁজে পালানোর! লেখকের ক্ষুরধার বয়ান চাবুক হয়ে তাড়া করে। শেষপর্যন্ত ‘অপরাধী’ পাঠক পথ খুঁজে পায় কি! এখানেই স্বাতী চৌধুরীর সার্থকতা, অনন্যতা।
শফিক হাসান
সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
করোনা ভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণু
হায়াসিন্থ হাউজ
যদি কখনো আসে, যত্নে ধরে লালন করি তারে। শুধু হৃদয়ে নয়, সর্বদেহে।
তোমরা তাকে যে রূপে দেখতে পাও, হয়তো তার নাম ই কবিতা।
যেমনঃ
আমার তেইশ ফুরায় না ||
আমি আজও তেইশে ই
যে তেইশে কাব্যের বুকের পাজর হয়েছি
পদ্মার তলে শ্যাওলা— মাটির প্রেম দেখেছি।
তেইশের তাপে মন উথলে ওঠে এই সকালেও
তেইশে বাকদত্তা চুল খোলা
তেইশে বসন্ত ভাব জাগা
তেইশে ই কেবল ভুল করে ভুলের প্রেমে পড়া!
তেইশের ঘোরে উড়ছি আজো আরো তেইশ ধরে
তেইশের ঘরে জমা করেছি গোপন আত্মা আহারে!
আমার তেইশ দুলছে আজও
পদ্মার জলে— ধরলার চড়ে
চন্দ্র সভার—আলো আকাশে
মাঝিহীন নৌকার খোলা পাটাতনে
তোমার লুকোচুরি ছোঁয়া-ছুঁয়ি পরানে।
প্রণয় মল্লার- Pranoy Mollar
১৯৬২ সালের ৫ ডিসেম্বর, ময়মনসিংহে কবি আশুতোষ পাল ও শিউলি পালের সংসারে জন্ম।
লেখাপড়া- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিবিজ্ঞানে স্নাতক এবং সুইডেন থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা।
পেশা- এনজিও কর্মী দিয়ে শুরু এবং বর্তমানে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত।
প্রকাশিত অন্যান্য বই- রাতপঞ্জি (২০০৩),পুননির্বাচিত আমি- ২০১১।
Asochorachor
লেখক পরিচিতি :
কুহক মাহমুদ। জন্ম: ৬ই সেপ্টেম্বর। তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে পুরানো ঢাকায় বসবাস আর বেড়ে ওঠা যৌথ পরিবারে। নিজের অজান্তেই কবিতা প্রেমিক হয়ে ওঠায় কবিতাকেই বেশি ভালোবাসা হচ্ছে ব্যস্তানুপাতিক সাংসারিক মায়াজালে। এটি লেখকের প্রথম কাব্য গ্রন্থ।
গোধূলির প্রস্থানে জ্বালাও পূর্ণিমা
ভূমিকা
বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ার হোসেন বাদল চিকিৎসার জন্যে কিছুদিন আগে দক্ষিণ ভারতের ভেলোর শহরে গিয়েছিলেন। সাথে ছিলেন তার আজীবন সহযাত্রী, সহযোদ্ধা আমাদের প্রিয় সুলতানা ভাবী। বাদল ভাই ভাবীর সাথে নানান জায়গার ছবি তুলছেন আর তাৎক্ষণিক অভিজ্ঞতা লিখে পোস্ট দিচ্ছেন। আমিও মজা করে কমেন্ট করে যাচ্ছি সেইসব পোস্টে। প্রথমদিকে সাদামাটা পোস্ট ভেবেই গভীরে তেমন ঢোকার চেষ্টা করিনি। কিন্তু সময় যতোই যেতে থাকে পোস্টগুলো আমাকে চুম্বকের মতো টানতে থাকে। একসময়ে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে বাদল ভাইয়ের ভ্রমণবৃত্তান্তের অপেক্ষায় থাকি, কখন তিনি পোস্ট দিবেন, কখন সেই আখ্যানগুলো পড়বো। অবস্থা যখন এমন পর্যায়ে একদিন বলেই ফেললাম যে লেখাগুলোকে মলাটবদ্ধ করলে একটি ভালো বই হতে পারে। উপযাচক হয়ে এটাও বললাম যে যদি কখনো লেখাগুলো মলাটবদ্ধ হয় আমিই লিখবো এর মুখবন্ধ।
বলেতো দিয়েছি কিন্তু তখন কি আর জানতাম যে এই গুরুদায়িত্ব আমার ঘাড়েই চাপবে! সেদিন হঠাৎই বাদল ভাইয়ের ফোন, ‘কমরেড, ভারতে কয়েকদিন নামের বইটি আসছে আগামী বইমেলায়। ভূমিকা কিন্তু আপনাকেই লিখতে হবে।’ আমিতো সপ্তম আসমান থেকে পড়লাম একেবারে জমিতে।
