2023

2023

(Showing 25 – 36 products of 83 products)

Show:
Filter

ফানুস – আফরোজা আলম – ৭১-এর দিনলিপি

Highlights:

আফরোজা আলমের গদ্য পড়তে ভালো লাগে। একটা আটপৌরে ভাব আছে আর আছে একটা ভিতর থেকে টান। বিষয় যখন পরিবারের কথা নিজের স্মৃতি-গ্রন্থের পাতাগুলি উল্টে যাওয়া, প্রায় নিজের পুরোনো ডায়েরি খুলে পড়ার মতো তখন ভালো তো লাগবেই। তার সঙ্গে যদি যোগ হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার কিছু বর্ণনা। এইসব কারণে আফরোজার লেখা ভালো লাগলো।


হাসান আজিজুল হক

Fanush - ফানুস

সুখের রঙ চোখের জলের মতন – আসাদ জামান

Highlights:

মানুষ প্রত্যাশা করে একটা ঘুর্ণায়মান সুখের স্রোত তাদের সারাক্ষণ ঘিরে থাকবে কিন্তু এমনটা কখনো হয় না। সৃষ্টীকর্তার নিয়ম বা রহস্য অনুযায়ী মানুষ খানিকটা সুখের জন্য অনেকটা দুঃখ যাপন করে। আমাদের ঘিরে থাকা সম্পর্কগুলো থেকে সবসময় ঠান্ডা জলের স্রোত বইতে থাকে, মাঝে মধ্যে অল্পকিছুক্ষণের জন্য উষ্ণ স্রোত। দীপার জীবনে ফয়সাল বা ফাহাদের জীবনে বাবা –মা , এমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ প্রেমিকা নায়ারা তেমনি এক স্রোত। এই নিরন্তন স্রোতের মধ্য দিয়েই মানুষ যেমন অল্প সময়ের সুখ খুঁজে পায়, যেমনটা ফাহাদ খুঁজে পায় জীবনযুদ্ধে প্রতারিত একাকি রিপা আর তার ছোট্ট মেয়ে রুপার মধ্যে। ফাহাদের, দীপার, রুপার কাছে মনে হয় তাদের সুখের রঙ চোখের জলের মতন!

SHUKHER RONG CHOKHER JOLER MATON - সুখের রঙ চোখের জলের মতন

PRACHIN BANGLAR PORAMATI-FALAKSHILPA O ANNANNO - প্রাচীন বাংলার পোড়ামাটি-ফলকশিল্প ও অন্যান্য

খুলনার মুক্তিযুদ্ধ : বটিয়াঘাটা – রিয়াদ হোসেন

Highlights:

“খুলনার মুক্তিযুদ্ধ : বটিয়াঘাটা” শীর্ষক গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধকালীন বটিয়াঘাটা উপজেলার সশস্ত্র সংগ্রাম, মানবতাবিরোধী অপরাধ (গণহত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস), শরণার্থীসহ বিভিন্ন দিক আলোচিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে বাঙালি জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় রেখে বিষয় বিবরণ সন্নিবেশিত হয়েছে।
কৃষক আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ- খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার সংগ্রামী ইতিহাস রয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা অপ্রতুল। ফলে আঞ্চলিক ইতিহাস তুলে ধরার তাগিদে এ গবেষণাগ্রন্থটি মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে ।

khulnar Muktijuddho : Batiyaghata -- খুলনার মুক্তিযুদ্ধ : বটিয়াঘাটা

বর্ষা এলেই ভূতটা আসে – জুয়েল আশরাফ

Highlights:

তখন আমি ক্লাস সেভেনে। একটি ছেলের সাথে আমার গাঢ় বন্ধুত্ব। টিফিনের টাকায় খাবার কিনে দুজনেই খাই। সেও আমাকে খাওয়ায়। একদিন সে প্রস্তাব করল, ‘আমাদের বাড়ি চলো।’ আমি সানন্দে রাজি হলাম। প্রথমত, নতুন নতুন বাড়ি যাওয়া আমার শখ। দ্বিতীয়ত, খাওয়ার লোভ। বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি না খাইয়ে ছাড়বে না। সে আমাকে তাদের বসার ঘরে এনে বসালো। আমি সপ্রতিভ হয়ে বসলাম। সে ভেতরে চলে গেল। নিশ্চিত খানিক বাদেই প্লেট ভর্তি খাবার এনে আমার সামনে হাজির হবে। কিন্তু অল্প পরেই বন্ধু খালি হাতে ফিরে এলো। বিষণ্ন মুখে বলল, ‘মা বাড়িতে নেই। তোমাকে কিছু খাওয়াতে পারলাম না।’ এই বলেই সে আবার গেল ভেতরে। ফিরে এলো একটি বই হাতে। বইটি আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘এটা নিয়ে যাও।’ যেন আমাকে খাওয়াতে না পারার দুঃখ ভোলানোর চেষ্টা করছে সে। গল্পের বই হাতে আমিও বিষণ্ন মনে বাড়ি ফিরি। সেদিনই প্রথম গল্প পড়া শুরু। পড়তে পড়তে আমি অভিভূত আর অবাক। গল্প এতো মজার হয়! বন্ধুর বাড়িতে খেতে না পারার দুঃখ ভুলে গেলাম। ঠিক করলাম একদিন আমিও বড় হয়ে গল্প লিখব। আজ আমি হাতে পায়ে বড় হয়েছি, কিন্তু শিশু-কিশোরদের বই পড়া আজও ছেড়ে উঠতে পারিনি। ভবিষ্যতেও পারব না। এই বইটিতে আমার লেখা ভূতের গল্পগুলো তোমাদের ভালো লাগুক। এই প্রত্যাশা।

– লেখক

Borsha Eley Vutta Ase - Jewel Ashraf

খেজুর গাছে ভূতের পা – রাহমান ওয়াহিদ

Highlights:

তো গল্পটা কী? দাদু শাকিলকে বলেছিলেন- একটা মস্ত বড়ো ভূত প্রতি মঙ্গলবার রাত ঠিক বারোটায় এসে এই দুটো খেজুর গাছের মাথার ওপর দুদিকে দুই পা রেখে দাঁড়ায় আর লম্বা হাত বাড়িয়ে সবাইকে ডাকে বন্ধু হওয়ার জন্য। কার বুকে এত সাহস যে, ভূতের বন্ধু হবে? কেউ ওর ধারে কাছেও যায় না। তখন ভূতটার খুব রাগ হয়। সে তখন হাত দুটোকে লম্বা বানিয়ে ফেলে আর যাকে সামনে পায় তাকেই ধরার চেষ্টা করে। দাদু আবার এসব ভূতে-টুতে ভয় পান না। তিনি লম্বা একটা তলোয়ার নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন ওই হাত দুটোকে কেটে ফেলার জন্যে। যেই না দাদু হাত দুটোকে কাটতে যান, অমনি ভূতটা ভয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। এভাবেই চলছিল। কিন্তু দাদুটা বছর খানেক আগে হঠাৎ করে মারা গেলেন। তারপর থেকে আবারো সেই ভূত সেই মঙ্গলবার রাত বারোটায় একইভাবে দুই গাছের ওপর দুই পা রেখে দাঁড়ায় আর ডাকে। কেউ দেখতে পায়, কেউ পায় না। কিন্তু ওই রাতে সবারই গা ছমছম করে ভয়ে। মাঠের দিকে কারো ঘরের জানালাই তখন খোলা থাকে না। এই হলো গল্পটা। অনু যতই শুনছিল ততই ভয়ে ঘামছিল। পরীক্ষায় এত যে ভালো রেজাল্ট করেছে সে- ভুলেই গেল সেটা। বাড়ি ফিরেও কিছুতেই ভয়টাকে তাড়াতে পারে না। ভয়ের কথাটা কাউকে বলতেও পারছে না সে। সবাই ওকে ভীতু বলবে- সেই লজ্জায়।

Khejur Gache Vuter Pa - Raahman Wahid, খেজুর গাছে ভূতের পা - রাহাম ওয়াহিদ

নীরু আপা – জুলিয়ান সিদ্দিকী

Highlights:

সাধারণ এক স্কুল শিক্ষিকার উচ্চাকাঙ্খী মেয়ের সুপার মডেল হওয়ার এক অদম্য বাসনার গল্প নীরু আপার জীবন। যে জীবনের পরতে পরতে আছে একজন নারীর নীরবে নিভৃতে নিষ্পেষণ আর নানা বঞ্চনার কাহিনি। যার স্বপ্ন পূরণের সিঁড়িগুলোর নানা ধাপ পার হতে গিয়ে ধীরে ধীরে হয়ে পড়তে হয়েছিল লোভী পুরুষের কামনার ইচ্ছাদাসী। এক সময় সে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তার চেনা আর পরিচিত জগত থেকে। সমাজ আর আত্মীয়-পরিজনের কাছে হয়ে উঠেছিল লজ্জা আর অসম্মানের এক অচ্ছুৎ নাম। সে সঙ্গে খেসারত দিতে হয়েছিল তারই ছোট ভাইয়ের মতো আরেকটি কিশোরকে। কিন্তু তাদের দুজনের কেউ প্রথম দিকে জানতে পারেনি যে, তাদের মাঝে অবচেতনে গড়ে উঠবে অবিচ্ছেদ্য গাঢ়তম এক অসম প্রেম।
জীবনের দুরুহতম এক পরিস্থিতিতে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও প্রকৃতির অমোঘ নিয়মের ফেরে তারা পরস্পর আবার কাছাকাছি হয়ে ওঠে। যা তাদের পারস্পরিক আত্মসমর্পণেরই এক দুর্লভ আর দুর্লঙ্ঘ্য পরিণতির সূচনা করে। শেষপর্যন্ত তাদের পরিণতি কী হয়েছিল জানতে হলে শুরু থেকে শেষাবধি পড়তে হবে নীরু আপা উপন্যাসটি।

Niru Apa - Julian Siddiqi

অলৌকিক গৃহকোণ – রোখসানা ইয়াসমিন মণি

Highlights:

মুঠোর মধ্যে আটকে রাখা যায় জল বা বালু?
মুঠোর ফাঁক গলে বের হয়ে যাবেই বালু বা জল। কেনো? নিজস্ব ব্যাকরণ বা ক্ষমতার প্রকাশ। ছোটগল্প এমনই শক্তির অপরূপ রহস্য। লুকিয়ে রাখা যায় না গল্পের রসবতী ফল, পেকে টসটসে বুকের আস্তিনে তীক্ষè ছুরির গতিতে বের হয়েই আসে কলমের ডগায়, রুদ্ধ মনের দুয়ার খুলে।
রোখসানা ইয়াসমিন মণি’র দ্বিতীয় গল্পের বই ‘অলৌকিক গৃহকোণ’। প্রথম গল্পের বই ‘ঘুঙুরবাড়ি’ বের হয়েছিল ২০২২ সালে। আঁকিয়ে শিল্পী হাতুড়ি বাটালী হাতে পাথরের বুকে খোদাই করেন বিম্বিত মনের অন্বয়, গল্পকার মণিও শব্দের কারুবাসনায়, কল্পমনের ইজেলে গল্পের ক্যানভাসে আঁকেন পীড়িত মনের আগুন সংরাগ, চলমান সময়ের বিদ্যুৎ কামনা ভৈরবী, সংসার যাতাকলের যন্ত্রনার শতকাহন, বৈরী সময়ের বিপরীতে সোনার বাটায় পান শুপারীর নি:স্ব সর্ম্পকের নির্যাস।
‘অলৌকিক গৃহকোণ’ গল্পগন্থের গল্পগুলো রক্তজবার তিল হয়ে জ্বলছে গল্পকারের অস্তিত্বের যাতাকলে যেমন, উল্টোপথে দগ্ধ পাঠকের মনের কার্নিসেও দিচ্ছে অনুগত শৌর্যবার্তা। বইয়ের নয়টি গল্প সহ¯্র দিগন্তের আলো ও অন্ধকারের এক প্রবাল দ্বীপ, যেখানে ওঠে ঝড়, ভাঙ্গে তীর, নাচে দানব, কাঁদে আয়াত দৃষ্টির অচলায়তন।
আসুন, রোখসানা ইয়াসমিন মণি’র গল্প পড়ি আর চেতনসমুদ্রের অলৌকিক জলে সাঁতার কাটতে থাকি…