যাইহোক, সচরাচর ভ্রমণকাহিনী বলতে আমরা যা বুঝি আনোয়ার হোসেন বাদল এর ‘ভারতে কয়েকদিন’ সে অর্থে কিন্তু কোনো ভ্রমণকাহিনী নয়। বরং এটি হচ্ছে সাদা চোখে দেখা সাদামাটা অভিজ্ঞতার এক নির্মোহ বিবরণ, কিছু জানা কথা, কিছু অজানা তথ্যের প্রকাশ।
বইটি এমন সহজ-সরল ভাষায় লিখিত যে—পড়ার সময় মনে হতে পারে পাঠক বই পড়ছেন না বরং লেখকের সাথে সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভারতের নানান শহর। নিজের চোখেই পাঠক দেখছেন ভারতের ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্থাপনা আর বিচিত্র প্রকৃতি।
আলোচ্য বইটিতে পাঠকের পরিচয় ঘটবে ভারতের ঐতিহাসিক শহর কোলকাতা, তৃতীয় বৃহত্তম শহর দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই আর ভেলোরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্পসংস্কৃতি ও স্থাপত্যকর্মের সাথে।
বইটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অমরকীর্তি হিসেবে স্বীকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
কবি হানিফ মোহাম্মদ
তালেপুর, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।
ভারতে কয়েকদিন
বুদ্ধদেব বলেছেন- জীবন দুঃখময়। কথাটা সর্বাংশে সত্য কিনা সংশয় রয়েছে মনে। তবে এটা সত্যি যে, বারে বারে দুঃখ আসে জীবনে। আসে বলতে মানুষ জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতে তার কামনা-বাসনার দ্বারা দুঃখকে ডেকে আনে। যদিও দুঃখকে কেউ চায় না। কিন্তু না চাইতেই মহাসমারোহে হানা দেয় জীবনে। কারণ, আলো-আঁধারের মত সুখ-দুঃখও হাত ধরাধরি করে চলে। তাই কোনমতেই দুঃখকে বাদ দিয়ে শুধু সুখ লাভ সম্ভব হয় না। কিন্তু মানুষ চায় সুখের বন্দরে নোঙ্গর গেড়ে জীবনটা কাটাতে। সেখানে পৌঁছতে গেলে দুঃখের পথ অতিক্রম করেই যেতে হয়। জীবনে দুঃখকে জয় করার মধ্যেই আছে পৌরুষ, আছে বীর্যবত্তা। তাই তাকে শক্তিধারণ করতে হয় দুঃখ জয় করার। “দুঃখ জয়ের গান” পাঠকের অন্তরে সেই প্রেরণা জোগাবে যাতে সে কর্ম-সাধনার মধ্য দিয়ে জীবনটাকে সঙ্গীতমুখর করে তুলতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
পরিশেষে, বইটির পান্ডুলিপি পাঠ করে মূল্যবান মতামত দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের প্রভাষক নির্জন মজুমদার, কবি দেবী চিত্রলেখা মন্ডল, সাহিত্যিক অমল হালদার, কবি ড. অশোক মিস্ত্রী। তাদের সকলকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। সুস্মিতা ও শ্রেষ্ঠা আমার দুই মেয়ে নিরন্তর স্বপ্ন দেখে চলে কবে বাবার লেখা নতুন বই প্রকাশিত হবে। ওদের প্রেরণা আমার সব সময়ের পাথেয়। প্রথম উপন্যাস প্রকাশ-লগ্নে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। মুদ্রণজনিত ভুল-ত্রুটি পরিহারের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তারপরও অজ্ঞাতসারে কিছু প্রমাদ থেকেই যেতে পারে। সেজন্যে পাঠকের কাছে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।
সন্তোষ কুমার শীল
শ্রীরামকাঠী, পিরোজপুর।
দুঃখ জয়ের গান
Get access to your Orders, Wishlist and Recommendations.
There are no reviews yet.