 

Oloukik Grihokon - Rokshana Yesmin Mony

ভুল প্রণয়ের গন্ধ – আইরিন সুলতানা লিমা

Highlights:

হাজার হ্রদের দেশ নক্ষত্র দিনের কথা মনে করো
মনে করো মাছ ধরি, ঘুরে বেড়াই।

মনে করো পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপে
আঁশ ছাড়ানো পাটের গন্ধ শুঁকি,
শাদা কাশফুলের শরৎ দেখি।

নিশীথ সূর্যের আইসল্যান্ড, নক্ষত্র দিন
রাতহীন রাতের কথা মনে করো।

কিছুই কি মনে পড়ে না?
অর্ধেক আকাশ ছড়িয়ে ক্ষণেক্ষণে বিদায় নাও
এ কেমন স্বভাব?
অর্ধেক ডুবিয়ে বিষাক্ত করো না
মাছি ডুবানোর মতো করে ডুবিয়ে মারো
ডুবিয়েই হও প্রশান্ত।

মনে করো রোমানদের মতো স্বচ্ছ মনের আয়নায়
চীনের চিত্রশিল্পের প্রতিফলন দেখি।
ডুবিয়ে মারো, পিষে মারো
মৃত্যুতে ভয় নেই
মৃত্যুর দরজা জানালা সবসময় খোলা।

Vul Pronoyer Gandha - Irene Sultana

জন্মান্ধ ঘোড়া – বঙ্গ রাখাল

Highlights:

কেমন ছিল আমাদের দুঃখ ভরা রাত কিংবা দিন
দূরে কোথাও মায়ের হৃদপিণ্ডে-জন্মান্ধ ঘোড়া
ছড়িয়ে দিল_ধর্মের দ্রোহী বিষ, ব্লু-ফিল্ম, নাগরিক কলহ
রাষ্ট্রের ঘাপটি মারা রাজনীতি- আড়ালে গণিকা পোষে।
ঘোড়া প্রতিনিয়ত দাপিয়ে ফেলে- উন্নয়ন স্বদেশে-
এ প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে।
জনগণ: দ্রব্যমূল্যের লাগাম ধরে খেয়ে যায় বিস্বাদী মুখে…

গলি পথে অচেনা পথিক
খুঁজে ফেরে হারানো দীর্ঘশ্বাস…
(জন্মান্ধ ঘোড়া)

জন্মান্ধ ঘোড়া- Jonmandho Ghora

অনুপ্রাণন দ্বাদশ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা – গল্পকার ও গল্প সংখ্যা, দ্বিতীয় পর্ব

Highlights:

সম্পাদকীয়, অনুপ্রাণন দ্বাদশ বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, গল্পকার ও গল্প সংখ্যা (দ্বিতীয় পর্ব)

বালাদেশের ১০০ গল্পকার ও তাদের উল্লেখযোগ্য গল্প নিয়ে ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন যাত্রার দ্বিতীয় পর্বে প্রকাশিত হলো আরও ২৫ জন গল্পকারের জীবনী, প্রকাশনা, পুরস্কার ও সম্মাননা, তাদের রচিত গল্প-সাহিত্য নিয়ে সামষ্টিক আলোচনা এবং একটি করে তাদের উল্লেখযোগ্য গল্পের অনুলিপি। সংখ্যাটিতে গল্পকারদের নিয়ে রচনাগুলোর অনুক্রম লেখা প্রাপ্তির ভিত্তিতে বয়সানুক্রমে প্রস্তুত করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের চৌহদ্দিতে পৃথকভাবে বাংলাদেশের সাহিত্য প্রসঙ্গে আলোচনায় বাংলা সাহিত্যে পাকিস্তানি ভাবধারা অর্থাৎ রক্ষণশীলতা ও সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব প্রসঙ্গে পূর্বে আলোচনা হয়েছে। দেশভাগের আগের সাহিত্য অখণ্ড বঙ্গসাহিত্যের সাথে পরোপুরি অন্বিত হলেও পূর্ববাংলার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রচিত সাহিত্যপ্রবণতা কতিপয় বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে একটু স্বতন্ত্র ছিল। বিশেষত তার আঞ্চলিক ও ভৌগোলিক ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এর সাহিত্যকে নতুন কাঠামো দিয়েছিল। পাকিস্তান আমলে বা দেশভাগ পরবর্তী পর্যায়ে আরবি-ফার্সি ও ইসলামিকরণের প্রচেষ্টা পুরোপুরি সফল না হলেও সেই প্রচেষ্টার কারণে মূলধারার সাহিত্য সৃজনপ্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু, সকল প্রতিক‚লতা সত্তে¡ও দেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের একনিষ্ঠ কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে বাঙালি মুসলিমকে মুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক রাখার চেষ্টা কার্যকরীভাবে সক্রিয় ছিল। তাই পাকিস্তানপন্থি সাহিত্যগোষ্ঠী সফলতা পায়নি এবং তাদের রচিত সাহিত্য স্থায়ী কোনো রূপ পায়নি এবং একসময় মানুষের স্মৃতি থেকে তা হারিয়ে যায়।
ইতোপূর্বে অনুপ্রাণন সম্পাদকীয়তে এটাও আলোচনা হয়েছে, স্বাধীনতা পরবর্তী সাহিত্যের ভিত্তি সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীনতার আগের কয়েক দশকে। পাকিস্তান আমলে বিশেষ করে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকেই পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনের সময় উদ্দীপ্ত মধ্যবিত্ত ও গ্রামীণ সমাজের মানস আবিষ্কার করেছিলেন লেখকেরা। পরবর্তীকালে স্বাধীনতার শক্তি, সংহতি, মর্যাদাবোধ ও গৌরব বাংলাদেশের আপামর জনগণের মনে যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল এর প্রকাশ ঘটে সাহিত্যে। এর সাথে অনিবার্যভাবে যুক্ত হয়েছে এই বাংলার নিজস্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অফুরান লীলা, নদীমাতৃক সজল মনন, আঞ্চলিক জীবন ও ভাষার বৈচিত্র্য, ছোট ছোট সম্প্রদায় ও পেশাজীবী মানুষের অন্তর্লীন জীবনধারা ও বোধ।
যে বিষয়টি এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমসাময়িকতা সাহিত্যকে রসদ জোগায় ঠিকই তবে তা সাহিত্যের জন্য ক্ষতিকরও বটে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যদ্ধের কারণে যে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছিল তা লেখকদের মনে স্থায়ী এক প্রভাব ফেলে ঠিকই; যুদ্ধের নানা ধরনের তাৎপর্যগত অধীরতা নিয়ে সাহিত্যকর্ম তৈরি হয়েছে ঠিকই কিন্তু সব লেখক এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন কিনা বা এর গভীর তাৎপর্যকে ধারণ করার মতো শক্তি সবার ছিল কিনা- প্রসঙ্গটির যথাযথ মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন।
আর একটি বিষয়, সাময়িক ঘটনার তাৎক্ষণিক উত্তেজনা গভীর বা শাশ্বত কোনো জীবনবোধ সৃষ্টি করতে পারে না। ক্লাসিক বা ধ্রুপদি সাহিত্য সমসাময়িকতাকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। সেকারণে বড় আকারের কোনো ঘটনা নিয়ে মহাআখ্যান বা ধ্রুপদি রচনা লিখতে লেখককে অপেক্ষা করতে হয় অনেকটা সময়। অপেক্ষা করতে হয় ততদিন, যতদিন না যুদ্ধ বা মারির সুদূরপ্রসারী গুরুত্ব বা মানবসমাজে তার প্রভাব আবিষ্কার করার পূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয়, বাংলাদেশের মহান মক্তিযুদ্ধ নিয়ে গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ আখ্যান বা অনন্য সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি হয়ে গেছে এরকমটা ভাবা হয়তো সঠিক নয়। বরং, হয়তো আরও দীর্ঘ সময় আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে এই পঞ্চাশ বছরে যা রচিত হয়েছে তার মান নিয়ে কথার পাশাপাশি তার চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে এবং এই আলোচনার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে।
সদ্য স্বাধীন ও যুদ্ধে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ যেভাবে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় তার গভীর ও নির্মোহ বয়ান আমরা পেয়েছি সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের লেখকদের রচনায়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর প্রো-পাকিস্তানি শক্তিবলয় যে রাজনৈতিক অপতৎপরতা শুরু করে তার ভয়াবহ পরিণাম এদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব বাংলাদেশের সাহিত্যে ঘটেনি। তখন মুক্তবুদ্ধির সত্যিকারের লেখকদের জীবনে অমোঘ অন্ধকার নেমে এলেও, অবাধ সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা বাধাপ্রাপ্ত হলেও, সামরিক সরকার বা ছদ্মবেশী সামরিক সরকার নতুন জাতীয়তাবাদী তত্ত্ব নিয়ে জোরেশোরে দল বেঁধে মাঠে নামলেও, তাদের বশংবদ লেখকেরা তেমন কোনো মানসম্পন্ন সাহিত্য রচনা করতে পারেননি। যার ফলে ৯০ দশকের পর থেকে মূলধারার সাহিত্য দ্রুতই স্বস্থান ফিরে পেতে শুরু করেছিল।
কিন্তু ইদানীং রাজনীতির আপসকামিতার চোরাগলি দিয়ে রক্ষণশীলতা ও মৌলবাদ উদার ও মুক্ত শিল্প-সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে একপ্রকার বাধা হয়ে দাঁড়াতে সচেষ্ট রয়েছে। যার ফলে স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপের ছায়া যেন কবি ও কথাসাহিত্যিকদের শিল্প-সাহিত্য চর্চায় ঈষৎ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে যদিও কোনো গভীর সংকট এখনো সৃষ্টি হয়নি তবুও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সাইবার নিরাপত্তার মতো আইন প্রণয়ন সম্পর্কে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সচেতন প্রতিবাদ আরও জোরদার হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে।
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, শিল্প ও সাহিত্য যে কোনো সেন্সরশিপ বা নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও বিচ্ছিন্নতা প্রকাশের কার্যকরী ক্ষেত্র প্রস্তুত করার হাতিয়ার। শিল্প-সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে সামাজিক অসঙ্গতি ও সংহতি গড়ার এবং উপায়গুলো আবিষ্কার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ পাঠক শিল্প প্রকরণের মধ্যে বিপ্লবী সম্ভাবনা সন্ধান করার সুযোগ খোজেন। এই মিথস্ক্রিয়ায় রুচি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে চলমান ও প্রগতিশীল একটি প্রভাব আছে। কিন্তু, কেউ কেউ এসব বিষয়ে মত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন বা একাত্মতা প্রকাশ না-ও করতে পারেন।
সাহিত্য কেবল অন্ধকারাচ্ছন্নতা থেকে জাতিকে উত্তরণের জন্য কাজ করে না, সুন্দরের নানা পথও উন্মোচন করে দেয়। শিল্প-সাহিত্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সন্নিহিত একটি বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে উঠতে আমরা দেখেছি এবং হয়তো চলমান সময়ে ভাঙা-গড়ার প্রক্রিয়ায় কোনো নতুন পথের সন্ধান আমরা পেতে পারি। কিন্তু কোনো কিছুই স্বতঃস্ফূর্ত ঘটেনি, ঘটবেও না। সেক্ষেত্রে সময়টাকে বদলে দেওয়ার কৌশল শিল্পী ও সাহিত্যিকদের অনুধাবন করাটা জরুরি।

শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক, অনুপ্রাণন দ্বাদশ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা - গল্পকার ও গল্প সংখ্যাঃ দ্বিতীয় পর্ব

Scroll To Top
Close
Close
Shop
Sidebar
Sale
0 Wishlist
0 Cart
Close

My Cart

Shopping cart is empty!

Continue Shopping